৩৯৬৩

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধবন্দীদের বিধিমালা

৩৯৬৩-[৪] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ)-এর ফায়সালা মেনে নেয়ার শর্তে (ইয়াহূদী) বানূ কুরয়যাহ্ গোত্র দুর্গ থেকে বের হয়ে আসলো, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সা’দ ইবনু মু’আয -কে আনার জন্য) লোক পাঠালেন। এমতাবস্থায় সা’দ একটি গাধার পিঠে সওয়ার হয়ে আসলেন। যখন তিনি কাছে আসলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত লোকেদের উদ্দেশে বললেন, তোমাদের নেতার দিকে গমন কর। তখন সা’দ এসে বসলেন।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সা’দ (রাঃ)-এর প্রতি দৃষ্টিপাত করে) বললেন, এরা তোমার ফায়সালা মেনে নেয়ার শর্তে দুর্গ খুলে বের হয়ে এসেছে। সুতরাং তুমি তাদের সম্পর্কে ফায়সালা দাও। তখন সা’দ বললেন, এদের ব্যাপারে আমার ফায়সালা হচ্ছে, যুদ্ধ করতে সক্ষমদেরকে হত্যা করা হোক এবং নারী ও শিশুদেরকে বন্দী করা হোক। অতঃপর এ রায় শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলে উঠলেন, তাদের ব্যাপারে তুমি বাদশাহর (আল্লাহর) ফায়সালা মুতাবিক বিচার করেছ। অপর এক বর্ণনাতে আছে, তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও হুকুম অনুসারেই রায় দিয়েছ। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ حُكْمِ الْاُسَرَاءِ

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ بَنُو قُرَيْظَةَ عَلَى حُكْمِ سَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِليه فَجَاءَ عَلَى حِمَارٍ فَلَمَّا دَنَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قُومُوا إِلَى سَيِّدِكُمْ» فَجَاءَ فَجَلَسَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ هَؤُلَاءِ نَزَلُوا عَلَى حُكْمِكَ» . قَالَ: فَإِنِّي أَحْكُمُ أَنْ تَقْتُلَ الْمُقَاتِلَةُ وَأَنْ تُسْبَى الذُّرِّيَّةُ. قَالَ: «لَقَدْ حَكَمْتَ فِيهِمْ بحُكْمِ المَلِكِ» . وَفِي رِوَايَة: «بِحكم الله»

ব্যাখ্যা: ফাতহুল বারীতে আছে, «فَلَمَّا دَنَا مِنَ الْمَسْجِدِ» এখানে মসজিদ বলতে ঐ জায়গা উদ্দেশ্য যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানূ কুরয়যাহ্-এর অবরোধের দিনগুলোতে তাদের এলাকাতে সালাত আদায়ের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। এর দ্বারা মদীনাতে অবস্থিত মসজিদে নববী উদ্দেশ্য নয়।

 (قُوْمُوْا إِلٰى سَيِّدِكُمْ) দীর্ঘ হাদীসের মাঝে ‘আলকামাহ্ বিন ওয়াক্কাস -এর সানাদে মুসনাদে আহমাদ কর্তৃক ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর মুসনাদে এসেছে, ‘‘আবূ সা‘ঈদ বলেনঃ অতঃপর সা‘দ যখন আগমন করল তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তোমাদের সাইয়িদ (নেতার)-এর দিকে এগিয়ে যাও, অতঃপর তাকে নামাও।’’

(لَقَدْ حَكَمْتَ فِيهِمْ بحُكْمِ المَلِكِ) বুখারীতে «حَكَمْتَ فِيهِ بِحُكْمِ اللّٰهِ» এসেছে। মুহাম্মাদ বিন সালিহ-এর বর্ণনাতে «لَقَدْ حَكَمْتَ فِيهِمُ الْيَوْمَ بِحُكْمِ اللّٰهِ الَّذِي حَكَمَ بِه مِنْ فَوْقِ سَبْعِ سماوات» অর্থাৎ ‘‘আজ তুমি তাদের ব্যাপারে আল্লাহর ঐ ফায়সালা অনুযায়ী ফায়সালা দিয়েছ যার মাধ্যমে তিনি সাত আকাশের উপর থেকে ফায়সালা দিয়েছেন’’ উল্লেখ আছে।

ইবনু ‘আয়িয-এর কাছে জাবির-এর হাদীসে আছে, ‘‘অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে সা‘দ! তুমি তাদের ব্যাপারে ফায়সালা দাও, তখন সা‘দ বলল, ফায়সালা দেয়ার ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রসূলই বেশি অধিকার রাখেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাদের ব্যাপারে ফায়সালা দিতে আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে নির্দেশ দিয়েছেন।’’ আর ‘আলকামাহ্ বিন ওয়াক্কাস-এর মুরসাল সানাদে ইবনু ইসহক-এর বর্ণনাতে আছে, «لَقَدْ حَكَمْتَ فِيهِمْ بِحُكْمِ اللّٰهِ مِنْ فَوْقِ سَبْعَةِ» ‘‘নিঃসন্দেহে তুমি তাদের মাঝে সাত আকাশের উপর থেকে আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী ফায়সালা দিয়েছ। আল্লাহর ফায়সালা অনুযায়ী ফায়সালা দিয়েছ।’’

(ফাতহুল বারী ৭ম খন্ড, হাঃ ৪১২১)

নববী বলেনঃ «قُومُوا إِلٰى سَيِّدِكُمْ أَوْ خَيْرِكُمْ» হাদীসাংশে মর্যাদার অধিকারীকে মর্যাদা দান করা এবং তারা যখন আগমন করবে তখন তাদের জন্য দাঁড়িয়ে তাদের সাথে সাক্ষাৎ করার প্রমাণ আছে। এভাবে দাঁড়ানো মুস্তাহাব হওয়া সম্পর্কে জুমহূর বিদ্বানগণ প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন।

কাযী বলেনঃ এটা নিষিদ্ধ দণ্ডায়মানের অন্তর্ভুক্ত নয়। নিষেধাজ্ঞা কেবল ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে যে বসে থাকাবস্থায় তার কাছে মানুষেরা দাঁড়ায় এবং তার বসে থাকা পর্যন্ত তারা দাঁড়িয়েই থাকে।

শারহে মুসলিম প্রণেতা বলেনঃ আমি বলব, সম্মানিত আগমনকারীর জন্য দাঁড়ানো মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে অনেক হাদীস এসেছে। এ সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে স্পষ্ট কোনো কিছু বিশুদ্ধ সাব্যস্ত হয়নি। এ ব্যাপারে বিদ্বানদের আলোচনাসহ প্রতিটি বিষয়কে একটি অংশে একত্রিত করেছি। এ সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা যে সন্দেহে সৃষ্টি করেছে সে সম্পর্কে আমি তাতে উত্তর দিয়েছি আর আল্লাহ সর্বজ্ঞাত। (শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৭৬৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ