পরিচ্ছেদঃ ১৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - লি‘আন

৩৩১৬-[১৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন লি’আন সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হলো, তখন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, যে মহিলা জারজ সন্তান প্রসব করে তাকে স্বামীর বা মালিকের বলে অন্য গোত্রের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়, অথচ সে ঐ বংশোদ্ভূত নয়, দীনের মধ্যে তার কোনই স্থান নেই এবং আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। আর যে পুরুষ স্বীয় ঔরসের সন্তানের পিতৃত্ব অস্বীকার করে অথচ সন্তান স্নেহমায়া-মমতার মুখ নিয়ে পিতৃত্ব আশায় চেয়ে থাকে, আল্লাহ তার সাথে সাক্ষাৎ করবেন না এবং (হাশরের ময়দানে) অগ্র-পশ্চাতের সমগ্র মানবসন্তানের সামনে অপমান-অপদস্ত করবেন। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী ও দারিমী)[1]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لَمَّا نَزَلَتْ آيَةُ الْمُلَاعَنَةِ: «أَيُّمَا امْرَأَةٍ أَدْخَلَتْ عَلَى قَوْمٍ مَنْ لَيْسَ مِنْهُمْ فَلَيْسَتْ مِنَ اللَّهِ فِي شَيْءٍ وَلَنْ يُدْخِلَهَا اللَّهُ جَنَّتَهُ وَأَيُّمَا رَجُلٍ جَحَدَ وَلَدَهُ وَهُوَ يَنْظُرُ إِلَيْهِ احْتَجَبَ اللَّهُ مِنْهُ وفضَحَهُ على رؤوسِ الْخَلَائِقِ فِي الْأَوَّلِينَ وَالْآخِرِينَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيّ والدارمي

عن ابي هريرة انه سمع النبي صلى الله عليه وسلم يقول لما نزلت اية الملاعنة ايما امراة ادخلت على قوم من ليس منهم فليست من الله في شيء ولن يدخلها الله جنته وايما رجل جحد ولده وهو ينظر اليه احتجب الله منه وفضحه على رووس الخلاىق في الاولين والاخرين رواه ابو داود والنساىي والدارمي

ব্যাখ্যা: এক গোত্রের নয় এমন কাউকে এই গোত্রে প্রবেশ করানোর অর্থ হলো মিথ্যা বংশ সম্পৃক্ত করা। একজন নারীর গর্ভের সন্তানের ব্যাপারে সেই প্রকৃত মূল অবস্থা সম্পর্কে অবগত। তাই এই মহিলা যদি কোনো সন্তানকে মিথ্যা বলে কোনদিকে সম্পৃক্ত করে তবে সে আল্লাহর দীন ও রহমাতের মাঝে থাকবে না। এই সম্পৃক্তকরণ দুইভাবে হতে পারে। তন্মধ্যে একটি হলো, মহিলা গোপনে কারো সাথে যিনা করে তার গর্ভে অন্যের সন্তানকে নিজের বলে দাবী করা। আর এটাই এ হাদীসের মর্ম। আবার তার গর্ভে নিজের স্বামীর ছেলেকেও মিথ্যা বলে অন্যের দিকে সম্পৃক্ত করতে পারে। উভয়টাই অন্যতম কবীরা গুনাহ এবং জঘন্য অপারাধ।

(وَلَنْ يُدْخِلَهَا اللّٰهُ جَنَّتَه) ‘‘আর আল্লাহ তাকে কখনো জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না।’’ কুরআন হাদীসের আলোকে প্রমাণিত যে, মু’মিন যত বড়ই কবীরা গুনাহ করুক না কেন আল্লাহর অনুগ্রহে ক্ষমা পেয়ে বা নির্ধারিত শাস্তি ভোগের পর জান্নাতে যাবে। তাই ‘উলামায়ে কিরাম হাদীসের এই অংশের ব্যাখ্যা করেন। ‘আল্লামা তূরিবিশতী বলেনঃ অর্থাৎ আল্লাহ তাকে সৎকর্মপরায়ণ লোকেদের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। বরং তাকে দেরীতে প্রবেশ করাবেন অথবা যতদিন চান শাস্তি দিবেন। তবে যদি সে কাফির হয়ে থাকে তখন তার জন্য চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নাম নির্ধারিত হয়ে যাবে। মহিলা এই জঘন্য অপরাধ বৈধ মনে করে করলে হাদীসের বাহ্যিক অর্থই তার ওপর প্রয়োগ হবে এবং সে কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।

(وَأَيُّمَا رَجُلٍ جَحَدَ وَلَدَه وَهُوَ يَنْظُرُ إِلَيْهِ) অর্থাৎ যে নিজ সন্তানকে অস্বীকার করে এবং তার বংশ নাকচ করে অথচ সে তাকে দেখছে। সে তাকে দেখছে বলে তার জানার দিকে ইঙ্গিত। অর্থাৎ সে জানে এটা আসলে তারই ছেলে। জেনেশুনে সে ছেলেকে অস্বীকার করছে। দেখছে বলে, তারা মায়া মমতার কমতি ও কঠোর হৃদয় এবং তার এই গুনাহের বিশালতার দিকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে। অর্থাৎ নিজের সন্তানকে দেখেও তার একটু মায়ার উদয় হচ্ছে না, বরং সে তাকে অস্বীকার করে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। এই ধরনের পাপী ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা পর্দা দিয়ে তাঁর থেকে পৃথক করে দেন এবং তাকে তাঁর রহমাত থেকে দূরে ঠেলে দেন এবং তাকে সব মানুষের সম্মুখে অপমানিত করেন।

(عَلٰى رُؤُوْسِ الْخَلَائِقِ فِى الْأَوَّلِينَ وَالْاٰخِرِيْنَ) অর্থাৎ সমস্ত মাখলূকের নিকট, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের সমবেত হওয়ার স্থলে তাকে অপমান করবেন। এখানে তার অপমান ও লাঞ্ছনাকে অধিক প্রসার প্রচার করার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ১৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - লি‘আন

৩৩১৭-[১৪] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে অভিযোগ করল যে, আমার স্ত্রী কাউকেই প্রত্যাহার করে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে তাকে তালাক দাও। সে বলল, আমি তার প্রতি অত্যন্ত দুর্বল (তথা ভালোবাসী)। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে তাকে (নাসীহাত করে) সংযত রাখ। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]

ইমাম নাসায়ী (রহঃ) বলেন, কোনো কোনো রাবী ইবনু ’আব্বাস পর্যন্ত এর সানাদ বর্ণনা করেছেন, আবার কেউ করেননি। তিনি আরো বলেন, সুতরাং হাদীসটি মুত্তাসিল নয়।

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِن لِي امْرَأَةً لَا تَرُدُّ يَدَ لَامِسٍ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «طَلِّقْهَا» قَالَ: إِنِّي أُحِبُّها قَالَ: «فأمسِكْهَا إِذا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَقَالَ النَّسَائِيُّ: رَفَعَهُ أَحَدُ الرُّوَاةِ إِلَى ابْنِ عَبَّاسٍ وَأَحَدُهُمْ لَمْ يرفعهُ قَالَ: وَهَذَا الحَدِيث لَيْسَ بِثَابِت

وعن ابن عباس قال جاء رجل الى النبي صلى الله عليه وسلم فقال ان لي امراة لا ترد يد لامس فقال النبي صلى الله عليه وسلم طلقها قال اني احبها قال فامسكها اذا رواه ابو داود والنساىي وقال النساىي رفعه احد الرواة الى ابن عباس واحدهم لم يرفعه قال وهذا الحديث ليس بثابت

ব্যাখ্যা: (لَا تَرُدُّ يَدَ لَامِسٍ) কোনো কোনো বর্ণনায় (لا تمنع يد لامس) স্পর্শকারীর হাত প্রতিহত করে না। মর্ম হলো, কেউ তার সাথে অশ্লীলতা করলে সে কোনো আপত্তি করে না অথবা তার স্বামীর সম্পদে কেউ হাত দিলে সে বাধা দেয় না।

(طَلِّقْهَا) তুমি তাকে তালাক দিয়ে দাও। কোনো কোনো বর্ণনায় (غَرِّبْها) অর্থাৎ তাকে দূরে সরিয়ে দাও। এর মর্মও তাকে তালাক দিয়ে দাও। হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) তালখীসে বলেন, ‘উলামায়ে কিরাম হাদীসের বাক্য (لَا تَرُدُّ يَدَ لَامِسٍ) নিয়ে মতানৈক্য পোষণ করেন। কারো কারো মতে এর অর্থ অশ্লীলতা। অর্থাৎ যে তার সাথে অশ্লীলতার আবেদন করত সে প্রত্যাখ্যান করত না বরং সুযোগ দিত। কারো কারো মতে এখানে উদ্দেশ্য হলো, অপচয় করা। অর্থাৎ কেউ তার স্বামীর সম্পদ থেকে কিছু নিতে চাইলে বা নিয়ে নিলে সে বারণ করত না।

(فَأَمْسِكْهَا إِذَنْ) অর্থাৎ তুমি যখন তাকে ভালোবাস তবে তাকে অশ্লীলতা থেকে বা সম্পদের অপচয় থেকে আটকে রাখো, হয় তাকে চোখের সামনে রেখে অথবা সম্পদের হিফাযাত বা তার সাথে বেশি বেশি সহবাস করে।

হাদীসের উভয় মর্মের মাঝে কাযী আবুত্ তাইয়িব প্রথম মর্মকে অগ্রাধিকার দেন; কেননা কেউ মাল চাইলে তা দেয়া বদান্যতার পরিচয়। আর বদান্যতা ভালো কাজ। অতএব তা ত্বলাকের কারণ হতে পারে না। এছাড়া অপচয় যদি তার নিজের সম্পদ থেকে হয় এখানে সে স্বাধীন। আর স্বামীর সম্পদ থেকে হলে স্বামী তার মালের হিফাযাত করে নিবে। অতএব এর কোনটাই ত্বলাকের কারণ নয়।

‘আল্লামা মুহাম্মাদ বিন ইসমা‘ঈল সুবুলুস্ সালামে উভয় মর্ম উল্লেখের পর লিখেন, প্রথম মর্ম নেয়া কঠিন, এমনকি আয়াতের আলোকে তা বিশুদ্ধ নয়; কেননা এ ধরনের অশ্লীল নারীকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঘরে রেখে দেয়ার অনুমোদন দিতে পারেন না। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে দাইয়ূস হওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন না। অতএব হাদীসের এই মর্ম নেয়া ঠিক নয়। আবার দ্বিতীয় মর্ম নেয়াও দূরবর্তী। কেননা অপচয় তার নিজের মালের ক্ষেত্রে হোক বা স্বামীর মালের ক্ষেত্রে তাকে বাধা দেয় সম্ভব। এটা তালাককে ওয়াজিব করতে পারে না। এছাড়া ‘‘অমুক স্পর্শকারীর হাত প্রতিহত করে না’’ বলে বদান্যতার প্রতি ইঙ্গিত করা হয় না। অতএব হাদীসের নিকটতম উদ্দেশ্য হলো, সে নরম চরিত্রের অধিকারী। তার মাঝে অপরিচিতদের প্রতি ঘৃণাবোধ বা সংকোচবোধ নেই। এমন নয় যে, সে তাদের সাথে অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়ে যায়। পুরুষ মহিলার অনেকেই এ ধরনের রয়েছে যদিও তারা অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকে। যদি তার ইচ্ছা হত যে, সে নিজেকে যিনা থেকে বারণ করে না তবে স্ত্রীর ওপর অপবাদদানকারী হত। (‘আওনুল মা‘বূদ ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২০৪৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ১৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - লি‘আন

৩৩১৮-[১৫] ’আমর ইবনু শু’আয়ব তাঁর পিতা হতে দাদার মাধ্যমে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত সন্তানের ব্যাপারে ফায়সালা প্রদান করেন, যে পিতার মৃত্যুর পরে (দাসীর গর্ভে) সন্তানকে উক্ত পিতার পিতৃত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ তার ওয়ারিসগণের সাথে সংযোজিত করা হয়েছে। তথা ব্যক্তি যদি তার দাসীকে সহবাসকালে তার মালিক থাকে তবে ঐ সন্তান মালিকের সন্তান বলে গণ্য হবে। তবে সহবাসের পূর্বে বণ্টিত সম্পত্তি হতে এ সন্তান উত্তরাধিকার পাবে না, আর বণ্টিত হওয়ার পূর্বে যা সে পেয়েছে তার উত্তরাধিকার এ সন্তান পাবে। ঐ পিতা যাকে সন্তানের পিতা বলে দাবি করা হচ্ছে সে যদি স্বীয় দাসীর গর্ভজাত অথবা ব্যভিচারিণী স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তানের পিতৃত্ব স্বীকার না করে, তবে তার সন্তান বলে স্বীকৃত হবে না। এরূপ যে সন্তান এমন দাসীর ঘরে জন্ম নেয়, সে তার মালিক ছিল না। অথবা, এমন স্বাধীনা মহিলার সন্তান যার সাথে সে যিনা করেছে; তবে সে সন্তান পিতা বলে ঐ ব্যক্তির ওয়ারিসদের সাথে সংযোজিত হবে না, যদিও সে তাকে স্বীয় পুত্র বলে দাবি করে। কেননা সে যিনার সন্তান, স্বাধীনা মহিলার ঘরে হোক বা দাসীর ঘরে হোক। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قضى أَن كل مستحلق استحلق بَعْدَ أَبِيهِ الَّذِي يُدْعَى لَهُ ادَّعَاهُ وَرَثَتُهُ فَقَضَى أَنَّ كُلَّ مَنْ كَانَ مِنْ أَمَةٍ يملكهَا يَوْم أَصَابَهَا فقد لحق بِمن استحلقه وَلَيْسَ لَهُ مِمَّا قُسِمَ قَبْلَهُ مِنَ الْمِيرَاثِ شَيْءٌ وَمَا أَدْرَكَ مِنْ مِيرَاثٍ لَمْ يُقْسَمْ فَلَهُ نَصِيبُهُ وَلَا يَلْحَقُ إِذَا كَانَ أَبُوهُ الَّذِي يُدْعَى لَهُ أَنْكَرَهُ فَإِنْ كَانَ مِنْ أمَةٍ لم يَملِكْها أَو من حُرَّةٍ عَاهَرَ بِهَا فَإِنَّهُ لَا يَلْحَقُ بِهِ وَلَا يَرِثُ وَإِنْ كَانَ الَّذِي يُدْعَى لَهُ هُوَ الَّذِي ادَّعَاهُ فَهُوَ وَلَدُ زِنْيَةٍ مِنْ حُرَّةٍ كَانَ أَوْ أَمَةٍ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ

وعن عمرو بن شعيب عن ابيه عن جده ان النبي صلى الله عليه وسلم قضى ان كل مستحلق استحلق بعد ابيه الذي يدعى له ادعاه ورثته فقضى ان كل من كان من امة يملكها يوم اصابها فقد لحق بمن استحلقه وليس له مما قسم قبله من الميراث شيء وما ادرك من ميراث لم يقسم فله نصيبه ولا يلحق اذا كان ابوه الذي يدعى له انكره فان كان من امة لم يملكها او من حرة عاهر بها فانه لا يلحق به ولا يرث وان كان الذي يدعى له هو الذي ادعاه فهو ولد زنية من حرة كان او امة رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: (مُسْتَلْحَقٍ) যাকে নিজ বংশভুক্ত বা ঔরসভুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়। হাদীসে এমন ব্যক্তির বংশ নির্ধারণ ও এর মাধ্যমে মীরাসের বিবরণ দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ যাকে কোনো ব্যক্তি জীবিত থাকাবস্থায় তার সন্তান বলে দাবী বা অস্বীকার কোনটাই করেনি, যার দিকে দাবী করা হচ্ছে তার মৃত্যুর পর অন্যান্য ওয়ারিসরা তাকে এই মৃত ব্যক্তির ঔরসজাত অর্থাৎ তাদের মতো সেও এই ব্যক্তির একজন ওয়ারিস বলে দাবী করছেন। এমন ব্যক্তির বেলায় বংশ বা মীরাসের ফায়সালা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই হাদীসে দিচ্ছেন। বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ফায়সালা দেন তা হলো,

* সন্তানটি যদি এমন দাসী থেকে হয় যে দাসীর মালিক ঐ মৃত ব্যক্তি ছিল এবং সে তার সাথে যেদিন সহবাস করেছে সেদিনও ঐ দাসীর মালিক। তবে ওয়ারিসদের দাবী মতে তাকে ঔরসজাত সাব্যস্ত করা হবে।

* ওয়ারিসরা এই দাবীর পূর্বে যে সম্পদ বণ্টন করা হয়ে গেছে তা থেকে সে কোনো অংশ পাবে না। অর্থাৎ পূর্বের বণ্টনকে রহিত বা পূর্বে যাদেরকে সম্পদ মীরাসের ভিত্তিতে বণ্টন করে দেয়া হয়ে গেছে তাদের কাছ থেকে ফেরত নিয়ে তাকে দিতে হবে না।

* যে মীরাস দাবীর পূর্বে বণ্টন হয়নি উক্ত মীরাসে অন্যান্য ওয়ারিসের মতো সেও অংশীদার হবে; কেননা ওয়ারিসদের দাবীর ভিত্তিতে সেও একজন ওয়ারিস সাব্যস্ত হয়ে গেছে।

* যার সন্তান বলে দাবী করা হচ্ছে সে যদি মৃত্যুর পূর্বে একে তার সন্তান বলে অস্বীকার করে যায় তবে অন্যান্য ওয়ারিসদের দাবীতে বংশ সাব্যস্ত হবে না এবং সে ঐ লোকের ওয়ারিস হবে না।

* যদি সে এমন দাসীর হয় যে দাসীর মালিক মৃত ব্যক্তি ছিল না অথবা স্বাধীনা নারী থেকে হয় যার সাথে ঐ ব্যক্তি যিনা করেছে তবে ওয়ারিসদের দাবীর মাধ্যমে বংশ সাব্যস্ত হবে না। এমন ছেলেকে যার দিকে দাবী করা হচ্ছে সেও যদি দাবী করে তবুও সে তার বংশোদ্ভূত সন্তান হবে না। বরং জারজ সন্তান হবে, চাই সে স্বাধীনা নারী থেকে হোক অথবা দাসী থেকে হোক।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ ১৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - লি‘আন

৩৩১৯-[১৬] জাবির ইবনু ’আতীক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আত্মমর্যাদাবোধ আল্লাহর নিকট কোনো ক্ষেত্রে পছন্দনীয় হয়, আবার কোনো ক্ষেত্রে নিন্দনীয় হয়। যে আত্মমর্যাদাবোধ আল্লাহ পছন্দ করেন, তা হলো সন্দেহভাজন আত্মমর্যাদা লালন করা। পক্ষান্তরে সন্দেহভাজন নয় এমন ক্ষেত্রে আত্মমর্যাদা লালন করা আল্লাহর নিকট নিন্দনীয়। অনুরূপভাবে গর্ববোধ কোনো ক্ষেত্রে আল্লাহ পছন্দ করেন এবং কোনো ক্ষেত্রে নিন্দনীয়। আর যে গর্বকে আল্লাহ ভালোবাসেন তা হলো, (ইসলামের শত্রুদের সাথে) যুদ্ধক্ষেত্রে ও দান-সদাকাতে গর্ববোধ আল্লাহর নিকট অত্যন্ত পছন্দনীয়। আর যে গর্ববোধ আল্লাহর কাছে নিন্দনীয় তা হলো (বংশ-মর্যাদার) অহংকারের উদ্দেশে গর্ববোধ। অপর বর্ণনায়, অহংকারের পরিবর্তে জুলুম বা অন্যায় শব্দ এসেছে। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]

وَعَن جابرِ بنِ عتيكٍ أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ الْغَيْرَةِ مَا يُحِبُّ اللَّهُ وَمِنْهَا مَا يُبْغِضُ اللَّهُ فَأَمَّا الَّتِي يُحِبُّهَا اللَّهُ فَالْغَيْرَةُ فِي الرِّيبَةِ وَأَمَّا الَّتِي يُبْغِضُهَا اللَّهُ فَالْغَيْرَةُ فِي غَيْرِ رِيبَةٍ وَإِنَّ مِنَ الْخُيَلَاءِ مَا يُبْغِضُ اللَّهُ وَمِنْهَا مَا يُحِبُّ اللَّهُ فَأَمَّا الْخُيَلَاءُ الَّتِي يُحِبُّ اللَّهُ فَاخْتِيَالُ الرَّجُلِ عِنْدَ الْقِتَالِ وَاخْتِيَالُهُ عِنْدَ الصَّدَقَةِ وَأَمَّا الَّتِي يُبْغِضُ اللَّهُ فَاخْتِيَالُهُ فِي الْفَخْرِ» وَفِي رِوَايَةٍ: «فِي الْبَغْيِ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ

وعن جابر بن عتيك ان نبي الله صلى الله عليه وسلم قال من الغيرة ما يحب الله ومنها ما يبغض الله فاما التي يحبها الله فالغيرة في الريبة واما التي يبغضها الله فالغيرة في غير ريبة وان من الخيلاء ما يبغض الله ومنها ما يحب الله فاما الخيلاء التي يحب الله فاختيال الرجل عند القتال واختياله عند الصدقة واما التي يبغض الله فاختياله في الفخر وفي رواية في البغي رواه احمد وابو داود والنساىي

ব্যাখ্যা: (فَالْغَيْرَةُ فِى الرِّيبَةِ) ‘‘গইরত’’ অর্থ আত্মমর্যাদাবোধ। কোনকিছুর দ্বারা আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগার নাম গাইরত। এর কোনটা আল্লাহর পছন্দ আবার কোনটা আল্লাহ তা‘আলা অপছন্দ। হাদীসে বলা হচ্ছে, (الريبة) এর স্থানে গাইরত আল্লাহর পছন্দ। ‘রীবাহ্’ অর্থাৎ সন্দেহমূলক স্থান, অপবাদের স্থান। এই আত্মমর্যাদার দুই দিক হতে পারে। একটি হলোঃ আত্মমর্যাদার কারণে নিজে এমন স্থানে পতিত না হওয়া। আত্মমর্যাদা তাকে নিষিদ্ধ অপবাদমূলক জায়গা থেকে তাকে দূরে রাখার কারণে তা আল্লাহর নিকট পছন্দ। আরেকটি হলো, নিজের মাহরাম কারো সাথে অন্য কাউকে হারাম কাজে লিপ্ত দেখে আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগা। এ ধরনের গাইরত আল্লাহর নিকট পছন্দনীয়। সহীহ হাদীসে রয়েছেঃ

مَا مِنْ أَحَدٍ أَغْيَرُ مِنْ اللّٰهِ مِنْ أَجْلِ ذٰلِكَ حَرَّمَ الْفَوَاحِشَ

‘‘আল্লাহর চেয়ে অধিক আত্মমর্যাদাশীল কেউ নেই। আর এজন্যই তিনি অশ্লীলতা (যিনা) হারাম করেছেন।’’ (সহীহুল বুখারী- অধ্যায় : নিকাহ, অনুচ্ছেদ : গাইরত, হাঃ ৪৮১৯)

(فَالْغَيْرَةُ فِىْ غَيْرِ رِيبَةٍ) অর্থাৎ সন্দেহযুক্ত স্থান বা অপবাদমূলক স্থান ছাড়া গাইরত। এই গইরত আল্লাহ তা‘আলার নিকট অপছন্দ। অর্থাৎ বাস্তব কোনো সন্দেহ ছাড়া কারো ওপর খারাপ ধারণার ভিত্তিতে নিজের আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগা। যেমন কাউকে দরজা দিয়ে বের হতে দেখে বা কাউকে কারো সাথে কথা বলতে দেখেই মন্দ ধারণার ভিত্তিতে আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগা। এ ধরনের গইরতে পরস্পরের মাঝে অযথা বিদ্বেষ, ক্রোধ ও ফিতনা সৃষ্টি হয়। এও হতে পারে যে, নিজের মা থাকাবস্থায় পিতা আরেক নারীকে বিয়ে করার কারণে ছেলের আত্মমর্যাদায় আঘাত। এভাবে তার অন্যান্য মাহরামের ক্ষেত্রে। এ ধরনের গাইরতকে আল্লাহ তা‘আলা অপছন্দ করেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা যা হালাল করেছেন তার উপর আমাদের সন্তুষ্ট থাকা ওয়াজিব। আল্লাহ কর্তৃক বৈধ বিষয়ে গইরত দেখানো মানে জাহিলিয়্যাতে তথা অন্ধকার যুগের অহংবোধ আত্মমর্যাদাকে অগ্রাধিকার দেয়া। তাই আল্লাহ এমন গাইরতকে অপছন্দ করেন।

(وَإِنَّ مِنَ الْخُيَلَاءِ مَا يُبْغِضُ اللّٰهُ وَمِنْهَا مَا يُحِبُّ اللّٰهُ) অর্থাৎ অহঙ্কার ও আত্মঅহমিকা কোনটা আল্লাহ অপছন্দ করেন এবং কোনটা আল্লাহ ভালোবাসেন।
অহঙ্কার মূলত হারাম হলেও গইরতের মতই কোনো কোনো ক্ষেত্রে অহঙ্কার আল্লাহ তা‘আলার পছন্দ। হাদীসে আল্লাহর পছনদনীয় অহঙ্কার ও অপছন্দীয় অহঙ্কারের বিবরণ দেয়া হয়েছে। যে অহঙ্কার বা গর্বকে আল্লাহ তা‘আলা ভালোবাসেন তা হলো, জিহাদে কোনো ব্যক্তির অহঙ্কার। অর্থাৎ যুদ্ধের সময় সে দুশমনের সাথে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে অগ্রে থাকবে; শক্তি, সাহসিকতা ও বীরত্ব প্রকাশ করবে, যুদ্ধের ময়দানে অহঙ্কারী ভঙ্গিতে চলবে এবং দুশমনকে তুচ্ছ মনে করবে। এই গর্ব আল্লাহর নিকট পছন্দ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিহাদের ময়দানে গর্বস্বরে বলতেন, (أَنَا النَّبِيُّ لَا كَذِبْ أَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبْ) ‘‘আমি নাবী এ কথা মিথ্যা নয়, আমি ইবনুল মুত্ত্বালিব-এর ছেলে।’’ (সহীহুল বুখারী- অধ্যায় : জিহাদ, হাঃ ২৬৫২। উল্লেখ্য, বুখারীর একাধিক অধ্যায় ও অনুচ্ছেদের বিভিন্ন জায়গায় হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে)

জিহাদের ময়দানে গর্বে নিজের শক্তি সাহস ছাড়াও সাথীদের মাঝে শক্তি সাহস জোগায়।

পছন্দনীয় গর্বের আরেকটি স্থান হলো দান। অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় দান ও সাদাকা করতে গর্বভরে করবে। বেশি দিয়েও কম মনে করবে। অর্থাৎ সে ভাববে আমার মতো ধনীর জন্য আরো দেয়া দরকার। কেউ কেউ বলেন, এখানে অহঙ্কার বলতে সে বলবে, আমি ধনী, অতএব বেশি বেশি দান করব, আল্লাহর ওপর আমার আস্থা রয়েছে। এই গর্ব তাকে এবং অন্যকে অধিক দানে উৎসাহিত করে। তাই তা আল্লাহ তা‘আলার নিকট পছন্দীয়।

(وَأَمَّا الَّتِىْ يُبْغِضُ اللّٰهُ فَاخْتِيَالُه فِى الْفَخْرِ) এখানে এমন অহঙ্কারের কথা বলা হচ্ছে যা আল্লাহ তা‘আলার নিকট অপছন্দ। অর্থাৎ কেবল বড়াইয়ের অহঙ্কার। যেমন কেউ বলে, আমার বংশ অধিক মর্যাদাবান, আমার পিতা অধিক সম্মানিত। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার’’- (সূরা আল হুজুরাত ৪৯ : ৩)। অর্থাৎ অন্যকে হেয় করে নিজেকে বড় ভাবার অহঙ্কার আল্লাহর নিকট অপছন্দীয়।

কোনো কোনো বর্ণনায় (فَاخْتِيَالُه في الفخر) এর স্থলে (فَاخْتِيَالُه فِي الْبَغْيِ) বলা হয়েছে। অর্থাৎ অন্যায় কাজের উপর অহঙ্কার। যেমন কেউ গর্ব করে বলে, সে অমুককে হত্যা করেছে, অমুকের মাল ছিনিয়ে নিয়েছে, অথবা অন্যায় কাজ করার সময় গর্ব করে কাজ করে। এ ধরনের অহঙ্কারে আল্লাহ তা‘আলা রাগাম্বিত হন। (সুনানু আবী দাঊদ- অধ্যায় : জিহাদ, অনুচ্ছেদ : যুদ্ধে অহঙ্কার, হাঃ ২২৮৬)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৪ পর্যন্ত, সর্বমোট ৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে