পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৬১-[১] নাফি’ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) যখনই মক্কায় আসতেন ’যী তুওয়া’ নামক স্থানে সকাল না হওয়া পর্যন্ত রাত যাপন করতেন। এরপর তিনি গোসল করতেন এবং (নফল) সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায় করতেন। তারপর দিনের বেলায় মক্কায় প্রবেশ করতেন যখন তিনি মক্কা হতে প্রত্যাবর্তন করতেন আর তখন ’যী তুওয়া’র পথেই ফিরতেন এবং সেখানে রাত কাটাতেন যতক্ষণ না সকাল হতো এবং তিনি আরো বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপই করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ دُخُوْلِ مَكَّةَ وَالطَّوَافِ

عَنْ نَافِعٍ قَالَ: إِنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ لَا يَقْدَمُ مَكَّةَ إِلَّا بَاتَ بِذِي طُوًى حَتَّى يُصْبِحَ وَيَغْتَسِلَ وَيُصَلِّيَ فَيَدْخُلَ مَكَّةَ نَهَارًا وَإِذَا نَفَرَ مِنْهَا مَرَّ بِذِي طُوًى وَبَاتَ بِهَا حَتَّى يُصْبِحَ وَيَذْكُرُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَفْعَلُ ذَلِكَ

عن نافع قال ان ابن عمر كان لا يقدم مكة الا بات بذي طوى حتى يصبح ويغتسل ويصلي فيدخل مكة نهارا واذا نفر منها مر بذي طوى وبات بها حتى يصبح ويذكر ان النبي صلى الله عليه وسلم كان يفعل ذلك

ব্যাখ্যা: (إِلَّا بَاتَ بِذِىْ طُوًى) ‘‘তিনি ‘যী তুওয়া’-এ রাত যাপন করতেন।’’ অর্থাৎ- ইবনু ‘উমার (রাঃ) যখনই মক্কাতে আগমন করতেন তখন ‘যী তুওয়া’ নামক স্থানে অবতরণ করে সেখানে রাত যাপন করতেন।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ তা মক্কার নিকটবর্তী অতি পরিচিত একটি স্থানের নাম। হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ বর্তমানে ঐ স্থানটি ‘‘বি’রি যা-হির’’ (বাহির কূপ) নামে পরিচিত।

(حَتّٰى يُصْبِحَ) ‘‘সকাল পর্যন্ত’’। অর্থাৎ- তিনি ‘যী তুওয়া’ নামক স্থানে অবতরণ করে বিশ্রাম নেয়া এবং গোসল করে পরিষ্কার হওয়ার নিমিত্তে রাত যাপন করতেন। অতঃপর ভোর হলে গোসল করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতেন।

ইমাম নাবাবী বলেনঃ অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, মক্কায় প্রবেশ করার জন্য গোসল করা বিধিসম্মত। আর ‘যী তুওয়া’ দিয়ে আগমনকারীর জন্য ঐ স্থানে গোসল করা মুস্তাহাব।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৬২-[২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় আসতেন, উঁচু দিক হতে প্রবেশ করতেন এবং নিচু দিক দিয়ে বের হতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ دُخُوْلِ مَكَّةَ وَالطَّوَافِ

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا جَاءَ إِلَى مَكَّةَ دَخَلَهَا مِنْ أَعْلَاهَا وخرجَ منْ أسفلِها

وعن عاىشة رضي الله عنها قالت ان النبي صلى الله عليه وسلم لما جاء الى مكة دخلها من اعلاها وخرج من اسفلها

ব্যখ্যা: জমহূর ‘উলামায়ে কিরামের নিকট মক্কায় উঁচু পথ- সানিয়াতুল ‘উল্ইয়াহ্ দিয়ে প্রবেশ করা এবং নিচু পথ সানিয়াতুস্ সুফলা দিয়ে বের হওয়া মুস্তাহাব।

মক্কায় আগমনকারী প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যই কি সানিয়্যাতু ক্বযা দিয়ে প্রবেশ করা সুন্নাত? যদিও তার প্রবেশের পথ ভিন্ন হয়। এ ব্যাপারে ‘উলামায়ে কিরামের মতানৈক্য রয়েছে।

আবূ বাকর সায়দালানী ও শাফি‘ঈ মাযহাবের কিছু ‘উলামায়ে কিরামের অভিমত এবং সে অভিমতের উপর ইমাম রাফি‘ঈও নির্ভর করেছেন। তারা বলেন, যে ব্যক্তির মক্কায় প্রবেশ পথ সানিয়্যাতু কাদা এর দিক দিয়ে হবে তার জন্য সানিয়াতুল ‘উল্ইয়াহ্ দিয়ে প্রবেশ করা মুস্তাহাব। কিন্তু যার রাস্তা এই দিক দিয়ে নয়, তার নিজের পথ পরিবর্তন করে সানিয়্যাতু ক্বযা দিয়ে প্রবেশ করা তার জন্য মুস্তাহাব নয়।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যই সানিয়াতুল ‘উল্ইয়াহ্ দিয়ে মক্কায় প্রবেশ করা সুন্নাত। চাই তার পথ এ দিক দিয়ে হোক অথবা না হোক। তিনি আরো বলেন, আমাদের মুহাক্কিক আসহাবদের মতে গ্রহণযোগ্য মত হচ্ছে, প্রত্যেক মুহরিমের জন্যই সানিয়াতুল ‘উল্ইয়াহ্ দিয়ে মক্কায় প্রবেশ করা মুস্তাহাব।

আবূ মুহাম্মাদ এর কারণ বর্ণনা করেছেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পথ সানিয়াতুল ‘উল্ইয়াহ্ দিকে ছিল না। তার পরেও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুরে এসে মক্কায় সানিয়াতুল ‘উল্ইয়াহ্ দিয়ে প্রবেশ করেছেন।

ইবনু জাসির (রহঃ) বলেন, আমি আমাদের হাম্বালী মাযহাবের আসহাবদের আলোচনায় এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোন মতামত পাইনি। কিন্তু তাদের বাহ্যিক কথা থেকে বুঝা যায় যে, মক্কায় প্রবেশকারী ব্যক্তির জন্য সাধারণভাবে সানিয়্যাতুল ‘উল্ইয়াহ্ দিয়েই প্রবেশ করা সুন্নাত। হ্যাঁ- যদি তার পথ সানিয়্যাতুল ‘উল্ইয়াহ্ থেকে ভিন্ন হয় তখন সে পথ থেকে ফিরে এসে সানিয়্যাতুল ‘উল্ইয়াহ্ দিয়ে প্রবেশ করাটা তার জন্য মুস্তাহাব নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৬৩-[৩] ’উরওয়াহ্ ইবনুয্ যুবায়র (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জ/হজ করলেন, (আমার খালা) ’আয়িশাহ্ (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কায় প্রবেশ করে প্রথমে উযূ করলেন। অতঃপর বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেন। তবে তা ’উমরায় পরিণত করলেন না (অর্থাৎ- ইহরাম খুললেন না)। তারপর আবূ বকর (রাঃ) হজ্জ/হজ করেছেন, তিনিও প্রথমে যে কাজ করেছেন তা হলো বায়তুল্লাহর তাওয়াফ। তিনি এ তাওয়াফকে ’উমরায় পরিণত করেননি। অতঃপর ’উমার, তারপর ’উসমান (রাঃ) এই একইভাবে হজ্জ/হজ সম্পাদন করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ دُخُوْلِ مَكَّةَ وَالطَّوَافِ

وَعَن عُروةَ بنِ الزُّبيرِ قَالَ: قَدْ حَجَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرَتْنِي عَائِشَةُ أَنَّ أَوَّلَ شَيْءٍ بَدَأَ بِهِ حِينَ قَدِمَ مَكَّةَ أَنَّهُ تَوَضَّأَ ثُمَّ طَافَ بِالْبَيْتِ ثُمَّ لَمْ تَكُنْ عُمْرَةً ثُمَّ حجَّ أَبُو بكرٍ فكانَ أوَّلَ شيءٍ بدَأَ بِهِ الطوَّافَ بالبيتِ ثمَّ لَمْ تَكُنْ عُمْرَةً ثُمَّ عُمَرُ ثُمَّ عُثْمَانُ مثلُ ذَلِك

وعن عروة بن الزبير قال قد حج النبي صلى الله عليه وسلم فاخبرتني عاىشة ان اول شيء بدا به حين قدم مكة انه توضا ثم طاف بالبيت ثم لم تكن عمرة ثم حج ابو بكر فكان اول شيء بدا به الطواف بالبيت ثم لم تكن عمرة ثم عمر ثم عثمان مثل ذلك

ব্যাখ্যা: কোন ব্যক্তি যদি হাদী না চালিয়ে হজ্জের ইহরাম বাঁধে সে কি বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেই হালাল হতে পারবে? এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, হাদী চালিয়ে হজ্জের ইহরাম ধারণকারী ব্যক্তি শুধু বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেই হালাল হয়ে যাবে। আর যদি সে হজ্জের ইহরাম বাকী রাখতে চায় তাহলে তার উকুফে ‘আরাফার পর এসে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে হবে। এর বিপরীতে জমহূর ‘উলামায়ে কিরাম বলেন, না- বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেই তার হালাল হতে হবে না। বরং হজ্জের যাবতীয় কাজ শেষ করে তারপর হাদী না চালানো ব্যক্তি হালাল হবে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর দলীল হলো, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহাবায়ে কিরামদের মাঝে যারা হাদী আনেননি তাদেরকে তাওয়াফ করে হালাল হয়ে যাওয়ার আদেশ করেছিলেন।

জমহূর ‘উলামায়ে কিরাম তার জবাবে বলেন, এই হুকুম সহাবায়ে কিরামদের জন্য খাস ছিল। সকল ‘উলামায়ে কিরাম এ ব্যাপারে একমত যে, যে শুধু হজ্জের ইহরাম বেঁধেছে সে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে পারে, কোন সমস্যা নেই। এ ব্যাপারে ‘উরওয়াহ্ (রহঃ) উল্লেখিত হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। তিনি বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জের ইহরাম বেঁধেছেন এবং বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেছেন। কিন্তু তিনি হজ্জ/হজ থেকে হালাল হননি। আর সেটা ‘উমরাও ছিল না।

তাওয়াফের পূর্বে উযূ করাঃ

সকল ‘উলামায়ে কিরামের নিকট তাওয়াফের জন্য উযূ শর্ত। কতক কুফাবাসী ‘উলামায়ে কিরামের নিকট তাওয়াফের জন্য উযূ শর্ত নয়। ইমাম আবূ হানীফা-এর নিকট তাওয়াফের জন্য উযূ শর্ত নয়। তবে তাঁর সাথীবর্গ এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেন। কিন্তু বিশুদ্ধ মত তাঁর মতেও তাওয়াফের জন্য উযূ শর্ত। যেমন ইবনু হুমাম শারহে হিদায়ার মধ্যে বলেছেন, হায়িযা মহিলার জন্য তাওয়াফ হারাম হওয়ার দু’টি কারণ। (ক) তার মসজিদে প্রবেশের কারণে। (খ) ওয়াজিব ছাড়ার কারণে আর সেটা হচ্ছে পবিত্রতা।

* বর্ণিত হাদীস তাওয়াফে কুদূম শারী‘আতসিদ্ধ হওয়ার উপর দালালাত করে।

* হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, এই হাদীস দ্বারা বুঝা যায় মাসজিদুল হারামে আগমনকারী ব্যক্তির জন্য তাওয়াফের মাধ্যমে কাজ শুরু করা মুস্তাহাব।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয় বিষয়ঃ

১. ‘উরওয়াহ্ (রহঃ)-এর এই বর্ণনা থেকে বুঝা যায়, সহাবায়ে কিরাম ও তাদের পরবর্তী তাবি‘ঈনগণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসের সাথে সাথে খুলাফায়ে রাশিদীনদের ‘আমলকেও শারী‘আতের জন্য দলীল মনে করতেন। সুতরাং শুধু হাদীসের উপর সীমাবদ্ধ না থেকে হাদীসের ব্যাখ্যার জন্য সহাবায়ে কিরামের ‘আমলকেও আমাদের সামনে রাখতে হবে।

২. এ হাদীস দ্বারা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত-এর মাযহাব অনুসারে খুলায়ায়ে রাশিদীনের মধ্যে মর্যাদার যে স্থান সাব্যস্ত করা হয় তা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ আবূ বাকর (রাঃ), তারপর ‘উমার (রাঃ), তারপর ‘উসমান (রাঃ) এবং তারপর ‘আলী (রাঃ) এ বিষয়টিও প্রমাণিত হয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৬৪-[৪] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জ/হজ বা ’উমরা করতে এসে প্রথমে যখন তাওয়াফ করতেন তিন পাক জোরে পদক্ষেপ করতেন, আর চার পাক স্বাভাবিকভাবে চলতেন। তারপর (মাকামে ইবরাহীমের কাছে) দু’ রাক্’আত (তাওয়াফের) সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায় করতেন এবং সাফা মারওয়ার মাঝে সা’ঈ করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ دُخُوْلِ مَكَّةَ وَالطَّوَافِ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا طَافَ فِي الْحَجِّ أَوِ الْعمرَة مَا يَقْدَمُ سَعَى ثَلَاثَةَ أَطْوَافٍ وَمَشَى أَرْبَعَةً ثُمَّ سَجَدَ سَجْدَتَيْنِ ثُمَّ يَطُوفُ بَيْنَ الصَّفَا والمروة

وعن ابن عمر رضي الله عنهما قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا طاف في الحج او العمرة ما يقدم سعى ثلاثة اطواف ومشى اربعة ثم سجد سجدتين ثم يطوف بين الصفا والمروة

ব্যাখ্যা: ১. বর্ণিত হাদীসটি তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল সুন্নাত হওয়ার দলীল। অধিকাংশ ‘উলামায়ে কিরামের অভিমত এটিই।

২. শাফি‘ঈ মাযহাবে কিছু ‘উলামায়ে কিরাম বলেন, হজ্জ/হজ এবং ‘উমরার শুধু একটি তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করা মুস্তাহাব, হজ্জ/হজ ‘উমরা ব্যতীত সাধারণ তাওয়াফে রমল নেই।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, এ ব্যাপারে কোন মতবিরোধ নেই যে, হজ্জ/হজ এবং ‘উমরার শুধু একটি তাওয়াফে রমল করা শারী‘আত সম্মত। এ মাসআলায় ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর দু’টি অভিমত রয়েছে। প্রসিদ্ধ অভিমতটি হচ্ছে, যে তাওয়াফের পরে সা‘ঈ রয়েছে সে তাওয়াফে রমল করবে। আর পরে সা‘ঈ রয়েছে এমন তাওয়াফ হচ্ছে তাওয়াফে কুদূম ও তাওয়াফে ইফাদাহ্। বিদায়ী তাওয়াফের পরে সা‘ঈ নেই, সুতরাং সে তাওয়াফে রমলও হবেনা।

দ্বিতীয় অভিমত হচ্ছে, রমল শুধুমাত্র তাওয়াফে কুদূমেই শারী‘আতসম্মত অন্য তাওয়াকে নয়। চাই তাওয়াফকারী তাওয়াফের পরে সা‘ঈর ইচ্ছা করুক বা না করুক। আর ‘উমরার তাওয়াফে রমল শারী‘আতসিদ্ধ। কেননা ‘উমরার মাঝে তাওয়াফ একটিই হয়ে থাকে।

৩. বর্ণিত হাদীস থেকে আরো প্রমাণিত হয় যে, রমল শুধু প্রথম তিন তাওয়াফে করবে বাকীগুলোতে করবে না। কেউ যদি প্রথম তিন তাওয়াফে রমল ছেড়ে দেয় তাহলে বাকী তাওয়াফগুলোতে কাযা করাও লাগবে না এবং তাঁর উপর দমও (কুরবানী) আবশ্যক হবে না।

৪. তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করার বিধান শুধু পুরুষদের জন্য। মহিলাগণ রমল করবে না।

৫. বর্ণিত হাদীস দ্বারা তাওয়াফের পরে মাকামে ইব্রাহীমের নিকট দু’ রাক্‘আত সালাতের বিধানটি প্রমাণিত হয়। হানাফীদের নিকট এই দু’ রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায় করা ওয়াজিব তাদের দলীল হচ্ছে, (وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى) ।

শাফি‘ঈদের নিকট তাওয়াফের পর মাকামে ইব্রাহীমের নিকট দু’ রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায় করা সুন্নাত।

৬. বর্ণিত হাদীস দ্বারা হজ্জের কার্যক্রমের মাঝে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আবশ্যক হওয়ার বিষয়টিও প্রমাণিত হয়। তাওয়াফের পরে সা‘ঈ করতে হবে। কেউ যদি তাওয়াফের পূর্বে সা‘ঈ করে নেয় তাহলে তার সা‘ঈ শুদ্ধ হবে না।

তাওয়াফের প্রথম তিন চক্কর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমল করেছিলেন মুশরিকদের সামনে মুসলিমদের বীরত্ব প্রকাশের জন্য। কেননা ‘উমরাতুল কাযার সময় মুশরিকরা মুসলিমদের দেখে বলেছিল, ইয়াস্রিবের জ্বর মুসলিমদের কাবু করে ফেলেছে। তাদের এ কথার প্রতিবাদস্বরূপ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের তাওয়াফের প্রথম তিনি চক্করে রমলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু বিজয়ের পর রমলের এই কারণ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও রমলের হুকুম রয়ে গিয়েছিল। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জের সময়ও রমল করেছিলেন। রমলের হুকুমের কারণ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও পূর্বের মতো ঠিক থাকার কারণ বর্ণনায় ‘উলামায়ে কিরাম বলেছেন, রমলের হুকুম পূর্বের অবস্থায় রাখা হযেছে যাতে করে মুসলিমগণ তাদের পূর্বের অবস্থা স্মরণ রাখতে পারে। তাদের উপর আল্লাহ রববুল ‘আলামীনের অনুগ্রহসমূহ স্মরণ রাখতে পারে যে, তারা এক সময় এমন দুর্বল ছিল মুশরিকরা তাদেরকে হাসি-ঠাট্টা করত। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে শাক্তিশালী করেছেন স্বল্পসংখ্যা বৃহৎ সংখ্যায় পরিণত করেছেন। এ সকল নি‘আমাত স্মরণ করানোর জন্যই রমলের হুকুম এখনো বাকি রয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৬৫-[৫] উক্ত রাবী [’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজারে আসওয়াদ থেকে শুরু করে আবার হাজারে আসওয়াদ পর্যন্ত তিন পাক রমল (দ্রুতবেগে) তাওয়াফ করেছেন এবং চার পাক স্বাভাবিকভাবে করেছেন। এভাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন সাফা মারওয়ার মাঝেও সা’ঈ করতেন তখন বাত্বনিল মাসীলে মাঝখানে (নিচু জায়গায়) দ্রুতবেগে চলতেন। (মুসলিম)[1]

بَابُ دُخُوْلِ مَكَّةَ وَالطَّوَافِ

وَعَنْهُ قَالَ: رَمَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ الْحَجَرِ ثَلَاثًا وَمَشَى أَرْبَعًا وَكَانَ يَسْعَى بِبَطْنِ الْمَسِيلِ إِذَا طَافَ بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ. رَوَاهُ مُسلم

وعنه قال رمل رسول الله صلى الله عليه وسلم من الحجر ثلاثا ومشى اربعا وكان يسعى ببطن المسيل اذا طاف بين الصفا والمروة رواه مسلم

ব্যাখ্যা: বর্ণিত হাদীসটি তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে হাজারে আসওয়াদ থেকে শুরু করে আবার ফিরে হাজারে আসওয়াদ আসা পর্যন্ত পরিপূর্ণ চক্করে রমল সুন্নাত হওয়ার দলীল। ‘আল্লামা ইবনু হাযম ও কিছু সংখ্যক ‘উলামায়ে কিরাম বলেন, পূর্ণ চক্করে সুন্নাত নয় বরং শুধুমাত্র হাজারে আসওয়াদ থেকে রুকনে ইয়ামানী পর্যন্ত রমল করা ওয়াজিব।

বর্ণিত হাদীসটি সাফা এবং মারওয়ার মাঝে বাত্বনিল মাসীল তথা নিচু জায়গা, বর্তমানে সবুজ বাতি চিহ্নিত জায়গা দ্রুতবেগে চলা সুন্নাত হওয়ার উপর দলীল।

হাজীদের ওপর সাফা-মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ করা আবশ্যক করার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা ইসমা‘ঈল (আঃ)-এর মাতা হাজিরা (আঃ)-এর স্মৃতিকে ধরে রেখেছেন। ইব্রাহীম (আঃ) যখন আল্লাহর নির্দেশে শিশু পুত্র ইসমা‘ঈল ও স্ত্রী হাজিরাকে মক্কার বিরাণ মরুভূমিতে রেখে গেলেন। তার কিছু দিন পর খাদ্য পানীয় সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়ায় শিশু পুত্র ইসমা‘ঈল পানির পিপাসায় কাতরাচ্ছিলেন। তখন মা হাজিরা পানির খোঁজে সাফা থেকে মারওয়া আবার মারওয়া থেকে সাফা পেরেশান হয়ে দৌড়াচ্ছিলেন। এভাবে এক দুই বার নয় সাত বার তিনি এ পাহাড় থেকে ও পাহাড় গিয়েছেন। সপ্তমবার পুত্র ইসমা‘ঈল (আঃ)-এর নিকট এসে দেখলেন, আল্লাহ তা‘আলা ইসমা‘ঈল (আঃ)-এর পায়ের নিকট পানির ফোয়ারা সৃষ্টি করে দিয়েছেন।

আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে এক অবলা নারীর এ মহান কুরবানী অনেক পছন্দনীয়। তাই আল্লাহ তা‘আলা এ ঘটনা থেকে উম্মাতকে শিক্ষা দেয়ার জন্য হাজীদের সাফা-মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ করাকে আবশ্যক করলেন। সাথে সাথে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত আগমনকারী সকল মানুষের নিকট হাজিরা (আঃ)-এর কুরবানীর এক দৃষ্টান্ত হিসেবে বাকী থাকল।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৬৬-[৬] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় এলেন, হাজারে আসওয়াদের নিকট গেলেন এবং একে স্পর্শ করলেন। তারপর এর ডানদিকে ঘুরে তিন চক্কর রমল (কা’বাকে বামে রেখে) করলেন আর চার চক্কর স্বাভাবিকভাবে হেঁটে তাওয়াফ করলেন। (মুসলিম)[1]

بَابُ دُخُوْلِ مَكَّةَ وَالطَّوَافِ

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا قَدِمَ مَكَّةَ أَتَى الْحَجَرَ فَاسْتَلَمَهُ ثُمَّ مَشَى عَلَى يَمِينِهِ فَرَمَلَ ثَلَاثًا وَمَشى أَرْبعا. رَوَاهُ مُسلم

وعن جابر قال ان رسول الله صلى الله عليه وسلم لما قدم مكة اتى الحجر فاستلمه ثم مشى على يمينه فرمل ثلاثا ومشى اربعا رواه مسلم

ব্যখ্যা: বর্ণিত হাদীসটি হাজারে আসওয়াদকে চুম্বন করার পর তাওয়াফ শুরু করা মুস্তাহাব হওয়ার উপর দলীল। (الْحَجَرَ) ‘আল বাহর’ নামক কিতাবে শাফি‘ঈ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করা হয়েছে, তাওয়াফ হাজারে আসওয়াদ থেকে শুরু করা ফরয।

আলোচ্য হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, তাওয়াফকারী হাজারে আসওয়াদ বাম পাশে রেখে তাওয়াফকারীর ডান দিকে বায়তুল্লাহর দরজার দিকে অগ্রসর হবে। বিশেষভাবে লক্ষণীয় হাজারে আসওয়াদ থেকেই তাওয়াফ শুরু করতে হবে। সকল ‘উলামায়ে কিরাম তাওয়াফের জন্য বর্ণিত অবস্থাকে শর্ত সাব্যস্ত করেছেন। সুতরাং বর্ণিত অবস্থা ব্যতীত অন্য কোন ভাবে তাওয়াফ করলে তা শুদ্ধ হবে না।

হাজারে আসওয়াদ ছোট একটি পাথর। কোন এক দুর্ঘটনায় তা পাঁচ টুকরো হয়ে যায়। এ টুকরাগুলো পরে মূল্যবান ধাতুর সাহায্যে জোড়া দিয়ে একত্র করা হয়েছে। একটি রৌপ্যের পাত্রে বায়তুল্লাহর পূর্ব দক্ষিণ কোণে তা স্থাপন করা হয়েছে। এ টুকরাগুলোর কোন একটিতে চুমু দেয়া বা স্পর্শ করা সুন্নাত। টুকরাগুলো ব্যতীত উক্ত ধাতুতে বা রৌপ্য পাত্রে চুমু দিবে না এবং স্পর্শ করবে না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৬৭-[৭] যুবায়র ইবনু ’আরাবী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার এক ব্যক্তি ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) কে হাজারে আসওয়াদে ’চুমু দেয়া’ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলো। ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) জবাবে বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তা স্পর্শ করতে ও চুমু দিতে দেখেছি। (বুখারী)[1]

بَابُ دُخُوْلِ مَكَّةَ وَالطَّوَافِ

وَعَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ عَرَبِيٍّ قَالَ: سَأَلَ رَجُلٌ ابنَ عمرَ عَنِ اسْتِلَامِ الْحَجَرِ فَقَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتَلِمُهُ وَيُقَبِّلُهُ. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن الزبير بن عربي قال سال رجل ابن عمر عن استلام الحجر فقال رايت رسول الله صلى الله عليه وسلم يستلمه ويقبله رواه البخاري

ব্যখ্যা: লোকটি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) কে হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করা ও চুম্বন করা সম্পর্কে প্রশ্ন করেছে। তার মনে প্রশ্ন ছিল পাথরকে স্পর্শ করা ও চুম্বন করা কীভাবে সুন্নাত হতে পারে? উত্তরে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) এ হাদীস বর্ণনা করেছেন যার দ্বারা হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করা ও চুম্বন করার বিষয়টি সুন্নাত বলে প্রমাণিত হয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৬৮-[৮] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বায়তু্ল্লাহর ইয়ামানী দিকের দুই কোণ ছাড়া অন্য কোন কোণকে স্পর্শ করতে দেখিনি। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ دُخُوْلِ مَكَّةَ وَالطَّوَافِ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: لَمْ أَرَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتَلِمُ من الْبَيْت إِلَّا الرُّكْنَيْنِ اليمانيين

وعن ابن عمر قال لم ار النبي صلى الله عليه وسلم يستلم من البيت الا الركنين اليمانيين

ব্যাখ্যা: রুকনে ইয়ামানী ব্যতীত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য কোন অংশ স্পর্শ করতেন না। রুকনে ইয়ামানীকে এ নামে নামকরণ করার কারণ হলো- এটি ইয়ামানের দিকে অবস্থিত, যেভাবে শামের দিকে অবস্থিত কোণকে রুকনে শামী বলে, আবার ইরাক্বের দিকে অবস্থিত কোণকে ইরাকী বলা হয়ে থাকে।

রুকনে ইয়ামানীকে স্পর্শ করার কারণ হলো- এর মধ্যে হাজারে আসওয়াদ অবস্থিত রয়েছে। কতক উলামায়ে কিরামের বক্তব্য হলো, কেবলমাত্র রুকনে ইয়ামানী ছাড়া অন্য কোন রুকনে স্পর্শ করা সুন্নাত নয়। আর রুকন স্পর্শ দ্বারা হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করাকে বুঝানো হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৬৯-[৯] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজে উটের উপর থেকে তাওয়াফ করেছেন, মাথা বাঁকা লাঠি দিয়ে হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ دُخُوْلِ مَكَّةَ وَالطَّوَافِ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: طَافَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ عَلَى بعير يسْتَلم الرُّكْن بمحجن

وعن ابن عباس قال طاف النبي صلى الله عليه وسلم في حجة الوداع على بعير يستلم الركن بمحجن

ব্যাখ্যা: হাদীসে বলা হচ্ছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজে উটের পিঠে বসে তাওয়াফ করেছেন। মূলত এ তাওয়াফ ছিল কুরবানীর দিনের তাওয়াফে ইফাযাহ্ অথবা বিদায়ী তাওয়াফ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে হেঁটে হেঁটে তাওয়াফ করেছেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় জাবির (রাঃ) বর্ণিত হাদীস দ্বারা। শায়খ দেহলবী (রহঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক উটের পিঠে বসে তাওয়াফ করার অন্যতম কারণ ছিল যে, তখন প্রচন্ড ভীড় ছিল। আরো একটি কারণ ছিল তা হলো- যাতে লোকেরা তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন বিধি-বিধান সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারে সেদিকে খেয়াল রেখে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের পিঠে তাওয়াফ করেছেন। এছাড়াও আরো একটি কারণ হলো যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-সহ অন্যরাও উটের পিঠে তাওয়াফ করতে পারবে তা বৈধ করণার্থে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের পিঠে বসে তাওয়াফ করেছেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৭০-[১০] উক্ত রাবী [ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের উপর সওয়ার অবস্থায় বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেছেন। হাজারে আসওয়াদের কাছে পৌঁছেই নিজের হাতের কোন জিনিস (লাঠি) দিয়ে ইশারা করতেন এবং (আল্লা-হু আকবার) তাকবীর দিয়েছেন। (বুখারী)[1]

بَابُ دُخُوْلِ مَكَّةَ وَالطَّوَافِ

وَعَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَافَ بِالْبَيْتِ عَلَى بَعِيرٍ كُلَّمَا أَتَى عَلَى الرُّكْنِ أَشَارَ إِلَيْهِ بِشَيْءٍ فِي يدِه وكبَّرَ. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم طاف بالبيت على بعير كلما اتى على الركن اشار اليه بشيء في يده وكبر رواه البخاري

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসটি আরোহী অবস্থায় তাওয়াফ জায়িয হওয়ার দলীল। ইমাম মালিক (রহঃ) প্রয়োজনের সময় যখন কোন ব্যক্তি বাহন ব্যতীত তাওয়াফ করতে না পারে তার জন্য আরোহী অবস্থায় তাওয়াফ করা বৈধ বলেছেন। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) স্বাভাবিক অবস্থায় সওয়ার হয়ে তাওয়াফ করা মাকরূহ বলেছেন। ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) বিনা ওজরে তাওয়াফ ও সা‘ঈ আরোহী অবস্থায় করা মাকরূহ বলেছেন।

বর্ণিত হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, হাজারে আসওয়াদকে স্পর্শ করতে না পারলে ইশারা করবে। কিন্তু রুকনে ইয়ামানীর হুকুম এর বিপরীত। কেননা রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করতে না পারলে তার দিকে ইশারা করার ব্যাপারে কোন দলীল নেই। আর এটাই ‘উলামায়ে কিরামদের সঠিক অভিমত।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরোহী অবস্থায় তাওয়াফ করার বিভিন্ন কারণ ছিলঃ

১. রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্বাস্থ্য তখন খুব খারাপ ছিল। এক বর্ণনায় এ কথার সমর্থন পাওয়া যায়। তিনি বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় পৌঁছলেন তখন তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপন বাহনে থেকেই তাওয়াফ করেছেন। (আবূ দাঊদ)

২. অথবা কারণ এই ছিল যে, তখন ভিড় ছিল অত্যধিক অথচ সব লোকই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হজ্জের কার্যাবলী দেখা ও শেখার জন্য আগ্রহী ছিল। এজন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের উপর সওয়ার হয়ে তাওয়াফ করেছেন। যাতে সকল লোক অথবা বেশী সংখ্যক লোক স্বচক্ষে দেখে শিখতে পারে। এ ব্যাখ্যার সমর্থনে জাবির (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস রয়েছে। তিনি বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদেরকে হজ্জের কার্যাবলী দেখানোর জন্য এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করার জন্য সওয়ার হয়ে তাওয়াফ করেছেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৭১-[১১] আবুত্ব তুফায়ল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করার সময় তাঁর হাতের বাঁকা লাঠি দিয়ে হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করতে এবং বাঁকা লাঠিকে চুমু দিতে দেখেছি। (মুসলিম)[1]

بَابُ دُخُوْلِ مَكَّةَ وَالطَّوَافِ

وَعَنْ أَبِي الطُّفَيْلِ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَطُوفُ بِالْبَيْتِ وَيَسْتَلِمُ الرُّكْنَ بِمِحْجَنٍ مَعَهُ ويقبِّلُ المحجن. رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي الطفيل قال رايت رسول الله صلى الله عليه وسلم يطوف بالبيت ويستلم الركن بمحجن معه ويقبل المحجن رواه مسلم

ব্যাখ্যা: যদি কেউ হাজারে আসওয়াদে চুমু দিতে না পারে অপর কোন বস্ত্ত দিয়ে হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করে সে বস্ত্ততে চুম্বন করলে তার সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে।

হাজারে আসওয়াদের দিকে ইশারা করে হাতে চুম্বন করা যাবে না, বরং তাতে চুম্বন করতে হবে অথবা তাতে হাত অথবা কোন বস্ত্ত স্পর্শ করিয়ে সে বস্ত্ততে চুম্বন করতে হবে। যদি সহজ ও শান্তভাবে অপরকে কষ্ট দেয়া ব্যতীত হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করে চুম্বন করা না যায়, তাহলে পাথরটিকে সামনে রেখে সেদিকে ফিরে দাঁড়াবে ও হাত পাথরের দিক করে বিসমিল্লাহ, তাকবীর বলবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৭২-[১২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে (হজের উদ্দেশে) রওনা হলাম। তখন আমরা হজ্জ/হজ ছাড়া অন্য কিছুর (’উমরার) তালবিয়াহ্ পড়তাম না। আমরা ’সারিফ’ নামক স্থানে পৌঁছলে আমার ঋতুস্রাব শুরু হয়ে গেলো। এমন সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলেন। আমি হজ্জ/হজ করতে পারবো না বিধায় কাঁদছিলাম। (কাঁদতে দেখে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, মনে হয় তোমার ঋতুস্রাব শুরু হয়েছে। আমি বললাম, হ্যাঁ! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এটা এমন বিষয় যা আল্লাহ তা’আলা আদম-কন্যাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। তাই হাজীগণ যা করে তুমিও তা করতে থাকো, তবে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তুমি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ থেকে বিরত থাকো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ دُخُوْلِ مَكَّةَ وَالطَّوَافِ

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا نَذْكُرُ إِلَّا الْحَجَّ فَلَمَّا كُنَّا بِسَرِفَ طَمِثْتُ فَدَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا أَبْكِي فَقَالَ: «لَعَلَّكِ نَفِسْتِ؟» قُلْتُ: نَعَمْ قَالَ: «فَإِنَّ ذَلِكِ شَيْءٌ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَى بَنَاتِ آدَمَ فَافْعَلِي مَا يَفْعَلُ الْحَاجُّ غَيْرَ أَنْ لَا تَطُوفِي بِالْبَيْتِ حَتَّى تَطْهُرِي»

وعن عاىشة قالت خرجنا مع النبي صلى الله عليه وسلم لا نذكر الا الحج فلما كنا بسرف طمثت فدخل النبي صلى الله عليه وسلم وانا ابكي فقال لعلك نفست قلت نعم قال فان ذلك شيء كتبه الله على بنات ادم فافعلي ما يفعل الحاج غير ان لا تطوفي بالبيت حتى تطهري

ব্যাখ্যা: সারিফ মক্কা হতে দশ মাইল দূরে একটি প্রসিদ্ধ জায়গার নাম। ষষ্ঠ হিজরীর অনাদায়ী ‘উমরা কাযা করার উদ্দেশে সপ্তম হিজরীতে মক্কা যাওয়ার পথে এ সারিফ নামক স্থানেই মায়মূনাহ্’র সাথে ইহরাম অবস্থায় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিবাহ হয় এবং ফিরার পথে এ স্থানেই হালাল অবস্থায় তার বাসর রাত্রি যাপন হয় এবং পরের দিন ওয়ালীমা অনুষ্ঠান হয়। হিজরী ৬১ মতান্তরে ৫১ সনে এ স্থানেই মায়মূনাহ্ (রাঃ) ইন্তিকাল করেন এবং সেখানেই তিনি সমাধিত হন। বর্তমানে স্থানটি যিয়ারতগাহ হিসেবে প্রসিদ্ধ।

বর্ণিত হাদীসটি থেকে বুঝা যায় যে, হায়িয ও নিফাসগ্রস্থ মহিলা এবং জুনুবী ব্যক্তি হজ্জের তাওয়াফ ব্যতীত যাবতীয় সব কাজ করতে পারবে। হ্যাঁ- তাওয়াফের অনুগামী হিসেবে তাওয়াফের দু’ রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) ও সা‘ঈও করতে পারবে না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৭৩-[১৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিদায় হজের (এক বছর) আগে যে হজে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাঃ)-কে হজের আমির বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন, সে হজ্জে আবূ বকর কুরবানীর দিনে আরো কিছু লোকসহ আমাকে লোকদের মাঝে ঘোষণা দিতে আদেশ করে পাঠালেন- সাবধান! এ বছরের পর আর কোন মুশরিক বায়তুল্লাহর হজ্জ/হজ করতে পারবে না এবং কেউ কক্ষনো উলঙ্গ হয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতে পারবে না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ دُخُوْلِ مَكَّةَ وَالطَّوَافِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: بَعَثَنِي أَبُو بَكْرٍ فِي الْحَجَّةِ الَّتِي أَمَّرَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْهَا قَبْلَ حَجَّةِ الْوَدَاعِ يَوْمَ النَّحْرِ فِي رَهْطٍ أَمَرَهُ أَنْ يُؤَذِّنَ فِي النَّاسِ: «أَلَا لَا يَحُجُّ بَعْدَ العامِ مشرِكٌ وَلَا يطوفَنَّ بِالْبَيْتِ عُرْيَان»

وعن ابي هريرة قال بعثني ابو بكر في الحجة التي امره النبي صلى الله عليه وسلم عليها قبل حجة الوداع يوم النحر في رهط امره ان يوذن في الناس الا لا يحج بعد العام مشرك ولا يطوفن بالبيت عريان

ব্যাখ্যা: এ হাদীসটি আল্লাহর বাণী- فَلَا يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هٰذَا। অর্থাৎ- ‘‘এ বছরের পর কোন কাফির মসজিদে হারামের নিকটবর্তী হতে পারবে না’’- (সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ২৮)।

এ আয়াত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, কোন কাফির মসজিদে হারামে প্রবেশ করতে পারবে না। যদিও তারা হজ্জের নিয়্যাত করে। এখানে হারাম দ্বারা শুধু বায়তুল্লাহকে বুঝানো হয়নি বরং সমস্ত হারাম এলাকা উদ্দেশ্য। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ যদি কোন কাফির গুরুত্বপূর্ণ কোন চিঠি বা কোন বিষয় নিয়ে আসে যা তার সাথে আছে তবুও সে হারাম এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না। বরং যার কাছে সে এসেছে সে হারাম এলাকা থেকে বের হয়ে তার কাছে তথা কাফিরের কাছে যাবে এবং প্রয়োজন মিটাবে। এমনভাবে কোন জিম্মিও হারামে অবস্থান করতে পারবে না। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- তোমরা ইয়াহূদী ও নাসারাদেরকে ‘আরব উপত্যকা থেকে বের করে দাও।

এ হাদীসের অপর একটি অংশে বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি এখন থেকে আর কক্ষনো উলঙ্গ হয়ে কাবা তাওয়াফ করতে পারবে না। শুধু এ দিনটিতেই নয় বরং কোন দিনই কেউ উলঙ্গ হতে পারবে না। এ কথার সমর্থনে কুরআন মাজীদে এসেছে- ‘‘হে আদাম সন্তানেরা! তোমরা সালাতের সময় তোমাদের সাজ-সজ্জা গ্রহণ করো’’- (সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ৩১)।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ এ আয়াতটি জাহিলী যুগের উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করার নিয়মকে প্রতিহত করতে নাযিল করা হয়েছে। কেননা জাহিলী যুগে তারা উলঙ্গ হয়ে কাবা প্রদক্ষেণ করত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১৩ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে