পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পবিত্র স্ত্রীগণের মর্যাদা

৬১৮৪-[১] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, মারইয়াম বিনতু ’ইমরান ছিলেন সকল নারীর মাঝে শ্রেষ্ঠ। আর খাদীজাহ্ বিনতু খুওয়াইলিদ (রাঃ) হলেন (বর্তমান উম্মতের) সমগ্র নারী সমাজের মধ্যে শ্রেয়। (বুখারী ও মুসলিম)
অপর এক বর্ণনাতে আছে- আবূ কুরায়ব (রাঃ) বলেন, বর্ণনাকারী ওয়াকী আকাশ ও জমিনের দিকে ইঙ্গিত করেন।

الفصل الاول (بَابُ مَنَاقِبِ أَزْوَاجِ)

وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «خَيْرُ نِسَائِهَا مَرْيَمُ بِنْتُ عِمْرَانَ وَخَيْرُ نِسَائِهَا خَدِيجَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ» مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ أَبُو كُرَيْبٍ: وَأَشَارَ وَكِيعٌ إِلَى السَّمَاء وَالْأَرْض

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3432) و مسلم (69 / 2430)، (6271) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن علي رضي الله عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول خير نساىها مريم بنت عمران وخير نساىها خديجة بنت خويلد متفق عليه وفي رواية قال ابو كريب واشار وكيع الى السماء والارضمتفق علیہ رواہ البخاری 3432 و مسلم 69 2430 6271 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা: উক্ত বিষয়ে হারিস ‘উরওয়াহ্ থেকে মুরসাল সূত্রে আরো একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। সেটি হলো যে, খাদীজাহ্ (রাঃ) তাঁর যুগের শ্রেষ্ঠ মহিলা। মারইয়াম তাঁর যুগের শ্রেষ্ঠ মহিলা। ফাতিমাহ্ তাঁর যুগের শ্রেষ্ঠ মহিলা।
ওয়াকী' এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, তারা আসমান জমিনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। কিন্তু অনেক ব্যাখ্যাকারী তার এই বক্তব্য সমর্থন করেননি। কারণ হলো যে, তারা জমিনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হতে পারে কিন্তু আসমানে কিভাবে শ্রেষ্ঠ হয়?
অন্যদিকে ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) তার এই ব্যাখ্যাকে সমর্থন করে বলেন, হ্যাঁ, এটিও হতে পারে। কারণ ‘আরবীতে এরূপ ব্যবহার আছে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, (اِنَّ اللّٰهَ لَا یَخۡفٰی عَلَیۡهِ شَیۡءٌ فِی الۡاَرۡضِ وَ لَا فِی السَّمَآءِ) “নিশ্চয় ভূমণ্ডলের ও নভোমণ্ডলের কোন জিনিসই আল্লাহর নিকট গোপন থাকে না”- (সূরাহ্ আ-লি ইমরান ৩: ৫)। অর্থাৎ আল্লাহর কাছে বিশ্বের কোন কিছুই গোপন থাকে না। এখানে আল্লাহর কাছে বিশ্বের কোন কিছুই গোপন থাকে না, অর্থাৎ আল্লাহ জমিনের সাথে আসমান শব্দ ব্যবহার করেছেন।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তারা প্রত্যেকেই তাদের সময়ের শ্রেষ্ঠ মহিলা ছিলেন। তবে তাদের মাঝে কার তুলনায় কার মর্যাদা বেশি তা জানা যায়নি। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

ফাতহুল বারীতে ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে সহীহ সনদে নাসায়ীর বরাতে এ সম্পর্কে আরো একটি হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে। সেটি হলো জান্নাতবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম মহিলা হলো খাদীজাহ্, ফাতিমাহ্, মারইয়াম ও ‘আসিয়াহ্। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৫৩০ পৃ., হা. ৩৪৩২)।

শারহুন নাবাবীতেও বলা হয়ে তারা প্রত্যেকেই ছিলেন তাদের যুগের শ্রেষ্ঠ মহিলা। তাতে এই প্রসঙ্গে আরো একটি হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে। তা হলো রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, পুরুষের মধ্যে অনেকেই পরিপূর্ণতা লাভ করেছে, কিন্তু মহিলাদের মধ্যে শুধু মারইয়াম বিনতু ‘ইমরান এবং ফির'আওনের স্ত্রীই পরিপূর্ণতা লাভ করেছে।
এ হাদীসটিকে কেন্দ্র করে কিছু লোক বলে যে, মারইয়াম এবং ‘আসিয়াহ্ নবী ছিলেন। কিন্তু না তারা কোন নবী ছিলেন না। এটি জমহুর ‘উলামার মত। (শারহুন নাবাবী ১৫শ খণ্ড, ১৭৮ পৃ., হা, ২৪৩০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পবিত্র স্ত্রীগণের মর্যাদা

৬১৮৫-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জিবরীল (আঃ) নবী (সা.) -এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এই যে খাদীজাহ্ একটি পাত্র নিয়ে আসছেন। তাতে তরকারি এবং খাওয়ার সামগ্রী রয়েছে। তিনি (সা.) যখন আপনার কাছে আসবেন, তখন আপনি তাঁকে তাঁর রবের পক্ষ হতে এবং আমার পক্ষ হতে সালাম বলবেন এবং তাঁকে জান্নাতের মধ্যে মুক্তাখচিত এমন একটি ভবনের সুসংবাদ প্রদান করবেন, যেখানে না কোন হৈ-হুল্লোড় আছে আর না কোন দুঃখ রয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ مَنَاقِبِ أَزْوَاجِ)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: أَتَى جِبْرِيلُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «يَا رسولَ اللَّهِ هَذِهِ خَدِيجَةُ قَدْ أَتَتْ مَعَهَا إِنَاءٌ فِيهِ إِدام وَطَعَام فَإِذَا أَتَتْكَ فَاقْرَأْ عَلَيْهَا السَّلَامَ مِنْ رَبِّهَا وَمِنِّي وَبَشِّرْهَا بِبَيْتٍ فِي الْجَنَّةِ مِنْ قَصَبٍ لَا صَخَبَ فِيهِ وَلَا نَصَبَ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3820) و مسلم (71 / 2432)، (6273) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابي هريرة قال اتى جبريل النبي صلى الله عليه وسلم فقال يا رسول الله هذه خديجة قد اتت معها اناء فيه ادام وطعام فاذا اتتك فاقرا عليها السلام من ربها ومني وبشرها ببيت في الجنة من قصب لا صخب فيه ولا نصب متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 3820 و مسلم 71 2432 6273 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে, যখন খাদীজাহ্ (রাঃ) আপনার কাছে আসবে তখন তার প্রভুর পক্ষ থেকে এবং আমার পক্ষ থেকে আপনি তার কাছে সালাম পৌঁছে দিবেন। শারহে মুসলিম গ্রন্থকার বলেন, এ কথার মাধ্যমে খাদীজা (রাঃ)-এর বাহ্যিক মর্যাদা প্রকাশ করা হয়েছে। (শারহুন নাবাবী ১৫শ খণ্ড, ১৭৯ পৃ., হা. ২৪৩১)

ফাতহুল বারীতে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন হেরা গুহায় ছিলেন তখন খাদীজাহ্ (রাঃ) তাঁর জন্য খাবার নিয়ে যেতেন। তারই ধারাবাহিকতায় একদিন খাবার নিয়ে যাওয়ার পূর্বমুহূর্তে জিবরীল (আঃ) এসে তাকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার কাছে খাদীজাহ্ (রাঃ) খাবার ও তরকারির পাত্র নিয়ে আসছেন। অতএব যখন সে আপনার কাছে এসে যাবে তখন আপনি তার প্রতিপালক ও আমার পক্ষ থেকে সালাম জানাবেন।
তারপর যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) খাদীজাহ (রাঃ) কে আল্লাহ ও জিবরীল (আঃ)-এর পক্ষ থেকে সালাম জানালেন তখন উত্তরে খাদীজাহ্ বললেন, (إِنَّ اللهَ هُوَ السَّلَامُ وَعَلَيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ السَّلَمُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ) নাসায়ীতে আরো অতিরিক্ত উল্লেখ করা হয়েছে, (وَعَلَى مَنْ سَمِعَ السَّلَامُ إِلَّا الشَّيْطَانَ)
‘আলিমগণ বলেন, খাদীজাহ্ (রাঃ)-এর সালামের উত্তরের মাধ্যমে বুঝা যায় যে, তার তাৎক্ষণিক বুঝ ছিল অনেক বেশি। তাই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, আল্লাহ হলেন নিজেই (السَّلَامُ) তথা শান্তিদাতা। তাহলে তার ওপর কিভাবে শান্তি বর্ষিত হবে। তাই তিনি বলেছেন, (إِنَّ اللهَ هُوَ السَّلَامُ) তথা নিশ্চয় আল্লাহই শান্তিদাতা।
কিন্তু ইসলামের প্রাথমিক যুগে অনেক সাহাবীই এ বিষয়টি বুঝতে পারেননি। তাই তারা সালাতে তাশাহুদের সময় বলতেন, (السَّلَامُ عَلَى اللهِ) তথা আল্লাহর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। নবী (সা.) যখন বিষয়টি শুনলেন তখন বললেন, তোমরা (السَّلَامُ عَلَى اللهِ) বলো না। কেননা (السَّلَامُ) হলো আল্লাহরই একটি নাম। অতএব তোমরা আল্লাহর ক্ষেত্রে প্রশংসা জ্ঞাপন করো এবং তার জন্য অভিবাধন বর্ণনা করো। অতএব বলো, (التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ)

আবূ দাউদ ও নাসায়ীতে ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে খাদীজাহ্ (রাঃ) -এর মর্যাদা সম্পর্কে আরো হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেমন ইবনু আব্বাস (রাঃ) মারফু সূত্রে বর্ণনা করেন। জান্নাতী নারীদের মধ্যে সর্বোত্তম নারী হলেন খাদীজা বিনতু খুয়াইলিদ এবং ফাতিমাহ্ বিনতু মুহাম্মাদ। (ফাতহুল বারী ৭ম খণ্ড, ১৫৯ পৃ., হা. ৩৮২০)
মিরকাতে খাদীজাহ্ (রাঃ)-এর বাড়ির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, তা হবে এমন বাড়ি যেখানে কোন শোরগোল চিল্লাচিল্লি ও কষ্ট-ক্লান্তি থাকবে না। আর তাতে এমন কোন কিছু থাকবে না যা জান্নাতের সুখময় জীবনযাপনের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করতে পারে।
কাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, জান্নাতের বাড়িকে শোরগোল এবং কষ্ট ক্লেশ থেকে মুক্ত থাকার কথা বলা হয়েছে। কারণ দুনিয়াতে এমন কোন বাড়ি নেই যেখানে মানুষ বসবাস করে আর তাতে শোরগোল হয় না এবং কোন কষ্ট-ক্লেশ থাকে না। তা ছাড়াও দুনিয়ার বাড়ি তৈরি করতেও রয়েছে অনেক কষ্ট-ক্লান্তি। কিন্তু জান্নাতের বাড়ি এসব কিছু থেকেই মুক্ত।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, জান্নাতের বাড়ি তৈরি হয়েছে আল্লাহর () (হয়ে যাও) বলার মাধ্যমে। তাই তাতে কোন কষ্ট-ক্লান্তির বিষয় নেই। পক্ষান্তরে দুনিয়ার বাড়ি তৈরি করতে অনেক কষ্ট করতে হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পবিত্র স্ত্রীগণের মর্যাদা

৬১৮৬-[৩] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, খাদীজাহ্ (রাঃ) -এর প্রতি আমার যতটা ঈর্ষা হত, ততটা ঈর্ষা নবী (সা.) -এর অপর কোন স্ত্রীর প্রতি আমি পোষণ করতাম না। অথচ তাকে আমি দেখিনি। কিন্তু নবী (সা.) অধিকাংশ সময় তাঁর কথা আলোচনা করতেন। সচরাচর ছাগল যাবাহ করে তার বিভিন্ন অঙ্গ কেটে তা খাদীজাহ্ (রাঃ)-এর বান্ধবীদের কাছে (হাদিয়াস্বরূপ) পাঠাতেন। আমি কখনো কখনো রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতাম, মনে হয় যেন দুনিয়াতে খাদীজাহ্ ছাড়া আর কোন স্ত্রীলোকই নেই।’ তখন তিনি উত্তরে বলতেন, “নিশ্চয় সে এরূপই ছিল, এরূপই ছিল। আর তাঁর তরফ হতেই আমার সন্তান-সন্ততি রয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ مَنَاقِبِ أَزْوَاجِ)

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: مَا غِرْتُ عَلَى أَحَدٍ مِنْ نِسَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا غِرْتُ عَلَى خَدِيجَةَ وَمَا رَأَيْتُهَا وَلَكِنْ كَانَ يُكْثِرُ ذِكْرَهَا وَرُبَّمَا ذَبَحَ الشَّاةَ ثُمَّ يُقَطِّعُهَا أَعْضَاءً ثُمَّ يَبْعَثُهَا فِي صدائق خَدِيجَة فَيَقُول: «إِنَّهَا كَانَت وَكَانَت وَكَانَتْ وَكَانَ لِي مِنْهَا وُلْدٌ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3818) و مسلم (75 / 2435)، (6278) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن عاىشة قالت ما غرت على احد من نساء النبي صلى الله عليه وسلم ما غرت على خديجة وما رايتها ولكن كان يكثر ذكرها وربما ذبح الشاة ثم يقطعها اعضاء ثم يبعثها في صداىق خديجة فيقول انها كانت وكانت وكانت وكان لي منها ولد متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 3818 و مسلم 75 2435 6278 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা: ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) যখন রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বললেন, খাদীজাহ ছাড়া কি দুনিয়াতে আর কোন নারী নেই। তখন আল্লাহর রাসূল (সা.) তাকে বললেন, (إِنَّهَا كَانَت وَكَانَت) অর্থাৎ তিনি এমন এমন ছিলেন। এর ব্যাখ্যায় মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা বলেন, খাদীজাহ্ (রাঃ) ছিলেন দিনে সিয়াম পালনকারী এবং রাতের ইবাদাতকারী, তিনি সুন্দরী, সুন্দর চরিত্রের অধিকারী স্নেহশীল, অন্যের প্রতি দয়াবান। এছাড়াও আরো অনেক গুণে গুণান্বিত।
খাদীজা বিনতু খুওয়াইলিদ ইবনু আসাদ আল কুরাইশিয়াহ্ ছিলেন আবূ হালাহ ইবনু বারারাহ্-এর প্রথম স্ত্রী। তারপর তাকে বিবাহ করে ‘আতীক ইবনু আবিদ। সর্বশেষে তার তৃতীয় বিবাহ হয় রাসূলুল্লাহ (সা.)- এর সাথে যখন খাদীজাহ্ -এর বয়স ছিল ৪০ আর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বয়স ২৫ বছর। তার পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সা.) আর কোন বিবাহ করেননি এবং তার বর্তমানেও (জীবিত থাকা কালীন) অন্য কোন নারীকে বিবাহ করেননি। তিনি নারী পুরুষদের মাঝে সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ঈমান এনেছিলেন। ইব্রাহীম ব্যতীত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সকল সন্তান তার গর্ভে জন্ম লাভ করেছে। হিজরতের দশ বছর পূর্বে তিনি মক্কায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তাকে হাজুন নামক স্থানে দাফন করা হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পবিত্র স্ত্রীগণের মর্যাদা

৬১৮৭-[৪] আবূ সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, (একদিন) রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেছেন, হে ’আয়িশাহ্! এই যে জিবরীল (আঃ) তোমাকে সালাম বলেছেন। আয়িশাহ্ (রাঃ) (জবাবে) বললেন, তাঁর ওপরও সালাম এবং আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, যা আমি দেখতে পাই না, তিনি [অর্থাৎ আল্লাহর রাসূল (সা.)] তা দেখতে পান। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ مَنَاقِبِ أَزْوَاجِ)

وَعَن أبي سَلمَة أَنَّ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا عَائِشُ هَذَا جِبْرِيلُ يُقْرِئُكِ السَّلَامَ» . قَالَتْ: وَعَلَيْهِ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ. قَالَتْ: وَهُوَ يَرَى مَا لَا أَرَى مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3768) و مسلم (90 / 2447)، (6301) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابي سلمة ان عاىشة قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يا عاىش هذا جبريل يقرىك السلام قالت وعليه السلام ورحمة الله قالت وهو يرى ما لا ارى متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 3768 و مسلم 90 2447 6301 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর চেয়ে খাদীজাহ্ (রাঃ)-এর মর্যাদা বেশি। কেননা খাদীজাহ্ (রাঃ)-কে জিবরীল আলাহিস সালাম জানিয়েছেন তার রবের পক্ষ থেকে। আর ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে সালাম জানিয়েছেন জিবরীল (আঃ) নিজের পক্ষ থেকে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ৭ম খণ্ড, ১২৩ পৃ., হা. ৩৭৬৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ সালামাহ্ (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পবিত্র স্ত্রীগণের মর্যাদা

৬১৮৮-[৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, তোমাকে তিন রজনীতে স্বপ্নযোগে আমাকে দেখানো হয়েছে। একজন মালাক (ফেরেশতা) তোমাকে রেশমি কাপড়ে জড়িয়ে নিয়ে এসে আমাকে বলেন, ইনি আপনার স্ত্রী। তখন আমি তোমার চেহারার কাপড় খুললাম। তখন দেখতে পেলাম, তুমিই। অতঃপর আমি (মনে মনে) বললাম, এটা যদি আল্লাহর তরফ হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই পূর্ণ হবে। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ مَنَاقِبِ أَزْوَاجِ)

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: أُريتُكِ فِي الْمَنَامِ ثَلَاثَ لَيَالٍ يَجِيءُ بِكِ الْمَلَكُ فِي سَرَقَةٍ مِنْ حَرِيرٍ فَقَالَ لِي: هَذِهِ امْرَأَتُكَ فَكَشَفْتُ عَنْ وَجْهِكِ الثَّوْبَ فَإِذَا أَنْتِ هِيَ. فَقُلْتُ: إِنْ يَكُنْ هَذَا مِنْ عِنْدِ اللَّهِ يُمْضِهِ . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3895) و مسلم (79 / 2438)، (6283) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن عاىشة قالت قال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم اريتك في المنام ثلاث ليال يجيء بك الملك في سرقة من حرير فقال لي هذه امراتك فكشفت عن وجهك الثوب فاذا انت هي فقلت ان يكن هذا من عند الله يمضه متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 3895 و مسلم 79 2438 6283 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা: শারহুন নাবাবীর গ্রন্থে কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এ স্বপ্নটি যদি তাঁর নুবুওয়্যাতের পূর্বে হয়ে থাকে এবং অনর্থক স্বপ্ন থেকে মুক্ত হয়ে থাকে তাহলে তার অর্থ হলো এটি একটি সত্য স্বপ্ন। আর যদি নুবুওয়্যাতের পরে হয় তাহলে তার তিনটি অর্থ হতে পারে।
১) স্বপ্নটা যদি প্রত্যক্ষ হয় তাহলে তার কোন ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি পরোক্ষ হয় তাহলে তার ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে। এখন সন্দেহ হলো যে, এই স্বপ্নটি কি প্রত্যক্ষ ছিল নাকি পরোক্ষ?
২) “আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর সাথে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর বিবাহ দ্বারা কি দুনিয়ার বিবাহ উদ্দেশ্য নাকি জান্নাতের বিবাহ? যদি দুনিয়ার বিবাহ উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে তো আল্লাহ তা বাস্তবায়ন করেছেন। এখন সন্দেহ হলো যে, এই স্বপ্নের মাধ্যমে কি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ‘আয়িশার সাথে দুনিয়ার বিবাহ উদ্দেশ্য নাকি জান্নাতের বিবাহ?
৩) কোন সন্দেহ নেই। প্রত্যক্ষভাবেই এই সংবাদ দেয়া হয়েছে যা বাস্তবায়িত হয়েছে।  (শারহুন নাবাবী ১৫শ খণ্ড, ১৮২ পৃ., হা, ২৪৩৮)
মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর বিবাহের ব্যপারে প্রস্তাব দিয়েছেন এবং নুবুওয়্যাতের দশম বছরে শাওয়াল মাসে মক্কায় তাকে বিবাহ করেছেন। দ্বিতীয় হিজরীতে শাওয়াল মাসে মদীনায় তার সাথে বাসর করেন। তখন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর বয়স ছিল ৮ বছর ১০ মাস। আবার কেউ কেউ বলেন, হিজরতের ৭ মাস পরেই রাসূলুল্লাহ (সা.) তার সাথে বাসর করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তার সাথে ৯ বছর জীবনযাপন করেন। তারপর তিনি মৃত্যুবরণ করেন তখন ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর বয়স ছিল ১৮ বছর। রাসূলুল্লাহ (সা.) ‘আয়িশাহ্ ছাড়া আর কোন কুমারী নারীকে বিবাহ করেননি।
‘আয়িশাহ (রাঃ) ছিলেন একজন ফকীহ জ্ঞানী বিশুদ্ধভাষিণী এবং অনেক মর্যাদার অধিকারিণী। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তার থেকেও অনেক সাহাবী ও তাবি'ঈ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আয়িশাহ (রাঃ) ১৭ই রমাযানে মঙ্গলবার রাতে ৫৭/৫৮ বছর বয়সে মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন। রাতেই তাকে দাফন করার আদেশ করা হয়। অতঃপর তাকে বাক্বী কবরস্থানে দাফন করা হয়। আর জানাযার সালাত আদায় করিয়ে ছিলেন আবূ হুরায়রাহ (রাঃ)- (মিরকাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পবিত্র স্ত্রীগণের মর্যাদা

৬১৮৯-[৬] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সন্তুষ্টি লাভের জন্য লোকেরা তাদের হাদিয়্যাহ্ বা উপহার পাঠাবার জন্য আমি ’আয়িশার দিনের (পালার) প্রতি খেয়াল রাখত। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্ত্রীগণ দুই দলে বিভক্ত ছিলেন। এক দলে ছিলেন ’আয়িশাহ্, হাফসাহ, সফিয়্যাহ্ ও সাওদাহ্ (রাঃ)। আর অন্য দলে ছিলেন উম্মু সালামাহ্ ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অন্যান্য স্ত্রীগণ।
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-এর দলের স্ত্রীগণ উম্মু সালামাহ্-কে বললেন, আপনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে আলাপ করুন, তাঁকে বলুন, তিনি যেন সকল মানুষকে বলে দেন যে, কেউ রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে হাদিয়্যাহ্ দিতে চাইলে তিনি তাঁর যেই স্ত্রীর কাছেই অবস্থান করুন না কেন, সেখানেই যেন পাঠিয়ে দেয়। অতঃপর উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে কথাবার্তা বললেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বললেন, হে উম্মু সালামাহ্! আয়িশাহ’র সম্পর্কে তুমি আমাকে কষ্ট দিয়ো না। কেননা একমাত্র ’আয়িশাহ্ ছাড়া আর কোন স্ত্রীর সাথে এক কাপড়ে থাকাকালে আমার কাছে ওয়াহী আসেনি। উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে কষ্ট দেয়া হতে আল্লাহ তা’আলার কাছে তাওবাহ্ করছি। অতঃপর স্ত্রীগণ ফাতিমাহ্ (রাঃ) -এর কাছে গিয়ে তাঁর সাথে কথাবার্তা বলে তাকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে পাঠালেন। অতএব ফাতিমাহ্ (রাঃ) গিয়ে তাঁর সাথে কথাবার্তা বললেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে স্নেহময়ী! যা আমি পছন্দ করি, তুমি কি তা পছন্দ কর না? ফাতিমাহ্ (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যাই। তখন তিনি (সা.) বললেন, তুমি তাহলে আয়িশাহ্-কে ভালোবাস। (বুখারী ও মুসলিম)

বাদী’উল খালক্ক “সৃষ্টির সূচনা” অধ্যায়ে সকল নারীদের উপর ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কিত আবূ মূসা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত আনাস (রাঃ)-এর হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে।

الفصل الاول (بَابُ مَنَاقِبِ أَزْوَاجِ)

وَعَنْهَا قَالَتْ: إِنَّ النَّاسَ كَانُوا يَتَحَرَّوْنَ بِهَدَايَاهُمْ يَوْمَ عَائِشَةَ يَبْتَغُونَ بِذَلِكَ مَرْضَاةَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وَقَالَتْ: إِنَّ نِسَاءِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُنَّ حِزْبَيْنِ: فَحِزْبٌ فِيهِ عَائِشَةُ وَحَفْصَةُ وَصَفِيَّةُ وَسَوْدَةُ وَالْحِزْبُ الْآخَرُ أُمُّ سَلَمَةَ وَسَائِرُ نِسَاءِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَلَّمَ حِزْبُ أُمِّ سَلَمَةَ فَقُلْنَ لَهَا: كَلِّمِي رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكَلِّمُ النَّاسَ فَيَقُولُ: مَنْ أَرَادَ أَنْ يُهْدِيَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلْيُهْدِهِ إِلَيْهِ حَيْثُ كَانَ. فَكَلَّمَتْهُ فَقَالَ لَهَا: «لَا تُؤْذِينِي فِي عَائِشَةَ فَإِنَّ الْوَحْيَ لَمْ يَأْتِنِي وَأَنَا فِي ثَوْبِ امْرَأَةٍ إِلَّا عَائِشَةَ» . قَالَتْ: أَتُوب إِلَى الله من ذَاك يَا رَسُولَ اللَّهِ ثُمَّ إِنَّهُنَّ دَعَوْنَ فَاطِمَةَ فَأَرْسَلْنَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَلَّمَتْهُ فَقَالَ: «يَا بُنَيَّةُ أَلَا تُحِبِّينَ مَا أُحِبُّ؟» قَالَتْ: بَلَى. قَالَ: «فَأَحِبِّي هَذِهِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَذَكَرَ حَدِيثُ أَنَسٍ «فَضْلَ عَائِشَةَ عَلَى النِّسَاءِ» فِي بَابِ «بَدْءِ الْخَلْقِ» بِرِوَايَةِ أبي مُوسَى

متفق علیہ ، رواہ البخاری (2581) و مسلم (83 / 2442)، (6290) 0 حدیث انس تقدم (5724) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعنها قالت ان الناس كانوا يتحرون بهداياهم يوم عاىشة يبتغون بذلك مرضاة رسول الله صلى الله عليه وسلم وقالت ان نساء رسول الله صلى الله عليه وسلم كن حزبين فحزب فيه عاىشة وحفصة وصفية وسودة والحزب الاخر ام سلمة وساىر نساء رسول الله صلى الله عليه وسلم فكلم حزب ام سلمة فقلن لها كلمي رسول الله صلى الله عليه وسلم يكلم الناس فيقول من اراد ان يهدي الى رسول الله صلى الله عليه وسلم فليهده اليه حيث كان فكلمته فقال لها لا توذيني في عاىشة فان الوحي لم ياتني وانا في ثوب امراة الا عاىشة قالت اتوب الى الله من ذاك يا رسول الله ثم انهن دعون فاطمة فارسلن الى رسول الله صلى الله عليه وسلم فكلمته فقال يا بنية الا تحبين ما احب قالت بلى قال فاحبي هذه متفق عليه وذكر حديث انس فضل عاىشة على النساء في باب بدء الخلق برواية ابي موسىمتفق علیہ رواہ البخاری 2581 و مسلم 83 2442 6290 0 حدیث انس تقدم 5724 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রীদের মাঝে দুটি দল ছিল। একদলে ছিল ‘আয়িশাহ্, হাফসাহ, সফিয়্যাহ এবং সাওদাহ (রাঃ)। অন্য আরেক দলে ছিল উম্মু সালামাহ্, যায়নাব, উম্মু হাবীবাহ্, জুওয়াইরিয়াহ্ এবং মায়মূনাহ্ (রাঃ)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্ত্রীদের মধ্য হতে খাদীজাহ্ ও ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এখন বাকী স্ত্রীদের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু বলা হবে।

হাফসাহ (রাঃ) তিনি হলেন ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর কন্যা। তার মা হলেন যায়নাব বিনতু মাযু'উন। প্রথমে তার খুনায়স আস্ সাহমী (রাঃ)-এর সাথে বিবাহ হয়েছিল। কিন্তু তিনি বদর যুদ্ধে আহত হয়ে মারা যান। তারপর তৃতীয় হিজরীতে রাসূল (সা.)-এর সাথে তার বিবাহ হয়। হাফসাহ (রাঃ) ৪৫ হিজরীতে ৬০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তার থেকে অনেক সাহাবী এবং তাবিঈ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

সফিয়্যাহ (রাঃ) তিনি হলেন, বানী ইসরাঈলের হুয়াই ইবনু আখতাব-এর কন্যা। প্রথমে তার বিবাহ হয়েছিল বনী ইসরাঈলের আরেক অন্যতম সর্দার কিনানাহ্ ইবনু আবূল হুকায়ক-এর সাথে। তার পিতা ও স্বামী উভয়ে খায়বার যুদ্ধে নিহত হয়। তখন সে বন্দি অবস্থায় মুসলিমদের কাছে আসে। অতঃপর সে ইসলাম গ্রহণ করে। তারপর সাহাবীদের প্রস্তাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে আযাদ করে বিবাহ করেন। তখন তার বয়স ছিল ১৭ বছর। তিনি ৫০ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৬০ বছর। তার থেকে আনাস ও ইবনু উমার (রাঃ) ছাড়াও আরো অনেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

সাওদাহ (রাঃ) তিনি হলেন যম'আহ-এর কন্যা। প্রথমে তার বিবাহ হয়েছিল সফওয়ান ইবনু আমর এর সাথে। তারা স্বামী-স্ত্রী উভয়ে ইসলাম গ্রহণ করে হাবশায় হিজরত করেছিলেন। তার স্বামী সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। পরে মক্কায় ফিরে আসার পর রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে বিবাহ করেন। সে সময় তার বয়স ছিল ৫০ বছর এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর বয়সও ছিল ৫০ বছর। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার সাথে ১৪ বছর জীবনযাপন করেন। তিনি ১৯ হিজরীতে ৭২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তার থেকে ৫টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি হলেন আবূ উমাইয়্যাহ্-এর কন্যা। তার আসল নাম হলো হিন্দ। প্রথমে তার বিবাহ হয়েছিল রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আপন ফুফাতো ভাই আবূ সালামাহ্-এর সাথে। তিনি উহুদ যুদ্ধে আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তারপর ৪র্থ হিজরীতে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে বিবাহ করেন। তখন তার বয়স ছিল ২৬ বছর। রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে তার দাম্পত্যকাল ছিল ৭ বছর। তিনি ৮৪ বছর বয়সে ৫৯ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। তার থেকে অনেক সাহাবী এবং তাবিঈ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

যায়নাব (রাঃ) তিনি হলেন জাহশ-এর কন্যা তার মা হলেন উমাইয়্যাহ্ বিনতু আবদুল মুত্তালিব। তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ফুফাতো বোন। প্রথমে তার বিবাহ হয়েছিল রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর পোষ্যপুত্র যায়দ ইবনু হারিস-এর সাথে। উভয়ের মাঝে ভালো সম্পর্ক না হওয়ার কারণে তার স্বামী তাকে তালাক দেন। তারপর ৫ম হিজরীতে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে বিবাহ করেন। তখন তার বয়স ছিল ৩৬ বছর। তিনি ২০ হিজরীতে ৫১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তার থেকে আয়িশাহ্, উম্মু হাবীবাহ্ আরো অনেকেই হাদীস বর্ণনা করেছেন।

উম্মু হাবীবাহ্ (রাঃ) তার নাম হলো রমলাহ। তার পিতা হলেন আবূ সুফইয়ান ইবনু সখর। তার মা হলেন সফিয়্যাহ বিনতু আবূল আস। প্রথমে তার বিবাহ হয়েছিল ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু জাহশ-এর সাথে। স্বামী স্ত্রী উভয়ে ইসলাম গ্রহণ করে হাবশায় হিজরত করেন। কিন্তু তার স্বামী হাবশায় গিয়ে খ্রিষ্টান হয়ে যায় এবং সেখানেই মারা যায়। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে বিবাহ করেন। তখন তার বয়স ছিল ৩৬ বছর। রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে তার দাম্পত্যকাল ছিল ৬ বছর। তিনি ৭২ বছর বয়সে ৪৪ হিজরীতে মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন। তার থেকে ৬৫টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

জুওয়াইরিয়াহ্ (রাঃ) তার পিতা হলেন বানূ মুস্তালিক গোত্রের সর্দার হারিস ইবনু হিযাম। প্রথমে তার বিবাহ হয়েছিল মুসাফিহ ইবনু সুফইয়ান মুস্তালিকীর সাথে। সে যুদ্ধে বন্দি হয়েছিল এবং দাসী হিসেবে সাবিত ইবনু কায়স-এর ভাগে এসেছিল। সে তার মুনীবের সাথে মুকতাবাত চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার চুক্তির মূল্য পরিশোধ করেন এবং তাকে আযাদ করেন। অতঃপর তাকে বিবাহ করেন। তখন তার বয়স ছিল ২০ বছর। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে তার দাম্পত্যকাল ছিল ৬ বছর। তিনি ৬৫ বছর বয়সে ৫৬ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। তার থেকে ৭টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

মায়মূনাহ (রাঃ) তার পিতা হলেন হারিস আল হিলালিয়্যাহ্ আল আমিরিয়াহ্। রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে বিবাহ হওয়ার পূর্বে তার আরো দু'জনের সাথে বিবাহ হয়েছিল সর্বশেষে তার বিবাহের জন্য ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে প্রস্তাব করলেন। অতঃপর তিনি তাকে বিবাহ করলেন। তখন তার বয়স ছিল ৩৬ বছর। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে তার দাম্পত্যকাল ছিল সোয়া তিন বছর। তিনি ৫১/৬১ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। তার থেকে অনেক সাহাবী হাদীস বর্ণনা করেছেন।
মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা বিশেষভাবে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর অনেক মর্যাদা ও গুণাবলির কথা বর্ণনা করেছেন। তার মধ্যে একটি বিষয় হলো যে, ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর সাথে শয়নকালে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওপর ওয়াহী অবতীর্ণ হয়েছে। যেমন কিতাবুল খামিসে ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে লেপের নিচে ছিলাম তখন এই আয়াত নাযিল হয়।
(اِنَّکَ لَا تَهۡدِیۡ مَنۡ اَحۡبَبۡتَ) “নিশ্চয় আপনি যাকে চান তাকে হিদায়াত দান করতে পারেন না”- (সূরাহ আল কাসাস ২৮: ৫৬)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৬ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে