পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা

৫৭৩৩-[৩৬] আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: (কামিল) মুমিন আল্লাহর কাছে কোন কোন মালাক (ফেরেশতা) হতে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন। (ইবনু মাজাহ)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمُؤْمِنُ أَكْرَمُ عَلَى اللَّهِ مِنْ بَعْضِ مَلَائِكَتِهِ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ

اسنادہ ضعیف جذا ، رواہ ابن ماجہ (3947) * فیہ ابو المھزم : متروک ۔
(ضَعِيف)

عن أبي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «المؤمن أكرم على الله من بعض ملائكته» . رواه ابن ماجه

ব্যাখ্যা: পূর্ণাঙ্গ মু'মিন অর্থাৎ নবী ও ওলী বিশিষ্ট মালাক এবং সাধারণ মালাক ও নির্বাচিত মালাক থেকে উত্তম। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, মু'মিন দ্বারা সাধারণ মুমিন উদ্দেশ্য এবং মালাক (ফেরেশতা) দ্বারা সাধারণ মালাক উদ্দেশ্য। মুহয়িউস্ সুন্নাহ (রহিমাহুল্লাহ) (وَ لَقَدۡ کَرَّمۡنَا بَنِیۡۤ اٰدَمَ) “আমি আদম সন্তানকে সম্মানিত করেছি”- (সূরাহ আল ইসরা ১৭ : ৭০); এর তাফসীরে বলেন, উত্তম হচ্ছে এটা বলা যে, সাধারণ মু'মিন সাধারণ মালাক থেকে উত্তম এবং বিশেষ মু'মিন বিশেষ মালাক থেকে উত্তম। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন (اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ ۙ اُولٰٓئِکَ هُمۡ خَیۡرُ الۡبَرِیَّۃِ) “যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির সেরা।” (সূরা আল বাইয়িনাহ্ ৯৮ : ৭)

আহলুস্ সুন্নাহর ‘উলামাগণ এই আয়াত দিয়ে মালায়িকার (ফেরেশতাদের) ওপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের দলীল দিয়ে থাকেন। আর এটা স্পষ্ট যে, বিশেষ মু'মিন দ্বারা নবী ও রাসূল উদ্দেশ্য এবং বিশেষ মালাক দ্বারা জিবরীল, মীকাঈল ও ইসরাফীল উদ্দেশ্য। আবার সাধারণ মু'মিন দ্বারা পূর্ণাঙ্গ মু'মিন যেমন ওলী, খলীফাহ্ এবং ‘আলিমগণ উদ্দেশ্য। আর সাধারণ মালাক দ্বারা সকল মালাক উদ্দেশ্য। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা

৫৭৩৪-[৩৭] আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার হাত ধরে বললেন, আল্লাহ তা’আলা জমিন সৃষ্টি করেছেন শনিবারে, পাহাড়-পর্বত সৃষ্টি করেছেন রবিবারে, গাছ-গাছালি সৃষ্টি করেছেন সোমবারে, খারাপ জিনিসসমূহ বানিয়েছেন মঙ্গলবারে, আলো বা জ্যোতি সৃষ্টি করেছেন বুধবারে, জীবজন্তু ও প্রাণিজগৎকে সৃষ্টি করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন বৃহস্পতিবারে, আর আদম আলায়হিস সালামকে সৃষ্টি করেছেন জুমু’আর দিন ’আসরের সময়ের পরে। মূলত এটাই সর্বশেষ সৃষ্টি, দিনের শেষ সময়েই সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ ’আসর ও রাত্রির মধ্যবর্তী সময়ে। (মুসলিম)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)

وَعَنْهُ قَالَ: أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدَيَّ فَقَالَ: «خلق الله الْبَريَّة يَوْمَ السَّبْتِ وَخَلَقَ فِيهَا الْجِبَالَ يَوْمَ الْأَحَدِ وَخلق الشّجر يَوْم الِاثْنَيْنِ وَخلق الْمَكْرُوه يَوْمَ الثُّلَاثَاءِ وَخَلَقَ النُّورَ يَوْمَ الْأَرْبِعَاءِ وَبَثَّ فِيهَا الدَّوَابَّ يَوْمَ الْخَمِيسِ وَخَلَقَ آدَمَ بَعْدَ الْعَصْرِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فِي آخِرِ الْخَلْقِ وَآخِرِ سَاعَةٍ مِنَ النَّهَارِ فِيمَا بَيْنَ الْعَصْرِ إِلى اللَّيْل» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (27 / 2789)، (7054) ۔
(صَحِيح)

وعنه قال: أخذ رسول الله صلى الله عليه وسلم بيدي فقال: «خلق الله البرية يوم السبت وخلق فيها الجبال يوم الأحد وخلق الشجر يوم الاثنين وخلق المكروه يوم الثلاثاء وخلق النور يوم الأربعاء وبث فيها الدواب يوم الخميس وخلق آدم بعد العصر من يوم الجمعة في آخر الخلق وآخر ساعة من النهار فيما بين العصر إلى الليل» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: শায়খ সালিহ আল উসায়মীন (রহিমাহুল্লাহ) ‘রিয়াদুস সালিহীন’-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থে বলেন, এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেছেন। তবে ‘উলামারা হাদীসটির উপর আপত্তি তুলেছেন। তাই হাদীসটি সহীহ নয়। নবী (সা.) থেকে সহীহ সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত হয়নি। কেননা এটা কুরআনের বিপরীত। আর যা কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক তা অগ্রহণযোগ্য। কেননা যারা বর্ণনাকারী তারা মানুষ, তাদের ভুল হতে পারে আবার শুদ্ধ হতে পারে। অপরদিকে কুরআনে কোন ভুল নেই। কুরআন সম্পূর্ণ নির্ভুল এবং তাওয়াতুরের মাধ্যমে বর্ণিত। কুরআনের সাথে কোন হাদীসের বৈপরীত্য দেখা দিলে কুরআন সেই হাদীসটি সহীহ নয় বলে ফয়সালা করে। কেননা রাবীগণ নবী (সা.) থেকে সরাসরি হাদীসগুলো শুনেননি। তারা অন্যের সূত্রে শুনেছেন এবং তা রাসূল (সা.) পর্যন্ত পৌছিয়েছেন। আর এভাবে তাদের কখনো কখনো ভুল হয়ে যায়। কিন্তু কুরআনে কোন ভুল নেই। আহলে ইলমগণ ইমাম মুসলিম (রহিমাহুল্লাহ)-এর এ হাদীসটির উপর আপত্তি তুলেন। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কেননা মানবজাতি সকলেই মানুষ। ইমাম মুসলিম (রহিমাহুল্লাহ) যেমন মানুষ অন্যরাও মানুষ। সবারই ভুল শুদ্ধ রয়েছে। তাই এই হাদীস নিয়ে আমাদের আলোচনার প্রয়োজন নেই। (শারহু রিয়াদিস সালিহীন- অনুচ্ছেদ: দাজ্জালের হাদীস ও কিয়ামতের আলামাতসমূহ)

ইবনু কাসীর (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসটি সহীহ মুসলিমের গরীবের অন্তর্ভুক্ত। আলী ইবনুল মাদীনী, বুখারী এবং হাদীসের অন্যান্য হাফিযরা হাদীসটির ব্যাপারে কথা বলেছেন। তারা এটাকে কা'ব-এর কথা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) কা'ব আহবার থেকে এটা শুনেছেন এবং কোন কোন বর্ণনাকারী রাসূল (সা.)-এর দিকে সম্পৃক্ত করে দিয়েছেন। (ইবনু কাসীর ১/২১৫)
কুরআনের সাথে হাদীসটি সাংঘর্ষিক; কেননা কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় আসমান জমিনসহ পুরো জগতকে ছয় দিনে বানানোর কথা বলা হয়েছে। আবার দুই দিনে জমিন, আরো দুই দিনে জমিনের যাবতীয় বস্তুসহ মোট চার দিনের পৃথিবী ও তাতে বিদ্যমান বস্তু সৃষ্টি করা হয়েছে। তারপর দুই দিনে সাত আসমান সৃষ্টি করা হয়েছে। অতএব বর্ণিত হাদীসটি আসমান জমিনের বানানোর দিন ও বিবরণ সবদিক দিয়েই কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

দ্র. সনদগত দিক থেকে হাদীসটি সহীহ। আর এ হাদীসের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, হাদীসে ত্রুটি থাকতে পারে, কিন্তু কুরআন ত্রুটিমুক্ত। তবে হাদীসের উপর ভিত্তি করে আমভাবে সহীহ মুসলিমের সব হাদীসে ত্রুটিযুক্ত মনে করা ঠিক নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা

৫৭৩৫-[৩৮] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আল্লাহর নবী (সা.) -তাঁর সাহাবীগণসহ বসা ছিলেন। এমন সময় একখণ্ড মেঘ তাদের ওপর দিয়ে অতিক্রম করল। তখন আল্লাহর নবী (সা.) প্রশ্ন করলেন, তোমরা কি জাননা, এটা কি? তারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেন, এটা ’আনান, এটা জমিন সেচনকারী। একে আল্লাহ তা’আলা এমন এমন সম্প্রদায়ের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যান, যারা তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করে না এবং তাঁকে ডাকেও না। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, তোমরা কি জানো তোমাদের মাথার উপরে কি? তারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেন, এটা রকী’ (প্রথম আসমান) যা সুরক্ষিত ছাদ এবং স্থিরিকৃত। অতঃপর তিনি (সা.) প্রশ্ন করলেন, তোমরা কি জানো, তোমাদের এবং আকাশের মাঝখানের দূরত্ব কত? তারা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূলই অধিক জানেন। তিনি (সা.) বললেন, পাঁচশত বছরের দূরত্ব। অতঃপর প্রশ্ন করলেন, তোমরা কি জানো, তার উপরে কি আছে? তারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জ্ঞাত। তিনি (সা.) বললেন, দু’খানা আকাশ রয়েছে, সেই দু’খানার মাঝখানের দূরত্ব হলো পাঁচশত বছরের পথ।
এভাবে তিনি (সা.) আকাশের সংখ্যা সাতখানা বর্ণনা করলেন এবং প্রত্যেক দুই আকাশের মাঝখানের দূরত্ব, আকাশ ও জমিনের দূরত্বের সমান (অর্থাৎ পাঁচশত বছরের রাস্তা)। অতঃপর তিনি (সা.) প্রশ্ন করলেন, তোমরা কি জানো, তার উপরে কি আছে? তারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জানেন। তিনি (সা.) বললেন, তার উপরে রয়েছে আল্লাহর আরশ, ’আরশ ও আকাশের মাঝখানের ব্যবধান হলো দুই আসমানের মধ্যে দূরত্বের সমান। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, তোমরা কি জানো, তোমাদের নীচে কী? তারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জানেন। তিনি (সা.) বললেন, জমিন। এরপর তিনি (সা.) প্রশ্ন করলেন, তোমরা কি জানো তার নীচে কি? তারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জানেন।
তিনি (সা.) বললেন, তার নিচে আরেক জমিন এবং উভয় জমিনের মাঝখানের দূরত্ব হলো, পাঁচশত বছর। এমনকি তিনি (সা.) জমিনের সংখ্যা সাতখানা বর্ণনা করে বললেন, প্রত্যেক দুই জমিনের মাঝখানে পাঁচশত বছরের দূরত্ব। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, সেই মহান সত্তার কসম যার হাতে মুহাম্মাদ -এর প্রাণ। যদি তোমরা একখানা রশি নীচে জমিনের দিকে ঝুলিয়ে দাও, তা অবশ্যই আল্লাহর কাছে গিয়ে পৌছবে। অতঃপর তিনি (সা.) কুরআনের এ আয়াতটি পাঠ করলেন- (هُوَ الۡاَوَّلُ وَ الۡاٰخِرُ وَ الظَّاهِرُ وَ الۡبَاطِنُ ۚ وَ هُوَ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ) “তিনি প্রথম, তিনি শেষ, তিনি প্রকাশ্য, তিনি গোপন”- (সূরাহ আল হাদীদ ৫৭ : ৩)। (আহমাদ ও তিরমিযী)

ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) এ আয়াতটি পাঠ করে এ কথাটি বুঝাতে চেয়েছেন যে, ’কাছে পৌছবে’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর জ্ঞান, কুদরত ও ক্ষমতায় গিয়ে পৌঁছাবে। কারণ আল্লাহর জ্ঞান, তাঁর ক্ষমতা এবং রাজত্ব সর্বস্থান বেষ্টিত এবং তিনি ’আরশের উপরেই বিরাজমান। যেমন, তাঁর পবিত্র কিতাবে এভাবেই স্বীয় পরিচিতি দান করেছেন।

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)

وَعَنْهُ قَالَ: بَيْنَمَا نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ وَأَصْحَابُهُ إِذْ أَتَى عَلَيْهِمْ سَحَابٌ فَقَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلْ تَدْرُونَ مَا هَذَا؟» . قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «هَذِهِ الْعَنَانُ هَذِهِ رَوَايَا الْأَرْضِ يَسُوقُهَا اللَّهُ إِلَى قَوْمٍ لَا يَشْكُرُونَهُ وَلَا يَدعُونَهُ» . ثمَّ قَالَ: «هَل تَدْرُونَ من فَوْقَكُمْ؟» قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «فَإِنَّهَا الرَّقِيعُ سَقْفٌ مَحْفُوظٌ وَمَوْجٌ مَكْفُوفٌ» . ثُمَّ قَالَ: «هَلْ تَدْرُونَ مَا بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهَا؟» قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهَا خَمْسُمِائَةِ عَامٍ» ثُمَّ قَالَ: «هَلْ تَدْرُونَ مَا فَوْقَ ذَلِكَ؟» . قَالُوا: اللَّهُ ورسولُه أعلمُ. قَالَ: «سماءانِ بُعْدُ مَا بَيْنَهُمَا خَمْسُمِائَةِ سَنَةٍ» . ثُمَّ قَالَ كَذَلِكَ حَتَّى عَدَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ «مَا بَيْنَ كُلِّ سَمَاءَيْنِ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ» . ثُمَّ قَالَ: «هَلْ تَدْرُونَ مَا فَوْقَ ذَلِكَ؟» قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «إِنَّ فَوْقَ ذَلِكَ الْعَرْشُ وَبَيْنَهُ وَبَيْنَ السَّمَاءِ بُعْدُ مَا بَيْنَ السَّماءين» . ثُمَّ قَالَ: «هَلْ تَدْرُونَ مَا تَحْتَ ذَلِكَ؟» . قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «إِنَّ تَحْتَهَا أَرْضًا أُخْرَى بَيْنَهُمَا مَسِيرَةُ خَمْسِمِائَةِ سَنَةٍ» . حَتَّى عدَّ سَبْعَ أَرضين بَين كلَّ أَرضين مسيرَة خَمْسمِائَة سنة قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَوْ أَنَّكُمْ دَلَّيْتُمْ بِحَبْلٍ إِلَى الْأَرْضِ السُّفْلَى لَهَبَطَ عَلَى اللَّهِ» ثُمَّ قَرَأَ (هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شيءٍ عليم) رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ. وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: قِرَاءَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْآيَةَ تَدُلُّ على أَنه أَرَادَ الهبط عَلَى عِلْمِ اللَّهِ وَقُدْرَتِهِ وَسُلْطَانِهِ وَعِلْمُ اللَّهِ وَقُدْرَتُهُ وَسُلْطَانُهُ فِي كُلِّ مَكَانٍ وَهُوَ عَلَى الْعَرْش كَمَا وصف نَفسه فِي كِتَابه

اسنادہ ضعیف ، رواہ احمد (1 / 206 ۔ 207 ح 1770) ۔ و الترمذی (3298 وقال : غریب) * الحسن البصری مدلس و عنعن و لبعض الحدیث شواھد ۔
(ضَعِيف)

وعنه قال: بينما نبي الله صلى الله عليه وسلم جالس وأصحابه إذ أتى عليهم سحاب فقال نبي الله صلى الله عليه وسلم: «هل تدرون ما هذا؟» . قالوا: الله ورسوله أعلم. قال: «هذه العنان هذه روايا الأرض يسوقها الله إلى قوم لا يشكرونه ولا يدعونه» . ثم قال: «هل تدرون من فوقكم؟» قالوا: الله ورسوله أعلم. قال: «فإنها الرقيع سقف محفوظ وموج مكفوف» . ثم قال: «هل تدرون ما بينكم وبينها؟» قالوا: الله ورسوله أعلم. قال: «بينكم وبينها خمسمائة عام» ثم قال: «هل تدرون ما فوق ذلك؟» . قالوا: الله ورسوله أعلم. قال: «سماءان بعد ما بينهما خمسمائة سنة» . ثم قال كذلك حتى عد سبع سماوات «ما بين كل سماءين ما بين السماء والأرض» . ثم قال: «هل تدرون ما فوق ذلك؟» قالوا: الله ورسوله أعلم. قال: «إن فوق ذلك العرش وبينه وبين السماء بعد ما بين السماءين» . ثم قال: «هل تدرون ما تحت ذلك؟» . قالوا: الله ورسوله أعلم. قال: «إن تحتها أرضا أخرى بينهما مسيرة خمسمائة سنة» . حتى عد سبع أرضين بين كل أرضين مسيرة خمسمائة سنة قال: «والذي نفس محمد بيده لو أنكم دليتم بحبل إلى الأرض السفلى لهبط على الله» ثم قرأ (هو الأول والآخر والظاهر والباطن وهو بكل شيء عليم) رواه أحمد والترمذي. وقال الترمذي: قراءة رسول الله صلى الله عليه وسلم الآية تدل على أنه أراد الهبط على علم الله وقدرته وسلطانه وعلم الله وقدرته وسلطانه في كل مكان وهو على العرش كما وصف نفسه في كتابه

ব্যাখ্যা: روايا (هَذِهِ رَوَايَا الْأَرْضِ) শব্দটি (رواية)-এর বহুবচন। যার অর্থ পানি বহনকারী উট। উটের উপর রাখা পানির পাত্রকে (رواية) বলা হয়। আকাশের মেঘকে পানির পাত্রের সাথে তুলনা করা হয়েছে। উটের উপর যেমন পাত্র থাকে এবং উট তা বহন করে নিয়ে যায়, আকাশের মেঘও পৃথিবীর পিঠে থাকা পানির পাত্র। পৃথিবী এই মেঘকে বহন করে রয়েছে এবং আল্লাহর হুকুম তাকে এক জায়গা থেকে অপর জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে।
(يَسُوقُهَا اللَّهُ إِلَى قَوْمٍ لَا يَشْكُرُونَهُ وَلَا يَدعُونَهُ) অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা তাকে ঐ সম্প্রদায়ের কাছে নিয়ে যান যারা তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না এবং তার কাছে দু'আ করে না, আল্লাহকে স্মরণ করে না, আল্লাহর ইবাদাত করে না। বরং কুফরী করে এবং বৃষ্টিকে নক্ষত্রের দিকে সম্পৃক্ত করে বলে অমুক নক্ষত্রের কারণে বৃষ্টি হয়েছে। এমনকি মূর্তিপূজা করে। অথচ আল্লাহ তা'আলা তার রহমত ও দয়াকে ব্যাপকভাবে বিস্তার করেন এবং অন্যান্য মাখলুক ও প্রাণীর এই অকৃতজ্ঞ লোকটির কাছে বৃষ্টি নিয়ে যান এবং তারও রিযকের ব্যবস্থা করেন।
(فَإِنَّهَا الرَّقِيعُ) এটি দুনিয়ার আসমানের নাম। কারো কারো মতে সব আসমানেরই এই নাম। পরবর্তীতে এই আসমানের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ এই আসমান সংরক্ষিত ছাদের ন্যায়। আল্লাহ তা'আলা তাকে জমিনে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছেন। খুঁটি ছাড়া তা দাঁড়িয়ে রয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهَا خَمْسُمِائَةِ عَامٍ) তোমাদের মাঝে অর্থাৎ জমিন ও প্রথম আসমানের মাঝে পাঁচশত বছরের দূরত্ব। এভাবে এক আসমান থেকে অপর আসমানের দূরত্বও পাঁচশত বছরের রাস্তা। এ সংক্রান্ত হাদীস ইতোপূর্বে ব্যাখ্যাসহ অতিক্রান্ত হয়েছে। একই বিষয়কে বিভিন্ন হাদীসে বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ হাদীসে আসমানের সাথে সাতটি জমিন এবং প্রতিটি জমিনের পরস্পরের মধ্যকার দূরত্ব দুই আসমানের মধ্যকার দূরত্বের সমপরিমাণ।
(لَوْ أَنَّكُمْ دَلَّيْتُمْ بِحَبْلٍ إِلَى الْأَرْضِ السُّفْلَى لَهَبَطَ عَلَى اللَّهِ) অর্থাৎ যদি তোমরা সর্বনিম্নের জমিনে একটি রশি ঝুলিয়ে দাও তবে তা আল্লাহ তা'আলার কাছে গিয়ে পৌছবে। আল্লাহ তা'আলার কাছে গিয়ে পড়বে’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, রশি যত দূরত্বই যাক না কেন আল্লাহ তা'আলার জ্ঞান ও রাজত্বের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। উপরে যেমন তার রাজত্ব, নিচেও তাঁরই রাজত্ব। লেখক ইমাম তিরমিযীর বরাতে হাদীসের এই ব্যাখ্যা উল্লেখ করেছেন। হাদীস বর্ণনার পর বর্ণিত আয়াত পাঠ করাই হাদীসের এই মর্ম নিশ্চিত করে বলে তিনি আখ্যা দেন। আল্লাহ তা'আলার রাজত্ব ও ক্ষমতার বিবরণ দেয়ার পর প্রমাণ স্বরূপ রাসূলুল্লাহ (সা.) পাঠ করেন-
(هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شيءٍ عليم)
(الْأَوَّلُ) অর্থাৎ তিনি প্রথম অনাদি, তাঁর শুরু নেই।
(الْآخِرُ) অর্থাৎ তিনি শেষ ও সর্বদা বিদ্যমান তার কোন সমাপ্তি নেই।
(الظَّاهِرُ) অর্থাৎ তিনি প্রকাশ্য, তথা তার গুণাবলি সর্বত্র প্রকাশমান।
(الْبَاطِنُ) অর্থাৎ তিনি গোপন, তথা সত্তাগতভাবে তিনি আমাদের পৌছবে।

(وَهُوَ بِكُلِّ شيءٍ عليم) তিনি সর্ববিষয়ে জ্ঞানী। আসমান ও জমিনের সিফাত বর্ণনার পর রাসূল (সা.) বললেন, নিম্ন আসমানে একটি রশি ঝুলিয়ে দিলেও তা আল্লাহ তা'আর কাছে পৌছবে, অর্থাৎ তার জ্ঞানের বাহিরে যাবে না। এই কথা বুঝতেই রাসূল (সা.) এ আয়াতটি পাঠ করেন। আল্লাহ তা'আলার জ্ঞানের বর্ণনা রয়েছে, (وَهُوَ بِكُلِّ شيءٍ عليم)-এর মাঝে। তাঁর কুদরতের বর্ণনা করা হয়েছে, (الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ)-এর মাঝে। অর্থাৎ তিনি শুরু এবং সব জিনিসের উৎপত্তি তাঁর থেকে। তিনি সবকিছুকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে এনেছেন। এভাবে সব কিছুর সমাপ্তি তার কাছে গিয়ে হবে। তার কোন সমাপ্তি নেই। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন, کُلُّ مَنۡ عَلَیۡهَا فَانٍ ﴿ۚۖ۲۶﴾ وَّ یَبۡقٰی وَجۡهُ رَبِّکَ ذُو الۡجَلٰلِ وَ الۡاِکۡرَامِ ﴿ۚ۲۷﴾ “ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংসশীল। একমাত্র আপনার মহিমাময় ও মহানুভব পালনকর্তার সত্তা ছাড়া।” (সূরা আর রহমান ৫৫: ২৬-২৭)
এভাবে আল্লাহ তা'আলার ক্ষমতা ও রাজত্ব বুঝাতে বলা হয়েছে, (وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ) অর্থাৎ তিনি জয়ী, কেউ তার ওপর জয়লাভ করতে পারে না। সকল সৃষ্টির মাঝে তারই ক্ষমতার দাপট প্রকাশমান। তার ওপর কেউ নেই যে, তাকে বারণ করতে পারে। সৃষ্টিজগতের উপরে যেমন তার ক্ষমতা। অভ্যন্তরেও তারই ক্ষমতা। তিনি ছাড়া কারো কোন আশ্রয়স্থল নেই। সবার শেষ ঠিকানা তিনি। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা

৫৭৩৬-[৩৯] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন আদম আলায়হিস সালাম ছিলেন দৈর্ঘ্যে ষাট হাত লম্বা এবং পার্শ্বে ছিলেন সাত হাত চওড়া।

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)

وَعَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «كَانَ طُولُ آدَمَ سِتِّينَ ذِرَاعًا فِي سبع أَذْرع عرضا»

اسنادہ ضعیف ، رواہ احمد (2 / 535 ح 10926) * فیہ علی بن زید بن جدعان : ضعیف مشھور

وعنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «كان طول آدم ستين ذراعا في سبع أذرع عرضا»

ব্যাখ্যা: সহীহুল বুখারীর হাদীসে (নং. ৩৩২৬) রয়েছে خَلَقَ اللهُ آدَمَ وَطُولُهُ سِتُّونَ ذِرَاعًا ... فَكُلُّ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَلَى صُورَةِ آدَمَ، فَلَمْ يَزَلِ الْخَلْقُ يَنْقُصُ حَتَّى الآنَ
আল্লাহ তা'আলা আদম আলায়হিস সালাম-কে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত। ...যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন তারা আদম 'আলায়হিস সালাম-এর আকৃতিবিশিষ্ট হবেন। তবে আদম সন্তানদের দেহের দৈর্ঘ্য সর্বদা কমতে কমতে বর্তমান পরিমাপ পর্যন্ত পৌঁছেছে।
অর্থাৎ প্রথম মানুষের দৈর্ঘ্য বর্তমান সময়ের হাতের তুলনায় ষাট হাত ছিল। পরবর্তীতে তা ছোট হতে হতে এই পরিমাণে আসে। জান্নাতে মানুষ তার পিতার সেই ষাট হাত দৈর্ঘ্য ও সাত হাত প্রস্থের আকৃতি নিয়ে যাবে। হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ষাট হাত দ্বারা তিনি তার নিজ হাতের ষাট হতে পারেন, আবার যাদের সামনে রাসূল (সা.) এ হাদীসটি বলেছেন তাদের সময়কার মানুষের হাতের সমপরিমাণ হতে পারে। তবে প্রথম মত অধিক প্রকাশ্য; কেননা মানুষের যিরা' বা হাত তার কনুইয়ের তুলনায় হয়ে থাকে। যদি আদম প্রচলিত হাতে ষাট হাত হন তবে শরীরের দৈর্ঘ্যের তুলনায় তার হাত ছোট হয়ে যাবে। (ফাতহুল বারী হা. ৬/৩৬৬)
ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতটি অনেকে গ্রহণ করলেও প্রকৃতপক্ষে এই মত গ্রহণ সম্ভব নয়। কেননা মানুষ নিজ হাতে ষাট হাত হলে তার হাত যতই দীর্ঘ হবে তার শরীরের অঙ্গের মাঝে দূরত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকবে। তখন তার হাতকে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে পৌছানো সম্ভব হবে না। মানুষ হাত দিয়ে তার পুরো শরীরের নাগাল পায়, তাই আল্লাহ তা'আলা সকল মানুষকে নিজ হাতের সাড়ে তিন হাত করে সৃষ্টি করেছেন।
তাই আদম যতই লম্বা হন না কেন নিজ হাতে সাড়ে তিন হাত হওয়াই আল্লাহর সৃষ্টির মাহাত্মের সাথে সামঞ্জস্য। তাই এখানে ষাট হাত বলতে মানুষের কাছে পরিচিত হাতে ষাট হওয়া আবশ্যক। (সম্পাদকীয়)


হাদিসের মানঃ সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা

৫৭৩৭-[৪০] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! নবীদের মধ্যে সর্বপ্রথম নবী কে ছিলেন? তিনি (সা.) বললেন, আদম আলায়হিস সালাম। আমি বললাম, তিনি কি ’নবী ছিলেন? বললেন, হ্যা, তিনি এমন নবী ছিলেন যার সাথে কথাবার্তা বলা হয়েছে। আমি আবার প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! ’রাসূল’ কতজন ছিলেন? বললেন, তিনশত দশজনেরও কিছু বেশি এর বিরাট দল।
আবু উমামাহ্ (রহিমাহুল্লাহ)-এর বর্ণনায় আছে, আবূ যার (রাঃ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! নবীদের পূর্ণ সংখ্যা কত? বললেন, এক লক্ষ চব্বিশ হাজার। তন্মধ্যে রাসূল’ ছিলেন, তিনশত পনের এক বিরাট জামা’আত বা কাফেলা।

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)

وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيُّ الْأَنْبِيَاءِ كَانَ أَوَّلَ؟ قَالَ: «آدَمُ» . قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَنَبِيٌّ كَانَ؟ قَالَ: «نَعَمْ نَبِيٌّ مُكَلَّمٌ» . قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ كم المُرْسَلُونَ؟ قَالَ: «ثَلَاثمِائَة وبضع عشر جماً غفيراً» وَفِي رِوَايَة عَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ أَبُو ذَرٍّ: قَلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَمْ وَفَاءُ عِدَّةِ الْأَنْبِيَاءِ؟ قَالَ: «مِائَةُ أَلْفٍ وَأَرْبَعَةٌ وَعِشْرُونَ أَلْفًا الرُّسُلُ مِنْ ذَلِكَ ثَلَاثُمِائَةٍ وَخَمْسَةَ عَشَرَ جَمًّا غَفِيرًا»

اسنادہ ضعیف ، رواہ احمد (5 / 178 ح 21879) * فیہ عبید بن خشخاش لین و ابو عمر الدمشقی : ضعیف ۔ 0 روایۃ ابی امامۃ : سندہ ضعیف جدًا ، رواھا احمد (5 / 265 ، 266 ح 22644) فیہ علی بن یزید الالھانی ضعیف جدًا و معان بن رفاعۃ ضعیف

وعن أبي ذر قال: قلت: يا رسول الله أي الأنبياء كان أول؟ قال: «آدم» . قلت: يا رسول الله ونبي كان؟ قال: «نعم نبي مكلم» . قلت: يا رسول الله كم المرسلون؟ قال: «ثلاثمائة وبضع عشر جما غفيرا» وفي رواية عن أبي أمامة قال أبو ذر: قلت يا رسول الله كم وفاء عدة الأنبياء؟ قال: «مائة ألف وأربعة وعشرون ألفا الرسل من ذلك ثلاثمائة وخمسة عشر جما غفيرا»

ব্যাখ্যা: (نَعَمْ نَبِيٌّ مُكَلَّمٌ) অর্থাৎ কেবল নবী ছিলেন এমন নয়; বরং সহীফাহপ্রাপ্ত নবী ছিলেন। আল্লাহ তাঁর ওপর সহীফাহ্ অবতীর্ণ করেছেন।
(كم المُرْسَلُونَ) “রাসূল কতজন?” হাদীস থেকে বুঝা যায়, নবী ও রাসূলের মাঝে পার্থক্য রয়েছে। পার্থক্য হলো, ঐ সকল নবীদের কে রাসূল বলা হয় যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে। অপরদিকে কেবল নবী যার ওপর কিতাব নাযিল হয়নি। তাদেরকে পূর্বে শারী'আত মোতাবেক দাওয়াতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নবী ও রাসূলের মাঝে প্রসিদ্ধ পার্থক্য, রাসূল যাকে তাবলীগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর নবী ব্যাপক, নির্দেশ দেয়া হতে পারে আবার নাও হতে পারে।
(ثَلَاثمِائَة وبضع عشر جماً غفيراً) “তিনশত দশ জনের একটি বিরাট দল” নবী (সা.) রাসূলদের সংখ্যা অস্পষ্ট রেখেছেন; যাতে কেউ নিশ্চিত সংখ্যা না বলে। কারণ নিশ্চিত সংখ্যা বললে কম বেশ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
(كَمْ وَفَاءُ عِدَّةِ الْأَنْبِيَاءِ) অর্থাৎ নবীদের পূর্ণ সংখ্যা কত? নবীদের পূর্ণ সংখ্যা এক লক্ষ চব্বিশ হাজার। মুল্লা আলী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসে নবী ও রাসূলের সংখ্যা যদিও নির্ধারিত, কিন্তু এটা নিশ্চিত ও অকাট্য নয়; তাই নবী ও রাসূলদের ওপর নির্ধারিত সংখ্যায় সীমাবদ্ধ না করে মোট সংখ্যা হিসেবে ঈমান রাখতে হবে যেন কোন নবী বাদ না পড়েন এবং নবী নন এমন কেউ নবীদের ওপর ঈমানের আওতায় না ঢুকেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা

৫৭৩৮-[৪১] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: খবর শুনা চাক্ষুষ দেখার মতো নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মূসা আলায়হিস সালাম-এর সম্প্রদায় গরুর বাছুর পূজা করা সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা মূসা আলায়হিস সালাম-কে যে সংবাদ দিয়েছেন, এতে তিনি হাতে সংরক্ষিত তাওরাতের তখতাটি ফেলে দেননি, কিন্তু যখন তাদের মধ্যে গিয়ে চাক্ষুষ তাদের কর্মকাণ্ড স্বচক্ষে দেখলেন, তখন তখতাটি ছুঁড়ে ফেললেন, ফলে তা ভেঙ্গে গেল। [উপরোক্ত হাদীস তিনটি ইমাম আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ) রিওয়ায়াত: করেছেন]

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَيْسَ الْخَبَرُ كَالْمُعَايَنَةِ إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى أَخْبَرَ مُوسَى بِمَا صَنَعَ قَوْمُهُ فِي الْعِجْلِ فَلَمْ يُلْقِ الْأَلْوَاحَ فَلَمَّا عَايَنَ مَا صَنَعُوا أَلْقَى الْأَلْوَاحَ فَانْكَسَرَتْ. رَوَى الْأَحَادِيث الثَّلَاثَة أَحْمد

صحیح ، رواہ احمد (1 / 271 ح 2447 و 1 / 215 ح 1842) [و صححہ ابن حبان (الموارد : 2087 ۔ 2088) و الحاکم (2 / 321 ح 3250 ، 2 / 380 ح 3435) علی شرط الشیخین و وافقہ الذھبی و سندہ صحیح] * ھشیم بن بشیر عنعن و لکن تابعہ ابو عوانۃ و بہ صح الحدیث ۔
(صَحِيح)

وعن ابن عباس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ليس الخبر كالمعاينة إن الله تعالى أخبر موسى بما صنع قومه في العجل فلم يلق الألواح فلما عاين ما صنعوا ألقى الألواح فانكسرت. روى الأحاديث الثلاثة أحمد

ব্যাখ্যা: শোনা খবর ও স্বচক্ষে দেখা এক হয় না। এটি একটি চরম বাস্তবতা। এই বাস্তবতা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, এমনকি নবী হলেও। আবার শোনা খবরটি দেখার মতো নিশ্চিত হলেও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির ক্ষেত্রে পার্থক্য হয়ে যায়। এটি দেখাতেই হয়তো রাসূলুল্লাহ (সা.) এই বাস্তব বিষয়টি বলার পর মূসা আলায়হিস সালাম-এর ঘটনা টেনে এনেছেন এবং শোনা ও দেখার মাঝে পার্থক্যটি তুলে ধরেছেন। কারণ মূসা আলায়হিস সালাম-কে যখন আল্লাহ তা'আলা বললেন- فَاِنَّا قَدۡ فَتَنَّا قَوۡمَکَ مِنۡۢ بَعۡدِکَ وَ اَضَلَّهُمُ السَّامِرِیُّ “তুমি চলে আসার পর আমি তোমার সম্প্রদায়কে পরীক্ষায় ফেলেছি এবং সামিরী তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে। (সূরাহ্ ত্বা-হা- ২০ : ৮৫)” আল্লাহ তা'আলার দেয়া খবরটি নিশ্চয় দেখার মতোই নিশ্চিত, বরং আরো বেশি। তারপরও মূসা আলায়হিস সালাম রাগ করে তাওরাতের পাণ্ডুলিপি ফেলে দেননি। কিন্তু যখন সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে নিজ চোখে তাদের ভ্রষ্টতা অবলোকন করলেন তখন তিনি রাগে উত্তেজিত হয়ে গেলেন এবং তখতাটি ছুড়ে মারলেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন –
 وَ لَمَّا رَجَعَ مُوۡسٰۤی اِلٰی قَوۡمِهٖ غَضۡبَانَ اَسِفًا ۙ قَالَ بِئۡسَمَا خَلَفۡتُمُوۡنِیۡ مِنۡۢ بَعۡدِیۡ ۚ اَعَجِلۡتُمۡ اَمۡرَ رَبِّکُمۡ ۚ وَ اَلۡقَی الۡاَلۡوَاحَ وَ اَخَذَ بِرَاۡسِ اَخِیۡهِ یَجُرُّهٗۤ اِلَیۡهِ ؕ قَالَ ابۡنَ اُمَّ اِنَّ الۡقَوۡمَ اسۡتَضۡعَفُوۡنِیۡ وَ کَادُوۡا یَقۡتُلُوۡنَنِیۡ ۫ۖ فَلَا تُشۡمِتۡ بِیَ الۡاَعۡدَآءَ وَ لَا تَجۡعَلۡنِیۡ مَعَ الۡقَوۡمِ الظّٰلِمِیۡنَ

“তারপর যখন মূসা নিজ সম্প্রদায়ে ফিরে এলেন রাগান্বিত ও অনুতপ্ত অবস্থায়, তখন বললেন, আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা আমার কি নিকৃষ্ট প্রতিনিধিত্বটাই না করেছ। তোমরা নিজ পরোয়ারদিগারের হুকুম থেকে কি তাড়াহুড়া করে ফেললে এবং সে তখতাগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং নিজের ভাইয়ের মাথার চুল চেপে ধরে নিজের দিকে টানতে লাগলেন।” (সূরাহ্ আল-আরাফ- ৭ : ১৫০)
এতে প্রমাণিত হলো নিজ চোখে কোন ঘটনা অবলোকনে যে প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব সৃষ্টি হয় শোনা খবরে তা হয় না। (সম্পাদকীয়)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৬ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে