৩৭২২

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - জনগণের প্রতি শাসকের সহনশীলতা প্রদর্শন করা

৩৭২২-[১] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোনো কাজে কোনো সাহাবীকে পাঠাতেন তখন বলতেন, তোমরা জনগণকে আশার বাণী শুনাবে। হতাশাব্যঞ্জক কথা বলে তাদের জন্য অবহেলা-ঘৃণা সৃষ্টি করবে না। তাদের সাথে সহজ-সরল বিধান নীতি ব্যবহার করবে, কঠোরতা অবলম্বন করবে না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ مَا عَلَى الْوُلَاةِ مِنَ التَّيْسِيْرِ

عَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا بَعَثَ أَحَدًا مِنْ أَصْحَابِهِ فِي بَعْضِ أَمْرِهِ قَالَ: «بَشِّرُوا وَلَا تُنَفِّرُوا وَيَسِّرُوا وَلَا تُعَسِّرُوا»

عن ابي موسى قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا بعث احدا من اصحابه في بعض امره قال بشروا ولا تنفروا ويسروا ولا تعسروا

ব্যাখ্যা: (عَنْ أَبِىْ مُوسٰى قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ إِذَا بَعَثَ أَحَدًا) ‘‘কাউকে পাঠাতেন’’ অর্থাৎ পাঠাতে ইচ্ছা করতেন।

أَمْرِه (مِنْ أَصْحَابِه فِىْ بَعْضِ أَمْرِه) অর্থাৎ নিজের কোনো কর্মের জন্য না বরং রাষ্ট্রের কোনো দায়িত্ব দিয়ে।

(قَالَ : بَشِّرُوْا) অর্থাৎ মানুষদেরকে আল্লাহ প্রদত্ত সাওয়াব যা তিনি সৎকর্মের জন্য দান করেন তা জানিয়ে দাও। এখানে (بَشِّرُوْا) শব্দ বলে যে সম্বোধন করা হয়েছে তার দু’টি দিক হতে পারে। কারণ (بَشِّرُوْا) শব্দটি হলো বহুবচন শব্দ, এমতাবস্থায় এর মাধ্যমে সম্বোধনটি যাকে পাঠাতেন তার জন্য হতে পারে অথবা বিষয়টি সকলের ক্ষেত্রে ব্যাপক হতে পারে।

(وَلَا تُنَفِّرُوْا) অর্থাৎ এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষদেরকে জাহান্নামের শাস্তির ভয় দেখাতে গিয়ে এত বাড়াবাড়ি করা উচিত নয় যে, তারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যায় তাদের পাপের কারণে।

অথবা এটা বুঝানো হয়েছে যে, কল্যাণ লাভের উপর জোর দিয়ে আনুগত্যমূলক কাজ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। অত্যাচার কঠোরতার ভয় দেখিয়ে আল্লাহর আনুগত্য থেকে বিমুখ করে দিও না।

উপরোক্ত বাক্যটির দু’টি দিক আছে, একটি হলো সুসংবাদ দাও, অপরটি হলো বিমুখ করে দিও না। দু’টি বাক্যই পরস্পর সামঞ্জস্যপূর্ণ।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ উক্ত বাক্য দু’টি রূপকভাবে পরস্পর বিরোধী কারণ যদি বাস্তবিক বিপরীতমুখী হতো তাহলে ইবারতটি হতো بَشِّرُوا وَلَا تُنْذِرُوا، وَاسْتَأْنِسُوا وَلَا تُنَفِّرُوا অর্থাৎ সুসংবাদ দাও ভয় দেখাইও না, দয়াপরবশ হও, বিমুখ করিও না। তাহলে দেখা যায় এখানে সুসংবাদ প্রদান, সতর্কীকরণ, দয়াপরবশ ও বিমুখ করা সবগুলোকেই বুঝাচ্ছেন। তাই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইবারতই এখানে উপযুক্ত এবং তাঁর হাদীস থেকেও এটা বুঝা যায় যে, মানুষদেরকে সতর্ক করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘‘তুমি কুরআনের মাধ্যমে সতর্ক কর তাদেরকে যারা ভয় করে।’’ (সূরা আল আন্‘আম ৬ : ১৫)

অন্য আয়াতে আছে, ‘‘তারা যেন তাদের জাতিকে সতর্ক করে।’’ (সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ১২২)

সতর্ক করার প্রয়োজনীয়তা এজন্য বেশী যে, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক বিষয়গুলো শুধুমাত্র সুসংবাদ দিয়েই পূর্ণ হয় না সেখানে সতর্কীকরণ বা নোটিশ জারি করতে হয়।

(وَيَسِّرُوْا) অর্থাৎ যাকাত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের ওপর সহজনীতি অবলম্বন করো।

(وَلَا تُعَسِّرُوْا) অর্থাৎ মানুষের ওপর চড়াও হয়ো না। এখানে চড়াও কয়েক ধরনের হতে পারে- (ক) তাদের ওপর যাকাত যা ফরয হয়েছে তার চেয়ে বেশী গ্রহণ করা। (খ) উত্তমটি গ্রহণ করা। (গ) তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে তল্লাশী করা। (ঘ) তাদের অবস্থা সম্পর্কে গোয়েন্দাগীরী করা ইত্যাদি। (ফাতহুল বারী ১ম খন্ড, হাঃ ৬৯; শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৭৩২; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৮২৭; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء)