৩৯৬৪

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধবন্দীদের বিধিমালা

৩৯৬৪-[৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (৬ষ্ঠ হিজরীতে) একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজ্দ গোত্রের অভিমুখে একদল অশ্বারোহী সৈন্য পাঠালেন। তারা বানী হানীফাহ্ গোত্রীয় ইয়ামামাবাসীদের সরদার সুমামাহ্ ইবনু উসাল নামে এক ব্যক্তিকে ধরে আনল। অতঃপর তারা তাকে মসজিদে নববীর একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট এসে জিজ্ঞেস করলেন, হে সুমামাহ্! তুমি কি মনে করছ? সে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমি কল্যাণ কামনা করছি, যদি আপনি আমাকে হত্যা করেন তবে একজন খুনীকে হত্যা করবেন। আর যদি আমার প্রতি অনুগ্রহ করেন, তবে অবশ্যই একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তিকেই অনুগ্রহ করবেন। আর যদি ধন-সম্পদের অভিলাষী হন, তাও চাইতে পারেন, তাও প্রদান করা হবে। এমতাবস্থায় তার কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে রেখে চলে গেলেন। আবার পরদিন এসেও তাকে অনুরূপভাবে জিজ্ঞেস করলেন, হে সুমামাহ্! তুমি কি প্রত্যাশা করছ? সে বলল, আমি তাই প্রত্যাশা করি যা আপনাকে পূর্বে বলেছি।

যদি আমার প্রতি দয়া করেন, তবে একজন কৃতজ্ঞকেই দয়া করবেন। আর যদি আমাকে হত্যা করেন, তবে একজন খুনীকেই হত্যা করলেন। আর যদি ধন-সম্পদ চান, তবে তাও আপনাকে দেয়া হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে তৃতীয় দিন আসলেন আজও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে সুমামাহ্! তুমি কি প্রত্যাশা করছ? সে বলল, আমি তাই প্রত্যাশা করি যা আপনাকে পূর্বেই বলেছি। যদি আমার প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ হন, তবে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির প্রতিই অনুকম্পা করবেন। আর যদি আমাকে হত্যা করেন, তবে একজন খুনীকেই হত্যা করবেন। আর যদি ধন-সম্পদ চান, তবে আপনাকে তাই দেয়া হবে।

এবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা সুমামাকে ছেড়ে দাও। অতঃপর সে মসজিদের নিকটেই একটি খেজুর বাগানে প্রবেশ করল এবং গোসল করে মসজিদে প্রবেশ করল এবং ঘোষণা করল, ’’আশ্হাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান ’আবদুহূ ওয়া রসূলুহ’’। অতঃপর সে অকপটে বলে উঠল, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহর কসম! পৃথিবীর বুকে আপনার চেহারা অপেক্ষা আর কারো চেহারা আমার নিকট এত অধিক ঘৃণিত ছিল না। কিন্তু এখন আপনার চেহারা আমার কাছে সকলের চেয়ে প্রিয় হয়ে গেছে। আল্লাহর কসম! আপনার দীনের (ধর্মের) অপেক্ষা অধিক ঘৃণিত দীন আমার নিকট কোনটি ছিল না। কিন্তু এখন আপনার দীনই আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয় দীন।

আল্লাহর কসম! আপনার শহরের চেয়ে অধিক ঘৃণ্য শহর আমার নিকট আর কোনটি ছিল না, কিন্তু আপনার শহর আমার নিকট সর্বোত্তম হয়ে গেছে। আপনার অশ্বারোহীগণ আমাকে এমন সময় ধরে এনেছে, যখন আমি ’উমরাহ্ পালন করার উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছিলাম। এখন আপনি আমাকে কি করতে হুকুম দেন? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (ইসলাম গ্রহণের) সুসংবাদ এবং ’উমরাহ্ পালনের আদেশ দিলেন। এরপর যখন সে মক্কায় পৌঁছল, তখন জনৈক ব্যক্তি তাকে বলল, তুমি কী ধর্মত্যাগী বেদীন হয়ে গেছ? উত্তরে সে বলল, তা হবে কেন? বরং আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ইসলাম গ্রহণ করেছি। আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুমতি ছাড়া ইয়ামামাহ্ হতে তোমাদের নিকট গমের একটি দানাও পৌঁছবে না। (মুসলিম; বুখারীতে সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণিত হয়েছে)[1]

بَابُ حُكْمِ الْاُسَرَاءِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَيْلًا قِبَلَ نَجْدٍ فَجَاءَتْ بِرَجُلٍ مِنْ بَنِي حَنِيفَةَ يُقَالُ لَهُ: ثُمَامَةُ بْنُ أُثَالٍ سَيِّدُ أَهْلِ الْيَمَامَةِ فَرَبَطُوهُ بِسَارِيَةٍ مِنْ سَوَارِي الْمَسْجِدِ فَخَرَجَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «مَاذَا عِنْدَكَ يَا ثُمَامَةُ؟» فَقَالَ: عنْدي يَا مُحَمَّد خير إِن نقْتل تَقْتُلْ ذَا دَمٍ وَإِنْ تُنْعِمْ تُنْعِمْ عَلَى شَاكِرٍ وَإِنْ كُنْتُ تُرِيدُ الْمَالَ فَسَلْ تُعْطَ مِنْهُ مَا شِئْتَ فَتَرَكَهُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى كَانَ الْغَدُ فَقَالَ لَهُ: «مَا عِنْدَكَ يَا ثُمَامَةُ؟» فَقَالَ: عِنْدِي مَا قُلْتُ لَكَ: إِنْ تُنْعِمْ تُنْعِمْ عَلَى شَاكِرٍ وَإِنْ تَقْتُلْ تَقْتُلْ ذَا دَمٍ وَإِنْ كنتَ تريدُ المالَ فسَلْ تعط مِنْهُ مَا شِئْتَ. فَتَرَكَهُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى كَانَ بَعْدَ الْغَدِ فَقَالَ لَهُ: «مَا عِنْدَكَ يَا ثُمَامَةُ؟» فَقَالَ: عِنْدِي مَا قُلْتُ لَكَ: إِنْ تُنْعِمْ تُنْعِمْ عَلَى شَاكِرٍ وَإِنْ تَقْتُلْ تَقْتُلْ ذَا دَمٍ وَإِنْ كُنْتَ تُرِيدُ الْمَالَ فَسَلْ تُعْطَ مِنْهُ مَا شِئْتَ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَطْلَقُوا ثُمَامَةَ» فَانْطَلَقَ إِلَى نَخْلٍ قَرِيبٍ مِنَ الْمَسْجِدِ فَاغْتَسَلَ ثُمَّ دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَقَالَ: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَن مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ يَا مُحَمَّدُ وَاللَّهِ مَا كَانَ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ وَجْهٌ أَبْغَضُ إِلَيَّ مِنْ وَجْهِكَ فَقَدْ أَصْبَحَ وَجْهُكَ أَحَبَّ الْوُجُوهِ كُلِّهَا إِلَيَّ وَاللَّهِ مَا كَانَ مِنْ دِينٍ أَبْغَضَ إِلَيَّ مِنْ دِينِكَ فَأَصْبَحَ دِينُكَ أَحَبَّ الدِّينِ كُلِّهِ إِلَيَّ وَوَاللَّهِ مَا كَانَ مِنْ بَلَدٌ أَبْغَضَ إِلَيَّ مِنْ بَلَدِكَ فَأَصْبَحَ بَلَدُكَ أَحَبَّ الْبِلَادِ كُلِّهَا إِلَيَّ. وَإِنَّ خَيْلَكَ أَخَذَتْنِي وَأَنَا أُرِيدَ الْعُمْرَةَ فَمَاذَا تَرَى؟ فَبَشَّرَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَمَرَهُ أَنْ يَعْتَمِرَ فَلَمَّا قَدِمَ مَكَّةَ قَالَ لَهُ قَائِلٌ: أَصَبَوْتَ؟ فَقَالَ: لَا وَلَكِنَّى أَسْلَمْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاللَّهِ لَا يَأْتِيكُمْ مِنَ الْيَمَامَةِ حَبَّةُ حِنْطَةٍ حَتَّى يَأْذَنَ فِيهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ مُسلم وَاخْتَصَرَهُ البُخَارِيّ

وعن ابي هريرة قال بعث رسول الله صلى الله عليه وسلم خيلا قبل نجد فجاءت برجل من بني حنيفة يقال له ثمامة بن اثال سيد اهل اليمامة فربطوه بسارية من سواري المسجد فخرج اليه رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال ماذا عندك يا ثمامة فقال عندي يا محمد خير ان نقتل تقتل ذا دم وان تنعم تنعم على شاكر وان كنت تريد المال فسل تعط منه ما شىت فتركه رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى كان الغد فقال له ما عندك يا ثمامة فقال عندي ما قلت لك ان تنعم تنعم على شاكر وان تقتل تقتل ذا دم وان كنت تريد المال فسل تعط منه ما شىت فتركه رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى كان بعد الغد فقال له ما عندك يا ثمامة فقال عندي ما قلت لك ان تنعم تنعم على شاكر وان تقتل تقتل ذا دم وان كنت تريد المال فسل تعط منه ما شىت فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم اطلقوا ثمامة فانطلق الى نخل قريب من المسجد فاغتسل ثم دخل المسجد فقال اشهد ان لا اله الا الله واشهد ان محمدا عبده ورسوله يا محمد والله ما كان على وجه الارض وجه ابغض الي من وجهك فقد اصبح وجهك احب الوجوه كلها الي والله ما كان من دين ابغض الي من دينك فاصبح دينك احب الدين كله الي ووالله ما كان من بلد ابغض الي من بلدك فاصبح بلدك احب البلاد كلها الي وان خيلك اخذتني وانا اريد العمرة فماذا ترى فبشره رسول الله صلى الله عليه وسلم وامره ان يعتمر فلما قدم مكة قال له قاىل اصبوت فقال لا ولكنى اسلمت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم والله لا ياتيكم من اليمامة حبة حنطة حتى ياذن فيها رسول الله صلى الله عليه وسلم رواه مسلم واختصره البخاري

ব্যাখ্যা: ثُمَامَةُ (সুমামাহ্) প্রথম দিনে তার উক্তির। (إِنْ تَقْتُلْ تَقْتُلْ ذَا دَمٍ) অর্থাৎ- ‘‘আপনি যদি আমাকে হত্যা করেন তাহলে একজন খুনীকেই হত্যা করবেন।’’ এ অংশকে অগ্রবর্তী করা এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে এ অংশকে বাক্যের অপর অংশদ্বয়ের মাঝে নিয়ে আসাটা এমন এক কৌশলী পদ্ধতি যা সুমামার বিচক্ষণতার দিকে নির্দেশ করছে, কেননা সুমামাহ্ প্রথম দিনে যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাগ অবলোকন করলেন, তখন তাকে সান্তবনা স্বরূপ হত্যার বিষয়টি অগ্রবর্তী করলেন। অতঃপর সে যখন দেখল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হত্যা করল না, তখন সে নিজের ওপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুগ্রহ করার আশা করল। অতঃপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে তার এ (إِنْ تَقْتُلْ) উক্তিকে পিছিয়ে আনলেন। (ফাতহুল বারী ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৩৭২)

قَالَ لَه قَائِلٌ، أَصَبَوْتَ؟ الصَّبْوُ (সব্উ) বলতে বায়হাক্বী-এর তাজুল মাসাদীরে আছে- অজ্ঞতার দিকে ধাবমান হওয়া। নিহায়াহ্ গ্রন্থে আছে, ব্যক্তি যখন এক ধর্ম থেকে আরেক ধর্মের দিকে বেরিয়ে যায় তখন ‘আরবীতে (صَبَأَ فُلَانٌ) বলা হয়।

(فَقَالَ : لَا وَلٰكِنّٰى أَسْلَمْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللّٰهِ ﷺ) অর্থাৎ- ‘‘অতঃপর তিনি বলেন, না, ‘‘আমি ধর্মত্যাগ করিনি’’ বরং আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ইসলাম গ্রহণ করেছি।’’ অতঃপর আপনি যদি বলেন, কিভাবে সুমামাহ্ না বলল? অথচ সে শির্ক হতে তাওহীদের দিকে বের হয়েছে। আমি (মিরকাতুল মাফাতীহ প্রণেতা) বলবঃ এটা বিজ্ঞতাপূর্ণ পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত, যেন সে বলেছে, আমি দীন হতে বের হইনি। কেননা তোমরা এমন কোনো দীনের উপর নও যে, আমি তা থেকে বের হয়ে যাব, বরং আমি আল্লাহর দীনে প্রত্যাবর্তন করেছি এবং আল্লাহর রসূলের সাথে ইসলাম গ্রহণ করেছি। অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ব থেকে ইসলামের সাথে সম্পর্কিত, আর আমি নতুন করে সম্পৃক্ত হলোম।

নববী বলেনঃ ذا دم শব্দটির দু’টি অর্থ হতে পারে- (১) খুনী, অর্থাৎ আমার ওপর হত্যার অভিযোগ আছে। (২) আমার রক্ত মূল্যবান। অর্থাৎ আমাকে হত্যা করা হলে এ হত্যার পরিশোধ নেয়ার লোক আছে। তবে প্রথম অর্থটিই অধিক গ্রহণযোগ্য। তিনি আরো বলেনঃ এ হাদীসে বন্দীকে বেঁধে রাখা, তাকে আটকিয়ে রাখা এবং কাফিরকে মসজিদে প্রবেশ করানো বৈধ হওয়ার প্রমাণ আছে। এতে আরও আছে- কাফির ব্যক্তি যখন ইসলাম গ্রহণের ইচ্ছা করবে তখন ঐ ব্যাপারে তাড়াতাড়ি করতে হবে, গোসলের জন্য বিলম্ব করা যাবে না। আর কারো জন্য বৈধ হবে না তাকে তা বিলম্বকরণে অনুমতি দেয়া। আমাদের মাযহাব (মিরকাতুল মাফাতীহ প্রণেতা) হলো, শির্কে থাকালীন সময়ে এ ব্যক্তির দেহে অপবিত্রতা থাকলে তার গোসল করা আবশ্যক। পূর্বে এ কারণে গোসল করুক বা না করুক উভয় সমান। আমাদের কতক সাথীবর্গ বলেন, ইসলাম গ্রহণের পূর্বে সে গোসল করে থাকলে তা তার জন্য যথেষ্ট হবে, আর তার দেহে জানাবাত (স্বপ্ন দোষ হওয়া, স্ত্রী সহবাস করা) না থাকলে তার গোসল করা মুস্তাহাব।

আহমাদ ও অন্যান্যগণ বলেনঃ তার ওপর গোসল করা আবশ্যক। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বারংবার তিনদিন প্রশ্ন করাতে বন্দীদের থেকে যাদের ইসলাম গ্রহণের আশা করা যায় তাদের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন ও নিজ হৃদয়ের নম্রতা প্রকাশ রয়েছে, ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রে যাদের অনুসরণ করবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

فَقَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : أَطْلَقُوْا ثُمَامَةَ ইবনু ইসহক-এর বর্ণনাতে আছে- قَالَ قَدْ عَفَوْتُ عَنْكَ يَا ثُمَامَةُ وأعتقتك তিনি বলেছেন, হে সুমামাহ্! আমি তোমার প্রতি ক্ষমাপ্রদর্শন করেছি এবং তোমাদেরকে স্বাধীন করে দিয়েছি। ইবনু ইসহক তার বর্ণনাতে আরেকটু বৃদ্ধি করে বলেন, সুমামাহ্ যখন বন্দীদশায় ছিলেন তখন সেবকরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবারে খাদ্য দুধ যা ছিল সকল কিছু একত্র করল কিন্তু ঐ খাদ্য সুমামার পেটের কিছুই হলো না। অতঃপর সুমামাহ্ যখন ইসলাম গ্রহণ করল তখন তার কাছে তারা খাদ্য আনলে সুমামাহ্ অল্প খেল। অতঃপর এ দেখে তারা আশ্চর্যান্বিত হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘নিশ্চয় কাফির সাত পেটে খায় আর মু’মিন এক পেটে খায়।’’

(فَبَشَّرَه) ‘‘অতঃপর তিনি সুমামাকে সুসংবাদ দিলেন।’’ অর্থাৎ ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ সম্পর্কে অথবা তাকে জান্নাত, তার গুনাহ মোচন সম্পর্কে সুসংবাদ দিলেন। সুমামার অত্র হাদীসে অনেকগুলো উপকারিতা আছে, সেগুলোর মাঝে ফাতহুল বারীতে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- অপরাধীর ক্ষমার বিষয়টি বড় করে দেখা। কেননা সুমামাহ্ বলেছে, এক মুহূর্তেই সুমামার ক্রোধ ভালোবাসাতে পরিণত হয়েছে। দয়াপ্রদর্শন ক্রোধ দূর করে, ভালোবাসা প্রতিষ্ঠিত করে। নিঃসন্দেহে কাফির ব্যক্তি যখন কল্যাণকর কাজের ইচ্ছা করবে, অতঃপর ইসলাম গ্রহণ করবে, তখন ঐ কল্যাণজনক কাজে অটল থাকা তার জন্য শারী‘আতসম্মত। এতে আরো আছে, কাফির রাষ্ট্রের দিকে সৈন্যবাহিনী পাঠানো এবং তাদের মাঝে যাকে পাওয়া যাবে তাকে বন্দী করা, তাকে বন্দী দশার উপর রেখে দেয়া এবং তাকে হত্যা করার ক্ষেত্রে ইমামের স্বাধীনতা রয়েছে। (ফাতহুল বারী ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৩৭২)

ইমাম শাফি‘ঈ-এর মাযহাব হলো, মুসলিম ব্যক্তির অনুমতিক্রমে কাফির ব্যক্তিকে মসজিদে প্রবেশ করতে দেয়া বৈধ। সে কিতাবধারী কাফির হোক অথবা অন্যান্য কাফির হোক। ‘উমার বিন ‘আবদুল ‘আযীয, কাতাদাহ এবং মালিক বলেন, তা বৈধ নয়। আবূ হানীফাহ্ বলেনঃ আহলে কিতাব বা কিতাবধারীদের ক্ষেত্রে বৈধ, অন্যদের জন্য বৈধ নয়। সকল ক্ষেত্রে আমাদের (মিরকাতুল মাফাতীহ প্রণেতা) দলীল এ হাদীসটি এবং মহান আল্লাহর এ বাণী ‘‘নিঃসন্দেহে মুশরিকরা অপবিত্র, সুতরাং তারা যেন মসজিদে হারামের নিকটবর্তী না হয়’’- (সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ২৮)। অতএব মুশরিকদের মসজিদে প্রবেশের নিষিদ্ধের বিষয়টি মসজিদে প্রবেশের সাথে নির্দিষ্ট। আমরা বলব, মুশরিক ব্যক্তির হারামে প্রবেশ করার সুযোগ নেই। [আর আল্লাহ সর্বজ্ঞাত’ (শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৭৬৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)