পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - জনগণের প্রতি শাসকের সহনশীলতা প্রদর্শন করা

৩৭২২-[১] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোনো কাজে কোনো সাহাবীকে পাঠাতেন তখন বলতেন, তোমরা জনগণকে আশার বাণী শুনাবে। হতাশাব্যঞ্জক কথা বলে তাদের জন্য অবহেলা-ঘৃণা সৃষ্টি করবে না। তাদের সাথে সহজ-সরল বিধান নীতি ব্যবহার করবে, কঠোরতা অবলম্বন করবে না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ مَا عَلَى الْوُلَاةِ مِنَ التَّيْسِيْرِ

عَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا بَعَثَ أَحَدًا مِنْ أَصْحَابِهِ فِي بَعْضِ أَمْرِهِ قَالَ: «بَشِّرُوا وَلَا تُنَفِّرُوا وَيَسِّرُوا وَلَا تُعَسِّرُوا»

عن ابي موسى قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا بعث احدا من اصحابه في بعض امره قال بشروا ولا تنفروا ويسروا ولا تعسروا

ব্যাখ্যা: (عَنْ أَبِىْ مُوسٰى قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ إِذَا بَعَثَ أَحَدًا) ‘‘কাউকে পাঠাতেন’’ অর্থাৎ পাঠাতে ইচ্ছা করতেন।

أَمْرِه (مِنْ أَصْحَابِه فِىْ بَعْضِ أَمْرِه) অর্থাৎ নিজের কোনো কর্মের জন্য না বরং রাষ্ট্রের কোনো দায়িত্ব দিয়ে।

(قَالَ : بَشِّرُوْا) অর্থাৎ মানুষদেরকে আল্লাহ প্রদত্ত সাওয়াব যা তিনি সৎকর্মের জন্য দান করেন তা জানিয়ে দাও। এখানে (بَشِّرُوْا) শব্দ বলে যে সম্বোধন করা হয়েছে তার দু’টি দিক হতে পারে। কারণ (بَشِّرُوْا) শব্দটি হলো বহুবচন শব্দ, এমতাবস্থায় এর মাধ্যমে সম্বোধনটি যাকে পাঠাতেন তার জন্য হতে পারে অথবা বিষয়টি সকলের ক্ষেত্রে ব্যাপক হতে পারে।

(وَلَا تُنَفِّرُوْا) অর্থাৎ এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষদেরকে জাহান্নামের শাস্তির ভয় দেখাতে গিয়ে এত বাড়াবাড়ি করা উচিত নয় যে, তারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যায় তাদের পাপের কারণে।

অথবা এটা বুঝানো হয়েছে যে, কল্যাণ লাভের উপর জোর দিয়ে আনুগত্যমূলক কাজ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। অত্যাচার কঠোরতার ভয় দেখিয়ে আল্লাহর আনুগত্য থেকে বিমুখ করে দিও না।

উপরোক্ত বাক্যটির দু’টি দিক আছে, একটি হলো সুসংবাদ দাও, অপরটি হলো বিমুখ করে দিও না। দু’টি বাক্যই পরস্পর সামঞ্জস্যপূর্ণ।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ উক্ত বাক্য দু’টি রূপকভাবে পরস্পর বিরোধী কারণ যদি বাস্তবিক বিপরীতমুখী হতো তাহলে ইবারতটি হতো بَشِّرُوا وَلَا تُنْذِرُوا، وَاسْتَأْنِسُوا وَلَا تُنَفِّرُوا অর্থাৎ সুসংবাদ দাও ভয় দেখাইও না, দয়াপরবশ হও, বিমুখ করিও না। তাহলে দেখা যায় এখানে সুসংবাদ প্রদান, সতর্কীকরণ, দয়াপরবশ ও বিমুখ করা সবগুলোকেই বুঝাচ্ছেন। তাই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইবারতই এখানে উপযুক্ত এবং তাঁর হাদীস থেকেও এটা বুঝা যায় যে, মানুষদেরকে সতর্ক করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘‘তুমি কুরআনের মাধ্যমে সতর্ক কর তাদেরকে যারা ভয় করে।’’ (সূরা আল আন্‘আম ৬ : ১৫)

অন্য আয়াতে আছে, ‘‘তারা যেন তাদের জাতিকে সতর্ক করে।’’ (সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ১২২)

সতর্ক করার প্রয়োজনীয়তা এজন্য বেশী যে, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক বিষয়গুলো শুধুমাত্র সুসংবাদ দিয়েই পূর্ণ হয় না সেখানে সতর্কীকরণ বা নোটিশ জারি করতে হয়।

(وَيَسِّرُوْا) অর্থাৎ যাকাত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের ওপর সহজনীতি অবলম্বন করো।

(وَلَا تُعَسِّرُوْا) অর্থাৎ মানুষের ওপর চড়াও হয়ো না। এখানে চড়াও কয়েক ধরনের হতে পারে- (ক) তাদের ওপর যাকাত যা ফরয হয়েছে তার চেয়ে বেশী গ্রহণ করা। (খ) উত্তমটি গ্রহণ করা। (গ) তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে তল্লাশী করা। (ঘ) তাদের অবস্থা সম্পর্কে গোয়েন্দাগীরী করা ইত্যাদি। (ফাতহুল বারী ১ম খন্ড, হাঃ ৬৯; শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৭৩২; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৮২৭; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - জনগণের প্রতি শাসকের সহনশীলতা প্রদর্শন করা

৩৭২৩-[২] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের সাথে উদার ব্যবহার করো, কঠোরতা পরিহার করো, তাদেরকে সান্ত্বনা দাও এবং ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দিয়ো না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ مَا عَلَى الْوُلَاةِ مِنَ التَّيْسِيْرِ

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم: «يسوا وَلَا تُعَسِّرُوا وَسَكِّنُوا وَلَا تُنَفِّرُوا»

وعن انس قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يسوا ولا تعسروا وسكنوا ولا تنفروا

ব্যাখ্যা: (وَلَا تُعَسِّرُوْا) অর্থাৎ তোমরা মানুষের ওপর এমন বিষয় চাপিয়ে দিও না যাতে তারা ঐ বিষয়টি অস্বীকার করতে বাধ্য হয়।

‘‘আন্ নিহায়াহ্’’ গ্রন্থকারও একই কথা বলেছেনঃ لَا تُكَلِّفُونَهُمْ بِمَا يَحْمِلُهُمْ عَلَى النُّفُورِ অর্থাৎ তাদের কাঁধে এমন বোঝা চাপিয়ে দিও না, যাতে তারা তা ছাড়তে বাধ্য হয়। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬১২৫; শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৭৩৪; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - জনগণের প্রতি শাসকের সহনশীলতা প্রদর্শন করা

৩৭২৪-[৩] ইবনু আবূ বুরদাহ্ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদিন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দাদা আবূ মূসা ও মু’আয (রাঃ)-কে ইয়ামানে পাঠালেন এবং অতঃপর বললেনঃ তোমরা মানুষের জন্য সহজসাধ্য কাজ করবে, কঠিন ও কষ্টদায়ক কাজ চাপিয়ে দিও না। তাদেরকে সুসংবাদ দাও, হতাশা ও নৈরাশ্যজনক কথা তাদেরকে শুনাও না। পরস্পর ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাজ করবে, মতানৈক্য করবে না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ مَا عَلَى الْوُلَاةِ مِنَ التَّيْسِيْرِ

وَعَن ابنِ أَبِي بُرْدَةَ قَالَ: بَعَثَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَدَّهُ أَبَا مُوسَى وَمُعَاذًا إِلَى الْيَمَنِ فَقَالَ: «يَسِّرَا وَلَا تُعَسِّرَا وَبَشِّرَا وَلَا تُنَفِّرَا وَتَطَاوَعَا وَلَا تَخْتَلِفَا»

وعن ابن ابي بردة قال بعث النبي صلى الله عليه وسلم جده ابا موسى ومعاذا الى اليمن فقال يسرا ولا تعسرا وبشرا ولا تنفرا وتطاوعا ولا تختلفا

ব্যাখ্যা: (قَالَ : بَعَثَ النَّبِىُّ ﷺ جَدَّه أَبَا مُوسٰى وَمُعَاذًا) লেখকের বাহ্যিক বাচনভঙ্গি থেকে মনে হচ্ছে যে, আবূ মূসা আবূ বুরদার দাদা কিন্তু বিষয়টি তা নয় বরং আবূ মূসা হলেন তার পিতা। সুতরাং সঠিক হলো এভাবে বলা ‘আব্দুল্লাহ বিন আবূ বুরদাহ্ তিনি তার পিতা থেকে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দাদা আবূ মূসাকে পাঠালেন এভাবেই ইমাম বুখারী-মুসলিম বিন ইবরাহীম থেকে বর্ণনা করেছেন। কোনো এক নুসখাতে ইবনু আবূ বুরদাহ্ থেকে বর্ণনা করেছেন বলে পাওয়া যায় এটাতে কোনো সমস্যা নেই এমনটাই কতকের মত উল্লেখ করেছেন। অপরদিকে কেউ কেউ বলেন, বুখারীর বর্ণনা মতে ইবনু আবূ বুরদাহ্ বলেন, আমি আমার আব্বাকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার আববা ও মু‘আয বিন জাবাল -কে পাঠালেন ইয়ামান দেশে। কেউ কেউ ‘‘জামিউল উসূল’’ নামক কিতাব থেকে বর্ণনা করেন বিলাল বিন আবূ বুরদাহ্ বিন মূসা আল আশ্‘আরী -কে বাসরার শাসনকর্তা বানানো হয়েছিল, তিনি তার পিতা ও অন্যান্যদের নিকট থেকে শুনেছেন। তার থেকে কাতাদাহ এবং একদল বড় ‘আলিম হাদীস বর্ণনা করেছেন।

(وَلَا تَخْتَلِفَا) অর্থাৎ যে কোনো বিষয়ে তোমরা পরস্পর মতবিরোধ করবে না। কেননা তোমরা দু’জনে যদি মতবিরোধে লিপ্ত হও তাহলে তোমাদের দেখাদেখি তোমাদের অধিনস্থরাও মতবিরোধ করবে। আর তখনই পরস্পর শত্রুতা, যুদ্ধ ইত্যাদি সংগঠিত হবে।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ উপরের তিনটি হাদীস পরস্পর সমার্থক, তাই একনিষ্ঠ ইসলামের কোনো ব্যাপারে কঠোর চাপ প্রয়োগ করা উচিত নয়।

মহান আল্লাহ বলেছেনঃ ‘‘আল্লাহ তোমাদের দীনের ব্যাপারে কষ্টারোপ করেননি’’- (সূরা আল হজ্জ/হজ ২২ : ৭৮)। অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে সহজ করে দিয়েছেন। সুতরাং এখান থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, ইসলামী শারী‘আহ্ সহজ কঠিন নয়। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬১২৪; শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৭৩৩; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - জনগণের প্রতি শাসকের সহনশীলতা প্রদর্শন করা

৩৭২৫-[৪] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত দিবসে প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকদের জন্য একটি করে পতাকা উত্তোলিত (খাড়া) করা হবে, আর বলা হবে- এটা অমুকের পুত্র, অমুকের বিশ্বাসঘাতকতার দৃষ্টান্ত। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ مَا عَلَى الْوُلَاةِ مِنَ التَّيْسِيْرِ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ الْغَادِرَ يُنْصَبُ لَهُ لِوَاءٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُقَالُ: هَذِهِ غَدْرَةُ فُلَانِ بْنِ فُلَانٍ

وعن ابن عمر ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الغادر ينصب له لواء يوم القيامة فيقال هذه غدرة فلان بن فلان

ব্যাখ্যা: হাদীসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ غَادِرَ (গা-দির) শব্দের অর্থ হলো অঙ্গীকার ভঙ্গকারী। কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ «الْغَدْرُ فِي الْأَصْلِ تَرْكُ الْوَفَاءِ» অর্থাৎ ‘‘গা-দির’’ অর্থ অঙ্গীকার ভঙ্গ করা। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬১৭৮; শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৭৩৫; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৭৫৩; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৫৮১; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - জনগণের প্রতি শাসকের সহনশীলতা প্রদর্শন করা

৩৭২৬-[৫] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত দিবসে প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকদের জন্য একটি করে পতাকা দেখা যাবে, যার মাধ্যমে তার পরিচয় পাওয়া যাবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ مَا عَلَى الْوُلَاةِ مِنَ التَّيْسِيْرِ

وَعَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لِكُلِّ غَادِرٍ لِوَاءٌ يومَ القيامةِ يُعرَفُ بِهِ»

وعن انس عن النبي صلى الله عليه وسلم قال لكل غادر لواء يوم القيامة يعرف به

ব্যাখ্যা: কোনো এক বর্ণনায় (لِكُلِّ غَادِرٍ لِوَاءٌ) রয়েছে, সেখানে (يَوْمَ الْقِيَامَةِ) শব্দটিতে নেই যাতে করে বুঝতে পারা যায় যে, এ ব্যক্তি ধোঁকাবাজ, এজন্য তার জন্য একটি ঝান্ডা থাকবে।

ইমাম আহমাদ ও ইমাম মুসলিম, ইবনু মাস্‘ঊদ থেকে, ইমাম মুসলিম এককভাবে ইবনু ‘উমার থেকে, ইমাম ইমাম আহমাদ ও ইমাম আবূ দাঊদ আত্ তায়ালিসী (রহঃ) থেকে, তার শব্দ রয়েছে,

أَنَّ لِكُلِّ غَادِرٍ لِوَاءً يَوْمَ الْقِيَامَةِ (يُعْرَفُ بِه)

অর্থাৎ প্রত্যেক ধোঁকাবাজের জন্য একটি ঝান্ডা লাগানো থাকবে যার দ্বারা তাকে চেনা যাবে। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩১৮৬; শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৭৩৭; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - জনগণের প্রতি শাসকের সহনশীলতা প্রদর্শন করা

৩৭২৭-[৬] আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকদের নিতম্বের সাথে তার জন্য (অপরাধ অনুপাতে) একটা করে পতাকা রাখা হবে।

অপর বর্ণনাতে আছে, কিয়ামত দিবসে প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকদের জন্য তার বিশ্বাসঘাতকতার পরিমাণ অনুপাতে পতাকা উত্তোলিত হবে। সাবধান! রাষ্ট্র প্রধানের বিশ্বাসঘাতকতাই হবে সর্ববৃহৎ (অপরাধ)। (মুসলিম)[1]

بَابُ مَا عَلَى الْوُلَاةِ مِنَ التَّيْسِيْرِ

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لِكُلِّ غَادِرٍ لِوَاءٌ عِنْدَ اسْتِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «لِكُلِّ غَادِرٍ لِوَاءٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرْفَعُ لَهُ بِقَدْرِ غَدْرِهِ أَلا وَلَا غادر أعظم مِن أميرِ عامِّةٍ» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي سعيد عن النبي صلى الله عليه وسلم قال لكل غادر لواء عند استه يوم القيامة وفي رواية لكل غادر لواء يوم القيامة يرفع له بقدر غدره الا ولا غادر اعظم من امير عامة رواه مسلم

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে ধোঁকাবাজের জন্য ঝান্ডা স্থাপনের কারণ হলো যাতে করে সকলেই বুঝতে পারে যে, সে একজন প্রতারক, ধোঁকাবাজ এবং ঝান্ডা নিতম্বে স্থাপনের কারণ হলো লাঞ্ছনার পরিমাণ বৃদ্ধিকরণ। অথবা এ কারণে যে, যেহেতু সম্মানের পতাকা থাকে সামনে, সুতরাং অসম্মানের পতাকা পিছনে থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

সহীহ মুসলিম-এর ব্যাখ্যা গ্রন্থে এসেছে, «اللِّوَاءِ» বলা হয় এমন বড় পতাকা যা বড় যুদ্ধ দলের কমান্ডার উঁচু করে রাখে অথবা বড় দলের বাহকরা সে পতাকা নিয়ে অগ্রে থাকে এবং লোকজন তার পিছনে যায়।

হাফিয ইবনু হাজার ‘আসকালানী (রহঃ) বলেনঃ «اللِّوَاءِ» হলো ঐ পতাকা যা যুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এটা যার হাতে থাকে তিনি হলেন দলপতি মাঝে মধ্যে এটা দলপতি উঁচু করে রাখে, মাঝে মধ্যে সৈন্যদলের সামনে রাখা হয়। ‘আরবী ভাষাবিদগণের একটি দল বলেন, «الرَّايَةُ» এবং «اللِّوَاءِ» শব্দ দু’টি সমার্থক শব্দ।

(وَلَا غَادِرَ أَعْظَمُ مِنْ أَمِيْرِ عَامِّةٍ) এখানে হাদীসের এ অংশটিতে বলা হয়েছে বড় কোনো সৈন্যদলের নেতৃত্ব নিয়ে। তারপর যদি তাদের ধোঁকা দেয়া হয় তাহলে এটিই হলো সর্বাধিক বড় ধোঁকাবাজী, কারণ এতে আল্লাহর সাথে বেঈমানী করা হয় এমনকি মুসলিমদের সাথেও বেঈমানী করা হয়।

ইমাম নববী (রহঃ) বলেনঃ হাদীসের এ অংশটিতে ধোঁকাবাজী সম্পূর্ণ হারাম করা হয়েছে, বিশেষ করে কোনো বড় সেনাদলের নেতার জন্য আরো বেশী হারাম, কারণ তার ভুলের কারণে তার অধিনস্থ অনেক মানুষের করুণ পরিণতি হতে পারে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৬ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে