পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জ্যোতিষীর গণনা

৪৬০০-[৯] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আকাশমণ্ডলীতে যখন কোন ফায়সালা করেন, তখন সে নির্দেশে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় তাদের পাখাসমূহ নাড়াতে থাকেন। আল্লাহ তা’আলার সে নির্দেশটির আওয়াজ সে শিকলের শব্দের মতো যা কোন একটি সমতল পাথরের উপরে টেনে নেয়া হলে শোনা যায়। অতঃপর যখন মালায়িকাহ্ অন্তর হতে সে ভীতি দূর হয়ে যায়, তখন সাধারণ মালাক (ফেরেশতা) আল্লাহর নিকটতম মালাক-কে জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের রব্ কি নির্দেশ দিয়েছেন? তাঁরা বলেন, আমাদের প্রভু যা বলেছেন, তা সম্পূর্ণ সঠিকই বলেছেন। (এবং সে নির্দেশটি কি তা জানিয়ে দেন,) এরপর বলেন, আল্লাহ তা’আলা হলেন সুমহান ও মর্যাদাসম্পন্ন।

আল্লাহর নবী আরো বলেছেনঃ আল্লাহর ফায়সালাকৃত বিধান সম্পর্কে ফেরেশতাদের মধ্যে যেসব আলোচনা হয়, জীন-শায়ত্বনেরা চোরা পথে একজন আরেকজনের উপরে দাঁড়িয়ে শোনার চেষ্টা করে। বর্ণনাকারী সুফ্ইয়ান নিজের হাতের অঙ্গুলিগুলো ফাঁক করে শয়তানরা কিভাবে একজন আরেকজন হতে কিছুটা ফাঁক করে কিভাবে একজন আরেকজন হতে কাছাকাছি দাঁড়ায় তা অনুশীলন করে দেখিয়েছেন। অতঃপর যে শয়তান প্রথমে নিকট হতে শুনতে পায় সে তা তার নিচের শয়তানকে বলে দেয় এবং সে তার নিচের জনকে, এভাবে কথাটি জাদুকর ও গণকের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়।

অনেক সময় এমন হয় যে, ঐ কথাটি পৌঁছার পূর্বেই আগুনের ফুলকি তাদের ওপর নিক্ষেপ করা হয় (ফলে আর তা গণকদের পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না)। আবার কখনো তারকা নিক্ষেপ হওয়ার পূর্বেই তা তাদের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়। অতঃপর তারা ঊর্ধ্বজগতে শুনা সে (সত্য) কথাটির সাথে (নিজেদের মনগড়া) শত শত মিথ্যার মিশ্রণ ঘটিয়ে মানুষের কাছে বলে। আর যখন তাকে বলা হয় যে, অমুক দিন তুমি আমাদেরকে এই এই কথা বলেছিলে, (তা তো মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।) তখন ঐ একটি কথা দ্বারা তার সত্যতা প্রমাণ করা হয়, যা ঊর্ধ্বজগৎ হতে শ্রুত হয়েছিল। (বুখারী)[1]

عَن أبي هُرَيْرَة أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا قَضَى اللَّهُ الْأَمْرَ فِي السَّمَاءِ ضَرَبَتِ الْمَلَائِكَةُ بِأَجْنِحَتِهَا خُضْعَانًا لِقَوْلِهِ كَأَنَّهُ سِلْسِلَةٌ عَلَى صَفْوَانٍ فَإِذَا فُزِّعَ عَنْ قُلُوبِهِمْ قَالُوا: مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ؟ قَالُوا: لِلَّذِي قَالَ الْحَقَّ وهوَ العليُّ الكبيرُ فَسَمعَهَا مُسترِقوا السَّمعِ ومُسترقوا السَّمْعِ هَكَذَا بَعْضُهُ فَوْقَ بَعْضٍ «وَوَصَفَ سُفْيَانُ بِكَفِّهِ فَحَرَّفَهَا وَبَدَّدَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ» فَيَسْمَعُ الْكَلِمَةَ فَيُلْقِيهَا إِلَى مَنْ تَحْتَهُ ثُمَّ يُلْقِيهَا الْآخَرُ إِلَى مَنْ تَحْتَهُ حَتَّى يُلْقِيَهَا عَلَى لِسَانِ السَّاحِرِ أَوِ الْكَاهِنِ. فَرُبَّمَا أَدْرَكَ الشِّهَابُ قَبْلَ أَنْ يُلْقِيَهَا وَرُبَّمَا أَلْقَاهَا قَبْلَ أَنْ يُدْرِكَهُ فكذب مَعَهَا مِائَةَ كَذْبَةٍ فَيُقَالُ: أَلَيْسَ قَدْ قَالَ لَنَا يَوْمَ كَذَا وَكَذَا: كَذَا وَكَذَا؟ فَيَصْدُقُ بِتِلْكَ الْكَلِمَةِ الَّتِي سُمِعَتْ مِنَ السَّمَاءِ . رَوَاهُ البُخَارِيّ

عن ابي هريرة ان نبي الله صلى الله عليه وسلم قال اذا قضى الله الامر في السماء ضربت الملاىكة باجنحتها خضعانا لقوله كانه سلسلة على صفوان فاذا فزع عن قلوبهم قالوا ماذا قال ربكم قالوا للذي قال الحق وهو العلي الكبير فسمعها مسترقوا السمع ومسترقوا السمع هكذا بعضه فوق بعض ووصف سفيان بكفه فحرفها وبدد بين اصابعه فيسمع الكلمة فيلقيها الى من تحته ثم يلقيها الاخر الى من تحته حتى يلقيها على لسان الساحر او الكاهن فربما ادرك الشهاب قبل ان يلقيها وربما القاها قبل ان يدركه فكذب معها ماىة كذبة فيقال اليس قد قال لنا يوم كذا وكذا كذا وكذا فيصدق بتلك الكلمة التي سمعت من السماء رواه البخاري

ব্যাখ্যাঃ (إِذَا قَضَى اللهُ الْأَمْرَ فِي السَّمَاءِ) ইমাম ত্ববারানী (রহিমাহুল্লাহ) নাওআস ইবনু সাম্‘আন  থেকে মারফূ‘ সূত্রে একটি হাদীস উল্লেখ করছেন, ‘‘মহান আল্লাহ’’ যখন ওয়াহীর মাধ্যমে কথা বলেন তখন আসমান আল্লাহর ভয়ে প্রচণ্ডভাবে কাঁপতে থাকে। আসমানবাসীগণ (ফেরেশতাগণ) শুনে বেহুশ হয়ে সাজদায় লুটিয়ে পড়েন। অতঃপর সর্বপ্রথম জিবরীল (আ.) মাথা উঁচু করলে মহান আল্লাহ যা ইচ্ছা ওয়াহী থেকে তার সাথে কথা বলেন। অবশেষে তা মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) ওপর শেষ করেন। যখনই তিনি কোন আসমান অতিক্রম করেন তখন তাঁর অধিবাসীগণ তাকে জিজ্ঞেস করেন, আমাদের রব কী বলেছেন? তিনি বলেন, তিনি সত্য কথাই বলেছেন। অতঃপর যেখানে আদেশ করেন সেখানে এসে তা শেষ হয়ে যায়।

(سِلْسِلَةٌ عَلَى صَفْوَانٍ) এটা ওয়াহীর সূচনালগ্নে তার কথার মতো صلصلة كصلصلة الجرس আর তা হলো, ওয়াহীর কারণে মালায়িকাহ্’র শব্দ। ইবনু মারদুওয়াইহি ইবনু মাস্‘ঊদ  থেকে একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন, যখন আল্লাহ কোন ওয়াহী দ্বারা কথা বলেন তখন আসমানবাসী তা সমতল ভূমিতে শিকলের আওয়াজের ন্যায় একটা আওয়াজ শুনতে পায়। অতঃপর তারা ভীত হয়ে পড়ে আর তারা মনে করে, এটা কিয়ামতের নির্দেশ। তিনি পাঠ করেন حتى إذا فزع ‘‘এমনকি ভীতি দূর হয়ে যায়’’।

এ হাদীসটি মূলত ইমাম আবূ দাঊদ (রহিমাহুল্লাহ) ও অন্য একজন বর্ণনা করেছেন। লেখক এটাকে মাওকূফ সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ সিল্সিলাহ্ বলা হয়, লোহার শব্দ যখন তা নড়াচড়া করে এবং একটি অন্যটির মাঝে প্রবেশ করে। এ বর্ণনাটি ‘সোয়াদ’ বর্ণ দিয়ে বর্ণিত হয়েছে। তবে উভয় স্থানে শব্দ দু’টি একই অর্থে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং ওয়াহীর সূচনালগ্নে যে ঘণ্টা বাজার মতো শব্দ হতো এবং সমতল ভূমির উপর লোহার শব্দ উভয় আওয়াজ একই রকম।

(ফাতহুল বারী ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৮০০; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৮ম খন্ড, হাঃ ৩২২৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক (كتاب الطب والرقى) 23. Medicine and Spells

পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জ্যোতিষীর গণনা

৪৬০১-[১০] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জনৈক আনসারী সাহাবী আমাকে বর্ণনা করেছেন যে, এক রাতে তাঁরা (সাহাবীরা) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বসেছিলেন। তখন হঠাৎ একটি তারকা (আকাশ হতে) ছুটল এবং তাতে চতুর্দিক আলোকিত হয়ে গেল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করেন, আচ্ছা এভাবে তারকা ছোটাকে জাহিলিয়্যাতের যুগে তোমরা কি বলতে? তাঁরা বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রসূলই অধিক অবগত। তবে আমরা বলতাম : আজ কোন একজন বড় লোকের জন্ম হয়েছে অথবা কোন একজন বড় লোকের মৃত্যু ঘটেছে।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন ব্যক্তির জন্ম বা মৃত্যুর দরুন তারকা নিক্ষিপ্ত হয় না। প্রকৃত ব্যাপার হলো, আমাদের রব, যাঁর নাম অতীব বারাকাতময়, যখন কোন নির্দেশ দেন তখন সর্বপ্রথম আল্লাহর ’আরশ বহনকারী মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তাসবীহ পাঠ করেন। অতঃপর তাঁদের নিকটবর্তী আসমানের মালায়িকাহ্ তাসবীহ পাঠ করেন, এভাবে তাসবীহ পাঠ করার সিলসিলাহ্ পর্যায়ক্রমে দুনিয়ার আকাশে অবস্থানরত মালায়িকাহ্ পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

অতঃপর ’আরশ বহনকারী মালায়িকাহ্’র নিকটবর্তী মালায়িকাহ্ ’আরশ বহনকারীদেরকে জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের রব্ কি বলেছেন? তখন তারা আল্লাহ যা বলেছেন তা তাদেরকে বলে দেন এবং সাথে সাথে পরস্পরের জানা-জানির মধ্যে দুনিয়ার আকাশে অবস্থানরত মালায়িকাহ্ পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং চোরাপথে খবর সংগ্রহকারী জীন-শয়তান ত্বরিত গতিতে সে খবরটি সংগ্রহ করে এবং তাদের বন্ধুদের কাছে পৌঁছে দেয়। সুতরাং যে সমস্ত কথা তারা অবিকল বর্ণনা করে, এটা সঠিক ও সত্য। কিন্তু গণক ও জাদুকররা তার সাথে আরো অনেক (মিথ্যা) মিশিয়ে প্রকাশ করতে থাকে। (মুসলিম)[1]

وَعَن ابنِ عبَّاسٍ قَالَ: أَخْبَرَنِي رَجُلٌ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الْأَنْصَارِ: أَنَّهُمْ بَيْنَا جُلُوسٌ لَيْلَةً مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رُمِيَ بِنَجْمٍ وَاسْتَنَارَ فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا كُنْتُمْ تَقُولُونَ فِي الْجَاهِلِيَّةِ إِذَا رُمِيَ بِمِثْلِ هَذَا؟» قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ كُنَّا نَقُولُ: وُلِدَ اللَّيْلَةَ رَجُلٌ عَظِيمٌ وَمَاتَ رَجُلٌ عَظِيمٌ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فَإِنَّهَا لَا يُرْمَى بِهَا لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلَا لِحَيَاتِهِ وَلَكِنَّ رَبَّنَا تَبَارَكَ اسْمُهُ إِذَا قَضَى أَمر سَبَّحَ حَمَلَةُ الْعَرْشِ ثُمَّ سَبَّحَ أَهْلُ السَّمَاءِ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ حَتَّى يَبْلُغَ التَّسْبِيحُ أَهْلَ هَذِهِ السَّمَاء الدُّنْيَا ثمَّ قَالَ الَّذِي يَلُونَ حَمَلَةَ الْعَرْشِ لِحَمَلَةِ الْعَرْشِ: مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ؟ فَيُخْبِرُونَهُمْ مَا قَالَ: فَيَسْتَخْبِرُ بَعْضُ أَهْلِ السَّمَاوَاتِ بَعْضًا حَتَّى يَبْلُغَ هَذِهِ السَّمَاءَ الدُّنْيَا فَيَخْطَفُ الْجِنُّ السَّمْعَ فَيَقْذِفُونَ إِلَى أَوْلِيَائِهِمْ وَيُرْمَوْنَ فَمَا جاؤوا بِهِ عَلَى وَجْهِهِ فَهُوَ حَقٌّ وَلَكِنَّهُمْ يَقْرِفُونَ فِيهِ وَيزِيدُونَ . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابن عباس قال اخبرني رجل من اصحاب النبي صلى الله عليه وسلم من الانصار انهم بينا جلوس ليلة مع رسول الله صلى الله عليه وسلم رمي بنجم واستنار فقال لهم رسول الله صلى الله عليه وسلم ما كنتم تقولون في الجاهلية اذا رمي بمثل هذا قالوا الله ورسوله اعلم كنا نقول ولد الليلة رجل عظيم ومات رجل عظيم فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم فانها لا يرمى بها لموت احد ولا لحياته ولكن ربنا تبارك اسمه اذا قضى امر سبح حملة العرش ثم سبح اهل السماء الذين يلونهم حتى يبلغ التسبيح اهل هذه السماء الدنيا ثم قال الذي يلون حملة العرش لحملة العرش ماذا قال ربكم فيخبرونهم ما قال فيستخبر بعض اهل السماوات بعضا حتى يبلغ هذه السماء الدنيا فيخطف الجن السمع فيقذفون الى اولياىهم ويرمون فما جاووا به على وجهه فهو حق ولكنهم يقرفون فيه ويزيدون رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ مَا كُنْتُمْ تَقُولُونَ لِمِثْلِ هٰذَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ إِذَا رَأَيْتُمُوهُ এখানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানার জন্য প্রশ্ন করেননি। কারণ তিনি তার উত্তর জানতেন। বরং তার উদ্দেশ্য ছিল, তারা জাহিলী যুগে যে বিশ্বাস করত তার আলোকে উত্তর দিবে। অতঃপর তিনি তা তাদের থেকে দূর করে দিবেন এবং তার মূলকে সমূলে উৎখাত করবেন। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৮ম খন্ড, হাঃ ৩২২৪)

আলোচ্য হাদীসটি হতে বুঝা গেল যে, নক্ষত্র নিক্ষেপের সাথে কোন মহান ব্যক্তির জন্ম-মৃত্যুর সম্পর্ক থাকার ধারণা সঠিক নয়। বরং চোর শয়তানদের বিতাড়িত করার জন্যই আসমান থেকে আগুনের ফুলকি নিক্ষেপ করা হয়। [সম্পাদক]


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক (كتاب الطب والرقى) 23. Medicine and Spells

পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জ্যোতিষীর গণনা

৪৬০২-[১১] কতাদাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা এসব নক্ষত্র তিন উদ্দেশে সৃষ্টি করেছেন। ১. আকাশের শোভা বৃদ্ধি, ২. জীন-শয়তানদের বিতাড়িত করা এবং ৩. পথভোলা পথিকের দিক নির্ণয়। আর যে কেউ এছাড়া অন্য কোন উদ্দেশে বর্ণনা করে, সে মারাত্মক ভুল করে এবং নিজের ভাগ বরবাদ করে। আর এমন অসাধ্য সাধনের পিছনে পড়ে, যে বিষয়ে তার কোন জ্ঞান নেই। (বুখারী; ইমাম বুখারী তা’লীক অর্থাৎ- সানাদবিহীন অবস্থায় হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)[1]

আর ইমাম রযীন বর্ণনা করেছেন যে, এমন একটি কাজের পিছনে কষ্ট করল যা তার কোন উপকারে আসবে না এবং সে বিষয়ে তার সামান্যতম জ্ঞানও নেই। যার তথ্য জানতে আল্লাহর নবীগণ ও মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাকুল) অক্ষম রয়েছেন।

وَعَن قتادةَ قَالَ: خلقَ اللَّهُ تَعَالَى هَذِه النجومَ لثلاثٍ جَعَلَهَا زِينَةً لِلسَّمَاءِ وَرُجُومًا لِلشَّيَاطِينِ وَعَلَامَاتٍ يُهْتَدَى بهَا فَمن تأوَّلَ فِيهَا بِغَيْرِ ذَلِكَ أَخَطَأَ وَأَضَاعَ نَصِيبَهُ وَتَكَلَّفَ مَالا يَعْلَمُ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ تَعْلِيقًا وَفِي رِوَايَةِ رَزِينٍ: «تكلّف مَالا يعنيه ومالا عِلْمَ لَهُ بِهِ وَمَا عَجَزَ عَنْ عِلْمِهِ الْأَنْبِيَاء وَالْمَلَائِكَة»

وعن قتادة قال خلق الله تعالى هذه النجوم لثلاث جعلها زينة للسماء ورجوما للشياطين وعلامات يهتدى بها فمن تاول فيها بغير ذلك اخطا واضاع نصيبه وتكلف مالا يعلم رواه البخاري تعليقا وفي رواية رزين تكلف مالا يعنيه ومالا علم له به وما عجز عن علمه الانبياء والملاىكة

ব্যাখ্যাঃ (جَعَلَهَا زِينَةً لِلسَّمَاءِ وَرُجُومًا لِلشَّيَاطِينِ) অর্থাৎ মহান আল্লাহ বলেনঃ وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَجَعَلْنَاهَا رُجُومًا لِلشَّيَاطِينِ ‘‘আর আমরা দুনিয়ার আসমানকে বাতিসমূহ দ্বারা সুসজ্জিত করেছি এবং শয়তানকে তাড়ানোর জন্য নিক্ষেপযোগ্য করেছি।’’ (সূরাহ্ আল মুলক ৬৭ : ৫)

(وَعَلَامَاتٍ يُهْتَدَى بهَا) মহান আল্লাহ বলেন, وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُونَ ‘‘আর চিহ্নসমূহ যেন তারা নক্ষত্র দ্বারাও পথ পায়।’’ (সূরাহ্ আন্ নাহল ১৬ : ১৬)

(فَمن تأوَّلَ فِيهَا بِغَيْرِ ذٰلِكَ) অর্থাৎ যে ব্যক্তি নক্ষত্রের উল্লেখিত উপকার ছাড়া অন্য কোন উপকারের কথা উল্লেখ করে (أَخَطَأَ) অর্থাৎ যেন সে ঝোপে কুড়াল মারে।

(وَأَضَاعَ نَصِيبَهٗ) অর্থাৎ তার জীবনের তথা বয়সের অংশ। আর তা হলো, ইহকালে-পরকালে তার উপকার করবে ও সাহায্য করবে।

(وَتَكَلَّفَ مَالا يَعْلَمُ) অর্থাৎ এমন বিষয় যে সম্পর্কে তার কোন জ্ঞান নেই। কেননা আসমানের সংবাদ কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ব্যতীত জানা যায় না। চোর-জীনদের নিকট থেকে জ্যোতির্বিদ কিছু সংবাদ শোনে। সে যখন সেটা প্রচার করতে থাকে তখন কতক জ্ঞানী ব্যক্তি তাকে বলে, জমিনে যা হয় তুমি তো সে সব জানো না, তবে আসমানে খবর জানার দাবী তুমি কিভাবে করো?

(تكلّف مَالا يعنيه) অর্থাৎ ব্যক্তির ইসলামের সৌন্দর্য হলো, সে অনর্থক বিষয়কে পরিহার করবে।

(ومالا عِلْمَ لَهٗ بِه) এখানে সম্পূর্ণভাবে জ্ঞান নেই বোঝানো হয়েছে। আংশিক বুঝানো হয়নি। যেমনটি জ্যোতির্বিদগণ মনে করেছে। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) এ কথা বলেছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ কাতাদাহ (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক (كتاب الطب والرقى) 23. Medicine and Spells

পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জ্যোতিষীর গণনা

৪৬০৩-[১২] বর্ণনাকারী রবী’ হতেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে। অবশ্য তিনি অতিরিক্ত এটাও বলেছেনঃ আল্লাহর কসম! আল্লাহ তা’আলা নক্ষত্রের মধ্যে না কারো হায়াত নির্ধারণ করে রেখেছেন, না কারো রিযক আর না কারো মৃত্যু। বস্তুতঃ এ সমস্ত লোকেরা আল্লাহর ওপর মিথ্যারোপ করে এবং নক্ষত্রসমূহকে কোন বস্তুর হওয়া না হওয়ার কারণ সাব্যস্ত করে।[1]

وَعَن الربيعِ مِثْلُهُ وَزَادَ: وَاللَّهِ مَا جَعَلَ اللَّهُ فِي نَجْمٍ حَيَاةَ أَحَدٍ وَلَا رِزْقَهُ وَلَا مَوْتَهُ وَإِنَّمَا يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ وَيَتَعَلَّلُونَ بِالنُّجُومِ

وعن الربيع مثله وزاد والله ما جعل الله في نجم حياة احد ولا رزقه ولا موته وانما يفترون على الله الكذب ويتعللون بالنجوم

ব্যাখ্যাঃ (وَاللهِ مَا جَعَلَ اللهُ فِي نَجْمٍ حَيَاةَ أَحَدٍ) অর্থাৎ তার জন্ম অথবা তার বেশি সময় ধরে বেঁচে থাকা।

(وَلَا رِزْقَهٗ) অর্থাৎ তার সম্পদও না আবার তার প্রতিপত্তিও না।

(عَلَى اللهِ الْكَذِبَ وَيَتَعَلَّلُونَ بِالنُّجُومِ) অর্থাৎ তারা কোন নক্ষত্র উদয় হওয়াকে কোন জিনিস হওয়া না হওয়ার কারণ মনে করত, যেমনটি উল্লেখ করা হয়েছে। অথবা এর অর্থ হলো, তাদের মিথ্যাকে নক্ষত্রের সাথে সম্পর্কযুক্ত করার কথা গোপন রাখত।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ জেনে রাখ যে, শায়খ আবুল কাসিম ‘আবদুল করিম ইবনু সাওয়াজিন আল কুশায়রী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর কিতাব ‘‘মাফাতিহুল হুজাজ ফী ইবত্বালি মাযহাবিল মুনায্ যামীন’’ তাদের কথাগুলো উল্লেখ করেছেন। তাদের কথার মধ্যে ঐ ব্যক্তির কথা সবচেয়ে নিকটতম যে বলে, এ জমিন-আসমান সবকিছু আল্লাহ আপন শক্তি ও পছন্দমত তৈরি করেছেন। তিনি নিয়ম করেছেন যে, নক্ষত্রগুলো আকাশে জ্বলে থাকবে, কোন পথে চলবে, কার সাথে মিলিত হবে। যেমনিভাবে তিনি নিয়ম করেছেন যে, সহবাসের পর সন্তান জন্ম লাভ করবে, খাওয়ার পরে পরিতৃপ্তি আসবে। এ রকম নির্ধারণ করা জায়িয আছে, তবে তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যাবে না। সহবাসের পর সন্তান হবে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার, মহান আল্লাহর তৈরি করা বিধান। তবে অকাট্য এটা বলা যাবে না যে, সন্তান হবেই হবে। এটা বলা জায়িয নেই। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইবনু যিয়াদ (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক (كتاب الطب والرقى) 23. Medicine and Spells

পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জ্যোতিষীর গণনা

৪৬০৪-[১৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নক্ষত্র বিদ্যা বিষয়ে আল্লাহর বাতলানো উদ্দেশ্য ব্যতীত কিছু শিক্ষাও গ্রহণ করেছে, সে বস্তুতঃ জাদুবিদ্যার এক অংশ হাসিল করেছে। আর জ্যোতিষী প্রকৃতপক্ষ গণক, আর গণক জাদুকর। আর জাদুকর কাফির। (রযীন)[1]

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنِ اقْتَبَسَ بَابًا مِنْ عِلْمِ النُّجُومِ لِغَيْرِ مَا ذَكَرَ اللَّهُ فَقَدِ اقْتَبَسَ شُعْبَةً مِنَ السِّحْرِ الْمُنَجِّمُ كَاهِنٌ والكاهنُ ساحرٌ والساحرُ كافرٌ» . رَوَاهُ رزين

وعن ابن عباس قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من اقتبس بابا من علم النجوم لغير ما ذكر الله فقد اقتبس شعبة من السحر المنجم كاهن والكاهن ساحر والساحر كافر رواه رزين

ব্যাখ্যাঃ (مَنِ اقْتَبَسَ بَابًا مِنْ عِلْمِ النُّجُومِ) অর্থাৎ এর জ্ঞান ভাণ্ডার থেকে কোন এক প্রকার জ্ঞান শিখলো।

(لِغَيْرِ مَا ذَكَرَ اللهُ) আর তা হলো পূর্বে উল্লেখকৃত তিনটি বিষয়, যার কোনটি ফিস্ক্ব, কোনটি কুফর যা আমরা পূর্বে লিপিবদ্ধ করেছি।

(الْمُنَجِّمُ كَاهِنٌ والكاهنُ ساحرٌ) এর কারণ হলো, সে কথার মাধ্যমে মানুষকে যাদু করে।

(والساحرُ كافرٌ) কুফরী করার কারণে অথবা (আল্লাহর মতকে) গোপন করার কারণে। অর্থাৎ অনুরূপভাবে গণক (কাফির) আর জ্যোতির্বিদও অনুরূপ কাফির। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক (كتاب الطب والرقى) 23. Medicine and Spells

পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জ্যোতিষীর গণনা

৪৬০৫-[১৪] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের জন্য পাঁচ বৎসর বৃষ্টি বন্ধ করে রাখেন এবং তারপর তা বর্ষণ করেন, তবুও মানুষের একদল এই বলে আল্লাহকে অস্বীকার করবে যে, ’মিজদাহ’ নক্ষত্র কক্ষস্থানে পৌঁছার ফলেই আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে। (নাসায়ী)[1]

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَوْ أَمْسَكَ اللَّهُ الْقَطْرَ عَنْ عِبَادِهِ خَمْسَ سِنِينَ ثُمَّ أَرْسَلَهُ لَأَصْبَحَتْ طَائِفَةٌ مِنَ النَّاسِ كَافِرِينَ يَقُولُونَ: سُقِينَا بِنَوْءِ الْمِجْدَحِ . رَوَاهُ النَّسَائِيّ

وعن ابي سعيد الخدري قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لو امسك الله القطر عن عباده خمس سنين ثم ارسله لاصبحت طاىفة من الناس كافرين يقولون سقينا بنوء المجدح رواه النساىي

ব্যাখ্যাঃ (لَوْ أَمْسَكَ اللهُ الْقَطْرَ) অর্থাৎ যদি আল্লাহ বৃষ্টি বন্ধ করে রাখেন।

(عَنْ عِبَادِه خَمْسَ سِنِينَ) ‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এর দ্বারা সীমা বোঝানো হয়নি, বরং সময়ের দীর্ঘতা বুঝানো হয়েছে। কারণ এর মধ্যে দূরত্ব রয়েছে। এর কারণ হলো পাঁচ সংখ্যাটি বেশির ক্ষেত্রে স্বীকৃত নয়।

(لَأَصْبَحَتْ طَائِفَةٌ مِنَ النَّاسِ كَافِرِينَ) তারা হলো জ্যোতির্বিদ এবং যারা তাদেরকে বিশ্বাসকারী।

(بِنَوْءِ الْمِجْدَحِ) ‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটি এক প্রকার নক্ষত্রের নাম। এটাও বলা হয় যে, তা হলো তিনটি নক্ষত্র তেপায়ার মতো যা মিজদাহের সাথে সাদৃশ্য রাখে, যার তিনটি অগ্নি স্ফুলিঙ্গ আছে। এটি ‘আরবদের নিকটে বৃষ্টি আসার একটি লক্ষণ হিসেবে পরিচিত ছিল। এর অর্থ এরূপ তাদেরকে বলা হত যে, এ নক্ষত্রটি এই পাঁচ বছর যাবৎ কোথায় ছিল? এটি কি প্রতি বছর উদিত হয়, না হয় না? প্রতি বছর কী তার প্রভাব আছে, না কোন কোন বছর প্রভাব আছে? এ কথার দ্বারা নিশ্চিতভাবে তাদের বাতিল কথার প্রমাণ পাওয়া যায়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক (كتاب الطب والرقى) 23. Medicine and Spells
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৬ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে