পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৪৫৬৬-[৫৩] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাকস্থলী হলো দেহের হাওয (কূপ)। সমস্ত শিরা-উপশিরাগুলো সে হাওযের দিকেই প্রবাহিত হয়। সুতরাং যখন পাকস্থলী ভালো হয়, তখন শিরাগুলোও সারা দেহে স্বাস্থ্যকর উপাদান সরবরাহ করে। আর যখন পাকস্থলী নষ্ট হয়ে যায়, তখন শিরাগুলোও দূষিত উপাদান সরবরাহ করে থাকে।[1]

الْفَصْلُ الثَّالِثُ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمَعِدَةُ حَوْضُ الْبَدَنِ وَالْعُرُوقُ إِلَيْهَا وَارِدَةٌ فَإِذَا صَحَّتِ الْمَعِدَةُ صَدَرَتِ الْعُرُوقُ بِالصِّحَّةِ وَإِذَا فَسَدَتِ الْمَعِدَةُ صَدَرَتِ الْعُرُوقُ بِالسقمِ»

عن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم المعدة حوض البدن والعروق اليها واردة فاذا صحت المعدة صدرت العروق بالصحة واذا فسدت المعدة صدرت العروق بالسقم

ব্যাখ্যাঃ (وَإِذَا فَسَدَتِ الْمَعِدَةُ صَدَرَتِ الْعُرُوقُ بِالسقمِ) ‘‘আর যখন পাকস্থলী নষ্ট হয়ে যায়, তখন শিরাগুলোও দূষিত উপাদান সরবরাহ করে’’ অর্থাৎ অসুস্থ হয়ে যায় এবং ব্যথা সৃষ্টি হয়।

ইবনুল জাওযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাকস্থলীকে হাওযের সাথে তুলনা করেছেন এবং শরীরকে গাছের সাথে। আর তার দিকে প্রবাহিত শিরাগুলোকে গাছের শিকড়ের সাথে দৃষ্টান্ত দেয়া হয়েছে, যা হাওয থেকে পানি টেনে ডালপালা ও পাতায় নিয়ে যায়। সুতরাং পানি যদি পরিষ্কার স্বচ্ছ হয়, লবণাক্ত না হয় তবে গাছের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। অন্যথায় গাছ শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। অনুরূপই পাকস্থলির সাথে শরীরের সম্পর্ক। এজন্যই মহান আল্লাহ সুনিপুণ স্রষ্টা মানুষের শরীরে উত্তাপ সৃষ্টি করেছেন যাতে খাবারগুলো হজম হয়ে যায়। অনুরূপভাবে শিরাগুলোকে কলিজার দিকে ধাবিত করে সৃষ্টি করেছেন যাতে করে রক্তসমূহ পরিষ্কার করে দিতে পারে এবং সেই পরিষ্কার রক্ত সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারে। খাবার-পানীয় পাকস্থলিতে জমা হয়ে পরিশুদ্ধ হয়ে সমস্ত শরীরের শিরাগুলোতে শক্তি ছড়িয়ে দেয়। অতএব পাকস্থলিতে যদি ভালো খাবার থাকে তবে সমস্ত শরীর পাকস্থলি থেকে ভালো খাবার সংগ্রহ করতে পারে। আর যদি বেশি খানা-পিনা করার কারণে পাকস্থলি নষ্ট হয়ে যায় তবে পেট খারাপ হয়ে যায়, পাতলা পায়খানা হয় ফলে সমস্ত শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে, আর এটিই হলো মহান সর্বজ্ঞ পরাক্রমশালীর নির্ধারিত রীতি। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

অত্র হাদীসটি দ্বারা বাহ্যিকভাবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চিকিৎসার গভীরতার প্রমাণ পাওয়া যায়। বলা হয়ে থাকে যে, ব্যক্তির কথা, কাজ ও শিষ্টাচার তার খাওয়া-পান করা অনুসারে হয়ে থাকে। যদি হারাম ঢুকে থাকে তবে হারাম বের হবে। যদি হালাল সম্মানিত খাবার ঢুকে তবে তাই বের হবে। খাবার যেন কাজের বীজ। আর কাজ হলো উদ্ভিদের মতো যা খাবে, তাই বের হবে। হালাল খেলে হালাল কথা আর হারাম খেলে হারাম কথা।

বলা হয়ে থাকে, كُلُّ إِنَاءٍ يَتَرَشَّحُ بِمَا فِيهِ প্রতিটি পাত্র তাই বের করে, যা তার মধ্যে থাকে। মহান আল্লাহ বলেনঃ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا ‘‘তোমরা পবিত্র খাবার খাও এবং সৎ ‘আমল কর’’- (সূরাহ্ আল মু’মিনূন ২৩ : ৫১)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ মুনকার (সহীহ হাদীসের বিপরীত)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক (كتاب الطب والرقى) 23. Medicine and Spells

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৪৫৬৭-[৫৪] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করছিলেন, এ অবস্থায় তিনি জমিনে তাঁর হাত রাখতেই একটি বিচ্ছু তাঁকে দংশন করল। তৎক্ষণাৎ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জুতা দ্বারা বিচ্ছুটিকে মেরে ফেললেন। অতঃপর সালাত শেষ করে বললেনঃ বিচ্ছুটির ওপর আল্লাহর লা’নাত হোক। সে সালাত আদায়কারী-অনাদায়কারী অথবা বলেছেনঃ নবী কিংবা অন্য কাউকেও ছাড়ে না। অতঃপর তিনি কিছু লবণ ও পানি চেয়ে নিলেন এবং তা একটি পাত্রে মিশালেন, অতঃপর অঙ্গুলির দংশিত স্থানে পানি ঢালতে এবং উক্ত স্থান মুছতে লাগলেন এবং মু’আব্বাযাতায়ন (সূরাহ্ ফালাক ও নাস) দ্বারা ঝাড়তে লাগলেন। (বায়হাক্বী হাদীস দু’টি ’’শু’আবুল ঈমানে’’ বর্ণনা করেছেন।)[1]

الْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَن عَليّ قَالَ: بَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ لَيْلَةٍ يُصَلِّي فَوَضَعَ يَدَهُ عَلَى الْأَرْضِ فَلَدَغَتْهُ عَقْرَبٌ فَنَاوَلَهَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِنَعْلِهِ فَقَتَلَهَا فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ: «لَعَنَ اللَّهُ الْعَقْرَبَ مَا تَدَعُ مُصَلِّيًا وَلَا غَيْرَهُ أَوْ نَبِيًّا وَغَيْرَهُ» ثُمَّ دَعَا بملحٍ وماءٍ فَجعله فِي إِناءٍ ثمَّ جَعَلَ يَصُبُّهُ عَلَى أُصْبُعِهِ حَيْثُ لَدَغَتْهُ وَيَمْسَحُهَا وَيُعَوِّذُهَا بِالْمُعَوِّذَتَيْنِ. رَوَاهُمَا الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ

وعن علي قال بينا رسول الله صلى الله عليه وسلم ذات ليلة يصلي فوضع يده على الارض فلدغته عقرب فناولها رسول الله صلى الله عليه وسلم بنعله فقتلها فلما انصرف قال لعن الله العقرب ما تدع مصليا ولا غيره او نبيا وغيره ثم دعا بملح وماء فجعله في اناء ثم جعل يصبه على اصبعه حيث لدغته ويمسحها ويعوذها بالمعوذتين رواهما البيهقي في شعب الايمان

ব্যাখ্যাঃ ইমাম জাযারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতরত অবস্থায় একটা বিচ্ছু তাকে কামড় দিলে সালাত শেষ করে তিনি বললেন, বিচ্ছুটির ওপর আল্লাহর লা‘নাত। সে সালাত আদায়কারী বা অন্য কাউকে ছেড়ে দেয় না। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পানি ও লবণ নিয়ে আসতে বললেন, এরপর তিনি তার উপর মাসাহ করেছিলেন আর পড়ছিলেন সূরাহ্ আল ফালাক ও সূরাহ্ আন্ নাস। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাপে কাটা রোগীকে ফাতিহাহ্ সূরাহ্ দ্বারা ঝাড়ফুঁক করতেন। আবূ সা‘ঈদ  হতে সহীহ হাদীসের লেখকগণ তা বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী বৃদ্ধি করেছেন যে, সাতবার। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

আলোচ্য হাদীসটি হতে বুঝা যায়, সালাতরত অবস্থায়ও সাপ-বিচ্ছু তথা বিষাক্ত প্রাণী হত্যা করা যায়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতরত অবস্থায় জুতা দিয়ে বিচ্ছুটিকে হত্যা করেন। তাই এরূপ অবস্থার সম্মুখীন হলে আগে বিষাক্ত প্রাণীকে হত্যা করে নিয়ে পরে সালাত আদায় করতে হবে। [সম্পাদক]


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক (كتاب الطب والرقى) 23. Medicine and Spells

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৪৫৬৮-[৫৫] ’উসমান ইবনু ’আবদুল্লাহ ইবনু মাওহাব (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পরিবারের লোকেরা পানির একটি পেয়ালা দিয়ে আমাকে উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-এর কাছে পাঠালেন। তখন নিয়ম ছিল, যদি কারো ওপর বদনযর লাগত কিংবা অন্য কোন অসুখ হত তখন উম্মু সালামার কাছে একটি পত্র পাঠিয়ে দিত। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিছু পশম মুবারক বের করতেন, যা তিনি একটি রৌপ্য কৌটার মধ্যে রাখতেন। অতঃপর তিনি উক্ত পশম মুবারক পানির মধ্যে ডুবিয়ে দিতেন এবং সে পানিগুলো রোগীকে পান করানো হত। বর্ণনাকারী বলেন, আমি রূপার সে নলটির মধ্যে তাকিয়ে দেখলাম, তাতে (রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) কয়েকটি লাল বর্ণের পশম রয়েছে। (বুখারী)[1]

الْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَن عُثْمَانَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَوْهَبٍ قَالَ: أَرْسَلَنِي أَهْلِي إِلَى أُمِّ سَلَمَةَ بِقَدَحٍ مِنْ مَاءٍ وَكَانَ إِذَا أَصَابَ الْإِنْسَانَ عَيْنٌ أَوْ شَيْءٌ بَعَثَ إِلَيْهَا مِخْضَبَهُ فَأَخْرَجَتْ مِنْ شَعْرُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَتْ تُمْسِكُهُ فِي جُلْجُلٍ مِنْ فِضَّةٍ فَخَضْخَضَتْهُ لَهُ فَشَرِبَ مِنْهُ قَالَ: فَاطَّلَعْتُ فِي الْجُلْجُلِ فَرَأَيْت شَعرَات حَمْرَاء. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن عثمان بن عبد الله بن موهب قال ارسلني اهلي الى ام سلمة بقدح من ماء وكان اذا اصاب الانسان عين او شيء بعث اليها مخضبه فاخرجت من شعر رسول الله صلى الله عليه وسلم وكانت تمسكه في جلجل من فضة فخضخضته له فشرب منه قال فاطلعت في الجلجل فرايت شعرات حمراء رواه البخاري

ব্যাখ্যাঃ (إِذَا أَصَابَ الْإِنْسَانَ عَيْنٌ) অর্থাৎ চোখ লাগা বা বদনযরের কারণে অথবা চোখ উঠার (লালবর্ণ আকার ধারণ করার) কারণে।

(فِي الْجُلْجُلِ) ‘জুলজুল’ বলা হয় সেই ছোট ঘণ্টাকে যা চতুস্পদ জন্তুর গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়। ‘কামূস’ প্রণেতা বলেন, জুলজুল হলো ছোট ঘণ্টা।

(مِنْ فِضَّةٍ) ‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কা‘বাহ্ ঘরের সম্মান ও মর্যাদা প্রকাশার্থে যেভাবে রেশমী কাপড়ের গেলাফ ব্যবহার করা হয়, তদ্রূপ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পশম মুবারককে একটি রোপ্য কোটার ভিতরে রাখা হয়েছিল তার সম্মানার্থে। (فَرَأَيْت شَعرَات حَمْرَاء) অর্থাৎ খিযাব করা তথা মেহেদী করা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৮৯৬)

আলোচ্য হাদীসটি হতে বুঝা গেল, চুলে মেহেদী করা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত সুন্নাত। আমাদের সমাজে বহু লোক আছে যারা সাদা দাড়ি ও চুল মেহেদী করে না বরং ঐ অবস্থায়ই রেখে দেয়। এটি সুন্নাত বিরোধী কাজ। কাজেই সাদা দাড়ি মেহেদী দ্বারা রাঙিয়ে লাল করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য জরুরী। [সম্পাদক]


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক (كتاب الطب والرقى) 23. Medicine and Spells

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৪৫৬৯-[৫৬] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কয়েকজন সাহাবী তাঁকে (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) বললেনঃ কাম্আত (ব্যাঙের ছাতা) হলো জমিনের বসন্ত। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ব্যাঙের ছাতা তো মান্ন সদৃশ। এটার পানি চক্ষু রোগের ঔষধবিশেষ। আর ’আজওয়াহ্ (খেজুর) জান্নাতী ফল। তা বিষনাশক।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ আমি তিনটি অথবা পাঁচটি অথবা সাতটি ব্যাঙের ছাতা নিয়ে তার রস নিংড়িয়ে একটি শিশির মধ্যে রাখলাম। অতঃপর আমার এক রাতকানা দাসীর চোখের মধ্যে সে পানি সুরমার সাথে ব্যবহার করলাম। তাতে সে আরোগ্য লাভ করল। (তিরমিযী; তিনি বলেছেনঃ এ হাদীসটি হাসান।)[1]

الْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَن أبي هريرةَ إِنَّ نَاسًا مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالُوا لرسولِ الله: الْكَمْأَةُ جُدَرِيُّ الْأَرْضِ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْكَمْأَةُ مِنَ الْمَنِّ وَمَاؤُهَا شِفَاءٌ لِلْعَيْنِ وَالْعَجْوَةُ مِنَ الْجَنَّةِ وَهِيَ شِفَاءٌ مِنَ السُّمِّ» . قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: فَأَخَذْتُ ثَلَاثَةَ أَكْمُؤٍ أَوْ خَمْسًا أَوْ سَبْعًا فَعَصَرْتُهُنَّ وَجَعَلْتُ مَاءَهُنَّ فِي قَارُورَةٍ وَكَحَّلْتُ بِهِ جَارِيَةً لِي عَمْشَاءَ فَبَرَأَتْ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حسن

وعن ابي هريرة ان ناسا من اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم قالوا لرسول الله الكماة جدري الارض فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم الكماة من المن وماوها شفاء للعين والعجوة من الجنة وهي شفاء من السم قال ابو هريرة فاخذت ثلاثة اكمو او خمسا او سبعا فعصرتهن وجعلت ماءهن في قارورة وكحلت به جارية لي عمشاء فبرات رواه الترمذي وقال هذا حديث حسن

ব্যাখ্যাঃ (جُدَرِيُّ الْأَرْضِ) কমূস গ্রন্থে এসেছে যে, جُدَرِيُّ ‘জিম’ বর্ণে পেশ অথবা যবর যোগে। শরীরে ক্ষত হওয়াকে বলে। যা ফোসকা পড়ে ও পুঁজ বের হয়।

নিহায়াহ্ গ্রন্থে এসেছে, (الْكَمْأَةُ) এর সাথে সাদৃশ্য করা হয়েছে, আর جُدَرِيُّ হলো এমন গোটা (দানা) যা শিশুর শরীরে প্রকাশ পায়। যেভাবে كَمْأَةُ জমিনের মধ্য থেকে প্রকাশ পায়। ঠিক তেমনিভাবে جُدَرِىُّ চামড়ার মধ্য থেকে প্রকাশ পায়।

(الْكَمْأَةُ مِنَ الْمَنِّ) অর্থাৎ মহান আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি যা অনুগ্রহ করেছেন তার অন্তর্ভুক্ত। এটাও বলা হয় যে, مَنِّ ‘মান্ন’ এর সাদৃশ্য করা হয়েছে। আর তা হলো, সেই সুমিষ্ট মধু যা আসমান থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছিল। যা খাঁটি ছিল। তাতে কোন অসুখ ছিল না। আর অনুরূপই হলো ছত্রাক كَمْأَةُ তা পান করার ফলে কোন ক্ষতি হবে না। দ্বিতীয়টি বেশি স্পষ্ট, যেমন বর্ণিত হয়েছে- كَمْأَةُ ‘কামআহ্’ ছত্রাক مَنِّ ‘মান্ন’-এর অন্তর্ভুক্ত। আর মান্ন জান্নাত থেকে এসেছে।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যখন জাহিলী যুগের লোকেরা তাকে দোষারোপ করত এবং অতিরিক্ত (খারাপ জিনিস) মনে করত যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এ কারণে জমিন ছত্রাক আকারে বাহ্যিকভাবে তাকে প্রতিরোধ করে। তাদের বিশ্বাস যখন এরূপ ছিল তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রশংসা করলেন অর্থাৎ তা অতিরিক্তের মধ্যে শামিল নয়। বরং তা আল্লাহর অনুগ্রহ এবং বান্দার প্রতি তার দয়ার চিহ্ন। এটি ক্ষতিকারক কোন কিছু না। বরং এটি মানুষের জন্য আরোগ্য লাভের উপকরণ যেমনটিভাবে আসমান থেকে অবতীর্ণ মান্ন আরোগ্য লাভের উপকরণ।

(وَمَاؤُهَا شِفَاءٌ لِلْعَيْنِ) ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ)-এর শারহু মুসলিমে এসেছে, এটা কেবল তারই পানি। বলা হয়ে থাকে, এ পানির সাথে ঔষধ মিশ্রিত করা হলে সেই পানি। বলা হয়ে থাকে, চোখের উত্তাপ হতে ঠাণ্ডা করার জন্য কেবলমাত্র ছত্রাকের পানি আরোগ্য স্বরূপ। আর যদি অন্য অসুখের জন্য হয় তবে এ পানির সাথে অন্য ঔষধ মিশানো যায়। চোখের অসুখের জন্য কেবল এ পানি ব্যবহার করা উপযোগী এটিই সঠিক কথা। আমিও আমার যুগের একজনকে দেখেছি যার চোখের দৃষ্টি চলে যাওয়ার কারণে সুরমার সাথে এ পানি ব্যবহার করত, ফলে সে আরোগ্য লাভ করত, তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসত। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক (كتاب الطب والرقى) 23. Medicine and Spells

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৪৫৭০-[৫৭] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিনদিন ভোরে কিছু মধু চেটে খাবে, সে কোন বড় ধরনের বিপদে বা রোগে আক্রান্ত হবে না।[1]

الْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ لَعِقَ الْعَسَلَ ثَلَاثَ غَدَوَاتٍ فِي كلِّ شهر لم يصبهُ عَظِيم الْبلَاء»

وعنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من لعق العسل ثلاث غدوات في كل شهر لم يصبه عظيم البلاء

ব্যাখ্যাঃ মধু মানুষের জন্য খুবই উপকারী একটি খাবার। এটি মানব দেহে ঔষধের মতো কাজ করে। এটি পেটের অসুখের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। যেহেতু পেট সুস্থ থাকলে সমস্ত শরীর সুস্থ থাকে। তাই বলা যায়, মধু পান করলে সমস্ত শরীরও সুস্থ থাকে। মধুর মধ্যে যে আরোগ্য আছে সেটি কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। কাজেই দৃঢ় ঈমান রেখে আরোগ্য লাভের উদ্দেশে মধু পান করলে উপকৃত হওয়া যাবে ইনশা-আল্লাহ। [সম্পাদক]


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক (كتاب الطب والرقى) 23. Medicine and Spells

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৪৫৭১-[৫৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিরাময়কারী দু’টি জিনিসকে তোমরা আঁকড়ে ধরো। তা হলো মধু এবং কুরআন। (ইবনু মাজাহ)।

আর বায়হাক্বী হাদীস দু’টি শু’আবুল ঈমানে বর্ণনা করেন এবং বলেন, এ শেষোক্ত হাদীসটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী নয়, বরং এটা ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) পর্যন্ত তথা মাওকূফ।[1]

الْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: عَلَيْكُمْ بِالشِّفَاءَيْنِ: الْعَسَلِ وَالْقُرْآنِ . رَوَاهُمَا ابْنُ مَاجَهْ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ وَقَالَ: وَالصَّحِيحُ أَنَّ الْأَخِيرَ مَوْقُوفٌ عَلَى ابْنِ مَسْعُودٍ

وعن عبد الله بن مسعود قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم عليكم بالشفاءين العسل والقران رواهما ابن ماجه والبيهقي في شعب الايمان وقال والصحيح ان الاخير موقوف على ابن مسعود

ব্যাখ্যাঃ (عَلَيْكُمْ بِالشِّفَاءَيْنِ) অর্থাৎ একটি হলো ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য আর অপরটি মানসিক অথবা একটি হলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অসুখের জন্য আর অপরটি মানসিক রোগের জন্য অথবা শরীর ও দীনের স্বাভাবিক রোগের জন্য।

(الْعَسَلِ وَالْقُرْآنِ) মহান আল্লাহ মধুর গুণাগুণ বর্ণনা করতে যেয়ে বলেন-

فِيهِ شِفَاءٌ لِلنَّاسِ ‘‘এতে মানুষের জন্য আরোগ্য রয়েছে’’- (সূরাহ্ আন্ নাহল ১৬ : ৬৯)।

আর কুরআন এর বর্ণনায় মহান আল্লাহ বলেন,

مِنْ رَبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِمَا فِي الصُّدُورِ ‘‘পথনির্দেশক ও আরোগ্য যা তাদের বক্ষ রয়েছে’’- (সূরাহ্ ইউনুস ১০ : ৫৭)।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ (الْعَسَلِ وَالْقُرْآنِ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ বাণী সকল প্রকারকেই শামিল করেছে। নিরাময়ের প্রকার দু’টি : প্রকৃত এবং অপ্রকৃত।

এটা বুঝতে হবে এভাবে যে, তুমি যেমন বল, ‘‘কলম দুই জিহবার একটি’’ ‘‘মামা দু’বার একজন’’ আমি বলি, ‘‘ঝোল দুই গোশতের একটি’’ কিন্তু আল কুরআনুল কারীম প্রকাশ্য ও গোপন উভয় প্রকার অসুখ থেকে আরোগ্য দানের মধ্যে শামিল। যেমনটি আয়াতের মধ্যে বলা হয়েছে।

অন্য আয়াতের মধ্যে ইঙ্গিত আছে যে, আভ্যন্তরীণ (গুপ্ত) বিষয়ের নিরাময় হলো মূল ও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অতএব তার দ্বারা উপকার লাভ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক (كتاب الطب والرقى) 23. Medicine and Spells

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৪৫৭২-[৫৯] আবূ কাবশাহ্ আল আনমারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষমিশ্রিত বকরীর মাংস খাওয়ার কারণে নিজের মাথার তালুতে শিঙ্গা লাগান। মা’মার বলেন, বিষের কোন প্রতিক্রিয়া না থাকা সত্ত্বেও আমি আমার মাথার তালুতে শিঙ্গা লাগালাম। ফলে আমার স্মরণশক্তি লোপ পায়। এমনকি সালাতের মধ্যে আমাকে সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ বলে দিতে হত। (রযীন)[1]

الْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَن أبي كَبْشَة الْأَنْمَارِيِّ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ احْتَجَمَ عَلَى هَامَتِهِ مِنَ الشَّاةِ الْمَسْمُومَةِ قَالَ مَعْمَرٌ: فَاحْتَجَمْتُ أَنَا مِنْ غَيْرِ سُمٍّ كَذَلِكَ فِي يَافُوخِي فَذَهَبَ حُسْنُ الْحِفْظِ عَنِّي حَتَّى كُنْتُ أُلَقَّنُ فَاتِحَةَ الْكِتَابِ فِي الصَّلَاةِ. رَوَاهُ رزين

وعن ابي كبشة الانماري ان رسول الله صلى الله عليه وسلم احتجم على هامته من الشاة المسمومة قال معمر فاحتجمت انا من غير سم كذلك في يافوخي فذهب حسن الحفظ عني حتى كنت القن فاتحة الكتاب في الصلاة رواه رزين

ব্যাখ্যাঃ (احْتَجَمَ عَلٰى هَامَتِه) অর্থাৎ তার মাথার মাঝখানে অথবা তালুতে। (مِنَ الشَّاةِ الْمَسْمُومَةِ) অর্থাৎ তা খাওয়ার এবং বিষের প্রভাবের কারণে, এ বিষক্রিয়ার প্রভাবের কারণে প্রতি বছর তিনি শিঙ্গা লাগাতেন। যে বছর তিনি মারা যান, মরার সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছিলেন, ‘‘এখন আমার আবহারী রগটি ছিঁড়ে গেছে’’ এর কারণে তিনি শাহাদাতের সৌভাগ্য লাভ করেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইয়াহূদী মাহিলা বিষমিশ্রিত বকরীর গোশত হাদিয়া দিলে তিনি তার সাহাবীদেরকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা বিসমিল্লা-হ বলে ভক্ষণ কর, সুতরাং তারা তা খেয়ে ফেলল। অথচ তাদের কারো কোন ক্ষতি হয়নি। এটি হাকিম (রহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেছেন তার মুসতাদরাকের মধ্যে। তিনি এটি আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণনা করেছেন। আর বলেছেন যে, এর সানাদ সহীহ। সিরাজ প্রণেতাও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

মুবারক (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এতে আমার ভাবার বিষয় আছে, যখন প্রসিদ্ধ হাদীস প্রণেতাগণ, জীবনীকারগণ, ইতিহাসবিদগণ বর্ণনা করেছেন যে, কোন সাহাবী সেই বিষ-মিশ্রিত বকরীর গোশত খাননি কেবল বিশর ইবনু বারা’ ইবনু মা‘রূর ব্যতীত। তিনি এক লোকমা খেয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই বকবীর গোশত ঢেলে দিতে অথবা মাটির নিচে পুঁতে দিতে বলেন। তারা মতভেদ করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি সেই ইয়াহূদী মহিলাকে হত্যা করার নির্দেশ দেন, না তাকে মাফ করে দেন। সঠিক মত হলো তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার পক্ষ থেকে তাকে মাফ করে দেন। তবে বিশর ইবনু বারা’ ইবনু মা‘রূর এর হত্যার ক্বিসাস স্বরূপ তাকে হত্যা করার নির্দেশ দেন। আর আমি মনে করি এ বর্ণনার মধ্যে কঠিন ভুল অথবা পবিত্র অপছন্দ রয়েছে। মহান আল্লাহই ভালো জানেন। আমি বলছি যদি হাকিম-এর বর্ণনাটি বিশুদ্ধও হয় তবে সম্ভবত তার বর্ণনাটিও বেশি হবে। আল্লাহই ভালো জানেন।

(مِنْ غَيْرِ سُمٍّ كَذٰلِكَ) অর্থাৎ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কারণে লাগিয়ে ছিলেন ঐ রকম কারণ ব্যতীত। এটি ছিল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অতিরিক্ত অনুসরণ করার কারণে। অথবা তিনি ধারণা করেছিলেন যে, মাথার মাঝখানে শিঙ্গা লাগানো কাজটা বিষের কারণে না হলেও উপকারী হবে। তাই আমি শিঙ্গা লাগালাম।

(فِي الصَّلَاةِ) তার বর্ণনা দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, তার এ সমস্যা সাময়িক কিছুদিনের জন্য ছিল। তারপর তিনি সুস্থ হয়ে যান। সম্ভবত এটা হয়েছিল তার অধিক রক্ত রক্ষণের কারণে। আর তার শিঙ্গা লাগানো যথাযথ কারণে হয়নি। মহান আল্লাহই ভালো জানেন। এছাড়া অনেক হাদীসে বলা হয়েছে যে, শিঙ্গা লাগানো অনেক উপকারী চিকিৎসা। এতে অনেক রোগ হতে আরোগ্য লাভ হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ তাহকীক অপেক্ষমাণ
বর্ণনাকারীঃ আবূ কাবশাহ্ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক (كتاب الطب والرقى) 23. Medicine and Spells

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৪৫৭৩-[৬০] নাফি’ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) আমাকে বললেনঃ হে নাফি’! আমার শরীরে রক্ত টগবগ করছে, অতএব একজন যুবক শিঙ্গাওয়ালা ডেকে আনো। বালক কিংবা বৃদ্ধ ব্যক্তিকে এনো না। নাফি’ বলেন, অতঃপর ইবনু ’উমার(রাঃ) বললেনঃ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, খালি পেটে শিঙ্গা লাগানো শরীরের জন্য খুবই ফলপ্রসূ! তাতে জ্ঞান ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। সুতরাং যে কেউ শিঙ্গা লাগাতে চায়, সে যেন আল্লাহর নামে ভরসা করে বৃহস্পতিবারে শিঙ্গা লাগায়। শুক্র, শনি ও রবিবারে যেন শিঙ্গা না লাগায়।

আবার সোম ও মঙ্গলবারে শিঙ্গা লাগাবে, কিন্তু বুধবারে শিঙ্গা লাগাবে না। কেননা আইয়ূব (আ.) বুধবারেই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আর কুষ্ঠ ও শ্বেত রোগ বুধবার দিনে অথবা রাত্রেই জন্ম লাভ করে। (ইবনু মাজাহ)[1]

الْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَن نافعٍ قَالَ: قَالَ ابنُ عمر: يَا نَافِع يَنْبغ بِي الدَّمُ فَأْتِنِي بِحَجَّامٍ وَاجْعَلْهُ شَابًّا وَلَا تَجْعَلهُ شَيخا وَلَا صَبيا. وَقَالَ ابْنِ عُمَرُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «الْحِجَامَةُ عَلَى الرِّيقِ أَمْثَلُ وَهِيَ تُزِيدُ فِي الْعَقْلِ وَتُزِيدُ فِي الْحِفْظِ وَتُزِيدُ الْحَافِظَ حِفْظًا فَمَنْ كَانَ مُحْتَجِمًا فَيَوْمَ الْخَمِيسِ عَلَى اسْمِ اللَّهِ تَعَالَى وَاجْتَنِبُوا الْحِجَامَةَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَيَوْمَ السَّبْتِ وَيَوْمَ الْأَحَدِ فَاحْتَجِمُوا يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَيَوْمَ الثُّلَاثَاءِ وَاجْتَنِبُوا الْحِجَامَةَ يَوْمَ الْأَرْبِعَاءِ فَإِنَّهُ الْيَوْمُ الَّذِي أُصِيبَ بِهِ أَيُّوبُ فِي الْبَلَاءِ. وَمَا يَبْدُو جُذَامٌ وَلَا بَرَصٌ إِلَّا فِي يَوْمِ الْأَرْبِعَاءِ أَوْ لَيْلَةِ الأربعاءِ» . رَوَاهُ ابنُ مَاجَه

وعن نافع قال قال ابن عمر يا نافع ينبغ بي الدم فاتني بحجام واجعله شابا ولا تجعله شيخا ولا صبيا وقال ابن عمر سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول الحجامة على الريق امثل وهي تزيد في العقل وتزيد في الحفظ وتزيد الحافظ حفظا فمن كان محتجما فيوم الخميس على اسم الله تعالى واجتنبوا الحجامة يوم الجمعة ويوم السبت ويوم الاحد فاحتجموا يوم الاثنين ويوم الثلاثاء واجتنبوا الحجامة يوم الاربعاء فانه اليوم الذي اصيب به ايوب في البلاء وما يبدو جذام ولا برص الا في يوم الاربعاء او ليلة الاربعاء رواه ابن ماجه

ব্যাখ্যাঃ (فِى الدَّمُ) ঝর্ণার ভিতর পানি বেশি হলে যেমন টগবগ করে ঠিক তেমনিভবে রক্তও বেশি হওয়ার কারণে টগবগ করছে। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এতে সাদৃশ্যতা রয়েছে, অর্থাৎ আমার শরীরে রক্ত টগবগ করে যেভাবে ঝর্ণার ভিতর পানি টগবগ করে।

(الْحِجَامَةُ عَلَى الرِّيقِ) অর্থাৎ খাওয়ার ও পান করার পূর্বে তথা খালি পেটে শিঙ্গা লাগাবে।

(أَيُّوبُ فِي الْبَلَاءِ) বাহ্যিকভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, আইয়ূব (আ.)-এর রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ হলো বুধবারে শিঙ্গা লাগানো। আবার মুফাস্সিরগণ অন্যান্য অনেক কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। ঐগুলোর সবটিই হতে পারে অথবা ঐ দিন কতক প্রিয় বান্দার জন্য তিরস্কারের ঘোষণা হয়েছে। যেমন- কতক শত্রুর জন্য শাস্তির সময় ঘোষণা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন- ﴿فِي يَوْمِ نَحْسٍ مُسْتَمِرٍّ﴾ ‘‘এটাকে শক্তিশালী করে’’- (সূরাহ্ আল কামার ৫৪ : ১৯)। মহান আল্লাহর বাণী- (وَمَا يَبْدُو) অর্থাৎ যা প্রকাশ করা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ নাফি‘ (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক (كتاب الطب والرقى) 23. Medicine and Spells

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৪৫৭৪-[৬১] মা’ক্বিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন চান্দ্রমাসের সতের তারিখ মঙ্গলবারে শিঙ্গা লাগানো গোটা বৎসরের রোগের জন্য চিকিৎসা।

[ইমাম আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ)-এর শাগরেদ হারব ইবনু ইসমা’ঈল আল কিরমানী বলেনঃ তবে এ হাদীসটির সানাদ নির্ভরযোগ্য নয়। মুনতাকা’ কিতাবেও অনুরূপভাবে উল্লেখ রয়েছে।][1]

الْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْحِجَامَةُ يَوْمُ الثُّلَاثَاءِ لِسَبْعَ عَشْرَةَ مِنَ الشَّهْرِ دَوَاءٌ لِدَاءِ السَّنَةِ» . رَوَاهُ حَرْبُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ الْكِرْمَانِيُّ صَاحِبُ أَحْمَدَ وَلَيْسَ إِسْنَادُهُ بِذَاكَ هَكَذَا فِي الْمُنْتَقى

وعن معقل بن يسار قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الحجامة يوم الثلاثاء لسبع عشرة من الشهر دواء لداء السنة رواه حرب بن اسماعيل الكرماني صاحب احمد وليس اسناده بذاك هكذا في المنتقى

ব্যাখ্যাঃ নিঃসন্দেহে শিঙ্গা লাগানো একটি উপকারী চিকিৎসা। বিশেষ করে বিষ ব্যথার জন্য এটা খুবই উপকারী। পাকস্থলি থেকে সমস্ত শরীরে রক্ত ও শক্তি সঞ্চার করে। রক্তের গতি ঠিক থাকলে দেহও সুস্থ থাকে। তাই রক্তের গতি ঠিক রাখবার জন্য শিঙ্গা লাগানো খুবই উপকারী একটি চিকিৎসা। এতে মানুষের মন-মেজাজ এবং শরীর স্বাভাবিক থাকে। যখনই প্রয়োজনবোধ হয় তখনই লাগানো যায়। তবে কোন চান্দ্রমাসের সতের তারিখ মঙ্গলবারে শিঙ্গার লাগানো গোটা বৎসরের রোগের জন্য চিকিৎসাস্বরূপ। অর্থাৎ বাহ্যিকভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, ঐ বৎসর তাকে কোন রোগ আক্রান্ত করতে পারবে না। আল্লাহই ভালো জানেন। [সম্পাদক]


হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক (كتاب الطب والرقى) 23. Medicine and Spells

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৪৫৭৫-[৬২] আর অবশ্য রযীন অনুরূপ হাদীস আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন।

الْفَصْلُ الثَّالِثُ

وروى رزين نَحوه عَن أبي هُرَيْرَة

وروى رزين نحوه عن ابي هريرة

হাদিসের মানঃ তাহকীক অপেক্ষমাণ
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক (كتاب الطب والرقى) 23. Medicine and Spells
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১০ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে