৩০২২

পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাদিয়া (উপহার) ও হিবার (অনুদান) প্রসঙ্গে

৩০২২-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক বেদুইন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একটি উটনী হাদিয়া (উপহার) দিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার প্রতিদানে তাকে ছয়টি উটনী উপহার দিলেন, কিন্তু এতে সে মনোতুষ্টি হলো না। এ খবর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পৌঁছলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করলেন। অতঃপর বললেন, অমুক আমাকে একটি উটনী হাদিয়া দিয়েছে, আর আমি তার প্রতিদানে তাকে ছয়টি উটনী হাদিয়া দিয়েছি, তবুও সে তাতে সন্তুষ্ট হলো না। আমি দৃঢ়ভাবে ইচ্ছা করেছি যে, কোনো কুরায়শী অথবা আনসারী অথবা সাকাফী অথবা দাওসী (গোত্র) ছাড়া কারো হাদিয়া গ্রহণ করব না। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّ أَعْرَابِيًّا أُهْدِيَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَكْرَةً فَعَوَّضَهُ مِنْهَا سِتَّ بَكَرَاتٍ فَتَسَخَّطَ فَبَلَغَ ذَلِكَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ: «إِنَّ فَلَانًا أَهْدَى إِلَيَّ نَاقَةً فَعَوَّضْتُهُ مِنْهَا سِتَّ بَكَرَاتٍ فَظَلَّ سَاخِطًا لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ لَا أَقْبَلَ هَدِيَّةً إِلَّا مِنْ قُرَشِيٍّ أَوْ أَنْصَارِيٍّ أَوْ ثَقَفِيٍّ أَوْ دوسي» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ

وعن ابي هريرة ان اعرابيا اهدي لرسول الله صلى الله عليه وسلم بكرة فعوضه منها ست بكرات فتسخط فبلغ ذلك النبي صلى الله عليه وسلم فحمد الله واثنى عليه ثم قال ان فلانا اهدى الي ناقة فعوضته منها ست بكرات فظل ساخطا لقد هممت ان لا اقبل هدية الا من قرشي او انصاري او ثقفي او دوسي رواه الترمذي وابو داود والنساىي

ব্যাখ্যা: এ সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উদ্বেগের কারণ ইমাম তিরমিযী যা ‘কিতাবুল মানাকিব’-এর শেষে আইয়ূব-এর হাদীস হতে সংকলন করেন, তিনি সা‘ঈদ আল মাকবূরী হতে, তিনি আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, নিশ্চয় এক বেদুঈন ব্যক্তি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একটি বকনা উট উপহার দিল, একটির বদৌলতে তিনি বেদুঈনকে ৬টি বকনা উট দিলেন। এতে বেদুঈন ব্যক্তি রাগান্বিত হলে ঐ সংবাদ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পৌঁছল। অতঃপর তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন, তাঁর গুণকীর্তন করলেন। এরপর বললেন, ‘‘নিশ্চয় অমুক আমাকে একটি উপহার দিয়েছে তার বিনিময়ে আমি তাকে ৬টি বকনা উট উপহার দিয়েছি, এরপর সে রাগান্বিত হয়েছে। নিঃসন্দেহে আমি ইচ্ছা করেছি কুরায়শ, আনসারী, সাকাফী এবং দাঊসী গোত্র ছাড়া অন্য কারো কাছে থেকে উপহার গ্রহণ না করতে। মুহাম্মাদ বিন ইসহক কর্তৃক তিরমিযীতেও আছে, মুহাম্মাদ সা‘ঈদ বিন আবূ সা‘ঈদ আল মাকবূরী বলেন, ফাযারাহ্ গোত্রের এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তার ঐ উট হতে একটি উটনী উপহার দিলেন যে উটগুলো তারা বনে পেয়েছিল। অতঃপর সে উটনীর বিনিময় স্বরূপ তিনি কিছু বিনিময় দিলে লোকটি অসন্তুষ্ট হলো, এরপর আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বারের উপর বলতে শুনেছি, ‘‘নিশ্চয় ‘আরবের কোনো লোক উপহার দেয়, অতঃপর আমার কাছে যা আছে সে পরিমাণে আমি তার প্রতিদান দেই, অতঃপর এতে সে রাগান্বিত হয় এবং আমার ওপর রাগ অব্যাহত রাখে। আল্লাহর শপথ! আমার এ স্থানের পর কুরায়শ, আনসারী, সাকাফী অথবা দাওসী গোত্র ছাড়া ‘আরবের কোনো লোক হতে আমি উপঢৌকন গ্রহণ করব না। তূরিবিশতী (রহঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তি হতে হাদিয়া গ্রহণ অপছন্দ করেছেন, হাদিয়ার বিনিময়ে যে ব্যক্তির উদ্দেশ্য আরো বেশি অনুসন্ধান করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল হাদীসে উল্লেখিতদের মাঝে অন্তরের উদারতা, সুউচ্চ লক্ষ্য এবং বদলা গ্রহণের প্রতি দৃষ্টি না থাকার যে লক্ষণ পেয়েছিলেন সে কারণে এ মর্যাদার সাথে তাদেরকে নির্দিষ্ট করেছেন।

শারহুস্ সুন্নাহ্ গ্রন্থকার বলেন, বিদ্বানগণ ঐ সাধারণ দানের ক্ষেত্রে মতানৈক্য করেছেন যাতে প্রতিদান শর্ত করা হয় না। অতঃপর ফিকহ শাস্ত্রবিদদের একদল মত পোষণ করেছেন যে, এ হাদীসের কারণে দান সাওয়াবের দাবী রাখে। আর তাদের কেউ এমন আছে যারা দানের ক্ষেত্রে মানুষকে তিন স্তরে বিন্যস্ত করেছেন। ব্যক্তিকে ঐ ব্যক্তির তরফ থেকে দান করা, যে তার অপেক্ষা নিম্ন স্তরের। এটা দ্বারা সম্মান করা হয়, এটা সওয়াবের দাবী রাখে না। এভাবে সমকক্ষ হতে সমকক্ষকে দান করা, এতেও সাওয়াবের প্রত্যাশা নেই। আরেকটি হলো ঊর্ধ্বতন ব্যক্তির তরফ হতে নিম্নস্তরের ব্যক্তিকে দান করা, এ দান সাওয়াবের দাবী রাখে। কেননা এর দ্বারা দাতা উপহার দান এবং সাওয়াবের উদ্দেশ্য করে। অতঃপর প্রতিদানের পরিমাণ প্রচলিত নিয়ম এবং সামাজিক অভ্যাস অনুযায়ী হয়। একমতে বলা হয়েছে, প্রতিদান দানকৃত বস্তুর সমমূল্যের হতে হবে। অন্যমতে বলা হয়েছে, দাতা যতক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্ট না হয়। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৫৩৪)

তুহফাতুল আহওয়াযীর ৩৯৫৭ নং হাদীসের ব্যাখ্যায় বেদুঈন ব্যক্তির রাগের কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, বেদুঈন ব্যক্তি আল্লাহর রসূলের দান ও দানের প্রবাহ সম্পর্কে যা শুনেছিল সে কারণে প্রতিদান পাওয়ার ক্ষেত্রে তার আশা ছিল অনেক বেশি। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৯ম খন্ড, হাঃ ৩৯৫৭)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع)