পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - অনাবাদী জমিন আবাদ করা ও সেচের পালা

২৯৯১-[১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক মালিকবিহীন এমন কোনো জমিন আবাদ করে, সে-ই তার প্রকৃত হকদার। ’উরওয়াহ্ (রহঃ) বলেন, ’উমার (রাঃ)-ও তাঁর খিলাফাতকালে এ আদেশ করেছিলেন। (বুখারী)[1]

بَابُ إِحْيَاءِ الْمَوَاتِ وَالشِّرِبِ

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ عَمَرَ أَرْضًا لَيْسَتْ لِأَحَدٍ فَهُوَ أَحَقُّ» . قَالَ عُرْوَةُ: قَضَى بِهِ عُمَرُ فِي خِلَافَتِهِ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

عن عاىشة رضي الله عنها عن النبي صلى الله عليه وسلم قال من عمر ارضا ليست لاحد فهو احق قال عروة قضى به عمر في خلافته رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (فَهُوَ أَحَقُّ) ইসমা‘ঈলী একটু বেশী বর্ণনা করেছেন, (فَهُوَ أَحَقُّ بها) সে ঐ জমির ব্যাপারে অন্য অপেক্ষা বেশী হকদার।

(قَضٰى بِه عُمَرُ فِىْ خِلَافَتِه) মুহাম্মাদ বিন ‘উবায়দুল্লাহ আসসাকাফী-এর সানাদে ‘উমার (রাঃ) পর্যন্ত সানাদ পরম্পরা সূত্রে পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে, যা «خراج» অধ্যায়ে আছে। মুহাম্মাদ বিন ‘উবায়দুল্লাহ আস্ সাকাফী বলেনঃ ‘উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) পত্র লিখলেন, যে ব্যক্তি কোনো মৃত ভূখণ্ডকে জীবিত করবে সে ঐ ব্যাপারে সর্বাধিক হকদার। অন্য একটি সূত্রে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘আমর বিন শু‘আয়ব অথবা অন্য কারো থেকে বর্ণনা করা হয়েছে যে, ‘উমার (রাঃ) বললেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি কোনো জমিনকে তিন বছর অকেজো ফেলে রাখবে তাকে আবাদ করবে না, অতঃপর অন্য কেউ এসে তা আবাদ করবে, তখন সে জমিন আবাদকারীর জন্যই সাব্যস্ত হবে।’’

অকেজো করে রাখা দ্বারা যেন তার উদ্দেশ্য সে জমিন পাথরে পরিণত হওয়া, কোনো কিছু নির্মাণ অথবা অন্য কিছু দ্বারা তা রক্ষা না করা। ত্বহাবী প্রথম সানাদটিকে সাকাফী পর্যন্ত উল্লেখিত সানাদে এর অপেক্ষা পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, বাসরাবাসীদের অন্তর্ভুক্ত আবূ ‘আব্দুল্লাহ নামক এক ব্যক্তি ‘উমার (রাঃ)-এর কাছে গেল। অতঃপর বলল, বাসরা ভূখণ্ডে একটি জমি আছে তা কোনো মুসলিমের নিকটে না এবং তা ভূমিকর আদায়ের জমিও না। সুতরাং আপনি যদি চান তাহলে তা আমাকে দিতে পারেন, আমি তাতে শাক-সবজি ও যায়তূনের আবাদ করব। অতঃপর ‘উমার (রাঃ) আবূ মূসা (রাঃ) এর কাছে পত্র লিখল, যদি তা এমন হয়ে থাকে তাহলে তা তাকে দাও। (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৩৩৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - অনাবাদী জমিন আবাদ করা ও সেচের পালা

২৯৯২-[২] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা’ব ইবনু জাসসামাহ্ বলেছেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ ও তাঁর রসূল ছাড়া পশু চারণের জমিন সংরক্ষণ করার অধিকার কারো নেই। (বুখারী)[1]

بَابُ إِحْيَاءِ الْمَوَاتِ وَالشِّرِبِ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ الصَّعْبَ بْنَ جَثَّامَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا حِمَى إِلَّا لِلَّهِ وَرَسُولِهِ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابن عباس ان الصعب بن جثامة قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول لا حمى الا لله ورسوله رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (لَا حِمٰى إِلَّا لِلّٰهِ وَرَسُوْلِه ﷺ) ফাতহুল বারীতে আছে, ‘আরবদের নিকট (حِمٰى) এর মূল হলো- তাদের কোনো নেতা যখন উর্বর স্থানে যেত, তখন উঁচু স্থানে একটি কুকুর দ্বারা আওয়াজ করাত, কুকুরের আওয়াজ যে পর্যন্ত পৌঁছত চতুর্দিকে ঐ স্থান পর্যন্ত সংরক্ষণ করত, তখন সেখানে অন্য কেউ প্রাণী চড়াত না অথচ ঐ নেতা অন্য চারণভূমিতে অন্যদের সাথে তার প্রাণী চড়াত।

(حِمٰى) বলতে সংরক্ষিত স্থান, তা বৈধতার বিপরীত। এর উদ্দেশ্য হলো, ঐ মৃত ভূখণ্ড আবাদ করা হতে বাধা দেয়া, যাতে সেখানে পূর্ণরূপে ঘাস উৎপন্ন হয়, অতঃপর বিশেষ প্রাণীসমূহ সেখানে চড়তে পারে এবং অন্য প্রাণীসমূহকে বাধা দিতে পারে। শাফি‘ঈদের নিকট প্রণিধানযোগ্য মাস্আলাহ্ হলো- সংরক্ষিত ভূমি খলীফার জন্য নির্দিষ্ট। তবে কেউ কেউ গভর্নরদেরকে এর সাথে সম্পর্কিত করেছেন। ইমাম ত্বহাবী মৃত ভূখণ্ড জীবিত করার ক্ষেত্রে ইমামের অনুমতিকে শর্ত করে তার মতের পক্ষে দলীল গ্রহণ করেছেন। উভয়ের মাঝে পার্থক্য করার মাধ্যমে সমালোচনা করা হয়েছে, কেননা সংরক্ষণ করা ভূমি জীবিত করা ভূমি অপেক্ষা নির্দিষ্ট। আল্লাহ সর্বাধিক জ্ঞাত। (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৩৭০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - অনাবাদী জমিন আবাদ করা ও সেচের পালা

২৯৯৩-[৩] ’উরওয়াহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাররাহ্ হতে প্রবাহিত নালার পানি বণ্টন সম্পর্কে (আমার পিতার) যুবায়র (রাঃ)-এর সাথে এক আনসারীর বিবাদ হলো। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে যুবায়র! তুমি তোমার জমিনে পানি দাও, অতঃপর তোমার প্রতিবেশীর জমিনের দিকে ছেড়ে দাও। আনসারী বলে উঠলো- আপনার ফুফাতো ভাই, এজন্য কি? এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা মুবারক মলিন হয়ে গেল। এবার তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে যুবায়র! তুমি তোমার জমিনে পানি দাও, অতঃপর তা আটকে রাখো যাতে পানি আইল পর্যন্ত পৌঁছে, অতঃপর তোমার প্রতিবেশীর জমিনের দিকে ছেড়ে দাও। এখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুস্পষ্ট নির্দেশে যুবায়রকে তার পূর্ণ হক দিয়ে দিলেন, যখন আনসারী তাঁকে রাগান্বিত করলো। আর প্রথমে উভয়ের সুবিধার জন্য তাদেরকে এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ إِحْيَاءِ الْمَوَاتِ وَالشِّرِبِ

وَعَنْ عُرْوَةَ قَالَ: خَاصَمَ الزُّبَيْرُ رَجُلًا مِنَ الْأَنْصَارِ فِي شِرَاجٍ مِنَ الْحَرَّةِ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اسْقِ يَا زُبَيْرُ ثُمَّ أَرْسِلِ الْمَاءَ إِلَى جَارِكَ» . فَقَالَ الْأَنْصَارِيُّ: أَنْ كَانَ ابْنَ عَمَّتِكَ؟ فَتَلَوَّنَ وَجْهُهُ ثُمَّ قَالَ: «اسْقِ يَا زُبَيْرُ ثُمَّ احْبِسِ الْمَاءَ حَتَّى يَرْجِعَ إِلَى الْجَدْرِ ثُمَّ أَرْسِلِ الْمَاءَ إِلَى جَارِكَ» فَاسْتَوْعَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِلزُّبَيْرِ حَقَّهُ فِي صَرِيحِ الْحُكْمِ حِينَ أحفظه الْأنْصَارِيّ وَكَانَ أَشَارَ عَلَيْهِمَا بِأَمْرٍ لَهُمَا فِيهِ سَعَةٌ

وعن عروة قال خاصم الزبير رجلا من الانصار في شراج من الحرة فقال النبي صلى الله عليه وسلم اسق يا زبير ثم ارسل الماء الى جارك فقال الانصاري ان كان ابن عمتك فتلون وجهه ثم قال اسق يا زبير ثم احبس الماء حتى يرجع الى الجدر ثم ارسل الماء الى جارك فاستوعى النبي صلى الله عليه وسلم للزبير حقه في صريح الحكم حين احفظه الانصاري وكان اشار عليهما بامر لهما فيه سعة

ব্যাখ্যা: ((شِرَاجٍ الْحَرَّةِ অর্থাৎ- পানি প্রবাহের স্থান। حَرَّة (হাররাহ্) বলা হয় ঐ সমতল জায়গাকে যেখানে কালো পাথর আছে।

(تَلَوَّنَ وَجْهُه) অর্থাৎ- নবূওয়াতের মর্যাদা নষ্ট করা এবং এ ব্যক্তির মন্দ কথার কারণে ক্রোধে তার চেহারা বিবর্ণ আকার ধারণ করল।

(يَرْجِعَ إِلَى الْجَدْرِ) এখানে (الْجَدْرِ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- দেয়ালের গোড়া। একমতে বলা হয়েছে, বৃক্ষের গোড়া, প্রথম উক্তিটি বিশুদ্ধ। বিদ্বানগণ এর পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন, সম্পূর্ণ ভূমিতে পানি এ পরিমাণ উঁচু হওয়া যে, মানুষের পায়ের টাখনু ভিজে যায়, পানির নিকটবর্তী প্রথম ভূমির মালিকের অধিকার রয়েছে, জমিনে এ সীমা পর্যন্ত পানি আটকিয়ে রাখা। অতঃপর তার ঐ প্রতিবেশীর দিকে পানি ছেড়ে দেয়া যে তার পরে আছে। আর যুবায়র ছিল প্রথম মালিক। তাই আল্লাহর রসূল তাকে তার ভালোবাসার দৃঢ়তা প্রকাশ করলেন এবং বললেন, (اسْقِ ثُمَّ أَرْسِلِ الْمَاءَ إِلٰى جَارِكَ) অর্থাৎ- তুমি তোমার অধিকার অপেক্ষা কমে তোমার জমিকে অল্প কিছু সিক্ত কর, অতঃপর তোমার প্রতিবেশীর দিকে তা ছেড়ে দাও। এটা যুবায়র-এর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ স্বরূপ। তাঁর ঐ জ্ঞান থাকার কারণে যে, তিনি এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট থাকবেন এবং তার প্রতিবেশীর প্রতি দয়াকে প্রাধান্য দিবেন। অতঃপর প্রতিবেশী যা বলার তা যখন বলল তখন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবায়রকে তার পূর্ণ অধিকার গ্রহণ করতে নির্দেশ দিলেন।

বিদ্বানগণ বলেন, যে ধরনের কথা আনসারী বলল সে ধরনের কথা যদি বর্তমানে নিজ প্রবৃত্তির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে কোনো মানুষ হতে প্রকাশ পায়, তাহলে এ ধরনের উক্তি কুফরীতে পরিণত হবে। তার ওপর মুরতাদের হুকুমসমূহ প্রয়োগ হবে। তখন শর্তসাপেক্ষে তাকে হত্যা করা আবশ্যক হবে। তাঁরা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কেবল এজন্য ছেড়ে দিয়েছেন যে, তিনি ইসলামের সূচনাতে মানুষের সাথে মিলে থাকতেন, সর্বোত্তম পন্থায় তাদের উক্তি প্রতিহত করতেন, মুনাফিক এবং যাদের অন্তরে রোগ আছে তাদের পক্ষ হতে কষ্টদানে ধৈর্য ধারণ করতেন এবং বলতেন, ‘‘সহজতা আরোপ কর কাঠিন্যতা আরোপ করো না, শুভ সংবাদ দাও, মানুষকে সংস্পর্শ হতে দূরে ঠেলে দিও না।’’ আরও বলতেন, ‘‘মানুষ যেন এ আলোচনায় লিপ্ত না হয় যে, মুহাম্মাদ তাঁর সাথীবর্গকে হত্যা করে।’’

মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘আপনি সদা তাদেরকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে দেখবেন তবে তাদের কিছু সংখ্যক ছাড়া, সুতরাং তাদেরকে উপেক্ষা করুন, তাদেরকে ক্ষমা করুন, নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে ভালোবাসেন’’- (সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ১৩)। কাযী বলেন, দাঊদী বর্ণনা করেন যে, এ লোকটি যে যুবায়র-এর সাথে বাদানুবাদ করেছিল সে মুনাফিক ছিল। (শারহে মুসলিম ১৫/১৬শ খন্ড, হাঃ ২৩৫৭)

‘শারহুস্ সুন্নাহ্’তে আছে- আল্লাহর রসূলের উক্তি ‘‘হে যুবায়র! তুমি তোমার জমি সিক্ত কর, অতঃপর তোমার প্রতিবেশীর জমির দিকে পানি ছাড়ো। এটা সদাচরণ করতে যুবায়র-এর প্রতি নির্দেশ স্বরূপ ছিল, পারস্পরিক উদারতাগ্রহণ পূর্বক ছিল, অধিকারে ছাড় দেয়ার মাধ্যমে প্রতিবেশীর সাথে উত্তম আচরণ স্বরূপ ছিল, এটা তার পক্ষ হতে নির্দেশ স্বরূপ ছিল। অতঃপর তিনি যখন আনসারীকে দেখলেন সে অধিকার সম্পর্কে অজ্ঞ, তখন তিনি যুবায়রকে তার পূর্ণ অধিকার ফিরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত অবস্থায় বিচারককে বিচার করতে নিষেধ করা সত্ত্বেও তিনি স্বীয় রাগের অবস্থায় আনসারীর বিরুদ্ধে হুকুম দিয়েছেন এটা এ কারণে যে, তিনি রাগ ও সন্তুুষ্টি উভয় অবস্থাতে না-হক তথা অন্যায় কথা বলা থেকে নিরাপদ ছিলেন।

হাদীসটিতে আছ- নিশ্চয় ঐ সকল উপত্যকা ও প্রবাহের পানি যার ঝর্ণা ও নালার মালিকানা সাব্যস্ত করা যায় না তা বৈধ। এ ক্ষেত্রে মানুষ সমান। নিঃসন্দেহে যে ব্যক্তি এ ঝর্ণা বা নালাসমূহের মধ্যে অগ্রগামী হবে সে ব্যক্তি অন্য অপেক্ষা ঐ নালা বা ঝর্ণার সর্বাধিক অধিকারী হবে। পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে উপরের অধিবাসীগণ পানি অংশের কাছাকাছি হওয়ার কারণে তাদেরকে নিম্নগামীদের উপর প্রাধান্য দিতে হবে। আর পানি অংশের উপরের অধিবাসীদের প্রয়োজন মেটানোর পর তাদের পানির যথেষ্টতা মনে করা হবে, অতঃপর পানি অংশের নিম্নগামীরা পানি নিবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উরওয়াহ (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - অনাবাদী জমিন আবাদ করা ও সেচের পালা

২৯৯৪-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অতিরিক্ত ঘাসে বাধা দেয়ার উদ্দেশে তোমরা কাউকেও অতিরিক্ত পানিতে বাধা দিয়ো না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ إِحْيَاءِ الْمَوَاتِ وَالشِّرِبِ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تمنعوا فضل المَاء لتمنعوا بِهِ فضل الْكلأ»

عن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا تمنعوا فضل الماء لتمنعوا به فضل الكلا

ব্যাখ্যা: মিরকাতুল মাফাতীহ-এর ২৮৫৮ নং হাদীস এ শ্রেণীর হাদীস, তাতে বলা হয়েছে, (قَالَ نَهٰى رَسُولُ اللّٰهِ - ﷺ - عَنْ بَيْعِ فَضْلِ الْمَاءِ) অর্থাৎ- ‘‘জাবির বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানির অতিরিক্তাংশ বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন।’’ তথা যে ব্যক্তি পানির অতিরিক্তাংশ তার প্রাণীকে পান করাতে চায় তার কাছে তা বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন, পক্ষান্তরে কেউ যদি সে পানি শস্য ক্ষেত অথবা খেজুর বাগানে দিতে চায় তাহলে মূল্য ছাড়া তা তাকে দান না করা পানির মালিকের জন্য বৈধ হবে।
আর ২৮৫৯ নং হাদীসে এসেছে, (وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللّٰهِ - ﷺ - لَا يُبَاعُ فَضْلُ الْمَاءِ لِيُبَاعَ بِه الْكَلَأُ) অর্থাৎ- আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অতিরিক্ত পানি বিক্রয় করা যাবে না যাতে এর মাধ্যমে ঘাস বিক্রি করা হয়। অর্থাৎ- কূপের মালিক তার প্রয়োজনাতিরিক্ত পানি বিক্রয় করবে না, কেননা ক্রেতা তখন ঐ ভূমিতে চড়তে মুখাপেক্ষী প্রাণীসমূহের মালিকের ওপর কঠোরতা আরোপ করবে, অতঃপর এ বিষয়টি তাদেরকে পানিওয়ালার নির্যাতন সীমাতিক্রম করার কারণে শুধু পানি অথবা পানি এবং ঘাস উভয়টি ক্রয় করতে বাধ্য করবে। পরিশেষে পানি এবং ঘাস ক্রয় না করা পর্যন্ত তাদের তা সম্ভব হবে না।

এটা পূর্ণাঙ্গ অবিচার ও সীমালঙ্ঘন। চতুস্পদ জন্তুর মালিকেরা তাদের চতুস্পদ জন্তুদেরকে পানি পান করানো এবং মাঠে চড়ানো সম্ভবপর হওয়ার নিমিত্তে পানির বিনিময়ে যে সম্পদ তারা ব্যয় করেছে সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি ক্রয় করাকে ঘাস ক্রয় করার স্থলাভিষিক্ত করেছেন। খত্ত্বাবী বলেনঃ এর ব্যাখ্যা হলো নিশ্চয় কোনো লোক যখন কোনো মৃত ভূখণ্ডে কূপ খনন করবে, অতঃপর তা আবাদের মাধ্যমে তার মালিকানা অর্জন করবে, অতঃপর কোনো সম্প্রদায় ঐ মৃত ভূখণ্ডে এসে তার ঘাসে প্রাণী চড়াবে, এমতাবস্থায় সেখানে ঐ কূপ ছাড়া পানি না থাকলে তখন কূপের মালিকের পক্ষে এ সম্প্রদায়কে ঐ পানি পান করানো হতে বাধা দেয়া বৈধ হবে না। কেননা সে যদি তাদেরকে পানি হতে বাধা দেয় তাহলে প্রাণীর মালিকদের পক্ষে ঐ মাঠে প্রাণী চড়ানো সম্ভব হবে না। তখন প্রাণীর মালিকদেরকে পানি হতে বাধা দেয়া শত্রুতা স্বরূপ গণ্য হবে। আর এটা বৈধ নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - অনাবাদী জমিন আবাদ করা ও সেচের পালা

২৯৯৫-[৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তিন শ্রেণী লোকের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদের প্রতি (রহমতের দৃষ্টিতে) দেখবেন না। [১] যে লোক কোনো পণ্য-সামগ্রীর ব্যাপারে শপথ করেছে যে, ’এটার যে মূল্য বলা হয়েছে তার চেয়ে বেশি মূল্য বলা হয়ে গেছে’, অথচ সে মিথ্যা বলছে। [২] যে লোক অপর কোনো মুসলিমের মাল অন্যায়ভাবে গ্রহণ করতে ’আসরের পর মিথ্যা শপথ করেছে এবং [৩] যে লোক প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানিতে বাধা দিয়েছে। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আজ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করা হতে বিরত থাকব, যেভাবে তুমি প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি প্রদান করা হতে বিরত ছিলে যা তোমার হাত সৃষ্টি করেনি। [আর জাবির -এর বর্ণিত হাদীস নিষিদ্ধ ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে]।(বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ إِحْيَاءِ الْمَوَاتِ وَالشِّرِبِ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ رَجُلٌ حَلَفَ عَلَى سِلْعَةٍ لَقَدْ أُعْطِيَ بِهَا أَكْثَرَ مِمَّا أُعْطِيَ وَهُوَ كَاذِبٌ وَرَجُلٌ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ كَاذِبَةٍ بَعْدَ الْعَصْرِ لِيَقْتَطِعَ بِهَا مَالَ رَجُلٍ مُسْلِمٍ وَرَجُلٌ مَنَعَ فَضْلَ مَاءٍ فَيَقُولُ اللَّهُ: الْيَوْمَ أَمْنَعُكَ فَضْلِي كَمَا مَنَعْتَ فَضْلَ مَاء لم تعْمل يداك «
وَذُكِرَ حَدِيثُ جَابِرٍ فِي» بَابِ الْمَنْهِيِّ عَنْهَا من الْبيُوع

وعنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ثلاثة لا يكلمهم الله يوم القيامة ولا ينظر اليهم رجل حلف على سلعة لقد اعطي بها اكثر مما اعطي وهو كاذب ورجل حلف على يمين كاذبة بعد العصر ليقتطع بها مال رجل مسلم ورجل منع فضل ماء فيقول الله اليوم امنعك فضلي كما منعت فضل ماء لم تعمل يداك وذكر حديث جابر في باب المنهي عنها من البيوع

ব্যাখ্যা: (بَعْدَ الْعَصْرِ) ‘আসরের সময়কে কেবল এজন্য নির্দিষ্ট করেছেন, কেননা প্রয়োজনীয় শপথসমূহ এ সময়ে সংঘটিত হয়। একমতে বলা হয়েছে, কেননা সে সময়টি লাভবান না হয়ে নিজ পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার সময়। ফলে তখন লাভবান হতে মিথ্যা শপথ করে। একমতে বলা হয়েছে, সে সময়টি উল্লেখ করেছেন, কেননা তা সময়ের মাঝে সম্মানিত সময় হিসেবে বিবেচিত। সুতরাং ঐ সময়ে মিথ্যা শপথ হবে সর্বাধিক ঘৃণিত। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৫ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে