পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পরিবার-পরিজনদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬১৭৮-[৪৪] ’উকবাহ্ ইবনুল হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর সিদ্দীক (তাঁর খিলাফতকালে) একদিন আসরের সালাতের পর বের হয়ে হাঁটছিলেন, তাঁর সাথে ’আলী (রাঃ)-ও ছিলেন। আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) দেখলেন, হাসান অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা করছেন, তখন তিনি তাঁকে তুলে স্বীয় কাঁধে নিয়ে বললেন, আমার পিতা কুরবান হোন, ইনি তো নবী (সা.) -এর অবিকল সদৃশ, ’আলীর সাথে কোন সাদৃশ্য নেই, তখন ’আলী (রাঃ) হাসছিলেন। (বুখারী)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَابِ مَنَاقِبِ أَهْلِ)

عَن عقبةَ بن الْحَارِث قَالَ: صَلَّى أَبُو بَكْرٍ الْعَصْرَ ثُمَّ خَرَجَ يَمْشِي وَمَعَهُ عَلِيٌّ فَرَأَى الْحَسَنَ يَلْعَبُ مَعَ الصِّبْيَانِ فَحَمَلَهُ عَلَى عَاتِقِهِ. وَقَالَ: بِأَبِي شَبِيهٌ بِالنَّبِيِّ لَيْسَ شَبِيهًا بِعَلِيٍّ وَعَلِيٌّ يَضْحَكُ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

رواہ البخاری (3750) ۔
(صَحِيح)

عن عقبة بن الحارث قال صلى ابو بكر العصر ثم خرج يمشي ومعه علي فراى الحسن يلعب مع الصبيان فحمله على عاتقه وقال بابي شبيه بالنبي ليس شبيها بعلي وعلي يضحك رواه البخاريرواہ البخاری 3750 ۔صحيح

ব্যাখ্যা: অন্য বর্ণনায় আছে, এ হাদীসের রাবী ‘উবাহ্ ইবনুল হারিস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মৃত্যুর পর একবার ‘আসরের সালাতের পর আমি আবূ বাকর (রাঃ)-এর সাথে বের হলাম। আর ‘আলী (রাঃ) ও আবূ বাকর (রাঃ)-এর পাশে হাঁটছিলেন। সে সময় আবূ বাকর (রাঃ) হাসান (রাঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে হাসান (রাঃ) শিশুদের সাথে খেলছিল। আবূ বাকর (রাঃ) তাকে দেখে ঘাড়ে তুলে নিয়ে বললেন, হাসান তো নবী (সা.)-এর সাথেই বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ। আলীর সাথে তো তার তেমন সাদৃশ্য নেই। এ কথা শুনে ‘আলী (রাঃ) হাসলেন।
মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা বলেন, এ হাদীসের মাধ্যমে রাফিযীদের দাবীকে প্রত্যাখান করা হয়েছে। কারণ তারা এই দাবী করে থাকে যে, মুহাম্মাদ (সা.) আলীর সাথে একেবারে পরিপূর্ণ সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন। যেমন একটি কাক আরেকটি কাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে থাকে। তাই আল্লাহ যখন জিবরীলকে ওয়াহী দিয়ে ‘আলী (রাঃ)-এর কাছে পাঠালেন তখন সে ভুল করে মুহাম্মাদ (সা.) -এর কাছে চলে যায় বলে তারা বিশ্বাস করে থাকে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পরিবার-পরিজনদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬১৭৯-[৪৫] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন হুসায়ন (রাঃ)-এর পবিত্র শির (কূফার আমীর) উবায়দুল্লাহ ইবনু যিয়াদ-এর কাছে আনা হলো এবং তা একটি বড় চিলমচিতে রাখা হলো, তখন (হতভাগা) ইবনু যিয়াদ তাঁর মুখের মধ্যে (কাঠি দ্বারা) খোটা দিতে লাগল এবং তার সৌন্দর্য সম্পর্কে অসন্তুষ্টজনক মন্তব্য করল। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! হুসায়ন-এর আকৃতি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর আকৃতির সাথে সর্বাধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। আর তখন তার চুল ও দাড়ির মধ্যে ওয়াসিমাহ্ ঘাসের খিযাব লাগানো ছিল। (বুখারী)
আর তিরমিযী বর্ণনাতে আছে, আনাস (রাঃ) বলেন, আমি ইবনু যিয়াদ-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় হুসায়ন (রাঃ)-এর পবিত্র শির আনা হলো, তখন ইবনু যিয়াদ হাতের কাঠি দিয়ে তার নাকের মধ্যে আঘাত করতে করতে তিরস্কারের সুরে বলল, এত সুন্দর চেহারা আমি কক্ষনো দেখিনি। [আনাস (রাঃ) বলেন,] তখন আমি তার কথার আপত্তি জানিয়ে বললাম, সাবধান! হুসায়ন (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর আকৃতির সাথে সর্বাধিক সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন। [আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, হাদীসটি সহীহ, হাসান ও গরীব]।

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَابِ مَنَاقِبِ أَهْلِ)

وَعَن أنس قَالَ: أَتَى عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ زِيَادٍ بِرَأْسِ الْحُسَيْنِ فَجُعِلَ فِي طَسْتٍ فَجَعَلَ يَنْكُتُ وَقَالَ فِي حُسْنِهِ شَيْئًا قَالَ أَنَسٌ: فَقُلْتُ: وَاللَّهِ إِنَّهُ كَانَ أَشْبَهَهُمْ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ مَخْضُوبًا بِالْوَسِمَةِ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ وَفِي رِوَايَةِ التِّرْمِذِيِّ قَالَ: كُنْتُ عِنْدَ ابْنِ زِيَادٍ فَجِيءَ بِرَأْسِ الْحُسَيْنِ فَجَعَلَ يَضْرِبُ بِقَضِيبٍ فِي أَنْفِهِ وَيَقُولُ: مَا رَأَيْتُ مِثْلَ هَذَا حسنا. فَقلت: أما إِنَّهُ كَانَ أَشْبَهَهُمْ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ حَسَنٌ غَرِيب

رواہ البخاری (3748) و الترمذی (3778) ۔
(صَحِيح)

وعن انس قال اتى عبيد الله بن زياد براس الحسين فجعل في طست فجعل ينكت وقال في حسنه شيىا قال انس فقلت والله انه كان اشبههم برسول الله صلى الله عليه وسلم وكان مخضوبا بالوسمة رواه البخاري وفي رواية الترمذي قال كنت عند ابن زياد فجيء براس الحسين فجعل يضرب بقضيب في انفه ويقول ما رايت مثل هذا حسنا فقلت اما انه كان اشبههم برسول الله صلى الله عليه وسلم وقال هذا حديث صحيح حسن غريبرواہ البخاری 3748 و الترمذی 3778 ۔صحيح

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে, ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু যিয়াদ-এর কাছে হুসায়ন (রাঃ)-এর মাথা নিয়ে আসা হলো। মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু যিয়াদ উল্লেখ করেছেন যে, সে ইয়াযীদ ইবনু মু'আবিয়া কর্তৃক কুফার আমীর নিযুক্ত থাকাকালীন সময়ে হুসায়ন (রাঃ)-কে হত্যা করার জন্য সৈন্যবাহিনী পাঠিয়েছিল। ৬২ হিজরীতে মুখতার ইবনু আবূ ‘উবায়দ-এর শাসনকালে ইব্রাহীম ইবনু মালিক ইবনু আশতার আন্ নাখ'ঈ-এর হাতে মুসলের ভূমিতে নিহত হয়।
বাযযার-এর বর্ণনায় আছে, আনাস (রাঃ) তাকে বললেন, হুসায়ন-এর মাথার যে অংশে তুমি তোমার লাঠি রেখেছ সেই অংশ থেকে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে ঘ্রাণ নিয়েছেন। তা আমি দেখেছি। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর সে তার লাঠি সরিয়ে ফেলল, ফাতহুল বারীতেও এরূপ উল্লেখ করা হয়েছে। সাথে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, আনাস (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি তোমার লাঠি উঠাও। কারণ তুমি হুসায়ন (রাঃ)- এর যে স্থানে তোমার লাঠি রেখেছ সেই স্থানে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মুখ রাখতে দেখেছি।
বাযযার-এর অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, আনাস (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি হুসায়ন (রাঃ)-এর যে স্থানে তোমার লাঠি রেখেছ সেই স্থান রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে আমি চুম্বন দিতে দেখেছি। তারপর সে তার লাঠি সরিয়ে নিলো। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ৭ম খণ্ড, হা. ৩৭৪৮, ১১০ পৃ.)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পরিবার-পরিজনদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬১৮০-[৪৬] উম্মুল ফাযল বিনতু আল হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আজ রাত্রে আমি মন্দ একটি স্বপ্ন দেখেছি। তিনি (সা.) বললেন, সে স্বপ্নটা কি? উম্মুল ফাযল (রাঃ) বললেন, তা অতি ভয়ানক। তিনি (সা.) আবার বললেন, আরে বল না, সে স্বপ্নটা কি? তখন উম্মুল ফাযল (রাঃ) বললেন, আমি দেখেছি, আপনার দেহ হতে যেন এক টুকরা মাংস কর্তন করা হয়েছে এবং তা আমার কোলে রাখা হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি খুব উত্তম ও চমৎকার স্বপ্ন দেখেছ। ইনশা-আল্ল-হ কন্যা ফাতিমা একটি ছেলে সন্তান প্রসব করবে, যা তোমার কোলেই রাখা হবে। অতএব কিছু দিন পর ফাতিমার গর্ভে হুসায়ন জন্মগ্রহণ করলেন এবং তাঁকে আমার কোলেই রাখা হলো, যেমনটি রাসূলুল্লাহ (সা.) ও বলেছিলেন।
[উম্মুল ফাযল (রাঃ) বলেন,] এরপর একদিন আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে গেলাম এবং বাচ্চাটিকে (শিশু হুসায়নকে) তার কোলে রাখলাম। অতঃপর আমি (অন্যমনস্কে) আরেক দিকে দেখছিলাম। সহসা এদিকে ফিরে তাকাতেই দেখলাম, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর চক্ষুদ্বয় হতে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে। উম্মুল ফাযল (রাঃ) বলেন, তখন আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর নবী! আপনার প্রতি আমার পিতা কুরবান হোক আপনার কি হয়েছে? তিনি (সা.) বললেন, এইমাত্র জিবরীল (আঃ) এসে আমাকে বলে গেলেন যে, অদূর ভবিষ্যতে আমার উম্মতেরা আমার এ পুত্রটিকে হত্যা করবে। নবী (সা.) বলেন, আমি বিস্ময় প্রকাশে জিবরীল-কে জিজ্ঞেস করলাম, আমার এ পুত্রটিকে কি তারা হত্যা করবে? জিবরীল (আঃ) বললেন, হ্যাঁ এবং ঐ স্থানের লাল মাটি এনেও আমাকে দেখিয়েছেন, যেখানে তাঁকে হত্যা করা হবে।

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَابِ مَنَاقِبِ أَهْلِ)

وَعَن أمِّ الْفضل بنت الْحَارِث أَنَّهَا دَخَلْتُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي رَأَيْتُ حُلْمًا مُنْكَرًا اللَّيْلَةَ. قَالَ: «وَمَا هُوَ؟» قَالَتْ: إِنَّهُ شَدِيدٌ قَالَ: «وَمَا هُوَ؟» قَالَتْ: رَأَيْتُ كَأَنَّ قِطْعَةً مِنْ جَسَدِكَ قُطِعَتْ وَوُضِعَتْ فِي حِجْرِي. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «رَأَيْتِ خَيْرًا تَلِدُ فَاطِمَةُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ غُلَامًا يَكُونُ فِي حِجْرِكِ» . فَوَلَدَتْ فَاطِمَةُ الْحُسَيْنَ فَكَانَ فِي حِجْرِي كَمَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَدَخَلْتُ يَوْمًا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَضَعْتُهُ فِي حِجْرِهِ ثُمَّ كَانَتْ مِنِّي الْتِفَاتَةٌ فَإِذَا عَيْنَا رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَهْرِيقَانِ الدُّمُوعَ قَالَتْ: فَقُلْتُ: يَا نبيَّ الله بِأبي أَنْت وَأمي مَالك؟ قَالَ: أَتَانِي جِبْرِيل عَلَيْهِ السَّلَامُ فَأَخْبَرَنِي أَنَّ أُمَّتِي سَتَقْتُلُ ابْنِي هَذَا فَقُلْتُ: هَذَا؟ قَالَ: نَعَمْ وَأَتَانِي بِتُرْبَةٍ من تربته حَمْرَاء

اسنادہ ضعیف ، رواہ البیھقی فی دلائل النبوۃ (6 / 469) [و صححہ الحاکم علی شرط الشیخین (3 / 176 ۔ 177 ، 179) فقال الذھبی :’’ قلت : بل منقطع ضعیف فان شدادًا لم یدرک ام الفضل و محمد بن مصعب : ضعیف ‘‘]

وعن ام الفضل بنت الحارث انها دخلت على رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالت يا رسول الله اني رايت حلما منكرا الليلة قال وما هو قالت انه شديد قال وما هو قالت رايت كان قطعة من جسدك قطعت ووضعت في حجري فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم رايت خيرا تلد فاطمة ان شاء الله غلاما يكون في حجرك فولدت فاطمة الحسين فكان في حجري كما قال رسول الله صلى الله عليه وسلم فدخلت يوما على رسول الله صلى الله عليه وسلم فوضعته في حجره ثم كانت مني التفاتة فاذا عينا رسول الله صلى الله عليه وسلم تهريقان الدموع قالت فقلت يا نبي الله بابي انت وامي مالك قال اتاني جبريل عليه السلام فاخبرني ان امتي ستقتل ابني هذا فقلت هذا قال نعم واتاني بتربة من تربته حمراءاسنادہ ضعیف رواہ البیھقی فی دلاىل النبوۃ 6 469 و صححہ الحاکم علی شرط الشیخین 3 176 ۔ 177 179 فقال الذھبی قلت بل منقطع ضعیف فان شدادا لم یدرک ام الفضل و محمد بن مصعب ضعیف

ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীসের সমর্থনে ‘যাখায়ির’ গ্রন্থে সালামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-এর কাছে প্রবেশ করে দেখলাম যে, তিনি কাঁদছেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে, কিসে আপনাকে কাঁদাচ্ছে? তিনি উত্তরে বললেন, আমি স্বপ্নে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মাথায় ও দাড়িতে মাটি দেখেছি। তারপর আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার কি হয়েছে? তখন তিনি বললেন, এখনই আমি হুসায়ন (রাঃ)-এর নিহত হওয়ার সাক্ষ্য দিচ্ছি। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু ফাযল (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পরিবার-পরিজনদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬১৮১-[৪৭] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ঘুমন্ত লোক যেভাবে কিছু দেখে, সেভাবে আমি নবী (সা.) -কে দ্বিপ্রহরে স্বপ্নে দেখলাম। তখন তিনি (সা.) ছিলেন এলোমেলো ও চেহারায় ধূলি মাখা অবস্থায় তার হাতের মাঝে রক্তে পরিপূর্ণ একটি শিশি। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতামাতা আপনার প্রতি কুরবান হোন। এটা কি? তিনি বললেন, এটা হুসায়ন এবং তার সাথিদের রক্ত, যা আমি আজকের দিন অত্র শিশিতে উঠিয়ে রাখছি। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, স্বপ্নের সে সময়টি আমি স্মরণে রাখি। পরে দেখতে পেলাম, হুসায়ন ঠিক সে সময়েই নিহত হয়েছেন। (উপরিউক্ত হাদীস দুটি বায়হাক্বী’র দালায়িলুন নুবুওয়্যাহ্ গ্রন্থে ও আহমাদ শেষের হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَابِ مَنَاقِبِ أَهْلِ)

وَعَن ابْن عَبَّاس قَالَ: رَأَيْت النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وسل فِيمَا يَرَى النَّائِمُ ذَاتَ يَوْمٍ بِنِصْفِ النَّهَارِ أَشْعَثَ أَغْبَرَ بِيَدِهِ قَارُورَةٌ فِيهَا دَمٌ فَقُلْتُ: بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي مَا هَذَا؟ قَالَ: «هَذَا دَمُ الْحُسَيْنِ وَأَصْحَابِهِ وَلَمْ أَزَلْ أَلْتَقِطُهُ مُنْذُ الْيَوْم» فأحصي ذَلِك الْوَقْت فأجد قبل ذَلِكَ الْوَقْتِ. رَوَاهُمَا الْبَيْهَقِيُّ فِي «دَلَائِلِ النُّبُوَّةِ» وَأحمد الْأَخير

اسنادہ حسن ، رواہ البیھقی فی دلائل النبوۃ (6 / 471) و احمد (1 / 242 ح 2165) ۔
(صَحِيح)

وعن ابن عباس قال رايت النبي صلى الله عليه وسل فيما يرى الناىم ذات يوم بنصف النهار اشعث اغبر بيده قارورة فيها دم فقلت بابي انت وامي ما هذا قال هذا دم الحسين واصحابه ولم ازل التقطه منذ اليوم فاحصي ذلك الوقت فاجد قبل ذلك الوقت رواهما البيهقي في دلاىل النبوة واحمد الاخيراسنادہ حسن رواہ البیھقی فی دلاىل النبوۃ 6 471 و احمد 1 242 ح 2165 ۔صحيح

ব্যাখ্যা: ইমাম আহমাদ এবং ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) এ বিষয়ে ‘আলী (রাঃ) থেকে আরো একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর তা হলো ‘আলী (রাঃ) বলেন, আমি নবী (সা.) -এর কাছে প্রবেশ করে দেখলাম যে, তার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে। তখন আমি তাকে বললাম, হে আল্লাহর নবী! কেউ কি আপনাকে রাগান্বিত করেছে? কি হলো যে, আপনার চোখ দিয়ে পানি ঝরছে? উত্তরে তিনি (সা.) বললেন, তোমার আর আমার মাঝে কথাবার্তা হওয়ার একটু আগেই জিবরীল (আঃ) আমাকে জানিয়ে গেলেন যে, ফুরাত নদীর তীরে হুসায়ন-কে হত্যা করা হবে। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ (সা.) ‘আলী (রাঃ)-কে বললেন, তুমি কি তার মাটির ঘ্রাণ নিতে চাও? আমি বললাম, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি (সা.) তাঁর হাত প্রসারিত করে এক মুষ্টি মাটি নিয়ে আমাকে দিলেন। তখন আমিও আমার চোখ সামলাতে পারলাম না। আমার চোখ দিয়েও অশ্রু বেয়ে পড়ল। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পরিবার-পরিজনদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬১৮২-[৪৮] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো। কেননা তিনি তোমাদের প্রতি খাদ্যসামগ্রীর মাধ্যমে দয়া করে থাকেন। আর আমার আহলে বায়তকে ভালোবাসো আমার ভালোবাসায়। (তিরমিযী)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَابِ مَنَاقِبِ أَهْلِ)

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَحِبُّوا اللَّهَ لِمَا يَغْذُوكُمْ مِنْ نِعَمِهِ فَأَحِبُّونِي لِحُبِّ اللَّهِ وَأَحِبُّوا أَهْلَ بَيْتِي لحبِّي» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

اسنادہ حسن ، رواہ الترمذی (3789 وقال : حسن غریب) ۔
(ضَعِيفٌ)

وعنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم احبوا الله لما يغذوكم من نعمه فاحبوني لحب الله واحبوا اهل بيتي لحبي رواه الترمذياسنادہ حسن رواہ الترمذی 3789 وقال حسن غریب ۔ضعيف

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে তোমরা তোমাদেরকে তাঁর নি'আমাতের মাধ্যমে রিযক দান করেন। এখানে নি'আমাত বলতে সর্বপ্রকার নি'আমাতকে বুঝানো হয়েছে। কারণ সকল প্রকার নি'আমাত আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে। যেমন তিনি বলেন, (وَ مَا بِکُمۡ مِّنۡ نِّعۡمَۃٍ فَمِنَ اللّٰهِ) “তোমাদের প্রতি সর্বপ্রকার নি'আমাত আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে।” (সূরা আন্ নাহল ১৬: ৫৩)।
উল্লেখিত হাদীসে আল্লাহকে এভাবে ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে, তার কারণ হলো আল্লাহ সত্তাগতভাবেই ভালোবাসার পাত্র। সৃষ্টিকুলের প্রতি তার যে অনুগ্রহ ও ভালোবাসা রয়েছে সেজন্যই তিনি সবার চেয়ে বেশি ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য। তাদেরকে তিনি নি'আমাত দান করুন বা না করুন। যেহেতু তারপরেও তিনি অবিরত নি'আমাত দান করছেন। অতএব এই নি'আমাত দান করার জন্য হলেও তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো।
হাদীসের পরের অংশ বলা হয়েছে যে, আল্লাহকে ভালোবাসার জন্যই তোমরা আমাকে ভালোবাসো। এর কারণ হলো যেহেতু তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো আর আল্লাহ আমাকে ভালোবাসেন। অতএব আল্লাহর ভালোবাসার দাবিই হলো যে, তোমরা আমাকে ভালোবাসবে। এছাড়াও আল্লাহ তা'আলা নিজে বলেন, (اِنۡ کُنۡتُمۡ تُحِبُّوۡنَ اللّٰهَ فَاتَّبِعُوۡنِیۡ یُحۡبِبۡکُمُ اللّٰهُ) “তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবসতে চাও তাহলে আমার অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন।” (সূরাহ্ আ-লি ইমরান ৩: ৩১)
হাদীসের শেষাংশে বলা হয়েছে যে, তোমরা আহলে বায়তকে ভালোবাসো। (যেহেতু আমি আহলে বায়তকে ভালোবাসি।) তাই আহলে বায়তের প্রতি আমার ভালোবাসার দাবি হলো যে, তোমরাও আহলে বায়তকে ভালোবাসবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পরিবার-পরিজনদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬১৮৩-[৪৯] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি কাবা ঘরের দরজা ধরে বললেন, আমি নবী (সা.) - কে বলতে শুনেছি, সাবধান! আমার আহলে বায়ত হলো তোমাদের জন্য নূহ (আঃ)-এর নৌকার মতো। যে তাতে আরোহণ করবে, সে পরিত্রাণ পাবে। আর যে তা হতে পশ্চাতে থাকবে, সে ধ্বংস হবে। (আহমাদ)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَابِ مَنَاقِبِ أَهْلِ)

وَعَن أبي ذرٍ أَنَّهُ قَالَ وَهُوَ آخِذٌ بِبَابِ الْكَعْبَةِ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «أَلَا إِنَّ مِثْلَ أَهْلِ بَيْتِي فِيكُمْ مِثْلُ سَفِينَةِ نُوحٍ مَنْ رَكِبَهَا نَجَا وَمَنْ تَخَلَّفَ عَنْهَا هلك» . رَوَاهُ أَحْمد

اسنادہ ضعیف ، رواہ احمد فی فضائل الصحابۃ (2 / 785 ح 1402 ، زیادات القطیعی ، لیس فیہ احمد ولا ابنہ) [و الحاکم (3 / 150 ، 2 / 343)] * فیہ المفضل بن صالح النخاس الاسدی : ضعیف ، وابوہ اسحاق السبیعی مدلس و عنعن و للحدیث شواھد ضعیفۃ ۔
(ضَعِيف)

وعن ابي ذر انه قال وهو اخذ بباب الكعبة سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول الا ان مثل اهل بيتي فيكم مثل سفينة نوح من ركبها نجا ومن تخلف عنها هلك رواه احمداسنادہ ضعیف رواہ احمد فی فضاىل الصحابۃ 2 785 ح 1402 زیادات القطیعی لیس فیہ احمد ولا ابنہ و الحاکم 3 150 2 343 فیہ المفضل بن صالح النخاس الاسدی ضعیف وابوہ اسحاق السبیعی مدلس و عنعن و للحدیث شواھد ضعیفۃ ۔ضعيف

ব্যাখ্যা: ‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, উক্ত হাদীসে (وَهُوَ آخِذٌ بِبَابِ الْكَعْبَةِ) অর্থাৎ তিনি কাবা ঘরের দরজা ধরে বললেন। এ অংশটি যুক্ত করা হয়েছে হাদীসের বিষয়বস্তুকে শক্তিশালী করার জন্য। আর আবূ যার (রাঃ) এ কাজটি করেছেন যেন মানুষেরা তার কথায় গুরুত্ব দেয় এবং তা মনে প্রাণে গ্রহণ করে।
(مَنْ رَكِبَهَا نَجَا وَمَنْ تَخَلَّفَ عَنْهَا هلك) অর্থাৎ যে ব্যক্তি তাতে আরোহণ করবে সে মুক্তি পাবে আর যে তা থেকে পিছনে থেকে যাবে সেই ধ্বংস হবে।
এ কথার মাধ্যমে উপমা দিয়ে বুঝানো হয়েছে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যে ব্যক্তি তাদেরকে ভালোবাসবে এবং তাদের অনুসরণ করবে সেই দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তি পাবে। পক্ষান্তরে যে তা করবে না সেই দুনিয়া ও আখিরাতে ধ্বংস হবে।
ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এক বর্ণনায় আবূ যার বলেন, যে আমাকে চিনার সে তো চিনেছে আর যে চেনার সে চিনে রাখুক যে, আমি আবূ যার। আমি নবী (সা.) -কে বলতে শুনেছি, তোমরা শুনে রাখ নিশ্চয়, তোমাদের মাঝে আমার পরিবারের উদাহরণ হলো নূহ (আঃ)-এর কিশতির ন্যায়। এখানেও আবূ যার (রাঃ) তার এ কথার মাধ্যমে হাদীসের সত্যতা ও বিশ্বস্ততার প্রতি তাগিদ করেছেন।
দুনিয়ার কুফরী দ্রষ্টতা বিদ্আত মূখতা এবং বক্র প্রবৃত্তির অনুসরণের দৃষ্টান্ত হলো এমন উত্তাল সাগরের ন্যায় যার মাঝে বিশাল বিশাল ঢেউ একটি আরেকটির উপর আছড়ে পরছে। তার উপরে রয়েছে, বিশাল কালো অন্ধকার মেঘমালা তা যেন একেবারে পুরা পৃথিবীকে ছেয়ে ফেলেছে। সেই উত্তাল সাগরের মাঝ থেকে বাঁচার কোন পথ নেই, শুধুমাত্র একটি কিশতি ছাড়া আর কিছু নেই, কীশতিটিই হলো রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর পরিবার তথা আহলে বায়তের ভালোবাসা।
ইমাম ফাখরুদ্দীন রাযী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর তাফসীরের মধ্যে কতই না উত্তম কথা বলেছেন যে, আমরা আল্লাহর রহমতে আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের অনুসারী। আমরা আহলে বায়তদের ভালোবাসার কিশতিতে আরোহণ করেছি এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাহাবীদের নির্দেশিত পথে চলছি। তাই আমরা কিয়ামতের বিভীষিকাময় পরিস্থিতি থেকে এবং জাহান্নামের ভয়াবহতা থেকে মুক্তির আশা করছি। সাথে সাথে আমরা এমন সঠিক পথের কামনা করছি যে, পথে চললে জান্নাতের স্থায়ী নি'আমাত অবধারিত।
মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা কিশতির ব্যাখ্যা সম্পর্কে আরো বলেন, সেই কিশতিতে যে সকল দল আরোহণ করেনি তাদের মধ্যে অন্যতম হলো খাওয়ারিজ এবং রাফিযীগণ। তারা প্রথমবারেই ধ্বংস হয়ে গেছে এবং এমন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে যে, সেখান থেকে আর বের হয়ে আসতে পারছে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৬ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে