৪৬০০

পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জ্যোতিষীর গণনা

৪৬০০-[৯] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আকাশমণ্ডলীতে যখন কোন ফায়সালা করেন, তখন সে নির্দেশে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় তাদের পাখাসমূহ নাড়াতে থাকেন। আল্লাহ তা’আলার সে নির্দেশটির আওয়াজ সে শিকলের শব্দের মতো যা কোন একটি সমতল পাথরের উপরে টেনে নেয়া হলে শোনা যায়। অতঃপর যখন মালায়িকাহ্ অন্তর হতে সে ভীতি দূর হয়ে যায়, তখন সাধারণ মালাক (ফেরেশতা) আল্লাহর নিকটতম মালাক-কে জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের রব্ কি নির্দেশ দিয়েছেন? তাঁরা বলেন, আমাদের প্রভু যা বলেছেন, তা সম্পূর্ণ সঠিকই বলেছেন। (এবং সে নির্দেশটি কি তা জানিয়ে দেন,) এরপর বলেন, আল্লাহ তা’আলা হলেন সুমহান ও মর্যাদাসম্পন্ন।

আল্লাহর নবী আরো বলেছেনঃ আল্লাহর ফায়সালাকৃত বিধান সম্পর্কে ফেরেশতাদের মধ্যে যেসব আলোচনা হয়, জীন-শায়ত্বনেরা চোরা পথে একজন আরেকজনের উপরে দাঁড়িয়ে শোনার চেষ্টা করে। বর্ণনাকারী সুফ্ইয়ান নিজের হাতের অঙ্গুলিগুলো ফাঁক করে শয়তানরা কিভাবে একজন আরেকজন হতে কিছুটা ফাঁক করে কিভাবে একজন আরেকজন হতে কাছাকাছি দাঁড়ায় তা অনুশীলন করে দেখিয়েছেন। অতঃপর যে শয়তান প্রথমে নিকট হতে শুনতে পায় সে তা তার নিচের শয়তানকে বলে দেয় এবং সে তার নিচের জনকে, এভাবে কথাটি জাদুকর ও গণকের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়।

অনেক সময় এমন হয় যে, ঐ কথাটি পৌঁছার পূর্বেই আগুনের ফুলকি তাদের ওপর নিক্ষেপ করা হয় (ফলে আর তা গণকদের পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না)। আবার কখনো তারকা নিক্ষেপ হওয়ার পূর্বেই তা তাদের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়। অতঃপর তারা ঊর্ধ্বজগতে শুনা সে (সত্য) কথাটির সাথে (নিজেদের মনগড়া) শত শত মিথ্যার মিশ্রণ ঘটিয়ে মানুষের কাছে বলে। আর যখন তাকে বলা হয় যে, অমুক দিন তুমি আমাদেরকে এই এই কথা বলেছিলে, (তা তো মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।) তখন ঐ একটি কথা দ্বারা তার সত্যতা প্রমাণ করা হয়, যা ঊর্ধ্বজগৎ হতে শ্রুত হয়েছিল। (বুখারী)[1]

عَن أبي هُرَيْرَة أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا قَضَى اللَّهُ الْأَمْرَ فِي السَّمَاءِ ضَرَبَتِ الْمَلَائِكَةُ بِأَجْنِحَتِهَا خُضْعَانًا لِقَوْلِهِ كَأَنَّهُ سِلْسِلَةٌ عَلَى صَفْوَانٍ فَإِذَا فُزِّعَ عَنْ قُلُوبِهِمْ قَالُوا: مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ؟ قَالُوا: لِلَّذِي قَالَ الْحَقَّ وهوَ العليُّ الكبيرُ فَسَمعَهَا مُسترِقوا السَّمعِ ومُسترقوا السَّمْعِ هَكَذَا بَعْضُهُ فَوْقَ بَعْضٍ «وَوَصَفَ سُفْيَانُ بِكَفِّهِ فَحَرَّفَهَا وَبَدَّدَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ» فَيَسْمَعُ الْكَلِمَةَ فَيُلْقِيهَا إِلَى مَنْ تَحْتَهُ ثُمَّ يُلْقِيهَا الْآخَرُ إِلَى مَنْ تَحْتَهُ حَتَّى يُلْقِيَهَا عَلَى لِسَانِ السَّاحِرِ أَوِ الْكَاهِنِ. فَرُبَّمَا أَدْرَكَ الشِّهَابُ قَبْلَ أَنْ يُلْقِيَهَا وَرُبَّمَا أَلْقَاهَا قَبْلَ أَنْ يُدْرِكَهُ فكذب مَعَهَا مِائَةَ كَذْبَةٍ فَيُقَالُ: أَلَيْسَ قَدْ قَالَ لَنَا يَوْمَ كَذَا وَكَذَا: كَذَا وَكَذَا؟ فَيَصْدُقُ بِتِلْكَ الْكَلِمَةِ الَّتِي سُمِعَتْ مِنَ السَّمَاءِ . رَوَاهُ البُخَارِيّ

عن ابي هريرة ان نبي الله صلى الله عليه وسلم قال اذا قضى الله الامر في السماء ضربت الملاىكة باجنحتها خضعانا لقوله كانه سلسلة على صفوان فاذا فزع عن قلوبهم قالوا ماذا قال ربكم قالوا للذي قال الحق وهو العلي الكبير فسمعها مسترقوا السمع ومسترقوا السمع هكذا بعضه فوق بعض ووصف سفيان بكفه فحرفها وبدد بين اصابعه فيسمع الكلمة فيلقيها الى من تحته ثم يلقيها الاخر الى من تحته حتى يلقيها على لسان الساحر او الكاهن فربما ادرك الشهاب قبل ان يلقيها وربما القاها قبل ان يدركه فكذب معها ماىة كذبة فيقال اليس قد قال لنا يوم كذا وكذا كذا وكذا فيصدق بتلك الكلمة التي سمعت من السماء رواه البخاري

ব্যাখ্যাঃ (إِذَا قَضَى اللهُ الْأَمْرَ فِي السَّمَاءِ) ইমাম ত্ববারানী (রহিমাহুল্লাহ) নাওআস ইবনু সাম্‘আন  থেকে মারফূ‘ সূত্রে একটি হাদীস উল্লেখ করছেন, ‘‘মহান আল্লাহ’’ যখন ওয়াহীর মাধ্যমে কথা বলেন তখন আসমান আল্লাহর ভয়ে প্রচণ্ডভাবে কাঁপতে থাকে। আসমানবাসীগণ (ফেরেশতাগণ) শুনে বেহুশ হয়ে সাজদায় লুটিয়ে পড়েন। অতঃপর সর্বপ্রথম জিবরীল (আ.) মাথা উঁচু করলে মহান আল্লাহ যা ইচ্ছা ওয়াহী থেকে তার সাথে কথা বলেন। অবশেষে তা মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) ওপর শেষ করেন। যখনই তিনি কোন আসমান অতিক্রম করেন তখন তাঁর অধিবাসীগণ তাকে জিজ্ঞেস করেন, আমাদের রব কী বলেছেন? তিনি বলেন, তিনি সত্য কথাই বলেছেন। অতঃপর যেখানে আদেশ করেন সেখানে এসে তা শেষ হয়ে যায়।

(سِلْسِلَةٌ عَلَى صَفْوَانٍ) এটা ওয়াহীর সূচনালগ্নে তার কথার মতো صلصلة كصلصلة الجرس আর তা হলো, ওয়াহীর কারণে মালায়িকাহ্’র শব্দ। ইবনু মারদুওয়াইহি ইবনু মাস্‘ঊদ  থেকে একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন, যখন আল্লাহ কোন ওয়াহী দ্বারা কথা বলেন তখন আসমানবাসী তা সমতল ভূমিতে শিকলের আওয়াজের ন্যায় একটা আওয়াজ শুনতে পায়। অতঃপর তারা ভীত হয়ে পড়ে আর তারা মনে করে, এটা কিয়ামতের নির্দেশ। তিনি পাঠ করেন حتى إذا فزع ‘‘এমনকি ভীতি দূর হয়ে যায়’’।

এ হাদীসটি মূলত ইমাম আবূ দাঊদ (রহিমাহুল্লাহ) ও অন্য একজন বর্ণনা করেছেন। লেখক এটাকে মাওকূফ সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ সিল্সিলাহ্ বলা হয়, লোহার শব্দ যখন তা নড়াচড়া করে এবং একটি অন্যটির মাঝে প্রবেশ করে। এ বর্ণনাটি ‘সোয়াদ’ বর্ণ দিয়ে বর্ণিত হয়েছে। তবে উভয় স্থানে শব্দ দু’টি একই অর্থে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং ওয়াহীর সূচনালগ্নে যে ঘণ্টা বাজার মতো শব্দ হতো এবং সমতল ভূমির উপর লোহার শব্দ উভয় আওয়াজ একই রকম।

(ফাতহুল বারী ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৮০০; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৮ম খন্ড, হাঃ ৩২২৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক (كتاب الطب والرقى)