পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাদিয়া (উপহার) ও হিবার (অনুদান) প্রসঙ্গে

৩০২০-[৫] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পিতা তার স্বীয় পুত্রের হিবা (দান করা) ব্যতীত কেউই নিজ হিবার জিনিস ফিরিয়ে নিতে পারে না। (নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ)[1]

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَرْجِعُ أَحَدٌ فِي هِبَتِهِ إِلَّا الْوَالِدُ مِنْ وَلَده» . رَوَاهُ النَّسَائِيّ وَابْن مَاجَه

عن عبد الله بن عمرو قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يرجع احد في هبته الا الوالد من ولده رواه النساىي وابن ماجه

ব্যাখ্যা: (إِلَّا الْوَالِدُ مِنْ وَلَدِه) একমতে বলা হয়েছে, হাদীসাংশটুকু দান ফিরিয়ে হারাম হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করছে। তবে কেবল সন্তানের ক্ষেত্রে তা ফিরিয়ে নেয়া বৈধ, কেননা সন্তান এবং সন্তানের সম্পদ পিতার জন্য সাব্যস্ত। ইমাম শাফি‘ঈ এ মত গ্রহণ করেছেন, যেমন তিনি বলেনঃ দান ফিরিয়ে নেয়া পিতা ছাড়া কারো জন্য বৈধ হবে না। কোনো ফায়সালা এবং সন্তুষ্টি ছাড়া দান ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কেউ স্বয়ংসম্পন্ন নয়, তবে পিতার ক্ষেত্রটি আলাদা। কেননা তিনি যখন প্রয়োজনমুখী হবেন এককভাবে এ ক্ষমতা রাখবেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাদিয়া (উপহার) ও হিবার (অনুদান) প্রসঙ্গে

৩০২১-[৬] ইবনু ’উমার ও ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তারা উভয়ে বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তির পক্ষে দান করে, অতঃপর তা ফেরত নেয়া জায়িয নয়; শুধুমাত্র পিতা তার নিজ পুত্রকে যা দান করে সেটা ছাড়া। যে ব্যক্তি দান করে, অতঃপর তা ফেরত নেয়, তার দৃষ্টান্ত সেই কুকুরের মতো যে খায়, পরিশেষে যখন পেটপুরে খায় তখন বমি করে, অতঃপর নিজ বমিই পুনরায় খায়। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ; তিরমিযী একে সহীহ্ বলেছেন)[1]

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ وَابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَحِلُّ لِلرَّجُلِ أَنْ يُعْطِيَ عَطِيَّةً ثُمَّ يَرْجِعَ فِيهَا إِلَّا الْوَالِدَ فِيمَا يُعْطِي وَلَدَهُ وَمَثَلُ الَّذِي يُعْطِي الْعَطِيَّةَ ثُمَّ يَرْجِعُ فِيهَا كَمَثَلِ الْكَلْبِ أَكَلَ حَتَّى إِذَا شَبِعَ قَاءَ ثُمَّ عَادَ فِي قَيْئِهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَصَححهُ التِّرْمِذِيّ

وعن ابن عمر وابن عباس ان النبي صلى الله عليه وسلم قال لا يحل للرجل ان يعطي عطية ثم يرجع فيها الا الوالد فيما يعطي ولده ومثل الذي يعطي العطية ثم يرجع فيها كمثل الكلب اكل حتى اذا شبع قاء ثم عاد في قيىه رواه ابو داود والترمذي والنساىي وابن ماجه وصححه الترمذي

ব্যাখ্যা: (وَمَثَلُ الَّذِىْ يُعْطِى الْعَطِيَّةَ ثُمَّ يَرْجِعُ فِيهَا) এতে দান ফিরিয়ে নেয়া হারাম সাব্যস্তকরণের উপর প্রমাণ রয়েছে। আর এটা হলো- জুমহূর বিদ্বানদের মাযহাব। ইমাম বুখারী (بَابَ لَا يَحِلُّ لِأَحَدٍ أَنْ يَرْجِعَ فِي هِبَتِه وَصَدَقَتِه) ‘‘দান, সাদাকা ফিরিয়ে নেয়া কারো জন্য বৈধ না’’ এ ভাষ্যে একটি অধ্যায় বেঁধেছেন। সন্তান এবং অনুরূপকে দান করা সম্পর্কে যা এসে থাকে তা জুমহূর আলাদাভাবে দেখেছেন। হাদাবিয়্যা এবং আবূ হানীফাহ্ সাদাকা ছাড়া অন্যান্য দান ফিরিয়ে নেয়া বৈধ হওয়ার ব্যাপারে মত পোষণ করেছেন। তবে মাহরাম ব্যক্তিকে দানের বিষয়টি আলাদা। তারা বলেন, হাদীসটি দ্বারা মাকরূহ বিষয়ে কঠোরতা উদ্দেশ্য। ত্বহাবী বলেনঃ (كَالْعَائِدِ فِي قَيْئِه) ‘‘বমি করে পুনরায় তা গ্রহণকারীর মতো।’’ এ উক্তি যদিও হারাম সাব্যস্তকরণকে দাবী করছে তথাপিও অন্য বর্ণনাতে অতিরিক্ত আছে, আর তা হলো- তার উক্তি (كَالْكَلْبِ) যা হারাম সাব্যস্ত না করার উপর প্রমাণ বহন করছে। কেননা কুকুর ‘ইবাদাতকারী না। সুতরাং বমি তার উপর হারাম নয়। উদ্দেশ্য হলো- কুকুরের কাজের সাথে সাদৃশ্য রাখে এমন কাজ থেকে পবিত্র থাকা। ব্যাখ্যাটি অসম্ভব এবং হাদীসের বাচন-ভঙ্গি এর থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে এর সমালোচনা করা হয়েছে এ ধরনের ভাষ্যের ক্ষেত্রে শারী‘আতের রীতি হলো কঠোর ধমক। যেমন- সালাতে কুকুরের মতো বসা, কাকের মতো ঠোকরানো এবং শিয়াল ও অনুরূপ কিছুর মতো এদিক-সেদিক তাকানো সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে। এ বর্ণনাগুলো দ্বারা সালাত আদায়কারীর জন্য উক্ত কাজসমূহ হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে। অতএব সুদূরপ্রসারী ব্যাখ্যার দিকে তাকানো হবে না। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২১৩১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাদিয়া (উপহার) ও হিবার (অনুদান) প্রসঙ্গে

৩০২২-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক বেদুইন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একটি উটনী হাদিয়া (উপহার) দিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার প্রতিদানে তাকে ছয়টি উটনী উপহার দিলেন, কিন্তু এতে সে মনোতুষ্টি হলো না। এ খবর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পৌঁছলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করলেন। অতঃপর বললেন, অমুক আমাকে একটি উটনী হাদিয়া দিয়েছে, আর আমি তার প্রতিদানে তাকে ছয়টি উটনী হাদিয়া দিয়েছি, তবুও সে তাতে সন্তুষ্ট হলো না। আমি দৃঢ়ভাবে ইচ্ছা করেছি যে, কোনো কুরায়শী অথবা আনসারী অথবা সাকাফী অথবা দাওসী (গোত্র) ছাড়া কারো হাদিয়া গ্রহণ করব না। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّ أَعْرَابِيًّا أُهْدِيَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَكْرَةً فَعَوَّضَهُ مِنْهَا سِتَّ بَكَرَاتٍ فَتَسَخَّطَ فَبَلَغَ ذَلِكَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ: «إِنَّ فَلَانًا أَهْدَى إِلَيَّ نَاقَةً فَعَوَّضْتُهُ مِنْهَا سِتَّ بَكَرَاتٍ فَظَلَّ سَاخِطًا لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ لَا أَقْبَلَ هَدِيَّةً إِلَّا مِنْ قُرَشِيٍّ أَوْ أَنْصَارِيٍّ أَوْ ثَقَفِيٍّ أَوْ دوسي» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ

وعن ابي هريرة ان اعرابيا اهدي لرسول الله صلى الله عليه وسلم بكرة فعوضه منها ست بكرات فتسخط فبلغ ذلك النبي صلى الله عليه وسلم فحمد الله واثنى عليه ثم قال ان فلانا اهدى الي ناقة فعوضته منها ست بكرات فظل ساخطا لقد هممت ان لا اقبل هدية الا من قرشي او انصاري او ثقفي او دوسي رواه الترمذي وابو داود والنساىي

ব্যাখ্যা: এ সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উদ্বেগের কারণ ইমাম তিরমিযী যা ‘কিতাবুল মানাকিব’-এর শেষে আইয়ূব-এর হাদীস হতে সংকলন করেন, তিনি সা‘ঈদ আল মাকবূরী হতে, তিনি আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, নিশ্চয় এক বেদুঈন ব্যক্তি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একটি বকনা উট উপহার দিল, একটির বদৌলতে তিনি বেদুঈনকে ৬টি বকনা উট দিলেন। এতে বেদুঈন ব্যক্তি রাগান্বিত হলে ঐ সংবাদ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পৌঁছল। অতঃপর তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন, তাঁর গুণকীর্তন করলেন। এরপর বললেন, ‘‘নিশ্চয় অমুক আমাকে একটি উপহার দিয়েছে তার বিনিময়ে আমি তাকে ৬টি বকনা উট উপহার দিয়েছি, এরপর সে রাগান্বিত হয়েছে। নিঃসন্দেহে আমি ইচ্ছা করেছি কুরায়শ, আনসারী, সাকাফী এবং দাঊসী গোত্র ছাড়া অন্য কারো কাছে থেকে উপহার গ্রহণ না করতে। মুহাম্মাদ বিন ইসহক কর্তৃক তিরমিযীতেও আছে, মুহাম্মাদ সা‘ঈদ বিন আবূ সা‘ঈদ আল মাকবূরী বলেন, ফাযারাহ্ গোত্রের এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তার ঐ উট হতে একটি উটনী উপহার দিলেন যে উটগুলো তারা বনে পেয়েছিল। অতঃপর সে উটনীর বিনিময় স্বরূপ তিনি কিছু বিনিময় দিলে লোকটি অসন্তুষ্ট হলো, এরপর আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বারের উপর বলতে শুনেছি, ‘‘নিশ্চয় ‘আরবের কোনো লোক উপহার দেয়, অতঃপর আমার কাছে যা আছে সে পরিমাণে আমি তার প্রতিদান দেই, অতঃপর এতে সে রাগান্বিত হয় এবং আমার ওপর রাগ অব্যাহত রাখে। আল্লাহর শপথ! আমার এ স্থানের পর কুরায়শ, আনসারী, সাকাফী অথবা দাওসী গোত্র ছাড়া ‘আরবের কোনো লোক হতে আমি উপঢৌকন গ্রহণ করব না। তূরিবিশতী (রহঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তি হতে হাদিয়া গ্রহণ অপছন্দ করেছেন, হাদিয়ার বিনিময়ে যে ব্যক্তির উদ্দেশ্য আরো বেশি অনুসন্ধান করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল হাদীসে উল্লেখিতদের মাঝে অন্তরের উদারতা, সুউচ্চ লক্ষ্য এবং বদলা গ্রহণের প্রতি দৃষ্টি না থাকার যে লক্ষণ পেয়েছিলেন সে কারণে এ মর্যাদার সাথে তাদেরকে নির্দিষ্ট করেছেন।

শারহুস্ সুন্নাহ্ গ্রন্থকার বলেন, বিদ্বানগণ ঐ সাধারণ দানের ক্ষেত্রে মতানৈক্য করেছেন যাতে প্রতিদান শর্ত করা হয় না। অতঃপর ফিকহ শাস্ত্রবিদদের একদল মত পোষণ করেছেন যে, এ হাদীসের কারণে দান সাওয়াবের দাবী রাখে। আর তাদের কেউ এমন আছে যারা দানের ক্ষেত্রে মানুষকে তিন স্তরে বিন্যস্ত করেছেন। ব্যক্তিকে ঐ ব্যক্তির তরফ থেকে দান করা, যে তার অপেক্ষা নিম্ন স্তরের। এটা দ্বারা সম্মান করা হয়, এটা সওয়াবের দাবী রাখে না। এভাবে সমকক্ষ হতে সমকক্ষকে দান করা, এতেও সাওয়াবের প্রত্যাশা নেই। আরেকটি হলো ঊর্ধ্বতন ব্যক্তির তরফ হতে নিম্নস্তরের ব্যক্তিকে দান করা, এ দান সাওয়াবের দাবী রাখে। কেননা এর দ্বারা দাতা উপহার দান এবং সাওয়াবের উদ্দেশ্য করে। অতঃপর প্রতিদানের পরিমাণ প্রচলিত নিয়ম এবং সামাজিক অভ্যাস অনুযায়ী হয়। একমতে বলা হয়েছে, প্রতিদান দানকৃত বস্তুর সমমূল্যের হতে হবে। অন্যমতে বলা হয়েছে, দাতা যতক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্ট না হয়। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৫৩৪)

তুহফাতুল আহওয়াযীর ৩৯৫৭ নং হাদীসের ব্যাখ্যায় বেদুঈন ব্যক্তির রাগের কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, বেদুঈন ব্যক্তি আল্লাহর রসূলের দান ও দানের প্রবাহ সম্পর্কে যা শুনেছিল সে কারণে প্রতিদান পাওয়ার ক্ষেত্রে তার আশা ছিল অনেক বেশি। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৯ম খন্ড, হাঃ ৩৯৫৭)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাদিয়া (উপহার) ও হিবার (অনুদান) প্রসঙ্গে

৩০২৩-[৮] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তিকে দান করা হয় তার যদি সামর্থ্য থাকে সে যেন তার প্রতিদান (বিনিময়) দেয়; আর যে অসমর্থ সে যেন তার (দানকারীর) প্রশংসা করে। কারণ যে তার প্রশংসা করেছে সে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে, আর যে তা লুকিয়েছে সে অকৃতজ্ঞ হয়েছে। আর যে দান না পেয়েও পেয়েছে বলে (ঘোষণা করেছে), সে মিথ্যার দু’টি কাপড় পরিধানকারীর ন্যায় হয়েছে (দ্বিগুণ মিথ্যুক হিসেবে পরিগণিত হয়েছে)। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ جَابِرٌ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ أُعْطِيَ عَطَاءً فَوَجَدَ فَلْيُجْزِ بِهِ وَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَلْيُثْنِ فَإِنَّ مَنْ أَثْنَى فَقَدْ شَكَرَ وَمَنْ كَتَمَ فَقَدْ كَفَرَ وَمَنْ تَحَلَّى بِمَا لَمْ يُعْطَ كَانَ كَلَابِسِ ثوبي زور» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد

وعن جابر عن النبي صلى الله عليه وسلم قال من اعطي عطاء فوجد فليجز به ومن لم يجد فليثن فان من اثنى فقد شكر ومن كتم فقد كفر ومن تحلى بما لم يعط كان كلابس ثوبي زور رواه الترمذي وابو داود

ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তিকে কোনো কিছু দান করা হবে, অতঃপর সে ব্যক্তি সম্পদগত সামর্থ্য রাখলে সে যেন দানের মাধ্যমে দাতা ব্যক্তিকে বিনিময় প্রদান দেয়। আর সামর্থ্য না রাখলে সে যেন তার গুণকীর্তন করে। এক বর্ণনাতে আছে, সে যেন তার জন্য দু‘আ করে, কেননা যে ব্যক্তি গুণকীর্তন করল, সে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল, সামষ্টিকভাবে তার বিনিময় প্রদান করল। আর যে ব্যক্তি দানের মাধ্যমে সমতা রক্ষা না করে অথবা গুণকীর্তনের মাধ্যমে বদলা না দিয়ে অনুগ্রহকে গোপন করবে সে অনুগ্রহকে অস্বীকার করল, তার অধিকার আদায় করা হতে বিরত থাকলো। আর ব্যক্তিকে যা দেয়া হয়নি তথাপিও তা তাকে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে যে নিজেকে সজ্জিত করবে সে ঐ ব্যক্তির মতো যে দু’জন মিথ্যুক হিসেবে মিথ্যা বলেছে অথবা দু’জন মিথ্যুক হিসেবে দু’টি বস্তু প্রকাশ করেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটি ঐ মহিলাকে বলেছিলেন, যে বলেছিল, হে আল্লাহর রসূল! আমার একটি সতীন আছে। এমতাবস্থায় আমার স্বামী আমাকে যা দেয়নি তা আমাকে দিয়েছেন বলে আমার পরিতৃপ্তি লাভ করাতে আমার কি কোনো অপরাধ হবে?

খত্ত্বাবী বলেনঃ ‘আরব দেশে এক লোক ছিল, সে পরিচিত লোকেদের দু’টি করে কাপড় দান করত, উদ্দেশ্য হলো- যাতে মানুষ তার সম্পর্কে ধারণা করে যে, সে একজন প্রসিদ্ধ সম্মানিত লোক। কেননা পরিচিতরা মিথ্যা বলে না, অতঃপর মানুষ যখন তাকে এ অবস্থায় দেখবে তখন তারা তার কথার উপর তার মিথ্যা সাক্ষ্যর উপর নির্ভর করবে। এটা মূলত তার নিজকে সত্যবাদীদের সাথে সাদৃশ্য দেয়ার কারণে। ব্যক্তির কাপড়দ্বয় ছিল তার মিথ্যার কারণ, ফলে কাপড়দ্বয়কে মিথ্যার কাপড়দ্বয় বলে নামকরণ করা হয়। অথবা কাপড়দ্বয় মিথ্যার কারণ না, একে চাদর এবং লুঙ্গির বিবেচনায় দ্বিবচন করা হয়েছে, অতঃপর এ মহিলাকে ঐ পুরুষের সাথে সাদৃশ্য দেয়া হয়েছে। যামাখশারী ফায়িক গ্রন্থে বলেন, কৃত্রিমতা প্রকাশকারীকে মিথ্যার দু’ কাপড় পরিধানকারী তথা যে কোনো মিথ্যাবাদীর সাথে সাদৃশ্য দেয়া হয়েছে। আর সে হলো ঐ ব্যক্তি যে লোক দেখানোর জন্য সৎ লোকেদের কাপড় পরিধান করে। ব্যক্তির দিকে দু’টি কাপড় সম্বন্ধ করেছেন। কেননা দু’টি কাপড় দু’টি পোষাকের মতো। দ্বিবচন দ্বারা উদ্দেশ্য করেছে যে, কৃত্রিমতা প্রকাশকারী ঐ ব্যক্তির মতো যে ব্যক্তি মিথ্যার দু’টি কাপড় পরিধান করেছে দু’টির একটিকে পরিধান করেছে এবং অপরটি লুঙ্গি স্বরূপ ব্যবহার করেছে। মিরকাতুল মাফাতীহে ইবনু হাজার ‘আস্ক্বালানী বলেনঃ সুতরাং সে সম্মানকে পরিধান করেছে এবং লুঙ্গি স্বরূপ ব্যবহার করেছে। সুতরাং লুঙ্গি এবং চাদর দ্বারা ঐদিকে ইঙ্গিত যে, তার মাথা হতে তার পায়ের পাতা পর্যন্ত মিথ্যা দ্বারা আচ্ছাদিত।

দ্বিবচন দ্বারা ঐ দিকে ইঙ্গিত হওয়ারও সম্ভাবনা রাখছে যে, কৃত্রিমতার মাধ্যমে তার দু’টি নিন্দনীয় অবস্থা অর্জন হয়েছে। একটি হলো যার মাধ্যমে কৃত্রিমতা প্রকাশ করেছে তার অনুপস্থিতি, অপরটি হলো- মিথ্যা প্রকাশ। এভাবে ফাত্হে আছে, আবূ ‘উবায়দাহ্ বলেনঃ সে ঐ ব্যক্তি যে ভনিতাকারী, দুনিয়া বিমুখতার কাপড় পড়ে এবং সে মনে করে যে, সে দুনিয়াবিমুখী। একমতে বলা হয়েছে- তাকে দু’টি কাপড়ের সাথে সাদৃশ্য কেবল এজন্য দেয়া হয়েছে যে, সে কৃত্রিমতা প্রকাশকারী দু’টি মিথ্যা বলেছে। অতঃপর সে তার নিজেকে এমন গুণে গুণান্বিত করেছে যা তার মাঝে নেই। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০৩৪)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাদিয়া (উপহার) ও হিবার (অনুদান) প্রসঙ্গে

৩০২৪-[৯] উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যার প্রতি কোনো উত্তম আচরণ করা হলো, আর সে উত্তম আচরণকারীকে বলল, আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। সে তার অনেক প্রশংসা করল। (তিরমিযী)[1]

وَعَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ صُنِعَ إِلَيْهِ مَعْرُوفٌ فَقَالَ لِفَاعِلِهِ: جَزَاكَ اللَّهُ خَيْرًا فَقَدْ أَبْلَغَ فِي الثَّنَاءِ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن اسامة بن زيد قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صنع اليه معروف فقال لفاعله جزاك الله خيرا فقد ابلغ في الثناء رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তির প্রতি সদাচরণ করা হবে, অর্থাৎ- কোনো কিছু দান করা হবে। অতঃপর সে তার প্রতিদান দিতে অক্ষম হয়ে দাতাকে বলবে, আল্লাহ আপনাকে ইহজীবন ও পরজীবনের সর্বোত্তম প্রতিদান দিন, তাহলে গ্রহীতা এতে দাতার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে যথার্থতা করবে। আর তা এভাবে যে, সে নিজ ঘাটতির কথা স্বীকার করল এবং যারা প্রতিদান দিতে অক্ষম সে নিজকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করল, আর তার প্রতিদানকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করল যাতে আল্লাহ তাকে পূর্ণাঙ্গ প্রতিদান দেন। বিদ্বানদের কেউ বলেন, তোমার হাতদ্বয় যখন প্রতিদান দেয়া হতে অক্ষম হয়ে পড়বে তখন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও দু‘আর ক্ষেত্রে তোমার জিহ্বা যেন দীর্ঘ হয়। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০৩৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাদিয়া (উপহার) ও হিবার (অনুদান) প্রসঙ্গে

৩০২৫-[১০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। (আহমাদ ও তিরমিযী)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ لَمْ يَشْكُرِ النَّاسَ لَمْ يَشْكُرِ اللَّهَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ

وعن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من لم يشكر الناس لم يشكر الله رواه احمد والترمذي

ব্যাখ্যা: (مَنْ لَمْ يَشْكُرِ النَّاسَ) খত্ত্বাবী বলেনঃ একে দু’ভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, তন্মধ্যে একটি হলো মানুষের অনুগ্রহকে অস্বীকার করা এবং তাদের সৎ কাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করা যার স্বভাব ও অভ্যাসের পরিণত হবে সে মহান আল্লাহর অনুগ্রহকেও অস্বীকার করা এবং তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করাও তার অভ্যাসের পরিণত হবে। দ্বিতীয়টি- বান্দার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের ব্যাপারে বান্দার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ নিঃসন্দেহে তিনি গ্রহণ করবেন না যতক্ষণ বান্দা মানুষের অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করবে এবং তাদের সদাচরণকে অস্বীকার করবে। এটা মূলত দু’টি বিষয়ের একটি অপরটির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৫৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাদিয়া (উপহার) ও হিবার (অনুদান) প্রসঙ্গে

৩০২৬-[১১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করলেন, মুহাজিরগণ তাঁর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা যাদের মধ্যে এসেছি তাঁদের চেয়ে অধিক দানশীল এবং অল্প দ্বারা হলেও সহানুভূতিশীল প্রদানের মতো কোনো সম্প্রদায় আমরা আর দেখিনি। তাঁরা আমাদের দুঃখ-কষ্টের ভাগিদার হয়েছেন এবং কষ্টার্জিত দ্রব্যে আমাদেরকে শরীক করেছেন, যাতে আমরা আশঙ্কা করছি যে, তারাই সকল সাওয়াব নিয়ে যাবেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তা ততক্ষণ পর্যন্ত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তাদের জন্য দু’আ ও প্রশংসা করবে। (তিরমিযী; তিনি এটা সহীহ বলেছেন)[1]

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: لَمَّا قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ أَتَاهُ الْمُهَاجِرُونَ فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا رَأَيْنَا قَوْمًا أَبْذَلَ مِنْ كَثِيرٍ وَلَا أَحْسَنَ مُوَاسَاةً مِنْ قَلِيلٍ مِنْ قَوْمٍ نَزَلْنَا بَيْنَ أَظْهُرِهِمْ: لَقَدْ كَفَوْنَا المؤونة وَأَشْرَكُونَا فِي الْمَهْنَأِ حَتَّى لَقَدْ خِفْنَا أَنْ يَذْهَبُوا بِالْأَجْرِ كُلِّهِ فَقَالَ: «لَا مَا دَعَوْتُمُ اللَّهَ لَهُمْ وَأَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِمْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَصَحَّحَهُ

وعن انس قال لما قدم رسول الله صلى الله عليه وسلم المدينة اتاه المهاجرون فقالوا يا رسول الله ما راينا قوما ابذل من كثير ولا احسن مواساة من قليل من قوم نزلنا بين اظهرهم لقد كفونا الموونة واشركونا في المهنا حتى لقد خفنا ان يذهبوا بالاجر كله فقال لا ما دعوتم الله لهم واثنيتم عليهم رواه الترمذي وصححه

ব্যাখ্যা: (لَمَّا قَدِمَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রথম আগমনে যখন মদীনায় আসলেন।

(أَتَاهُ الْمُهَاجِرُونَ) অর্থাৎ- আনসারীরা তাদের সেবায় আঞ্জাম দেয়া এবং তাদের বাড়ী-ঘর ও বাগানসমূহের অর্ধেক তাদেরকে দান করার পর শেষ পর্যন্ত মুহাজিরগণ যেন তাদের স্ত্রীদের বিবাহ করতে পারে সে উদ্দেশে তাদের কেউ তাঁর সর্বাধিক সুন্দরী স্ত্রীদেরকে তালাক দিল। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘তাদের পরে যারা ঘর-বাড়ী ও ঈমান লাভ করেছিল তারা তাঁদের কাছে হিজরত করে যাওয়া ব্যক্তিদেরকে ভালোবাসে এবং তাদেরকে যা দেয়া হয়েছে সে কারণে নিজেদের অন্তরে কোনো প্রয়োজন অনুভব করে না, নিজেদের ওপরে তাদেরকে প্রাধান্য দেয়, যদিও তাদের প্রয়োজন থাকে।’’ (সূরা আল হাশর, ৫৯ : ৯)

(مَا رَأَيْنَا قَوْمًا أَبْذَلَ مِنْ كَثِيرٍ وَلَا أَحْسَنَ مُوَاسَاةً مِنْ قَلِيلٍ) অর্থাৎ- অধিক সম্পদ ব্যয়কারী এবং অল্প সম্পদ দিয়ে হলেও এত অধিক উত্তম সহানুভূতি প্রকাশকারী কোনো সম্প্রদায় আমরা দেখিনি।

(مِنْ قَوْمٍ نَزَلْنَا بَيْنَ أَظْهُرِهِمْ) অর্থাৎ- আমরা যাদের কাছে এবং যাদের মাঝে অবস্থান নিয়েছি। এ অবস্থান নেয়াকালে তারা বেশি সম্পদের অধিকারী হোক অথবা কম সম্পদের মালিক হোক উভয় অবস্থায় তারা নিঃসন্দেহে আমাদের প্রতি দয়া করেছে। হাদীসাংশে قوم দ্বারা আনসারগণ উদ্দেশ্য।

(لَقَدْ كَفَوْنَا المَؤُوْنَةَ) অর্থাৎ- তারা ঘর-বাড়ী তৈরি ও খেজুর বাগান আবাদ করে ও অন্যান্য কাজের মাধ্যমে আমাদের সেবা করার কষ্ট বহন করেছ।

(وَأَشْرَكُوْنَا فِى الْمَهْنَأِ) অর্থাৎ- তারা আমাদেরকে ভাইদের মতো করে জীবন শুদ্ধি ও যথার্থতার উপযোগী তাদের কষ্টার্জিত সম্পদে অংশীদার করেছ। একমতে বলা হয়েছে, বিনা কষ্টে যা আসে তাকে الْمَهْنَأِ বলা হয়। ইবনু মালিক বলেন, তারা আমাদেরকে তাদের খেজুর বাগানের ফলে অংশীদার করেছে, খেজুর বৃক্ষক্ষ পানি ও সেগুলো মেরামত করার কষ্টে আমাদের জন্য যথেষ্ট হয়েছে এবং আমাদেরকে তাদের ফলের অর্ধেক দান করেছে। কাযী বলেন, তারা তাদেরকে তাদের যে সকল শস্য ও ফলে অংশীদার করেছে এর মাধ্যমে তারা তাই উদ্দেশ্য করছে।

(حَتّٰى لَقَدْ خِفْنَا أَنْ يَّذْهَبُوْا بِالْأَجْرِ كُلِّه) অর্থাৎ- আমাদের প্রতি আনসারীদের অনুগ্রহের আধিক্যতার কারণে আমাদের সকল ‘ইবাদাতের সাওয়াব এবং মক্কা হতে মদীনায় হিজরত করার সাওয়াব আল্লাহ তাদেরকে দিয়ে দিবেন।

(فَقَالَ النبى ﷺ : لَا) অর্থাৎ- তারা সকল পুণ্য নিয়ে যাবে না, কেননা আল্লাহর দয়া প্রশস্ত। সুতরাং তোমাদের জন্য থাকবে ‘ইবাদাত করার পুণ্য, আর তাদের জন্য থাকবে পরস্পর সহযোগিতা করার সাওয়াব।

(مَا دَعَوْتُمُ اللّٰهَ لَهُمْ وَأَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِمْ) অর্থাৎ- যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তাদের জন্য কল্যাণের দু‘আ করতে থাকবে, কেননা তোমাদের প্রতি তাদের অনুগ্রহ করার কারণে তোমাদের দু‘আ তাদের জন্য যথেষ্ট হবে, আর তোমাদের ভালো কর্মের সাওয়াব তোমাদের দিকে ফিরে আসবে। ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ তারা যখন তাদের নিজেদের ওপর ক্লেশ, ক্লান্তি বহন করেছে এবং সুখে-দুঃখে আমাদেরকে অংশীদার করেছে, তখন নিঃসন্দেহে তারা অনেক প্রতিদান পাওয়ার অধিকার অর্জন করেছে। সুতরাং কীভাবে আমরা তাদের প্রতিদান দিব? অতঃপর আল্লাহর রসূল উত্তর দিলেন না, অর্থাৎ- তোমরা যেরূপ ধারণা করেছ বিষয়টি ঐরূপ নয়, কেননা তোমরা যখন তাদের কর্মের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তাদের ব্যাপারে গুণকীর্তন করলে এবং তাদের জন্য অবিরাম দু‘আ করতে থাকলে তখন তোমরা তাদেরকে প্রতিদান দিয়ে দিলে। (তুহফাতুল আওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৪৮৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাদিয়া (উপহার) ও হিবার (অনুদান) প্রসঙ্গে

৩০২৭-[১২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা একে অপরকে হাদিয়া (উপহার) দেবে। কেননা, হাদিয়া হিংসা-বিদ্বেষ বিদূরিত করে। (তিরমিযী)[1]

وَعَنْ عَائِشَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «تَهَادُوا فَإِنَّ الْهَدِيَّةَ تُذْهِبُ الضَّغَائِنَ» . رَوَاهُ

وعن عاىشة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال تهادوا فان الهدية تذهب الضغاىن رواه

ব্যাখ্যা: (فَإِنَّ الْهَدِيَّةَ تُذْهِبُ الضَّغَائِنَ) অর্থাৎ- বিদ্বেষ, শত্রুতা দূর করে এবং প্রীতি, ভালোবাসা নিয়ে আসে। যেমন বলা হয়েছে- (تَهَادُوا تَحَابُّوا وَتَصَافَحُوا يَذْهَبُ الْغِلُّ عَنْكُمْ) অর্থাৎ- তোমরা একে অপরকে উপহার দাও, একে অপরকে ভালোবাসো, পরস্পরে মুসাফাহা কর- এ সকল আচরণ তোমাদের থেকে বিদ্বেষ দূর করবে। এটা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে ইবনু আসাকির যা বর্ণনা করেছে সে আলোকে। ত্বীবী বলেনঃ এটা এ কারণে যে, রাগ, হিংসা, বিদ্বেষ নিয়ে আসে আর উপহার সন্তুষ্টি নিয়ে আসে। সুতরাং যখন সন্তুষ্টির কারণ আগমন করবে তখন অসন্তুষ্টির কারণ দূর হয়ে যাবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাদিয়া (উপহার) ও হিবার (অনুদান) প্রসঙ্গে

৩০২৮-[১৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা একে অপরকে হাদিয়া দাও, কেননা হাদিয়া অন্তরের বিদ্বেষ, প্রচণ্ড ক্রোধ, শত্রুতা দূর করে। এক প্রতিবেশিনী অপর প্রতিবেশিনীকে হাদিয়া (উপহার) দিতে যেন কোনো প্রকার অবহেলা না করে এবং কেউ যেন হাদিয়া-কে সামান্য (তুচ্ছ) মনে না করে- যদিও তা এক টুকরা ছাগলের খুর হয়। (তিরমিযী)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «تهادوا فَإِنَّ الْهَدِيَّةَ تُذْهِبُ وَحَرَ الصَّدْرِ وَلَا تَحْقِرَنَّ جَارَةٌ لجارتها وَلَا شقّ فرسن شَاة» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن ابي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال تهادوا فان الهدية تذهب وحر الصدر ولا تحقرن جارة لجارتها ولا شق فرسن شاة رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: (وَحَرَ الصَّدْرِ) অর্থাৎ- অন্তরের বিদ্বেষ। একমতে বলা হয়েছে, বিদ্বেষ এবং রাগ। অন্যমতে বলা হয়েছে, মারাত্মক রাগ। আরো একমতে বলা হয়েছে, শত্রুতা। এভাবে নিহায়াহ্ গ্রন্থে আছে, (وَلَا تَحْقِرَنَّ جَارَةٌ لِجَارَتِهَا)। উহ্য ভাষ্য হবে- (لَا تَحْقِرَنَّ جَارَةٌ هَدِيَّةً مُهْدَاةً لِجَارَتِهَا) অর্থাৎ- কোনো প্রতিবেশিনী যেন তার নিবেদিত উপহার তার প্রতিবেশিনীকে দিতে তুচ্ছ মনে না করে। ত্বীবী একে উল্লেখ করেছেন। নিহায়াহ্ গ্রন্থে আরো আছে, (الْجَارَةُ الضَّرَّةُ) অর্থাৎ- সতীন প্রতিবেশিনী। এটা মূলত তাদের উভয়ের মাঝে সান্নিধ্য থাকার কারণে। প্রতিবেশিনী তার সতীনের ভালো লক্ষ্য করে, অতঃপর ঐ ভালো তাকে রাগান্বিত করে।(وَلَوْ شِقُّ فِرْسَنِ شَاةٍ) অর্থাৎ- পায়ের খুরের অর্ধেক অথবা তার কিছু অংশ। যেমন- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা আগুন থেকে বেঁচে থাকো, যদিও খেজুরের অংশ দিয়ে হয়। فِرْسَنِ বলতে অল্প গোশত বিশিষ্ট হাড় আর তা হলো উট এবং ছাগলের খুর। কাযী বলেন, উট এবং ছাগলের খুর যে কোনো চতুস্পদ জন্তুর খুরের স্তরে। অত্র হাদীসে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে ঐ দিকে নির্দেশনা করেছেন যে, একে অপরকে উপহার দেয়া বিদ্বেষসমূহ দূর করে, অতঃপর এ ব্যাপারে তিনি অধিক গুরুত্বারোপ করেছেন এমনকি সর্বাধিক তুচ্ছ বস্তুও উল্লেখ করেছেন, কেননা তিনি প্রতিবেশিনীকে সতীনের সাথে তুলনা করেছেন। ইবনুল মালিক বলেন, অর্থাৎ- প্রতিবেশিনীর কাছে থাকা খাদ্য অপর প্রতিবেশিনীর কাছে পাঠাও যদিও তা অল্প জিনিস হয়। মিরকাতুল মাফাতীহ প্রণেতা বলেন, আমি বলবঃ ইবনু ‘আদী ইবনু ‘আব্বাস হতে ‘‘কামিল’’ গ্রন্থে যা বর্ণনা করেছেন তা একে সমর্থন করছে। আর তা হলো, তোমরা তোমাদের মাঝে একে অপরকে খাদ্য উপহার দাও। কেননা উপহার, রিযক বৃদ্ধি করে। ত্ববারানী উম্মু হাকীম হতে বর্ণনা করেন, তোমরা একে অপরকে উপহার দাও, কেননা উপহার ভালোবাসাকে বহুগুণে বৃদ্ধি করে এবং অন্তরের বিদ্বেষ দূর করে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাদিয়া (উপহার) ও হিবার (অনুদান) প্রসঙ্গে

৩০২৯-[১৪] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন প্রকার জিনিস ফিরিয়ে দেয়া যায় না- বসার গদি বা বালিশসমূহ, তেল ও দুধ। (তিরমিযী)[1] ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, হাদীসটি গরীব। কেউ বলেছেন, তেল অর্থে এখানে সুগন্ধিকে বুঝিয়েছেন।

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ثَلَاثٌ لَا تُرَدُّ الْوَسَائِدُ وَالدُّهْنُ وَاللَّبَنُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ قِيلَ: أَرَادَ بالدهن الطّيب

وعن ابن عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ثلاث لا ترد الوساىد والدهن واللبن رواه الترمذي وقال هذا حديث غريب قيل اراد بالدهن الطيب

ব্যাখ্যা: (ثَلَاثٌ لَا تُرَدُّ) অর্থাৎ- তিন প্রকারের উপহার অতি নগণ্য হওয়া এবং উপহার দাতার কষ্ট কম হওয়ার কারণে এ উপহারগুলো ফেরত দেয়া উচিত হবে না।

ত্বীবী বলেনঃ বসার গদি, সুগন্ধি এবং দুধ দ্বারা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মেহমানকে সম্মান জানানো উদ্দেশ্য করছেন, আর তা হলো অল্প অনুদান স্বরূপ উপহার, সুতরাং এগুলো ফেরত দেয়া উচিত হবে না। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭৯০)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাদিয়া (উপহার) ও হিবার (অনুদান) প্রসঙ্গে

৩০৩০-[১৫] আবূ ’উসমান আন্ নাহদী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যখন কাউকে সুগন্ধি জাতীয় দ্রব্য দেয়া হয়, তখন সে যেন তা ফিরিয়ে না দেয়। কেননা, তা জান্নাত হতে বের হয়ে এসেছে। (তিরমিযী মুরসালরূপে)[1]

وَعَن أَبِي عُثْمَانَ النَّهْدَيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِذا أعْطى أحدكُم الرَّيْحَانَ فَلَا يَرُدُّهُ فَإِنَّهُ خَرَجَ مِنَ الْجَنَّةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ مُرْسلا

وعن ابي عثمان النهدي قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا اعطى احدكم الريحان فلا يرده فانه خرج من الجنة رواه الترمذي مرسلا

ব্যাখ্যা: (الرَّيْحَانَ) নিহায়াহ্ গ্রন্থকার বলেন, তা হলো- সকল শ্রেণীর ঘ্রাণের অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেক সুগন্ধিময় উদ্ভিদ। (فَإِنَّه خَرَجَ مِنَ الْجَنَّةِ) অর্থাৎ- এর মূল জান্নাত থেকে এসেছে, সেই সাথে এটা বহনে হালকা, অর্থাৎ- অল্প কষ্ট ও অনুদান। একে ফেরত দেয়া যাবে না। আর অনেক বস্তুই মূলত জান্নাত হতে বের হয়েছে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭৯১)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ আবূ ‘উসমান (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে