পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার জিকির ও তাঁর নৈকট্য লাভ

এখানে জিকির দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, سُبْحَانَ اللهُ، اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ، لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ، بِسْمِ اللهِ، حَسْبِىَ اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ، اَسْتَغْفِرُ اللهَ সুবহা-নাল্ল-হ, আল হামদুলিল্লা-হ, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু, আল্ল-হু আকবার, লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ, বিসমিল্লা-হ, হাসবিয়াল্ল-হু লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ, আসতাগফিরুল্ল-হু সহ দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ কামনা করে দু’আ করা।
জিকিরুল্লা-হ দ্বারা এটাও উদ্দেশ্য হতে পারে যে, সর্বদাই ভাল কাজে লিপ্ত থাকা যেমনঃ কুরআন তিলাওয়াত করা, হাদীস পাঠ করা, দীনী ’ইলম শিক্ষা করা, নফল সালাত আদায় করা ও উপরোক্ত দু’আগুলো মুখে বলা। এখানে দু’আর অর্থ জানা শর্ত নয় তবে জানলে অবশ্যই বেশি উত্তম।
ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, শুধু মনে মনে জিকির করার চাইতে মনে মনে জিকির ও তা মুখে উচ্চারণ করা উত্তম। আর তিনি আরো বলেন, জিকির শুধু سبحان الله، الحمد لله، لا اله الا الله، لا حول ولا قوة الا بالله এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং মু’মিন, মুসলিমের জীবনের সমুদয় ’আমলই যিকিরের অন্তর্ভুক্ত হবে।


২২৬১-[১] আবূ হুরায়রাহ্ ও আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাঁরা উভয়ে বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মনুষ্য দল আল্লাহর জিকির করতে বসলে, আল্লাহর মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) নিশ্চয় তাদেরকে ঘিরে নেন, তাঁর রহমত তাদেরকে ঢেকে ফেলে এবং তাদের ওপর (মনের) প্রশান্তি বর্ষিত হয়। (অধিকাংশ সময়) আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তীদের সাথে তাদেরকে স্মরণ করেন। (মুসলিম)[1]

بَابُ ذِكْرِ اللّٰهِ عَزَّ وَجَلَّ وَالتَّقَرُّبُ إِلَيْهِ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ وَأَبِي سَعِيدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَقْعُدُ قَوْمٌ يَذْكُرُونَ اللَّهَ إِلَّا حَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَنَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ وَذَكَرَهُمُ اللَّهُ فَيْمَنْ عِنْدَهُ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

عن أبي هريرة وأبي سعيد رضي الله عنهما قالا: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا يقعد قوم يذكرون الله إلا حفتهم الملائكة وغشيتهم الرحمة ونزلت عليهم السكينة وذكرهم الله فيمن عنده» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (لَا يَقْعُدُ قَوْمٌ يَذْكُرُونَ اللّٰهَ) ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) এ কথাটির নিম্নোক্ত ব্যাখ্যা করেছেন।

১. এখানে বসার উল্লেখ করা হয়েছে এ কারণে যে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষ বসেই আল্লাহর আলোচনা করে থাকে খুব কমই দাঁড়িয়ে আলোচনা বা জিকির করা হয়ে থাকে, তাই বেশির ভাগ বিষয়ের দিকে লক্ষ্য করে এখানে বসার কথা বলা হয়েছে।

২. বসার কথা বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, বসে জিকির করা উত্তম কারণ তাতে উপলদ্ধি বেশি করা যায় এবং ইন্দ্রিয় শক্তি বেশি সচল থাকে।

৩. যিকিরের উপর অটল থাকার প্রতি অত্র হাদীসে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

(وَنَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ) অর্থাৎ- আল্লাহর জিকির করলে সাকীনাহ্ তথা মনোতৃপ্তি বা প্রশান্তি লাভে ধন্য হওয়া যায়। যেমনঃ মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

‘‘সাবধান! আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে অন্তর প্রশান্তি লাভ করে।’’ (সূরা আর্ র‘দ ১৩ : ২৮)

এ পর্যায়ে আমরা হাদীসে উল্লেখিত ‘সাকীনাহ্’ শব্দটি নিয়ে আলোচনা করছি।

কোন কোন ইসলামিক স্কলারস্ মত ব্যক্ত করেছেন যে, ‘সাকীনাহ্’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ‘রহমাত’।

ইবনুল কইয়্যিম (রহঃ) তার ‘মাদারিজুস্ সালিকীন’ নামক কিতাবে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছেন যে, মহান আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবে সাকীনাহ্ শব্দটি সর্বমোট ৬টি স্থানে উল্লেখ করেছেন।

১. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ إِنَّ آيَةَ مُلْكِهِ أَنْ يَّأْتِيَكُمُ التَّابُوْتُ فِيْهِ سَكِيْنَةٌ مِنْ رَّبِّكُمْ

অর্থাৎ- ‘‘তাদের নাবী তাদেরকে বলল, তালূতের বাদশাহ হওয়ার নিদর্শন এই যে, তোমাদের নিকট (কাঠের তৈরি) একটা বাক্স আসবে, যার মধ্যে তোমাদের প্রতিপালকের সাকীনাহ্ (শান্তি বাণী) রয়েছে।’’ (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ২৪৮)

২. মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ

 ثُمَّ أَنْزَلَ اللَّهُ سَكِينَتَهٗ عَلٰى رَسُولِهٖ وَعَلَى الْمُؤْمِنِينَ

‘‘অতঃপর মহান আল্লাহ তার রসূল ও মু’মিনদের ওপর সাকীনাহ্ অবতীর্ণ করলেন।’’ (সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ২৬)

৩. মহান আল্লাহ আরো বলেন,

إِذْ يَقُولُ لِصَاحِبِهٖ لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللهَ مَعَنَا فَأَنْزَلَ اللهُ سَكِينَتَهٗ عَلَيْهِ وَأَيَّدَهٗ بِجُنُودٍ لَمْ تَرَوْهَا

‘‘স্মরণ কর! যখন তার সাথীকে তিনি বললেন, হে আমার সাথী! তুমি চিন্তা করো না আমাদের সাথে আল্লাহর সাহায্য আছে।’’ (সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৪০)

৪. মহান আল্লাহ আরো বলেন,

هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ السَّكِينَةَ فِىْ قُلُوبِ الْمُؤْمِنِينَ لِيَزْدَادُوا إِيمَانًا مَعَ إِيمَانِهِمْ وَلِلهِ جُنُودُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا

‘‘তিনিই মু’মিনদের দিলে প্রশান্তি নাযিল করেন যাতে তারা তাদের ঈমানের সাথে আরো ঈমান বাড়িয়ে নেয়। আসমান ও জমিনের যাবতীয় বাহিনী আল্লাহর কর্তৃত্বের অধীন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও মহাবিজ্ঞানী।’’ (সূরা আল ফাত্হ ৪৮ : ৪)

৫. মহান আল্লাহ আরো বলেন,

لَقَدْ رَضِيَ اللهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِىْ قُلُوبِهِمْ فَأَنْزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا

‘‘মু’মিনদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হলেন যখন তারা (হুদায়বিয়ায়) গাছের তলে তোমার কাছে বায়‘আত নিল। আল্লাহ জানতেন তাদের অন্তরে কী আছে, এজন্য তিনি তাদের ওপর প্রশান্তি অবতীর্ণ করলেন আর পুরস্কার হিসেবে তাদেরকে দিলেন আসন্ন বিজয়।’’ (সূরা আল ফাতহ ৪৮ : ১৮)

৬. মহান আল্লাহ আরো বলেন,

إِذْ جَعَلَ الَّذِينَ كَفَرُوا فِىْ قُلُوبِهِمُ الْحَمِيَّةَ حَمِيَّةَ الْجَاهِلِيَّةِ فَأَنْزَلَ اللهُ سَكِينَتَهٗ عَلٰى رَسُولِهٖ وَعَلَى الْمُؤْمِنِينَ

‘‘কাফিররা যখন তাদের অন্তরে জিদ ও হঠকারিতা জাগিয়ে তুলল- অজ্ঞতার যুগের জিদ ও হঠকারিতা- তখন আল্লাহ তাঁর রসূল ও মু’মিনদের ওপর স্বীয় প্রশান্তি অবতীর্ণ করলেন।’’ (সূরা আল ফাত্হ ৪৮ : ২৬)

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়্যাহ্ (রহঃ) বলেনঃ আমার কোনরূপ বেশি পরিমাণ কষ্ট অনুভব হলে সাকীনাহ্’র উল্লেখ যে সমস্ত আয়াতগুলোতে আছে তা তিলাওয়াত করে দেখেছি বেদনা কিছুটা উপশম হয়।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ কুরআন মাজীদে বর্ণিত প্রত্যেক সাকীনাহ্ শব্দের অর্থই হলো প্রশান্তি তবে সূরা আল বাকারাহ্’টি বাদে।

ইমাম ইবনুল কইয়্যিম (রহঃ) সাকীনাহ্ ও ত্বমা’নীনাহ্’র মধ্যে কিছুটা পার্থক্যের উল্লেখ করেছেন।

সাকীনাহ্ হলো অন্তরের মধ্যে প্রশান্তি সৃষ্টি যা সাময়িক আর ত্বমা’নীনাহ্ হলো স্থায়ী এক শান্তি ও প্রশান্তি।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার জিকির ও তাঁর নৈকট্য লাভ

২২৬২-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সফর হতে মক্কার পথ ধরে এক পাহাড়ে পৌঁছলেন, জায়গাটির নাম ছিল ’জুমদান’। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা চলো এটা হলো জুমদান। আগে আগে চলল মুফাররিদরা। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! মুফাররিদ কারা? তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যে পুরুষ বা নারী আল্লাহর অধিক জিকির করে। (মুসলিম)[1]

بَابُ ذِكْرِ اللّٰهِ عَزَّ وَجَلَّ وَالتَّقَرُّبُ إِلَيْهِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسِيرُ فِي طَرِيقِ مَكَّةَ فَمَرَّ عَلَى جَبَلٍ يُقَالُ لَهُ: جُمْدَانُ فَقَالَ: «سِيرُوا هَذَا جُمْدَانُ سَبَقَ الْمُفَرِّدُونَ» . قَالُوا: وَمَا الْمُفَرِّدُونَ؟ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «الذَّاكِرُونَ الله كثيرا وَالذَّاكِرَات» . رَوَاهُ مُسلم

وعن أبي هريرة قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يسير في طريق مكة فمر على جبل يقال له: جمدان فقال: «سيروا هذا جمدان سبق المفردون» . قالوا: وما المفردون؟ يا رسول الله قال: «الذاكرون الله كثيرا والذاكرات» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (كَانَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ يَسِيْرُ فِىْ طَرِيْقِ مَكَّةَ) এটা মক্কার দিকে যাওয়ার সময় অথবা মদীনার দিকে যাওয়ার সময় যে কোন একটি ছিল।

(سَبَقَ الْمُفَرِّدُونَ) ইমাম নাবাবী (রহঃ) তার শারহে মুসলিমে লিখেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যারা আল্লাহর স্মরণের লক্ষ্যে লোক চক্ষুর অন্তরালে চলে যায়।

قَالُوا এর পরের থেকে যে مَا শব্দটি উল্লেখ আছে তা مَنْ এর অর্থবোধক। যেমন : মহান আল্লাহর বাণী, وَالسَّمَاءِ وَمَا بَنَاهَا ‘‘আসমানের ও তাকে যিনি বানিয়েছেন তার শপথ।’’ (সূরা আশ্ শামস্ ৯১ : ৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার জিকির ও তাঁর নৈকট্য লাভ

২২৬৩-[৩] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক তার রবকে স্মরণ করে আর যে করে না, তাদের উদাহরণ হলো জীবিত ও মৃত ব্যক্তির মতো। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ ذِكْرِ اللّٰهِ عَزَّ وَجَلَّ وَالتَّقَرُّبُ إِلَيْهِ

وَعَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَثَلُ الَّذِي يَذْكُرُ رَبَّهُ وَالَّذِي لَا يَذْكُرُ مَثَلُ الْحَيّ وَالْمَيِّت»

وعن أبي موسى قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «مثل الذي يذكر ربه والذي لا يذكر مثل الحي والميت»

ব্যাখ্যা: (مَثَلُ الْحَيّ وَالْمَيِّت) অর্থাৎ- যারা আল্লাহর জিকির করে তারা জীবিত আর যারা আল্লাহর জিকির করে না তারা মৃতের মত। কেননা যারা জীবিত তাদের সকল ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্যই হয়ে থাকে, পক্ষান্তরে যারা মৃত্যু তারা কোন কিছুই করার ক্ষমতা রাখে না। সুতরাং জীবিত থেকেও আল্লাহর জিকির করেন না তারা মৃতের মতো।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার জিকির ও তাঁর নৈকট্য লাভ

২২৬৪-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমি আমার বান্দার নিকট সেরূপ, যেরূপ সে আমাকে স্মরণ করে। আমি তার সাথে থাকি, যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি সে আমাকে স্মরণ করে তার মনে, আমি তাকে স্মরণ করি আমার মনে। আর সে যদি স্মরণ করে আমাকে মানুষের দলে, আমি তাকে (অনুরূপ) স্মরণ করি তাদের চেয়েও সর্বোত্তম দলে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ ذِكْرِ اللّٰهِ عَزَّ وَجَلَّ وَالتَّقَرُّبُ إِلَيْهِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي وَأَنَا مَعَهُ إِذَا ذَكَرَنِي فَإِنْ ذَكَرَنِي فِي نَفْسِهِ ذَكَرْتُهُ فِي نَفْسِي وَإِنْ ذَكَرَنِي فِي مَلَأٍ ذَكَرْتُهُ فِي مَلَأٍ خير مِنْهُم

وعن أبي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يقول الله تعالى: أنا عند ظن عبدي بي وأنا معه إذا ذكرني فإن ذكرني في نفسه ذكرته في نفسي وإن ذكرني في ملأ ذكرته في ملأ خير منهم

ব্যাখ্যা: (أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي) ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, (ظن) হলো সন্দেহ ও ইয়াক্বীনের মধ্যবর্তী বিষয়। তবে (ظن) তথা ধারণা মাঝে মাঝে ইয়াক্বীন তথা দৃঢ়বিশ্বাসের ফায়দা দেয়। অর্থাৎ- (ظن) তথা ধারণা সঠিক হওয়ার আলামত বা নিদর্শন যদি পরিস্ফূটিত হয়ে যায় তখন তার অর্থ হয় ইয়াক্বীন যেমনঃ মহান আল্লাহ বলেন,

الَّذِيْنَ يَظُنُّوْنَ أَنَّهُمْ مُلَاقُوْ رَبِّهِمْ

অর্থাৎ- ‘‘মু’মিনরা ধারণা তথা বিশ্বাস রাখে যে, তারা তাদের রবের সাথে সাক্ষাত করবে।’’ (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ৪৬)

অপরদিকে যদি (ظن) তথা ধারণার সঠিক হওয়ার আলামতগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে তাহলে তা شك তথা সন্দেহের অর্থ বহন করে থাকে। যেমনঃ মহান আল্লাহ বলেন, وَظَنُّوْا أَنَّهُمْ إِلَيْنَا لَا يُرْجَعُوْنَ

অর্থাৎ- ‘‘কাফিররা ধারণা তথা সন্দেহ করে যে, তারা আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তন করবে না, অর্থাৎ- তারা আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তন করবে কিনা এ ব্যাপারে সন্দীহান।’’ (সূরা আল কাসাস ২৮ : ৩৯)

‘আল্লামা কুরতুবী (রহঃ) বলেছেনঃ (ظَنِّ عَبْدِي) এর অর্থ হলো দু‘আ করার সময় এ ধারণা পোষণ করা যে, আল্লাহ আমার দু‘আ কবূল করবেন। যেহেতু তিনি ওয়া‘দা দিয়েছেন যে, বান্দার দু‘আ তিনি কবূল করবেন আর তিনি তো ওয়াদা খেলাফ করেন না। অতএব তিনি আমার দু‘আও কবূল করবেন। এরূপ বিশ্বাস রাখা।

(وَأَنَا مَعَه) আল্লাহ বললেন যে, ‘আমি বান্দার সাথে আছি’ এর সঠিক অর্থ হলো সাহায্য সহযোগিতা করার দৃষ্টিকোণ থেকে আল্লাহ বান্দার সাথে আছেন। তিনি তার সত্তাগতভাবে আমাদের সাথে আছেন বা প্রচলিত অর্থ যেমনঃ

وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنْتُمْ

অর্থাৎ- ‘‘আল্লাহ স্বত্বাগতভাবে সব স্থানে বিদ্যমান এরূপ নয়’’- (সূরা আল হাদীদ ৫৭ : ৪)। বরং স্বত্বাগতভাবে তিনি ‘আরশে ‘আযীমে সমাসীন।

(وَإِنْ ذَكَرَنِي فِىْ مَلَأٍ) ইমাম জাযরী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসের এ অংশটুকুর মাধ্যমে বুঝা যায় জনসম্মুখে প্রকাশ্যে আল্লাহর যিকিরের বিধান হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

(فِىْ مَلَأٍ خير مِنْهُم) হাদীসটির এ অংশটুকু দ্বারা মূলত আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা বুঝাতে চেয়েছেন যে, তিনি তার অর্থাৎ- যে সমস্ত বান্দা আল্লাহকে লোকসম্মুখে স্মরণ করবে মহান আল্লাহ তাদের আলোচনা মালায়িকাহর (ফেরেশতাদের) সম্মুখে করবেন।

* ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, অত্র অংশের মাধ্যমে ঢালাওভাবে এ কথা বলা ঠিক নয় যে, মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) মানব জাতির চেয়ে উত্তম।

* ইবনুল মালিক (রহঃ) বলেন, বিষয়টি নিয়ে মতবিরোধ সংঘটিত হয়েছে যে, মানুষ উত্তম নাকি মালাক (ফেরেশতা) উত্তম?

অপর একদল ‘আলিম বলেছেন, বিশেষ কিছু মানুষ যেমনঃ নাবীগণ (আঃ) বিশেষ কিছু মালাক যেমনঃ জিবরীল, মীকাঈল, ইসরাফীল (আঃ) থেকে উত্তম। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এ নিয়ম নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার জিকির ও তাঁর নৈকট্য লাভ

২২৬৫-[৫] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার কাছে একটি কল্যাণকর (ভালো) কাজ নিয়ে উপস্থিত হবে, তার জন্য ঐ কাজের দশগুণ বেশি কল্যাণ (সাওয়াব) রয়েছে। আর আমি এর চেয়েও বেশি দিতে পারি। আর যে ব্যক্তি একটি অকল্যাণকর (মন্দ) কাজ নিয়ে উপস্থিত হবে তার প্রতিফল স্বরূপ এক গুণই অকল্যাণ (গুনাহ) হবে অথবা আমি তাকে মাফও করে দিতে পারি। আর যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ আমার দিকে এগিয়ে আসবে; আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে আসব। যে আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাই। আর যে কোন শির্ক না করে আমার কাছে পৃথিবী সমান গুনাহ করে আসে, আমি ওই পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করি। (মুসলিম)[1]

بَابُ ذِكْرِ اللّٰهِ عَزَّ وَجَلَّ وَالتَّقَرُّبُ إِلَيْهِ

وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا وأزيد وَمن جَاءَ بِالسَّيِّئَةِ فجزاء سَيِّئَة مِثْلُهَا أَوْ أَغْفِرُ وَمَنْ تَقَرَّبَ مِنِّي شِبْرًا تَقَرَّبْتُ مِنْهُ ذِرَاعًا وَمِنْ تَقَرَّبَ مِنِّي ذِرَاعًا تَقَرَّبْتُ مِنْهُ بَاعًا وَمَنْ أَتَانِي يَمْشِي أَتَيْتُهُ هَرْوَلَةً وَمَنْ لَقِيَنِي بِقُرَابِ الْأَرْضِ خَطِيئَةً لَا يُشْرِكُ بِي شَيْئًا لَقِيتُهُ بِمِثْلِهَا مَغْفِرَةً . رَوَاهُ مُسلم

وعن أبي ذر رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يقول الله تعالى: من جاء بالحسنة فله عشر أمثالها وأزيد ومن جاء بالسيئة فجزاء سيئة مثلها أو أغفر ومن تقرب مني شبرا تقربت منه ذراعا ومن تقرب مني ذراعا تقربت منه باعا ومن أتاني يمشي أتيته هرولة ومن لقيني بقراب الأرض خطيئة لا يشرك بي شيئا لقيته بمثلها مغفرة . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (فَجَزَاءُ سَيِّئَةٍ مِثْلُهَا) অসৎ কাজের শাস্তি একটি করলে সেই একটিই দেব একটুও বেশি হবে না। এটা নয় যে, বিচারের মানদণ্ডে হবে।

(أَوْ أَغْفِرُ) অথবা তাকে অনুগ্রহ করে আমি ক্ষমা করে দেব।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, সৎকাজের জন্য আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা বললেন, একটি করলে দশটি দ্বারা বৃদ্ধি করে দিব, এটা হচ্ছে আল্লাহর অনুগ্রহ। অপরদিকে অসৎকাজের ক্ষেত্রে আল্লাহ বলেন, একটি অসৎ কাজের বিনিময়ে একটিই শাস্তি বা বদী লেখা হবে। এরূপ হওয়ার কারণ হলো একটি সৎকাজের জন্য আল্লাহ বান্দাকে উৎসাহ দিতে গিয়ে বলেছেন। একটি সৎ কাজ করলেই তা ১০ গুণ বর্ধিত হবে। যেমনঃ কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لِلَّذِيْنَ أَحْسَنُوا الْحُسْنٰى وَزِيَادَةٌ

অর্থাৎ- ‘‘যারা সৎ কাজ করবে তাদের জন্য নেকী রয়েছে এবং অতিরিক্ত বোনাসও নির্ধারিত আছে।’’ (সূরা ইউনুস ১০ : ২৬)

আর অপরদিকে খারাপ ‘আমল একটি করলে তার শাস্তি বা বদী যদি একাধিক লেখা হয় তাহলে এটা ন্যায় বিচারের পরিপন্থী যা মহান আল্লাহর শানে শোভা পায় না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার জিকির ও তাঁর নৈকট্য লাভ

২২৬৬-[৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার কোন বন্ধুকে শত্রু ভাবে আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমি আমার বান্দার ওপর যা কিছু (’আমল) ফরয করেছি; তা দ্বারা আমার সান্নিধ্য অর্জন করা আমার নিকট বেশী প্রিয় অন্য কিছু (’আমল) দিয়ে সান্নিধ্য অর্জনের চাইতে। আর আমার বান্দা সর্বদা নফল ’ইবাদাতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য হাসিল করে। পরিশেষে আমি তাকে ভালবাসি এবং আমি যখন তাকে ভালবাসি- আমি হয়ে যাই তার কান, যা দিয়ে সে শুনে। আমি হয়ে যাই তার চোখ, যা দিয়ে সে দেখে। আমি হয়ে যাই তার হাত, যা দিয়ে সে ধরে (কাজ করে)। আমি হয়ে যাই তার পা, যা দিয়ে চলাফেরা করে। সে যদি আমার কাছে চায়, আমি তাকে দান করি। সে যদি আমার কাছে আশ্রয় চায়, আমি তাকে আশ্রয় দেই। আর আমি যা করতে চাই, তা করতে আমি মু’মিন বান্দার রূহ কবয করার মতো ইতস্তত করি না। কেননা মু’মিন (স্বাভাবিকভাবে) মৃত্যুকে অপছন্দ করে, আর আমি অপছন্দ করি তাকে অসন্তুষ্ট করতে। কিন্তু মৃত্যু তার জন্য অত্যাবশ্যকীয়। (বুখারী)[1]

بَابُ ذِكْرِ اللّٰهِ عَزَّ وَجَلَّ وَالتَّقَرُّبُ إِلَيْهِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى قَالَ: مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْبِ وَمَا تَقَرَّبَ إِلَيَّ عَبْدِي بِشَيْءٍ أَحَبَّ إِلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيْهِ وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إِلَيَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ وَيَدَهُ الَّتِي يَبْطِشُ بِهَا وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا وَإِنْ سَأَلَنِي لَأُعْطِيَنَّهُ وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لَأُعِيذَنَّهُ وَمَا تَرَدَّدْتُ عَنْ شَيْءٍ أَنَا فَاعِلُهُ تَرَدُّدِي عَنْ نَفْسِ الْمُؤْمِنِ يَكْرَهُ الْمَوْتَ وَأَنَا أَكْرَهُ مُسَاءَتَهُ وَلَا بُدَّ لَهُ مِنْهُ . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن أبي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن الله تعالى قال: من عادى لي وليا فقد آذنته بالحرب وما تقرب إلي عبدي بشيء أحب إلي مما افترضت عليه وما يزال عبدي يتقرب إلي بالنوافل حتى أحبه فإذا أحببته كنت سمعه الذي يسمع به وبصره الذي يبصر به ويده التي يبطش بها ورجله التي يمشي بها وإن سألني لأعطينه ولئن استعاذني لأعيذنه وما ترددت عن شيء أنا فاعله ترددي عن نفس المؤمن يكره الموت وأنا أكره مساءته ولا بد له منه . رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (وَلِيًّا) হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) (ولى الله) আল্লাহর ওয়ালীর সংজ্ঞা হলো (العالم بالله المواظب على طاعته المخلص في عبادته) অর্থাৎ- যিনি আল্লাহ সম্পর্কে জানেন তার আনুগত্যে মশগুল থাকেন এবং তারই ‘ইবাদাতে একনিষ্ঠ। এমনটাই মতামত দিয়েছেন ‘আল্লামা বাদরুদ্দীন ‘আয়নী (রহঃ)।

(سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ) হাদীসের অত্র অংশটুকুকে ঘিরে একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর।

প্রশ্নটি হলো কিভাবে আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা স্বীয় বান্দার শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি হতে পারেন? এর অনেকগুলো উত্তর দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়েছে যার মধ্যে সর্বোত্তমটি অর্থাৎ- তার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো আমার আনুগত্য ও বশ্যতা স্বীকার করে যেহেতু সে এমন কোন কিছু শুনে না যা আমি অপছন্দ করি, এমন কিছু দেখে না যা আমার অপছন্দনীয়, এমন কিছু ধরে না যা আমি অপছন্দ করি, এমন দিকে পা বাড়ায় না যা আমি অপছন্দ করি।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার জিকির ও তাঁর নৈকট্য লাভ

২২৬৭-[৭] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতেই এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর একদল মালাক (ফেরেশতা) রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে আল্লাহর জিকিরকারীদেরকে সন্ধান করেন। যখন তাঁরা কোন দলকে আল্লাহর জিকির করতে দেখে, তখন একে অপরকে বলেন, এসো! তোমাদের কামনার বিষয় এখানেই। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, এরপর তারা জিকিরকারী দলকে নিজেদের ডানা দিয়ে নিকটতম আসমান পর্যন্ত ঘিরে নেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তাদেরকে তখন তাদের প্রতিপালক জিজ্ঞেস করেন, আমার বান্দারা কি বলছে? অথচ ব্যাপারটা তিনিই সবচেয়ে বেশি ভাল জানেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তখন মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) (ফেরেশতাগণ) বলেন, তোমার বান্দারা তোমার পবিত্রতা বর্ণনা, মহত্ব ঘোষণা, প্রশংসা ও মর্যাদার বর্ণনা দিচ্ছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, তারা কি আমাকে দেখেছে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তখন মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) বলেন, তোমার কসম! তারা কক্ষনো তোমাকে দেখেনি।

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন। তারা যদি আমাকে দেখতে পেত, তাহলে অবস্থাটা কেমন হত? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তখন মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) বলেন, হে রব! যদি তারা তোমাকে দেখতে পেত, তাহলে তারা তোমার আরও বেশি ’ইবাদাত করত, আরও বেশি তোমার গুণগান ও পবিত্রতা বর্ণনা করত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, (প্রকৃতপক্ষে) তারা কি চায়? মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) বলেন, তারা তোমার কাছে জান্নাত চায়। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, তারা কি জান্নাত দেখেছে? মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) বলেন, হে রব! তোমার কসম! তারা কখনো জান্নাত দেখেনি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তখন আল্লাহ বলেন, তারা যদি জান্নাত দেখতে পেত, তাহলে কেমন হত? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) তখন বলেন, যদি তারা জান্নাত দেখতে পেত, অবশ্যই তারা তার জন্য খুবই লোভী হত, এর জন্য অনেক দু’আ করত, তা পাওয়ার আগ্রহ বেশি দেখাত।

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, তারা কোন্ জিনিস হতে আশ্রয় চায়? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) তখন বলেন, তারা জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চায়। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, তারা কি জাহান্নাম দেখেছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) তখন বলেন, হে রব! তোমার কসম! তারা জাহান্নাম কক্ষনো দেখেনি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, যদি তারা জাহান্নাম দেখতে পেত, কেমন হত? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) তখন উত্তরে বলেন, যদি তারা জাহান্নাম দেখতে পেত, তাহলে তারা জাহান্নাম থেকে অনেক দূরে পালিয়ে থাকত, একে বেশি ভয় করত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তখন আল্লাহ বলেন, তোমাদেরকে আমি সাক্ষী রেখে ঘোষণা করছি, আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তখন মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতা) একজন বলে ওঠেন, তাদের অমুক ব্যক্তি তাদের মধ্যে গণ্য নয়। সে তো শুধু তার কোন কাজেই এখানে এসেছে। তখন আল্লাহ বলেন, তাদের সাথে বসা কোন ব্যক্তিই তা থেকে বঞ্চিত হবে না। (বুখারী)

সহীহ মুসলিম-এর এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তা’আলার অতিরিক্ত একদল পর্যটক মালাক রয়েছেন। তারা আল্লাহর জিকিরকারীদের মাজলিস খুঁজে বেড়ান। কোন মাজলিস পেয়ে গেলে তাদের সাথে বসে পড়েন। একে অন্যের সাথে পাখা মিলিয়ে জিকিরকারীদের হতে নিকটতম আসমান পর্যন্ত সব জায়গাকে ঘিরে নেন। মাজলিস ছেড়ে জিকিরকারীগণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) (ফেরেশতাগণ) আকাশের দিকে ও আরো উপরের দিকে উঠে যান। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তখন আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, অথচ ব্যাপারটি তিনি জানেন, তোমরা কোথা হতে এলে? তারা উত্তরে বলেন, আমরা তোমার এমন বান্দাদের কাছ থেকে এসেছি যারা জমিনে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছে, মহত্ব ও একত্বের ঘোষণা দিচ্ছে, তোমার প্রশংসা করছে, তোমার কাছে দু’আ করছে। তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, তারা আমার কাছে কি চায়? মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) বলেন, তোমার জান্নাত চায়। তখন আল্লাহ বলেন, তারা কি আমার জান্নাত দেখেছে? তারা বলেন না, দেখেনি হে রব! তখন আল্লাহ বলেন, কেমন হত, যদি তারা আমার জান্নাত দেখতে পেত।

তারপর মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) বলেন, তারা তোমার কাছে মুক্তিও চায়। তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করছেন, তারা কোন্ জিনিস হতে মুক্তি চায়? তারা বলেন, তোমার জাহান্নাম থেকে। তখন তিনি জিজ্ঞেস করেন, তারা কি আমার জাহান্নাম দেখেছে? তারা বলেন, না, হে আল্লাহ! তখন তিনি বলেন, কেমন হত যদি তারা আমার জাহান্নাম দেখতে পেত। তারপর তারা বলেন, তারা তোমার কাছে ক্ষমাও চায়। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তখন আল্লাহ বলেন, আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। তাদেরকে আমি দান করলাম যা তারা আমার কাছে চায়। আর যে জিনিস হতে তারা মুক্তি চায় তার থেকে আমি তাদেরকে মুক্ত করে দিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) তখন বলেন, হে রব! তাদের অমুক ব্যক্তি তো খুবই পাপী। সে তো পথ দিয়ে যাবার সময় (তাদেরকে দেখে) তাদের সাথে বসে গেছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তখন আল্লাহ বলেন, তাকেও আমি ক্ষমা করে দিলাম। তারা এমন একদল যাদের সঙ্গী-সাথীরাও বঞ্চিত হয় না।[1]

بَابُ ذِكْرِ اللّٰهِ عَزَّ وَجَلَّ وَالتَّقَرُّبُ إِلَيْهِ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ لِلَّهِ مَلَائِكَةً يَطُوفُونَ فِي الطُّرُقِ يَلْتَمِسُونَ أَهْلَ الذِّكْرِ فَإِذَا وَجَدُوا قَوْمًا يَذْكُرُونَ اللَّهَ تَنَادَوْا: هَلُمُّوا إِلَى حَاجَتِكُمْ قَالَ: «فَيَحُفُّونَهُمْ بِأَجْنِحَتِهِمْ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا» قَالَ: فَيَسْأَلُهُمْ رَبُّهُمْ وَهُوَ أَعْلَمُ بِهِمْ: مَا يَقُولُ عِبَادِي؟ قَالَ: يَقُولُونَ: يُسَبِّحُونَكَ وَيُكَبِّرُونَكَ وَيُحَمِّدُونَكَ وَيُمَجِّدُونَكَ قَالَ: فَيَقُولُ: هَلْ رَأَوْنِي؟ قَالَ: فَيَقُولُونَ: لَا وَاللَّهِ مَا رَأَوْكَ قَالَ فَيَقُولُ: كَيْفَ لَوْ رَأَوْنِي؟ قَالَ: فَيَقُولُونَ: لَوْ رَأَوْكَ كَانُوا أَشَدَّ لَكَ عِبَادَةً وَأَشَدَّ لَكَ تَمْجِيدًا وَأَكْثَرَ لَكَ تَسْبِيحًا قَالَ: فَيَقُولُ: فَمَا يَسْأَلُونَ؟ قَالُوا: يسألونكَ الجنَّةَ قَالَ: يَقُول: وَهل رأوها؟ قَالَ: فَيَقُولُونَ: لَا وَاللَّهِ يَا رَبِّ مَا رَأَوْهَا قَالَ: فَيَقُولُ: فَكَيْفَ لَوْ رَأَوْهَا؟ قَالَ: يقولونَ: لَو أنَّهم رأوها كَانُوا أَشد حِرْصًا وَأَشَدَّ لَهَا طَلَبًا وَأَعْظَمَ فِيهَا رَغْبَةً قَالَ: فممَّ يتعوذون؟ قَالَ: يَقُولُونَ: مِنَ النَّارِ قَالَ: يَقُولُ: فَهَلْ رَأَوْهَا؟ قَالَ: يَقُولُونَ: «لَا وَاللَّهِ يَا رَبِّ مَا رَأَوْهَا» قَالَ: يَقُولُ: فَكَيْفَ لَوْ رَأَوْهَا؟ قَالَ: «يَقُولُونَ لَوْ رَأَوْهَا كَانُوا أَشَدَّ مِنْهَا فِرَارًا وَأَشَدَّ لَهَا مَخَافَةً» قَالَ: فَيَقُولُ: فَأُشْهِدُكُمْ أَنِّي قَدْ غَفَرْتُ لَهُمْ قَالَ: يَقُولُ مَلَكٌ مِنَ الْمَلَائِكَةِ: فِيهِمْ فُلَانٌ لَيْسَ مِنْهُمْ إِنَّمَا جَاءَ لِحَاجَةٍ قَالَ: هُمُ الْجُلَسَاءُ لَا يَشْقَى جَلِيسُهُمْ . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
وَفِي رِوَايَةِ مُسْلِمٍ قَالَ: إِنَّ لِلَّهِ مَلَائِكَةً سَيَّارَةً فُضْلًا يَبْتَغُونَ مَجَالِسَ الذِّكْرِ فَإِذَا وَجَدُوا مَجْلِسًا فِيهِ ذِكْرٌ قَعَدُوا معَهُم وحفَّ بعضُهم بَعْضًا بأجنحتِهم حَتَّى يملأوا مَا بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَإِذَا تَفَرَّقُوا عَرَجُوا وَصَعِدُوا إِلَى السَّمَاءِ قَالَ: فَيَسْأَلُهُمُ اللَّهُ وَهُوَ أَعْلَمُ: مِنْ أَيْنَ جِئْتُمْ؟ فَيَقُولُونَ: جِئْنَا مِنْ عِنْدِ عِبَادِكَ فِي الْأَرْضِ يُسَبِّحُونَكَ وَيُكَبِّرُونَكَ وَيُهَلِّلُونَكَ وَيُمَجِّدُونَكَ وَيَحْمَدُونَكَ وَيَسْأَلُونَكَ قَالَ: وَمَاذَا يَسْأَلُونِي؟ قَالُوا: يَسْأَلُونَكَ جَنَّتَكَ قَالَ: وَهَلْ رَأَوْا جَنَّتِي؟ قَالُوا: لَا أَيْ رَبِّ قَالَ: وَكَيْفَ لَوْ رَأَوْا جَنَّتِي؟ قَالُوا: وَيَسْتَجِيرُونَكَ قَالَ: وَمِمَّ يَسْتَجِيرُونِي؟ قَالُوا: مِنْ نَارِكَ قَالَ: وَهَلْ رَأَوْا نَارِي؟ قَالُوا: لَا. قَالَ: فَكَيْفَ لَوْ رَأَوْا نَارِي؟ قَالُوا: يَسْتَغْفِرُونَكَ قَالَ: فَيَقُولُ: قَدْ غَفَرْتُ لَهُمْ فَأَعْطَيْتُهُمْ مَا سَأَلُوا وَأَجَرْتُهُمْ مِمَّا اسْتَجَارُوا قَالَ: يَقُولُونَ: رَبِّ فِيهِمْ فُلَانٌ عَبْدٌ خَطَّاءٌ وَإِنَّمَا مَرَّ فَجَلَسَ مَعَهُمْ قَالَ: «فَيَقُولُ وَلَهُ غَفَرْتُ هم الْقَوْم لَا يشقى بهم جليسهم»

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن لله ملائكة يطوفون في الطرق يلتمسون أهل الذكر فإذا وجدوا قوما يذكرون الله تنادوا: هلموا إلى حاجتكم قال: «فيحفونهم بأجنحتهم إلى السماء الدنيا» قال: فيسألهم ربهم وهو أعلم بهم: ما يقول عبادي؟ قال: يقولون: يسبحونك ويكبرونك ويحمدونك ويمجدونك قال: فيقول: هل رأوني؟ قال: فيقولون: لا والله ما رأوك قال فيقول: كيف لو رأوني؟ قال: فيقولون: لو رأوك كانوا أشد لك عبادة وأشد لك تمجيدا وأكثر لك تسبيحا قال: فيقول: فما يسألون؟ قالوا: يسألونك الجنة قال: يقول: وهل رأوها؟ قال: فيقولون: لا والله يا رب ما رأوها قال: فيقول: فكيف لو رأوها؟ قال: يقولون: لو أنهم رأوها كانوا أشد حرصا وأشد لها طلبا وأعظم فيها رغبة قال: فمم يتعوذون؟ قال: يقولون: من النار قال: يقول: فهل رأوها؟ قال: يقولون: «لا والله يا رب ما رأوها» قال: يقول: فكيف لو رأوها؟ قال: «يقولون لو رأوها كانوا أشد منها فرارا وأشد لها مخافة» قال: فيقول: فأشهدكم أني قد غفرت لهم قال: يقول ملك من الملائكة: فيهم فلان ليس منهم إنما جاء لحاجة قال: هم الجلساء لا يشقى جليسهم . رواه البخاري وفي رواية مسلم قال: إن لله ملائكة سيارة فضلا يبتغون مجالس الذكر فإذا وجدوا مجلسا فيه ذكر قعدوا معهم وحف بعضهم بعضا بأجنحتهم حتى يملأوا ما بينهم وبين السماء الدنيا فإذا تفرقوا عرجوا وصعدوا إلى السماء قال: فيسألهم الله وهو أعلم: من أين جئتم؟ فيقولون: جئنا من عند عبادك في الأرض يسبحونك ويكبرونك ويهللونك ويمجدونك ويحمدونك ويسألونك قال: وماذا يسألوني؟ قالوا: يسألونك جنتك قال: وهل رأوا جنتي؟ قالوا: لا أي رب قال: وكيف لو رأوا جنتي؟ قالوا: ويستجيرونك قال: ومم يستجيروني؟ قالوا: من نارك قال: وهل رأوا ناري؟ قالوا: لا. قال: فكيف لو رأوا ناري؟ قالوا: يستغفرونك قال: فيقول: قد غفرت لهم فأعطيتهم ما سألوا وأجرتهم مما استجاروا قال: يقولون: رب فيهم فلان عبد خطاء وإنما مر فجلس معهم قال: «فيقول وله غفرت هم القوم لا يشقى بهم جليسهم»

ব্যাখ্যা: (إِنَّ لِلّٰهِ مَلَائِكَةً) হাদীসটির এ অংশের অর্থ হলো প্রতিটি মানব সন্তানের নেকী-বদী লিপিবদ্ধ করার জন্য নির্ধারিত মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) (ফেরেশতামন্ডলী) ছাড়াও এ জমিনে বিচরণকারী অনেক মালাক (ফেরেশতা) রয়েছেন যারা জমিনে বিচরণ করেন আর দেখেন যে, কোন ব্যক্তি কোন সমাজ বা কোন গ্রাম আল্লাহর জিকির করছে। সুতরাং আমাদের উচিত বেশি বেশি করে আল্লাহর জিকিরে লিপ্ত থাকা।

(فَيَسْأَلُهُمْ رَبُّهُمْ وَهُوَ أَعْلَمُ بِهِمْ) ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেছেন, আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়া তা‘আলা তার বান্দাদের অবস্থা সম্পর্কে সবিশেষ অবগত থাকা সত্ত্বেও আবার মালায়িকাহ্’র নিকট জিজ্ঞেস করলেন এর কারণ হলো, তিনি মালায়িকাহ্’র সামনে বানী আদামের ফাযীলাত সম্পর্কে আলোকপাত করতে ইচ্ছা করেছেন। যেহেতু এ বানী আদমকে সৃষ্টির সময় মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) বলেছিলেন,

أَتَجْعَلُ فِيهَا مَنْ يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ

অর্থাৎ- ‘‘হে আমাদের রব! আপনি কি জমিনে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যারা সেখানে গিয়ে অনিষ্ট সৃষ্টি করবে?’’ (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ৩০)

(جَلِيسُهُمْ) ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, অত্র হাদীসটি থেকে এ কথাও বুঝা যায় যে, মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)’র মানব সন্তানের সাথে তাদের একটা মহববতের নিগূঢ় বন্ধন আছে এবং হাদীসটি দ্বারা বিভিন্ন ইসলামী সম্মেলন, কনফারেন্স, সেমিনার, সভাণ্ডসমিতির গুরুত্ব বুঝা যায়।

(فضل) ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ فضل শব্দটি কয়েকভাবে পড়া যায়।

১. فُضُلٌ তথা فاء ও ض এর পেশ দ্বারা।

২. فُضْلٌ তথা فاء এ পেশ আর ض এ সাকিন দ্বারা।

৩. فَضْلٌ তথা فاء যাবার ও ض সাকিন দ্বারা।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার জিকির ও তাঁর নৈকট্য লাভ

২২৬৮-[৮] হানযালাহ্ ইবনুর্ রুবাইয়্যি’ আল উসায়দী (রাঃ) বলেন, আমার সাথে আবূ বকর -এর একবার সাক্ষাৎ হলে তিনি বলেন, কেমন আছো হানযালাহ্? আমি বললাম, হানযালাহ্ মুনাফিক হয়ে গেছে। তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ, এটা কি বলছ হানযালাহ্! আমি বললাম, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে থাকি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে জান্নাত-জাহান্নাম স্মরণ করিয়ে দেন, (মনে হয়) আমরা যেন তা চোখে দেখি। কিন্তু আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে বের হয়ে আসি, কিন্তু (পরকক্ষণেই) স্ত্রী-সন্তানাদি, ক্ষেত-খামার নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ি। তা অনেকটাই ভুলে যাই। তখন আবূ বকর বললেন, আমরাও এরূপই অনুভব করি। এরপর আমি ও আবূ বকর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গেলাম। তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! হানযালাহ্ মুনাফিক হয়ে গেছে। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে আবার কেমন কথা?

আমি বললাম, হে আল্লাহ রসূল! আমরা আপনার কাছে থাকলে আপনি আমাদেরকে জান্নাত-জাহান্নামের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তখন মনে হয় তা যেন আমাদের চোখের দেখা। কিন্তু আপনার কাছ থেকে সরে গিয়ে স্ত্রী সন্তান-সন্ততি ও ক্ষেত-খামারের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি তখন জান্নাত-জাহান্নামের কথা অনেকটাই ভুলে যাই। এসব কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যাঁর হাতে আমার জীবন রয়েছে, তাঁর কসম, যদি তোমরা সবসময় ঐরূপ থাকতে যেরূপ আমার কাছে থাকো। সবসময় জিকির-আযকার করো, তাহলে অবশ্যই মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) (ফেরেশতাগণ) তোমাদের বিছানায় ও তোমাদের চলাচলের পথে তোমাদের সাথে ’মুসাফাহা’ (হাত মিলাতেন) করতেন। কিন্তু হে হানযালাহ্! কখনো ঐরূপ কখনো এরূপই (এ অবস্থা) হবেই। এ বাক্যটি তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনবার বললেন। (মুসলিম)[1]

بَابُ ذِكْرِ اللّٰهِ عَزَّ وَجَلَّ وَالتَّقَرُّبُ إِلَيْهِ

وَعَن حَنْظَلَة بن الرّبيع الأسيدي قَالَ: لَقِيَنِي أَبُو بكر فَقَالَ: كَيْفَ أَنْتَ يَا حَنْظَلَةُ؟ قُلْتُ: نَافَقَ حَنْظَلَةُ قَالَ: سُبْحَانَ اللَّهِ مَا تَقُولُ؟ قُلْتُ: نَكُونُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُذَكِّرُنَا بِالنَّارِ وَالْجَنَّةِ كَأَنَّا رَأْيُ عَيْنٍ فَإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَافَسْنَا الْأَزْوَاجَ وَالْأَوْلَادَ وَالضَّيْعَاتِ نَسِينَا كثيرا قَالَ أَبُو بكر: فو الله إِنَّا لَنَلْقَى مِثْلَ هَذَا فَانْطَلَقْتُ أَنَا وَأَبُو بَكْرٍ حَتَّى دَخَلْنَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ: نَافَقَ حَنْظَلَةُ يَا رَسُولَ اللَّهُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَمَا ذَاكَ؟» قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ نَكُونُ عِنْدَكَ تُذَكِّرُنَا بِالنَّارِ وَالْجَنَّةِ كَأَنَّا رَأْيَ عَيْنٍ فَإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدِكَ عَافَسْنَا الْأَزْوَاجَ وَالْأَوْلَادَ وَالضَّيْعَاتِ نَسِينَا كَثِيرًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ تَدُومُونَ عَلَى مَا تَكُونُونَ عِنْدِي وَفِي الذِّكْرِ لَصَافَحَتْكُمُ الْمَلَائِكَةُ عَلَى فُرُشِكُمْ وَفِي طُرُقِكُمْ وَلَكِنْ يَا حَنْظَلَةُ سَاعَةٌ وَسَاعَةٌ» ثَلَاث مَرَّات. رَوَاهُ مُسلم

وعن حنظلة بن الربيع الأسيدي قال: لقيني أبو بكر فقال: كيف أنت يا حنظلة؟ قلت: نافق حنظلة قال: سبحان الله ما تقول؟ قلت: نكون عند رسول الله صلى الله عليه وسلم يذكرنا بالنار والجنة كأنا رأي عين فإذا خرجنا من عند رسول الله صلى الله عليه وسلم عافسنا الأزواج والأولاد والضيعات نسينا كثيرا قال أبو بكر: فو الله إنا لنلقى مثل هذا فانطلقت أنا وأبو بكر حتى دخلنا على رسول الله صلى الله عليه وسلم فقلت: نافق حنظلة يا رسول الله قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «وما ذاك؟» قلت: يا رسول الله نكون عندك تذكرنا بالنار والجنة كأنا رأي عين فإذا خرجنا من عندك عافسنا الأزواج والأولاد والضيعات نسينا كثيرا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «الذي نفسي بيده لو تدومون على ما تكونون عندي وفي الذكر لصافحتكم الملائكة على فرشكم وفي طرقكم ولكن يا حنظلة ساعة وساعة» ثلاث مرات. رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (حَنْظَلَةَ بْنِ الرُّبَيِّعِ) অত্র হাদীসে যে হানযালাহ্ (রাঃ)-এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে তিনি সেই হানযালাহ্ নন যাকে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) (ফেরেশতারা) মৃত্যুর পর গোসল দিয়েছিলেন যার নাম হলো হানযালাহ্ বিন আবী ‘আমির (রাঃ)। আর হাদীসে বলা হয়েছে হানযালাহ্ বিন রুবাইয়্যি' কথা।

যাই হোক হানযালাহ্ ইবনুর্ রুবাইয়্যি' (রাঃ)-এর সাথে আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) একবার দেখা করলেন। অন্য বর্ণনায় আছে যে, আবূ বাকর তার সাথে যখন দেখা করেন তখন তিনি কান্না করছিলেন। তাকে দেখে আবূ বাকর  জিজ্ঞেস করলেন, হে হানযালাহ্! আপনার ঈমান-‘আমলের খবর কি? তিনি উত্তরে বললেন, (نَافَقَ حَنْظَلَةُ) তথা হানযালাহ্ মুনাফিক হয়ে গেছে। এখানে অবস্থানগত নিফাক্বের কথা বলা হচ্ছে ঈমানী নিফাক্বের কথা নয়।

ইমাম জাযারী (রহঃ) বলেন, নিফাক হলো ইখলাসের বিপরীত। হানযালাহ্ (রাঃ) অত্র হাদীসে বুঝাতে চেয়েছেন যে, তিনি যতক্ষণ পর্যন্ত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থাকেন ততক্ষণ তার ইখলাস ঠিক থাকে আর যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে একাকী চলে আসেন তখন দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে যান। এখানে তিনি নিজের দুর্বলতাটাকে প্রকাশ করেছেন (যদিও তার ঈমান ছিল পূর্ণ ঈমান) এমনটাই ছিল সমস্ত সহাবায়ে কিরামের চরিত্র তারা যত ‘আমল করতেন তার চেয়ে আরো বেশি ‘আমল কিভাবে করা যায় সেই চেষ্টায় মগ্ন থাকতেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৮ পর্যন্ত, সর্বমোট ৮ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে