৫২৯৮

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - তাওয়াক্কুল (আল্লাহর ওপর ভরসা) ও সবর (ধৈর্যধারণ) প্রসঙ্গে

৫২৯৮-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: শক্তিশালী মু’মিন দুর্বল ঈমানদার হতে অধিক উত্তম ও আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। তবে প্রত্যেকের মাঝেই কল্যাণ রয়েছে। (কেননা কল্যাণের মূলই হলো ঈমান; আর তা কমবেশি উভয় প্রকারের মুমিনের মধ্যে মওজুদ আছে)। আর (দীনি) যে কাজে তোমার উপকার হবে, তার প্রতি আগ্রহ রাখো এবং আল্লাহ তা’আলার সাহায্য কামনা করো (কিন্তু তা অর্জনে) দুর্বলতা প্রকাশ করো না। যদি তোমার কোন কাজে (চাই তা দীন সম্পর্কীয় হোক বা দুনিয়াবি ব্যাপারে হোক) কিছু ক্ষতি সাধিত হয় তখন তুমি এভাবে বলো না- “যদি আমি কাজটি এভাবে এভাবে করতাম তাহলে আমার এই এই ভালো হত।” বরং বলল, আল্লাহ এটাই ভাগ্যে রেখেছিলেন, আর তিনি যা চান তাই করেন। (لَوْ) তথা “যদি” শব্দটি শয়তানের কাজের পথকে খুলে দেয়। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب التَّوَكُّل وَالصَّبْر)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمُؤْمِنُ الْقَوِيُّ خَيْرٌ وَأَحَبُّ إِلَى اللَّهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيفِ وَفِي كُلٍّ خَيْرٌ احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ واستعن بِاللَّه ولاتعجز وَإِنْ أَصَابَكَ شَيْءٌ فَلَا تَقُلْ لَوْ أَنِّي فَعَلْتُ كَانَ كَذَا وَكَذَا وَلَكِنْ قُلْ قَدَّرَ اللَّهُ وَمَا شَاءَ فَعَلَ فَإِنَّ لَوْ تَفْتَحُ عمل الشَّيْطَان» رَوَاهُ مُسلم رواہ مسلم (34 / 2664)، (6774) ۔ (صَحِيح)

ব্যাখ্যা : (احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ واستعن بِاللَّه ولاتعجز) তোমার উপকারী বিষয়ের প্রতি আগ্রহী হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর আর তা অর্জনে অপারগতা বা অক্ষমতা প্রকাশ করো না।
অর্থাৎ আল্লাহর আনুগত্যমূলক কাজের প্রতি আগ্রহী হও এবং তার নিকট উত্তম প্রতিদান কামনা কর। সেজন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। আর আনুগত্যমূলক কাজে অপারগতা বা অলসতা প্রকাশ করো না। এমনকি তার সাহায্য কামনার ক্ষেত্রেও না।
(وَإِنْ أَصَابَكَ شَيْءٌ فَلَا تَقُلْ لَوْ أَنِّي فَعَلْتُ كَانَ كَذَا وَكَذَا)  যদি তোমার কোন অকল্যাণ হয় তবে এ কথা বলবে না, যদি আমি এটা করতাম তাহলে এমন এমন ফল পেতাম। বরং তাক্বদীরকে মেনে নাও এবং বল, আল্লাহ যা চেয়েছেন তাই করেছেন। কেননা (لَوْ) যদি কথা বলাতে শয়তানের পথ খুলে যায়। আল্লামা কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) এ কথার ব্যাখ্যায় বলেন, কোন কোন ‘আলিম বলেন, এই নিষিদ্ধতা ঐ ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য যে এই বিশ্বাস রাখে, আমি এই কাজ না করলে এমনটি ঘটতো না। কিন্তু যে ব্যক্তি তাকে আল্লাহর ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয় এবং এই বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহ যা চেয়েছেন তাই হয়েছে, তার জন্য নিষিদ্ধ নয়। এর দলীল হলো আবূ বা সিদ্দীক (রাঃ)-এর উক্তি : (لَوْأَنَّ أَحَدَهُمْ رَفَعَ رَأْسَهٗ لَرَآنَا) যদি তাদের কেউ মাথা উঠাতো তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে দেখে ফেলত।
কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তার এই উক্তি দলীল হতে পারে না। কেননা তিনি এর দ্বারা ভবিষ্যতের কথা বলেছেন। তাক্বদীর ঘটে যাওয়ার পর এ কথা বলেছেন বলে দাবী করা সঠিক নয়। এমনিভাবে বুখারীতে ‘যদি বলা বৈধ প্রসঙ্গে যতগুলো হাদীস রয়েছে। সবগুলোর উদ্দেশ্য হলো ভবিষ্যতের সংবাদ দেয়া। তাক্বদীরের ব্যাপারে আপত্তিকর নয় বা তাতে অপছন্দনীয় কিছু নেই। তিনি এর মাধ্যমে এই সংবাদ দিয়েছেন যে, যদি ভবিষ্যতে কোন বাধা না আসে তাহলে অবশ্যই তা করবেন।

কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন, অত্র হাদীসে ‘যদি' বলার নিষিদ্ধতা বাহ্যিকভাবে অথবা সাধারণভাবে সর্বদাই নিষিদ্ধ। আর তা এই নিষেধাজ্ঞাটি ধমকসূচক, হারাম নয়। এর প্রমাণ হচ্ছে হাদীসের পরবর্তী অংশ (إِنَّ لَوْ تَفْتَحُ عمل الشَّيْطَان) কেননা যদি বলা শয়তানের পথ খুলে দেয়। অর্থাৎ অন্তরে তাক্বদীরের প্রতি অনিহা সৃষ্টি করে এবং শয়তানের দ্বারা ওয়াসওয়াসা প্রদান করে। (শারুহুন্ নাবাবী ১৬/২৬৬৫, মিরক্বাতুল মাফাতীহ ৫২৯৮)