২৭১৪

পরিচ্ছেদঃ ১৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বাধাগ্রস্ত হওয়া এবং হজ্জ ছুটে যাওয়া

২৭১৪-[৮] ’আবদুর রহমান ইবনু ইয়া’মুর আদ্ দায়লী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি ’আরাফাই হচ্ছে হজ্জ/হজ। যে ব্যক্তি ’আরাফায় মুযদালিফার রাতে (৯ যিলহজ্জ শেষ রাতে) ভোর হবার আগে ’আরাফাতে পৌঁছতে পেরেছে সে হজ্জ/হজ পেয়ে গেছে। মিনায় অবস্থানের সময় হলো তিনদিন। যে দুই দিনে তাড়াতাড়ি মিনা হতে ফিরে আসলো তার গুনাহ হলো না। আর যে (তিনদিন পূর্ণ করে) দেরী করবে তারও গুনাহ হলো না। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ ও দারিমী; তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ)[1]

وَعَن عبدِ الرَّحمنِ بنِ يَعمُرَ الدَّيْلي قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «الْحَجُّ عَرَفَةُ مَنْ أَدْرَكَ عَرَفَةَ لَيْلَةَ جَمْعٍ قَبْلَ طُلُوعِ الْفَجْرِ فَقَدْ أَدْرَكَ الْحَجَّ أيَّامُ مِنىً ثلاثةَ أيَّامٍ فَمَنْ تَعَجَّلَ فِي يَوْمَيْنِ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ وَمَنْ تَأَخَّرَ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ
هَذَا الْبَابُ خَالٍ عَنِ الْفَصْلِ الثَّالِثِ

وعن عبد الرحمن بن يعمر الديلي قال سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول الحج عرفة من ادرك عرفة ليلة جمع قبل طلوع الفجر فقد ادرك الحج ايام منى ثلاثة ايام فمن تعجل في يومين فلا اثم عليه ومن تاخر فلا اثم عليه رواه الترمذي وابو داود والنساىي وابن ماجه والدارمي وقال الترمذي هذا حديث حسن صحيحهذا الباب خال عن الفصل الثالث

ব্যাখ্যা: (الْحَجُّ عَرَفَةُ) ‘‘আরাফাই হজ্জ/হজ’’। অর্থাৎ- যিলহজ্জ মাসের নবম তারিখে ‘আরাফাতে অবস্থান করা হজ্জের মূল বিষয়। কেননা যে ব্যক্তি ‘আরাফাতে অবস্থান করতে ব্যর্থ হলো তার হজ্জ ছুটে গেল। ‘আল্লামা শাওকানী বলেন, যিনি ‘আরাফার দিনে ‘আরাফাতে অবস্থান করতে সমর্থ হয়েছে তার হজ্জই সঠিক হজ্জ। এ হাদীসের একটি ঘটনা আছে তা এই যে, নাজদ এলাকার কিছু লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আগমন করলেন তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আরাফাতে অবস্থানরত ছিলেন। তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হজ্জ সম্পর্কে জানতে চাইলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষককে ঘোষণা দিতে বললে তিনি ঘোষণা দিলেন ‘আরাফাই হজ্জ।

(مَنْ أَدْرَكَ عَرَفَةَ لَيْلَةَ جَمْعٍ قَبْلَ طُلُوْعِ الْفَجْرِ) যে ব্যক্তি মুযদালিফাতে রাত যাপনের রাতে ফজর উদয় হওয়ার পূর্বেই ‘আরাফাতে অবস্থান করতে সমর্থ হলো (فَقَدْ أَدْرَكَ الْحَجَّ) সে হজ্জ পেল। অর্থাৎ- তার হজ্জ সঠিক হয়েছে। তার হজ্জ ছুটে যায়নি। এতে তাদের দাবী প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে যারা বলেন, ‘আরাফার দিনে সূর্য ডুবে যাওয়ার পর ‘আরাফাতে অবস্থানের সময় শেষ হয়ে গেছে।

অথবা যারা বলেন মুযদালিফাতে রাত যাপনের রাতে ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত ‘আরাফাতে অবস্থানের সুযোগ রয়েছে।

(أيَّامُ مِنىً ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ) মিনাতে অবস্থানের দিন তিনটি। অর্থাৎ- আইয়্যামে তাশরীক। আর এ তিনদিন ইয়াওমুন্ নাহর তথা ঈদের পরের তিনদিন। ঈদের দিন এ তিন দিনের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা এতে সবাই একমত তথা ইজমা প্রতিষ্ঠিত যে ঈদের পরের দিনই হজ্জের কাজ শেষ করে বাড়ীতে ফিরে যাওয়া বৈধ নয়। বরং ঈদের দিন বাদে ২য় দিনে ফিরে যাওয়া বৈধ। আর তৃতীয় দিনে ফিরে যাওয়া ইত্তম।

হাদীসের শিক্ষাঃ

১. ‘আরাফাতে অবস্থান করা হজ্জের প্রাধান্যতম রুকন। ‘আরাফাতে অবস্থান ব্যতীত হজ্জ বিশুদ্ধ হয় না।

২. ‘আরাফাতে অবস্থানের সময় মুযদালিফাতে অবস্থানের রাতে ফজর উদয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বিস্তৃত।

৩. ‘আরাফাতে অবস্থানকারীর জন্য সূর্য ডুবে যাওয়ার পরও অপেক্ষা করা ওয়াজিব।

৪. যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বেই ‘আরাফাহ্ ত্যাগ করবে অধিকাংশ ‘আলিমদের মতে তার ওপর দম ওয়াজিব। তাদের মাঝে ‘আত্বা, সাওরী, শাফি‘ঈ, আবূ সাওর এবং আহলুর রায়।

তবে ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম মালিক-এর মতে, সে যদি সূর্যাস্তের পূর্বেই ফিরে এসে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করে তাহলে তাকে দম দিতে হবে না।

ইমাম আবূ হানীফার মতে সে ফিরে আসুক বা না আসুক তাকে অবশ্যই দম দিতে হবে।

‘আরাফাতে অবস্থানের সময়ের শুরু ও শেষ নিয়ে মতভেদ রয়েছে তবে তার নির্যাস নিম্নরূপ-

সকলের ঐকমত্যে ‘আরাফাতে অবস্থান একটি অন্যতম রুকন। ‘আরাফার দিন সূর্য ঢলে যাবার পর থেকে রাতের কিছু অংশ পর্যন্ত যিনি ‘আরাফাতে অবস্থান করবেন তার এ অবস্থান পূর্ণ এ বিষয়ে সকলেই ঐকমত্য পোষণ করেন।

* যিনি দিনে অবস্থান না করে শুধু রাতে অবস্থান করবেন জমহূরের মতে তার অবস্থান পূর্ণাঙ্গ। তাকে কোন দম দিতে হবে না। তবে মালিকীদের মতে তাকে দম দিতে হবে।

* যিনি শুধুমাত্র দিনে অবস্থান করবেন রাতে অবস্থান করবেন না মালিকীদের মতে তার অবস্থান বিশুদ্ধ নয়। অর্থাৎ- তাকে পুনরায় হজ্জ/হজ করতে হবে। আর জমহূর ‘আলিমদের মতে তার হজ্জ বিশুদ্ধ, ইমাম আবূ হানীফা, শাফি‘ঈ, ‘আত্বা, সাওরী, আবূ সাওর প্রমুখদের অভিমত এটাই। ইমাম আহমাদ-এর বিশুদ্ধ মতও এটিই। তবে তার ওপর দম ওয়াজিব কিনা, এ নিয়ে তাদের মধ্যে ভিন্ন মত রয়েছে।

ইমাম আবূ হানীফা ও আহমাদ-এর মতানুযায়ী তার ওপর দম ওয়াজিব।

ইমাম শাফি‘ঈর সঠিক মতানুযায়ী তার ওপর দম ওয়াজিব নয়। অন্য মতে দম ওয়াজিব।

জমহূর ‘আলিমদের মতে ‘আরাফার দিনে সূর্য ঢলে যাবার পূর্বে অবস্থানের সময় নয়। তবে ইমাম আহমাদ-এর মতে তা অবস্থানের সময়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك)