পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কার হারামকে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সংরক্ষণ প্রসঙ্গে

মক্কার এ পবিত্র ও বারাকাতময় ভূমির প্রসিদ্ধ নাম مَكَّةَ মক্কা। তবে আল্লাহ তা’আলা এ ভূমিকে পাঁচটি নামে অভিহিত করেছেন। ১. মক্কা ২. বাক্কাহ্ ৩. আল বালাদ ৪. আল ক্বরি’আহ্ ৫. উম্মুল কুরা।

হারামের মাক্কী সীমানা: মক্কা থেকে মদীনার পথে : মক্কা থেকে তিন অথবা চার মাইল দূরবর্তী তান্’ঈম। মক্কা থেকে ইয়ামানের পথে : মক্কা থেকে ছয় মাইল অথবা সাত মাইল দূরে আযাহ এর প্রান্ত পর্যন্ত। মক্কা জি’রানাহ্ এর পথে বারো মাইল পর্যন্ত। ত্বয়িফের দিকে ’আরাফার ময়দানের পাশে অবস্থিত নামিরাহ্ পর্যন্ত। আর জিদ্দার দিকে দশ মাইল।


২৭১৫-[১] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল­াহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন বলেছেনঃ আর হিজরত নেই, তবে অবশিষ্ট আছে জিহাদ ও নিয়্যাত। তাই যখন তোমাদেরকে জিহাদের জন্য বের হতে বলা হবে, বের হয়ে পড়বে। সেদিন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার বললেন, এ শহরকে সেদিন হতে আল্লাহ তা’আলা সম্মানিত করেছেন যেদিন তিনি আকাশ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন; আর এটা ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত আল্লাহর সম্মানেই সম্মানিত (হারাম বা পবিত্র) থাকবে। এ শহরে আমার আগে কারো জন্য যুদ্ধ করা হালাল ছিল না আর আমার জন্যও একদিনের অল্প সময়ের জন্য মাত্র হালাল করা হয়েছিল। অতঃপর তা ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত আল্লাহর সম্মানেই সম্মানিত। এ শহরের কাঁটাযুক্ত গাছ পর্যন্ত কাটা যাবে না, এখানে শিকার হাঁকানো যাবে না, এর রাস্তায় পড়ে থাকা কোন জিনিস ঘোষণাকারী ছাড়া কেউ উঠাতে পারবে না। আর এর ঘাসও কাটতে পারবে না। বর্ণনাকারী ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলেন, এ সময় ’আব্বাস(রাঃ) বলে উঠলেন, হে আল্লাহর রসূল! ইযখির ঘাস ছাড়া? এ ঘাসতো কর্মকরদের জন্যে ও লোকদের ঘরের জন্য বিশেষ প্রয়োজন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ঠিক আছে ইযখির ঘাস ছাড়া। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ حَرَمِ مَكَّةَ حَرَسَهَا اللهُ تَعَالٰى

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ: «لَا هِجرةَ وَلَكِنْ جِهَادٌ وَنِيَّةٌ وَإِذَا اسْتُنْفِرْتُمْ فَانْفِرُوا» . وَقَالَ يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ: «إِنَّ هَذَا الْبَلَدَ حَرَّمَهُ اللَّهُ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فَهُوَ حَرَامٌ بِحُرْمَةِ اللَّهِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَإِنَّهُ لَمْ يحِلَّ القتالُ فيهِ لأحدٍ قبْلي وَلم يحِلَّ لِي إِلَّا سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ فَهُوَ حَرَامٌ بِحُرْمَةِ اللَّهِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا يُعْضَدُ شَوْكُهُ وَلَا يُنَفَّرُ صَيْدُهُ وَلَا يَلْتَقِطُ لُقَطَتُهُ إِلَّا مَنْ عَرَّفَهَا وَلَا يُخْتَلَى خَلَاهَا» . فَقَالَ الْعَبَّاسُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِلَّا الْإِذْخِرَ فَإِنَّهُ لِقَيْنِهِمْ وَلِبُيُوتِهِمْ؟ فَقَالَ: «إِلَّا الْإِذْخِرَ»

عن ابن عباس قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم فتح مكة لا هجرة ولكن جهاد ونية واذا استنفرتم فانفروا وقال يوم فتح مكة ان هذا البلد حرمه الله يوم خلق السماوات والارض فهو حرام بحرمة الله الى يوم القيامة وانه لم يحل القتال فيه لاحد قبلي ولم يحل لي الا ساعة من نهار فهو حرام بحرمة الله الى يوم القيامة لا يعضد شوكه ولا ينفر صيده ولا يلتقط لقطته الا من عرفها ولا يختلى خلاها فقال العباس يا رسول الله الا الاذخر فانه لقينهم ولبيوتهم فقال الا الاذخر

ব্যাখ্যা: (لَا هِجْرَةَ) হিজরত নেই। অর্থাৎ- মক্কা বিজয়ের পর এখন আর মক্কা থেকে হিজরত করার সুযোগ নেই। এতে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, কোন অঞ্চলে মুসলিমগণ বিজয় লাভ করলে সে অঞ্চল থেকে কোন মুসলিমের হিজরত করার আর সুযোগ থাকে না যেমনটি বিজয়ের পূর্বে এ সুযোগ থাকে। কোন অঞ্চল মুসলিমগণ বিজয় করার পূর্বে সে অঞ্চলের মুসলিমদের তিনটি অবস্থা,

১. মুসলিম ব্যক্তি- ঐ অঞ্চলে তার ইসলাম প্রকাশ করতে পারেনা এবং তার ওপর ওয়াজিব কার্যাবলী সম্পাদন করতে পারেনা। আর সে ব্যক্তি ঐ অঞ্চল থেকে হিজরত করতেও সক্ষম। এমতাবস্থায় তার জন্য হিজরত করা ওয়াজিব।

২. মুসলিম ব্যক্তি- ঐ অঞ্চলে তার ইসলামকে প্রকাশ করতে পারে এবং তার ওপর ওয়াজিব কার্যাবলীও সম্পাদন করতে পারে। সেই সাথে উক্ত অঞ্চল হতে হিজরত করতেও সক্ষম। এমতাবস্থায় তার জন্য হিজরত মুস্তাহাব যাতে সে মুসলিমদের সাথে মিলিত হয়ে তাদের সহযোগিতা করতে পারে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারে। সেই সাথে কাফিরদের গাদ্দারী থেকে নিরাপত্তা লাভ করতে পারে। অন্যায় কাজ দর্শনের কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে পারে।

৩. অসুস্থতা অথবা আবদ্ধ থাকার কারণে অথবা অন্য কোন উযরের কারণে হিজরত করতে অক্ষম, এমতাবস্থায় তার জন্য উক্ত অঞ্চলে অবস্থান করা বৈধ। তবে কোন উপায়ে কষ্ট স্বীকার করে যদি সে অঞ্চল হতে হিজরত করতে পারে তাহলে সাওয়াবের অধিকারী হবে।

(وَإِذَا اسْتُنْفِرْتُمْ فَانْفِرُوْا) ‘‘যখন তোমাদেরকে জিহাদে যাওয়ার জন্য ডাকা হয় তখন তোমরা জিহাদের জন্য বের হও।’’ অর্থাৎ- মুসলিম শাসক যখন তোমাদেরকে যুদ্ধে যাওয়ার নির্দেশ দেন তখন তোমরা যুদ্ধের জন্য বেরিয়ে পরবে।

হাদীসের শিক্ষাঃ

১. মক্কা নগরী স্থায়ীভাবে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকার সুসংবাদ। যেহেতু সেখান থেকে আর হিজরত প্রয়োজন হবে না। অতএব এটা সুনিশ্চিত যে, মক্কা আর কখনো কাফিরদের হস্তগত হবে না।

২. ইমাম তথা মুসলিম শাসক যাকে যুদ্ধে যাওয়ার নির্দেশ দিবে তার জন্য জিহাদে অংশগ্রহণ করা ফারযে ‘আইন।

৩. নিয়্যাতের উপর ‘আমলের পুরস্কার তথা প্রতিদান নির্ভরশীল।

 (فَهُوَ حَرَامٌ بِحُرْمَةِ اللّٰهِ إِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ) ‘‘মক্কা নগরীকে আল্লাহ তা‘আলা হারাম (সম্মানিত) ঘোষণা করার ফলে তা ক্বিয়ামাত পর্যন্ত হারাম তথা সম্মানিত থাকবে।’’ অর্থাৎ- মক্কা নগরীর এ মর্যাদা কখনো রহিত হবে না, রবং তা ক্বিয়ামাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী বলেন, অত্র হাদীসটি মক্কা নগরীতে হত্যা করা ও যুদ্ধ-বিগ্রহ করা হারাম হওয়ার দলীল। তবে কোন ব্যক্তি যদি মক্কা নগরীতে হত্যাকান্ড ঘটায় ক্বিসাস স্বরূপ ঐ হত্যাকারীকে হত্যা করা বৈধ। এ বিষয়ে ‘আলিমদের ঐকমত্য রয়েছে।

কোন ব্যক্তি যদি মক্কার বাইরে হত্যাকান্ড ঘটিয়ে মক্কা নগরীতে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে তাহলে ক্বিসাস স্বরূপ তাকে মক্কা নগরীতে হত্যা করা বৈধ হবে কিনা- এ বিষয়ে ‘আলিমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে।

* ইমাম আবূ ইউসুফ বলেন, তাকে বলপূর্বক হারাম থেকে বের করে ক্বিসাস করতে হবে।

* ইমাম মালিক ও শাফি‘ঈর মতে মক্কা নগরীতেই তার ওপর শাস্তি কার্যকর করা যাবে। কেননা অপরাধী স্বয়ং তার মর্যাদা বিনষ্ট করে আল্লাহর দেয়া নিরাপত্তা সে বাতিল করে ফেলেছে।

(لَا يُنَفَّرُ صَيْدُه) শিকারী জানোয়ারকে তা থেকে বিতাড়িত করা যাবে না। কোন ব্যক্তি যদি হারাম অঞ্চল থেকে শিকারী পশু তাড়িয়ে দেয় তারপরও ঐ পশু নিরাপদ থাকে তাহলে বিতাড়নকারীর ওপর কোন প্রকার কাফফারাহ বর্তাবে না। কিন্তু যদি বিতাড়ন করার মাধ্যমে ঐ পশুকে স্বয়ং ধ্বংস করে অথবা তার বিতাড়নের কারণে ঐ পশু ধ্বংসে পতিত হয় তাহলে বিতাড়নকারীকে কাফফারাহ্ দিতে হবে। অর্থাৎ- যে ধরনের পশু সে ধ্বংস করলো ঐ ধরনের পশু ক্রয় করে অথবা তার মূল্য দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করতে হবে।

(إِلَّا الْإِذْخِرَ) ‘‘তবে ইযখির কাটা যাবে।’’ ইযখির এক প্রকার ঘাস যা মক্কাবাসীগণ তাদের ঘরের ছাদ নির্মাণে এবং কর্মকারগণ জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তাই ‘আব্বাস (রাঃ) এ ঘাস কাটার অনুমতি চাইলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা কাটার অনুমতি দিলেন। কিন্তু এ অনুমতি কি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ থেকেই দিলেন নাকি আল্লাহর নির্দেশে এ অনুমতি দিলেন?

সঠিক কথা হল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ অনুমতি আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর হুকুম তাঁর বান্দাদের প্রতি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়ে দিয়েছেন। এ নির্দেশ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইলহামের মাধ্যমেও পেতে পারেন অথবা ওয়াহীর মাধ্যমে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কার হারামকে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সংরক্ষণ প্রসঙ্গে

২৭১৬-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) এর বর্ণনায় রয়েছে, এর গাছ-পালা কাটা যাবে না এবং এর পথে-ঘাটে পড়ে থাকা জিনিস ঘোষণাকারী ছাড়া উঠাতে পারবে না। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ حَرَمِ مَكَّةَ حَرَسَهَا اللهُ تَعَالٰى

وَفِي رِوَايَة لأبي هريرةَ: «لَا يُعضدُ شجرُها وَلَا يلتَقطُ ساقطتَها إِلاَّ مُنشِدٌ»

وفي رواية لابي هريرة لا يعضد شجرها ولا يلتقط ساقطتها الا منشد

ব্যাখ্যা: (لَا يُعْضَدُ شَجَرُهَا) ‘‘তার গাছ কাটা যাবে না।’’ জেনে রাখা দরকার যে, হারাম এলাকার উদ্ভিদ ও তৃণ চার প্রকারের।

১. যে সকল উদ্ভিদ প্রকৃতপক্ষেই মানুষ উৎপাদন করেছে আর তা সাধারণত মানুষ উৎপাদন করে এমন জাতের উদ্ভিদ, যেমনঃ শস্য।

২. যা মানুষ উৎপাদন করেছে কিন্তু সাধারণত মানুষ উৎপাদন করে এমন জাতের উদ্ভিদ নয়, যেমনঃ ‘আরাক্ব গাছ যা দ্বারা মিসওয়াক করা হয়।

৩. যা এমনিতেই গজিয়েছে কিন্তু তা এমন জাতের উদ্ভিদ যা সাধারণত মানুষ উৎপাদন করে থাকে

হারাম এলাকার এ তিন প্রকারের উদ্ভিদ কেটে ফেলা অথবা তা উপড়িয়ে ফেলা বৈধ এবং তা ব্যবহার করাও জায়িয। এজন্য কোন কাফফারাহ দিতে হবে না।

৪. যে সকল উদ্ভিদ নিজে নিজেই গজিয়েছে আর তা এমন জাতের যা সাধারণত মানুষ উৎপাদন করে না- এ ধরনের উদ্ভিদ কাটা বা তুলে ফেলা হারাম। চাই তা কোন মানুষের নিজস্ব ভূমিতে হোক বা অন্য কোন জায়গায় হোক। তবে তন্মধ্য হতে যা মরে শুকিয়ে গেছে তা কাটা বা তুলে ফেলা বৈধ। কেননা তা এখন জ্বালানী কাঠে পরিণত হয়েছে। তবে ইযখির ঘাস তা তাজাই হোক বা শুকনা হোক উভয়টিই কাটা বৈধ।

হারাম এলাকায় স্বয়ং উৎপাদিত আরাক গাছ, অনুরূপভাবে সকল প্রকার গাছ যা স্বয়ং উৎপাদিত হয় তা যতক্ষণ তাজা থাকে তা দ্বারা মিসওয়াক বানানো বৈধ নয়। তবে কোন গাছের পাতা ছিঁড়লে তা যদি গাছের জন্য ক্ষতিকর না হয় তাহলে তা ছেঁড়া বৈধ।

(وَلَا يَلْتَقِطُ سَاقِطَتَهَا إِلاَّ مُنشِدٌ) ‘‘প্রচারকারী ব্যতীত অন্য কেউ তাতে পরে থাকা দ্রব্য উঠাবে না।’’

জমহূর ‘আলিমদের মতে হারাম মাক্কী অঞ্চলে রাস্তায় পড়ে থাকা মালের মালিক হওয়ার উদ্দেশে তুলে নেয়া বৈধ নয়। শুধুমাত্র প্রচার করার উদ্দেশে তুলে নেয়া বৈধ। যদিও হারামের বাহির অঞ্চলে পড়ে থাকা মাল মালিকানা লাভের উদ্দেশে তুলে নেয়া বৈধ।

হানাফী ও মালিকীদের মতে হারাম ও তার বাহির অঞ্চল উভয় এলাকার মালের হুকুম একই। অর্থাৎ- মালিকানা লাভের উদ্দেশে তা কুড়িয়ে নেয়া বৈধ।

শিক্ষাঃ ‘আল্লামা মুল্লা আলী কারী হানাফী বলেন, শাফি‘ঈদের মতে হারাম এলাকার মাটি ও তার পাথর অন্য এলাকায় নিয়ে যাওয়া হারাম। আর অধিকাংশ ‘আলিমের মতে তা মাকরূহ।

ইবনু ‘উমার ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা উভয়েই হারাম এলাকার মাটি ও পাথর হারামের বাহিরে নিয়ে যাওয়াকে অপছন্দ করতেন। আবূ হানীফার মতে এ কাজে কোন ক্ষতি নেই।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কার হারামকে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সংরক্ষণ প্রসঙ্গে

২৭১৭-[৩] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, মক্কায় অস্ত্র বহন করা কারো জন্য হালাল নয়। (মুসলিম)[1]

بَابُ حَرَمِ مَكَّةَ حَرَسَهَا اللهُ تَعَالٰى

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا يَحِلُّ لِأَحَدِكُمْ أَنْ يَحْمِلَ بمكةَ السِّلَاح» . رَوَاهُ مُسلم

وعن جابر قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول لا يحل لاحدكم ان يحمل بمكة السلاح رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (لَا يَحِلُّ لِأَحَدِكُمْ أَنْ يَحْمِلَ بِمَكَّةَ السِّلَاحَ) ‘‘তোমাদের কারো জন্যই মক্কাতে অস্ত্র বহন করে নিয়ে যাওয়া বৈধ নয়।’’

জমহূরের মতে প্রয়োজন ব্যতীত মক্কাতে অস্ত্র বহন করা বৈধ নয়। হাসান বাসরীর মতে কোনভাবেই তাতে অস্ত্র বহন করা বৈধ নয়। জমহূরের দলীলঃ বারা  বর্ণিত হাদীস যাতে আছে- ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলকদ মাসে ‘উমরা করতে রওয়ানা হলে মক্কাবাসী তাকে বাধা প্রদান করে। অতঃপর তারা এ মর্মে চুক্তিতে উপনীত হন যে, মুসলিমগণ কোষবদ্ধ তরবারি নিয়ে মক্কাতে প্রবেশ করতে পারবে।

ইবনু ‘উমার (রাঃ) বর্ণিত হাদীস ‘‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘উমরা করার উদ্দেশে বের হলে মক্কার কুরায়শগণ তাকে বাধা প্রদান করে। অতঃপর তারা এ মর্মে চুক্তিতে উপনীত হন যে, পরবর্তী বৎসর তারা শুধুমাত্র তরবারি নিয়ে মক্কাতে প্রবেশ করতে পারবে।’’ এ হাদীস দু’টি ইমাম বুখারী বর্ণনা করেছেন। ‘আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ উপরে বর্ণিত হাদীসদ্বয় প্রমাণ করে যে, প্রয়োজনে মক্কাতে অস্ত্র বহন করা বৈধ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কার হারামকে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সংরক্ষণ প্রসঙ্গে

২৭১৮-[৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন মক্কায় প্রবেশ করার সময় তাঁর মাথায় ছিল লোহার শিরস্ত্রাণ। যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শিরস্ত্রাণটি খুললেন জনৈক ব্যক্তি এসে বললো, ইবনু খাত্বাল কা’বার গেলাফের সাথে ঝুলে (আশ্রয় নিয়েছে) রয়েছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাকে হত্যা করো। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ حَرَمِ مَكَّةَ حَرَسَهَا اللهُ تَعَالٰى

وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ مَكَّةَ يَوْمَ الْفَتْحِ وَعَلَى رَأْسِهِ الْمِغْفَرُ فَلَمَّا نَزَعَهُ جَاءَ رَجُلٌ وَقَالَ: إِنَّ ابْنَ خَطَلٍ مُتَعَلِّقٌ بِأَسْتَارِ الْكَعْبَةِ. فَقَالَ: «اقتله»

وعن انس ان النبي صلى الله عليه وسلم دخل مكة يوم الفتح وعلى راسه المغفر فلما نزعه جاء رجل وقال ان ابن خطل متعلق باستار الكعبة فقال اقتله

ব্যাখ্যা: (وَعَلٰى رَأْسِهِ الْمِغْفَرُ) ‘‘তাঁর মাথায় ছিল লোহার টুপি (হেলমেট)।’’ জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ আছে যে, ‘‘তাঁর মাথায় ছিল কালো রং-এর পাগড়ী’’- এ হাদীসদ্বয়ের মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই। কেননা এ সম্ভাবনা রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাগড়ীর উপর লোহার টুপি পরেছিলেন। অথবা টুপির উপর পাগড়ী পেঁচানো ছিল। অথবা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় প্রবেশ করেন তখন তাঁর মাথায় লোহার টুপি ছিল। যুদ্ধ শেষে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লোহার টুপি ফেলে দিয়ে পাগড়ী পরেছিলেন।

সহীহ মুসলিমে ‘আমর ইবনু হুরায়স থেকে বর্ণিত আছে যে, সেদিন নাবী ভাষণ দিয়েছিলেন সে সময় তাঁর মাথায় কালো রং-এর পাগড়ী ছিল। কেননা এ ভাষণ ছিল বিজয় সম্পন্ন হওয়ার পরে কাবা ঘরের দরজার নিকটে।

إِنَّ ابْنَ خَطَلٍ مُتَعَلِّقٌ بِأَسْتَارِ الْكَعْبَةِ. فَقَالَ: اُقْتُلْهُ

‘‘ইবনু খাত্বাল কাবা ঘরের চাদর ধরে লটকে আছে।’’ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে হত্যা করো।’’

ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ইবনু খাত্বাল-এর নাম ছিল ‘আবদুল ‘উযযা। ইসলামে প্রবেশ করার পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম রাখেন ‘আব্দুল্লাহ। ইবনু ইসহাক মাগাযীতে উল্লেখ করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনু খাত্বালকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়ার কারণ এই যে, তিনি মুসলিম ছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে যাকাত আদায় করার জন্য প্রেরণ করেন। তার সাথে একজন আনসারী ব্যক্তি এবং একজন মুক্ত দাস প্রেরণ করেন। এ দাস তার সেবায় নিয়োজিত ছিল। এ খাদিমও মুসলিম ছিল। তিনি রাস্তায় একস্থানে বিশ্রামের জন্য অবতরণ করেন এবং খাদিমকে একটি পাঠা যাবাহ করে খাদ্য প্রস্ত্তত করার নির্দেশ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম জেগে দেখতে পান যে, খাদিম তার জন্য কিছুই করেননি। ফলে তার উপর চড়াও হয়ে তাকে হত্যা করে এবং পুনরায় মুশরিক হয়ে মক্কাতে চলে যায়। তার দু’জন গায়িকা ছিল যারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে কুৎসা গাইত। তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

ওয়াক্বিদী উল্লেখ করেন যে, ইবনু খাত্বাল-এর কাবা ঘরের চাদর ধরে লটকে থাকার কারণ এই ছিল যে, সে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য একটি ঘোড়া ও তীর ধনুক নিয়ে জানদামাহ্ নামক স্থানে গমন করে। যখন সে আল্লাহর রাহে যুদ্ধরত মুসলিম বাহিনী দেখতে পায় তখন তার মাঝে ভয় প্রবেশ করে এমনকি ভয়ে কম্পনের কারণে ঘোড়ার উপর স্থির থাকতেও অক্ষম হয়ে পড়ে। তাই সে ঘোড়া থেকে নেমে অস্ত্র ফেলে দিয়ে নিরাপত্তার জন্য কাবা ঘরের চাদর ধরে বাঁচার চেষ্টা করে। মুসলিম বাহিনীর এক ব্যক্তি তার ঘোড়া ও অস্ত্র স্বীয় অধিকারে নিয়ে ঘোড়ায় আরোহণ করে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গিয়ে তাঁকে বিষয়টি অবহিত করেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হত্যার নির্দেশ দেন। অতঃপর তাকে হত্যা করা হয়। তাকে কে হত্যা করেছিল তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ওয়াক্বিদীর মতে তার হত্যাকারী ছিল আবূ বারযাহ্ আল্ আসলামী।

ইবনু খাত্বাল কাবা ঘরের চাদর ধরে আশ্রয় গ্রহণ করার পরও তাকে হত্যার বিষয়টিকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করা হয় যে, যাকে হত্যা করা ওয়াজিব এমন অপরাধী কাবা ঘরে তথা হারামে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করলেও তাকে আশ্রয় দেয়া হবে না। বরং এমন অপরাধীকে হারামেও হত্যা করা জায়িয। যারা বলেন, তা বৈধ নয় তারা বলেন তা ছিল ঐ সময় যখন হারামে হত্যা করা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য বৈধ করা হয়েছিল। আর তা ছিল সাময়িক। এরপর হত্যা করা পূর্বের মতই হারাম

‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, হজ্জ/হজ বা ‘উমরা করতে ইচ্ছুক নয় এমন ব্যক্তির জন্য ইহরাম ব্যতীতই মক্কাতে প্রবেশ করা বৈধ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কার হারামকে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সংরক্ষণ প্রসঙ্গে

২৭১৯-[৫] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল­াহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন ইহরাম বাঁধা ছাড়াই মক্কায় প্রবেশ করেছিলেন তখন তাঁর মাথায় একটি কালো পাগড়ী ছিল। (মুসলিম)[1]

بَابُ حَرَمِ مَكَّةَ حَرَسَهَا اللهُ تَعَالٰى

وَعَنْ جَابِرٍ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ وَعَلَيْهِ عمامةٌ سوْداءُ بِغَيْر إِحْرَام. رَوَاهُ مُسلم

وعن جابر ان رسول الله صلى الله عليه وسلم دخل يوم فتح مكة وعليه عمامة سوداء بغير احرام رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (وَعَلَيْهِ عِمَامَةٌ سَوْدَاءُ) ‘‘তার মাথায় ছিল কালো রং-এর পাগড়ী।’’

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, কালো রং-এর পোষাক পরিধান করা বৈধ। অন্য বর্ণনায় আছে- তাঁর মাথায় কালো পাগড়ী ছিল এমতাবস্থায় ভাষণ দিয়েছেন। এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, কালো রং-এর পাগড়ী পরিধান করে খুৎবাহ্ তথা ভাষণ দেয়া বৈধ। যদিও সাদা পাগড়ী পরিধান করা উত্তম।

(بِغَيْرِ إِحْرَامٍ) ‘‘ইহরামবিহীন অবস্থায় (তিনি মক্কা প্রবেশ করেন)’’ হাদীসের এ অংশটুকু ইবনু দাক্বীক্ব আল ‘ঈদ-এর ঐ মত প্রত্যাখ্যান করে যে, তিনি ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। কিন্তু ওযরের কারণে মাথায় শিরস্ত্রাণ (লোহার টুপি) পড়েছিলেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কার হারামকে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সংরক্ষণ প্রসঙ্গে

২৭২০-[৬] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল­াহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (শেষ জামানায়) কাবা ঘর ধ্বংস করার জন্য এক বিশাল বাহিনী রওয়ানা হবে। কিন্তু যখন তারা এক সমতল ময়দানে এসে পৌঁছবে, তাদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকলকেই জমিনে ধসিয়ে দেয়া হবে। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! কি করে তাদের প্রথম থেকে শেষ ব্যক্তিটি পর্যন্ত ধসিয়ে দেয়া হবে, তাদের মধ্যে বাজার থাকবে এবং এমন লোকও থাকবে যারা এদের দলভুক্ত নয়। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, নিশ্চয়ই তাদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকলকে ধসিয়ে দেয়া হবে। তবে তাদেরকে (কিয়ামতের দিন) প্রত্যেকের নিয়্যাত অনুসারেই উঠানো হবে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ حَرَمِ مَكَّةَ حَرَسَهَا اللهُ تَعَالٰى

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَغْزُو جَيْشٌ الْكَعْبَةَ فَإِذَا كَانُوا بِبَيْدَاءَ مِنَ الْأَرْضِ يُخْسَفُ بِأَوَّلِهِمْ وَآخِرِهِمْ» . قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ يُخْسَفُ بِأَوَّلِهِمْ وَآخِرِهِمْ وَفِيهِمْ أسواقُهم وَمن لَيْسَ مِنْهُم؟ قَالَ: «يخسف وَآخِرِهِمْ ثُمَّ يُبْعَثُونَ عَلَى نِيَّاتِهِمْ»

وعن عاىشة قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يغزو جيش الكعبة فاذا كانوا ببيداء من الارض يخسف باولهم واخرهم قلت يا رسول الله وكيف يخسف باولهم واخرهم وفيهم اسواقهم ومن ليس منهم قال يخسف واخرهم ثم يبعثون على نياتهم

ব্যাখ্যা: (فَإِذَا كَانُوا بِبَيْدَاءَ مِنَ الْأَرْضِ) ‘‘যখন তারা বায়দা-তে পৌঁছবে।’’ মূলত বায়দা বলা হয় এমন স্থানকে যেখানে কোন কিছুই নেই। ‘আল্লামা ‘আয়নী বলেনঃ অত্র হাদীসে বায়দা বলতে মক্কা ও মদীনার মাঝে নির্দিষ্ট একটি স্থানকে বুঝানো হয়েছে।

(يُخْسَفُ بِأَوَّلِهِمْ وَاٰخِرِهِمْ) ‘‘তাদের সবাইকে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে’’, অর্থাৎ- ঐ বাহিনীর সবাই জমিনের মধ্যে দেবে যাবে।

(وَفِيهِمْ أَسْوَاقُهُمْ) ‘‘তাদের মাঝে বাজার থাকবে’’, অর্থাৎ- বাজারের লোকজন যারা বেচা-কেনাতে মশগুল।

وفي رواية مسلم ((فقلنا: إن الطريق قد يجمع الناس، قال: نعم فيهم المستبصر والمجبور وابن السبيل)

মুসলিমের বর্ণনায় আছে, আমরা বললামঃ রাস্তা বিভিন্ন ধরনের লোক একত্রিত করে। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তাদের মধ্যে স্বজ্ঞানে অংশগ্রহণকারী লোক রয়েছে যারা জেনে-বুঝে ঐ বাহিনীতে যোগদান করেছে। আবার কিছু লোক রয়েছে যারা মজবুর, অর্থাৎ- তারা স্বেচ্ছায় যোগদান করেনি। তাদেরকে যোগদান করতে বাধ্য করা হয়েছে। আর কিছু আছে পথিক, অর্থাৎ- তারা ঐ রাস্তায় চলার কারণে তাদের সাথে মিলিত হয়েছিল কিন্তু তাদের লোক নয়।

(ثُمَّ يُبْعَثُوْنَ عَلٰى نِيَّاتِهِمْ) অর্থাৎ- ‘‘অতঃপর তাদেরকে তাদের নিয়্যাত অনুযায়ী উঠানো হবে।’’ ‘আল্লামা ‘আয়নী বলেনঃ খারাপ লোকদের সঙ্গী হওয়ার কারণে সকলকেই ধ্বংস করা হবে। অতঃপর হাশরের ময়দানে তাদের কর্মের নিয়্যাত অনুযায়ী পুনরুত্থান করা হবে। যাদের নিয়্যাত ভাল ছিল তাদেরকে ভালো লোকদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আর যাদের নিয়্যাত খারাপ ছিল তাদেরকে খারাপ লোকদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং সে অনুযায়ী প্রতিদান দেয়া হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কার হারামকে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সংরক্ষণ প্রসঙ্গে

২৭২১-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল­াহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (শেষ জামানায়) কাবা ঘর ধ্বংস করবে আবিসিনিয়ার এক ছোট নলাবিশিষ্ট (আল্লাহদ্রোহী) ব্যক্তি। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ حَرَمِ مَكَّةَ حَرَسَهَا اللهُ تَعَالٰى

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «يُخَرِّبُ الْكَعْبَة ذُو السويقتين من الْحَبَشَة»

وعن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يخرب الكعبة ذو السويقتين من الحبشة

ব্যাখ্যা: (يُخَرِّبُ الْكَعْبَةَ ذُو السَّوَيْقَتَيْنِ مِنَ الْحَبَشَةِ) ‘‘হাবশার একজন ছোট পা বিশিষ্ট লোক কাবা ঘর ধ্বংস করবে’’ অর্থাৎ- হাবশার একজন দুর্বল লোক কাবা ঘরের মর্যাদা বিনষ্ট করবে। অথবা ঐ লোকটির নামই হবে যুল্ সুওয়াই ক্বতায়ন।

‘আল্লামা কুরতুবী বলেনঃ এটি সংঘটিত হবে ক্বিয়ামাত হওয়ার নিকটবর্তী সময়ে যখন মানুষের হৃদয় থেকে কুরআন উঠিয়ে নেয়া হবে এবং মুসহাফেও তা আর অবশিষ্ট থাকবে না। আর তা হবে ‘ঈসা (আঃ)-এর দুনিয়াতে পুনরায় আগমনের পর তাঁর মৃত্যু পরবর্তী সময়ে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কার হারামকে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সংরক্ষণ প্রসঙ্গে

২৭২২-[৮] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আমি যেন কাবা ঘর ধ্বংসকারী সেই ব্যক্তিটিকে দেখছি। সে কালো এবং কোল ভেঙ্গুর কা’বার এক একটি পাথর খসিয়ে ফেলছে। (বুখারী)[1]

بَابُ حَرَمِ مَكَّةَ حَرَسَهَا اللهُ تَعَالٰى

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «كَأَنِّي بِهِ أَسْوَدَ أَفْحَجَ يقْلعُها حجَراً حجَراً» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابن عباس عن النبي صلى الله عليه وسلم قال كاني به اسود افحج يقلعها حجرا حجرا رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (كَأَنِّىْ بِه أَسْوَدَ أَفْحَجَ) ‘‘আমি যেন দেখতে পাচ্ছি লোকটি কালো বর্ণের তার পাদ্বয় ছড়ানো।’’ أَفْحَجَ (আফহাজা) এমন ব্যক্তিকে বলা হয় যার পাদ্বয়ের অগ্রভাগ কাছাকাছি এবং গোড়ালিদ্বয় দূরবর্তী থাকে অথবা দু’পা কিছুটা ছড়ানো থাকে।

(يَقْلَعُها حَجَرًا حَجَرًا) ‘‘তা থেকে একটি একটি পাথর খুলছে’’। অর্থাৎ- ঐ কালো বর্ণের পাদ্বয় ছড়ানো লোকটি কাবা ঘরের দেয়াল থেকে একটি একটি করে পাথর খুলে ফেলছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৮ পর্যন্ত, সর্বমোট ৮ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে