পরিচ্ছেদঃ আরেকটি হাদীস যা অনেক মানুষকে এই সংশয়ে ফেলে দেয় যে, হাদীসটি হয়তো আমাদের পূর্বে উল্লেখিত হাদীসগুলোর বিপরীত
২১২১. আয়িশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন, তারপর আবার জ্ঞান ফিরে পান। অতঃপর তিনি বলেন, “সালাতের জন্য আযান দেওয়া হয়েছে কি?” আমি বললাম, “জ্বী, না।” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা বিলাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে আদেশ করো সে যেন দ্রুত আযান দেয় আর আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করেন।”
আয়িশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, “আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, নিশ্চয়ই আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নরম হৃদয়ের মানুষ। তিনি আপনার জায়গায় দাঁড়াতে পারবেন না।” আয়িশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, “যখন তিনি কথা শেষ করেন, তখন তিনি আমার দিকে তাকান। তারপর তিনি আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তারপর আবার জ্ঞান ফিরে পান। অতঃপর তিনি বলেন, “সালাতের জন্য আযান দেওয়া হয়েছে কি?” আমরা বললাম, “জ্বী, না।” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা বিলাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে আদেশ করো সে যেন দ্রুত আযান দেয় আর আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করেন।”
আয়িশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, “তখন আমি হাফসা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহাকে ইশারা করলাম, তখন তিনি বলেন, “হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, নিশ্চয়ই আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নরম হৃদয়ের মানুষ। তিনি কিরা‘আত পাঠ করতে গেলেই কেঁদে ফেলবেন।”
রাবী বলেন, “যখন হাফসা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা কথা শেষ করেন, তখন তিনি তাঁর দিকে তাকান। তারপর তিনি আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তারপর আবার জ্ঞান ফিরে পান। অতঃপর তিনি বলেন, “সালাতের জন্য আযান দেওয়া হয়েছে কি?” আমি বললাম, “জ্বী, না।” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা বিলাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে আদেশ করো সে যেন দ্রুত আযান দেয় আর আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। নিশ্চয়ই তোমরা ইউসূফ আলাইহিস সালামের সঙ্গীদের মতোই! তারপর তিনি আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
আয়িশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, “অতঃপর বিলাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সালাতের জন্য আযান দেন। আর আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। তারপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জ্ঞান ফিরে পান। তারপর তিনি নূবা ও বারীরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমার কাছে আসেন, অতঃপর তারা তাঁকে মাসজিদে নিয়ে যান।
আয়িশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, “আমি যেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুই পায়ের আঙ্গুলগুলো দেখতে পাচ্ছি, সেগুলি জমিনে হেঁচড়ে হেঁচড়ে যাচ্ছিল! অতঃপর আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমন বুঝতে পারেন, তখন তিনি পিছে হটতে উদ্যত হন কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ইশারায় সেখানেই থাকতে বলেন।”
আয়িশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আনা হয় এবং তাঁকে কাতারে আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বরাবর রাখা হয়।”[1]
আবূ হাতিম ইবনু হিব্বান রহিমাহুল্লাহ বলেন, “এই হাদীসটি হাদীস শাস্ত্রে অনভিজ্ঞ ব্যক্তিকে এই সংশয়ে ফেলে দেয় যে, হাদীসটি হয়তো আমাদের পূর্বে উল্লেখিত সমস্ত হাদীসের বিপরীত। আসলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসসমূহের মাঝে কোন রকম বৈপরীত্ব নেই, এক হাদীস আদৌ আরেক হাদীসকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে না, কোন হাদীসের মাধ্যমে কুরআন রহিত হয় না। বরং কুরআনের হয়তো কোন ব্যাখ্যাহীন, অস্পষ্ট আয়াতকে ব্যাখ্যা করে, নতুবা কোন জটিল ও সংক্ষিপ্ত আয়াতের ব্যাখ্যা স্পষ্ট করে দেয়।
আমরা আল্লাহর প্রশংসা ও দয়ায় প্রমাণ পেশ করেছি যে, যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তা দুটো সালাতের ব্যাপারে ছিল; এক সালাতের ব্যাপারে নয়।
প্রথম সালাতে সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুইজন ব্যক্তির মাঝে থেকে মাসজিদে গমন করেছিলেন আর সেখানে তিনি ইমাম ছিলেন, বসে সালাত আদায় করেছিলেন এবং লোকজনকেও বসে সালাত আদায় করতে বলেছিলেন।
আর এই সালাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারীরা ও নূবার মাঝে থেকে মাসজিদে গমন করেছিলেন, এই সালাতে তিনি মুক্তাদী ছিলেন এবং আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর পিছনে মুসল্লীদের কাতারে বসে সালাত আদায় করেনে।”
হাদীসটিকে আল্লামা শুআইব আল আরনাঊত রহিমাহুল্লাহ হাসান বলেছেন। আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী রহিমাহুল্লাহ হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (আত তা‘লীকাতুল হিসান: ২১১৫)
ذِكْرُ الصَّلَاةِ الْأُخْرَى الَّتِي تُوهِمُ أَكْثَرَ النَّاسِ أَنَّهَا مُعَارِضَةٌ الْأَخْبَارَ الْأُخَرَ الَّتِي ذَكَرْنَاهَا
2121 - أَخْبَرَنَا الْحَسَنُ بْنُ سُفْيَانَ قَالَ: حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُعَاذِ بْنِ مُعَاذٍ قَالَ: حَدَّثَنَا الْمُعْتَمِرُ بْنُ سُلَيْمَانَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: حَدَّثَنَا نعيم بن أبي هند عن أبي وائل ـ أَحْسِبُهُ ـ عَنْ مَسْرُوقٍ عَنْ عَائِشَةَ؛ أَنَّهَا قَالَتْ: أُغْمِيَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فلمَّا أَفَاقَ قَالَ: (هَلْ نُودِيَ بِالصَّلَاةِ)؟ فَقُلْنَا: لَا , فَقَالَ: (مُرِي بِلَالًا فَلْيُبَادِرْ بِالصَّلَاةِ وَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ أَبُو بَكْرٍ) قَالَتْ: فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أَبَا بَكْرٍ رجلٌ أَسِيفٌ لَا يَسْتَطِيعُ أَنْ يَقُومَ مَقَامَكَ قَالَتْ: فَنَظَرَ إليَّ حِينَ فَرَغَ مِنْ كَلَامِهِ ثُمَّ أُغْمِيَ عَلَيْهِ فَلَمَّا أَفَاقَ قَالَ: (هَلْ نُودِيَ بِالصَّلَاةِ)؟ قَالَتْ: فَقُلْتُ: لَا , قَالَ:
(مُرِي بِلَالًا فلينادِ بِالصَّلَاةِ وليصلِّ بِالنَّاسِ أَبُو بَكْرٍ) قَالَتْ: فَأَوْمَأَتْ إِلَى حَفْصَةَ فَقَالَتْ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ إِنَّ أَبَا بَكْرٍ رَجُلٌ رَقِيقٌ لَا يَسْتَطِيعُ أَنْ يَقْرَأَ إِلَّا يَبْكِي قَالَ: فَنَظَرَ إِلَيْهَا حِينَ فَرَغَتْ مِنْ كَلَامِهَا ثُمَّ أُغْمِيَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا أَفَاقَ قال: (هل نودي بالصلاة)؟ قالت: لا , فقال: (مُرِي بلالاً فلينادي بِالصَّلَاةِ وَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ أَبُو بَكْرٍ فَإِنَّكُنَّ صَوَاحِبَاتُ يُوسُفَ) ثُمَّ أُغْمِيَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَتْ: فَأَقَامَ بِلَالٌ الصَّلَاةَ وَصَلَّى بِالنَّاسِ أَبُو بَكْرٍ ثُمَّ أَفَاقَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَاءَ بِنُوبَةَ وَبَرِيرَة فَاحْتَمَلَاهُ.
قَالَتْ عَائِشَةُ: فَكَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى أَصَابِعِ قَدَمَيْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَخُطُّ فِي الْأَرْضِ قَالَتْ: فَلَمَّا أَحَسَّ أَبُو بَكْرٍ بِمَجِيءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرَادَ أَنْ يَسْتَأْخِرَ فَأَوْمَأَ إِلَيْهِ أَنْ يَثْبُتَ قَالَتْ: وَجِيءَ بِنَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوُضِعَ بِحِذَاءِ أَبِي بَكْرٍ فِي الصف.
الراوي : عَائِشَة | المحدث : العلامة ناصر الدين الألباني | المصدر : التعليقات الحسان على صحيح ابن حبان
الصفحة أو الرقم: 2121 | خلاصة حكم المحدث: صحيح
قَالَ أَبُو حَاتِمٍ ـ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ـ: هَذَا خَبَرٌ يُوهِمُ مَنْ لَمْ يُحْكِمْ صِنَاعَةِ الْأَخْبَارِ وَلَا يَفْقَهُ فِي صَحِيحِ الْآثَارِ أَنَّهُ يُضَادُّ سَائِرَ الْأَخْبَارِ الَّتِي تَقَدَّمَ ذِكْرُنَا لَهَا وَلَيْسَ بَيْنَ أَخْبَارِ الْمُصْطَفَى صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَضَادٌّ وَلَا تَهَاتُرٌ وَلَا يكذِّب بعضُها بَعْضًا وَلَا يُنسخ بِشَيْءٍ مِنْهَا الْقُرْآنُ بَلْ يُفسِّر عَنْ مُجْمَلِ الْكِتَابِ وَمُبْهَمِهِ وَيُبَيِّنُ عَنْ مُخْتَصَرِهِ ومُشْكِله.
وَقَدْ دلَّلنا ـ بِحَمْدِ اللَّهِ ومنِّهِ ـ عَلَى أَنَّ هَذِهِ الْأَخْبَارَ الَّتِي رُوِيَت كَانَتْ فِي صَلَاتَيْنِ لَا فِي صَلَاةٍ وَاحِدَةٍ عَلَى حَسْبِ مَا وَصَفْنَاهُ.
فأمَّا الصَّلَاةُ الْأُولَى فَكَانَ خُرُوجُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهَا بَيْنَ رَجُلَيْنِ وَكَانَ فِيهَا إِمَامًا وَصَلَّى بِهِمْ قَاعِدًا وَأَمَرَهُمْ بِالْقُعُودِ فِي تِلْكَ الصَّلَاةِ وَهَذِهِ الصَّلَاةُ كَانَ خُرُوجُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهَا بَيْنَ بَرِيرَةَ وَنُوبَةَ وَكَانَ فِيهَا مَأْمُومًا وَصَلَّى قَاعِدًا فِي الصَّفِّ خَلْفَ أَبِي بَكْرٍ.