পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - তাওয়াক্কুল (আল্লাহর ওপর ভরসা) ও সবর (ধৈর্যধারণ) প্রসঙ্গে

৫২৯৫-[১] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমার উম্মাতের মধ্য সত্তর হাজার লোক হিসাব ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা হলো ঐ সমস্ত লোক যারা মন্ত্র-তন্ত্র করায় না, অশুভ লক্ষণে বিশ্বাস করে না এবং তারা নিজেদের পরওয়ারদিগারের ওপর ভরসা রাখে। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب التَّوَكُّل وَالصَّبْر)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِي سَبْعُونَ أَلْفًا بِغَيْرِ حِسَابٍ هُمُ الَّذِينَ لَا يَسْتَرْقُونَ وَلَا يَتَطَيَّرُونَ وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ» مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (6472) و مسلم (371 / 218)، (524) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

عن ابن عباس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «يدخل الجنة من أمتي سبعون ألفا بغير حساب هم الذين لا يسترقون ولا يتطيرون وعلى ربهم يتوكلون» متفق عليه

ব্যাখ্যা : (سَبْعُونَ أَلْفًا) ৭০ হাজার। আল্লামাহ্ ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: এর দ্বারা নির্দিষ্ট সংখ্যাই উদ্দেশ্য অথবা আধিক্য উদ্দেশ্য। আল্লামাহ্ মুবারকপূরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, প্রথমটি তথা ৭০ হাজার সংখ্যাই এখানে উদ্দেশ্য। তবে তিরমিযীর বর্ণনায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক হাজারের সাথে আরো ৭০ হাজার এবং প্রতিপালকের দুই হাতের চৌল ভর্তি।
(هُمُ الَّذِينَ لَا يَسْتَرْقُونَ) তারা ঐ সমস্ত লোক যারা ঝাড়ফুঁক করায় না। না কুরআনের আয়াত দ্বারা, না তার নাম ও গুণাবলির দ্বারা।
(وَلَا يَتَطَيَّرُونَ) তারা পাখি উড়িয়ে ভাগ্য পরীক্ষা করে না অথবা পাখি বা কোন প্রাণী বা কোন কথাকে শুভ লক্ষণ মনে করে না বরং কোন বিপদ দেখলে এই দু'আ পাঠ করে: (اَللّٰهُمَّ لَاطَيْرُكَ،وَلَا خَيْرُ إِلَّاخَيْرُكَ،وَلَا إلٰهَ غَيْرُكَ اَللّٰهُمَّ لَا يَأْتِيْ بِالْحَسَنَاتِ إِلَّا أَنْتَ وَلَا يَزْهَبُ بِالسِّئَاتِ إلَّا أَنْتَ)

অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তোমার কল্যাণ ছাড়া আর কারো নিকট কল্যাণের আশা করা যায় না, তোমার ফায়সালাই চূড়ান্ত, তুমি ছাড়া আর কেউ গায়িব জানে না। পাখিরা তো তোমারই সৃষ্টি, তারা ভালো-মন্দের ক্ষমতা রাখে না, তুমি ছাড়া কোন সত্য মা'বুদ নেই।

(وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ) তারা যাবতীয় কর্মকাণ্ডে আল্লাহর ওপর ভরসা করবে। নিহায়াহ্ গ্রন্থকার বলেন, এটা ঐ সমস্ত আওলিয়ার বৈশিষ্ট্য যারা দুনিয়ার সামগ্রীর প্রতি খেয়াল রাখেন না। অতএব এটা নির্দিষ্ট শ্রেণির লোকের সাথে সংশ্লিষ্ট। তবে সর্বসাধারণের জন্য ঝাড়ফুক এবং চিকিৎসা গ্রহণ করার অনুমোদন রয়েছে। তদুপরি যারা বিপদে ধৈর্যধারণ করবে এবং দু'আ ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার নিকট তার কষ্ট লাঘব কামনা করবে তারা ঐ সমস্ত খাস বান্দা এবং আওলিয়ার অন্তর্ভুক্ত হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী ৫/২৪৩৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - তাওয়াক্কুল (আল্লাহর ওপর ভরসা) ও সবর (ধৈর্যধারণ) প্রসঙ্গে

৫২৯৬-[২] উক্ত রাবী [ইবনু আব্বাস (রাঃ)] বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) বাইরে এসে (আমাদেরকে) বললেন, (পূর্বের নবীগণের) উম্মতদেরকে আমার সম্মুখে পেশ করা হল। (দেখলাম) একজন নবী যাচ্ছেন, তাঁর সাথে রয়েছে মাত্র একজন লোক। আরেকজন নবী, তার সাথে রয়েছে কেবল দুজন লোক। অন্য এক নবীর সাথে রয়েছে একদল লোক। একজন নবী এমনও ছিলেন, যার সাথে কেউ ছিল না।

অতঃপর দেখলাম এক বিরাট দল, যা দিগন্ত জুড়ে রয়েছে। তখন আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম: এ দলটি যদি আমার উম্মত হত। এ সময় বলা হলো, এটা মূসা (আঃ) ও তাঁর জাতি। অতঃপর আমাকে বলা হলো, আপনি ভালো করে দৃষ্টি দিন। তখন আমি দিগন্ত জোড়া একটি বিশাল দল দেখলাম। এ সময় আমাকে আবার বলা হলো, আপনি এদিক-ওদিক দেখুন। তখন আমি বিরাট দল দেখতে পেলাম, যা (এ সকল) দিগন্ত জুড়ে রয়েছে। এবার আমাকে জানানো হলো, এরা আপনার উম্মাত। এদের সামনে সত্তর হাজার লোক রয়েছে যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা ঐ সমস্ত লোক যারা অশুভ-অমঙ্গল চিহ্ন বা লক্ষণ মানে না, ঝাড়ফুঁক বা মন্ত্র-তন্ত্রের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেন না এবং (আগুনে পোড়া লোহার) দাগ লাগায় না। তারা আপন পরওয়ারদিগারের ওপর ভরসা রাখে। তখন ’উককাশাহ ইবনু মিহসান দাড়িয়ে বললেন: (হে আল্লাহর রসূল!) আল্লাহর কাছে দু’আ করুন তিনি যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তখন তিনি (সা.) এ বলে দু’আ করলেন: হে আল্লাহ! তাকেও তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করো! এরপর আরেক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে আবেদন করল; আমার জন্যও আল্লাহর কাছে দুআ করুন, তিনি যেন আমাকেও এদের মাঝে গণ্য করেন। তিনি (সা.) বললেন: এ ব্যাপারে ’উক্কাশাহ্ তোমার আগে সুযোগ নিয়ে গেছে। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب التَّوَكُّل وَالصَّبْر)

وَعَنْهُ قَالَ خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا فَقَالَ: عُرِضَتْ عَلَيَّ الْأُمَمُ فَجَعَلَ يَمُرُّ النَّبِيُّ وَمَعَهُ الرَّجُلُ وَالنَّبِيُّ وَمَعَهُ الرَّجُلَانِ وَالنَّبِيُّ وَمَعَهُ الرَّهْطُ وَالنَّبِيُّ وَلَيْسَ مَعَهُ أَحَدٌ فَرَأَيْتُ سَوَادًا كَثِيرًا سَدَّ الْأُفُقَ فَرَجَوْتُ أَنْ يَكُونَ أُمَّتِي فَقِيلَ هَذَا مُوسَى فِي قَوْمِهِ ثُمَّ قِيلَ لِي انْظُرْ فَرَأَيْتُ سَوَادًا كَثِيرًا سَدَّ الْأُفُقَ فَقِيلَ لِي انْظُرْ هَكَذَا وَهَكَذَا فَرَأَيْتُ سَوَادًا كَثِيرًا سَدَّ الْأُفق فَقيل: هَؤُلَاءِ أُمَّتُكَ وَمَعَ هَؤُلَاءِ سَبْعُونَ أَلْفًا قُدَّامَهُمْ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ هُمُ الَّذِينَ لَا يَتَطَيَّرُونَ ولايسترقون وَلَا يَكْتَوُونَ وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ فَقَامَ عُكَّاشَةُ بْنُ مِحْصَنٍ فَقَالَ: ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ. قَالَ «اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ مِنْهُمْ» . ثُمَّ قَامَ رجل فَقَالَ: ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ. فَقَالَ سَبَقَكَ بِهَا عُكَّاشَةُ. مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (5752) و مسلم (374 / 220)، (527) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

وعنه قال خرج رسول الله صلى الله عليه وسلم يوما فقال: عرضت علي الأمم فجعل يمر النبي ومعه الرجل والنبي ومعه الرجلان والنبي ومعه الرهط والنبي وليس معه أحد فرأيت سوادا كثيرا سد الأفق فرجوت أن يكون أمتي فقيل هذا موسى في قومه ثم قيل لي انظر فرأيت سوادا كثيرا سد الأفق فقيل لي انظر هكذا وهكذا فرأيت سوادا كثيرا سد الأفق فقيل: هؤلاء أمتك ومع هؤلاء سبعون ألفا قدامهم يدخلون الجنة بغير حساب هم الذين لا يتطيرون ولايسترقون ولا يكتوون وعلى ربهم يتوكلون فقام عكاشة بن محصن فقال: ادع الله أن يجعلني منهم. قال «اللهم اجعله منهم» . ثم قام رجل فقال: ادع الله أن يجعلني منهم. فقال سبقك بها عكاشة. متفق عليه

ব্যাখ্যা : (هَؤُلَاءِ أُمَّتُكَ) এরা আপনার উম্মাত। আল্লামাহ্ কিরমানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখানে (উম্মাত) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: উম্মাতুল ইজাবা অথবা উম্মাতুল ইত্তিবা। কেননা নবী (সা.) -এর উম্মাত তিন প্রকার। একটি অপরটি থেকে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। (১) উম্মাতুল ইত্তিবা, (২) উম্মাতুল ইজাবা, (৩) উম্মাতুদ দা'ওয়া। প্রথমটি দ্বারা উদ্দেশ্য যারা সৎকার্জ সম্পাদন করে। আর ২য় টি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সাধারণ মুসলিম এবং তৃতীয় প্রকার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো উক্ত দুই প্রকার ব্যতীত অন্য সকল উম্মাত যাদের প্রতি নবী (সা.) প্রেরিত হয়েছেন।

(وَمَعَ هَؤُلَاءِ سَبْعُونَ أَلْفًا) এই উম্মাতের সাথে সত্তর হাজার লোক রয়েছে। ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হয়তো এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আপনার এই উম্মাত ছাড়াও আরো ৭০ হাজার লোক রয়েছে অথবা এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আপনার উম্মতের মাঝে ৭০ হাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে। এর প্রমাণ হলো সহীহুল বুখারীর বর্ণিত হাদীস : (هٰذِه„ أُمَّتُكَ وَيَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ هَؤُلاَءِ سَبْعُونَ أَلْفًا) “এরা হলো আপনার উম্মাত এদের মধ্য থেকে ৭০ হাজার লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে”। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

(هُمُ الَّذِينَ لَا يَتَطَيَّرُونَ) তারা অর্থাৎ ৭০ হাজার লোক তারাই, যারা পাখি উড়িয়ে ভাগ্য পরীক্ষা করে না বা কুলক্ষণে বিশ্বাস করে না।

(ولايسترقون) “ঝাড়ফুঁক করায় না” এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো : কুরআন ও সহীহ হাদীস বহির্ভূত দু'আ দিয়ে ঝাড়ফুঁক করায় না। যেমন, এমন অজ্ঞাত ঝাড়ফুঁক যা শিরকমুক্ত নয়।

(وَلَا يَكْتَوُونَ) লোহা গরম করে শরীরে দাগ দেয় না। তবে প্রয়োজনে এটা করা যাবে কিন্তু এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আরোগ্য কেবল আল্লাহর ওপর ন্যস্ত শুধু দাগের কোন ক্ষমতা নেই। যেমনটি কোন কোন সাহাবী এ কাজ করেছেন। যেমন আশারায়ে মুবাশশারার অন্যতম সাহাবী সা'দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস।

(وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ) আর তারা তাদের রবের ওপর সর্বদা ভরসা করে। এই বাক্যটি পূর্বে উল্লেখিত তিনটি বিষয় : ঝাড়ফুক না করা, কুলক্ষণে বিশ্বাস না করা এবং শরীরে লোহা গরম করে দাগ লাগানো থেকে বিরত থাকার ব্যাখ্যা প্রদান করেছে। অথবা, প্রথমে নির্দিষ্ট গুণাবলি উল্লেখ করার পর আরো সাধারণভাবে আলোচনা করা হয়েছে। (ফাতহুল বারী ১১/৬৫৪১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - তাওয়াক্কুল (আল্লাহর ওপর ভরসা) ও সবর (ধৈর্যধারণ) প্রসঙ্গে

৫২৯৭-[৩] সুহায়ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ঈমানদারের ব্যাপারটাই অদ্ভূত। বস্তুত ঈমানদারের প্রতিটি কাজই তার জন্য কল্যাণকর। আর এটা একমাত্র মু’মিনদেরই বৈশিষ্ট্য। তার সচ্ছলতা অর্জিত হলে সে শোকর করে, এটা তার জন্য কল্যাণকর। তার ওপর কোন বিপদ আসলে সে ধৈর্য ধরে, এটাও তার জন্য কল্যাণকর। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب التَّوَكُّل وَالصَّبْر)

وَعَنْ صُهَيْبٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم «عجبا لأمر الْمُؤمن كُله خَيْرٌ وَلَيْسَ ذَلِكَ لِأَحَدٍ إِلَّا لِلْمُؤْمِنِ إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ» رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (64 / 2999)، (7500) ۔
(صَحِيح)

وعن صهيب قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم «عجبا لأمر المؤمن كله خير وليس ذلك لأحد إلا للمؤمن إن أصابته سراء شكر فكان خيرا له وإن أصابته ضراء صبر فكان خيرا له» رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (عجبا لأمر الْمُؤمن) ঈমানদারদের ব্যাপারটাই অদ্ভূত। অর্থাৎ সর্বদা তার জান ও মালের কল্যাণকর অবস্থার জন্য। তার সকল অবস্থায় কল্যাণ রয়েছে আর এটা মু'মিন ছাড়া অন্য কারো জন্য নেই।
(إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ) যদি তার ওপর কোন কল্যাণ আসে তথা নি'আমত ও জীবিকার প্রাচুর্যতা, স্বচ্ছলতা এবং কল্যাণকর কাজের সে যখন তাওফীক পায় তখন সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করে যা তার জন্য কল্যাণকর।
(وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ) আর যদি তার কোন অকল্যাণ হয় তখনও ধৈর্যধারণ করে। দরিদ্রতা অসুস্থতা, দুঃখ, কষ্ট, বিপদাপদ ইত্যাদিতে পতিত হয় তখনও ধৈর্যধারণ করে আর তা তার জন্য কল্যাণকর হয়।

অতএব এ হাদীস থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, এ কথা সর্বদা সঠিক নয়ঃ (أَنَّ الْفَقِيرَ الصابِرَ أَفْضَلُ مِنَ الْغَنِيِّ الشَّا كِرِ) নিশ্চয় ধৈর্যধারণকারী দরিদ্র, কৃতজ্ঞ ধনী ব্যক্তি থেকে উত্তম। বরং এ কথাটি সময়ের ভিন্নতা ও ব্যক্তির অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তির অবস্থার উপর ছেড়ে দেয়াই উত্তম। যেহেতু আল্লাহ তা'আলা বলেন, (وَ اللّٰهُ یَعۡلَمُ وَ اَنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ) “আল্লাহই ভালো জানেন, তোমরা জান না”- (সূরা আল বাক্বারাহ ২: ২১৬)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - তাওয়াক্কুল (আল্লাহর ওপর ভরসা) ও সবর (ধৈর্যধারণ) প্রসঙ্গে

৫২৯৮-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: শক্তিশালী মু’মিন দুর্বল ঈমানদার হতে অধিক উত্তম ও আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। তবে প্রত্যেকের মাঝেই কল্যাণ রয়েছে। (কেননা কল্যাণের মূলই হলো ঈমান; আর তা কমবেশি উভয় প্রকারের মুমিনের মধ্যে মওজুদ আছে)। আর (দীনি) যে কাজে তোমার উপকার হবে, তার প্রতি আগ্রহ রাখো এবং আল্লাহ তা’আলার সাহায্য কামনা করো (কিন্তু তা অর্জনে) দুর্বলতা প্রকাশ করো না। যদি তোমার কোন কাজে (চাই তা দীন সম্পর্কীয় হোক বা দুনিয়াবি ব্যাপারে হোক) কিছু ক্ষতি সাধিত হয় তখন তুমি এভাবে বলো না- “যদি আমি কাজটি এভাবে এভাবে করতাম তাহলে আমার এই এই ভালো হত।” বরং বলল, আল্লাহ এটাই ভাগ্যে রেখেছিলেন, আর তিনি যা চান তাই করেন। (لَوْ) তথা “যদি” শব্দটি শয়তানের কাজের পথকে খুলে দেয়। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب التَّوَكُّل وَالصَّبْر)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمُؤْمِنُ الْقَوِيُّ خَيْرٌ وَأَحَبُّ إِلَى اللَّهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيفِ وَفِي كُلٍّ خَيْرٌ احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ واستعن بِاللَّه ولاتعجز وَإِنْ أَصَابَكَ شَيْءٌ فَلَا تَقُلْ لَوْ أَنِّي فَعَلْتُ كَانَ كَذَا وَكَذَا وَلَكِنْ قُلْ قَدَّرَ اللَّهُ وَمَا شَاءَ فَعَلَ فَإِنَّ لَوْ تَفْتَحُ عمل الشَّيْطَان» رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (34 / 2664)، (6774) ۔
(صَحِيح)

وعن أبي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «المؤمن القوي خير وأحب إلى الله من المؤمن الضعيف وفي كل خير احرص على ما ينفعك واستعن بالله ولاتعجز وإن أصابك شيء فلا تقل لو أني فعلت كان كذا وكذا ولكن قل قدر الله وما شاء فعل فإن لو تفتح عمل الشيطان» رواه مسلم

ব্যাখ্যা : (احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ واستعن بِاللَّه ولاتعجز) তোমার উপকারী বিষয়ের প্রতি আগ্রহী হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর আর তা অর্জনে অপারগতা বা অক্ষমতা প্রকাশ করো না।
অর্থাৎ আল্লাহর আনুগত্যমূলক কাজের প্রতি আগ্রহী হও এবং তার নিকট উত্তম প্রতিদান কামনা কর। সেজন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। আর আনুগত্যমূলক কাজে অপারগতা বা অলসতা প্রকাশ করো না। এমনকি তার সাহায্য কামনার ক্ষেত্রেও না।
(وَإِنْ أَصَابَكَ شَيْءٌ فَلَا تَقُلْ لَوْ أَنِّي فَعَلْتُ كَانَ كَذَا وَكَذَا)  যদি তোমার কোন অকল্যাণ হয় তবে এ কথা বলবে না, যদি আমি এটা করতাম তাহলে এমন এমন ফল পেতাম। বরং তাক্বদীরকে মেনে নাও এবং বল, আল্লাহ যা চেয়েছেন তাই করেছেন। কেননা (لَوْ) যদি কথা বলাতে শয়তানের পথ খুলে যায়। আল্লামা কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) এ কথার ব্যাখ্যায় বলেন, কোন কোন ‘আলিম বলেন, এই নিষিদ্ধতা ঐ ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য যে এই বিশ্বাস রাখে, আমি এই কাজ না করলে এমনটি ঘটতো না। কিন্তু যে ব্যক্তি তাকে আল্লাহর ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয় এবং এই বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহ যা চেয়েছেন তাই হয়েছে, তার জন্য নিষিদ্ধ নয়। এর দলীল হলো আবূ বা সিদ্দীক (রাঃ)-এর উক্তি : (لَوْأَنَّ أَحَدَهُمْ رَفَعَ رَأْسَهٗ لَرَآنَا) যদি তাদের কেউ মাথা উঠাতো তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে দেখে ফেলত।
কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তার এই উক্তি দলীল হতে পারে না। কেননা তিনি এর দ্বারা ভবিষ্যতের কথা বলেছেন। তাক্বদীর ঘটে যাওয়ার পর এ কথা বলেছেন বলে দাবী করা সঠিক নয়। এমনিভাবে বুখারীতে ‘যদি বলা বৈধ প্রসঙ্গে যতগুলো হাদীস রয়েছে। সবগুলোর উদ্দেশ্য হলো ভবিষ্যতের সংবাদ দেয়া। তাক্বদীরের ব্যাপারে আপত্তিকর নয় বা তাতে অপছন্দনীয় কিছু নেই। তিনি এর মাধ্যমে এই সংবাদ দিয়েছেন যে, যদি ভবিষ্যতে কোন বাধা না আসে তাহলে অবশ্যই তা করবেন।

কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন, অত্র হাদীসে ‘যদি' বলার নিষিদ্ধতা বাহ্যিকভাবে অথবা সাধারণভাবে সর্বদাই নিষিদ্ধ। আর তা এই নিষেধাজ্ঞাটি ধমকসূচক, হারাম নয়। এর প্রমাণ হচ্ছে হাদীসের পরবর্তী অংশ (إِنَّ لَوْ تَفْتَحُ عمل الشَّيْطَان) কেননা যদি বলা শয়তানের পথ খুলে দেয়। অর্থাৎ অন্তরে তাক্বদীরের প্রতি অনিহা সৃষ্টি করে এবং শয়তানের দ্বারা ওয়াসওয়াসা প্রদান করে। (শারুহুন্ নাবাবী ১৬/২৬৬৫, মিরক্বাতুল মাফাতীহ ৫২৯৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৪ পর্যন্ত, সর্বমোট ৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে