মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) সর্বমোট হাদিসঃ ৫১৬৬ টি

পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে

২৬৮১-[৪] ’উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইহরাম অবস্থায় বিয়ে করবে না, বিয়ে দেবে না এবং বিয়ের প্রস্তাবও দিবে না। (মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَجْتَنِبُهُ الْمُحْرِمُ

وَعَنْ عُثْمَانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَنْكِحُ الْمُحْرِمُ وَلَا يُنكِحُ وَلَا يَخْطُبُ» . رَوَاهُ مُسلم

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসটি প্রমাণ করছে মুহরিমের জন্য বিবাহ করা বা অপর কাউকে বিবাহ দিয়ে দেয়া কোনটাই বৈধ নয়- এটাই অধিকাংশ ‘আলিমের মতামত। ইমাম নাবাবী (রহঃ) তার শারহুল মুহাযযাবে অধিকাংশ সাহাবী, তাবি‘ঈ ও তাবি তাবি‘ঈ-এর মতামতও এটা বলেছেন। তিনি আরো বলেছেন এ মতামত ‘উমার বিন খাত্ত্বাব, ‘উসমান, ‘আলী, যায়দ বিন সাবিত, ইবনু ‘উমার, সা‘ঈদ বিন মুসাইয়্যিব, সুলায়মান বিন ইয়াসার, যুহরী, মালিক, আহমাদ, শাফি‘ঈ, ইসহাক, দাঊদসহ আরো অনেকের।

মুসলিমের ব্যাখ্যায় ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেছেনঃ ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ ও ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেছেন, (لا يصح نكاح المحرم) অর্থাৎ- মুহরিমের বিবাহ বৈধ হবে না। কিন্তু ইমাম আবূ হানীফা, হাকাম বিন ‘উতায়বাহ্, সুফিয়ান সাওরী, ইব্রাহীম নাখ্‘ঈ, ‘আত্বা, হাম্মাদ বিন আবী সুলায়মান, ‘ইকরামাহ্, মাসরুকসহ অনেকে বলেছেন মুহরিমের বিবাহ বৈধ। আর কেউ কেউ বলেছেন, এটা ইবনু ‘আব্বাস, ইবনু মাস্‘ঊদ, আনাস ও মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ)-এরও উক্তি। আর এ দিকেই ঝুকে গিয়েছেন ইমাম বুখারী (রহঃ), কেননা তিনি ‘‘মানাসিক’’ অধ্যায়ে বাব রচনা করেছেন, (باب تزويبج المحرم) এবং ‘‘নিকাহ’’ অধ্যায়ে (باب نكاح المحرم)-এর মাধ্যমে অধ্যায় রচনা করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, ইমাম বুখারীর এই বাব তথা অধ্যায় রচনা দেখেই অনুমান করা যায় যে, তিনি মুহরিমের বিবাহ বৈধের মতাবলম্বী ছিলেন।

প্রথম মতের প্রবক্তাদের দলীল হলো, ‘উসমান ও ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (لا ينكح المحرم ولا ينكح ولا يخطب ولا يخطب عليه) অর্থাৎ- মুহরিম বিবাহ করতে পারবে না কাউকে বিবাহ দিতেও পারবে না। অনুরূপ বিবাহের পয়গাম পাঠাতেও পারবে না এবং তাকেও কেউ বিবাহের পয়গাম দিতে পারবে না।

দ্বিতীয় মতের প্রবক্তাদের দলীল দিয়েছে, ইবনু ‘আব্বাস -এর বর্ণিত হাদীসের মাধ্যমে। কেননা সেখানে স্পষ্ট রয়েছে, (ان رسول الله ﷺ تزوج منمونة وهو محرم) অর্থাৎ- নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়মূনাহ্-কে বিবাহ করেছেন মুহরিম অবস্থায়। আর মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাঝে উত্তম আদর্শ নিহিত রয়েছে।’’ (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ২১)

জেনে রাখা প্রয়োজন যে, হাদীসে উল্লেখিত لا ينكح ولا ينكح এ দু’টি শব্দই হারামের জন্য এসেছে। সকলের ঐকমত্যে তবে لا يخطب বিবাহের পয়গামও পাঠানো যাবে না, এটিকে তাহরীমের ফায়দা দিবে নাকি নাহিয়ে তানযীহী তথা মাকরূহের ফায়দা দিবে- এ নিয়ে ‘উলামায়ে কিরামের মাঝে মতবিরোধ আছে। তিন ইমামের নিকট তা মাকরূহে ফায়দা দিবে ইমাম আবূ হানীফার ও তাই মত। কিন্তু আমাদের কথা হলো উপরোক্ত সবগুলো সিগাহতে যে নাহীর শব্দ আছে তা তাহরীমের ফায়দা দিবে। সুতরাং মুহরিমের জন্য যেমন কোন মহিলাকে বিবাহের পয়গাম পাঠানো হারাম অনুরূপ মুহরিমা নারীর জন্য অপর কোন পুরুষকে বিবাহের পয়গাম পাঠানো হারাম। তাই বিবাহের হারাম আর বিবাহের পয়গাম পাঠানোর হারাম একই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে। যেহেতু সিগাহ একই। সুতরাং যদি কেউ একটিকে হারাম আর অপরটিকে মাকরূহ বলে তাহলে তার দলীল লাগবে, কিন্তু দলীল নেই। কোন কোন শাফি‘ঈ মতাবলম্বী আবার কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে বিবাহের পয়গাম পাঠানোকে হারাম না বলে মাকরূহ বলতে চান আর তা হলো, মহান আল্লাহ তা‘আলার বাণী,

كُلُوْا مِنْ ثَمَرِهٖ إِذَا أَثْمَرَ وَاٰتُوْا حَقَّهٗ يَوْمَ حَصَادِه

অর্থাৎ- ‘‘গাছগুলো ফল দিলে তোমরা খাও এবং যাকাত দাও।’’ (সূরা আল আন্‘আম ৬ : ১৪১)

তার অর্থ এখানে মা‘তুফ আর মা‘তুফ ‘আলায়হির হুকুম ভিন্ন হচ্ছে, কারণ খাওয়া ওয়াজিব নয় কিন্তু যাকাত ওয়াজিব তাই এখানেও বিবাহ করা হারাম হতে পারে কিন্তু পয়গাম পাঠানো হারাম হবে না কারণ মা‘তুফ ও মা‘তুফ আলায়হির হুকুম ভিন্ন ভিন্নও হতে পারে। শাফি‘ঈ মতাবলম্বীদের এ গবেষণার কোন মূল্য নেই বরং আমরা সুন্নাহকেই আকড়ে ধরবো।

ইহরাম অবস্থায় বিবাহ বৈধ কিনা- এ বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও বিবাহ না করার মতই অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। এদিকে যারা বিবাহ বৈধ বলেন তারা বিভিন্নভাবে উত্তর দেয়ার প্রয়াস পান। যেমনঃ

১. তারা বলেন, ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীসটি বেশি সহীহ এবং শক্তিশালী কারণ সেটা বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনা। অপরদিকে ‘উসমান (রাঃ)-এর হাদীসটি ইমাম মুসলিমের একার বর্ণনা, তাই এখানে ইবনু ‘আব্বাস-এর বর্ণিত হাদীসটি অগ্রাধিকার পাবে।

এদের উত্তরে আমরা বলি, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীস হলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কর্মগত হাদীস আর উসমান (রাঃ)-এর হাদীস নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বক্তব্যমূলক হাদীস, আর আমরা জানি কর্মমূলক হাদীস আর বক্তব্যমূলক হাদীস বিরোধপূর্ণ হলে বক্তব্যমূলকটি প্রাধান্য পায়, তাই এখানে ‘উসমান (রাঃ)-এর হাদীসটি প্রাধান্য পাবে। যদিও সানাদগত ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীস শক্তিশালী।

হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, ‘উসমান -এর হাদীসটি প্রাধান্য পাবে কারণ সেটা একটি মৌলিক নিয়মের কথা বলছে আর ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীস একটি নির্দিষ্ট ঘটনা যা অনেকগুলো বিষয়ের সম্ভাবনা রাখে।

২. তারা বলে থাকেন, ‘উসমান -এর হাদীসে নিকাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো وطأ الزوجة তথা স্ত্রী সহবাস যা ইহরাম অবস্থায় সকলের ঐকমত্যে হারাম। এখানে নিকাহ দ্বারা ‘আক্বদ উদ্দেশ্য নয়। এর উত্তরে আমরা বলবো, আপনাদের কথাটি ঠিক নয়। ঠিক না হওয়ার প্রথম কারণ হলো সরাসরি ঐ হাদীস দু’টি ইঙ্গিত যা প্রমাণ করছে এখানে নিকাহ দ্বারা عقد النكاح তথা বিবাহের বন্ধনই উদ্দেশ্য وطأ তথা স্ত্রী সহবাস উদ্দেশ্য নয়।

১নং ইঙ্গিতঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা لا ينكح ই দলীল যে এখানে নিকাহ দ্বারা বিবাহ উদ্দেশ্য وطأ তথা স্ত্রী সহবাস উদ্দেশ্য নয়, কারণ ওলী যখন বিবাহ করিয়ে দিবে তার পরে তা স্বামী স্ত্রী সহবাস চাইবে। কিন্তু এখানে তো ওলীর বিবাহ করিয়ে দেয়াকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

২য় ইঙ্গিতঃ لا يخطب বিবাহের পয়গাম দিবে না- এ শব্দটিই প্রমাণ করছে পূর্বোক্ত নিকাহ শব্দের অর্থ মূলত عقد النكاح তথা বিবাহের বন্ধন وطأ তথা সহবাস নয়।

আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে আবান বিন ‘উসমান তথা হাদীসের বর্ণনাকারীই তার অর্থ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত আর সেই আবান বিন ‘উসমানই لا ينكح-এর অর্থ لا يزوج করেছেন এবং এটা অথবা আরো ভালোভাবে জানতে পারি এ হাদীসের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানি আর তা হলো ‘উমার বিন ‘উবায়দুল্লাহর ছেলে তলহা বিন ‘উমার যখন শায়বাহ্ বিন জুবায়র-এর মেয়েকে বিবাহ করলো ইহরাম অবস্থায় তখন এ বিবাহের ঘোরবিরোধিতা করা হলো এবং ‘উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত ইহরাম অবস্থায় বিবাহ নিষেধের হাদীসটি বর্ণনা করে শুনানো হলো এবং সবাই তখন এ হাদীস দ্বারা বিবাহের বন্ধনই বুঝেছিলেন وطأ তথা স্ত্রী সহবাস বুঝেনি।

তৃতীয় কারণ হচ্ছে, ইমাম আহমাদ (রহঃ) ইবনু ‘উমার  থেকে বর্ণনা করেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে এ মর্মে প্রশ্ন করা হলো যে, কোন মহিলাকে যদি কোন পুরুষ ‘উমরা অথবা হজ্জের ইহরাম অবস্থায় বিবাহ করতে চায় তাহলে তা বৈধ হবে কি না? উত্তরে তিনি বললেন, (لا تتزوج وانت محرم فان رسول الله ﷺ نهى عنه) অর্থাৎ- তুমি মুহরিম অবস্থায় বিবাহ করিও না, কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা করতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং এ হাদীস থেকেও বুঝা গেল نكاح দ্বারা উদ্দেশ্য عقد النكاح তথা বিবাহের চুক্তি وطأ তথা সহবাস নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে

২৬৮২-[৫] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়মূনাহ্ (রাঃ)-কে ইহরাম অবস্থায় বিয়ে করেছিলেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَجْتَنِبُهُ الْمُحْرِمُ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَزَوَّجَ مَيْمُونَةَ وَهُوَ محرم

ব্যাখ্যা: (تَزَوَّجَ مَيْمُوْنَةَ) মায়মূনাহ্ (রাঃ) তিনি উম্মুল মু’মিনীন বিনতু হারিস আল হিলালিয়্যাহ্ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সর্বশেষ স্ত্রী, যার সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মিলন ঘটেছে। তিনি তাকে সপ্তম হিজরীতে বিবাহ করেন। তিনি ‘‘সারিফ’’ নামক স্থানে মৃত্যুবরণ করেন। ৫১ বছর বয়স পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে অবস্থান করেন।

‘আবদুল্লাহ বিন ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে গ্রহণযোগ্য বর্ণনাকারীদের সূত্রে বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই ইবনু ‘আব্বাস বলেছেন, (تزوج رسول الله ﷺ ميمونة وهو محرم) অর্থাৎ- নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়মূনাহ্ (রাঃ)-কে বিবাহ করেছিলেন মুহরিম অবস্থায়। ইতিপূর্বে অতিবাহিত হয়েছে যে, এর দু’টি শক্তিশালী ‘‘শাহিদ’’ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) ও ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে। তবে পরবর্তীতে বর্ণিত ইয়াযীদ বিন আসম মায়মূনাহ্ (রাঃ) থেকে যে হাদীসটি রয়েছে তা এ হাদীসের বিপরীত এবং তা আবূ রাফি‘  থেকেও বর্ণিত হয়েছে, হাদীসটি হলো, (تزوج رسول الله ﷺ ميمونة وهو حلال)

অর্থাৎ- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়মূনাহ (রাঃ)-কে বিবাহ করেন হালাল অবস্থায়। এ বর্ণনাটির স্বপক্ষে আরো একটি হাদীস রয়েছে ইবনু সা‘দ মায়মূনাহ্ বিন মিহরান থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, সফিয়্যাহ্ বিনতু শায়বাহ্ যখন বৃদ্ধা তখন আমি তার নিকট গিয়ে প্রশ্ন করলাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি মায়মূনাহ্ (রাঃ)-কে মুহরিম অবস্থায় বিবাহ করেছিলেন? তিনি উত্তরে বলেছিলেন না, আল্লাহর শপথ! তারা দু’জনে হালাল অবস্থায়ই বিবাহ করেছিলেন। (মাজমাউয্ যাওয়ায়িদ খণ্ড ৪র্থ, পৃষ্ঠা ২৬৮)

উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে বুঝা যায় মায়মূনাহ্ (রাঃ)-কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিবাহ কি হালাল অবস্থায় ছিল না মুহরিম অবস্থায় ছিল? এ বিষয় নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে, ‘আল্লামা ইবনুল ক্বইয়্যিম (রহঃ) বলেন, এ বিষয়ে তিন রকমের কথা পাওয়া যায় প্রথম কথাটি যা মায়মূনাহ্ (রাঃ) এবং হাদীস বর্ণনাকারী আবূ রাফি'-এর ভাষ্য থেকে পাওয়া, তথ্যানুযায়ী সেটি হচ্ছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিবাহ করেছিলেন ‘উমরা থেকে হালাল হওয়ার পর। এটাই অধিকাংশ বর্ণনাকারীর মত।

দ্বিতীয় কথা, যা আহলে কূফা, ইবনু ‘আব্বাস  ও একদল ‘আলিমের ভাষ্যমতে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিবাহ করেছিলেন ইহরাম বাঁধা অবস্থায়।

তৃতীয় কথা হলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিবাহ করেছিলেন ইহরাম বাঁধার পূর্বে।

ইতিপূর্বে আমাদের আলোচনা অতিবাহিত হয়ে গেছে যে, যে সমস্ত ‘আলিম ইহরাম অবস্থায় বিবাহ করা বৈধ বলে ফাতাওয়া দেন তাদের অন্যতম দলীল হলো ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর এ হাদীস। এ মতের বিপরীত অবস্থানকারীগণ বিভিন্ন উত্তর প্রদান করে থাকেন। যেমনঃ তারা বলে থাকেন যা বর্ণিত হয়েছে তিরমিযীতে যে, (تزوجها حلالا وظهرا مر تزويجها وهو محرم وبنى بها وهو حلال بسرف فى طريق مكة) অর্থাৎ- বিবাহের ‘আক্বদ হয়েছিল হালাল অবস্থায় তবে বিবাহের খবর চারদিকে যখন ছড়িয়ে পড়ে তখন তিনি মুহরিম অবস্থায় ছিলেন বাসর করেছেন মক্কার পথে সারিফ নামক স্থানে হালাল অবস্থায়।

দ্বিতীয় উত্তর হচ্ছে ইবনু ‘আব্বাস -এর কথা (تزوجها وهو محرم) এর অর্থ হলো, তিনি তাকে হারাম মাসে বিবাহ করেছেন। মুহরিম অবস্থায় নয়। আর সেটা যিলকদ মাস ‘উমরাতুল কাযা-এর মাস এমনটাই বলেছেন ইমাম বুখারী (রহঃ) তার কিতাবুল মাগাযীতে ‘উমরাতুল কাযা’ অধ্যায়ে।

এ বিশাল মতবিরোধপূর্ণ মাস্আলাতে মায়মূনাহ্ ও আবূ রাফি'-এর বর্ণনাটিই অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত, কারণ তারা ঘটনার বাস্তবসাক্ষী আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে ঐ সময় ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করার বয়সে উপনীত হননি, তাই তার হাদীসের উপর তাদের হাদীস বর্ণিত হাদীস স্বভাবতই প্রাধান্য পেতে পারে। (আল্লাহ অধিক অবগত আছেন)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে

২৬৮৩-[৬] উম্মুল মু’মিনীন মায়মূনাহ্ (রাঃ)-এর ভাগিনা ইয়াযীদ ইবনু আসম (রহঃ) তাঁর খালা মায়মূনাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়মূনাহ্ (রাঃ)-কে হালাল অবস্থায় (ইহরাম অবস্থায় নয়) বিয়ে করেছিলেন। (মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَجْتَنِبُهُ الْمُحْرِمُ

وَعَنْ يَزِيدَ بْنِ الْأَصَمِّ ابْنِ أُخْتِ مَيْمُونَةَ عَنْ مَيْمُونَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَزَوَّجَهَا وَهُوَ حَلَالٌ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
قَالَ الشيخُ الإِمَام يحيى السّنة: وَالْأَكْثَرُونَ عَلَى أَنَّهُ تَزَوَّجَهَا حَلَالًا وَظَهَرَ أَمْرُ تَزْوِيجِهَا وَهُوَ مُحْرِمٌ ثُمَّ بَنَى بِهَا وَهُوَ حَلَال بسرف فِي طَرِيق مَكَّة

ব্যাখ্যা: (يَزِيدَ بْنِ الْأَصَمِّ) তার পূর্ণনাম ইয়াযীদ বিন আল আসম বিন ‘উবায়দ বিন মু‘আবিয়াহ্ বিন ‘উবাদাহ্ বিন আল বাক্কা আসম-এর নাম হলো ‘আমর এবং আবূ ‘আওফ আল বাকাঈ আল কূফী। তাকে তার খালা উম্মুল মু’মিনীন মায়মূনাহ্ (রাঃ) লালন-পালন করেন, তার মাতার নাম বারযাহ বিনতু হারিস মায়মূনাহ্ (রাঃ)-এর বোন। হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, তিনি সিক্বাহ রাবী মধ্যস্তরের তাবি‘ঈ ১০৩ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন ‘আল্লামা আল ওয়াকীদী বলেন, তিনি ৭৩ বছরের জীবন পেয়েছিলেন।

(تَزَوَّجَهَا وَهُوَ حَلَالٌ) অর্থাৎ- মুহরিম অবস্থা ব্যতীত বিবাহ করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন ইহরাম বাঁধার পূর্বে বিবাহ করেছেন এমনটাই বর্ণনা করেছেন ইমাম মালিক (রহঃ) রবী‘আহ্ থেকে, রবী‘আহ্ সুলায়মান বিন ইয়াসার থেকে তবে বর্ণনাটি ‘‘মুরসাল’’। সে হাদীসে পাওয়া যায় বিবাহ হয়েছিল মদীনায়, আবার কেউ বলেছেন বিবাহ হয়েছিল ‘উমরা থেকে হালাল হওয়ার পর মক্কায় অথবা সারিফ নামক স্থানে, যাই হোক না কেন হাদীসটি পূর্বে বর্ণিত ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীসের বিপরীত।

যারা ইহরাম অবস্থায় বিবাহ বৈধ বলেন, তারা মূলত দু’ভাবে তা বলে থাকেন।

১। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীস থেকে ইয়াযীদ বিন আসম (রাঃ)-এর হাদীসের উপর প্রাধান্য দেয়ার মাধ্যমে আর এ প্রাধান্যটি কয়েকটি কারণে হতে পারে।

(ক) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস যেহেতু ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম উভয়ের বর্ণনা, তাই সেটা সানাদগত দিক থেকে বেশি শক্তিশালী। অপরদিকে ইয়াযীদ বিন আসম সহ অন্যান্যদের বর্ণিত হাদীস এমনটি নয়, কারণ সেটা ইমাম বুখারী (রহঃ) বর্ণনা করেননি। এর উত্তর পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে আর তা হলো যদিও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীস মুত্তাফাক্ব ‘আলায়হি হওয়ার কারণে হাদীসটি বিশুদ্ধতার শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছেছে ঠিক কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে, সেটা ইয়াযীদ বিন আসমসহ অন্যান্যদের বর্ণিত হাদীসের উপরে উঠে গেছে ও মায়মূনাহ্ (রাঃ) যারা এ ঘটনার বাস্তবসাক্ষী তাদের কথাই এখানে প্রাধান্য পাবে।

(খ) ইয়াযীদ বিন আসম-এর তুলনায় ইবনু ‘আব্বাস  অনেক অনেক বেশি (সিক্বাহ্) নির্ভরযোগ্য, তাই ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীসই প্রাধান্য পাবে।

(গ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসটি অতিরিক্ত একটি বিষয়কে সাব্যস্ত করে। আর তা হলো ইহরাম অবস্থায়। ইবনু আসম এর হাদীসটি ইহরাম অবস্থার বিপরীত। আরো প্রকাশ থাকে যে, ইতিবাচক হাদীসটি নেতিবাচক হাদীসটির উপর প্রাধান্য পাবে।

(ঘ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসটি মুহকাম। এতে ন্যূনতম কোন ব্যাখ্যার সম্ভাবনা রাখে না। যেমনটি ইবনু আসম এর হাদীসটি রাখে। ইবনু আসম এর বর্ণিত হাদীসটি ব্যাখ্যাসাপেক্ষ, যাতে বিবাহের খুতবাহ্ ও বিবাহের বিষয়টি প্রকাশ পায় হালাল অবস্থায়। অর্থাৎ- মক্কা থেকে মদীনায় ফেরার পথে সারিফ নামক স্থানে।

(ঙ) বিবাহের বিষয়টির সম্পূর্ণ দায়িত্ব ছিল ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর ওপর। আর ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ছিলেন এই বিবাহের ওয়াকীল বা অভিভাবক। আর ওয়াকীলই বেশী জানে মু’কাল থেকে। অর্থাৎ- ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ছিলেন এই বিবাহের প্রত্যক্ষদর্শী যে, বিবাহ হালাল অবস্থায় হয়েছিল নাকি, হারাম অবস্থায় হয়েছিল।

(চ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীসটি ক্বিয়াস সমর্থিত। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই বিবাহের বন্ধনটি ছিল অন্যান্য সকল মানুষের বিবাহের বন্ধনের মতই।

২। যারা বলেছেন যে, ইহরাম অবস্থায় বিবাহ বৈধ এবং ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস -এর হাদীসটিকে ইবনু আসম -এর হাদীসের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন তাদের দ্বিতীয় মতঃ ইবনু আসম এর হাদীসের মধ্যে النكاح والتزويج ‘‘নিকাহ ও তাযবীজ’’ শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সহবাস বা মিলন বিবাহের বন্ধন উদ্দেশে নয়।

‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেনঃ ‘‘তাযবীজ’’ শব্দ দ্বারা সহবাস উদ্দেশ্য।

এজন্য দেখা যায় এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ‘আমর বিন দীনার ইমাম যুহরী (রহঃ)-কে বলেছেন, ইয়াযীদ বিন আসম একজন গ্রাম্য মানুষ সে আর কিইবা বুঝবে? আপনি কি তাকে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর সমপর্যায়ভুক্ত করছেন? ইয়াযীদ বিন আসম কখনোই জ্ঞান-গরীমায় ও হিফযে ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর সমপর্যায়ের হবেন না। তাই ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস এখানে প্রাধান্য পাবে।

এর উত্তর দিয়েছেন ইমাম ইবনু হাযম। তিনি বলেছেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে ইয়াযীদ-এর ওপর অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে এটা ঠিক আছে। কিন্তু এখানে সমস্যা একটু রয়ে গেছে সেটা হলো ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ইয়াযীদ বিন আসম-এর চেয়ে বেশি ভাল হলেও এখানে তার হাদীস প্রাধান্য পাবে না কারণ কম বয়সী ছোট ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে আমরা উম্মুল মু’মিনীন মায়মূনাহ্ (রাঃ)-এর চেয়ে উপযুক্ত বলতে পারছি না। এক্ষেত্রে ইয়াযীদ কর্তৃক মায়মূনাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসই সঠিক এবং ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীস সন্দেহযুক্ত, এর কারণ হলো মায়মূনাহ্ (রাঃ) হলেন এর বাস্তবসাক্ষী আর ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) শুধুমাত্র বর্ণনাকারী। আবার মায়মূনাহ্ একজন পূর্ণ বয়ঃপ্রাপ্ত মহিলা অপরদিকে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর বয়স তখন মাত্র ১০ বছর।

[উভয় হাদীসের মধ্যে সমন্বয়ের কয়েকটি দিকঃ

১। এই ঘটনা যাকে কেন্দ্র করে তিনি হলেন উম্মুল মু’মিনীন মায়মূনাহ্ (রাঃ)। আর তিনি নিজেই বলেছেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিবাহ করেছেন এমতাবস্থায় যে, তখন তিনি ছিলেন হালাল।

২। এ বিবাহের ঘটক ছিলেন আবূ রাফি‘ঈ; আর তিনি নিজেই বলছেন যে, আমি উভয়ের (মায়মূনাহ্ ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিবাহের মাঝে সমন্বয়কারী) ঘটক হিসেবে ছিলাম। আর আল্লাহর নাবী বিবাহ করেছেন এমন অবস্থায় তিনি ছিলেন হালাল।

৩। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর মতে মুহরিম বলা হয় এমন ব্যক্তিকে, যে মক্কায় প্রবেশ করার পূর্বেই হাদী বা কুরবানীর জন্তুকে মক্কায় পাঠিয়ে দেয়। আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো আগেই হাদী পাঠিয়ে ছিলেন।

৪। এখানে মুহরিম দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- যে মক্কায়, অর্থাৎ- হারাম এলাকায় প্রবেশ করল সেই মুহরিম। অর্থাৎ- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়মূনাহ্ (রাঃ)-কে বিবাহ করেছেন এমন অবস্থায় তিনি হেরেমের সীমানার মধ্যে প্রবেশকারী। অর্থাৎ- তিনি মুহরিম অবস্থায় ছিলেন না।] (সম্পাদক)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে

২৬৮৪-[৭] আবূ আইয়ূব আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় নিজের মাথা ধুতেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَجْتَنِبُهُ الْمُحْرِمُ

وَعَن أَبِي أَيُّوبَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَغْسِلُ رَأْسَهُ وَهُوَ مُحْرِمٌ

ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, মুহরিমের জন্য গোসল করা বৈধ এবং মাথা ধোয়া চুল ভিজানো ইত্যাদিও জায়িয। এখানে একটি ঘটনা উল্লেখ করতে হয় এ হাদীস প্রসঙ্গে যা ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম (রহঃ) বর্ণনা করেছেন ‘আবদুল্লাহ বিন হুনায়ন থেকে যে, একদা ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আব্বাস ও মিসওয়ার বিন মাখরামাহ্ (রাঃ) মতবিরোধে লিপ্ত হলেন আব্ওয়া নামক স্থানে। আর তা হলো ইবনু ‘আব্বাস বলেন, মুহরিমের জন্য মাথা গোসল করানো জায়িয আছে আর মিসওয়ার বলেন, জায়িয নেই। ‘আবদুল্লাহ বিন হুনায়ন বলছেন ঘটনার এক পর্যায়ে ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আব্বাস (রাঃ) এ বিষয়ে সঠিক জ্ঞান জানার জন্য আমাকে আবূ আইয়ূব আল আনসারী (রাঃ)-এর নিকট পাঠালেন, আমি সেখানে যেয়ে দেখলাম তিনি কাপড় দিয়ে চারপাশ ঘিরে রেখে গোসল করছেন আমি তাকে সালাম দিলাম, তিনি বললেন, কে? আমি বললাম ‘আবদুল্লাহ বিন হুনায়ন, আমাকে ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আব্বাস (রাঃ) পাঠিয়েছেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিম অবস্থায় কিভাবে গোসল করতেন- এটা জিজ্ঞেস করার জন্য।

অতঃপর আবূ আইয়ূব আল আনসারী (রাঃ) তার হাত কাপড়ের উপর রাখলেন এবং মাথার কাপড় আস্তে আস্তে টানতে লাগলেন এবং এক পর্যায়ে তার মাথা দেখতে পেলাম, অতঃপর তিনি একজন লোককে বললেন তার মাথায় পানি ঢালতে এ অনুপাতে তার মাথায় পানি ঢালা হলো এবং তিনি তার দু’হাতে মাথা নাড়াতে শুরু করেন এবং হাত দিয়ে মাথার সামনে একবার এবং পিছনে একবার নিয়ে যান এবং বলেন, এভাবেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে করতে দেখেছি।

এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রহঃ) যে অধ্যায়ে নিয়ে এসেছেন তার নাম দিয়েছেন (باب الاغسال للمحرم) তথা মুহরিমের জন্য গোসল অধ্যায়। হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, এ গোসলটি মূলত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য এবং ফরয গোসল ও মুহরিমের জন্য অবধারিত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে

২৬৮৫-[৮] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَجْتَنِبُهُ الْمُحْرِمُ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: احْتَجَمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ محرم

ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা হাযিমী সহ অনেক ‘আলিমের মতামত হলো এ শিঙ্গা লাগানোর সময়টি ছিল বিদায় হজ্জের দিন।

(وَهُوَ مُحْرِمٌ) সহীহুল বুখারীতে অতিরিক্ত এসেছে, (فى راسه من وجع كان به تماء يقال له لحى جمل) অর্থাৎ- শিঙ্গাটা লাগিয়েছিলেন মাথায় আঘাতজনিত কারণে পানি দ্বারা যাকে ‘‘লুহা জামাল’’ বলা হয়। অন্য সনদে ইবনু ‘আব্বাস  থেকে মু‘আল্লাক সূত্রে বর্ণনা এসেছে,

(ان رسول الله ﷺ احتجم وهو محرم فى راسه من شقيقة كانت به)

অর্থাৎ- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছিলেন মাথায় ‘‘শাক্বীক্বাহ্’’-এর কারণে। শাক্বীক্বাহ্ অর্থ وجع يأخذ فى احد نبى الرأس او فى مقدمه অর্থাৎ- এমন ব্যথা যা মাথার এক পাশে অথবা মাথার সম্মুখভাগে। অপর একটি হাদীস যেটি ইবনু হায়নাহ্ বর্ণনা করেছেন তৃতীয় পরিচ্ছেদে হাদীসটি আসবে তাতে রয়েছে মাথার মধ্যভাগের কথা।

আর আনাস (রাঃ)-এর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণিত হাদীস যা তৃতীয় পরিচ্ছেদে রয়েছে সেখানে রয়েছে পায়ের উপরিভাগে ব্যথা পাওয়ার কারণে সেখানে তিনি শিঙ্গা লাগিয়েছিলেন এবং জাবির (রাঃ) কর্তৃক হাদীস যেটি ইমাম আহমাদ ও ইমাম নাসায়ী বর্ণনা করেছেন সেখানে রয়েছে, তিনি পিঠে শিঙ্গা লাগিয়েছেন। যাই হোক উপরোক্ত মতবিরোধের সমাধাকল্পে ‘উলামায়ে কিরাম বলেছেন, বস্ত্তত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শিঙ্গা লাগানো একবার ছিল না তা ছিল কয়েকবার।

এ হাদীস থেকে বুঝা যায় মুহরিমের জন্য শিঙ্গা লাগানো বৈধ আছে- এর সমর্থনে ইমাম বুখারী (রহঃ) তারজামাতুল বাব তথা অধ্যায় রচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, (باب الحجامة للمحرم) হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ)-এর অর্থ করেছেন باب الحجامة للمحرم অর্থ হলো (هل يجوز الحجامة للمحرم) অর্থাৎ- মুহরিমের জন্য শিঙ্গা লাগানো কি বৈধ আছে নাকি নেই? এ বর্ণনাগুলোর প্রত্যেকটিতে উদ্দেশ্য মাহজূম তথা শিঙ্গা যাকে লাগানো হয়েছে الحاجم তথা শিঙ্গা যিনি লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি উদ্দেশ্য নন।

‘আল্লামা ইবনু কুদামাহ্ (রহঃ) তাঁর ‘আল মুগনী’ নামক কিতাবে (৩য় খণ্ড পৃষ্ঠা ৩০৫) বলেন, অতঃপর শিঙ্গা যদি লাগানোর ফলে একটি চুলও না কাটে তাহলে তা বৈধ হবে কোন প্রকার ফিদিয়া ব্যতীত আর এটাই জমহূর ‘উলামায়ে কিরামের ফাতাওয়া। ইমাম মালিক (রহঃ) বলেছেন, বিশেষ কারণ ব্যতীত শিঙ্গা লাগাবে না। তবে হাসান বাসরী (রহঃ) মনে করেন শিঙ্গা লাগালে জরিমানা দিতে হবে।

‘আল্লামা ‘আয়নী (রহঃ) বলেন, যে কোন অবস্থাতেই শিঙ্গা লাগানো বৈধতার ফাতাওয়া দিয়েছেন ‘আত্বা, মাসরূক, ইব্রাহীম নাখ্‘ঈ, ত্বাউস, সাওরী, আবূ হানীফা, শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহাক। আর এক দল বলেছেন, বিশেষ কারণ ব্যতীত শিঙ্গা লাগানো নিষেধ, ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে কথার বর্ণনা পাওয়া যায়। আর এটাই ইমাম মালিক (রহঃ)-এর অভিমত।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেছেন, সকলের ঐকমত্যে মাথা বা শরীরের অন্য যে কোন অঙ্গে শিঙ্গা লাগানো বৈধ যদি কোন অসুবিধা থাকে। এ ক্ষেত্রে যদি চুলও কেটে যায় তাহলেও কোন অসুবিধা নেই। তবে চুল কাটানোর কারণে ফিদিয়া দেয়া আবশ্যক হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘অর্থাৎ- তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে অথবা তার মাথায় যখন হবে সে ফিদিয়া দিবে।’’ (সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৯৬)

আর অত্র হাদীস (যার ব্যাখ্যা আমরা করছি) সে হাদীসটির অর্থ এমন হবে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মাথার মধ্যভাগে শিঙ্গা লাগিয়েছেন তার অসুবিধার কারণে এবং তিনি কোন চুল কাটেননি। কিন্তু প্রয়োজন ছাড়াই যদি মুহরিম মাথার বা অন্য কোথাও শিঙ্গা লাগায় আর তাতে যদি তার চুল কেটে যায় তাহলে শিঙ্গা লাগানো হারাম হবে যেহেতু মুহরিম অবস্থায় চুল কাটা নিষেধ। আর যদি চুল না কাটে যেমন সে এমন জায়গায় শিঙ্গা লাগালো যেখানে কোন চুল নেই তাহলে অধিকাংশ ‘আলিমের মতে তাকে কোন ফিদিয়া দিতে হবে না। আর ইবনু ‘উমার (রাঃ) ও ইমাম মালিক (রহঃ)-এর নিকট এটা মাকরূহের অন্তর্ভুক্ত হবে। ইমাম হাসান বাসরী (রহঃ) বলেন, চুল না কাটলে, এখানে তাকে ফিদিয়া দিতে হবে। আমাদের (জমহূর) এক্ষেত্রে দলীল হল সে ফিদিয়া দিবে না এ কারণে যে, কোন হাদীস এমন নেই যে ইহরাম অবস্থায় রক্ত বের হলে ফিদিয়া দিতে হবে। তবে দাঊদ আয্ যাহিরীর মতানুসারীরা শুধু মাথার চুলকে নির্দিষ্ট করেছেন।

মোট কথা হচ্ছে এখানে জমহূরের মতই প্রাধান্য কারণ, এ সম্পর্কে যতগুলো রিওয়ায়াত এসেছে তার একটিতেও এ কথা বর্ণিত হয়নি যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিঙ্গা লাগানোর ফলে চুল কেটে গেলে ফিদিয়া দিয়েছেন।

আর যারা ফিদিয়া আবশ্যকের মতাবলম্বী তাদের দলীল মহান আল্লাহর বাণী, অর্থাৎ- ‘‘কুরবানীর পশু তার স্বীয় স্থানে পৌঁছার পূর্বে তোমরা মাথা হলক করিও না।’’ (সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৯৬)

এ আয়াতের ব্যাপকতার মাধ্যমে অর্থাৎ- এখানে যেহেতু মাথা হলক করা নিষেধ আছে তাই শিঙ্গা লাগাতে গিয়ে একটি চুলও যদি কাটা যায় তাহলে ফিদিয়া দিতে হবে। তাদের এ ফাতাওয়া ঠিক নয়, কারণ আয়াতটি শুধু একটি চুল কাটলেই ফিদিয়া দিতে হবে এমন কথা বলছে না বরং সমস্ত মাথা হলক করলে ফিদিয়া দেয়ার কথা বলছে। সুতরাং কিংয়দংশ হলকের সাথে ফিদইয়ার কোন সম্পর্ক নেই। তবে মাথার কতটুকু হলক করলে ফিদিয়া দিতে হবে এ বিষয়টি নিয়ে ‘আলিমদের মাঝে বিরোধ আছে। তাই ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেছেন, তিনটি চুল বা ততোধিক চুল কাটলে ফিদিয়া আবশ্যক হবে।

ইমাম আহমাদ (রহঃ)-এর এক বর্ণনায়ও তাই আছে। তবে অন্য বর্ণনায় আছে চারটি চুলের কথা। ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর মত হলো যদি মাথার এক চতুর্থাংশ হলক করে তাহলে ফিদিয়া দিবে। ইমাম মালিক (রহঃ) বলেছেন, ফিদিয়া দিতে হবে যদি চাকচিক্যের উদ্দেশে বা اماطة الأذى তথা ময়লা দূর করার জন্য মাথা হলক করে থাকে এ ক্ষেত্রে চুলের সংখ্যা অনির্ধারিত। (আল্লাহ অধিক অবগত আছেন)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে

২৬৮৬-[৯] ’উসমান (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় চোখে ব্যথা অনুভব করে সে মুসাববার দিয়ে পট্টি বাঁধবে। (মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَجْتَنِبُهُ الْمُحْرِمُ

وَعَن عُثْمَان حَدَّثَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الرَّجُلِ إِذَا اشْتَكَى عَيْنَيْهِ وَهُوَ محرمٌ ضمدهما بِالصبرِ. رَوَاهُ مُسلم

ব্যাখ্যা: (فِى الرَّجُلِ) এখানে পুরুষের সাথে মহিলাও অন্তর্ভুক্ত হবে।

(ضَمَّدَهُمَا) এ শব্দটি বাবে তাফ্‘ঈল থেকে নির্গত এবং তা ماضى তথা অতীতকালীন অর্থবোধক শব্দ। ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, মিশকাতের মূল পাণ্ডুলিপিতে ضمد তথা ‘আমর অর্থাৎ- নির্দেশসূচক শব্দের ব্যবহার আছে এবং নির্দেশসূচক শব্দটি আবশ্যকের অর্থ না দিয়ে বৈধতার অর্থ বুঝাবে।

আমি বলব, [‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ)] শব্দটি باب نصر অথবা ضرب থেকে ماضى তথা অতীতকালীন ক্রিয়া হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, ضمد الجرح يضمد অর্থাৎ- ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেস লাগিয়েছে। এ হচ্ছে ضمد শব্দের আসল ব্যাখ্যা, অতঃপর সেটা ঔষধ তরল পদার্থের সাথে মিশানো তারপর ক্ষতস্থানে লাগানো ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়।

(بِالصَّبْرِ) শব্দটি صبر অথবা صبر সাকিন দেয়া চলে এ দু’ভাবেই পড়া যায়। আল কামূস গ্রন্থকার বলেন, কবিতার পংতির মিল করার মতো জরুরী কারণ ব্যতীত باء এ সাকিন পড়া বৈধ নয়। এ শব্দটির অর্থ হচ্ছে عصاره شجر مر তথা তিক্ত গাছের রস।

বাহরুল জাওয়াহির গ্রন্থকার (রহঃ) বলেন, যেমন সু’সিন নামক এক প্রকার গাছ যা লাল ও হলুদের মাঝামাঝি রংয়ের।

উর্দূ ভাষায় একে ঈলূআ বলা হয়। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ‘সাবির’ নামক এ দ্রব্যটিকে পানির সাথে মিশিয়ে চোখে ড্রপ হিসেবে ব্যবহার করা অথবা এ দুয়ের মাধ্যমে সুরমা বানিয়ে তা চোখে লাগানো।

এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, চোখে সাবির বা এ জাতীয় জিনিসের মাধ্যমে ড্রপ ব্যবহার করা জায়িয আছে। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, ‘উলামায়ে কিরামের ঐকমত্যে সুগন্ধি ব্যতীত চোখে সাবির বা এ জাতীয় জিনিস ব্যবহার করা যায় এতো কোন ফিদিয়া দিতে হবে না, তবে সুগন্ধি যদি প্রয়োজন মনে করে তাহলে তা করতে পারে, এর জন্য ফিদিয়া আবশ্যক হবে।

আর এ বিষয়েও ঐকমত্য আছে যে, মুহরিমের জন্য সুরমা যা সুগন্ধিবিহীন তা ব্যবহার করা জায়িয এক্ষেত্রে কোন ফিদিয়া দেয়া লাগবে না তবে যদি সৌন্দর্যের জন্য দেয় তাহলে ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) এটাকে মাকরূহ বলেছেন। অপর একদল ‘আলিম যাদের অন্যতম হলেন, ইমাম আহমাদ ও ইসহাক (রহঃ) এটাকে সম্পূর্ণভাবে নিষেধ করেছেন। ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর মতো এক্ষেত্রে শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর মত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে

২৬৮৭-[১০] মহিলা সাহাবী উম্মুল হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উসামাহ্ ও বিলাল (রাঃ)-কে দেখেছি তাদের একজন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উটনীর লাগাম ধরে রেখেছে আর অপরজন কাপড় উপরে উঠিয়ে রোদ্র হতে তাঁকে ছায়া দিচ্ছে জামারাতুল ’আক্বাবায় পাথর মারা পর্যন্ত। (মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَجْتَنِبُهُ الْمُحْرِمُ

وَعَنْ أُمِّ الْحُصَيْنِ قَالَتْ: رَأَيْتُ أُسَامَةَ وَبِلَالًا وَأَحَدُهُمَا آخِذٌ بِخِطَامِ نَاقَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالْآخَرُ رَافِعٌ ثَوْبَهُ يَسْتُرُهُ من الْحَرِّ حَتَّى رَمَى جَمْرَةَ الْعَقَبَةِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ

ব্যাখ্যা: (عَنْ أُمِّ الْحُصَيْنِ) উম্মুল হুসায়ন (রাঃ) হলেন ইসহাক-এর কন্যা, মহিলা সাহাবী কিন্তু তাঁর নাম জানা যায়নি।

(رَأَيْتُ أُسَامَةَ) উসামাহ্ হলেন যায়দ ইবনু হারিসাহ্-এর সন্তান এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুক্ত দাস। (وَبِلَالًا) বিলাল হলেন রিবাহ্-এর সন্তান এবং আবূ বাকর সিদ্দীক্ব (রাঃ)-এর দাস। (وَأَحَدُهُمَا) মুল্লা ‘আলী কারী বলেনঃ প্রকাশ থাকে যে, তিনি হলেন বিলাল। (وَالْاٰخَرُ) অন্যজন হলেন উসামাহ্। (يَسْتُرُه) অর্থাৎ- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাথা থেকে উপরে কাপড় ঝুলিয়ে দেয়ার মাধ্যমে ছায়া দিচ্ছিলেন।

(مِنَ الْحَرِّ) অন্য বর্ণনায় এসেছেন, (رافع ثوبه على رأس رسول الله ﷺ من الشمس) অর্থাৎ- তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সূর্যের কিরণ থেকে রক্ষা করার জন্য তার কাপড় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাথার উপর উঁচু করে ধরেছেন।

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) আবূ উমামাহ্  থেকে বর্ণনা করেন, আবূ উমাম তার কাছ থেকে বর্ণনা করেন যিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখছেন যে, (راح إلى منى يوم التروية والى جانبه بلال، بيده عود........الخ)

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারবিয়ার দিন মিনায় প্রস্থান করেন তার পাশে বিলাল  ছিলেন তার হাতে একটি কাঠের লাঠি ছিল লাঠির উপর একট টুকরা কাপড় ছিল-এর মাধ্যমে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ছায়া দিচ্ছিলেন।

সুতরাং এ হাদীস থেকে বুঝা গেল, মুহরিমকে কাপড় বা এ জাতীয় জিনিসের মাধ্যমে ছায়া প্রদান করা বৈধ চাই সে সওয়ারী হোক বা হেঁটে যাক- এটাই ইমাম আবূ হানীফা, শাফি‘ঈসহ অধিকাংশ ‘উলামায়ে কিরামের মতামতের মতের স্বপক্ষে, উপরোক্ত উম্মুল হুসায়ন ও আবূ উমামার বর্ণিত হাদীসকে তারা দলীল হিসেবে পেশ করেছেন। তবে ইমাম মালিক ও ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেছেন, শুধুমাত্র নিচ দিয়ে হেঁটে গেলে ছায়া প্রদান বৈধ আছে। সুতরাং সওয়ারী অবস্থায় ছায়া দিলে ফিদিয়া দিতে হবে। তবে ইমাম আহমাদের অন্য বর্ণনায় রয়েছে, কোন ফিদিয়া দিতে হবে না। তবে যদি কোন তাঁবুর নিচে বসে অথবা ছাদের নিচে বসে ছায়া গ্রহণ করে তাহলে তা জায়িয হবে- এ ব্যাপারে সকলের ঐকমত্য রয়েছে।

ছায়া গ্রহণ নিষেধ প্রসঙ্গে ইমাম আহমাদ ও মালিক (রহঃ)-এর দলীল বায়হাক্বীতে ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হাদীস, ‘‘নিশ্চয়ই ইবনু ‘উমার (রাঃ) একজন লোককে দেখলেন ইহরাম অবস্থায় সওয়ারীর পিঠে উঠে কোন কিছুর মাধ্যমে ছায়া গ্রহণ করছে ফলে তিনি তাকে নিষেধ করলেন এবং বললেন, (اضح لمن احرمت له) অর্থাৎ- ‘যার জন্য হারাম করা হয়েছিল তা বৈধ করলে’।’’

‘আল্লামা শানক্বীতী (রহঃ) বলেনঃ সামিয়ানা, তাঁবু গাছ, কাপড় ইত্যাদির মাধ্যমে ছায়া গ্রহণ বৈধ, এতে সবার ঐকমত্য রয়েছে ইমাম মালিক (রহঃ) থেকে গাছের উপর কাপড় লটকিয়ে ছায়া গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। ‘আবদুল মালিক বিন মাজিশূন (রহঃ) সেটাকে গাছের উপর ক্বিয়াস করে বৈধ বলেছেন এবং এটাই বেশি গ্রহণযোগ্য।

এ বিষয়ে সঠিক কথা হলো যে কোন অবস্থাতেই مطلقا তথা সাধারণভাবেই ছায়া গ্রহণ বৈধ উপরোক্ত হাদীসের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত আর যেহেতু এ বিষয়ে সুন্নাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট। সুতরাং তা আকড়ে ধরাই উৎকৃষ্ট সমাধান। সেটা বাদ দিয়ে কোন মুজতাহিদের কথার দিকে যাওয়া জায়িয হবে না। তিনি যত বড়ই জ্ঞানী হোন না কেন?

অন্য রিওয়ায়াতে রয়েছে যে, (رافع ثوبه على رأس رسول الله - ﷺ - من الشمس) অর্থাৎ- ‘‘সূর্যের তাপ থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রক্ষা করার জন্য তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয় কাপড় তাঁর মাথার উপর উঁচু করে ধরে ছিলেন।’’

ইমাম আহমাদ (রহঃ) আবূ উমামাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিত,

رأى النبي - ﷺ-  (راح إلى منى يوم التروية وإلى جانبه بلال، بيده عود عليه ثوب يظلل به رسول الله - ﷺ-)

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারবিয়ার দিন মিনার দিকে রওয়ানা হলেন। তাঁর পাশে ছিলেন বিলাল (রাঃ), তার হাতে একটি লাকড়ি ছিল যাতে একটি কাপড় ছিল, তা দিয়ে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ছায়া দিচ্ছিলেন।

এ হাদীস প্রমাণ করে যে, মুহরিম ব্যক্তির মাথার উপরে কাপড় বা অন্য কোন জিনিসের মাধ্যমে ছায়ার ব্যবস্থা করা বৈধ আছে। এই মত পোষণ করেছেন ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ), আর অধিকাংশ ‘আলিমগণও এই দুই হাদীসের মাধ্যমে দলীল গ্রহণ করেছেন (অর্থাৎ- উম্মুল হুসায়ন ও আবূ উমামাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণিত)। আর আমি (মুবারকপূরী) মালিক ও আহমাদ (রহঃ)-এর মত হল, শুধুমাত্র অবতরণের সময় ছাড়া অন্য কোন সময় মুহরিমের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করা বৈধ নয়। ইমাম আহমাদ (রহঃ) হতে অন্য রিওয়ায়াতে বর্ণিত হয়েছে যে, যদি ছায়ার ব্যবস্থা করে তার জন্য কোন মুক্তিপণ দিতে হবে না। তবে যদি ছাদের নিচে অথবা তাঁবুর নিচে হয় তাহলে বৈধ রয়েছে।

ইমাম মালিক ও আহমাদ (রহঃ) দলীল গ্রহণ করেছেন, ছায়া নিষেধ হওয়ার ব্যাপারে ইমাম বায়হাক্বীর সহীহ সনদে বর্ণিত হাদীস দ্বারা, যা বর্ণনা করেছেন ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে।

ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর কথার দ্বারা যে জওয়াব দেয়া হয়েছে তাতে কোন নিষেধের প্রমাণ নেই। আর জাবির-এর হাদীসটি যা বর্ণনা করেছেন ইমাম বায়হাক্বী, তা য‘ঈফ হওয়া সত্ত্বেও এ প্রমাণ বহন করে না যে, ছায়ার ব্যবস্থা করা নিষেধ। আর তাতে যা রয়েছে তা হল উত্তম।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ জাবির-এর হাদীসটি য‘ঈফ হওয়া সত্ত্বেও এতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। অনুরূপভাবে ‘উমারের কাজ ও কথার মাঝে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। যদি থাকত তাহলে উম্মুল হুসায়ন বর্ণিত হাদীসটিই তার ওপর প্রাধান্য পেত।

‘আল্লামা শানক্বীত্বী (রহঃ) বলেনঃ মালিকীদের নিকটে মুহরিম ব্যক্তির মাথার উপর ছায়ার ব্যবস্থা করা বৈধ নয়, যদি করে তাহলে ফিদিয়া দিতে হবে। আর এ ব্যাপারে যারা বলেছেন ফিদিয়া দেয়া আবশ্যক নয়, তাদের নিকটে এটাই সঠিক। আর উম্মুল হুসায়ন (রাঃ) বর্ণিত হাদীস যাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাথার উপর কাপড় দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, এমতাবস্থায় তিনি পাথর নিক্ষেপ করছিলেন। অনুসরণের ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতই অধিক উত্তম। মালিকীদের নিকটে বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য মুহরিম ব্যক্তি মাথার উপর কাপড় ঝুলাতে পারে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে

২৬৮৮-[১১] কা’ব ইবনু ’উজরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় পৌঁছার আগে হুদায়বিয়ায় তাঁর (কা’ব-এর) নিকট দিয়ে গেলেন। তখন তিনি (কা’ব) ইহরাম অবস্থায় একটি হাঁড়ির তলায় আগুন ধরাচ্ছে, আর তার মুখমণ্ডল বেয়ে উকুন ঝরছিল। এটা দেখে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার (গায়ের) পোকা কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? তিনি (কা’ব) বললেন, জি, হ্যাঁ। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে তুমি তোমার মাথা মুণ্ডন করে ফেলো এবং ছয়জন মিসকীনকে এক ’ফারাক্ব’ খাবার খাওয়াও কিংবা তিনদিন সিয়াম পালন কর অথবা একটি পশু কুরবানী কর। বর্ণনাকারী বলেন, এক ’ফারাক্ব’ তিন সা’-এর সমতুল্য। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَجْتَنِبُهُ الْمُحْرِمُ

وَعَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ بِهِ وَهُوَ بِالْحُدَيْبِيَةَ قَبْلَ أَنْ يَدْخُلَ مَكَّةَ وَهُوَ مُحْرِمٌ وَهُوَ يُوقِدُ تَحْتَ قِدْرٍ وَالْقَمْلُ تهافت عَلَى وَجْهِهِ فَقَالَ: «أَتُؤْذِيكَ هَوَامُّكَ؟» . قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: «فَاحْلِقْ رَأْسَكَ وَأَطْعِمْ فَرَقًا بَيْنَ سِتَّةِ مَسَاكِينَ» . وَالْفَرَقُ: ثَلَاثَةُ آصُعٍ: «أَوْ صُمْ ثَلَاثَةَ أَيَّام أوانسك نسيكة»

ব্যাখ্যা: ইবনু ‘আবদুল বার আহমাদ বিন সালিহ আল মিসরী থেকে বর্ণনা করে বলেছেন, ফিদ্ইয়ার ক্ষেত্রে কা‘ব বিন ‘উজরার হাদীসটিই সুন্নাত এটাই ‘আমলযোগ্য। সাহাবীদের মধ্যে কেবল তিনিই এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন আর তার থেকে কেবল ইবনু আবী লায়লা ও ইবনু মা‘ক্বিল- এ দু’জন বর্ণনা করেছেন। তিনি আরো বলেন, এটা সুন্নাত আহলে কূফা থেকে আহলে মাদিনী এ ‘আমল গ্রহণ করেছেন।

ইমাম যুহরী (রহঃ) বলেন, এ বিষয়টি সম্পর্কে আমি আমাদের ‘উলামায়ে কিরামদের জিজ্ঞেস করেছিলাম এমনকি সা‘ঈদ বিন মুসাইয়্যিবকেও কিন্তু ক’জন মিসকীনকে খাওয়াতে হবে ফিদ্ইয়ার জন্য তা কেউ বর্ণনা করেননি। হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, ইবনু সালিহ যা বলেছেন তাতে সমস্যা আছে। কেননা এ রিওয়ায়াতটি কা‘ব বিন ‘উজরা ছাড়াও সাহাবীদের একটি দল বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তিনি তাদের উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, উল্লেখিত ব্যক্তিরা ছাড়াও কা‘ব থেকে এ রিওয়ায়াতটি আবূ ওয়ায়িল বর্ণনা করেছেন। যেটি ইমাম নাসায়ীর বর্ণনায় আছে আর ইমাম ইবনু মাজাহ মুহাম্মাদ বিন কা‘ব আল কুরাযীর সূত্রে, ইমাম আহমাদ ইয়াহ্ইয়া বিন জা‘দাহ্-এর সূত্রে।

মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেছেনঃ (ان النبى ﷺ مر به) এখানে বর্ণনাটি অর্থগত হয়েছে। আমি (‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী) বলব, অন্য বর্ণনায় আছে, (وقف عل رسول الله ﷺ بالحديبية) অর্থাৎ- তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসেছিলেন হুদায়বিয়ার সময়।

অপর বর্ণনায় আছে, (اتى على رسول الله ﷺ زمن الحديبية) অর্থাৎ- কা‘ব বিন ‘উজরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলেন হুদায়বিয়ার সময়।

কোন রিওয়ায়াতে আছে, (أتيت رسول الله ﷺ فقال : ادنه فدنوت، فقال : ادنه، فدنوت) অর্থাৎ- আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলাম তিনি আমাকে বললেন, তুমি নিকটে আসো, সুতরাং আমি নিকটে আসলাম তিনি আমাকে আবার বললেন, আরো নিকটে আসো, ফলে আমি আরো নিকটে আসলাম।

কোন রিওয়ায়াতে আছে, (حملت الى رسول الله صلى الله عليه وسلم والقمل يتاثر على وجهى)

অর্থাৎ- আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলাম আর এমতাবস্থায় আমার চেহারায় উকুন হাঁটছিল তখন তিনি বললেন, তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। অন্য রিওয়ায়াতে আছে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মুহরিম অবস্থায় সাক্ষাৎ করলেন, আর এমতাবস্থায় উকুন তার মাথা ও দাড়ি দিয়ে হাঁটছিল- এটা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে পারলেন এবং নাপিত ডেকে তার মাথা হলক করে দিলেন।

(فَاحْلِقْ رَأْسَكَ) এখানে নির্দেশটি (إباحة) তথা বৈধতার অর্থ দিবে এমনই বলেছেন মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) অন্য বর্ণনায় আছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আদেশ করলেন মাথা মুণ্ডন করতে।

‘আল্লামা বাজী (রহঃ)-এর নির্দেশ ওয়াজিব ও মানদূবের দাবী করলেও, এখানে সম্ভবত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাথা হলকের কাজটিকে মানদূবই বলেছেন। আর মানদূব হওয়াই শ্রেয় মনে করেছেন। কেননা আমরা অপর বর্ণনায় পাই যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মানুষকে নিষেধ করেছেন নিজের ওপর অতিরিক্ত বোঝা নিতে, যা সে বহন করতে পারবে না। এজন্য আমরা দেখতে পাই হাওলাহ্ বিনতু তুয়াইত-এর জন্য রাতে না ঘুমিয়ে ‘ইবাদাত করতে নিষেধ করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (اكلفوا من العمل ما تطيقون) অর্থাৎ- তোমাদের সাধ্যমতে তোমরা ‘আমল করি।

এখানে (فرقا) ‘‘ফারাক্ব’’ অর্থ হলো مكيال معروف بالمدينة মদীনায় পরিচিত এক প্রকার ওযন যা ১৬ রিতল সমপরিমাণ। হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, যখন এটা জানতে পারা গেছে যে, এক ‘‘ফারাক্ব’’ সমপরিমাণ তিন সা', তাহলে বুঝা গেল যে, এক সা' সমান ৫ রিতল ও এক-তৃতীয়াংশ। তবে তার বিপরীত কেউ বলেছেন, এক সা' সমপরিমাণ ৮ রিতল।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, সুতরাং প্রতিটি মিসকীন পাবে অর্ধ সা'- এক্ষেত্রে তাদেরকে প্রদত্ত পরিমাণসম হওয়া জরুরী।

‘আল্লামা বদরুদ্দীন ‘আয়নী (রহঃ) বলেছেন, ৬ জন মিসকীনদের যে খাদ্য দিতে বলা হয়েছে তার কম দিলে বৈধ হবে না- এটাই অধিকাংশ ‘আলিমের কথা, তবে ইমাম হানীফা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করা হয়েছে যে, এসব খাদ্য একজন মিসকীনকে দিলেও তা যথেষ্ট হবে।

(أَوْ صُمْ ثَلَاثَةَ أَيَّامِ)-এর ব্যাখ্যাঃ এ কথাটি কুরআনে কারীমের (ففدية من صيام) এর ব্যাখ্যা স্বরূপ।

ইবনুত্ তীন সহ অন্যান্যরা বলেছেন, এখানে শারী‘আত প্রণেতা একটি সওমকে এক সা'-এর স্থলাভিষিক্ত করেছেন, অপরদিকে রমাযান মাসের একটি সওমকে এক মুদ সমপরিমাণ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে যিহার তথা স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে ‘‘মা’’-এর পিঠের সাথে সাদৃশ্য দেয়া এবং রমাযান মাসে দিনে স্ত্রী সহবাসের ক্ষেত্রে এবং শপথ ভঙ্গের কাফফারার ক্ষেত্রে যে সওম রাখতে হয় তাকে তিন মুদ-এর এবং এক-তৃতীয়াংশের সমতুল্য বলা হয়েছে। সুতরাং এখান থেকে বুঝা গেল, শারী‘আত কর্তৃক নির্ধারিত কোন বিষয়ে ক্বিয়াসের কোন দখল নেই যেখানে যা নির্ধারিত সেখানে তাই মানতে হবে। হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) তাঁর ‘ফাতহুল বারী’-তে এমনটাই বলেছেন।

এ হাদীস থেকে আরো বুঝা গেল যে, মাথার চুল হলক করার জন্য যে ফিদিয়া আবশ্যক হয়েছে তা যদি কেউ সওমের মাধ্যমে আদায় করেন তাহলে তাকে তিনটি সওম রাখতে হবে। অবশ্য ইতিপূর্বে হাসান বাসরী (রহঃ) থেকে বর্ণনা গেছে সেখানে রয়েছে, দশদিন সওম পালনের কথা।

‘আল্লামা ইবনু কাসীর (রহঃ) এ প্রসঙ্গে বলেছেন, হাসান (রহঃ)-এর হাদীসটি একটি বিরল কথা এতে সমস্যা রয়েছে কেননা কা‘ব বিন ‘উজরাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, তিনদিন সওম পালনের কথা দশদিন নয়।

ইবনু ‘আবদুল বার (রহঃ) বলেছেন, তার ‘‘আল ইসতিযকার’’ নামক কিতাবে হাসান বাসরী (রহঃ) ‘ইকরামাহ্ এবং নাফি' থেকে দশদিন সাওম পালনের যে কথা এসেছে তা কেউ সমর্থন করেননি।

এ ক্ষেত্রে আরেক মাসআলাহ্ হলো, এ সওম রাখার বিষয়ে অর্থাৎ- তা মক্কাতে অবস্থানকালেই রাখতে হবে না বাড়িতে এসে রাখতে হবে- এ ব্যাপারে চার ইমামসহ অন্যান্যদের ঐকমত্যে যেখানে খুশি সেখানেই রাখা যাবে, তবে খাদ্য খাওয়ানোর বিষয়ে মতপার্থক্য আছে। ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম আহমাদ বলেছেন, হারামের অবস্থানের সময়েই খাওয়াতে হবে। তবে ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) ও ইমাম মালিক (রহঃ) বলেছেন, যেখানে খুশি সেখানেই খাওয়াতে পারবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে

২৬৮৯-[১২] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদেরকে তাদের ইহরামে হাত মোজা ও বোরকা এবং ওয়ারস্ (জা’ফরানে রঞ্জিত কাপড়) পরতে নিষেধ করতে শুনেছেন। তারপর (ইহরামের পর) তারা যে কোন কাপড় পছন্দ করে পরতে পারবে- তা কুসুমী বা রেশমী হোক অথবা যে কোন ধরনের অলংকার অথবা পাজামা বা পিরান বা মোজা পরতে পারে। (আবূ দাঊদ)[1]

عَنِ ابْنِ عُمَرَ: أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْهَى النِّسَاءَ فِي إِحْرَامِهِنَّ عَنِ الْقُفَّازَيْنِ وَالنِّقَابِ وَمَا مَسَّ الْوَرْسُ وَالزَّعْفَرَانُ مِنَ الثِّيَابِ وَلْتَلْبَسْ بَعْدَ ذَلِكَ مَا أحبَّتْ من ألوانِ الثيابِ معصفر أوخز أَو حلي أَو سروايل أَو قميصٍ أَو خُفٍّ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যা: (النِّقَابِ) ‘‘নিক্বাব’’ এখান থেকে বুঝা যায় মুহরিমার জন্য জায়িয নেই মোজা ও বোরকা পরা, আর এটাই সহীহ এবং সঠিক।

(مُعَصْفَرٍ) আমি [‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ)] বলব, (مُعَصْفَرٍ) শব্দটি মিশকাত ও মাসাবীহের সব পাণ্ডুলিপিতে এ শব্দই রয়েছে। আবূ দাঊদে রয়েছে (مُعَصْفَرٍ) এমনটাই বলেছেন আল মুনতাকা কিতাবের লেখক এবং শারহুল মুহাযযাব-এর লেখকের ‘আল্লামা ইমাম নাবাবী, হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) তাঁর ‘তালখীস’-এ, ইমাম বায়হাক্বী তাঁর ‘সুনান’-এ, ইমাম যায়লা‘ঈ তাঁর ‘নাসবুর রায়াহ্’-এ। ইমাম হাকিম তাঁর ‘মুসতাদরাক’ কিতাবে বলেছেন, (من معصفر) অর্থাৎ- من অতিরিক্ত করে। ইবনু ‘আবদুল বার-এর ‘‘জামি‘উল উসূল’’-এও এমনটিই আছে।

এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, মুহরিমার জন্য ‘উসফুর (হলুদ) রঙের কাপড় পরিধান জায়িয আছে- এমনটাই মতামত ব্যক্ত করেছেন ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম আহমাদ। ইমাম মালিক (রহঃ) এটাকে মাকরূহ বলেছেন এবং ইমাম সাওরী ও ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) এটা নিষেধ করেছেন। খারক্বী (রহঃ) বলেন, উসফুর রং মিশ্রিত কাপড় পরতে কোন অসুবিধা নেই।

‘আল্লামা ইবনু কুদামাহ্ বলেছেনঃ উসফুর যেহেতু কোন সুগন্ধি না তাই সেটা ব্যবহারে এবং তার ঘ্রাণ নিতে কোন অসুবিধা নেই- এটাই জাবির ইবনু ‘উমার, ‘আবদুল্লাহ বিন জা‘ফার, ‘আক্বীল বিন আবী ত্বলিব বলেছেন; এটা ইমাম শাফি‘ঈ-এরও মত। ‘আল্লামা শানক্বীতী (রহঃ) বলেছেন, সঠিক কথা হলো উসফুর কোন সুগন্ধি নয়, ঠিক তবে তা পরিধান করা জায়িয নেই।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে

২৬৯০-[১৩] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ইহরাম অবস্থায় ছিলাম, তখন আরোহী দল আমাদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করতো। তারা আমাদের কাছাকাছি আসলে আমাদের সকলেই নিজ নিজ মাথার চাদর চেহারার উপর ঢেকে দিতাম। আর তারা চলে যেত আমরা তখন তা (খুলতাম) সরিয়ে নিতাম। (আবূ দাঊদ, আর ইবনু মাজাহ এর মর্মার্থ)[1]

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ الرُّكْبَانُ يَمُرُّونَ بِنَا وَنَحْنُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُحْرِمَاتٌ فَإِذَا جَاوَزُوا بِنَا سَدَلَتْ إِحْدَانَا جِلْبَابَهَا مِنْ رَأْسِهَا عَلَى وجهِها فإِذا جاوزونا كشفناهُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَلابْن مَاجَه مَعْنَاهُ

ব্যাখ্যা: এ হাদীসটি থেকে বুঝা যায়, প্রয়োজন সাপেক্ষে মুহরিমাহ্ মহিলা তার চেহারার উপর পর্দা দিতে পারে যেমনটি ‘আমল করেছেন উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) ও তার সাথের অন্যান্য মহিলা সাহাবী (রাঃ), অথচ তারা ছিলেন মুহরিমাহ্ ঠিক এ মুহূর্তে তারা পুরুষদের পাশ অতিক্রমকালে মুখে পর্দা ফেলেছিলেন যদিও মুহরিমাহ্ অবস্থায় মুখে পর্দা ফেলানো বা মুখ ঢেকে রাখা ঠিক নয়।

‘আল্লামা খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, মুহরিমাহ্ মুখে নিক্বাব দিবে না- এ মর্মে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা রয়েছে কিন্তু মাথা থেকে কাপড় একটু ঝুলিয়ে দেবার ব্যাপারে একাধিক ফকীহ মতামত দিয়েছেন। তবে নিষেধ করেছেন ওড়না, কাপড়- এগুলো মুখে শক্ত করে বাঁধতে এবং বোরকা পরতে। প্রথম কথার কথক হলেন ‘আত্বা, মালিক, সুফিয়ান, সাওরী, আহমাদ বিন হাম্বল, ইসহাক, মুহাম্মাদ ইবনু হাসান, ইমাম শাফি‘ঈ এটাকে সহীহ বলেছেন এবং এ কথাই বলেছেন ‘আল্লামা শাওকানী (রহঃ) এবং ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর ছাত্রবৃন্দ।

‘আল্লামা ইবনু কুদামাহ্ (রহঃ) তাঁর মুগনী কিতাবে (৩য় খণ্ড ৩২৬ পৃষ্ঠায়) বলেন, পুরুষদের নিকট দিয়ে অতিক্রমকালে মুহরিমাহ্ যদি প্রয়োজনবোধ করেন তার মুখ ঢেকে রাখতে, তাহলে মাথার উপরের কাপড়টি তার মুখে ঝুলিয়ে দিতে পারেন।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে

২৬৯১-[১৪] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধিহীন তেল ব্যবহার করতেন। (তিরমিযী)[1]

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَدَّهِنُ بالزيت وَهُوَ محرمٌ غيرَ المقنّتِ يَعني غيرَ المطيَّبِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, তেল যদি সুগন্ধি মিশ্রিত না থাকে তাহলে তা দ্বারা তেল মালিশ করা জায়িয। কিন্তু অত্র হাদীসটি একটি য‘ঈফ হাদীস। আরো বুঝা গেল যদি তেলে সুগন্ধি মিশ্রিত থাকে তাহলে মালিশ বৈধ হবে না মুহরিমের জন্য। ‘আল্লামা ইবনুল মুনযীর (রহঃ) বলেন, মুহরিমের জন্য যায়তুন, চর্বি, ঘি এবং তিলের তৈল খাওয়া এবং তা মাথা ও দাড়ি ব্যতীত মাখানো জায়িয। তিনি আরো বলেছেন, ‘উলামায়ে কিরামের ঐকমত্যে মুহরিমের শরীরে সুগন্ধি ব্যবহার নিষেধ তবে যায়তুন মাখতে পারে।

আমি [‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ)] বলব, তেল সারা শরীরে মাথা ও দাড়ি ব্যতীত ব্যবহার জায়িয- এটা সকলের ঐকমত্যের কথা যারা বলেছেন তাদের কথার ভিতর ইজমা নিয়ে একটু সংশয় রয়েছে।

কেননা হানাফী ও মালিকী বিদ্বানদের কথা থেকে বুঝা যায় যে, তারা তেল মালিশ করার বিপক্ষে। যেমন প্রসিদ্ধ ফিকহের কিতাব হিদায়াতে রয়েছে, ‘‘মুহরিম কোন প্রকার সুগন্ধি ব্যবহার করবে না। যেহেতু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, الحاج الشعث التفل হাজী নিজেকে আল্লাহমুখী করতে গিয়ে এলোমেলো করে রাখবে।

‘আল্লামা ইবনুল হুমাম (রহঃ) বলেন, والشعث انتشار الشعر وتغييره لعد تعهده অর্থাৎ- شعث অর্থ হলো চুল বিক্ষিপ্ত ও পরিবর্তন করে রাখা নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার মাধ্যমে। সুতরাং এ হাদীসই প্রমাণ করে মুহরিম তেল মাখবে না, কারণ তেল মাখালে তো আর চুল এলোমেলো থাকে না।

‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) তাঁর ‘‘শারহুল মানাসিক’’ নামক কিতাবে বলেন, ‘‘যদি মুহরিম সুগন্ধি মিশ্রিত ছাড়া তেল যেমনঃ খাঁটি তেল অথবা তেলের অধিকাংশটা যায়তুন ব্যবহার করে তাহলে ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) বলেছেন, তার ফিদিয়া দেয়া লাগবে। আর ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহঃ) বলেছেন, সাদাকা দিতে হবে। তবে আবূ হানীফা (রহঃ) থেকে সাদাকা দেয়ার মতও পাওয়া যায়। অপরদিকে যদি পুরোটাই যায়তুন হয়, তাহলে সকলের ঐকমত্যে সাদাকা দিতে হবে। যদি সে সুগন্ধি তেল মাখে তাহলে এ ফাতাওয়া, তবে যদি ঔষধ হিসেবে তেল মাখে অথবা খায় তাহলে সকলের ঐকমত্যে তাকে কোন কিছুই দেয়া লাগবে না। যদি ঘি, চর্বি, তেল হিসেবে ব্যবহার করে অথবা তা যদি ভক্ষণ করে তাহলে কোন অসুবিধা নেই। এ ক্ষেত্রে চুল আর শরীরের মধ্যে কোন পার্থক্য হবে না।

আল বাযায়ী কিতাবে আছে, যদি মুহরিম এমন কোন প্রকার তেল মাখে যা সুগন্ধিযুক্ত এবং তা যদি শরীরের পুরো অঙ্গে হয় তাহলে তার ওপর ফিদিয়া দেয়া আবশ্যক। আর যদি সুগন্ধি মিশ্রিত না হয় তাহলে ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) বলেন, তারও ফিদিয়া দেয়া লাগবে। আর ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহঃ) বলেছেন, সাদাকা দিতে হবে। আমাদের সাথীরা বলেছেন, ‘‘শরীরে যেসব জিনিস ব্যবহার করা হয় তা মোটামুটি তিন প্রকার।

এক প্রকার হল যা শুধুই সুগন্ধি, যেমনঃ মিসকে আম্বার কোন মুহরিম যদি এ প্রকারের সুগন্ধি ব্যবহার করেন যেভাবেই করুন না কেন তার কাফফারাহ্ আবশ্যক হবে। এমনকি যদি এর মাধ্যমে তার চোখের ঔষধ লাগিয়ে থাকেন তাহলেও একই হুকুম।

দ্বিতীয় প্রকার হলো যেটা বস্ত্তত কোন সুগন্ধি নয় যেমনঃ চর্বি, সুতরাং মুহরিম যদি এটার মাধ্যম তেল মালিশ করে বা খেয়ে ফেলেন তাতে কোন সুগন্ধি নয় তবে মাঝে মধ্যে তা সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেমনঃ তেল, তিলের তেল ইত্যাদি। সুতরাং যদি কোন মুহরিম এটাকে সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহার করে তাহলে তার ওপর কাফফারাহ ওয়াজিব হবে। পক্ষান্তরে যদি খাওয়ার কাজে বা ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করে তাহলে কাফফারাহ আবশ্যক হবে না।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে

২৬৯২-[১৫] নাফি’ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) শীত অনুভব করে বললেন, নাফি’! আমার গায়ে একটি কাপড় জড়িয়ে দাও। (নাফি’ বলেন) আমি তাঁর গায়ের উপর একটি ওভারকোট জড়িয়ে দিলাম। তখন তিনি (ইবনু ’উমার) বললেন, আমার গায়ে ওভারকোট জড়িয়ে দিলে অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিমের জন্য তা নিষেধ করেছেন। (আবূ দাঊদ)[1]

عَنْ نَافِعٍ
أَنَّ ابْنَ عُمَرَ وَجَدَ الْقُرَّ فَقَالَ: ألق عَليّ ثوبا نَافِعُ فَأَلْقَيْتُ عَلَيْهِ بُرْنُسًا فَقَالَ: تُلْقِي عَلَيَّ هَذَا وَقَدْ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَلْبَسَهُ الْمُحْرِمُ؟ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد؟

ব্যাখ্যা: (قَدْ نَهٰى رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ أَنْ يَلْبَسَهُ الْمُحْرِمُ؟) ‘‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিম ব্যক্তিকে তা পড়তে নিষেধ করেছেন’’। ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেনঃ নাফি' (রহঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর শরীরের উপর ঢিলেঢালা লম্বা পোশাক ঝুলিয়ে দিলেন। আমাদের মত হলো, মুহরিম ব্যক্তির জন্য সেলাই করা পোশাক পড়া অথবা তা দ্বারা শরীরের কোন অঙ্গ ঢেকে ফেলা বৈধ নয়। শুধুমাত্র অপারগ অবস্থা ছাড়া। তিনি আরো বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) সাবধানতা অবলম্বনের জন্য সেলাই করা কাপড়কে মুহরিম ব্যক্তির জন্য অপছন্দ করতেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে

২৬৯৩-[১৬] ’আব্দুল্লাহ ইবনু মালিক ইবনু বুহায়নাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম বাঁধা অবস্থায় মক্কার পথে ’লুহা- জামাল’ নামক জায়গায় নিজের মাথার মাঝখানে শিঙ্গা লাগিয়েছিলেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَالِكٍ بن بُحَيْنَةَ قَالَ: احْتَجَمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مُحْرِمٌ بِلَحْيِ جَمَلٍ مِنْ طريقِ مكةَ فِي وسط رَأسه

ব্যাখ্যা: কোন কোন বর্ণনায় لحيى جمل আছে, ‘জামাল’ মক্কা নগরীর একটি রাস্তার নাম। হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, বাকরী তাঁর ‘‘মু‘জামাহ্’’য় বলেছেন ‘জামাল’ হলো একটি কূপ যার আলোচনা তায়াম্মুম অধ্যায়ের মধ্যে আবূ জাহম-এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। ইবনু ওয়াযযাহ্ বলেন, ‘জামাল’ হলো জুহফার গিরিপথ মক্কায় হাজীদের পানি পান করানোর স্থান থেকে সাত মাইল দূরে। আল ক্বমূস প্রণেতা বলেন, لحى جمل হলো হারামায়নের মাঝে অবস্থিত একটি স্থান এবং তা মদীনার নিকটবর্তী।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে

২৬৯৪-[১৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় ব্যথার কারণে তাঁর পায়ের পাতার উপর শিঙ্গা লাগিয়েছিলেন। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]

وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: احْتَجَمَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مُحْرِمٌ عَلَى ظَهْرِ الْقَدَمِ مِنْ وَجَعٍ كَانَ بِهِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ

ব্যাখ্যা: নাসায়ীর বর্ণনায় রয়েছে, (وثئ) ‘‘ওয়াসয়ুন’’ হচ্ছে এমন আঘাত বা ব্যথা যা গোশতে হয় হাড্ডি পর্যন্ত পৌঁছে না, অথবা ব্যথাটি হাড় পর্যন্ত পৌঁছায় কিন্তু হাড় ভাঙ্গে না। ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেছেন, পায়ের উপরিভাগে শিঙ্গা লাগানো কোন চুল বা পশম কাটা ছাড়াই সম্ভব। সুতরাং চুল কাটা ছাড়া শিঙ্গা লাগালে তাতে কোন অসুবিধা নেই, পাশাপাশি শিঙ্গা তো লাগানো হয়েছে অসুস্থতার কারণে, তাই এখানে অতিরিক্ত আরো সুযোগ প্রদত্ত হল। আমি [‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ)] বলবো, এ হাদীসে আছে পায়ের উপরিভাগে শিঙ্গা লাগানোর কথা, কিন্তু ইবনু ‘আব্বাস ও ইবনু বুহায়নাহ্’র হাদীসে আছে, মাথা ব্যথার কারণে মাথায় শিঙ্গা লাগানোর কথা, আবার জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে পিঠের অথবা গুপ্তাঙ্গে। এগুলো ভিন্ন হওয়ার কারণ কয়েকটিঃ

১. দু’ ধরনের যন্ত্রণার জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ জায়গায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন।

২. একবার ছিল ‘উমরার ক্ষেত্রে আর অন্যবার ছিল বিদায় হজ্জের সময়। কেউ কেউ এর বলেছেন বিদায় হজ্জে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিঙ্গা লাগিয়েছেন একাধিকবার।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে

২৬৯৫-[১৮] আবূ রাফি’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবি মায়মূনাহ্-কে হালাল অবস্থায় বিয়ে করেছিলেন এবং হালাল অবস্থায়ই তার সাথে মেলামেশা করেছিলেন। আর আমিই ছিলাম তাদের মধ্যে বার্তাবাহক। (আহমাদ, তিরমিযী; ইমাম তিরমিযী হাদীসটি হাসান বলেছেন)[1]

وَعَن أبي رافعٍ
قَالَ: تَزَوَّجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَيْمُونَةَ وَهُوَ حَلَالٌ وَبَنَى بِهَا وَهُوَ حَلَالٌ وَكُنْتُ أَنَا الرَّسُولَ بَيْنَهُمَا. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ

ব্যাখ্যা: এ হাদীসটি প্রথম পরিচ্ছেদের ইয়াযীদ বিন আসম-এর, যা পূর্বে চলে গেছে তারই মত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়মূনাহ্ (রাঃ)-কে বিবাহ করেছেন হালাল অবস্থায় যদিও এ বর্ণনাটি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনার বিপরীত। ইমাম হাযিমী তাঁর কিতাব ‘বায়ানুন্ নাসিখ ওয়াল মানসূখ’ (পৃঃ ১১) বলেন, আবূ রাফি'-এর হাদীসই বেশি ‘আমলের উপযুক্ত, কারণ তিনি হচ্ছেন ঘটনার বাস্তবসাক্ষী আর ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হলেন বর্ণনাকারী। সুতরাং বাস্তব সাক্ষী যিনি তার বর্ণনার সাথে অন্য কোন সাধারণ বর্ণনাকারীর বর্ণনা যদি সাংঘর্ষিক হয় তাহলে বাস্তবসাক্ষী যিনি তার বর্ণনাটা অগ্রাধিকার পাওয়াই স্বাভাবিক। এমনটাই ঘটেছিল যখন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) মোজার উপর মাসেহ করার মাসআলাহ্ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন তখন তিনি মাসআলাটি প্রশ্নকারীকে ‘আলী (রাঃ)-এর নিকট থেকে জেনে নিতে বলেন এবং বলেন, কারণ ‘আলী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সফর করতেন। সুতরাং সফরে মোজার উপর মাসেহ কেমন হবে তা আমার চেয়ে তিনিই ভালো জানেন। এ মতই ইমাম যায়লা‘ঈ সমর্থন করেছেন। (নাস্বুর রায়াহ ৩য় খণ্ড পৃঃ ১৭৪)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুহরিম ব্যক্তির শিকার করা হতে বিরত থাকবে

المحرم – يجتنب الصيد মুহরিম ব্যক্তি শিকার করা হতে বিরত থাকবে। তথা তা হত্যা ও শিকার করা হতে বিরত থাকবে যদিও সে তা ভক্ষণ না করে এবং তা ভক্ষণ করে যদি অন্য মুহরিম ব্যক্তি তা যাবাহ করবে না।

মুল্লা ’আলী কারী বলেনঃ শিকার দ্বারা উদ্দেশ্য সে সব বন্যজন্তু, সৃষ্টির মূলনীতিতে পৃথিবীতে যার জন্ম ও বংশ বিস্তার রয়েছে।

আর সমুদ্রের শিকার মুহরিম ও অমুহরিম সবার জন্য বৈধ। খাদ্য হিসেবে হোক বা না হোক, যেমন- আল্লাহ তা’আলার বাণী-

أُحِلَّ لَكُمْ صَيْدُ الْبَحْرِ وَطَعَامُهٗ مَتَاعًا لَكُمْ

’’তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও সমুদ্রের খাদ্য হালাল করা হয়েছে তোমাদের উপকারার্থে।’’ (সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৯৬)

’আল্লামা শানক্বীত্বী বলেনঃ ’’তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার হালাল করা হয়েছে’’। আল্লাহ তা’আলার এ বাণী সুস্পষ্ট ’আম্ প্রমাণ করে সমুদ্রের শিকার হজ্জ/হজ ও ’উমরাহকারী মুহরিম ব্যক্তির জন্য বৈধ, অনুরূপ আল্লাহ তা’আলা খাসভাবে বর্ণনা করেছেন যে, মুহরিম ব্যক্তির ওপর স্থল শিকার হারাম।

وَحُرِّمَ عَلَيْكُمْ صَيْدُ الْبَرِّ مَا دُمْتُمْ حُرُمًا

’’তোমাদের ইহরামকারীদের জন্যে হারাম করা হয়েছে স্থল শিকার যতক্ষণ ইহরাম অবস্থায় থাকো।’’ (সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৯৬)

এটা হতে সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, মুহরিম ব্যক্তির জন্য সমুদ্রের শিকার হারাম নয়।

ইবনু কুদামাহ্ বলেনঃ মুহরিম ব্যক্তির জন্য সমুদ্রের শিকার বৈধ। আল্লাহ তা’আলার এ বাণী দ্বারা-

أُحِلَّ لَكُمْ صَيْدُ الْبَحْرِ وَطَعَامُه

’’তোমাদের জন্যে সমুদ্রের শিকার ও সমুদ্রের খাদ্য হালাল করা হয়েছে।’’ (সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৯৬)

বিজ্ঞ ’উলামাহগণ ঐকমত্য পোষণ করেন যে, সমুদ্রের শিকার মুহরিম ব্যক্তির জন্য শিকার করা, খাওয়া এবং ক্রয়-বিক্রয় করা বৈধ। আর সমুদ্রের শিকার বলতে এমন প্রাণীকে বুঝায় যা সমুদ্রে জীবন-যাপন করে সেখানেই ডিম পাড়ে এবং বাচ্চা ফুটায়, যেমন- মাছ, কচ্ছপ, কাকড়া ইত্যাদি অনুরূপ।

আর স্থল শিকার হজ্জ/হজ ও ’উমরাহকারী মুহরিম ব্যক্তির জন্যে সকল ’উলামাগণের মতে হারাম আর ঐকমত্য এমন বন্যজন্তুর ক্ষেত্রে যার মাংস (গোসত/মাংস) খাওয়া হালাল, যেমন হরিণ ও হরিণের বাচ্চারা অনুরূপ জন্তু, আর শিকারী জন্তুর প্রতি ইঙ্গিত করাও হারাম। আর শিকারীর ব্যাপারে কোন প্রকার সাহায্য করাও হারাম।

ইমাম শাফি’ঈ-এর নিকট শিকার বলতে যার মাংস (গোসত/মাংস) খাওয়া হালাল এমন পশু শিকার করা। আর যার মাংস (গোসত/মাংস) খাওয়া হালাল নয় এমন পশু শিকারে কোন বাধা নেই। তবে সদ্য ভূমিষ্ট শিশু জন্তু চাই তার মাংস খাওয়া হালাল হোক বা না হোক তা শিকার করা বৈধ নয়। যেমন- নেকড়ে শাবক যার জন্ম হায়েনা ও বাঘের সংমিশ্রণে। তিনি আরো বলেনঃ শকুন, সিংহ অনুরূপ শিকার ও যার মাংস খাওয়া হারাম এমন পশু শিকারে বাধা নেই। কেননা তা শিকারের অন্তর্ভুক্ত নয়, মহান আল্লাহ তা’আলার বাণী-

وَحُرِّمَ عَلَيْكُمْ صَيْدُ الْبَرِّ مَا دُمْتُمْ حُرُمًا

’’আর তোমাদের ইহরামধারীদের জন্য হারাম করা হয়েছে স্থল শিকার যতক্ষণ ইহরাম অবস্থায় থাকো’’- (সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৯৬)। আর এটা ইমাম আহমাদ-এর মাযহাব।

ইবনু কুদামাহ্ বলেনঃ শিকার তথা যা হত্যাতে জরিমানা ওয়াজিব হয় তা এমন জন্তু যা তিনটি বিষয়কে একত্রিত করে। যার মাংস খাওয়া বৈধ কিন্তু তার কোন মালিক নেই তা শিকার করা সম্পূর্ণ নিষেধ। সুতরাং প্রথম বৈশিষ্ট্য হতে বের হয়, যার মাংস হালাল নয় এবং হত্যাতে কোন জরিমানা নেই। যেমন- হিংস্র প্রাণী এবং কষ্টদায়ক কীটপতঙ্গ, পাখি।

ইমাম আহমাদ বলেনঃ জরিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে হালাল জন্তু শিকারে- এটা অধিকাংশ ’উলামাগণের বক্তব্য; তবে শিশু জন্তুর ক্ষেত্রে চাই তার মাংস হালাল হোক বা না হোক, যেমন নেকড়ে শাবক যা হত্যাতে জরিমানা রয়েছে অধিকাংশদের নিকট তা হত্যা করা হারাম।

দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য বন্যজন্ত। অতএব বন্যজন্তু নয় এমন জন্তু মুহরিম ব্যক্তির জন্য যাবাহ করা এবং খাওয়া হারাম নয় যেমন সকল চতুষ্পদ প্রাণী এবং ঘোড়া ও মুরগী এবং অনুরূপ প্রাণীর ব্যাপারে ’উলামাগণের মধ্যে কোন মতভেদ নেই।

হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ সকলে ঐকমত্য হয়েছেন শিকার দ্বারা উদ্দেশ্য এমন বন্যপশু যার মাংস খাওয়া হালাল।

ইবনু কুদামাহ্ বলেনঃ চতুষ্পদ গৃহপালিত জন্তুর ব্যাপারে ইহরামধারীর জন্য এবং হারামের মধ্যে অবস্থান হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোন প্রভাব পড়বে না। কেননা তা শিকারের অন্তর্ভুক্ত নয়। আর আল্লাহ তা’আলা শিকার করাকে হারাম করেছেন। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় হারামে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য উট কুরবানী করেছেন এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন-أفضل الحج العج والثج। সর্বোত্তম হজ্জ/হজ হলো চিৎকার করে তালবিয়াহ্ পাঠ করা, যাবাহ ও নাহর-এর মাধ্যমে রক্ত প্রবাহিত করা। আর এ ব্যাপারে কোন মতানৈক্য নেই। আর ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ গ্রন্থে বলেনঃ ইবনু ’আব্বাস ও আনাস মুহরিম ব্যক্তির যাবাহতে কোন দোষ মনে করতেন না।

মুল্লা ’আলী কারী বলেনঃ স্থলে যেসব জন্তুর মাংস খাওয়া হালাল তা সকলের ঐকমত্যে শিকার করা হারাম, আর সেসব জন্তুর মাংস খাওয়া হারাম তাদের ব্যাপারে বক্তব্য হলো- যদি তা কষ্ট দেয় এবং আক্রমণ করে এমন জন্তুকে হত্যা করা মুহরিম ব্যক্তির জন্য বৈধ এবং তাতে কোন জরিমানা নেই। যেমন- বাঘ, চিতা বাঘ, সিংহ ইত্যাদি।

আর যে প্রাণী অধিকাংশ সময়ে শুরুতেই কষ্ট দেয় না, যেমন- শিয়াল ইত্যাদি প্রাণী যদি তা আক্রমণ করে তাহলে হত্যা করা বৈধ, এতে কোন জরিমানা নেই।


২৬৯৬-[১] সা’ব ইবনু জাসামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি আব্ওয়া বা ওয়াদ্দান নামক স্থানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একটি বন্যগাধা (শিকার করে এনে) হাদিয়্যাহ্ (উপহার) দিলেন। কিন্তু তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) গাধাটি ফেরত দিলেন। এতে তার মুখমণ্ডল ে বিমর্ষভাব (মনোকষ্ট হওয়ার নিদর্শন) লক্ষ্য করে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমরা মুহরিম হওয়ার কারণে তা তোমাকে ফেরত দিলাম। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْمُحْرِمِ يَجْتَنِبُ الصَّيْدَ

عَن الصعب بن جثامة أَنه أهْدى رَسُول اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِمَارًا وَحْشِيًّا وَهُوَ بِالْأَبْوَاءِ أَوْ بِوَدَّانَ فَرَدَّ عَلَيْهِ فَلَمَّا رأى مَا فِي وَجْهَهُ قَالَ: «إِنَّا لَمْ نَرُدَّهُ عَلَيْكَ إِلَّا أنَّا حُرُمٌ»

ব্যাখ্যা: (أهْدٰى رَسُولَ اللّٰهِ ﷺ) ‘‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উপঢৌকন দিয়েছিল বিদায় হজ্জে।’’

(حِمَارًا وَحْشِيًّا) - জংলী গাধা অনুরূপ বর্ণনা মালিক যুহরী হতে, তিনি ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উত্ববাহ্ হতে, তিনি ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস হতে, তিনি সা‘ব ইবনু জাসামাহ্ হতে।

মালিক হতে বর্ণনাটি সকল রাবীদের ঐকমত্য এবং তার অনুসরণ করেছে যুহরীর নয়জন মেধাবী ছাত্র।

আর তাদের বিরোধিতা করেছে সুফিয়ান ইবনু ‘উয়াইনাহ্ যুহরী হতে, তিনি বলেছেন- أحديت له من لحم حمار وحش.- رواه مسلم ‘‘তাকে হাদিয়্যাহ্ দেয়া হয়েছে জংলী গাধার গোশ্‌ত (গোসত/গোশত)।’’ (সহীহ মুসলিম)

সা‘ঈদ ইবনু জুবায়র ইবনু ‘আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন (رجل حمار وحش) জংলী গাধার পা। অন্য রিওয়ায়াতে (عجز حمار وحش) জংলী গাধার পাছা, তাতে রক্ত ঝড়ছিল। আবার অন্য বর্ণনায় (شق حمار وحش) জংলী গাধার কিছু অংশ, আর এ বর্ণনাগুলো প্রমাণ করে গাধার কিছু অংশ হাদিয়্যাহ্ দেয়া হয়েছিল পূর্ণ গাধা নয়। এ দু’ বর্ণনার মাঝে বৈপরীত্য রয়েছে।

কেউ কেউ দু’ হাদীসের সমন্বয়কে প্রাধান্য দিয়েছে, আবার কেউ ইমাম মালিক-এর বর্ণনাকে প্রাধান্য দিয়েছে। যেমন- ইমাম শাফি‘ঈ বলেন। মালিক-এর হাদীস যে, সা‘ব গাধা হাদিয়্যাহ্ দিয়েছেন- এ হাদীসটি ‘‘গাধার গোশ্ত (গোসত/গোশত)’’-এর হাদীসের চেয়ে বেশী শক্তিশালী।

এজন্য ইমাম বুখারী অধ্যায় বেঁধেছেন- (باب إذا أهدى للمحرم حمارًا وحشيًا حيًا لم يقبل)

অর্থাৎ- যখন মুহরিম ব্যক্তিকে জীবিত জংলী গাধা উপহার দেয়া হবে তা গ্রহণ করা হবে না। অতঃপর মালিক-এর বর্ণনাকৃত হাদীসটি নিয়ে আসেন।

আবার ‘উলামাগণের মধ্যে কেউ গোশতের হাদীসকে প্রাধান্য দিয়েছেন। যেমন- ইবনু ক্বইয়্যিম (রহঃ) বলেন, গোশতের বর্ণনাকৃত হাদীসটি প্রাধান্য পাবে তিনটি কারণে।

১. এ হাদীসের বর্ণনাকারী হাদীস মুখস্থ করেছে এবং যথাযথভাবে ঘটনা সংরক্ষণ করেছেন। এমনকি বলেছেন- (أنه يقطر دمًا) ‘যে রক্ত ঝড়ঝড় করে পড়ছে’। এটা প্রমাণ করে ঘটনাকে দৃঢ়ভাবে সংরক্ষণের যা অস্বীকার করা যাবে না।

২. গাধা এবং গোশ্‌ত (গোসত/গোশত) দু’টি শব্দে কোন বৈপরীত্য নেই। কেননা গোশ্‌ত (গোসত/গোশত) বলতে জীবন্ত প্রাণীও বুঝায় যা বাকরীতি কক্ষনো প্রত্যা্যখ্যান করে না।

৩. সকল বর্ণনা একমত হয়েছে এ বিষয়ে তা গাধার কিছু অংশ তবে মতভেদ করেছে ঐ অংশটি কি তা নিয়ে, তা পা অথবা পাছা, অথবা কোন অংশ অথবা তা হতে কিছু গোশ্‌ত (গোসত/গোশত)। আর এ সমস্ত রিওয়ায়াতে কোন বৈপরীত্য নেই। সম্ভবত কিছু অংশ বলতে পাছা হতে পারে আবার পা দিয়ে এটা দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আর ইবনু ‘উয়াইনাহ্ তার এ বক্তব্য حمارًا ‘‘গাধা’’ হতে মত পরিবর্তন করে (لحم حمار حتى مات) গাধার গোশ্‌ত এমনকি মারা গেছে বলে প্রমাণ করেছেন।

আর এটা প্রমাণ করে গোশত হাদিয়্যাহ্ দেয়া হয়েছে জীবন্ত গাধা নয়।

আবার কেউ গাধার উপঢৌকন দেয়ার হাদীসকে এভাবে সমন্বয় করেছেন যে, কুল তথা পূর্ণ দ্বারা কিছু অংশ উদ্দেশ্য, যেমন যুরক্বানী শারহে মুয়াত্ত্বায় ও ইবনু হুমাম ফাতহুল ক্বদীরে বর্ণনা করেছেন।

আবার কেউ এভাবে সমন্বয় করেছেন যে, সা‘ব  প্রথমে যাবাহকৃত গাধা নিয়ে এসেছেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনেই কিছু অংশ কেটে তার সামনেই উপস্থাপন করেছেন।

(أَبْوَاءِ) ‘‘আব্ওয়া’’ পাহাড় যা মক্কার নিকটবর্তী আর সেখানে শহর রয়েছে তার দিকে সম্বোধন করা হয়। কারো মতে সেখানে মহামারী হওয়ার কারণে ঐ স্থানকে আব্ওয়া বলা হয়।

‘আয়নী বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মা এখানে মারা গেছেন।

(أَوْ بِوَدَّانَ) অথবা ‘‘ওয়াদ্দান’’ রাবী সন্দেহের কারণে এমনটি বলেছেন।

হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ সেটা আবওয়া হতে জুহফার নিকটবর্তী। আর মদীনাহ্ হতে আসার পথে আব্ওয়া হতে জুহফার দূরত্ব তের মাইল আর ওয়াদ্দান হতে জুহফাহ্ আট মাইল।

(إِنَّا لَمْ نَرُدَّه عَلَيْكَ إِلَّا أنَّا حُرُمٌ) ‘‘আমরা ইহরাম অবস্থায় আছি, তাই আমরা তোমার হাদিয়্যাহ্ ফেরত দিয়েছি।’’ অর্থাৎ- আমরা তা অন্য কান কারণে ফেরত দেইনি। বরং ইহরাম অবস্থায় আছি, এজন্য তা ফেরত দিয়েছি। এ হাদীসটি তাদের দলীল যারা বলেনঃ মুহরিম ব্যক্তির জন্য শিকারকৃত পশুর গোশ্ত (গোসত/গোশত) খাওয়া বৈধ নয়।

এ হাদীসের শিক্ষাঃ

১। উপঢৌকন গ্রহণে কোন বাধা থাকলে তা ফেরত দেয়া বৈধ।

২। বিনা কারণে উপঢৌকন ফেরত দেয়া মাকরূহ।

৩। উপঢৌকনদাতার মনোতুষ্টির জন্য উপঢৌকন ফেরত দেয়ার কারণ বর্ণনা করা জরুরী।

৪। দানকৃত বস্ত্ত গ্রহণ না করা পর্যন্ত দাতাই তার মালিক।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুহরিম ব্যক্তির শিকার করা হতে বিরত থাকবে

২৬৯৭-[২] আবূ কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে (’উমরা করতে) বের হয়েছেন এবং পথিমধ্যে তিনি তাঁর কিছু সহযাত্রীসহ পিছনে পড়ে গেলেন। সাথীদের সকলেই মুহরিম ছিলেন, কিন্তু আবূ কাতাদা তখনও ইহরাম বাঁধেননি। আবূ কাতাদা’র দেখার পূর্বে তার সাথীরা একটি বন্যগাধা দেখলেন। তারা বন্যগাধাটি দেখার পর তাকে (আবূ কাতাদা-কে) এভাবেই থাকতে দিলেন। অবশেষে আবূ কাতাদাও ওটাকে দেখে ফেললেন। এরপর তিনি (আবূ কাতাদা) তার ঘোড়ায় চড়ে সাথীদেরকে তার চাবুকটা দিতে বললেন। কিন্তু সাথীরা তা তাকে দিতে অস্বীকৃতি জানালেন। অতঃপর তিনি নিজেই চাবুক উঠিয়ে নিলেন।

তারপর বন্যগাধাটির ওপর আক্রমণ করে আহত (দুর্বল) করলেন। অবশেষে (তা যাবাহ করার পর) আবূ কাতাদা তা খেলেন এবং তারাও (সাথীরাও) খেলেন কিন্তু এতে তারা অনুতপ্ত হলেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌঁছে তাকে বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের সাথে বন্যগাধার কিছু আছে কি? তারা উত্তরে বললেন, আমাদের সাথে (রন্ধনকৃত) এর একটি পা আছে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা গ্রহণ করলেন ও খেলেন। (বুখারী, মুসলিম)

বুখারী মুসলিমের আর এক বর্ণনায় আছে- তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কেউ কি আবূ কাতাদা-কে বন্যগাধাকে আক্রমণ করার জন্য বলেছিলে? তারা বললেন, জ্বি না। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে তোমরা এর অবশিষ্ট মাংস (গোসত/মাংস) খেতে পারো।[1]

بَابُ الْمُحْرِمِ يَجْتَنِبُ الصَّيْدَ

وَعَنْ أَبِي قَتَادَةَ أَنَّهُ خَرَجَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَخَلَّفَ مَعَ بَعْضِ أَصْحَابِهِ وَهُمْ مُحْرِمُونَ وَهُوَ غَيْرُ مُحْرِمٍ فَرَأَوْا حِمَارًا وَحْشِيًّا قَبْلَ أَنْ يَرَاهُ فَلَمَّا رَأَوْهُ تَرَكُوهُ حَتَّى رَآهُ أَبُو قَتَادَةَ فَرَكِبَ فَرَسًا لَهُ فَسَأَلَهُمْ أَنْ يُنَاوِلُوهُ سَوْطَهُ فَأَبَوْا فَتَنَاوَلَهُ فَحَمَلَ عَلَيْهِ فَعَقَرَهُ ثُمَّ أَكَلَ فَأَكَلُوا فَنَدِمُوا فَلَمَّا أَدْرَكُوا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَأَلُوهُ. قَالَ: «هَلْ مَعَكُمْ مِنْهُ شَيْءٌ؟» قَالُوا: مَعَنَا رِجْلُهُ فَأَخَذَهَا النَّبِيُّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم فَأكلهَا
وَفِي رِوَايَةٍ لَهُمَا: فَلَمَّا أَتَوْا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَمِنْكُمْ أَحَدٌ أَمَرَهُ أَنْ يَحْمِلَ عَلَيْهَا؟ أَوْ أَشَارَ إِلَيْهَا؟» قَالُوا: لَا قَالَ: «فَكُلُوا مَا بَقِيَ مِنْ لَحمهَا»

ব্যাখ্যা: (أَنَّه خَرَجَ مَعَ رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ) ‘‘তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বের হলেন’’। অর্থাৎ- হুদায়বিয়ার বৎসর। জেনে রাখা ভাল যে, আবূ কাতাদা কর্তৃক বন্যগাধা শিকার করার বর্ণনার মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে।

হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ মোটকথা এই যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৬ষ্ঠ হিজরী সালে ‘উমরা করার উদ্দেশে মদীনাহ্ থেকে রওয়ানা হলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যুলহুলায়ফাহ্ হতে ৩৪ মাইল দূরে রওহা নামক স্থানে পৌঁছলে খবর পান যে, মুশরিক শত্রুরা গয়ক্বাহ্ নামক উপত্যকাতে অবস্থান করছে।

আশঙ্কা করা হয় যে, তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসতর্কতার সুযোগে তাঁর ওপর তারা আক্রমণ করতে পারে। তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ শত্রুদলের অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তা লাভের উদ্দেশে একদল লোক সেদিকে প্রেরণ করেন। তাদের মাঝে আবূ কাতাদা  ছিলেন। অতঃপর যখন তারা নিরাপত্তা সম্পর্কে নিশ্চিত হন তখন তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এসে মিলিত হন। আবূ কাতাদা ব্যতীত অন্য সবাই ‘উমরা করার নিমিত্তে ইহরাম বাঁধে। আবূ কাতাদা (রাঃ) ইহরামবিহীন অবস্থায় তার ভ্রমণ অব্যাহত রাখেন এজন্য যে, হয়তঃ তিনি তখনো তার মীকাতে পৌঁছেনি অথবা তার ‘উমরা করার ইচ্ছা ছিল না। মোটকথা, তিনি এ অবস্থায় ‘‘সুক্বইয়্যাহ্’’ নামক স্থানে এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাক্ষাৎ লাভ করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাৎ লাভের পূর্বে রওহা নামক স্থানে শিকারের ঘটনা ঘটে।

(حَتّٰى رَاٰهُ أَبُو قَتَادَةَ فَرَكِبَ فَرَسًا لَه) ‘‘আবূ কাতাদা শিকারী পশু দেখতে পেয়ে তিনি তার বাহনে আরোহণ করেন।’’

(فَسَأَلَهُمْ أَنْ يُنَاوِلُوهُ سَوْطَه فَأَبَوْا) ‘‘তিনি তার সঙ্গীদেরকে চাবুক তুলে দিতে বললে তারা তা তুলে দিতে অস্বীকার করে।’’ কেননা ইহরাম অবস্থায় যেরূপ কোন কিছু শিকার করা হারাম অনুরূপ শিকারীর সহযোগিতা করাও হারাম। তাই তারা আবূ ক্বাতাদার হাতে চাবুক তুলে দিয়ে পশু শিকার কাজে তাকে সহায়তা করতে অস্বীকার করেন।

(ثُمَّ أَكَلَ فَأَكَلُوا فَنَدِمُوْا) ‘‘এরপর আবূ কাতাদা শিকারী পশু রান্না করে তার গোশ্‌ত (গোসত/গোশত) খেলেন এবং তাঁর সঙ্গীরাও তা খাবার পর আফসোস করতে থাকল।’’ কেননা তারা ধারণা করেছিল যে, কোন অবস্থাতেই মুহরিম ব্যক্তির জন্য শিকারী পশুর গোশ্‌ত (গোসত/গোশত) খাওয়া বৈধ নয়।

মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে যে, (فأكل بعض أصحاب رسول الله - ﷺ - وأبي بعضهم) ‘‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিছু সহাবা তা খেলেন আর কিছু সহাবা তা খেতে অস্বীকার করেন।’’ হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ অনেক বর্ণনা দ্বারা সাব্যস্ত যে, তারা ঐ পশুর গোশ্‌ত (গোসত/গোশত) খেয়েছিল। পরবর্তীতে তাদের মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছিল যে, ইহরাম অবস্থায় আমরা কি শিকারী পশুর গোশ্‌ত (গোসত/গোশত) খেতে পারি?

(فَلَمَّا أَدْرَكُوْا رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ سَأَلُوْهُ) ‘‘তারা যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হলেন তখন তারা তার নিকট এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন। অর্থাৎ- ইহরাম অবস্থায় শিকারকৃত পশুর গোশত খাওয়া বৈধ কি-না।

(فَأَخَذَهَا النَّبِىُّ ﷺ فَأَكَلَهَا) ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা নিয়ে খেলেন।’’ এতে ইঙ্গিত রযেছে যে, কাজের মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর দেয়া কথার মাধ্যমে উত্তর দেয়ার চেয়ে বেশী মজবুত।

কাযী ‘আরায বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্বাতাদার নিকট হতে উক্ত শিকারী পশু চেয়ে নিয়ে খেলেন যাতে তাদের অন্তরে প্রশান্তি আসে যারা তা হতে খেয়েছিলেন। কেননা তাদের মধ্যে যে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছিল তা দূর করতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কথা ও কাজের মাধ্যমে তা বৈধ হওয়ার প্রমাণ দিলেন।

অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, বন্য গাধা খাওয়া হালাল এবং তা এক প্রকার শিকারী পশু।

এতে এ প্রমাণও পাওয়া যায় যে, মুহরিম ব্যক্তির পক্ষে শিকারকৃত পশুর গোশত (গোসত/গোশত) খাওয়া বৈধ যদি উক্ত পশু মুহরিমের খাবার উদ্দেশে শিকার করা না হয়।

মুসনাদ আহমাদ (৫ম খণ্ড, ৩০৪ পৃঃ) ইবনু মাজাহ্, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক (৪র্থ খণ্ড, ৪৩০ পৃঃ) দারাকুত্বনী, ইসহাক ইবনু রহওয়াইহ্, ইবনু খুযায়মাহ্ ও বায়হাক্বী (৫ম খণ্ড, ১৯০ পৃঃ) মা‘মার (রহঃ)-এর বরাতে ইয়াহ্ইয়া ইবনু আবী কাসীর থেকে ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবী কাতাদা সূত্রে তার পিতা আবূ কাতাদা হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেনঃ হুদায়বিয়ার সময়ে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সফরসঙ্গী ছিলাম। আমার সঙ্গীগণ ইহরাম বেঁধেছিলেন কিন্তু আমি ইহরাম বাঁধিনি। আমি একটি বন্যগাধা দেখতে পেয়ে তা আক্রমণ করে শিকার করি। বিষয়টি আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উল্লেখপূর্বক বললামঃ এটা কিন্তু আপনার জন্যই শিকার করেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গীদেরকে তা খেতে বললেন কিন্তু আমি তাঁর জন্য শিকার করেছি এ কথা বলাতে তিনি তা আর খেলেন না।

ইবনু খুযায়মাহ্ বলেনঃ এ হাদীসের এ অতিরিক্ত অংশটুকু যদি সহীহ বলে গণ্য হয় তাহলে এর মর্ম হলো যে, আবূ কাতাদা তাঁর উদ্দেশে পশুটি শিকার করেছেন এ কথা বলার আগে তিনি তা থেকে খেয়েছিলেন। অতঃপর তিনি যখন তাঁকে অবহিত করলেন যে, এটি তাঁর উদ্দেশেই শিকার করেছেন তখন তা খাওয়া থেকে বিরত থাকলেন।

(فَكُلُوْا مَا بَقِىَ مِنْ لَحْمِهَا) ‘‘এর অবশিষ্ট গোশত তোমরা খাও’’। এ আদেশসূচক শব্দ বৈধতা বুঝানোর জন্য, আবশ্যক বুঝানোর জন্য নয়। কেননা এ আদেশটি ছিল তাদের প্রশ্নের জবাব স্বরূপ। আর প্রশ্ন ছিল খাওয়া বৈধ কি-না, এ সম্পর্কে?

এ হাদীসের শিক্ষাঃ মুহরিম ব্যক্তির জন্য শিকার করা বৈধ নয় এবং এ সংক্রান্ত সাহায্য-সহযোগিতাও বৈধ নয়।

হালাল ব্যক্তি যে পশু শিকার করে তা থেকে মুহরিম ব্যক্তির খাওয়া বৈধ যদি না তার উদ্দেশে শিকার করা হয়। এ বিষয়ে সকলেই একমত। তবে যদি পশুটি মুহরিম ব্যক্তির উদ্দেশে শিকার করা হয় তাহলে জমহূর ‘উলামাগণের মতে তা মুহরিম ব্যক্তির পক্ষে খাওয়া বৈধ নয়। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর মতে তা খাওয়া বৈধ যদিও তা মুহরিম ব্যক্তির জন্য শিকার করা হয়। আবূ কাতাদা বর্ণিত এ হাদীসটিই তাদের সপক্ষে দলীল।

জমহূর ‘উলামাগণ এ হাদীসের জবাবে বলেন যে, মা‘মার (রহঃ)-এর বরাতে বর্ণিত হাদীসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, আবূ কাতাদা যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অবহিত করলেন যে, পশুটি তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উদ্দেশেই শিকার করেছেন তখন তিনি তা থেকে খেতে বিরত থাকলেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুহরিম ব্যক্তির শিকার করা হতে বিরত থাকবে

২৬৯৮-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি হারামে কিংবা ইহরাম অবস্থায় পাঁচটি প্রাণী তথা ইঁদুর, কাক, চিল, বিচ্ছু ও হিংস্র কুকুর হত্যা করেছে, তার কোন গুনাহ হবে না। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْمُحْرِمِ يَجْتَنِبُ الصَّيْدَ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: خَمْسٌ لَا جُنَاحَ عَلَى من قتلَهُنّ فِي الْحل وَالْإِحْرَامِ: الْفَأْرَةُ وَالْغُرَابُ وَالْحِدَأَةُ وَالْعَقْرَبُ وَالْكَلْبُ الْعَقُورُ

ব্যাখ্যা: (فِى الْحَرَمِ وَالْإِحْرَامِ) ‘‘হারাম এলাকায় ও ইহরাম অবস্থায়।’’ অর্থাৎ- মক্কার হারাম এলাকায় মুহরিম ব্যক্তির জন্য হাদীসে উল্লিখিত পাঁচ প্রকার প্রাণী হত্যা করা বৈধ।

হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, হারাম এলাকার বাইরে ইহরামবিহীন ব্যক্তির পক্ষে তা হত্যা করা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বৈধ। কেননা ইহরাম অবস্থায় কোন কিছু হত্যা করা অবৈধ হওয়া সত্ত্বেও যখন তার জন্য এ প্রাণীগুলো হত্যা করা বৈধ তখন যার মধ্যে এ অবৈধতা নেই তার জন্য নিশ্চিতভাবে তা বৈধ।

ইবনু ‘উমার (রাঃ) বর্ণিত অত্র হাদীসে এগুলো হত্যা করার মধ্যে ক্ষতি নেই বলা হয়েছে যা দ্বারা এগুলো হত্যা করা বৈধতা বুঝায়। আর আয়িশাহ্ (রাঃ) কর্তৃক মুসলিমে বর্ণিত হাদীসে এগুলো হত্যা করার নির্দেশ রয়েছে যা দ্বারা বুঝা যায় যে, এগুলো হত্যা করা মুস্তাহাব; শাফি‘ঈ, হাম্বালী ও আহলুয্ যাহিরদের মতানুযায়ী তা হত্যা করা মুস্তাহাব।

অত্র হাদীসে পাঁচ প্রকার প্রাণী হত্যা করার বৈধতা বর্ণিত হয়েছে। যদিও পাঁচ সংখ্যাটি খাস, অর্থাৎ- নির্দিষ্ট সংখ্যা বুঝায় কিন্তু অধিকাংশ ‘আলিমদের মতে নির্দিষ্ট সংখ্যা উদ্দেশ্য নয়। বরং সকল প্রকার কষ্টদায়ক প্রাণীই হত্যা করা বৈধ।

(الْفَأْرَةُ) ইঁদুর। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী জমহূর ‘উলামাগণের মতে মুহরিমের জন্য ইঁদুর হত্যা করা বৈধ। একমাত্র ইব্রাহীম নাখ্‘ঈ তা হারাম বলেছেন। ‘আল্লামা ইবনুল মুনযীর বলেনঃ এ অভিমত হাদীস ও ‘উলামাগণের মতের বিরোধী। ‘আল্লামা খাত্ত্বাবী বলেন, এ অভিমত সুস্পষ্ট দলীল ও ‘আলিমদের মতের বিরোধী।

(الْغُرَابُ) ‘‘কাক’’। অর্থাৎ- সাদা-কালো ডোরাকাটা কাক। যে কাকের পিঠে ও পেটে সাদা বর্ণের পালক রয়েছে তাকেই الْغُرَابُ الْأَبْقَعْ বলা হয় আর তা হত্যা করা বৈধ।

সকল ‘আলিমগণ একমত যে, যে সমস্ত ছোট কাক শুধু শস্যদানা ভক্ষণ করে সে কাক হত্যা করা বৈধ নয়। আর তা খাওয়াও বৈধ।

(وَالْكَلْبُ الْعَقُوْرُ) ‘‘হিংস্র কুকুর। এ দ্বারা কি উদ্দেশ্য এ নিয়ে ‘আলিমদের মতপার্থক্য রয়েছে।

(১) ইমাম যুফার বলেনঃ এখানে الْعَقُوْرُ শব্দ দ্বারা নেকড়ে বাঘ উদ্দেশ্য।

(২) ইমাম মালিক বলেনঃ প্রত্যেক ঐ হিংস্রপ্রাণী উদ্দেশ্য যা মানুষের ওপর আক্রমণ চালায় যেমন- চিতা বাঘ, সিংহ, নেকড়ে বাঘ ইত্যাদি। জমহূর ‘আলিমদের অভিমতও তাই।

(৩) ইমাম আবূ হানীফা বলেনঃ (الْكَلْبُ الْعَقُوْرُ) দ্বারা কুকুরই উদ্দেশ্য তবে পাগলা বা ক্ষ্যাপা কুকুর।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ সকল ‘আলিমগণ এ বিষয়ে একমত যে, কুকুর ইহরামধারী, ইহরামবিহীন, হারাম এলাকা বা হারামের বাইরে সর্বত্র হত্যা করা বৈধ।

হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ হাদীসে উল্লিখিত পাঁচ প্রকার প্রাণী ছাড়াও কষ্টদায়ক অন্যান্য প্রাণীও হত্যা করা বৈধ। কিন্তু এ বৈধতার কারণ সম্পর্কে তারা মতভেদ করেছেন।

(১) ইমাম মালিক-এর মতে তা কষ্টদায়ক প্রাণী, তাই হত্যা করা বৈধ।

(২) ইমাম শাফি‘ঈ-এর মতে তা খাওয়া অবৈধ, তাই তা হত্যা করা বৈধ।

(৩) হানাফীদের মতে হাদীসে বর্ণিত শুধু পাঁচ প্রকার প্রাণীই হত্যা করা বৈধ। তবে সাপ হত্যা করা অন্য দলীলের ভিত্তিতে এবং নেকড়ে বাঘ কুকুরের সাথে সাদৃশ্য থাকার কারণে তা হত্যা করা বৈধ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুহরিম ব্যক্তির শিকার করা হতে বিরত থাকবে

২৬৯৯-[৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচটি ক্ষতিকর প্রাণী হিল্ ও হারাম (সর্বস্থানে) যে কোন স্থানেই হত্যা করা যেতে পারে। সেগুলো হলো সাপ, (সাদা কালো) কাক, ইঁদুর, হিংস্র কুকুর ও চিল। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْمُحْرِمِ يَجْتَنِبُ الصَّيْدَ

وَعَنْ عَائِشَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: خَمْسٌ فَوَاسِقُ يُقْتَلْنَ فِي الْحِلِّ وَالْحَرَمِ: الْحَيَّةُ وَالْغُرَابُ الْأَبْقَعُ وَالْفَأْرَةُ وَالْكَلْبُ الْعَقُورُ وَالْحُدَيَّا

ব্যাখ্যা: حِلِّ (হিল্): এর অর্থ কয়েকটি- হালাল, মক্কার আশেপাশের সম্মানিত স্থান ব্যতীত অন্য জায়গাকে বলা হয়, ইহরাম থেকে বের হওয়ার সময়, কোন স্থানে অবতরণকারীকেও হিল্ করা হয়।

(حَرَمِ) হারামঃ এর অর্থ প্রত্যেক ঐ বস্ত্ত যার সংরক্ষণ করা হয়। নিষিদ্ধ, পবিত্র, পবিত্র স্থান, হেরেম, ক্যাম্পাস, যার দিক থেকে প্রতিরোধ করা হয়।

(خَمْسٌ فَوَاسِقُ) ‘‘পাঁচ প্রকার ক্ষতিকর প্রাণী।’’ পাঁচ প্রকার প্রাণীকে ফাসিক্ব বলার কারণ এই যে, অন্যান্য প্রাণীর হুকুম থেকে এ প্রাণীগুলোর হুকুম পৃথক। অর্থাৎ- অন্যান্য প্রাণী হত্যা করা হারাম, আর এগুলো হত্যা করা বৈধ অথবা এগুলো খাওয়া হারাম, অথবা এগুলো অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় ক্ষতিকারক, এর মধ্যে কোন উপকার নেই। পক্ষান্তরে অন্যান্য প্রাণী উপকারী।

‘আল্লামা তুরবিশতী বলেনঃ প্রাণীকুলের মধ্য থেকে এ পাঁচ প্রকার ক্ষতিকর প্রাণীকে অন্যান্য প্রাণী হতে পৃথক হুকুম দেয়ার কারণ এই যে, এর অপকারিতা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা অবহিত অথবা এগুলো অন্যান্য প্রাণীর তুলনার মানুষের জন্য অধিক ও দ্রুত ক্ষতিকর। এ হাদীস দ্বারা প্রমাণ পেশ করা হয় যে, কোন হত্যাকারী হত্যা করার পর হেরেমে আশ্রয় গ্রহণ করলে তাকে হত্যা করা বৈধ। কেননা এ প্রাণী হত্যা করা বৈধ হওয়ার কারণ হলো এগুলো ফাসিক। আর হত্যাকারীও ফাসিক্ব, তাই ঐ প্রাণীগুলোর মতো হত্যাকারীকেও হেরেমে হত্যা করা বৈধ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মুহরিম ব্যক্তির শিকার করা হতে বিরত থাকবে

২৭০০-[৫] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শিকারের মাংস (গোসত/মাংস) ইহরাম অবস্থায়ও তোমাদের জন্য হালাল। যদি না তোমরা নিজেরা তা শিকার করো অথবা তোমাদের জন্য শিকার করা হয়ে থাকে। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী ও নাসায়ী)[1]

عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَحْمُ الصَّيْدِ لَكُمْ فِي الْإِحْرَامِ حَلَالٌ مَا لَمْ تَصِيدُوهُ أَوْ يُصَادُ لَكُمْ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ

ব্যাখ্যা: (لَحْمُ الصَّيْدِ لَكُمْ فِى الْإِحْرَامِ حَلَالٌ) ‘‘শিকারী প্রাণীর গোশ্‌ত (গোসত/গোশত) তোমাদের জন্য ইহরাম অবস্থায়ও হালাল।’’ অর্থাৎ- শিকারী প্রাণী মুহরিম ব্যক্তির কোন নির্দেশ ইশারা-ইঙ্গিত ও সহযোগিতা ব্যতীত ইহরামবিহীন ব্যক্তি যাবাহ করলে বা শিকার করলে তা মুহরিম ব্যক্তির জন্য খাওয়া বৈধ।

(أَوْ يُصَادُ لَكُمْ) ‘‘অথবা তোমাদের জন্য শিকার না করা হয়।’’ অর্থাৎ- শিকারী প্রাণী যদি মুহরিম ব্যক্তির জন্য শিকার না করা হয় তাহলে তা মুহরিম ব্যক্তির জন্য খাওয়া বৈধ।

এ হাদীসটি তাদের পক্ষে দলীল যারা বলেন, শিকারী প্রাণী যদি মুহরিমের উদ্দেশে শিকার না করা হয় তাহলে তা মুহরিমের জন্য খাওয়া বৈধ। পক্ষান্তরে তা যদি মুহরিমের উদ্দেশে শিকার করা হয় তাহলে তা মুহরিমের জন্য খাওয়া বৈধ নয়। ইমাম মালিক, ইমাম শাফি‘ঈ ও জমহূর ‘আলিমদের অভিমত এটিই।

‘আল্লামা শানক্বীত্বী বলেনঃ দলীল অনুযায়ী এ অভিমতটিই উত্তম। আর তা দু’টি কারণে।

(ক) ভিন্নমুখী দলীলের মধ্যে যথাসম্ভব সমন্বয় করা ওয়াজিব। কেননা কোন দলীল পরিত্যাগ করার চাইতে দু’ বিপরীতমুখী দলীলের মধ্যে সমন্বয় করা উত্তম। উপরে বর্ণিত অভিমত ব্যতীত সমন্বয় সম্ভব নয়। অতএব এ অভিমতটিই উত্তম।

(খ) জাবির (রাঃ) বর্ণিত অত্র হাদীস। ইমাম শাওকানী বলেনঃ হাদীস সুস্পষ্টভাবে পার্থক্য করেছে যে, যা মুহরিম স্বয়ং শিকার করে অথবা তার জন্য শিকার করা হয় আর যা মুহরিম স্বয়ং শিকার করেনি অথবা তার জন্য শিকার করা হয়নি- এ দু’ প্রকার প্রাণীর হুকুম ভিন্ন। অতএব যা মুহরিম স্বয়ং শিকার করেনি অথবা তার জন্য শিকার করা হয়নি ঐ শিকারী প্রাণীর গোশ্‌ত (গোসত/গোশত) মুহরিমের জন্য হালাল। আর মুহরিম যা স্বয়ং শিকার করেছে অথবা অন্য কেউ মুহরিমের উদ্দেশে শিকার করেছে, তা মুহরিমের জন্য হালাল নয়।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
দেখানো হচ্ছেঃ ২৬৮১ থেকে ২৭০০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫১৬৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 132 133 134 135 136 · · · 256 257 258 259 পরের পাতা »