২২৬১

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার জিকির ও তাঁর নৈকট্য লাভ

এখানে জিকির দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, سُبْحَانَ اللهُ، اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ، لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ، بِسْمِ اللهِ، حَسْبِىَ اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ، اَسْتَغْفِرُ اللهَ সুবহা-নাল্ল-হ, আল হামদুলিল্লা-হ, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু, আল্ল-হু আকবার, লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ, বিসমিল্লা-হ, হাসবিয়াল্ল-হু লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ, আসতাগফিরুল্ল-হু সহ দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ কামনা করে দু’আ করা।
জিকিরুল্লা-হ দ্বারা এটাও উদ্দেশ্য হতে পারে যে, সর্বদাই ভাল কাজে লিপ্ত থাকা যেমনঃ কুরআন তিলাওয়াত করা, হাদীস পাঠ করা, দীনী ’ইলম শিক্ষা করা, নফল সালাত আদায় করা ও উপরোক্ত দু’আগুলো মুখে বলা। এখানে দু’আর অর্থ জানা শর্ত নয় তবে জানলে অবশ্যই বেশি উত্তম।
ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, শুধু মনে মনে জিকির করার চাইতে মনে মনে জিকির ও তা মুখে উচ্চারণ করা উত্তম। আর তিনি আরো বলেন, জিকির শুধু سبحان الله، الحمد لله، لا اله الا الله، لا حول ولا قوة الا بالله এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং মু’মিন, মুসলিমের জীবনের সমুদয় ’আমলই যিকিরের অন্তর্ভুক্ত হবে।


২২৬১-[১] আবূ হুরায়রাহ্ ও আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাঁরা উভয়ে বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মনুষ্য দল আল্লাহর জিকির করতে বসলে, আল্লাহর মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) নিশ্চয় তাদেরকে ঘিরে নেন, তাঁর রহমত তাদেরকে ঢেকে ফেলে এবং তাদের ওপর (মনের) প্রশান্তি বর্ষিত হয়। (অধিকাংশ সময়) আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তীদের সাথে তাদেরকে স্মরণ করেন। (মুসলিম)[1]

بَابُ ذِكْرِ اللّٰهِ عَزَّ وَجَلَّ وَالتَّقَرُّبُ إِلَيْهِ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ وَأَبِي سَعِيدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَقْعُدُ قَوْمٌ يَذْكُرُونَ اللَّهَ إِلَّا حَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَنَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ وَذَكَرَهُمُ اللَّهُ فَيْمَنْ عِنْدَهُ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

عن ابي هريرة وابي سعيد رضي الله عنهما قالا قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يقعد قوم يذكرون الله الا حفتهم الملاىكة وغشيتهم الرحمة ونزلت عليهم السكينة وذكرهم الله فيمن عنده رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (لَا يَقْعُدُ قَوْمٌ يَذْكُرُونَ اللّٰهَ) ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) এ কথাটির নিম্নোক্ত ব্যাখ্যা করেছেন।

১. এখানে বসার উল্লেখ করা হয়েছে এ কারণে যে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষ বসেই আল্লাহর আলোচনা করে থাকে খুব কমই দাঁড়িয়ে আলোচনা বা জিকির করা হয়ে থাকে, তাই বেশির ভাগ বিষয়ের দিকে লক্ষ্য করে এখানে বসার কথা বলা হয়েছে।

২. বসার কথা বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, বসে জিকির করা উত্তম কারণ তাতে উপলদ্ধি বেশি করা যায় এবং ইন্দ্রিয় শক্তি বেশি সচল থাকে।

৩. যিকিরের উপর অটল থাকার প্রতি অত্র হাদীসে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

(وَنَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ) অর্থাৎ- আল্লাহর জিকির করলে সাকীনাহ্ তথা মনোতৃপ্তি বা প্রশান্তি লাভে ধন্য হওয়া যায়। যেমনঃ মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

‘‘সাবধান! আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে অন্তর প্রশান্তি লাভ করে।’’ (সূরা আর্ র‘দ ১৩ : ২৮)

এ পর্যায়ে আমরা হাদীসে উল্লেখিত ‘সাকীনাহ্’ শব্দটি নিয়ে আলোচনা করছি।

কোন কোন ইসলামিক স্কলারস্ মত ব্যক্ত করেছেন যে, ‘সাকীনাহ্’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ‘রহমাত’।

ইবনুল কইয়্যিম (রহঃ) তার ‘মাদারিজুস্ সালিকীন’ নামক কিতাবে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছেন যে, মহান আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবে সাকীনাহ্ শব্দটি সর্বমোট ৬টি স্থানে উল্লেখ করেছেন।

১. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ إِنَّ آيَةَ مُلْكِهِ أَنْ يَّأْتِيَكُمُ التَّابُوْتُ فِيْهِ سَكِيْنَةٌ مِنْ رَّبِّكُمْ

অর্থাৎ- ‘‘তাদের নাবী তাদেরকে বলল, তালূতের বাদশাহ হওয়ার নিদর্শন এই যে, তোমাদের নিকট (কাঠের তৈরি) একটা বাক্স আসবে, যার মধ্যে তোমাদের প্রতিপালকের সাকীনাহ্ (শান্তি বাণী) রয়েছে।’’ (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ২৪৮)

২. মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ

 ثُمَّ أَنْزَلَ اللَّهُ سَكِينَتَهٗ عَلٰى رَسُولِهٖ وَعَلَى الْمُؤْمِنِينَ

‘‘অতঃপর মহান আল্লাহ তার রসূল ও মু’মিনদের ওপর সাকীনাহ্ অবতীর্ণ করলেন।’’ (সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ২৬)

৩. মহান আল্লাহ আরো বলেন,

إِذْ يَقُولُ لِصَاحِبِهٖ لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللهَ مَعَنَا فَأَنْزَلَ اللهُ سَكِينَتَهٗ عَلَيْهِ وَأَيَّدَهٗ بِجُنُودٍ لَمْ تَرَوْهَا

‘‘স্মরণ কর! যখন তার সাথীকে তিনি বললেন, হে আমার সাথী! তুমি চিন্তা করো না আমাদের সাথে আল্লাহর সাহায্য আছে।’’ (সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৪০)

৪. মহান আল্লাহ আরো বলেন,

هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ السَّكِينَةَ فِىْ قُلُوبِ الْمُؤْمِنِينَ لِيَزْدَادُوا إِيمَانًا مَعَ إِيمَانِهِمْ وَلِلهِ جُنُودُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا

‘‘তিনিই মু’মিনদের দিলে প্রশান্তি নাযিল করেন যাতে তারা তাদের ঈমানের সাথে আরো ঈমান বাড়িয়ে নেয়। আসমান ও জমিনের যাবতীয় বাহিনী আল্লাহর কর্তৃত্বের অধীন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও মহাবিজ্ঞানী।’’ (সূরা আল ফাত্হ ৪৮ : ৪)

৫. মহান আল্লাহ আরো বলেন,

لَقَدْ رَضِيَ اللهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِىْ قُلُوبِهِمْ فَأَنْزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا

‘‘মু’মিনদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হলেন যখন তারা (হুদায়বিয়ায়) গাছের তলে তোমার কাছে বায়‘আত নিল। আল্লাহ জানতেন তাদের অন্তরে কী আছে, এজন্য তিনি তাদের ওপর প্রশান্তি অবতীর্ণ করলেন আর পুরস্কার হিসেবে তাদেরকে দিলেন আসন্ন বিজয়।’’ (সূরা আল ফাতহ ৪৮ : ১৮)

৬. মহান আল্লাহ আরো বলেন,

إِذْ جَعَلَ الَّذِينَ كَفَرُوا فِىْ قُلُوبِهِمُ الْحَمِيَّةَ حَمِيَّةَ الْجَاهِلِيَّةِ فَأَنْزَلَ اللهُ سَكِينَتَهٗ عَلٰى رَسُولِهٖ وَعَلَى الْمُؤْمِنِينَ

‘‘কাফিররা যখন তাদের অন্তরে জিদ ও হঠকারিতা জাগিয়ে তুলল- অজ্ঞতার যুগের জিদ ও হঠকারিতা- তখন আল্লাহ তাঁর রসূল ও মু’মিনদের ওপর স্বীয় প্রশান্তি অবতীর্ণ করলেন।’’ (সূরা আল ফাত্হ ৪৮ : ২৬)

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়্যাহ্ (রহঃ) বলেনঃ আমার কোনরূপ বেশি পরিমাণ কষ্ট অনুভব হলে সাকীনাহ্’র উল্লেখ যে সমস্ত আয়াতগুলোতে আছে তা তিলাওয়াত করে দেখেছি বেদনা কিছুটা উপশম হয়।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ কুরআন মাজীদে বর্ণিত প্রত্যেক সাকীনাহ্ শব্দের অর্থই হলো প্রশান্তি তবে সূরা আল বাকারাহ্’টি বাদে।

ইমাম ইবনুল কইয়্যিম (রহঃ) সাকীনাহ্ ও ত্বমা’নীনাহ্’র মধ্যে কিছুটা পার্থক্যের উল্লেখ করেছেন।

সাকীনাহ্ হলো অন্তরের মধ্যে প্রশান্তি সৃষ্টি যা সাময়িক আর ত্বমা’নীনাহ্ হলো স্থায়ী এক শান্তি ও প্রশান্তি।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات)