২৭১৫

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কার হারামকে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সংরক্ষণ প্রসঙ্গে

মক্কার এ পবিত্র ও বারাকাতময় ভূমির প্রসিদ্ধ নাম مَكَّةَ মক্কা। তবে আল্লাহ তা’আলা এ ভূমিকে পাঁচটি নামে অভিহিত করেছেন। ১. মক্কা ২. বাক্কাহ্ ৩. আল বালাদ ৪. আল ক্বরি’আহ্ ৫. উম্মুল কুরা।

হারামের মাক্কী সীমানা: মক্কা থেকে মদীনার পথে : মক্কা থেকে তিন অথবা চার মাইল দূরবর্তী তান্’ঈম। মক্কা থেকে ইয়ামানের পথে : মক্কা থেকে ছয় মাইল অথবা সাত মাইল দূরে আযাহ এর প্রান্ত পর্যন্ত। মক্কা জি’রানাহ্ এর পথে বারো মাইল পর্যন্ত। ত্বয়িফের দিকে ’আরাফার ময়দানের পাশে অবস্থিত নামিরাহ্ পর্যন্ত। আর জিদ্দার দিকে দশ মাইল।


২৭১৫-[১] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল­াহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন বলেছেনঃ আর হিজরত নেই, তবে অবশিষ্ট আছে জিহাদ ও নিয়্যাত। তাই যখন তোমাদেরকে জিহাদের জন্য বের হতে বলা হবে, বের হয়ে পড়বে। সেদিন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার বললেন, এ শহরকে সেদিন হতে আল্লাহ তা’আলা সম্মানিত করেছেন যেদিন তিনি আকাশ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন; আর এটা ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত আল্লাহর সম্মানেই সম্মানিত (হারাম বা পবিত্র) থাকবে। এ শহরে আমার আগে কারো জন্য যুদ্ধ করা হালাল ছিল না আর আমার জন্যও একদিনের অল্প সময়ের জন্য মাত্র হালাল করা হয়েছিল। অতঃপর তা ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত আল্লাহর সম্মানেই সম্মানিত। এ শহরের কাঁটাযুক্ত গাছ পর্যন্ত কাটা যাবে না, এখানে শিকার হাঁকানো যাবে না, এর রাস্তায় পড়ে থাকা কোন জিনিস ঘোষণাকারী ছাড়া কেউ উঠাতে পারবে না। আর এর ঘাসও কাটতে পারবে না। বর্ণনাকারী ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলেন, এ সময় ’আব্বাস(রাঃ) বলে উঠলেন, হে আল্লাহর রসূল! ইযখির ঘাস ছাড়া? এ ঘাসতো কর্মকরদের জন্যে ও লোকদের ঘরের জন্য বিশেষ প্রয়োজন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ঠিক আছে ইযখির ঘাস ছাড়া। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ حَرَمِ مَكَّةَ حَرَسَهَا اللهُ تَعَالٰى

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ: «لَا هِجرةَ وَلَكِنْ جِهَادٌ وَنِيَّةٌ وَإِذَا اسْتُنْفِرْتُمْ فَانْفِرُوا» . وَقَالَ يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ: «إِنَّ هَذَا الْبَلَدَ حَرَّمَهُ اللَّهُ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فَهُوَ حَرَامٌ بِحُرْمَةِ اللَّهِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَإِنَّهُ لَمْ يحِلَّ القتالُ فيهِ لأحدٍ قبْلي وَلم يحِلَّ لِي إِلَّا سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ فَهُوَ حَرَامٌ بِحُرْمَةِ اللَّهِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا يُعْضَدُ شَوْكُهُ وَلَا يُنَفَّرُ صَيْدُهُ وَلَا يَلْتَقِطُ لُقَطَتُهُ إِلَّا مَنْ عَرَّفَهَا وَلَا يُخْتَلَى خَلَاهَا» . فَقَالَ الْعَبَّاسُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِلَّا الْإِذْخِرَ فَإِنَّهُ لِقَيْنِهِمْ وَلِبُيُوتِهِمْ؟ فَقَالَ: «إِلَّا الْإِذْخِرَ»

عن ابن عباس قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم فتح مكة لا هجرة ولكن جهاد ونية واذا استنفرتم فانفروا وقال يوم فتح مكة ان هذا البلد حرمه الله يوم خلق السماوات والارض فهو حرام بحرمة الله الى يوم القيامة وانه لم يحل القتال فيه لاحد قبلي ولم يحل لي الا ساعة من نهار فهو حرام بحرمة الله الى يوم القيامة لا يعضد شوكه ولا ينفر صيده ولا يلتقط لقطته الا من عرفها ولا يختلى خلاها فقال العباس يا رسول الله الا الاذخر فانه لقينهم ولبيوتهم فقال الا الاذخر

ব্যাখ্যা: (لَا هِجْرَةَ) হিজরত নেই। অর্থাৎ- মক্কা বিজয়ের পর এখন আর মক্কা থেকে হিজরত করার সুযোগ নেই। এতে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, কোন অঞ্চলে মুসলিমগণ বিজয় লাভ করলে সে অঞ্চল থেকে কোন মুসলিমের হিজরত করার আর সুযোগ থাকে না যেমনটি বিজয়ের পূর্বে এ সুযোগ থাকে। কোন অঞ্চল মুসলিমগণ বিজয় করার পূর্বে সে অঞ্চলের মুসলিমদের তিনটি অবস্থা,

১. মুসলিম ব্যক্তি- ঐ অঞ্চলে তার ইসলাম প্রকাশ করতে পারেনা এবং তার ওপর ওয়াজিব কার্যাবলী সম্পাদন করতে পারেনা। আর সে ব্যক্তি ঐ অঞ্চল থেকে হিজরত করতেও সক্ষম। এমতাবস্থায় তার জন্য হিজরত করা ওয়াজিব।

২. মুসলিম ব্যক্তি- ঐ অঞ্চলে তার ইসলামকে প্রকাশ করতে পারে এবং তার ওপর ওয়াজিব কার্যাবলীও সম্পাদন করতে পারে। সেই সাথে উক্ত অঞ্চল হতে হিজরত করতেও সক্ষম। এমতাবস্থায় তার জন্য হিজরত মুস্তাহাব যাতে সে মুসলিমদের সাথে মিলিত হয়ে তাদের সহযোগিতা করতে পারে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারে। সেই সাথে কাফিরদের গাদ্দারী থেকে নিরাপত্তা লাভ করতে পারে। অন্যায় কাজ দর্শনের কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে পারে।

৩. অসুস্থতা অথবা আবদ্ধ থাকার কারণে অথবা অন্য কোন উযরের কারণে হিজরত করতে অক্ষম, এমতাবস্থায় তার জন্য উক্ত অঞ্চলে অবস্থান করা বৈধ। তবে কোন উপায়ে কষ্ট স্বীকার করে যদি সে অঞ্চল হতে হিজরত করতে পারে তাহলে সাওয়াবের অধিকারী হবে।

(وَإِذَا اسْتُنْفِرْتُمْ فَانْفِرُوْا) ‘‘যখন তোমাদেরকে জিহাদে যাওয়ার জন্য ডাকা হয় তখন তোমরা জিহাদের জন্য বের হও।’’ অর্থাৎ- মুসলিম শাসক যখন তোমাদেরকে যুদ্ধে যাওয়ার নির্দেশ দেন তখন তোমরা যুদ্ধের জন্য বেরিয়ে পরবে।

হাদীসের শিক্ষাঃ

১. মক্কা নগরী স্থায়ীভাবে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকার সুসংবাদ। যেহেতু সেখান থেকে আর হিজরত প্রয়োজন হবে না। অতএব এটা সুনিশ্চিত যে, মক্কা আর কখনো কাফিরদের হস্তগত হবে না।

২. ইমাম তথা মুসলিম শাসক যাকে যুদ্ধে যাওয়ার নির্দেশ দিবে তার জন্য জিহাদে অংশগ্রহণ করা ফারযে ‘আইন।

৩. নিয়্যাতের উপর ‘আমলের পুরস্কার তথা প্রতিদান নির্ভরশীল।

 (فَهُوَ حَرَامٌ بِحُرْمَةِ اللّٰهِ إِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ) ‘‘মক্কা নগরীকে আল্লাহ তা‘আলা হারাম (সম্মানিত) ঘোষণা করার ফলে তা ক্বিয়ামাত পর্যন্ত হারাম তথা সম্মানিত থাকবে।’’ অর্থাৎ- মক্কা নগরীর এ মর্যাদা কখনো রহিত হবে না, রবং তা ক্বিয়ামাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী বলেন, অত্র হাদীসটি মক্কা নগরীতে হত্যা করা ও যুদ্ধ-বিগ্রহ করা হারাম হওয়ার দলীল। তবে কোন ব্যক্তি যদি মক্কা নগরীতে হত্যাকান্ড ঘটায় ক্বিসাস স্বরূপ ঐ হত্যাকারীকে হত্যা করা বৈধ। এ বিষয়ে ‘আলিমদের ঐকমত্য রয়েছে।

কোন ব্যক্তি যদি মক্কার বাইরে হত্যাকান্ড ঘটিয়ে মক্কা নগরীতে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে তাহলে ক্বিসাস স্বরূপ তাকে মক্কা নগরীতে হত্যা করা বৈধ হবে কিনা- এ বিষয়ে ‘আলিমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে।

* ইমাম আবূ ইউসুফ বলেন, তাকে বলপূর্বক হারাম থেকে বের করে ক্বিসাস করতে হবে।

* ইমাম মালিক ও শাফি‘ঈর মতে মক্কা নগরীতেই তার ওপর শাস্তি কার্যকর করা যাবে। কেননা অপরাধী স্বয়ং তার মর্যাদা বিনষ্ট করে আল্লাহর দেয়া নিরাপত্তা সে বাতিল করে ফেলেছে।

(لَا يُنَفَّرُ صَيْدُه) শিকারী জানোয়ারকে তা থেকে বিতাড়িত করা যাবে না। কোন ব্যক্তি যদি হারাম অঞ্চল থেকে শিকারী পশু তাড়িয়ে দেয় তারপরও ঐ পশু নিরাপদ থাকে তাহলে বিতাড়নকারীর ওপর কোন প্রকার কাফফারাহ বর্তাবে না। কিন্তু যদি বিতাড়ন করার মাধ্যমে ঐ পশুকে স্বয়ং ধ্বংস করে অথবা তার বিতাড়নের কারণে ঐ পশু ধ্বংসে পতিত হয় তাহলে বিতাড়নকারীকে কাফফারাহ্ দিতে হবে। অর্থাৎ- যে ধরনের পশু সে ধ্বংস করলো ঐ ধরনের পশু ক্রয় করে অথবা তার মূল্য দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করতে হবে।

(إِلَّا الْإِذْخِرَ) ‘‘তবে ইযখির কাটা যাবে।’’ ইযখির এক প্রকার ঘাস যা মক্কাবাসীগণ তাদের ঘরের ছাদ নির্মাণে এবং কর্মকারগণ জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তাই ‘আব্বাস (রাঃ) এ ঘাস কাটার অনুমতি চাইলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা কাটার অনুমতি দিলেন। কিন্তু এ অনুমতি কি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ থেকেই দিলেন নাকি আল্লাহর নির্দেশে এ অনুমতি দিলেন?

সঠিক কথা হল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ অনুমতি আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর হুকুম তাঁর বান্দাদের প্রতি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়ে দিয়েছেন। এ নির্দেশ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইলহামের মাধ্যমেও পেতে পারেন অথবা ওয়াহীর মাধ্যমে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك)