(৭৬২) আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জুমআর দিন এলে মসজিদের প্রত্যেক দরজায় ফিরিশতা খাড়া হয়ে যান। অতঃপর তাঁরা প্রথম-দ্বিতীয় লিখতে থাকেন। পরিশেষে যখন ইমাম মিম্বরে বসেন, তখন তাঁরা খাতা গুটিয়ে দেন এবং খুতবা শুনতে (মসজিদের ভিতরে) এসে যান। আর যে সকাল-সকাল আসে, তার উপমা উট কুরবানীদাতার মতো, অতঃপর গাভী কুরবানীদাতার মতো, অতঃপর মেষ কুরবানীদাতার মতো, অতঃপর মুরগী কুরবানীদাতার মতো, অতঃপর ডিম কুরবানীদাতার মতো।

(৭৬৩) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমআর দিন নাপাকির গোসলের ন্যায় গোসল করল এবং (সূর্য ঢলার সঙ্গে সঙ্গে) প্রথম ওয়াক্তে মসজিদে এল, সে যেন একটি উট দান করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় সময়ে এল, সে যেন একটি গাভী দান করল। যে ব্যক্তি তৃতীয় সময়ে এল, সে যেন একটি শিংবিশিষ্ট দুস্বা দান করল। যে ব্যক্তি চতুর্থ সময়ে এল, সে যেন একটি মুরগী দান করল। আর যে ব্যক্তি পঞ্চম সময়ে এল, সে যেন একটি ডিম দান করল। তারপর ইমাম যখন খুতবাহ প্রদানের জন্য বের হন, তখন (লেখক) ফিরিশতাগণ যিকর শোনার জন্য হাজির হয়ে যান।

(৭৬৪) আওস বিন আওস সাক্বাফী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমআর দিন (মাথা) ধৌত করে ও যথা নিয়মে গোসল করে, সকাল-সকাল ও আগে-আগে (মসজিদে যাওয়ার জন্য) প্রস্তুত হয়, সওয়ার না হয়ে পায়ে হেঁটে (মসজিদে) যায়, ইমামের কাছাকাছি বসে মনোযোগ সহকারে (খোতবা) শ্রবণ করে, এবং কোন অসার ক্রিয়া-কলাপ করে না, সে ব্যক্তির প্রত্যেক পদক্ষেপের বিনিময়ে এক বৎসরের নেক আমল ও তার (সারা বছরের) রোযা ও নামাযের সওয়াব লাভ হয়।

(৭৬৫) আবূ উবাইদাহ বিন জাররাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সবচেয়ে উত্তম নামায হল জুমআর দিন ফজরের জামাআত সহকারে নামায।

(৭৬৬) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক সাবালকের জন্য জুমআর দিন গোসল করা, মিসওয়াক করা এবং যথাসাধ্য সুগন্ধি ব্যবহার করা কর্তব্য।

(৭৬৭) আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জুমআর দিন গোসল করে, তার স্ত্রীর সুগন্ধি (আতর) থাকলে তা ব্যবহার করে, উত্তম লেবাস পরিধান করে, অতঃপর (মসজিদে এসে) লোকেদের কাতার চিরে (আগে অতিক্রম) করে না এবং ইমামের উপদেশ দানকালে কোন বাজে কর্ম করে না, সে ব্যক্তির জন্য তা উভয় জুমআর মধ্যবর্তী কৃত পাপের কাফফারা হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি অনর্থক কর্ম করে এবং লোকেদের কাতার চিরে সামনে অতিক্রম করে, সে ব্যক্তির জুমআহ যোহরে পরিণত হয়ে যায়।

(৭৬৮) ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন জুমআতে আসার ইচ্ছা করবে, তখন সে যেন গোসল করে।

(৭৬৯) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক সাবালকের উপর জুমআর দিনের গোসল ওয়াজেব।*

(৭৭০) সামুরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমআর দিনে ওযূ করল, তাহলে তা যথেষ্ট ও উত্তম। আর যে গোসল করল, (তার) গোসল হল সর্বোত্তম।

(৭৭১) জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, একদা সুলাইক গাতফানী মসজিদে প্রবেশ করে বসে পড়লে তিনি তাকে বললেন, তুমি নামায পড়েছ কি? লোকটা বলল, না। তিনি বললেন, ওঠ এবং হালকা করে ২ রাকআত পড়ে নাও। অতঃপর তিনি সকলের জন্য চিরস্থায়ী একটি বিধান দেওয়ার উদ্দেশ্যে লোকেদেরকে সম্বোধন করে বললেন, তোমাদের কেউ যখন ইমামের খুতবা দেওয়া কালীন সময়ে উপস্থিত হয়, সে যেন (সংক্ষেপে) ২ রাকআত নামায পড়ে নেয়।

(৭৭২) আব্দুল্লাহ বিন আবী সারহ বলেন, একদা হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) মসজিদ প্রবেশ করলেন। তখন মারওয়ান খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি নামায পড়তে শুরু করলে প্রহরীরা তাঁকে বসতে আদেশ করল। কিন্তু তিনি তাদের কথা না শুনেই নামায শেষ করলেন। নামায শেষে লোকেরা তাকে বলল, আল্লাহ আপনাকে রহম করুন। এক্ষনি ওরা যে আপনার অপমান করত। উত্তরে তিনি বললেন, আমি সে নামায ছাড়ব কেন, যে নামায পড়তে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আদেশ করতে দেখেছি।

(৭৭৩) আব্দুল্লাহ বিন বুসর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক জুমআর দিনে এক ব্যক্তি লোকেদের কাতার চিরে (মসজিদের ভিতর) এল। সে সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন। তাকে দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বসে যাও, তুমি বেশ কষ্ট দিয়েছ এবং দেরী করেও এসেছ।

(৭৭৪) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জুমআর দিন ইমামের খুতবা দানকালে কথা বললে তুমি অনর্থ কর্ম করলে এবং (জুমআহ) বাতিল করলে।

(৭৭৫) উক্ত আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জুমআর দিন ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় যদি তুমি তোমার (কথা বলছে এমন) সঙ্গীকে ’চুপ কর’ বল, তাহলে তুমিও অসার কর্ম করবে।

(৭৭৬) আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, একদা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর দিন দাঁড়িয়ে জুমআর খুতবা দিচ্ছিলেন। এক মরুবাসী (বেদুঈন) উঠে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! মাল-ধন ধ্বংস হয়ে গেল আর পরিবার পরিজন (খাদ্যের অভাবে) ক্ষুধার্ত থেকে গেল। সুতরাং আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করুন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের দুই হাত তুলে দু’আ করলেন এবং লোকেরাও তাঁর সাথে দু’আর জন্য হাত তুলল। ফলে এমন বৃষ্টি কুরু হল যে পরবর্তী জুমআতে উক্ত (বা অন্য এক) ব্যক্তি পুনরায় খাড়া হয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! ঘর-বাড়ি ভেঙে গেল এবং মাল-ধন ডুবে গেল। সুতরাং আপনি আমাদের জন্য দু’আ করুন! মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন নিজের হাত তুলে পুনরায় বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার জন্য দু’আ করলেন এবং বৃষ্টিও থেমে গেল।