পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মিরাজের বর্ণনা

৫৮৬২-[১] কতাদাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে, তিনি মালিক ইবনু সস’আহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। আল্লাহর নবী (সা.) -কে যে রাত্রে মি’রাজ করানো হয়েছিল, সে রাতের বর্ণনা প্রসঙ্গে তিনি তাদেরকে বলেছেন, একদিন আমি কা’বার হাত্বীম অংশে কাত হয়ে শুয়েছিলাম।
বর্ণনাকারী (কতাদাহ্) কখনো কখনো (হাত্বীম-এর স্থলে) “হিজর’ শব্দ বলেছেন। এমন সময় হঠাৎ - একজন আগন্তুক আমার কাছে আসলেন এবং তিনি এ স্থান হতে ওই স্থান পর্যন্ত চিরে ফেললেন। অর্থাৎ কণ্ঠনালীর নিম্নভাগ হতে নাভির উপরিভাগ পর্যন্ত বিদীর্ণ করলেন। তারপর ঈমানে পরিপূর্ণ একটি স্বর্ণের থালা আমার কাছে আনা হলো, এরপর আমার অন্তরকে ধৌত করা হয়, তারপর তাকে ঈমানে পরিপূর্ণ করে আবার পূর্বের জায়গায় রাখা হয়।
অপর এক বর্ণনায় আছে- অতঃপর যমযমের পানি দ্বারা পেট ধৌত করা হয়, পরে ঈমান ও হিকমতে তাকে পরিপূর্ণ করা হয়। তারপর আকারে খচ্চরের চেয়ে ছোট এবং গাধা অপেক্ষা বড় এক সাদা বর্ণের বাহন আমার সম্মুখে উপস্থিত করা হয়। তাকে বলা হয় ’বুরাক’। তার দৃষ্টি যত দূর যেত, সেখানে তার পা রাখত। নবী (সা.) বলেন, অতঃপর আমাকে তার উপরে আরোহণ করানো হলো।
এবার জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে সাথে নিয়ে যাত্রা করলেন এবং নিকটতম আসমানে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কে? বললেন, (আমি) জিবরীল। আবার প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সা.)। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন বলা হলো, তার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তার আগমন বড়ই শুভ। তারপর দরজা খুলে দেয়া হলো। যখন আমি ভিতর প্রবেশ করলাম, তখন সেখানে দেখতে পেলাম ইয়াহইয়া ও ’ঈসা আলায়হিস সালাম-কে। তারা দু’জন পরস্পর খালাতো ভাই। জিবরীল আলায়হিস সালাম (আমাকে) বললেন, ইনি হলেন ইয়াহইয়া আলায়হিস সালাম আর উনি হলেন ’ঈসা আলায়হিস সালাম আপনি তাদেরকে সালাম করুন। যখন আমি সালাম করলাম, তাঁরা উভয়ে সালামের জবাব দিয়ে বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সদর সম্ভাষণ।
অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে নিয়ে তৃতীয় আসমানে উঠলেন এবং দরজা খুলে দিতে বললেন। প্রশ্ন করা হলো, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। আবার প্রশ্ন করা হলো, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সা.)। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হলো, তাঁর প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তাঁর আগমন খুবই কল্যাণকর। অতঃপর দরজা খুলে দেয়া হলো। ভিতরে প্রবেশ করে আমি সেখানে ইউসুফ আলায়হিস সালাম-কে দেখতে পেলাম। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, ইনি হলেন ইউসুফ আলায়হিস সালাম তাকে সালাম করুন। আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর সম্ভাষণ।

অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে নিয়ে আরো ঊর্ধ্বলোকে যাত্রা করলেন এবং চতুর্থ আসমানে এসে দরজা খুলে দিতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। আবার প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সা.)। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হলো, তার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তাঁর আগমন বড়ই শুভ! অতঃপর দরজা খুলে দেয়া হলো। আমি ভিতরে প্রবেশ করে দেখলাম, সেখানে ইদরীস আলায়হিস সালাম। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, ইনি ইদরীস আলায়হিস সালাম তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম করলাম, অতঃপর তিনি জবাব দিয়ে বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর সম্ভাষণ।  এরপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বে আরোহণ করলেন এবং পঞ্চম আসমানে এসে দরজা খুলে দিতে বললেন। প্রশ্ন করা হলো, কে? বললেন, (আমি) জিবরীল । পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সা.)। আবার প্রশ্ন করা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ। বলা হলো, তার প্রতি সাদর অভিনন্দন। তাঁর আগমন খুবই কল্যাণকর! তারপর দরজা খুলে দিলে আমি যখন ভিতরে পৌছলাম, সেখানে হারূন আলায়হিস সালাম-কে দেখতে পেলাম। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, ইনি হারূন আলায়হিস সালাম তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম করলে তিনি উত্তর দিলেন। অতঃপর বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর অভিনন্দন।
অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে সাথে নিয়ে আরো ঊর্ধ্বলোকে উঠলেন এবং ষষ্ঠ আকাশে এসে দরজা খুলে দিতে বললেন। প্রশ্ন করা হলো, কে? বললেন, জিবরীল। প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সা.)! পুনরায় প্রশ্ন করা হলো তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হা। বলা হলো, তার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তারা আগমন কতই না উত্তম! তারপর দরজা খুলে দিলে আমি যখন ভিতরে প্রবেশ করলাম, তখন সেখানে মূসা আলায়হিস সালাম-কে দেখতে পেলাম। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, ইনি হলেন, মূসা আলায়হিস সালাম তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম করলে তিনি তার জবাব দিয়ে বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর অভিনন্দন। অতঃপর আমি যখন তাঁকে অতিক্রম করে অগ্রসর হলাম, তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, আমি এজন্য কাঁদছি যে, আমার পরে এমন একজন যুবককে (নবী বানিয়ে) পাঠানো হলো, যার উম্মত আমার উম্মত অপেক্ষা অধিক সংখ্যায় জান্নাতে প্রবেশ করবে।
অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে নিয়ে সপ্তম আকাশে আরোহণ করলেন। অনন্তর জিবরীল আলায়হিস সালাম দরজা খুলতে বললে, প্রশ্ন করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। আবার প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সা.)। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর বলা হলো, তাঁর প্রতি সাদর অভিনন্দন। তাঁর আগমন কতই না উত্তম! অতঃপর আমি যখন ভিতরে প্রবেশ করলাম সেখানে ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে দেখতে পেলাম। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, ইনি হলেন আপনার পিতা ইবরাহীম আলায়হিস সালাম তাঁকে সালাম করুন। তখন আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, নেককার পুত্র ও নেককার নবীর প্রতি সাদর অভিনন্দন।
অতঃপর আমাকে ’সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত উঠানো হলো। আমি দেখতে পেলাম, তার ফল হাজার নামক অঞ্চলের মটকার ন্যায় এবং তার পাতা হাতির কানের মতো। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, এটাই সিদরাতুল মুনতাহা। আমি (তথায়) আরো দেখতে পেলাম চারটি নহর। দু’টি নহর অপ্রকাশ্য, আর দুটি প্রকাশ্য। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরীল! এ নহরের তৎপর্য কি? তিনি বললেন, অপ্রকাশ্য দুটি হলো জান্নাতে প্রবাহিত দু’টি নহর। আর প্রকাশ্য দুটি হলো (মিসরের) নীল এবং (ইরাকের) ফুরাত নদী। অতঃপর আমাকে বায়তুল মা’মূর’ দেখানো হলো। তারপর আমার সামনে হাজির করা হলো এক পাত্র মদ, এক পাত্র দুধ ও এক পাত্র মধু। তার মধ্য হতে আমি দুধ গ্রহণ করলাম (এবং তা পান করলাম)। তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, এটা ফিত্বরাত’-এর (স্বভাব-ধর্মের) নিদর্শন। আপনি এবং আপনার উম্মত সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবেন।
অতঃপর আমার ওপর দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাত ফরয করা হলো। আমি (তা গ্রহণ করে) প্রত্যাবর্তন করলাম। মূসা আলায়হিস সালাম-এর সম্মুখ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি (আমাকে) বললেন, আপনাকে কি করতে আদেশ করা হয়েছে? আমি বললাম, দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ করা হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মত দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাত সম্পাদনে সক্ষম হবে না। আল্লাহর শপথ! আপনার পূর্বে আমি (বানী ইসরাঈলের) লোকেদেরকে পরখ করে দেখেছি এবং বানী ইসরাঈলদের হিদায়াতের জন্য আমি যথাসাধ্য পরিশ্রম করেছি। অতএব আপনি আপনার প্রভুর কাছে ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের পক্ষে (সালাত) আরো হ্রাস করার জন্য আবেদন করুন। তখন আমি ফিরে গেলাম (এবং ঐভাবে প্রার্থনা জানালে) আল্লাহ তা’আলা আমার ওপর হতে দশ (ওয়াক্ত সালাত) কমিয়ে দিলেন। তারপর আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর নিকট ফিরে আসালাম। তিনি এবারও অনুরূপ কথা বললেন। ফলে আমি আমি পুনরায় আল্লাহর কাছে ফিরে গেলাম। তিনি আমার ওপর হতে আরো দশ (ওয়াক্ত সালাত) কমিয়ে দিলেন। আবার আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর নিকট ফিরে আসালাম। তিনি অনুরূপ কথাই বললেন। তাই আমি (আবার) ফিরে গেলাম। তখন আল্লাহ তা’আলা আরো দশ (ওয়াক্ত সালাত) মাফ করে দিলেন। অতঃপর আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর নিকট ফিরে আসলে আবারো তিনি ঐ কথাই বললেন। আমি আবার ফিরে গেলাম। আল্লাহ তা’আলা আমার জন্য দশ (ওয়াক্ত) সালাত কম করে দিলেন এবং আমাকে প্রত্যহ দশ (ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ করা হলো। আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর নিকট ফিরে আসালাম। এবারও তিনি অনুরূপ কথাই বললেন। ফলে আমি পুনরায় ফিরে গেলে আমাকে প্রত্যহ পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ করা হলো। আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে পুনরায় ফিরে আসলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনাকে (সর্বশেষ) কি করতে আদেশ করা হলো? আমি বললাম, আমাকে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ করা হয়েছে।
তিনি বললেন, আপনার উম্মত প্রত্যহ পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাত সমাপনে সক্ষম হবে না। আপনার পূর্বে আমি (বানী ইসরাঈলের) লোকেদেরকে বিশেষভাবে পরখ করে দেখেছি এবং বানী ইসরাঈলের হিদায়াতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা ও কষ্ট স্বীকার করেছি, তাই আপনি আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের জন্য আরো কম করার প্রার্থনা করুন। তিনি (সা.) বললেন, আমি আমার প্রভুর কাছে (স্বীয় কর্তব্য পালনের জন্য) এত অধিকবার প্রার্থনা জানিয়েছি যে, পুনরায় প্রার্থনা জানাতে আমি লজ্জাবোধ করছি, বরং আমি (আল্লাহর এ নির্দেশের উপর) সন্তুষ্ট এবং আমি (আমার ও আমার উম্মতের ব্যাপার) আল্লাহর ওপর অর্পণ করছি। তিনি (সা.) বলেন, আমি যখন মূসা আলায়হিস সালাম-কে অতিক্রম করে সম্মুখে অগ্রসর হলাম, তখন (আল্লাহর পক্ষ হতে) ঘোষণাকারী ঘোষণা দিলেন, আমার অবশ্য পালনীয় আদেশটি আমি চালু করে দিলাম এবং বান্দাদের জন্য সহজ করে দিলাম। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَابٌ فِي الْمِعْرَاجِ)

عَنْ قَتَادَةَ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَنْ مَالك بن صعصعة أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدثهمْ لَيْلَةِ أُسْرِيَ بِهِ: «بَيْنَمَا أَنَا فِي الْحَطِيمِ - وَرُبَّمَا قَالَ فِي الْحِجْرِ - مُضْطَجِعًا إِذْ أَتَانِي آتٍ فَشَقَّ مَا بَيْنَ هَذِهِ إِلَى هَذِهِ» يَعْنِي مِنْ ثُغْرَةِ نَحْرِهِ إِلَى شِعْرَتِهِ «فَاسْتَخْرَجَ قَلْبِي ثُمَّ أُتِيتُ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ مَمْلُوءٍ إِيمَانًا فَغُسِلَ قَلْبِي ثُمَّ حُشِيَ ثُمَّ أُعِيدَ» - وَفِي رِوَايَةٍ: ثُمَّ غُسِلَ الْبَطْنُ بِمَاءِ زَمْزَمَ ثمَّ ملئ إِيماناً وَحِكْمَة - ثُمَّ أُتِيتُ بِدَابَّةٍ دُونَ الْبَغْلِ وَفَوْقَ الْحِمَارِ أَبْيَضَ يُقَالُ لَهُ: الْبُرَاقُ يَضَعُ خَطْوَهُ عِنْدَ أَقْصَى طَرْفِهِ فَحُمِلْتُ عَلَيْهِ فَانْطَلَقَ بِي جِبْرِيلُ حَتَّى أَتَى السَّمَاءَ الدُّنْيَا فَاسْتَفْتَحَ قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ. قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ. قِيلَ وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ. قَالَ: نَعَمْ. قيل: مرْحَبًا بِهِ فَنعم الْمَجِيء جَاءَ ففُتح فَلَمَّا خَلَصْتُ فَإِذَا فِيهَا آدَمُ فَقَالَ: هَذَا أَبُوكَ آدَمُ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَرَدَّ السَّلَام ثمَّ قَالَ: مرْحَبًا بالابن الصَّالح وَالنَّبِيّ الصَّالح ثمَّ صعد بِي حَتَّى السَّماءَ الثانيةَ فَاسْتَفْتَحَ قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ. قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ. قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ. قِيلَ: مَرْحَبًا بِهِ فَنِعْمَ الْمَجِيءُ جَاءَ فَفُتِحَ. فَلَمَّا خَلَصْتُ إِذَا يَحْيَى وَعِيسَى وَهُمَا ابْنَا خَالَةٍ. قَالَ: هَذَا يَحْيَى وَهَذَا عِيسَى فَسَلِّمْ عَلَيْهِمَا فَسَلَّمْتُ فَرَدَّا ثُمَّ قَالَا: مَرْحَبًا بِالْأَخِ الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ. ثُمَّ صَعِدَ بِي إِلَى السَّمَاءِ الثَّالِثَةِ فَاسْتَفْتَحَ قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ. قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ. قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ. قِيلَ: مَرْحَبًا بِهِ فَنِعْمَ الْمَجِيءُ جَاءَ ففُتح فَلَمَّا خَلَصْتُ إِذَا يُوسُفُ قَالَ: هَذَا يُوسُفُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَرَدَّ. ثُمَّ قَالَ: مَرْحَبًا بِالْأَخِ الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ ثُمَّ صَعِدَ بِي حَتَّى أَتَى السَّمَاءَ الرَّابِعَةَ فَاسْتَفْتَحَ قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ. قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ. قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ. قِيلَ: مَرْحَبًا بِهِ فَنِعْمَ الْمَجِيءُ جَاءَ فَفُتِحَ فَلَمَّا خَلَصْتُ فَإِذَا إِدْرِيسُ فَقَالَ: هَذَا إِدْرِيسُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَرَدَّ ثُمَّ قَالَ: مَرْحَبًا بِالْأَخِ الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ ثُمَّ صَعِدَ بِي حَتَّى أَتَى السَّمَاءَ الْخَامِسَةَ فَاسْتَفْتَحَ قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ. قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ. قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ. قِيلَ: مَرْحَبًا بِهِ فَنِعْمَ الْمَجِيءُ جَاءَ فَفتح فَلَمَّا خَلَصْتُ فَإِذَا هَارُونُ قَالَ: هَذَا هَارُونُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَرَدَّ ثُمَّ قَالَ: مَرْحَبًا بِالْأَخِ الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ ثُمَّ صَعِدَ بِي إِلَى السَّمَاءَ السَّادِسَةَ فَاسْتَفْتَحَ قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ. قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ. قِيلَ: وَهل أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: مَرْحَبًا بِهِ فَنِعْمَ الْمَجِيءُ جَاءَ فَلَمَّا خَلَصْتُ فَإِذَا مُوسَى قَالَ: هَذَا مُوسَى فَسَلِّمْ عَلَيْهِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَرَدَّ ثُمَّ قَالَ: مَرْحَبًا بِالْأَخِ الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالح فَلَمَّا جَاوَزت بَكَى قيل: مَا بيكيك؟ قَالَ: أَبْكِي لِأَنَّ غُلَامًا بُعِثَ بَعْدِي يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِهِ أَكْثَرَ مِمَّنْ يَدْخُلُهَا مِنْ أُمَّتِي ثُمَّ صَعِدَ بِي إِلَى السَّمَاءِ السَّابِعَةِ فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ. قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ. قِيلَ: وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ. قِيلَ: مَرْحَبًا بِهِ فَنِعْمَ الْمَجِيءُ جَاءَ فَلَمَّا خَلَصْتُ فَإِذَا إِبْرَاهِيمُ قَالَ: هَذَا أَبُوكَ إِبْرَاهِيمُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَرد السَّلَام ثمَّ قَالَ: مرْحَبًا بالابن الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ ثُمَّ [ص:1637] رُفِعْتُ إِلَى سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى فَإِذَا نَبِقُهَا مِثْلُ قِلَالِ هَجَرَ وَإِذَا وَرَقُهَا مِثْلُ آذَانِ الْفِيَلَةِ قَالَ: هَذَا سِدْرَةُ الْمُنْتَهَى فَإِذَا أَرْبَعَةُ أَنْهَارٍ: نَهْرَانِ بَاطِنَانِ وَنَهْرَانِ ظَاهِرَانِ. قُلْتُ: مَا هَذَانِ يَا جِبْرِيلُ؟ قَالَ: أَمَّا الْبَاطِنَانِ فَنَهْرَانِ فِي الْجَنَّةِ وَأَمَّا الظَّاهِرَانِ فَالنِّيلُ وَالْفُرَاتُ ثُمَّ رُفِعَ لِيَ الْبَيْتُ الْمَعْمُورُ ثُمَّ أُتِيتُ بِإِنَاءٍ مِنْ خَمْرٍ وَإِنَاءٍ مِنْ لَبَنٍ وَإِنَاءٍ مِنْ عَسَلٍ فَأَخَذْتُ اللَّبَنَ فَقَالَ: هِيَ الْفِطْرَةُ أَنْتَ عَلَيْهَا وَأُمَّتُكَ ثُمَّ فُرِضَتْ عَلَيَّ الصَّلَاةُ خَمْسِينَ صَلَاةً كُلَّ يَوْمٍ فَرَجَعْتُ فَمَرَرْتُ عَلَى مُوسَى فَقَالَ: بِمَا أُمِرْتَ؟ قُلْتُ: أُمِرْتُ بِخَمْسِينَ صَلَاةً كُلَّ يَوْمٍ. قَالَ: إِنَّ أمتك لَا تستطع خَمْسِينَ صَلَاةً كُلَّ يَوْمٍ وَإِنِّي وَاللَّهِ قَدْ جَرَّبْتُ النَّاسَ قَبْلَكَ وَعَالَجْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَشَدَّ الْمُعَالَجَةِ فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَسَلْهُ التَّخْفِيفَ لِأُمَّتِكَ فَرَجَعْتُ فَوَضَعَ عَنِّي عَشْرًا فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقَالَ مِثْلَهُ فَرَجَعْتُ فَوَضَعَ عَنِّي عَشْرًا فَرَجَعْتُ إِلى مُوسَى فَقَالَ مثله فَرَجَعت فَوضع عني عَشْرًا فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقَالَ مِثْلَهُ فَرَجَعْتُ فَوَضَعَ عَنَى عَشْرًا فَأُمِرْتُ بِعَشْرِ صَلَوَاتٍ كُلَّ يَوْمٍ فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقَالَ مِثْلَهُ فَرَجَعْتُ فَأُمِرْتُ بِخَمْسِ صَلَوَاتٍ كُلَّ يَوْمٍ فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقَالَ: بِمَا أُمِرْتَ؟ قُلْتُ: أُمِرْتُ بِخَمْسِ صَلَوَاتٍ كُلَّ يَوْمٍ. قَالَ: إِنَّ أُمَّتَكَ لَا تَسْتَطِيعُ خَمْسَ صَلَوَاتٍ كُلَّ يَوْمٍ وَإِنِّي قَدْ جَرَّبْتُ النَّاسَ قَبْلَكَ وَعَالَجْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَشَدَّ الْمُعَالَجَةِ فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَسَلْهُ التَّخْفِيفَ لِأُمَّتِكَ قَالَ: سَأَلْتُ رَبِّي حَتَّى اسْتَحْيَيْتُ وَلَكِنِّي أَرْضَى وَأُسَلِّمُ. قَالَ: فَلَمَّا جَاوَزْتُ نَادَى مُنَادٍ: أَمْضَيْتُ فريضتي وخففت عَن عبَادي . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3207) و مسلم (265 / 164)، (416 و 417) ۔
(صَحِيحٍ)

عن قتادة عن أنس بن مالك عن مالك بن صعصعة أن نبي الله صلى الله عليه وسلم حدثهم ليلة أسري به: «بينما أنا في الحطيم - وربما قال في الحجر - مضطجعا إذ أتاني آت فشق ما بين هذه إلى هذه» يعني من ثغرة نحره إلى شعرته «فاستخرج قلبي ثم أتيت بطست من ذهب مملوء إيمانا فغسل قلبي ثم حشي ثم أعيد» - وفي رواية: ثم غسل البطن بماء زمزم ثم ملئ إيمانا وحكمة - ثم أتيت بدابة دون البغل وفوق الحمار أبيض يقال له: البراق يضع خطوه عند أقصى طرفه فحملت عليه فانطلق بي جبريل حتى أتى السماء الدنيا فاستفتح قيل: من هذا؟ قال: جبريل. قيل: ومن معك؟ قال: محمد. قيل وقد أرسل إليه. قال: نعم. قيل: مرحبا به فنعم المجيء جاء ففتح فلما خلصت فإذا فيها آدم فقال: هذا أبوك آدم فسلم عليه فسلمت عليه فرد السلام ثم قال: مرحبا بالابن الصالح والنبي الصالح ثم صعد بي حتى السماء الثانية فاستفتح قيل: من هذا؟ قال: جبريل. قيل: ومن معك؟ قال: محمد. قيل: وقد أرسل إليه؟ قال: نعم. قيل: مرحبا به فنعم المجيء جاء ففتح. فلما خلصت إذا يحيى وعيسى وهما ابنا خالة. قال: هذا يحيى وهذا عيسى فسلم عليهما فسلمت فردا ثم قالا: مرحبا بالأخ الصالح والنبي الصالح. ثم صعد بي إلى السماء الثالثة فاستفتح قيل: من هذا؟ قال: جبريل. قيل: ومن معك؟ قال: محمد. قيل: وقد أرسل إليه؟ قال: نعم. قيل: مرحبا به فنعم المجيء جاء ففتح فلما خلصت إذا يوسف قال: هذا يوسف فسلم عليه فسلمت عليه فرد. ثم قال: مرحبا بالأخ الصالح والنبي الصالح ثم صعد بي حتى أتى السماء الرابعة فاستفتح قيل: من هذا؟ قال: جبريل. قيل: ومن معك؟ قال: محمد. قيل: وقد أرسل إليه؟ قال: نعم. قيل: مرحبا به فنعم المجيء جاء ففتح فلما خلصت فإذا إدريس فقال: هذا إدريس فسلم عليه فسلمت عليه فرد ثم قال: مرحبا بالأخ الصالح والنبي الصالح ثم صعد بي حتى أتى السماء الخامسة فاستفتح قيل: من هذا؟ قال: جبريل. قيل: ومن معك؟ قال: محمد. قيل: وقد أرسل إليه؟ قال: نعم. قيل: مرحبا به فنعم المجيء جاء ففتح فلما خلصت فإذا هارون قال: هذا هارون فسلم عليه فسلمت عليه فرد ثم قال: مرحبا بالأخ الصالح والنبي الصالح ثم صعد بي إلى السماء السادسة فاستفتح قيل: من هذا؟ قال: جبريل. قيل: ومن معك؟ قال: محمد. قيل: وهل أرسل إليه؟ قال: نعم. قال: مرحبا به فنعم المجيء جاء فلما خلصت فإذا موسى قال: هذا موسى فسلم عليه فسلمت عليه فرد ثم قال: مرحبا بالأخ الصالح والنبي الصالح فلما جاوزت بكى قيل: ما بيكيك؟ قال: أبكي لأن غلاما بعث بعدي يدخل الجنة من أمته أكثر ممن يدخلها من أمتي ثم صعد بي إلى السماء السابعة فاستفتح جبريل قيل: من هذا؟ قال: جبريل. قيل: ومن معك؟ قال: محمد. قيل: وقد بعث إليه؟ قال: نعم. قيل: مرحبا به فنعم المجيء جاء فلما خلصت فإذا إبراهيم قال: هذا أبوك إبراهيم فسلم عليه فسلمت عليه فرد السلام ثم قال: مرحبا بالابن الصالح والنبي الصالح ثم [ص:1637] رفعت إلى سدرة المنتهى فإذا نبقها مثل قلال هجر وإذا ورقها مثل آذان الفيلة قال: هذا سدرة المنتهى فإذا أربعة أنهار: نهران باطنان ونهران ظاهران. قلت: ما هذان يا جبريل؟ قال: أما الباطنان فنهران في الجنة وأما الظاهران فالنيل والفرات ثم رفع لي البيت المعمور ثم أتيت بإناء من خمر وإناء من لبن وإناء من عسل فأخذت اللبن فقال: هي الفطرة أنت عليها وأمتك ثم فرضت علي الصلاة خمسين صلاة كل يوم فرجعت فمررت على موسى فقال: بما أمرت؟ قلت: أمرت بخمسين صلاة كل يوم. قال: إن أمتك لا تستطع خمسين صلاة كل يوم وإني والله قد جربت الناس قبلك وعالجت بني إسرائيل أشد المعالجة فارجع إلى ربك فسله التخفيف لأمتك فرجعت فوضع عني عشرا فرجعت إلى موسى فقال مثله فرجعت فوضع عني عشرا فرجعت إلى موسى فقال مثله فرجعت فوضع عني عشرا فرجعت إلى موسى فقال مثله فرجعت فوضع عنى عشرا فأمرت بعشر صلوات كل يوم فرجعت إلى موسى فقال مثله فرجعت فأمرت بخمس صلوات كل يوم فرجعت إلى موسى فقال: بما أمرت؟ قلت: أمرت بخمس صلوات كل يوم. قال: إن أمتك لا تستطيع خمس صلوات كل يوم وإني قد جربت الناس قبلك وعالجت بني إسرائيل أشد المعالجة فارجع إلى ربك فسله التخفيف لأمتك قال: سألت ربي حتى استحييت ولكني أرضى وأسلم. قال: فلما جاوزت نادى مناد: أمضيت فريضتي وخففت عن عبادي . متفق عليه

ব্যখ্যা: রাসূলুল্লাহ (সা.) মিরাজে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে মক্কায় কোন জায়গায় ছিলেন তা এ হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে (فِي الْحَطِيمِ) শব্দ দিয়ে। আবার অন্য হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে (فِي الْحِجْرِ) শব্দ দিয়ে। এ বিষয়ে মিরকাত প্রণেতা বলেন, বর্ণনার ক্ষেত্রে শব্দের পরিবর্তন ঘটেছে, সম্ভবত এই কারণে যে, রাসূল (সা.) মি'রাজের এ ঘটনাটি একাধিকবার বর্ণনা করেছেন। তিনি কখনো বর্ণনা করার সময় (حَطِيم) (হাত্বীম) শব্দ বলেছেন, আবার কখনো (حِجْرِ) (হিজর) শব্দ বলেছেন।
অথবা এটিও হতে পারে যে, উক্ত হাদীসে রাবী এ বিষয়ে সন্দিহান যে, তিনি রাসূল (সা.) -কে ‘হাত্বীম’ শব্দ বলতে শুনেছে নাকী হিজর শব্দ বলতে শুনেছে। তাই রাবী মি'রাজের এই ঘটনা বর্ণনা করতে কখনো ‘হাত্বীম' শব্দ ব্যবহার করেছেন আবার কখনো ‘হিজর' শব্দ ব্যবহার করেছেন।
প্রকৃত কথা হলো, ‘হাত্বীম' এবং ‘হিজর। একই জিনিসের দুটি ভিন্ন নাম। হাত্বীম বা হিজর বলা হয়, কা'বার পাশে ঐ ফাঁকা স্থানকে যা কা'বার ভিতরের অংশ হিসেবেই বিবেচিত হয়। সেই স্থানের নামকরণের ব্যাপারে কাযী বলেন, উক্ত স্থানকে হিজর এবং হাত্বীম দুটোই বলা যায় ভিন্ন ভিন্ন কারণে।
১) উক্ত স্থানকে হাত্বীম বলা হয়, কেননা ঐ স্থানের দেয়ালকে ভেঙ্গে কা'বার দেয়ালের থেকে নিচু করা হয়েছে। আর (حَطِيم) (হাত্বীম) শব্দের অর্থ হলো ভাঙ্গা। যেহেতু তার মাঝে (حَطِيم) তথা ভাঙ্গার কাজটি ঘটেছে তাই তাকে (حَطِيم) বলা হয়।
২) উক্ত স্থানকে হিজর বলা হয়, কেননা দেয়াল দিয়ে ঐ স্থানকে বেঁধে দেয়া হয়েছে যেন তা কা'বার আশেপাশের অন্য স্থান থেকে আলাদা বিবেচিত হয়। আর (حِجْرِ) (হিজর) শব্দের অর্থ বাধা দেয়া, যেহেতু তার মাঝে (حِجْرِ) তথা বাধা দেয়ার কাজটি ঘটেছে তাই তাকে (حِجْرِ) বলা হয়।
তারপর তাঁর হাত্বীমে থাকার অবস্থা বর্ণনা করেছেন (مُضْطَجِعًا) শব্দ দিয়ে। যার অর্থ হলো শোয়া অবস্থায়। এ অবস্থাটা দু ধরনের হতে পারে। ১) শোয়া অবস্থায় তিনি জাগ্রত ছিলেন অথবা ২) শোয়া অবস্থায় তিনি ঘুমন্ত ছিলেন।
(إِذْ أَتَانِي آتٍ) এখানে (آتٍ) শব্দের অর্থ হলো ‘আগন্তুক। মিকাত প্রণেতা বলেন, এই আগন্তুক দ্বারা উদ্দেশ্য হলো একজন মালাক বা ফেরেশতা (জিবরীল আলায়হিস সালাম)।
(فَشَقَّ مَا بَيْنَ هَذِهِ إِلَى هَذِهِ)  তারপর এ স্থান থেকে এই স্থান পর্যন্ত চিরে দেখালেন। মালিক (রহিমাহুল্লাহ) রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর এ কথাটি সম্পর্কে বলেন, রাসূল (সা.) -এর এ কথাটি বুঝা যায় পরবর্তী এই অংশের মাধ্যম (يَعْنِي مِنْ ثُغْرَةِ نَحْرِهِ إِلَى شِعْرَتِهِ) অর্থাৎ কণ্ঠনালীর নিম্নভাগ থেকে নাভির উপরিভাগ পর্যন্ত যেমনটি নিহায়াহ্ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে।
(فَاسْتَخْرَجَ قَلْبِي) অর্থাৎ তারপর আমার হৃদয়কে বের করে ফেলল। এই সম্পর্কে মিরক্বাত প্রণেতা বলেন, রাসূল (সা.)-এর শৈশবকালে বক্ষ বিদীর্ণ করার যে ঘটনা ঘটেছিল সেটি এখানে উদ্দেশ্য নয়। বরং উদ্দেশ্য হলো তাঁর পরিপূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর যে বক্ষ বিদীর্ণ করার ঘটনা ঘটেছিল সেটি। কারণ এই বক্ষ বিদীর্ণ করার মাধ্যম তাঁর অন্তর থেকে প্রবৃত্তির বিষয়গুলো বের করা হয়েছে যেন তাতে পরিপূর্ণ জ্ঞান প্রবেশ করতে পারে। তিনি আরো বলেন, এটি রাসূল (সা.)-এর বিশেষ মু'জিযাহ্। কারণ, কোন মানুষের পেট ফেঁড়ে হৃদয় বের করে ফেললে তার বেঁচে থাকার কথা নয়। অথচ রাসূল (সা.) -এর ক্ষেত্রে এমনটিই ঘটেছে। তবে কতিপয় বিদ্বানগণ রাসূল (সা.) -এর বক্ষ বিদীর্ণ করার ঘটনাকে রূপক অর্থে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু এই মতকে প্রত্যাখ্যান করে তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) উত্তর দিয়ে বলেছেন, হাদীসে উল্লেখিত বক্ষ বিদীর্ণ করার ঘটনাটি হলো বিশ্বাস করার বিষয়। অতএব এ ব্যাপারে অহেতুক যুক্তি দেখিয়ে ভিন্ন অর্থ গ্রহণ করার কোন অবকাশ নেই।
এ ব্যাপারে মিরক্বাত প্রণেতাও বলেন, আল্লাহর প্রশংসায় আমরা এ বিষয়টিকে বাস্তবিকভাবেই বিশ্বাস করি কোন ধরনের রূপক অর্থের দিকে যাই না।
হাদীসে উল্লেখিত পেয়ালাটি স্বর্ণের ছিল। এখানে কথা হলো স্বর্ণের পাত্র ব্যবহার করাতো হারাম তাহলে কেন স্বর্ণের পাত্র ব্যবহার করা হলো?
মিরক্বাত প্রণেতা দুইভাবে এর উত্তর দিয়েছেন। ১) হয়তো এ ঘটনাটি ছিল স্বর্ণের পাত্র ব্যবহার করা হারাম হওয়ার পূর্বে। অথবা ২) সেই সময়ে স্বর্ণের পাত্র ব্যবহার করাটা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর জন্য বিশেষভাবে বৈধ ছিল।
(مَمْلُوءٍ إِيمَانًا) অর্থাৎ পেয়ালাটি ছিল ঈমানে পরিপূর্ণ। শারহুন নাবাবী গ্রন্থে এ কথাটির ব্যাখ্যা করা হয়েছে এভাবে যে, ঐ পেয়ালাতে রাখা হয়েছিল এমন সব বিষয় যেগুলোর মাধ্যমে ঈমান অর্জিত হয়। অতএব ঈমানে পরিপূর্ণ ছিল এ কথাটি তখন হবে রূপক অর্থে।
কাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এসব বিষয় কখনো কখনো বাস্তবিক রূপলাভ করতে পারে। যেমন তা বাস্তবায়িত হবে ‘আমালকে পরিমাপ করার ক্ষেত্রে এবং মৃত্যুকে দুম্বা হিসেবে যাবাহ করার ক্ষেত্রে। অতএব এ বিষয়টি রূপক না হয়ে প্রকৃত অর্থেও হতে পারে।
(حُشِيَ) শব্দের অর্থ হলো, পূর্ণ করে দেয়া আর এখানে (حُشِيَ) এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, তার প্রতিপালকের ভালোবাসায় তার হৃদয়কে পূর্ণ করে দেয়া।
(ثُمَّ غُسِلَ الْبَطْنُ) অর্থাৎ তারপর তার পেট ধৌত করে দিলেন। এ সম্পর্কে মিরক্বাত প্রণেতা বলেন, এখানে তার পেট ধৌত করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, তার হৃদয়ের স্থান ধৌত করা।
(ثُمَّ أُتِيتُ بِدَابَّةٍ) অর্থাৎ তারপর আমার নিকট একটি চতুষ্পদ জন্তুটি নিয়ে আসা হলো। সেই জন্তুটি ছিল খচ্চরের থেকে ছোট এবং গাধার থেকে বড়। তার রং ছিল সাদা। আর নাম ছিল বুরাক।
এই জন্তুটিকে বুরাক নামকরণের ব্যাপারে মিকাত প্রণেতা দু'টি কারণ উল্লেখ করেছেন।
১) তার রং ছিল উজ্জ্বল। আর উজ্জ্বলের ‘আরবী প্রতিশব্দ হলো (بُرِيْقَ)। তাই এখান থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে (بُرَاقٌ) বুরাক’।
২) তার গতি ছিল বিজলির মতো দ্রুত। আর বিজলির ‘আরবী প্রতিশব্দ হলো (بُرْقٌ)। তাই এখান থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে (بُرَاقٌ) বুরাক’।
আবার এটিও হতে পারে যে, উল্লেখিত, দু'টি গুণই সেই জন্তুটির মাঝে বিদ্যমান ছিল। তাই তাকে বুরাক নামকরণ করা হয়েছে।
বুরাকের পরিচয় সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যাখ্যাকারগণ ভিন্ন ভিন্ন পরিচয় পেশ করেছেন। যেমন শারহুন নাবাবী গ্রন্থে বলা হয়েছে। বুরাক হলো এমন একটি বাহনের নাম যাতে রাসূল (সা.) - ইসরার রাতে আরোহণ করেছিলেন। যুবায়দী, মুখতাসারুল ‘আয়নী গ্রন্থে এবং ‘তাহরীব’-এর লেখক উভয়ে বলেন, বুরাক হলো এমন একটি প্রাণী যাতে নবীগণ আরোহণ করতেন।
(فَحُمِلْتُ عَلَيْهِ) অর্থাৎ তারপর আমাকে তার উপর আরোহণ করানো হলো। এখানে রাসূল (সা.)- বলেননি যে, আমি তাতে আরোহণ করলাম। এ সম্পর্কে মিরক্বাত প্রণেতা বলেন,
(حُمِلْتُ عَلَيْهِ) এই বাক্য দ্বারা ইশারা করা হয়েছে যে, তাতে আরোহণ করাটা সহজ ছিল না। তাই রাসূল (সা.) মালাকের (ফেরেশতার) সহযোগিতায় আরোহণ করেছিলেন।
(فَانْطَلَقَ بِي جِبْرِيلُ حَتَّى أَتَى السَّمَاءَ الدُّنْيَا) অর্থাৎ তারপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে আসমানে নিয়ে গেলেন। বর্ণনার এই ধারা থেকে বুঝা যায় যে, তাকে বুরাকে আরোহণ করিয়েই মি'রাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অথবা তার মি'রাজ হয়েছিল অন্য কোন রাতে। সেই রাতে নয়, যেই রাতে তিনি বুরাকে আরোহণ করে মক্কাহ্ থেকে বায়তুল মাক্বদিসে ভ্রমণ করেছিলেন।
কিন্তু প্রকৃত ঘটনা এরূপ নয়। বরং ঘটনা হলো, তিনি একই রাতে মক্কাহ্ থেকে বায়তুল মাক্বদিসে ভ্রমণ করেন। তারপর বায়তুল মাকদিস থেকে বিশেষ সিঁড়িতে আরোহণ করে মিরাজে গমন করেন। রাসূল (সা.)-কে মক্কাহ্ থেকে মি'রাজে না নিয়ে বায়তুল মাক্বদিস থেকে নিয়ে যাওয়ার পিছনে বেশ কিছু রহস্য আছে। যার কিছু মিরক্বাত প্রণেতা উল্লেখ করেছেন। যেমন, বায়তুল মাকদিসের বরাবর উপরে মালায়িকার (ফেরেশতাদের) আকাশের উঠার জায়গা রয়েছে। তাই রাসূল (সা.) -কে সেখান থেকে উপরে উঠানো হয়েছে। যেন সোজাসুজি তাঁকে আকাশে নিয়ে যাওয়া যায়।
রাসূল (সা.) -কে বায়তুল মাক্বদিস ভ্রমণ করিয়ে মিরাজে নিয়ে যাওয়ার মধ্যে রয়েছে  বিরোধিতাকারীদের জন্য সত্যের প্রকাশ। কেননা বায়তুল মাক্বদিস ভ্রমণকালে কাফেলার সাথে যে ঘটনা ঘটেছিল তা পরবর্তী সময়ে রাসূল (সা.)-এর ইসরা ও মি'রাজের স্বপক্ষে প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।
তাছাড়াও বায়তুল মাকদিস হলো বহু নবী রাসূল (সা.)গণের হিজরতের স্থান। তাই সেখানে ভ্রমণ করার কারণে রাসূল (সা.) -এর অনেক বড় প্রাপ্তি অর্জিত হয়েছে।
আর বর্ণনার এ ধারা সম্পর্কে মিরক্বাত প্রণেতা বলেন, ইবনু হাজার আল আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন যে, বর্ণনার এ ধারাটি এই হাদীসের রাবী কর্তৃক সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।
কেননা প্রকৃত বিষয়টি হলো, রাসূল (সা.) বুরাকে আরোহণ করে মক্কাহ্ থেকে বায়তুল মাকদিসে পর্যন্ত ভ্রমণ করেন। তারপর বিশেষ সিঁড়িতে আরোহণ করে সেখান থেকে মি'রাজে ভ্রমণ করেন। যা এ হাদীস ছাড়া অন্যান্য হাদীস থেকে পাওয়া যায়।
(فَاسْتَفْتَحَ) অর্থাৎ (দরজা) খুলে চাইলেন। এ সম্পর্কে কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ শব্দ থেকে বুঝা যায় যে, বাস্তবেই আসমানের কিছু দরজা আছে এবং সেগুলোকে সংরক্ষণ করার জন্য ফেরেশতা (মালাক) নিয়োজিত রয়েছে।
(وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ) অর্থাৎ তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে?
এ প্রসঙ্গে ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: হাদীসের অন্য বর্ণনায় আছে, (وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ) অর্থাৎ তাকে কি বায়তুল মাক্বদিস ভ্রমণ করানোর জন্য এবং আসমানে আরোহণ করানোর জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে? ইমাম বায়যাভী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (أُرْسِلَ إِلَيْهِ) এর অর্থ হলো তাঁকে কি ঊর্ধ্বাকাশে ভ্রমণ করানোর জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে?
তারপর জিবরীল আলায়হিস সালাম মালায়িকার (ফেরেশতাদের) উত্তর দিলে তারা আকাশের দরজা খুলে দিলেন। তখন আল্লাহর রাসূল (সা.) ও জিবরীল আলায়হিস সালাম-এর সাথে আকাশে আরোহণ করেন এবং তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করার মাধ্যমে তাঁর পূর্বপুরুষদেরকেও সম্মানের দিক দিয়ে ছাড়িয়ে গেলেন। মহাসম্মানজনক দর্শনের মাধ্যমে তার সম্মানিত ভাইদের থেকেও এগিয়ে গেলেন। কতই না তার সৌভাগ্য! কেমন ছিল তার জন্য তখনকার সেই সৌভাগ্যময় সময়! এটি কি কল্পনা করা যায়। যার ওপর আর কোন মর্যাদাই হতে পারে না।
কেউ কেউ বলেন, জিবরীল আলায়হিস সালাম এবং আসমানের দ্বাররক্ষী মালায়িকার মাঝে প্রশ্নোত্তর হয়েছিল। আশ্চর্য হওয়ার কারণে। কেননা এটা স্পষ্ট ব্যাপার যে, কোন মানুষ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া আসমানে আরোহণ করতে পারবে না এবং জিবরীল আলায়হিস সালাম-ও এমন কাউকে নিয়ে আসবেন না যাকে আল্লাহ নিয়ে আসার অনুমতি দেননি। তাহলে কতইনা সৌভাগ্যবান সেই ব্যক্তি যাকে নিয়ে আসার জন্য স্বয়ং আল্লাহ অনুমতি দিয়েছেন। কে সেই মহান ব্যক্তি?
(فَسَلَّمَ عَلَيْهِ) অর্থাৎ আপনি তাকে সালাম দিন। এখানে জিবরীল আলায়হিস সালাম আল্লাহর রাসূল (সা.) -কে বললেন, আপনি তাকে সালাম দিন। তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) এ প্রসঙ্গে বলেন, নবীদেরকে সালাম দেয়ার ব্যাপারে রাসূল (সা.) -কে আদেশ করা হয়েছে। কেননা তিনি (সা.) ছিলেন তাদের পাশ দিয়ে অতিক্রমকারী। এজন্য তিনি (সা.) দণ্ডায়মান ব্যক্তির হুকুমে ছিলেন। আর তারা ছিলেন উপবেশনকারী ব্যক্তিদের হুকুমে। এক্ষেত্রে শারী'আতের নিয়ম হলো দণ্ডায়মান ব্যক্তি উপবেশনকারীকে সালাম দিবে। তাই রাসূল (সা.) -কে আদেশ করা হয়েছিল তাদেরকে সালাম দিতে। যদিও মর্যাদায় রাসূল (সা.) তাদের থেকে অনেক শ্রেষ্ঠ।

(مرْحَبًا بالابن الصَّالح وَالنَّبِيّ الصَّالح) অর্থাৎ সুস্বাগতম সৎ পুত্র ও সৎ নবীকে। এ প্রসঙ্গে মিরক্বাত প্রণেতা উল্লেখ করেছেন, অনেক ব্যাখ্যাকারী বলেন, নবীগণ রাসূল (সা.) -এর জন্য শুধু (صَالِحِ) (সৎ) শব্দটি বিশেষণ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। অন্য কোন শব্দযুক্ত করেননি। এর কারণ হলো ‘আরবীতে (صَالِحِ) এমন একটি গুণবাচক শব্দ যা সর্বপ্রকার ভালো বৈশিষ্ট্য ও সম্মানজনক গুণাগুণকে অন্তর্ভুক্ত করে, তাই এ শব্দটি যুক্ত করে আর অন্য কোন শব্দযোগ না করলেও যথাযথ মর্যাদা প্রকাশ পায়।
আবার কেউ কেউ বলেন, (صَالِحِ)  শব্দটি এমন ব্যক্তিকে বুঝায় যে ব্যক্তি আল্লাহর ও তাঁর বান্দাদের আবশ্যকীয় হকসমূহ যথাযথভাবে আদায় করে।
এজন্যই নবী-রাসূল (সা.)গণ এই দু'আ করলেন যে, (تَوَفَّنِىْ مُسْلِمًا وَأَلْحِقْنِىْ بِالصَّالِحِينَ) অর্থাৎ, আমাকে মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দান করুন এবং সৎলোক তথা সালিহীনদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
মিরক্বাত প্রণেতা আরো উল্লেখ করেন যে, রাসূল (সা.) -এর বিশেষণরূপে (صَالِحِ) শব্দটি ব্যবহার করার আরো একটি কারণ থাকতে পারে। তা হলো (صَالِحِ) শব্দটির একটি প্রতিশব্দ হলো উপযুক্ত (বাংলায়)। অতএব আল্লাহর রাসূলই যেহেতু এই মহান মর্যাদার উপযুক্ত হয়েছেন, তাই নবীগণ তাঁকে (صَالِحِ) বিশেষণ যুক্ত করে সম্বোধন করেছেন।
ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) শারহুল মাশারিক গ্রন্থে বলেন, নবী (সা.) যখন বিভিন্ন আকাশে নবীগণের সাথে সাক্ষাৎ করেন তখন সেই নবীগণের রূহ তাদের স্বীয় আকৃতিতে ছিল। তবে ‘ঈসা আলায়হিস সালাম ব্যতীত। কারণ তিনি স্বশরীরে ছিলেন। কেননা তাঁকে স্বশরীরে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ)-ও এ বিষয়টি পূর্বে আলোচনা করেছেন।
তারপর যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) চতুর্থ আকাশে আরোহণ করেন তখন ইদরীস আলায়হিস সালাম -এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। তখন ইদরীস আলায়হিস সালাম তাকে, লক্ষ্য করে বলেন, (مرْحَبًا بالابن الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ) অর্থাৎ সুস্বাগতম হে, সৎ ভাই, হে সৎ নবী।
কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) এই প্রসঙ্গে বলেন, ইদরীস আলায়হিস সালাম কর্তৃক রাসূল (সা.) -কে ‘ভাই' বলে সম্বোধন করাটা ঐতিহাসিকদের কথার বিপরীত হয়ে যায়। কেননা ঐতিহাসিকগণ ইদরীস আলায়হিস সালাম -কে রাসূল (সা.) -এর পূর্বপুরুষ হিসেবে গণ্য করেছেন তো এ বিষয়টির উত্তর দেয়া হয়ে থাকে এভাবে যে, তিনি রাসূল (সা.) -কে ‘ভাই' বলে সম্বোধন করেছেন আদব ও শিষ্টাচারের কারণে।
তাছাড়াও শারহুন নাবাবী গ্রন্থে বলা হয়েছে, নবীরা একে অপরের ভাই। এই হিসেবে তিনি রাসূল (সা.) - কে ভাই বলে সম্ভোধন করেছেন।

(فَلَمَّا جَاوَزت بَكَى) অর্থাৎ যখন আমি তাঁর (মূসা আলায়হিস সালাম-এর) পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম তখন তিনি কাঁদলেন। এখানে মূসা আলায়হিস সালাম -এর কান্না প্রসঙ্গে মিরক্বাত প্রণেতা বলেন, তখন তিনি আফসোস করে কেঁদেছেন। কারণ, তিনি তাঁর উম্মতকে দীর্ঘকাল দাওয়াত দিয়েছেন। কিন্তু তারা তাঁর দা'ওয়াত যথার্থভাবে গ্রহণ করেনি এবং পরিপূর্ণভাবে তাঁর অনুসরণ করেনি যেমন, মুহাম্মাদ (সা.) -এর উম্মত তাঁর অনুসরণ করেছে মূসা আলায়হিস সালাম -এর তুলনায় অল্পকাল দাওয়াত দেয়া সত্ত্বেও। আর এ কথাটি বুঝা যায় হাদীসের পরবর্তী এই অংশ থেকে-
قيل: مَا بيكيك؟ قَالَ: أَبْكِي لِأَنَّ غُلَامًا بُعِثَ بَعْدِي يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِهِ أَكْثَرَ مِمَّنْ يَدْخُلُهَا مِنْ أُمَّتِي
অর্থাৎ মূসা আলায়হিস সালাম -কে বলা হলো, কিসে আপনাকে কাঁদাচ্ছে? তিনি উত্তরে বললেন, আমি কাঁদছি, কেননা আমার পরে একজন বালককে নবী হিসেবে পাঠানো হয়েছে। অথচ আমার উম্মতের তুলনায় তার উম্মত অধিক পরিমাণে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
মূসা আলায়হিস সালাম -এর কাঁদার আরো একটি কারণ হতে পারে এটি যে, মুহাম্মাদ (সা.) -এর তুলনায় তার প্রতিদান কম হবে। কেননা প্রত্যেক নবী তাঁর অনুসারীদের সমপরিমাণ প্রতিদান পাবে। আর যেহেতু মুহাম্মাদ (সা.) -এর অনুসারী বেশি তাই তাঁর প্রতিদানও বেশি। আর মূসা আলায়হিস সালাম এর অনুসারী তার তুলনায় কম তাই তাঁর প্রতিদানও কম।
(فَسَلِّمْ عَلَيْهِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَرد السَّلَام) অর্থাৎ তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে বললেন, আপনি তাঁকে (ইবরাহীম আলায়হিস সালাম -কে) সালাম দিন। তখন আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তারপর তিনি সালামের উত্তর দিলেন। মিরক্বাত প্রণেতা এ প্রসঙ্গে বলেন, রাসূল (সা.) যেহেতু ইহজগত থেকে বেখবর হয়ে মহান স্রষ্টার সুমহান সান্নিধ্যে বিভোর ছিলেন এবং পরজাগতিক দৃশ্য অবলোকনে ব্যস্ত ছিলেন। তাই তিনি (সা.) নিজের খেয়াল হারিয়ে ফেলেছিলেন। এজন্য জিবরীল আলায়হিস সালাম তাকে বিভিন্ন নবীগণকে সালাম দেয়ার কথা স্মরণ করে দিতেন। যেমনটি পবিত্র কুরআনের এই আয়াত (مَا زَاغَ الۡبَصَرُ وَ مَا طَغٰی) অর্থাৎ “তাঁর দৃষ্টিশক্তি বক্র হয়নি এবং সীমালঙ্ঘনও করেনি”- (সূরা আন্ নাজম ৫৩:১৭)।
 বিভিন্ন নবীকে বিভিন্ন আসমানে রাখা হয়েছিল। তাদের মর্যাদা স্তর অনুযায়ী। যেমন এই সম্পর্কে ইবনু আবূ জামরাহ বলেন, আদম আলায়হিস সালাম -কে প্রথম আকাশে রাখা হয়েছিল। কারণ তিনি হলেন প্রথম নবী ও প্রথম পিতা। দ্বিতীয় আকাশে ‘ঈসা আলায়হিস সালাম -কে রাখা হয়েছিল। কারণ তিনি হলেন আমাদের নবীর সবচেয়ে কাছের যুগের নবী। তৃতীয় আসমানে ইউসুফ আলায়হিস সালাম -কে রাখা হয়েছিল। কারণ মুহাম্মাদ (সা.) -এর উম্মতগণ তাঁর আকৃতিতে জান্নাতে প্রবেশ করবে। চতুর্থ আসমানে ইদরীস আলায়হিস সালাম -কে রাখা হয়েছিল, কারণ তিনি হলেন মর্যাদায় মধ্যম স্তরের। পঞ্চম আসমানে হারূন আলায়হিস সালাম -কে রাখা হয়েছিল। কারণ তিনি হলেন ইদরীস আলায়হিস সালাম এর নিকটবর্তী ভাই।
ষষ্ঠ আসমানে মূসা আলায়হিস সালাম -কে রাখা হয়েছিল। কারণ তিনি হারূন আলায়হিস সালাম থেকে মর্যাদায় উপরে।
সপ্তম আসমানে ইবরাহীম আলায়হিস সালাম -কে রাখা হয়েছিল। কারণ তিনি আমাদের নবী (সা.) -এর পরে সকল নবীগণ থেকে মর্যাদায় ঊর্ধ্বে।
(ثُمَّ رُفِعْتُ إِلَى سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى) অর্থাৎ তারপর আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় উঠানো হলো। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সিদরাতুল মুনতাহা অর্থ হলো শেষ গাছ। আর ঐ স্থানকে সিদরাতুল মুনতাহা নামকরণ করা হয়েছে। কারণ সেখানেই মালায়িকার (ফেরেশতাদের) জ্ঞান ও সীমানা শেষ হয়ে গেছে। আর  সেই স্থানটি আল্লাহর রাসূল (সা.) ব্যতীত আর কেউ অতিক্রম করতে পারেনি।

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস'ঊদ (রাঃ) বর্ণনা করেন, ঐ স্থানকে সিদরাতুল মুনতাহা নামকরণ করা হলো, কারণ আল্লাহর আদেশে যা কিছু উপর থেকে নিচে নামে এবং নিচ থেকে উপরে উঠে সবকিছুরই শেষ স্থান হলো সিদরাতুল মুনতাহা।
সুয়ুত্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ স্থানকে সিদরাতুল মুনতাহা নামকরণ করা হয়েছে। কারণ সেখানেই বান্দাদের আমাল এবং সৃষ্টিকুলের জ্ঞানের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। এটি রয়েছে সপ্তম আকাশে। আর তার মূল কাণ্ড হলো ষষ্ঠ আকাশে।
(نَهْرَانِ بَاطِنَانِ وَنَهْرَانِ ظَاهِرَانِ) অর্থাৎ বাত্বিনি দুটি ঝরনা এবং জাহিরী দু’টি ঝরনা। ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ঝরনা দুটি হলো- ১) কাওসার, ২) নাহরে রহমাত। এ দু'টিকে বাত্বিনি বলা হয়েছে, কারণ উভয়টি জ্ঞানের বাইরের বিষয় এবং চাক্ষুষ দর্শনের আড়ালে।
শারহুন নাবাবী গ্রন্থে মুকাতিল বলেন, বাত্বিনি ঝরনা দুটি হলো- ১) সালসাবিল, ২) কাওসার। আর জাহিরী দু’টি নহর বা নদী হলো ১) নীল, ২) ফুরাত।
ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) নীল এবং ফুরাত নদীকে জাহিরী নদী হিসেবে উল্লেখ করার সম্ভাব্য তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন।
ক) উভয়টির পানি সিদরাতুল মুনতাহা থেকে বের হয়ে এসেছে, কিন্তু তার পদ্ধতি অজানা।
খ) স্বাদ এবং হজম শক্তির ক্ষেত্রে জান্নাতের দু’টি নহরের সাথে এই দু'টি নদীর কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে।
গ) ফুরাত ও নীল নামে জান্নাতেও দু’টি নহর আছে।
(الْبَيْتُ الْمَعْمُورُ) অর্থাৎ বায়তুল মা'মূর। এটি হলো সপ্তম আকাশে একটি ঘর যা কা'বার বরাবর উপরে আছে। আকাশে এটির মর্যাদা অনুরূপ যেরূপ জমিনবাসীদের কাছে কা'বার মর্যাদা।
(فَأَخَذْتُ اللَّبَنَ) তারপর আমি দুধ নিলাম। ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটি জানা থাকতে হবে যে, দুধ হলো পবিত্র ও শুভ্র পানীয়। আর এর দ্বারাই সর্বপ্রথম সন্তান লালন পালন করা হয়। তাই এটিকে পবিত্র জগতে হিদায়াত এবং সঠিক স্বভাব হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে যার মাধ্যমে আত্মিক শক্তি পরিপূর্ণতা লাভ করবে। অন্যদিকে এটি হলো চিরস্থায়ী সৌভাগ্যের জন্য প্রস্তুতি। যার প্রথম ধাপ হলো শারী'আতের অনুসরণ করা আর শেষ ধাপ হলো আল্লাহর কাছে পৌঁছে যাওয়া।
(فَرَجَعْتُ فَمَرَرْتُ عَلَى مُوسَى) অর্থাৎ তারপর আমি ফিরে গিয়ে মূসা আলায়হিস সালাম -এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম। এর মানে হলো, তিনি ইবরাহীম আলায়হিস সালাম -কে অতিক্রম করে মূসা আলায়হিস সালাম -এর কাছে গেলেন।
ইবরাহীম আলায়হিস সালাম -কে অতিক্রম করার বিষয়ে ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর সুনানে তিরমিযীতে উল্লেখ করেন। মুহাম্মাদ (সা.) বলেন, মি'রাজের রাতে আমি ইবরাহীম আলায়হিস সালাম -এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তখন তিনি বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমার পক্ষ থেকে তুমি তোমার উম্মতের কাছে সালাম পৌছে দিও এবং তাদেরকে জানিয়ে দিও যে, জান্নাতের ভূমি হলো উর্বরতার পানি সুমিষ্ট এবং তা খোলা মাঠের মতো পড়ে আছে। অতএব তাতে বৃক্ষ রোপণ করতে হবে আর বৃক্ষ রোপণ করাটা হলো (سُبْحَانَاللهِ وَالْحَمْدُلِلَّه وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَخْبَرُ) বলা।
(قَالَ: إِنَّ أمتك لَا تستطع) অর্থাৎ তোমার উম্মত মূসা আলায়হিস সালাম এখানে বলেছেন, তোমার উম্মত সক্ষম হবে না। তিনি নবীর কথা বলেননি। কেননা নবীগণের সক্ষমতা এবং নিষ্পপতা এটিই বুঝায় যে, আল্লাহর আনুগত্য অনেক কঠিন হলেও তারা তা করতে পারবেন। কিন্তু উম্মাতের দুর্বলতা ও অলসতার কারণে তারা তা পারবে না।
মূসা আলায়হিস সালাম -এর কাছ থেকে আল্লাহর কাছে বারবার যাওয়ার মাধ্যমে মুহাম্মাদ (সা.) আমাদের জন্য সালাত পঞ্চাশ ওয়াক্ত থেকে কমিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত করে নিয়ে এসেছিলেন। এটি ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য বিশেষ দয়া ও অনুগ্রহ।
পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত থেকে কমিয়ে দেয়ার ব্যপারে আল্লাহর কাছে মুহাম্মাদ (সা.) -এর দাবী করাটা বাহ্যিকভাবে মনে হয় যে, রাসূল (সা.) আল্লাহর ফায়সালার প্রতি সন্তুষ্ট হননি। (فعوذبالله)
কিন্তু প্রকৃত বিষয় এমন নয়। কারণ আসল কথা হলো, আল্লাহর কাছে কোন কঠিন জিনিসকে সহজ করে চাওয়া, বিপদ দূর করার প্রার্থনা করা, রিযক চাওয়া, শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্যের জন্য দু'আ করা ইত্যাদি বিষয় আল্লাহর ফায়সালার প্রতি সন্তুষ্ট হওয়ার পরিপন্থী নয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ কাতাদাহ (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মিরাজের বর্ণনা

৫৮৬৩-[২] সাবিত আল বুনানী (রহিমাহুল্লাহ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমার সামনে বুরাক’ উপস্থিত করা হলো। তা শ্বেত বর্ণের লম্বা কায়াবিশিষ্ট একটি জানোয়ার, গাধার চেয়ে বড় এবং খচ্চর অপেক্ষা ছোট। তার দৃষ্টি যত দূর যেত সেখানে পা রাখত। আমি তাতে আরোহণ করে বায়তুল মাক্বদিসে এসে পৌছলাম এবং অন্যান্য নবীগণ যে স্থানে নিজেদের বাহন বাঁধতেন, আমিও আমার বাহনকে সেখানে বাঁধলাম। নবী (সা.) বলেন, অতঃপর বায়তুল মাকদিসের মাসজিদে প্রবেশ করে সেখানে দু’রাকআত সালাত আদায় করলাম। তারপর মাসজিদ হতে বের হলাম, তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম আমার কাছে এক পাত্র মদ ও এক পাত্র দুধ নিয়ে আসলেন। আমি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, আপনি (ইসালামরূপী) ফিত্বরাত (স্বভাব-ধর্ম ইসালাম গ্রহণ করেছেন।
অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে আকাশের দিকে নিয়ে চললেন, এর পরবর্তী অংশ সাবিত আল বুনানী (রহিমাহুল্লাহ) আনাস (রাঃ) হতে পূর্ববর্ণিত হাদীসটির মর্মানুরূপ বর্ণনা করেছেন।
নবী (সা.) বলেন, হঠাৎ আমি আদম আলায়হিস সালাম -কে দেখতে পেলাম। তিনি আমাকে সাদর সম্ভাষণ জানালেন এবং আমার জন্য ভালো দু’আ করলেন। নবী (সা.) এটাও বলেছেন যে, তিনি তৃতীয় আকাশের ইউসুফ আলায়হিস সালাম -এর সাক্ষাৎ লাভ করেছেন। তিনি এমন লোক যে, তাঁকে (গোটা পৃথিবীর) অর্ধেক সৌন্দর্য দান করা হয়েছে। তিনিও আমাকে সাদর অভিনন্দন জানিয়ে আমার জন্য ভালো দুআ করলেন। সাবিত (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এবং মূসা আলায়হিস সালাম এর কান্নার বিষয়টি এতে উল্লেখ নেই।
নবী (সা.) আরো বলেছেন, সপ্তম আকাশে আমি ইবরাহীম আলায়হিস সালাম -কে দেখতে পেলাম যে, তিনি বায়তুল মা’মূরের সাথে পিঠ লাগিয়ে বসে আছেন। সে ঘরে দৈনিক সত্তর হাজার মালাক (ফেরেশতা) প্রবেশ করেন। যারা একবার বের হয়েছেন, পুনরায় তারা আর প্রবেশ করার সুযোগ পাবেন না। অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে গেলেন। তার পাতাগুলো হাতির কানের মতো এবং তার ফল মটকার মতো। এরপর উক্ত গাছটি আল্লাহ তা’আলার নির্দেশে এমন একটি আবৃতকারী বস্তুতে পরিবর্তিত হয় যে, আল্লাহর সৃষ্ট কোন মাখলুক যার সৌন্দর্যের কোন প্রকার বর্ণনা দিতে সক্ষম হবে না।
এরপর আল্লাহ তা’আলা আমার কাছে ওয়াহী পাঠালেন, যা তিনি পাঠিয়েছেন এবং আমার ওপরে দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাত ফরয করলেন। ফেরার সময় আমি মুসা আলায়হিস সালাম -এর কাছে আসলে তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন আপনার প্রভু আপনার উম্মতের ওপর কি ফরয করেছেন? আমি বললাম, দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। তিনি আমাকে (পরামর্শস্বরূপ) বললেন, আপনি আপনার প্রভুর কাছে ফিরে যান এবং (সালাতের সংখ্যা) কম করার জন্য তার কাছে আবেদন করুন। কেননা আপনার উম্মত এটা দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত সম্পাদন করতে সক্ষম হবে না। আমি বানী ইসরাঈলকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি।
তিনি (সা.) বলেন, তখন আমি আমার প্রভুর কাছে ফিরে গিয়ে বললাম, হে আমার প্রভু! আমার উম্মাতের ওপর হতে কম করে দিন। তখন আমার ওপর হতে পাঁচ (ওয়াক্ত সালাত) কমিয়ে দিলেন। অতঃপর আমি মূসা আলায়হিস সালাম -এর কাছে ফিরে এসে বললাম, আল্লাহ তা’আলা আমার ওপর হতে পাঁচ (ওয়াক্ত সালাত) কমিয়ে দিয়েছেন। মূসা আলায়হিস সালাম বললেন, আপনার উম্মত তা সম্পাদনেও সমর্থ হবে না। কাজেই আপনি পুনরায় আপনার প্রভুর কাছে যান এবং আরো কম করার জন্য আবেদন করুন।
নবী (সা.) বলেন, আমি এভাবে আমার প্রভু ও মূসা আলায়হিস সালাম -এর মাঝে আসা-যাওয়া করতে থাকলাম এবং বার বার সালাতের সংখ্যা কমিয়ে আনতে থাকলাম। তিনি (সা.) বলেন, সর্বশেষে আমার প্রভু বললেন, হে মুহাম্মাদ! দৈনিক ফরয় তো এই পাঁচ সালাত এবং প্রত্যেক সালাতের সাওয়াব দশ সালাতের সমান। ফলে এটা (পাঁচ ওয়াক্ত) পঞ্চাশ সালাতের সমান। যে লোক কোন একটি ভালো কাজ করার সংকল্প করবে, কিন্তু তা সম্পাদন করেনি, তার
জন্য একটি পুণ্য লেখা হবে এবং সে কাজটি সম্পাদন করলে তার জন্য দশটি পুণ্য লেখা হবে। আর যে লোক কোন একটি খারাপ কাজ করার সংকল্প করে তা বাস্তবায়ন না করে, তার জন্য কিছুই লেখা হবে না। অবশ্য যদি সে উক্ত কাজটি বাস্তবায়ন করে, তবে তার জন্য একটি গুনাহই লেখা হবে।
তিনি (সা.) বলেন, অতঃপর আমি অবতরণ করে যখন মূসা আলায়হিস সালাম -এর নিকট পৌছলাম, তখন তাঁকে পূর্ণ বিবরণ জানালাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, আবারও আপনার প্রভুর কাছে যান এবং আরো কিছু কমিয়ে দেয়ার জন্য। অনুরোধ করুন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি বললাম, আমি আমার প্রভুর কাছে বার বার গিয়েছি। এখন পুনরায় যেতে আমার লজ্জাবোধ হচ্ছে। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابٌ فِي الْمِعْرَاجِ)

وَعَن ثابتٍ البُنانيِّ عَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أُتيتُ بالبُراق وَهُوَ دابَّة أَبْيَضُ طَوِيلٌ فَوْقَ الْحِمَارِ وَدُونَ الْبَغْلِ يَقَعُ حَافِرُهُ عِنْدَ مُنْتَهَى طَرْفِهِ فَرَكِبْتُهُ حَتَّى أَتَيْتُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ فَرَبَطْتُهُ بِالْحَلْقَةِ الَّتِي تَرْبُطُ بِهَا الْأَنْبِيَاءُ» . قَالَ: ثُمَّ دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ فَصَلَّيْتُ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ ثمَّ خرجتُ فَجَاءَنِي جِبْرِيلُ بِإِنَاءٍ مِنْ خَمْرٍ وَإِنَاءٍ مِنْ لبن فاختَرتُ اللَّبن فَقَالَ جِبْرِيل: اخْتَرْتَ الْفِطْرَةَ ثُمَّ عَرَجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ . وَسَاقَ مِثْلَ مَعْنَاهُ قَالَ: «فَإِذَا أَنَا بِآدَمَ فرحَّبَ بِي وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ» . وَقَالَ فِي السَّمَاءِ الثَّالِثَةِ: «فَإِذا أَنا بِيُوسُف إِذا أُعْطِيَ شَطْرَ الْحُسْنِ فَرَحَّبَ بِي وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ» . وَلَمْ يَذْكُرْ بُكَاءَ مُوسَى وَقَالَ فِي السَّمَاءِ السَّابِعَةِ: فَإِذَا أَنَا بِإِبْرَاهِيمَ مُسْنِدًا ظَهْرَهُ إِلَى الْبَيْتِ الْمَعْمُورِ وَإِذَا هُوَ يَدْخُلُهُ كُلَّ يَوْمٍ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ لَا يَعُودُونَ إِلَيْهِ ثمَّ ذهب بِي إِلَى سِدْرَة الْمُنْتَهى فَإِذا وَرقهَا كآذان الفيلة وَإِذا ثمارها كَالْقِلَالِ فَلَمَّا غَشِيَهَا مِنْ أَمْرِ اللَّهِ مَا غَشَّى تَغَيَّرَتْ فَمَا أَحَدٌ مِنْ خَلْقِ اللَّهِ يَسْتَطِيعُ أَنْ يَنْعَتَهَا مِنْ حُسْنِهَا وَأَوْحَى إِلَيَّ مَا أوحى فَفرض عَليّ خمسين صَلَاة كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ فَنَزَلْتُ إِلَى مُوسَى فَقَالَ: مَا فَرَضَ رَبُّكَ عَلَى أُمَّتِكَ؟ قُلْتُ: خَمْسِينَ صَلَاة كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ. قَالَ: ارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَسَلْهُ التَّخْفِيفَ فَإِنَّ أُمَّتَكَ لَا تُطِيقُ ذَلِكَ فَإِنِّي بَلَوْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَخَبَرْتُهُمْ. قَالَ: فَرَجَعْتُ إِلَى رَبِّي فَقُلْتُ: يَا رَبِّ خَفِّفْ عَلَى أُمَّتِي فَحَطَّ عَنِّي خَمْسًا فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقُلْتُ: حَطَّ عَنِّي خَمْسًا. قَالَ: إِنَّ أُمَّتَكَ لَا تُطِيقُ ذَلِكَ فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَسَلْهُ التَّخْفِيفَ . قَالَ: فَلَمْ أَزَلْ أَرْجِعُ بَيْنَ رَبِّي وَبَيْنَ مُوسَى حَتَّى قَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنَّهُنَّ خَمْسُ صَلَوَاتٍ كُلَّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ لِكُلِّ صَلَاةٍ عَشْرٌ فَذَلِكَ خَمْسُونَ صَلَاةً مَنْ هَمَّ بِحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كُتِبَتْ لَهُ حَسَنَةً فَإِنْ عَمِلَهَا كُتِبَتْ لَهُ عَشْرًا وَمَنْ هَمَّ بِسَيِّئَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا لَمْ تُكْتَبْ لَهُ شَيْئًا فَإِنَّ عَمِلَهَا كُتِبَتْ لَهُ سَيِّئَةً وَاحِدَةً . قَالَ: فَنَزَلْتُ حَتَّى انتهيتُ إِلى مُوسَى فَأَخْبَرته فَقَالَ: ارجعْ إِلى رَبِّكَ فَسَلْهُ التَّخْفِيفَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فَقُلْتُ: قَدْ رَجَعْتُ إِلَى رَبِّي حَتَّى استحييت مِنْهُ . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (259 / 162)، (411) ۔
(صَحِيح)

وعن ثابت البناني عن أنس أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «أتيت بالبراق وهو دابة أبيض طويل فوق الحمار ودون البغل يقع حافره عند منتهى طرفه فركبته حتى أتيت بيت المقدس فربطته بالحلقة التي تربط بها الأنبياء» . قال: ثم دخلت المسجد فصليت فيه ركعتين ثم خرجت فجاءني جبريل بإناء من خمر وإناء من لبن فاخترت اللبن فقال جبريل: اخترت الفطرة ثم عرج بنا إلى السماء . وساق مثل معناه قال: «فإذا أنا بآدم فرحب بي ودعا لي بخير» . وقال في السماء الثالثة: «فإذا أنا بيوسف إذا أعطي شطر الحسن فرحب بي ودعا لي بخير» . ولم يذكر بكاء موسى وقال في السماء السابعة: فإذا أنا بإبراهيم مسندا ظهره إلى البيت المعمور وإذا هو يدخله كل يوم سبعون ألف ملك لا يعودون إليه ثم ذهب بي إلى سدرة المنتهى فإذا ورقها كآذان الفيلة وإذا ثمارها كالقلال فلما غشيها من أمر الله ما غشى تغيرت فما أحد من خلق الله يستطيع أن ينعتها من حسنها وأوحى إلي ما أوحى ففرض علي خمسين صلاة كل يوم وليلة فنزلت إلى موسى فقال: ما فرض ربك على أمتك؟ قلت: خمسين صلاة كل يوم وليلة. قال: ارجع إلى ربك فسله التخفيف فإن أمتك لا تطيق ذلك فإني بلوت بني إسرائيل وخبرتهم. قال: فرجعت إلى ربي فقلت: يا رب خفف على أمتي فحط عني خمسا فرجعت إلى موسى فقلت: حط عني خمسا. قال: إن أمتك لا تطيق ذلك فارجع إلى ربك فسله التخفيف . قال: فلم أزل أرجع بين ربي وبين موسى حتى قال: يا محمد إنهن خمس صلوات كل يوم وليلة لكل صلاة عشر فذلك خمسون صلاة من هم بحسنة فلم يعملها كتبت له حسنة فإن عملها كتبت له عشرا ومن هم بسيئة فلم يعملها لم تكتب له شيئا فإن عملها كتبت له سيئة واحدة . قال: فنزلت حتى انتهيت إلى موسى فأخبرته فقال: ارجع إلى ربك فسله التخفيف فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: فقلت: قد رجعت إلى ربي حتى استحييت منه . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) -এর ইসরা ও মি'রাজ সম্পর্কে লোকেরা মতভেদ করেছে। কেউ বলেন, তার ইসরা ও মি'রাজ হয়েছিল স্বপ্নযোগে। আবার কেউ বলেন, তা হয়েছিল স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায়। এক্ষেত্রে সঠিক কথা হলো রাসূল (সা.) -এর মি'রাজ স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় হয়েছে। আর এটিকেই গ্রহণ করেছেন অধিকাংশ লোক, বেশিরভাগ সালাফগণ এবং পরবর্তী অনেক ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিসগণ। তাছাড়াও বিভিন্ন চিহ্ন ও নিদর্শনও প্রমাণ করে যে, তার মি'রাজ স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় হয়েছে। অতএব কোন দলীল ছাড়া এই বিষয়টি থেকে ফিরে অন্যদিকে যাওয়া যাবে না। যদিও শারীক-এর একটি বর্ণনায় এ ব্যপারে ভিন্ন মত এসেছে। কিন্তু সেটি খুবই দুর্বল। 'আলিমগণ তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর ইমাম মুসলিম (রহিমাহুল্লাহ) এ বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, শারীক বর্ণনা করার ক্ষেত্রে আগে পরে করা সহ অনেক কম-বেশিও করেছেন। অতএব, তার বর্ণনাটি গ্রহণযোগ্য নয়।
(فَرَبَطْتُهُ بِالْحَلْقَةِ الَّتِي تَرْبُطُ بِهَا الْأَنْبِيَاءُ) অর্থাৎ তারপর আমি সেই গোল বৃত্তের সাথে বাহনটি বেঁধে রাখলাম, যার সাথে নবীগণ বেঁধে রাখতেন। এ বিষয়ে শারহুন নাবাবী গ্রন্থকার বলেন, হাদীসের এই অংশ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সতর্কতামূলক কোন উপকরণ গ্রহণ করা আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয়। যদি আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা থাকে।
(اخْتَرْتَ الْفِطْرَةَ) অর্থাৎ আপনি প্রকৃত ফিত্বরাত গ্রহণ করেছেন। এখানে ফিত্বরাত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ইসালাম ও অবিচলতা।
(فَقِيلَ لَهُ مَنْ أَنْتَ قَالَ جِبْرِيلُ قِيلَ وَمَنْ مَعَكَ قَالَ مُحَمَّدٌ) অর্থাৎ তারপর বলা হলো, কে তুমি? উত্তরে তিনি বললেন, জিবরীল। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, কে তোমার সাথে? তিনি উত্তরে বললেন, মুহাম্মাদ। হাদীসের এ অংশে মানবকুলকে আদব শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে যে, কেউ যদি দরজা ধাক্কা দিয়ে অনুমতি চায় আর তাকে জিজ্ঞেস করা হয় ‘কে’? তাহলে অবশ্যই যেন সে তার নাম বলে। শুধু যেন ‘আমি’ না বলে। কেননা এতে তেমন কোন পরিচয় জানা যায় না। তাছাড়া হাদীসেও শুধু ‘আমি’ বলতে নিষেধ করা হয়েছে। (শারহুন্ নাবাবী হা, ২/১৬২)।
(إِذا أُعْطِيَ شَطْرَ الْحُسْنِ) অর্থাৎ তাকে অর্ধেক সৌন্দর্য দেয়া হয়েছে। মুযহির (রহিমাহুল্লাহ) এর ব্যাখ্যায় বলেন, ইউসুফ আলায়হিস সালাম-কে অর্ধেক সৌন্দর্য দেয়া হয়েছে। এ কথার তিনটি ব্যাখ্যা হতে পারে।
১) তাঁকে সর্বপ্রকার সৌন্দর্যের অর্ধেক দেয়া হয়েছিল। ২) তাঁকে তাঁর যুগের সকল লোকেদের অর্ধেক সৌন্দর্য দেয়া হয়েছিল। ৩) তাঁকে কিছু সৌন্দর্য দেয়া হয়েছিল। তখন (شَطْرَ) শব্দটি (بعض) (কিছু) অর্থে ব্যবহৃত হবে।
গ্রহণযোগ্য অনেক ‘আলিমগণ বলেন, আমাদের রাসূল (সা.) মুহাম্মাদ (সা.) ইউসুফ আলায়হিস সালাম-এর থেকে বেশি সুন্দর ছিলেন।
এ ব্যাপারে অনেক মুহাক্কিক ‘আলিম বলেন, আমাদের রাসূল (সা.) -এর বাহ্যিক অনেক সৌন্দর্যকে সাহাবীদের থেকে গোপন রাখা হয়েছে। কিন্তু ইউসুফ আলায়হিস সালাম-এর বাহ্যিক কোন সৌন্দর্য গোপন রাখা হয়নি।
(مَا أَحَدٌ مِنْ خَلْقِ اللَّهِ يَسْتَطِيعُ أَنْ يَنْعَتَهَا مِنْ حُسْنِهَا) অর্থাৎ সৃষ্টিকুলের এমন কেউ নেই যে, তার সৌন্দর্য বর্ণনা করতে পারে। কারণ তার মহত্ব ও সৌন্দর্যের পরিপূর্ণতা এতই যে, সৃষ্টিকুলের কেউ তা বলে বুঝাতে পারবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মিরাজের বর্ণনা

৫৮৬৪-[৩] ইবনু শিহাব (রহিমাহুল্লাহ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আবূ যার (রাঃ) বর্ণনা করতেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমি মক্কায় থাকাকালীন এক রাত্রে আমার ঘরের ছাদ বিদীর্ণ করা হলো এবং জিবরীল আলায়হিস সালাম অবতরণ করলেন, এরপর আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। তারপর তাকে যমযমের পানি দিয়ে ধৌত করলেন। অতঃপর জ্ঞান ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি স্বর্ণ-পাত্র এনে তা বুকের মধ্যে ঢেলে বেদিলেন। তারপর তাকে বন্ধ করে দিলেন।
অতঃপর তিনি (জিবরীল আলায়হিস সালাম) আমার হাত ধরে আমাকে আকাশের দিকে নিয়ে গেলেন। যখন আমি নিকটবর্তী আকাশে উপনীত হলাম, তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম আসমানের দ্বার রক্ষীকে বললেন, দরজা খোল। সে বলল, (আপনি) কে? তিনি বললেন, জিবরীল। সে বলল, আপনার সাথে আর কেউ আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমার সাথে মুহাম্মাদ (সা.)। সে বলল, তাঁকে কি ডাকা হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর যখন সে দরজা খুলল, তখন আমরা নিকটবর্তী আকাশে আরোহণ করে দেখলাম, সেখানে এক লোক বসে আছেন, তার ডানপার্শ্বে বহু মানবাকৃতি এবং তার বামপার্শ্বেও অনেক মানবাকৃতি। তিনি ডানদিকে তাকালে হাসেন এবং যখন বামদিকে তাকান, তখন কাঁদেন। তিনি বললেন, খোশ আমদেদ, হে সৎ নবী (সা.)! হে পুণ্যবান সন্তান। আমি জিবরীল আলায়হিস সালাম-কে প্রশ্ন করলাম, ইনি কে? বললেন, ইনি আদম আলায়হিস সালাম ডানে ও বামে এগুলো তাঁর সন্তানের আত্মাসমূহ। ডানদিকে এগুলো জান্নাতী এবং বামদিকের এগুলো জাহান্নামী। এজন্য তিনি যখন ডানদিকে তাকান, তখন হাসেন এবং যখন বামদিকে তাকান, তখন কাঁদেন।
অতঃপর তিনি আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় আকাশের দিকে উঠলেন এবং দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খোল। তখন সে প্রথম দ্বাররক্ষীর মতো প্রশ্ন করল (তারপর দরজা খুলল)।  আনাস (রাঃ) বলেন, বর্ণনাকারী আবূ যার (রাঃ) বলেছেন, নবী (সা.) আকাসসমূহে আদম, ইদরীস, মূসা, ঈসা এবং ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে পেয়েছেন; কিন্তু তিনি (আবূ যার) তাদের অবস্থানের কথা নির্দিষ্টভাবে বলেননি। শুধু এটুকু বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সা.) আদম আলায়হিস সালাম-কে নিকটবর্তী আকাশে এবং ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে ষষ্ঠ আকাশে পেয়েছেন।
ইবনু শিহাব (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইবনু হাযম প্রথম আমাকে বলেছেন যে, ইবনু আব্বাস ও আবূ হাব্বাহ আল আনসারী একান্ত তারা উভয়ে বলতেন, নবী (সা.) বলেছেন: অতঃপর আমাকে ঊর্ধ্বলোকে নিয়ে যাওয়া হলো এবং আমি এক সমতল স্থানে পৌছলাম। সেখানে আমি কলমের লেখার শব্দ শুনতে পেলাম। ইবনু হাযম ও আনাস বা বলেন, নবী (সা.) বলেছেন: তখন মহান আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের ওপর পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাত ফরয করলেন। আমি তা নিয়ে প্রত্যাবর্তন করলাম। যখন মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে পৌছলাম, তখন তিনি প্রশ্ন করলেন, আপনার উম্মতের ওপর আল্লাহ তা’আলা কি ফরয করেছেন? আমি বললাম, পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাত ফরয করেছেন। তিনি বললেন, আপনার প্রভুর কাছে ফিরে যান। কেননা আপনার উম্মত সক্ষম হবে না। অতঃপর মূসা আলায়হিস সালাম আমাকে ফেরত পাঠালেন। ফলে আল্লাহ তা’আলা কিছু অংশ কম করে দিলেন। অতঃপর আমি আবার মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে ফিরে এসে বললাম, কিছু সালাত কম করে দিয়েছেন। তিনি পুনরায় বললেন, আবারও যান। কেননা আপনার উম্মত এটাও আদায় করতে সক্ষম হবে না। অতএব আমি আবারও আমার রবের কাছে ফিরে গেলাম। আল্লাহ তা’আলা আবার কিছু মাফ করে দিলেন। আমি আবার মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে ফিরে আসলে তিনি বললেন, আবার যান। আরো কিছু সালাত কম করিয়ে আনেন। কেননা আপনার উম্মত এটাও আদায় করতে সক্ষম হবে না। অতএব আমি আবার আমার প্রভুর কাছে গেলাম। এবার আল্লাহ তা’আলা বললেন, এই পাঁচ সালাতই ফরয, আর তা (সাওয়াবের দিক দিয়ে) পঞ্চাশ সালাতের সমান। আমার কথার পরিবর্তন হয় না। অতঃপর আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি বললেন, আবারও আপনি আপনার রবের কাছে যান।
এবার আমি বললাম, পুনরায় আমার প্রভুর কাছে যেতে আমি লজ্জাবোধ করছি। অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে নিয়ে রওয়ানা হলেন এবং ’সিদরাতুল মুনতাহা’য় পৌছলেন। উক্ত গাছটিকে বিভিন্ন বর্ণ ঢেকে ফেলল। প্রকৃতপক্ষে সেটা কি, তা আমি জানি না। অতঃপর আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হলো। দেখতে পেলাম তাতে মুক্তার গম্বুজসমূহ এবং তার মাটি মিশকের। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَابٌ فِي الْمِعْرَاجِ)

وَعَن ابْن شهَاب عَن أنسٍ قَالَ: كَانَ أَبُو ذَرٍّ يُحَدِّثُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: فُرِجَ عني سقفُ بَيْتِي وَأَنا بِمَكَّة فَنزل جِبْرِيل فَفَرَجَ صَدْرِي ثُمَّ غَسَلَهُ بِمَاءِ زَمْزَمَ ثُمَّ جَاءَ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ مُمْتَلِئٌ حِكْمَةً وَإِيمَانًا فَأَفْرَغَهُ فِي صَدْرِي ثُمَّ أَطْبَقَهُ ثُمَّ أَخَذَ بيَدي فعرج بِي إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا. قَالَ جِبْرِيلُ لِخَازِنِ السَّمَاءِ: افْتَحْ. قَالَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ جِبْرِيلُ. قَالَ: هَل مَعَك أحد؟ قَالَ: نعم معي مُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَقَالَ: أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ فَلَمَّا فَتَحَ عَلَوْنَا السَّمَاءَ الدُّنْيَا إِذَا رَجُلٌ قَاعِدٌ عَلَى يَمِينِهِ أَسْوِدَةٌ وَعَلَى يَسَارِهِ أَسْوِدَةٌ إِذَا نَظَرَ قِبَلَ يَمِينِهِ ضَحِكَ وَإِذَا نَظَرَ قِبَلَ شَمَالِهِ بَكَى فَقَالَ مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ الصَّالِحِ وَالِابْنِ الصَّالِحِ. قُلْتُ لِجِبْرِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا آدَمُ وَهَذِهِ الْأَسْوِدَةُ عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ نَسَمُ بَنِيهِ فَأَهْلُ الْيَمين مِنْهُم أهل الْجنَّة والأسودة عَن شِمَاله أهلُ النَّار فَإِذا نظر عَن يَمِينِهِ ضَحِكَ وَإِذَا نَظَرَ قِبَلَ شَمَالِهِ بَكَى حَتَّى عَرَجَ بِي إِلَى السَّمَاءِ الثَّانِيَةِ فَقَالَ لِخَازِنِهَا: افْتَحْ فَقَالَ لَهُ خَازِنُهَا مِثْلَ مَا قَالَ الْأَوَّلُ قَالَ أَنَسٌ: فَذَكَرَ أَنَّهُ وَجَدَ فِي السَّمَاوَاتِ آدَمَ وَإِدْرِيسَ وَمُوسَى وَعِيسَى وَإِبْرَاهِيمَ وَلَمْ يُثْبِتْ كَيْفَ مَنَازِلُهُمْ غَيْرَ أَنَّهُ ذَكَرَ أَنَّهُ وَجَدَ آدَمَ فِي السَّمَاءِ الدُّنْيَا وَإِبْرَاهِيمَ فِي السَّمَاءِ السَّادِسَةِ. قَالَ ابْنُ شِهَابٍ: فَأَخْبَرَنِي ابْنُ حَزْمٍ أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ وَأَبَا حَبَّةَ الْأَنْصَارِيَّ كَانَا يَقُولَانِ. قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «ثمَّ عرج بِي حَتَّى وصلت لِمُسْتَوًى أَسْمَعُ فِيهِ صَرِيفَ الْأَقْلَامِ» وَقَالَ ابْنُ حَزْمٍ وَأَنَسٌ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فَفَرَضَ اللَّهُ عَلَى أُمَّتِي خَمْسِينَ صَلَاةً فَرَجَعْتُ بِذَلِكَ حَتَّى مَرَرْتُ عَلَى مُوسَى. فَقَالَ: مَا فَرْضُ اللَّهِ لَكَ عَلَى أُمَّتِكَ؟ قُلْتُ: فَرَضَ خَمْسِينَ صَلَاةً. قَالَ: فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَإِن أُمَّتكَ لَا تطِيق فراجعت فَوَضَعَ شَطْرَهَا فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقُلْتُ: وَضَعَ شَطْرَهَا فَقَالَ: رَاجِعْ رَبَّكَ فَإِنَّ أُمَّتَكَ لَا تُطِيقُ ذَلِكَ فَرَجَعْتُ فَرَاجَعْتُ فَوَضَعَ شَطْرَهَا فَرَجَعْتُ إِلَيْهِ فَقَالَ: ارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَإِنَّ أُمَّتَكَ لَا تُطِيقُ ذَلِكَ فَرَاجَعْتُهُ فَقَالَ: هِيَ خَمْسٌ وَهِيَ خَمْسُونَ لَا يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَيَّ فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقَالَ: رَاجِعْ رَبَّكَ. فَقُلْتُ: اسْتَحْيَيْتُ مِنْ رَبِّي ثُمَّ انْطُلِقَ بِي حَتَّى انْتُهِيَ إِلَى سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى وَغَشِيَهَا أَلْوَانٌ لَا أَدْرِي مَا هِيَ؟ ثُمَّ أُدْخِلْتُ الْجَنَّةَ فَإِذَا فِيهَا جَنَابِذُ اللُّؤْلُؤِ وَإِذَا تُرَابُهَا الْمِسْكُ . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (349) و مسلم (263 / 163)، (415) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

وعن ابن شهاب عن أنس قال: كان أبو ذر يحدث أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: فرج عني سقف بيتي وأنا بمكة فنزل جبريل ففرج صدري ثم غسله بماء زمزم ثم جاء بطست من ذهب ممتلئ حكمة وإيمانا فأفرغه في صدري ثم أطبقه ثم أخذ بيدي فعرج بي إلى السماء الدنيا. قال جبريل لخازن السماء: افتح. قال: من هذا؟ قال جبريل. قال: هل معك أحد؟ قال: نعم معي محمد صلى الله عليه وسلم. فقال: أرسل إليه؟ قال: نعم فلما فتح علونا السماء الدنيا إذا رجل قاعد على يمينه أسودة وعلى يساره أسودة إذا نظر قبل يمينه ضحك وإذا نظر قبل شماله بكى فقال مرحبا بالنبي الصالح والابن الصالح. قلت لجبريل: من هذا؟ قال: هذا آدم وهذه الأسودة عن يمينه وعن شماله نسم بنيه فأهل اليمين منهم أهل الجنة والأسودة عن شماله أهل النار فإذا نظر عن يمينه ضحك وإذا نظر قبل شماله بكى حتى عرج بي إلى السماء الثانية فقال لخازنها: افتح فقال له خازنها مثل ما قال الأول قال أنس: فذكر أنه وجد في السماوات آدم وإدريس وموسى وعيسى وإبراهيم ولم يثبت كيف منازلهم غير أنه ذكر أنه وجد آدم في السماء الدنيا وإبراهيم في السماء السادسة. قال ابن شهاب: فأخبرني ابن حزم أن ابن عباس وأبا حبة الأنصاري كانا يقولان. قال النبي صلى الله عليه وسلم: «ثم عرج بي حتى وصلت لمستوى أسمع فيه صريف الأقلام» وقال ابن حزم وأنس: قال النبي صلى الله عليه وسلم: ففرض الله على أمتي خمسين صلاة فرجعت بذلك حتى مررت على موسى. فقال: ما فرض الله لك على أمتك؟ قلت: فرض خمسين صلاة. قال: فارجع إلى ربك فإن أمتك لا تطيق فراجعت فوضع شطرها فرجعت إلى موسى فقلت: وضع شطرها فقال: راجع ربك فإن أمتك لا تطيق ذلك فرجعت فراجعت فوضع شطرها فرجعت إليه فقال: ارجع إلى ربك فإن أمتك لا تطيق ذلك فراجعته فقال: هي خمس وهي خمسون لا يبدل القول لدي فرجعت إلى موسى فقال: راجع ربك. فقلت: استحييت من ربي ثم انطلق بي حتى انتهي إلى سدرة المنتهى وغشيها ألوان لا أدري ما هي؟ ثم أدخلت الجنة فإذا فيها جنابذ اللؤلؤ وإذا ترابها المسك . متفق عليه

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে, (ثُمَّ جَاءَ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ مُمْتَلِئٌ حِكْمَةً وَإِيمَانًا) অর্থাৎ তারপর তিনি ঈমান ও হিকমাতে পূর্ণ একটি পেয়ালা আনলেন। এ প্রসঙ্গে শারহুন নাবাবী গ্রন্থে বলা হয়েছে, ঐ পাত্রে এমন কিছু ছিল যার মাধ্যমে ঈমান ও হিকমাতের পূর্ণতা লাভ করে এবং বৃদ্ধি সাধিত হয়। আর সেই জিনিসকেই ঈমান ও হিকমাহ্ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
(إِذَا رَجُلٌ قَاعِدٌ عَلَى يَمِينِهِ أَسْوِدَةٌ) অর্থাৎ তখন দেখি একজন ব্যক্তি, যার ডানপাশে একটি দল রয়েছে। এখানে (أَسْوِدَةٌ) শব্দের বিভিন্ন অর্থ হতে পারে। যেমন আদম সন্তান, ব্যক্তি, দল ইত্যাদি। খত্ত্বাবী এবং আরো অনেকে বলেন, এই (أَسْوِدَةٌ) শব্দ দ্বারা হাদীসে উদ্দেশ্য হলো আদম সন্তানদের আত্মা।
কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীসে উল্লেখ আছে যে, রাসূল (সা.) আদম আলায়হিস সালাম এবং তাঁর জান্নাত ও জাহান্নামী সন্তানদের প্রথম আকাশে পেলেন। অথচ তাদের থাকার কথা ছিল সিজ্জীনে অথবা সপ্তম জমিনে বা তার নিচে থাকে। আর মু'মিনদের আত্মা থাকার কথা ছিল ইল্লিয়্যিনে। তাহলে আদম আলায়হিস সালাম-সহ তাঁর সন্তানদের কিভাবে রাসূল (সা.) প্রথম আকাশে পেলেন? এর উত্তর বিভিন্নভাবে দেয়া হয়ে থাকে, যেমন কখনো কখনো আদম আলায়হিস সালাম-এর সন্তানদেরকে তার কাছে পেশ করা হয়। আর সেই পেশ করার সময়টি রাসূল (সা.)-এর আদম আলায়হিস সালাম-কে অতিক্রম করার সময়ের সাথে মিলে গিয়েছিল। তাই তিনি আদম সন্তানদের আত্মাগুলোকে তার দুইপাশে পেয়েছেন। সম্ভবত এটিও হতে পারে যে, আদম আলায়হিস সালাম-এর ডান পাশে ছিল জান্নাত এবং বাম পাশে ছিল জাহান্নাম। তাই তিনি যখন জাহান্নামবাসীদের দিকে তাকাতেন তখন কাঁদতেন। তবে প্রকৃত বিষয়ে আল্লাহই অধিক অবগত।

(وَجَدَ إِبْرَاهِيمَ فِي السَّمَاءِ السَّادِسَةِ) অর্থাৎ তিনি ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে ষষ্ঠ আকাশে পেলেন। অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে সপ্তম আকশে পেলেন। এখানে উক্ত বিষয় দুটির মধ্যে বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে।
উভয় বিষয়ের সমন্বয় সাধনে শারহুন নাবাবী গ্রন্থকার বলেন, যদি রাসূল (সা.) -এর মি'রাজ দু’বার হয়ে থাকে তাহলে তিনি ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে প্রথমবার পেয়েছিলেন সপ্তম আকাশে আর দ্বিতীয়বার পেয়েছিলেন ষষ্ঠ আকাশে। আর যদি তার মি'রাজ একবারই হয়ে থাকে তাহলে বিষয়টি এমন হতে পারে যে, রাসূল (সা.) ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে ষষ্ঠ আকাশে পেয়েছিলেন। তারপর তার সাথে ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-ও সপ্তম আকাশে গিয়েছিলেন। তবে এখানে মিরকাত প্রণেতা বলেন, 'রাসূল (সা.) ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে সপ্তম আকাশে পেয়েছিলেন এ কথাটিই অধিক গ্রহণযোগ্য। কারণ তার বর্ণনাটি হলো বেশি শক্তিশালী। তবে প্রকৃত বিষয়ে আল্লাহই অধিক অবগত। (শারহুন নাবাবী ২/২৬৩)

(صَرِيفَ الْأَقْلَامِ) অর্থাৎ কলমের খচখচে আওয়াজ। এর অর্থ সম্পর্কে ব্যাখ্যাকারদের মাঝে মতানৈক্য আছে। যেমন- খত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: (صَرِيفَ)-এর অর্থ হলো উত্তোলন যন্ত্র। কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ হলো সমান জায়গা। আবার কেউ কেউ বলেন, মালাক (ফেরেশতা) কর্তৃক আল্লাহ ফায়সালা লিখে রাখার আওয়াজ।
কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটি হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আত-এর দলীল এ বিষয়ে যে, ওয়াহী এবং সকল তাকদীরের বিষয় আল্লাহর কাছে লিপিবদ্ধ আছে। যার প্রকৃতরূপ আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।
(وَإِذَا تُرَابُهَا الْمِسْكُ) জান্নাতের মাটি মিসকে আম্বরের মতো সুগন্ধিযুক্ত। এটি হলো সবচেয়ে উত্তম সুগন্ধি। হাদীসে এসেছে, জান্নাতের সুঘ্রাণ পাঁচশত বছরের দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মিরাজের বর্ণনা

৫৮৬৫-[৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে রাত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে ভ্রমণ করানো হয়, তাঁকে সিদরাতুল মুনতাহায় পৌছানো হয়েছে। আর তা ষষ্ঠ আকাশে অবস্থিত। (সিদরাতুল মুনতাহা হলো) ভূপৃষ্ঠ হতে যা সেখান হতে কোন মাধ্যম ছাড়া তা উপরে উঠিয়ে নেয়া হয়। আর উর্ধ্বজগত হতে যা কিছু অবতরণ করা হয়, তা সে স্থান পর্যন্ত পৌছে এবং তথা হতে গ্রহণ করা হয় (অর্থাৎ ফেরেশতাগণ নিয়ে যান)। এরপর ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) কুরআন মাজীদের এ আয়াতটি পাঠ করলেন- (اِذۡ یَغۡشَی السِّدۡرَۃَ مَا یَغۡشٰی) “যখন বৃক্ষটি যা দ্বারা আচ্ছাদিত হওয়ার ছিল তা দ্বারা আচ্ছাদিত হয়”- (সূরাহ আন্ নাজম ৫৩ : ১৬)। (এর ব্যাখ্যায়) তিনি বললেন, এগুলো ছিল স্বর্ণের পতঙ্গ। অতঃপর ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে মিরাজের রাত্রে তিনটি জিনিস প্রদান করা হয়েছে।
১. পাঁচ ওয়াক্ত সালাত। ২. সূরাহ আল বাক্বারার শেষ কয়েকটি আয়াত এবং ৩. নবী (সা.) -এর উম্মতের মধ্য হতে যারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেনি, তাদের ক্ষমা করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابٌ فِي الْمِعْرَاجِ)

وَعَن عبدِ الله قَالَ: لَمَّا أُسْرِيَ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ انْتُهِيَ بِهِ إِلَى سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى وَهِيَ فِي السَّمَاءِ السَّادِسَةِ إِلَيْهَا يَنْتَهِي مَا يُعْرَجُ بِهِ مِنَ الْأَرْضِ فَيُقْبَضُ مِنْهَا وَإِلَيْهَا يَنْتَهِي مَا يُهْبَطُ بِهِ مِنْ فَوْقِهَا فَيُقْبَضُ مِنْهَا قَالَ: [إِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشَى] . قَالَ: فِرَاشٌ مِنْ ذَهَبٍ قَالَ: فَأُعْطِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلَاثًا: أُعْطِيَ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسَ وَأُعْطِيَ خَوَاتِيمَ سُورَةِ الْبَقَرَةِ وَغُفِرَ لمن لَا يشرِكُ باللَّهِ من أمته شَيْئا الْمُقْحمَات. رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (279 / 173)، (431) ۔
(صَحِيح)

وعن عبد الله قال: لما أسري برسول الله صلى الله عليه وسلم انتهي به إلى سدرة المنتهى وهي في السماء السادسة إليها ينتهي ما يعرج به من الأرض فيقبض منها وإليها ينتهي ما يهبط به من فوقها فيقبض منها قال: [إذ يغشى السدرة ما يغشى] . قال: فراش من ذهب قال: فأعطي رسول الله صلى الله عليه وسلم ثلاثا: أعطي الصلوات الخمس وأعطي خواتيم سورة البقرة وغفر لمن لا يشرك بالله من أمته شيئا المقحمات. رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (وَهِيَ فِي السَّمَاءِ السَّادِسَةِ) অর্থাৎ তা (সিদরাতুল মুনতাহা ছিল) ষষ্ঠ আকাশে অন্যান্য হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সিদরাতুল মুনতাহা আছে সপ্তম আকাশে। এক্ষেত্রে হাদীসের মাঝে বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মিরক্বাত প্রণেতা বলেন, অধিকাংশ রাবীদের মতে সঠিক কথা হলো, সিদরাতুল মুনতাহা সপ্তম আকাশে আছে।
তাছাড়াও আরো একটি বিষয় হলো যে, (سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى) অর্থ শেষ সীমানার বড়ই গাছ। যেহেতু এটি একটি শেষ জায়গা এবং সেখানে এসেই থেমে যায়, যা কিছু উপর থেকে নাযিল হয় ও নিচু থেকে উপরে উঠে। তাই শেষ জায়গা হিসেবে তার অবস্থান সপ্তম আকাশে হওয়াটাই অধিক যুক্তিযুক্ত।

ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ)-ও জামিউল উসূলে এই ধরনের কথা বলেছেন। তিনি আরো বলেন, উভয় হাদীসের মাঝে এভাবেও সমন্বয় করা যায় যে, সিদরাতুল মুনতাহার মূল শিকড়টি হলো ষষ্ঠ আকাশে আর তার বেশিরভাগ অংশই হলো সপ্তম আকাশে।
খলীল (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সিদরাতুল মুনতাহা রয়েছে সপ্তম আকাশে যা আসমানসমূহ ও জান্নাতকে ছায়াদান করেছে। কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, দুনিয়ার বাহ্যিক দুটি নহর তথা নীল ও ফুরাত, এই দুটি বের হয়েছে সিদরাতুল মুনতাহা থেকে। যেহেতু এই নহর (নদী) দুটি পৃথিবীতে রয়েছে। তাই এখান থেকে বুঝা যায় যে, সিদরাতুল মুনতাহাও পৃথিবীতে রয়েছে। অতএব এই অর্থ যদি গ্রহণ করা হয় তাহলে সিদরাতুল মুনতাহার সপ্তম আকাশে থাকার পাশাপাশি আরো অন্যান্য আকাশেও থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
(يَنْتَهِي مَا يُعْرَجُ بِهِ مِنَ الْأَرْضِ) অর্থাৎ জমিন থেকে যা উপরে উঠে তা সেখানে গিয়েই থেমে যায়। যা উপরে উঠে এর ব্যাখ্যায় মিরকাত প্রণেতা বলেন, যে সকল 'আমল ও আত্মাগুলো জমিন থেকে উপরে উঠে সেগুলোই এখানে উদ্দেশ্য।
(وَإِلَيْهَا يَنْتَهِي مَا يُهْبَطُ بِهِ مِنْ فَوْقِهَا) অর্থাৎ সেখানেই থেমে যায় যা কিছু উপর থেকে নেমে আসে। যা কিছু উপর থেকে নেমে আসে এর ব্যাখ্যায় মিরক্বাত প্রণেতা বলেন যে, ওয়াহী এবং আসমানী বিধান উপর থেকে নিচে নেমে আসে সেগুলোই এখানে উদ্দেশ্য।
(وَغُفِرَ لمن لَا يشرِكُ باللَّهِ من أمته شَيْئا الْمُقْحمَات) অর্থাৎ ঐ ব্যক্তিকে মাফ করে দেয়া হবে যে, তাঁর উম্মাতের মধ্য হতে আল্লাহর সাথে কোন বড় ধরনের শিরক করবে না। এর ব্যাখ্যায় মিরকাত প্রণেতা বলেন, যে ব্যক্তি এমন বড় গুনাহ করবে না, যা তাকে একেবারে জাহান্নামে নিয়ে গিয়েই ছাড়বে। যদি না আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করে দেন।
ইবনু হাজার আল আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখানে তাকে ক্ষমা করে দেয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে না। যেমন, মুশরিকরা চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে।
এখানে এটি উদ্দেশ্য নয় যে, তাঁর উম্মতকে একেবারেই শাস্তি দেয়া হবে না। কেননা শারী'আতের বিভিন্ন দলীল থেকে এবং আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের ইজমা’র মাধ্যমে জানা যায় যে, একত্বতায় বিশ্বাসী অনেক নাফরমানকে শাস্তি দেয়া হবে। অতএব তারা যদি একত্বতায় বিশ্বাস করার পরেও নাফরমানী করে তাহলে তাদেরকেও জাহান্নামে শাস্তি দেয়া হবে। কিন্তু তারা মুশরিকদের মতো চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মিরাজের বর্ণনা

৫৮৬৬-[৫] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমি নিজেকে কা’বাহ্ গৃহের হাত্বীমে দণ্ডায়মান দেখলাম। আর কুরায়শের লোকেরা আমাকে আমার মি’রাজের ঘটনাবলী সম্পর্কে প্রশ্ন করছিল। তারা আমাকে বায়তুল মাক্বদিস সম্পর্কে এমন কিছু প্রশ্ন করল, আমার স্মরণে ছিল না। ফলে আমি এমন চঞ্চল হয়ে পড়লাম যে, এর পূর্বে অনুরূপ চঞ্চল আর কখনো হয়নি। তখন আল্লাহ তা’আলা বায়তুল মাকদিসকে আমার সামনে উপস্থিত করে দিলেন, ফলে আমি তার দিকে চেয়ে রইলাম এবং তারা যে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করত, আমি তা দেখে উত্তর দিতে থাকলাম। আর আমি (মি’রাজের রাতে) নিজেকে নবীদের এক দলের মাঝে দেখতে পেলাম। তখন দেখি মূসা আলায়হিস সালাম দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছেন। তিনি একজন মধ্যম গঠনের সামান্য লম্বা, মনে হলো যেন (ইয়ামান দেশের) শানুয়াহ্ সম্প্রদায়ের লোক। আর ’ঈসা আলায়হিস সালাম দাড়িয়ে সালাত আদায় করছেন। লোকেদের মধ্যে উরওয়াহ ইবনু মাসউদ আস্ সাক্বাফী হলেন তার অধিক সদৃশ। আবার ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কেও দাঁড়ানো অবস্থায় সালাত আদায় করতে দেখলাম। লোকেদের মধ্যে তার সদৃশ তোমাদের সঙ্গীসদৃশ অর্থাৎ- (রাসূল (সা.) সা.) নিজেরই সদৃশ। অতঃপর সালাতের সময় হলে আমিই সালাতে তাদের ইমামতি করলাম, যখন আমি সালাত শেষ করলাম তখন কেউ আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ! ইনি হলেন জাহান্নামের দ্বাররক্ষী মালিক, তাঁকে সালাম করুন। নবী (সা.) বলেন, আমি তার দিকে ফিরে তাকাতেই তিনিই আমাকে আগে সালাম দিলেন। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابٌ فِي الْمِعْرَاجِ)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَقَدْ رَأَيْتُنِي فِي الْحِجْرِ وَقُرَيْشٌ تَسْأَلُنِي عَنْ مَسْرَايَ فَسَأَلَتْنِي عَنْ أَشْيَاءَ مِنْ بَيْتِ الْمَقْدِسِ لَمْ أُثْبِتْهَا فَكُرِبْتُ كَرْبًا مَا كُرِبْتُ مِثْلَهُ فَرَفَعَهُ اللَّهُ لِي أَنْظُرُ إِلَيْهِ مَا يَسْأَلُونِي عَنْ شَيْءٍ إِلَّا أَنْبَأْتُهُمْ وَقَدْ رَأَيْتُنِي فِي جَمَاعَةٍ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ فَإِذَا مُوسَى قَائِمٌ يُصَلِّي. فَإِذَا رَجُلٌ ضَرْبٌ جعد كَأَنَّهُ أَزْد شَنُوءَةَ وَإِذَا عِيسَى قَائِمٌ يُصَلِّي أَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شبها عروةُ بن مسعودٍ الثَّقفيُّ فإِذا إِبْرَاهِيمُ قَائِمٌ يُصَلِّي أَشْبَهُ النَّاسِ بِهِ صَاحِبُكُمْ - يَعْنِي نَفْسَهُ - فَحَانَتِ الصَّلَاةُ فَأَمَمْتُهُمْ فَلَمَّا فَرَغْتُ مِنَ الصَّلَاةِ قَالَ لِي قَائِلٌ: يَا مُحَمَّدُ هَذَا مَالِكٌ خَازِنُ النَّارِ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ فَالْتَفَتُّ إِلَيْهِ فَبَدَأَنِي بِالسَّلَامِ . رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَهَذَا الْبَابُ خَالٍ عَنِ: الْفَصْلِ الثَّانِي

رواہ مسلم (278 / 172)، (430) ۔
(صَحِيح)

وعن أبي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لقد رأيتني في الحجر وقريش تسألني عن مسراي فسألتني عن أشياء من بيت المقدس لم أثبتها فكربت كربا ما كربت مثله فرفعه الله لي أنظر إليه ما يسألوني عن شيء إلا أنبأتهم وقد رأيتني في جماعة من الأنبياء فإذا موسى قائم يصلي. فإذا رجل ضرب جعد كأنه أزد شنوءة وإذا عيسى قائم يصلي أقرب الناس به شبها عروة بن مسعود الثقفي فإذا إبراهيم قائم يصلي أشبه الناس به صاحبكم - يعني نفسه - فحانت الصلاة فأممتهم فلما فرغت من الصلاة قال لي قائل: يا محمد هذا مالك خازن النار فسلم عليه فالتفت إليه فبدأني بالسلام . رواه مسلم وهذا الباب خال عن: الفصل الثاني

ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীসের শেষের দিকে বলা হয়েছে, (فَحَانَتِ الصَّلَاةُ) অর্থাৎ তখন সালাতের সময় হলো। এখানে কোন সালাত উদ্দেশ্য- এ প্রসঙ্গে মিরকাত প্রণেতা বলেন, এ সালাত দ্বারা দুটি সালাতের যে কোনটি হতে পারে। ১) তাহিয়্যাতুল মাসজিদ, ২) মি'রাজের জন্য বিশেষ সালাত।
(فَأَمَمْتُهُمْ) অর্থাৎ তারপর আমার ইমামাতে তাদেরকে সালাত আদায় করালাম। এখানে প্রশ্ন হতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) সকল নবীদের নিয়ে বায়তুল মাক্বদিসে সালাত আদায় করিয়েছেন আবার তাদের অনেককেই তিনি বিভিন্ন আসমানে পেয়েছেন। তাহলে এটা কিভাবে সম্ভব যে, তিনি তাদের অনেককেই দুই জায়গায় পেলেন? মিরক্বাত প্রণেতা বলেন, এর উত্তর দুই ধরনের হতে পারে- ১) রাসূল (সা.) নবীগণকে বায়তুল মাক্বদিসে দেখেছেন এবং তাদের ইমামতি করেছেন। তারপর তারা আবার আকাশে চলে গেছেন। আর তখন তিনি তাদেরকে বিভিন্ন আকাশে পেয়েছেন। ২) হতে পরে তিনি সিদরাতুল মুনতাহা থেকে ফিরে এসে বায়তুল মাক্বদিসে নবীগণকে দেখেছেন এবং তাদের ইমামতি করেছেন।
(فَالْتَفَتُّ إِلَيْهِ فَبَدَأَنِي بِالسَّلَامِ) অর্থাৎ তারপর আমি তার দিকে তাকালাম তখন সেই আমাকে সালাম দিল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাহান্নামের প্রধান দায়িত্বশীল মালিক রাসূল (সা.) -কে আগেই সালাম দিলেন যেন রাসূল (সা.) থেকে মালিকের ব্যাপারে ভয় দূর হয়ে যায়।
এছাড়া রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেই আগে অন্যান্য নবীগণকে সালাম দিয়েছেন। নিজের বিনয়তার প্রতি খেয়াল রেখে এবং আদবের প্রতি লক্ষ্য রেখে। যেহেতু তারা ছিলেন বসে আর নবী (সা.) ছিলেন দাঁড়ানো বা চলমান অবস্থায়। কারণ সালাম দেয়ার আদব হলো দাঁড়ানো ব্যক্তি উপবেশনকারীকে সালাম দিবে। আর চলমান ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তিকে সালাম দিবে। (মিকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৫ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে