পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সদাক্বার মর্যাদা

১৯০৭-[২০] ’আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমন করার পর আমি তাঁর কাছে গেলাম। তাঁর ’চেহারা মুবারাক’ দেখেই আমি চিনতে পেরেছি এ কোন মিথ্যাবাদীর চেহারা হতে পারে না। সর্বপ্রথম তিনি যে কথা বলেছিলেন তা ছিল, ’’হে লোকেরা! তোমরা পরস্পর সালাম বিনিময় করো, ক্ষুধার্তকে খাবার দাও, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদাচরণ করো, রাতের বেলা যখন লোকেরা ঘুমিয়ে থাকবে, তখন তাহাজ্জুদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় কর, তাহলে প্রশান্তচিত্তে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, দারিমী)[1]

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلَامٍ قَالَ: لَمَّا قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ جِئْتُ فَلَمَّا تَبَيَّنْتُ وَجْهَهُ عَرَفْتُ أَنَّ وَجْهَهُ لَيْسَ بِوَجْهِ كَذَّابٍ. فَكَانَ أَوَّلُ مَا قَالَ: «أَيُّهَا النَّاسُ أَفْشُوا السَّلَامَ وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وَصِلُوا الْأَرْحَامَ وَصَلُّوا بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلام» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه والدارمي

عن عبد الله بن سلام قال: لما قدم النبي صلى الله عليه وسلم المدينة جئت فلما تبينت وجهه عرفت أن وجهه ليس بوجه كذاب. فكان أول ما قال: «أيها الناس أفشوا السلام وأطعموا الطعام وصلوا الأرحام وصلوا بالليل والناس نيام تدخلوا الجنة بسلام» . رواه الترمذي وابن ماجه والدارمي

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে (أَيُّهَا النَّاسُ) ‘হে মানব সকল’ বলে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, নির্বিশেষে সকল মানুষকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। ‘তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও’ মানে হচ্ছে তোমরা শুধু পরিচিত জনকেই সালাম দিবে না, অপরিচিত জনকেও সালাম দিবে। খাদ্য খাওয়ানো দ্বারা মূলত যাকাতের আবশ্যক দান ব্যতীত অন্যান্য দান, যেমন- সাধারণ দান, উপহার প্রদান, মেহমানদারি করানো ইত্যাদি বুঝানো হয়েছে। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার অর্থ হচ্ছে বংশগত দিক থেকে নিকটাত্মীয়দের সাথে উত্তম ব্যবহার করা এবং তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল, নমনীয় হওয়া ও তাদের সাথে কোমল আচরণ করা। রাতে যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে তখন নফল সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার আদেশ এজন্য দেয়া হয়েছে যে, এ সময়টি সাধারণত অমনোযোগিতার সময়। এ সময়ে যারা জেগে থেকে সালাত আদায় করবে তারা অধিক সাওয়াবের অধিকারী হবে এবং লোক দেখানো (রিয়া) বা লোক শুনানো (সুম্‘আহ্) (কোন ‘আমল মানুষকে দেখানো বা শুনানোর জন্য করা হলে তা গোপন শির্কে রূপান্তরিত হয়, এরূপ ‘আমল অবশ্যই বর্জনীয়) থেকে মুক্ত থাকবে। এ কর্মসমূহ যারা সম্পাদন করবে তারা কোনরূপ কষ্ট বা অপছন্দনীয় কাজ থেকে নিরাপদ থাকবে কিংবা জান্নাতে প্রবেশের সময় মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তাদেরকে সালাম দিবেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সদাক্বার মর্যাদা

১৯০৮-[২১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রহমানের ’ইবাদাত করো, খাবার দাও, মুসলিমদেরকে সালাম দাও; তোমরা সহজে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اعْبُدُوا الرَّحْمَنَ وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وَأَفْشُوا السَّلَامَ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلام» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه

وعن عبد الله بن عمرو قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اعبدوا الرحمن وأطعموا الطعام وأفشوا السلام تدخلوا الجنة بسلام» . رواه الترمذي وابن ماجه

ব্যাখ্যা: বর্ণিত কর্মসমূহ যদি তোমরা সম্পাদন করো এবং এ কর্মের উপরই মৃত্যুবরণ করো তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। তখন তোমাদের কোন ভয় থাকবে না এবং তোমরা দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সদাক্বার মর্যাদা

১৯০৯-[২২] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অবশ্য অবশ্য সদাক্বাহ্ (সাদাকা) আল্লাহ তা’আলার ক্রোধকে ঠান্ডা করে, আর খারাপ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে। (তিরমিযী)[1]

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الصَّدَقَةَ لَتُطْفِئُ غَضَبَ الرَّبِّ وَتَدْفَعُ مِيتَةَ السَّوْءِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ

وعن أنس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «إن الصدقة لتطفئ غضب الرب وتدفع ميتة السوء» . رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্য হয় সে যদি দান করে তাহলে তার দান তার প্রতি আল্লাহর যে রাগ ছিল তা প্রশমিত করে বা মিটিয়ে দেয়। তাছাড়া আল্লাহর রাস্তায় দান মন্দ/খারাপ মৃত্যু রোধ করে। মন্দ মৃত্যু বলতে কয়েক ধরনের মৃত্যু হতে পারে। যেমন- (এক) মৃত্যুর সময় খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হওয়া, যা ঐ ব্যক্তিকে মৃত্যু যন্ত্রণার কারণে আল্লাহ প্রদত্ত নি‘আমাতের অস্বীকার ও আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল করে দেয়; (দুই) হঠাৎ মৃত্যু; (তিন) এমন সকল মৃত্যু যা ব্যক্তিকে আল্লাহর থেকে দূরে সরিয়ে খারাপ সমাপ্তির দিকে নিয়ে যায়।

কেউ কেউ বলেন, দানকারী ব্যক্তিকে মৃত্যুকালীন ফিতনাহ্ থেকে রক্ষা করবে অথবা দান-এর কারণে দানকারী মৃত্যুর পূর্বে তাওবাহ্ করার সুযোগ পাবে, যদিও সে গুনাহের উপর দৃঢ় সংকল্পকৃত ও অবাধ্য হোক না কেন।

অথবা সে যে কোন ধরনের ধ্বংস, যেমন- পানিতে ডোবা কিংবা আগুনে পোড়া হতে নিরাপদ থেকে মৃত্যুবরণ করবে। হাফিয ইরাক্বী বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ঐ ধরনের মৃত্যু যা থেকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নিকট আশ্রয় চেয়েছেন। যেমন- পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে, গর্তে পরে মারা যাওয়া কিংবা যে কোনভাবে ধ্বংস হওয়া। অথবা মৃত্যুর সময়ে শায়ত্বনের (শয়তানের) প্রভাবে মোহাবিষ্ট হওয়া, কিংবা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ থেকে পলায়নরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা ইত্যাদি।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সদাক্বার মর্যাদা

১৯১০-[২৩] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিটি ভাল কাজই সদাক্বাহ্ (সাদাকা), আর তোমার নিজের কোন ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ এবং কোন ভাইয়ের পাত্রে নিজের বালতি থেকে পানি ঢেলে দেয়াও ভাল কাজের অন্তর্ভুক্ত। (আহমাদ, তিরমিযী)[1]

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ
: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كُلُّ مَعْرُوفٍ صَدَقَةٌ وَإِنَّ مِنَ الْمَعْرُوفِ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهٍ طَلْقٍ وَأَنْ تُفْرِغَ مِنْ دَلْوِكَ فِي إِنَاءِ أَخِيكَ» . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ

وعن جابر قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «كل معروف صدقة وإن من المعروف أن تلقى أخاك بوجه طلق وأن تفرغ من دلوك في إناء أخيك» . رواه أحمد والترمذي

ব্যাখ্যা: মা‘রূফ (مَعْرُوْفِ) বলতে প্রত্যেক ঐ কাজকে বুঝায় যা ইসলামী শারী‘আত সুন্দর বলে স্বীকৃতি দিয়েছে অথবা মানববুদ্ধি (‘আকল) দ্বারা যা ভালো বলে স্বীকৃত। তবে মানববুদ্ধি দ্বারা স্বীকৃত কর্মগুলো তখনই মা‘রূফ হবে যখন সেগুলো শারী‘আতের সাথে সাংঘর্ষিক না হবে। সদাক্বাহ্ (সাদাকা) বলা হয় ঐ দানকে যা ব্যক্তি তার সম্পদ থেকে আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার উদ্দেশে দান করে। হাদীসে বর্ণিত ‘‘প্রত্যেক সৎ কাজই একটা দান’’ কথা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রত্যেক সৎ কাজই সম্পদ বা অর্থ দান করার স্থলাভিষিক্ত। সদাক্বার মতো প্রত্যেক সৎ কাজও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উপায়।

আল্ মা‘রূফ (الْمَعْرُوْفِ) ও আস্ সদাক্বাহ্ (সাদাকা) (الصَّدَقَةُ) পরিভাষা দু’টি শাব্দিকভাবে ভিন্ন ভিন্ন হলেও অর্থের দিক থেকে কাছাকাছি। তবে এ দু’টি শব্দ দ্বারাই উদ্দিষ্ট কাজ একই। আল-কুরআনে শব্দ দু’টি ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন- আল্লাহ বলেন,

لَا خَيْرَ فِىْ كَثِيْرٍ مِّنْ نَجْوهُمْ إِلَّا مَنْ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوْ مَعْرُوْفٍ

‘‘তাদের অধিকাংশ গোপন পরামর্শে কোন কল্যাণ নেই, তবে কল্যাণ আছে যে নির্দেশ দেয় দান-খয়রাত অথবা সৎ কাজে।’’ (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ১১৪)

আর পরিভাষা দু’টি অত্র হাদীসে একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এ হাদীসে ‘‘ভাই’’ বলতে ‘‘মুসলিম ভাই’’ বুঝানো হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সদাক্বার মর্যাদা

১৯১১-[২৪] আবূ যার গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমার ভাইয়ের সামনে হাসি মুখে আগমন করা সদাক্বাহ্ (সাদাকা), নেক কাজ নির্দেশ, খারাপ কথাবার্তা হতে বিরত থাকা তোমার জন্য সদাক্বাহ্ (সাদাকা), পথহারা প্রান্তরে কোন মানুষকে পথ বলে দেয়া, কোন অন্ধ বা দুর্বল দৃষ্টিশক্তির মানুষকে সাহায্য করা সদাক্বাহ্ (সাদাকা), পথের কাঁটা বা হাড় সরিয়ে দেয়া, নিজের বালতি থেকে অন্য কোন ভাইয়ের বালতিতে পানি দিয়ে ভরে দেয়া তোমার জন্য সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। (তিরমিযী; তিনি বলেন, এ হাদীসটি গরীব)[1]

وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَبَسُّمُكَ فِي وَجْهِ أَخِيك صَدَقَة وأمرك بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَة ن وَنَهْيُكَ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ وَإِرْشَادُكَ الرَّجُلَ فِي أَرْضِ الضَّلَالِ لَكَ صَدَقَةٌ وَنَصْرُكَ الرَّجُلَ الرَّدِيءَ الْبَصَرِ لَكَ صَدَقَةٌ وَإِمَاطَتُكَ الْحَجَرَ وَالشَّوْكَ وَالْعَظْمَ عَن الطَّرِيقِ لَكَ صَدَقَةٌ وَإِفْرَاغُكَ مِنْ دَلْوِكَ فِي دَلْوِ أَخِيكَ لَكَ صَدَقَةٌ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ

وعن أبي ذر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «تبسمك في وجه أخيك صدقة وأمرك بالمعروف صدقة ن ونهيك عن المنكر صدقة وإرشادك الرجل في أرض الضلال لك صدقة ونصرك الرجل الرديء البصر لك صدقة وإماطتك الحجر والشوك والعظم عن الطريق لك صدقة وإفراغك من دلوك في دلو أخيك لك صدقة» . رواه الترمذي وقال: هذا حديث غريب

ব্যাখ্যা: তাবাসসুম (تَبَسُّمٌ) বা মুচকি হাসি ঐ হাসিকে বলে যে হাসিতে দাঁত দেখা যায় কিন্তু কোন আওয়াজ হয় না। যে হাসিতে হালকা আওয়াজ হয় যা নিকটবর্তী লোকজন শুধু শুনতে পায় সে হাসিকে সাধারণ হাসি বলে। আর যে হাসির আওয়াজ এতটা জোরে হয় যে দূরবর্তী লোকজনও শুনতে পায় সে হাসিকে কহকহ্ (قهقهة) বা অট্টহাসি বলে।

কোন দীনী ভাই-এর সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করলে সেরূপ সাওয়াব পাবে যেরূপ সাওয়াব পাওয়া যেত তাকে কিছু দান করলে। মা‘রূফ ঐ কাজকে বলে যে কাজকে শারী‘আত ও মানববুদ্ধি সুন্দর বলে মনে করে। আর মুনকার ঐ কাজকে বলে যে কাজকে শারী‘আত ও মানববুদ্ধি সুন্দর বলে মনে করে না বরং খারাপ মনে করে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সদাক্বার মর্যাদা

১৯১২-[২৫] সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল! উম্মু সা’দ (অর্থাৎ আমার মা) মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁর মাগফিরাতের জন্য কোন্ ধরনের দান সদাক্বাহ্ (সাদাকা) উত্তম? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ’’পানি’’, (এ কথা শুনে) সা’দ কূপ খনন করলেন এবং বললেন, এ কূপ উম্মু সা’দ (রাঃ)-এর জন্য সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]

وَعَنْ سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أُمَّ سَعْدٍ مَاتَتْ فَأَيُّ الصَّدَقَةِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: «الْمَاءُ» . فَحَفَرَ بِئْرًا وَقَالَ: هَذِهِ لأم سعد. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ

وعن سعد بن عبادة قال: يا رسول الله إن أم سعد ماتت فأي الصدقة أفضل؟ قال: «الماء» . فحفر بئرا وقال: هذه لأم سعد. رواه أبو داود والنسائي

ব্যাখ্যা: সা‘দ (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন, আমার মায়ের নিকট সাওয়াব পৌঁছানোর জন্য সবচেয়ে উত্তম দান কোনটি? রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন যে, পানি। আহমাদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ্ ও ইবনু হিব্বান-এর বর্ণনায় রয়েছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘পানি পান করানো’’। কেননা ঐ সময় মদীনায় পানির স্বল্পতা ছিল। তবে পানি এমন একটি বস্ত্ত যা স্বাভাবিকভাবেই সর্বদা সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বস্ত্ত হিসেবে পরিগণিত হয়। আল্লামা মুল্লা ‘আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন, নিশ্চয় পানি দান করাই সর্বোত্তম। কারণ দীনী ও পার্থিব উভয় ক্ষেত্রের কর্মে সবচেয়ে উপকারী বস্ত্ত হলো পানি। বিশেষ করে উষ্ণ/শুষ্ক বা উচ্চ তাপমাত্রার দেশসমূহে।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সদাক্বার মর্যাদা

১৯১৩-[২৬] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে মুসলিম কোন একজন উলঙ্গ মুসলিমকে কাপড় পরাবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন জান্নাতের সবুজ পোশাক পরিধান করাবেন। যে মুসলিম কোন ক্ষুধার্ত মুসলিমকে খাবার দেবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতের ফল-ফলাদি খাওয়াবেন। আর যে মুসলিম কোন পিপাসার্ত মুসলিমের পিপাসা মেটাবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে ’রাহীকুল মাখতূমে’র পানীয় দিয়ে পরিতৃপ্ত করাবেন। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী)[1]

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيُّمَا مُسْلِمٍ كَسَا مُسْلِمًا ثَوْبًا عَلَى عُرْيٍ كَسَاهُ اللَّهُ مِنْ خُضْرِ الْجَنَّةِ وَأَيُّمَا مُسْلِمٍ أَطْعَمَ مُسْلِمًا عَلَى جُوعٍ أَطْعَمَهُ اللَّهُ مِنْ ثِمَارِ الْجَنَّةِ. وَأَيُّمَا مُسلم سقا مُسْلِمًا عَلَى ظَمَأٍ سَقَاهُ اللَّهُ مِنَ الرَّحِيقِ الْمَخْتُوم» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ

وعن أبي سعيد قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «أيما مسلم كسا مسلما ثوبا على عري كساه الله من خضر الجنة وأيما مسلم أطعم مسلما على جوع أطعمه الله من ثمار الجنة. وأيما مسلم سقا مسلما على ظمأ سقاه الله من الرحيق المختوم» . رواه أبو داود والترمذي

ব্যাখ্যা: যে মুসলিম ব্যক্তি অন্য কোন মুসলিমকে তার পিপাসায় পানি পান করাবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতে মিসকের সুগন্ধি দ্বারা মুখ বন্ধ করা বোতল থেকে পূর্ণভাবে জান্নাতী মদ পান করাবেন। আল্লামা মুল্লা ‘আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন, আর্ রাহীক্ব (الرَّحِيْق) অর্থ হচ্ছে মদের শ্রেষ্ঠাংশ এবং নির্ভেজাল পানীয় যাতে কোন ভেজাল থাকবে না। আর আল্ মাখতূম (الْمَخْتُوْم) অর্থ হলো এমন বোতল যার ছিল এমনভাবে লাগানো যা খুবই সুরক্ষিত এবং যার নিকটে তার অধিকারী/হকদার ব্যতীত কেউ পৌঁছতে পারে না। আল্লামা আল্ মা'নাবী (রহঃ) বলেন, এ হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, হাদীসে বর্ণিত কাজগুলো যারা করবে তাদেরকে জান্নাতে ঐ জিনিসের সর্বোত্তমটি প্রতিদান হিসেবে দেয়া হবে। কারণ স্বাভাবিকভাবে জান্নাতের সবাইকেই তো ঐসব বস্ত্ত দেয়া হবে। ঐসব কর্মশীলদের সর্বোত্তমটি দেয়ার মাধ্যমে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হবে। এ হাদীসের মধ্যে এ ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া হয়েছে যে, সৎকর্মের মধ্যে বৈচিত্রতা অবলম্বন করা উচিত। অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের সৎকর্ম সম্পাদন করা উচিত এবং যারা ঐ সব বস্ত্তর মুখাপেক্ষী, অর্থাৎ যাদের ঐ সবে চাহিদা রয়েছে তাদেরকে তা দেয়া উচিত। এ হাদীস দ্বারা আরো প্রমাণ হয় যে, ঐ সব কর্মের প্রতিদান একই জাতের বস্ত্ত দ্বারা দেয়া হবে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সদাক্বার মর্যাদা

১৯১৪-[২৭] ফাত্বিমাহ্ বিনতু কুবায়স (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই সম্পদে যাকাত ছাড়াও (গরীবের) আরো অন্যান্য হক প্রতিষ্ঠিত আছে। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ’’তোমরা নিজেদের মুখ পূর্ব দিকে কর কিংবা পশ্চিম দিকে এতে কোন পুণ্য (কল্যাণ) নেই’’- (সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২: ১৭৭) আয়াতের শেষ পর্যন্ত। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, দারিমী)[1]

وَعَن فَاطِمَة بنت قبيس قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ فِي الْمَالِ لَحَقًّا سِوَى الزَّكَاةِ» ثُمَّ تَلَا: (لَيْسَ الْبَرَّ أَنْ تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قبل الْمشرق وَالْمغْرب)
الْآيَة. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه والدارمي

وعن فاطمة بنت قبيس قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «إن في المال لحقا سوى الزكاة» ثم تلا: (ليس البر أن تولوا وجوهكم قبل المشرق والمغرب) الآية. رواه الترمذي وابن ماجه والدارمي

ব্যাখ্যা: আল্লামা আল্ মা'নাবী (রহঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী ‘‘যাকাত ছাড়াও ব্যক্তির সম্পদে অপর ব্যক্তির অধিকার রয়েছে’’। যেমন- বন্দি-মুক্ত করা, নিরুপায় ব্যক্তিকে খাদ্য খাওয়ানো। এগুলো হলো যাকাতের বাইরের আবশ্যক দায়িত্ব। আল্লামা মুল্লা ‘আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসের মর্মার্থ হলো ভিক্ষুক এবং ঋণপ্রত্যাশীকে মাহরূম না করা এবং কেউ যদি বাড়ির দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্র যেমন- হাড়ি-পাতিল, আগুন, পানি, লবন ইত্যাদি চায় তাহলে তাকে তা দেয়া উচিত।

হাদীসে বর্ণিত কথার প্রমাণ হিসেবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের যে আয়াতটি তিলাওয়াত করেন সেটি হলো- ‘‘পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফিরানোতে কোন পুণ্য নেই; কিন্তু পুণ্য আছে- কেউ আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, সমস্ত কিতাব এবং নাবীগণে ইমান আনয়ন করলে এবং আল্লাহর ভালোবাসায় আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, পর্যটক, সাহায্যপ্রার্থীগণকে এবং দাসমুক্তির জন্য অর্থ দান করলে, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ক্বায়িম করলে ও যাকাত প্রদান করলে এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূরণ করলে, অর্থ-সংকটে, দুঃখ-কষ্টে ও সংগ্রাম-সংকটে ধৈর্য ধারণ করলে’’। (সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৭৭)

ত্বীবী বলেন, এ আয়াত দ্বারা দলীল পেশ করার কারণ হলো, এ আয়াতে সম্পদ ব্যয় করার কথাও বলা হয়েছে এবং পরক্ষণেই যাকাত প্রদানের কথা বলা হয়েছে। যা প্রমাণ করে যে, ব্যক্তির সম্পদে যাকাত ছাড়াও অন্য ব্যক্তির অন্য অধিকার রয়েছে। বলা হয়, হক বা অধিকার দু’ ধরনের। (এক) ঐ সমস্ত অধিকার যেগুলো প্রদান আল্লাহ তার বান্দাদের ওপর আবশ্যক বিধান করেছেন। (দুই) ঐ সমস্ত অধিকার যেগুলো বান্দা তার কৃপণতা থেকে বাঁচার জন্য এবং আত্মশুদ্ধির জন্য নিজের ওপর আবশ্যক করে নিয়েছে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সদাক্বার মর্যাদা

১৯১৫-[২৮] মহিলা সাহাবী বুহায়সাহ্ (রাঃ)তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন যে, তাঁর পিতা আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! এটা কোন্ জিনিস যা দিতে অস্বীকার করা হালাল নয়? তিনি বললেন, ’পানি’। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর নবী! কোন্ জিনিস দিতে নিষেধ করা হালাল নয়? তিনি বললেন, ’লবণ’। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর নবী! আর কোন্ জিনিস নিষেধ করা হালাল নয়? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সর্বপ্রকার কল্যাণের কাজই তোমার জন্য কল্যাণকর। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ بُهَيْسَةَ عَنْ أَبِيهَا قَالَتْ: قَالَ: يَا رَسُول الله مَا لشَيْء الَّذِي لَا يَحِلُّ مَنْعُهُ؟ قَالَ: «الْمَاءُ» . قَالَ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ مَا الشَّيْءُ الَّذِي لَا يَحِلُّ مَنْعُهُ؟ قَالَ: «الْمِلْحُ» . قَالَ: يَا نَبِيَّ الله مَا لاشيء الَّذِي لَا يَحِلُّ مَنْعُهُ؟ قَالَ: «أَنْ تَفْعَلَ الْخَيْر خير لَك» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن بهيسة عن أبيها قالت: قال: يا رسول الله ما لشيء الذي لا يحل منعه؟ قال: «الماء» . قال: يا نبي الله ما الشيء الذي لا يحل منعه؟ قال: «الملح» . قال: يا نبي الله ما لاشيء الذي لا يحل منعه؟ قال: «أن تفعل الخير خير لك» . رواه أبو داود

ব্যাখ্যা: পানি প্রার্থনাকারীকে তা দিতে তখনই নিষেধ করা যাবে না যখন পানির মালিকের পানির প্রয়োজন থাকবে না। কারো মতে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, পানি হলো এমন নগণ্য জিনিস যা প্রার্থনাকারীকে ও প্রতিবেশীকে দেয়া থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। লবণ প্রার্থনাকারীকে তা দিতে বিরত থাকা যাবে না এজন্য যে, এ জিনিসটি মানুষের খুবই প্রয়োজন এবং প্রথাগতভাবেই মানুষ এটা আদান-প্রদান করে। ইমাম আশ্ শাওকানী বলেন, মূলত যেসব জিনিস দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় সেসব জিনিস এই একই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত।

সর্বশেষে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী, ‘‘যে কোন ভাল কাজ করাই তোমার পক্ষে ভাল’’। এর অর্থ হলোঃ তোমার সুরভিত আত্মা যে কল্যাণকর কাজ করতে চায় তা করা উচিত এবং তা করা থেকে বিরত থাকা বৈধ নয়। আল্লামা আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীর পক্ষে কুরআনী দলীল হচ্ছে- আল্লাহ বলেন, ‘‘কেউ অণু পরিমাণ কাজ করলে সে তা (ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন) দেখবে’’- (সূরাহ্ আয্ যিলযা-ল ৯৯ : ০৭)। অত্র হাদীসে যে ‘‘বৈধ নয়’’ বলা হয়েছে এর দ্বারা মূলত বুঝাচ্ছে ‘‘উচিত নয়’’।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সদাক্বার মর্যাদা

১৯১৬-[২৯] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন অনাবাদী জমি আবাদ করে (অর্থাৎ ফসল উৎপাদনের উপযোগী করে) তার এ কাজে তার জন্য সাওয়াব আছে। যদি এ জমি ক্ষুধার্ত কিছু খায় তাহলে এটাও তার জন্য সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। (নাসায়ী, দারিমী)[1]

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «من أحيى أَرْضًا مَيِّتَةً فَلَهُ فِيهَا أَجْرٌ وَمَا أَكَلَتِ الْعَافِيَةُ مِنْهُ فَهُوَ لَهُ صَدَقَةٌ» . رَوَاهُ النَّسَائِيُّ والدارمي

وعن جابر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من أحيى أرضا ميتة فله فيها أجر وما أكلت العافية منه فهو له صدقة» . رواه النسائي والدارمي

ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তি কোন মৃত (পতিত) বা শুষ্ক কিংবা এমন জমি যা থেকে কোন উপকার লাভ করা যায় না, তা সেচ, চাষাবাদ, কৃষি বা রোপনের মাধ্যমে উপকারী জমিতে রূপান্তরিত করে তাহলে তাতে তার জন্য (যে জমিকে কৃষি উপযোগী করল) সাওয়াব রয়েছে। এরপর যদি ঐ জমিতে উৎপন্ন শস্যাদি, ফল-মূল, খাদ্য, তরি-তরকারী ইত্যাদি থেকে কোন মানুষ, পশু কিংবা পাখি কিছু খায় এবং এ খাওয়ার কারণে কৃষক বা জমির মালিক যদি অসন্তুষ্ট না হয় তাহলে ঐসব প্রাণী যা খাবে তা তার জন্য সদাক্বাহ্ (সাদাকা) হিসেবে গণ্য হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সদাক্বার মর্যাদা

১৯১৭-[৩০] বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কাউকে একটি দুগ্ধবতী ছাগী দুধ পানের জন্য দিবে অথবা রূপা (অর্থাৎ টাকা-পয়সা) ধার হিসেবে দেবে অথবা পথহারা কোন ব্যক্তিকে পথ দেখিয়ে দেবে, সে একটি গোলাম স্বাধীন করার মতো সাওয়াব পাবে। (তিরমিযী)[1]

وَعَنِ الْبَرَاءِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ مَنَحَ مِنْحَةَ لَبَنٍ أَو روق أَوْ هَدَى زُقَاقًا كَانَ لَهُ مِثْلَ عِتْقِ رَقَبَة» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن البراء قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من منح منحة لبن أو روق أو هدى زقاقا كان له مثل عتق رقبة» . رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: আল জাযারী (রহঃ) বলেন, টাকা-পয়সা দান করার অর্থ হলো টাকা-পয়সা ঋণ দেয়া আর দুধ দান করার অর্থ হলো উটনি বা ছাগল দান করা এ শর্তে যে, ঐ পশুর দুধ থেকে তারা লাভবান হবে এবং প্রয়োজন শেষে মালিককে ঐ পশুগুলো ফেরত দিবে। এ কাজগুলো যে করবে সে একজন দাস মুক্ত করার সাওয়াব পাবে। কাজগুলোর সাথে দাসমুক্তির সাওয়াবের সাদৃশ্য করা হয়েছে এজন্য যে, ঐ কাজগুলো দ্বারা সৃষ্টিজীবের উপকার সাধন করা হয় এবং তাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সদাক্বার মর্যাদা

১৯১৮-[৩১] আবূ জুরাই জাবির ইবনু সুলায়ম (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার মদীনায় এলাম, দেখলাম লোকেরা এক ব্যক্তির মতামত ও জ্ঞানবুদ্ধির উপর নির্ভরশীল। সে ব্যক্তি যা বলছে, মানুষ সে অনুযায়ী কাজ করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? লোকেরা বলল, ইনি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। বর্ণনাকারী বলেন, আমি (তাঁর খিদমাতে হাযির হয়ে) দু’বার বললাম, ’আলায়কাস্ সালা-ম’। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ’আলায়কাস্ সালা-ম’ বলো না। কারণ ’আলায়কাস্ সালা-ম’ হলো মৃত ব্যক্তির জন্য দু’আ। বরং বলো, ’আস্‌সালা-মু ’আলায়কা’। এরপর আমি বললাম, আপনি কি আল্লাহর রসূল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি আল্লাহর রসূল। ওই আল্লাহর, যিনি কোন বিপদ-আপদে তুমি তাঁকে ডাকলে তিনি তা দূর করে দেন। তুমি যদি দুর্ভিক্ষে পতিত হয়ে তাঁকে ডাকো, তাহলে তিনি জমিনে তোমার জন্য সবুজ ফসল ফলিয়ে দেবেন। তৃণ ও প্রাণহীন কোন মরুপ্রান্তরে অথবা ময়দানে যখন থাকো এবং সেখানে তোমার বাহন হারিয়ে গেলে তুমি তাঁকে ডাকো, তিনি তা তোমাকে ফিরিয়ে দেবেন।

জাবির (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আমাকে কিছু নাসীহাত করুন। তিনি বললেন, কাউকে গালমন্দ করো না। আবূ জুরাই বলেন, এরপর আমি আর কাউকে গালমন্দ করিনি-মুক্ত ব্যক্তিকে, গোলামকে, উট এবং বকরী কাউকেই নয়। (এরপর) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন নেক কাজকে তুচ্ছ মনে করো না। যখন তোমার কোন ভাইয়ের সাথে কথাবার্তা বলবে তখন হাসিমুখে বলবে, এটাও নেক কাজের অংশ। তুমি তোমার পাজামা-লুঙ্গী হাঁটুর নীচ পর্যন্ত উঠিয়ে পড়বে। এতটুকু উঁচুতে ওঠাতে না চাইলে টাখনুদ্বয়ের উপরে রেখে পড়বে। কাপড় টাখনুর নীচে ছেড়ে দেয়া সম্পর্কে সাবধান, কারণ টাখনুর নীচে কাপড় পড়া অহংকারের লক্ষণ। আল্লাহ তা’আলা অহংকার পছন্দ করেন না। কেউ তোমাকে গালি দিলে এবং তোমার এমন কোন দোষের জন্য লজ্জা দিলে যা তোমার মধ্যে আছে বলে সে জানে, তাহলে তুমি (প্রতিশোধ নিতে) তার কোন দোষের জন্য তাকে লজ্জা দেবে না, যা তুমি জানো। কারণ তার গুনাহের ভাগী সে হবে। (আবূ দাঊদ; তিরমিযী এ হাদীসটি প্রথমাংশ অর্থাৎ ’’আস্‌সালা-ম’’ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন। তিরমিযীর অপর এক বর্ণনায়, ’’ফায়াকূনু লাকা আজরু যা-লিকা, ওয়া ওয়াবা-লুহূ ’আলাইহি’’ [তাহলে এর প্রতিদান তুমি পাবে এবং এর খারাপ পরিণতি তার ওপর বর্তাবে] পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।)[1]

وَعَنْ أَبِي جُرَيٍّ جَابِرِ بْنِ سُلَيْمٍ قَالَ: أَتَيْتُ الْمَدِينَةَ فَرَأَيْتُ رَجُلًا يَصْدُرُ النَّاسُ عَنْ رَأْيِهِ لَا يَقُولُ شَيْئًا إِلَّا صَدَرُوا عَنْهُ قُلْتُ مَنْ هَذَا قَالُوا: هَذَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُلْتُ: عَلَيْكَ السَّلَامُ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَرَّتَيْنِ قَالَ: «لَا تقل عَلَيْك السَّلَام فَإِن عَلَيْكَ السَّلَامُ تَحِيَّةُ الْمَيِّتِ قُلِ السَّلَامُ عَلَيْكَ» قلت: أَنْت رَسُول الله؟ قَالَ: «أَنا رَسُول الله الَّذِي إِذا أَصَابَكَ ضُرٌّ فَدَعَوْتَهُ كَشَفَهُ عَنْكَ وَإِنْ أَصَابَكَ عَامُ سَنَةٍ فَدَعَوْتَهُ أَنْبَتَهَا لَكَ وَإِذَا كُنْتَ بِأَرْض قفراء أَوْ فَلَاةٍ فَضَلَّتْ رَاحِلَتُكَ فَدَعَوْتَهُ رَدَّهَا عَلَيْكَ» . قُلْتُ: اعْهَدْ إِلَيَّ. قَالَ: «لَا تَسُبَّنَّ أَحَدًا» قَالَ فَمَا سَبَبْتُ بَعْدَهُ حُرًّا وَلَا عَبْدًا وَلَا بَعِيرًا وَلَا شَاةً. قَالَ: «وَلَا تَحْقِرَنَّ شَيْئًا مِنَ الْمَعْرُوفِ وَأَنْ تُكَلِّمَ أَخَاكَ وَأَنْتَ مُنْبَسِطٌ إِلَيْهِ وَجْهُكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنَ الْمَعْرُوفِ وَارْفَعْ إِزَاَرَكَ إِلَى نِصْفِ السَّاقِ فَإِنْ أَبَيْتَ فَإِلَى الْكَعْبَيْنِ وَإِيَّاكَ وَإِسْبَالَ الْإِزَارِ فَإِنَّهَا مِنَ الْمَخِيلَةِ وَإِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمَخِيلَةَ وَإِنِ امْرُؤٌ شَتَمَكَ وَعَيَّرَكَ بِمَا يَعْلَمُ فِيكَ فَلَا تعيره بِمَا تعلم فِيهِ فَإِنَّمَا وَبَالُ ذَلِكَ عَلَيْهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَرَوَى التِّرْمِذِيُّ مِنْهُ حَدِيثَ السَّلَامِ. وَفِي رِوَايَةٍ: «فَيَكُونَ لَكَ أَجْرُ ذَلِكَ وَوَبَالُهُ عَلَيْهِ»

وعن أبي جري جابر بن سليم قال: أتيت المدينة فرأيت رجلا يصدر الناس عن رأيه لا يقول شيئا إلا صدروا عنه قلت من هذا قالوا: هذا رسول الله صلى الله عليه وسلم قلت: عليك السلام يا رسول الله مرتين قال: «لا تقل عليك السلام فإن عليك السلام تحية الميت قل السلام عليك» قلت: أنت رسول الله؟ قال: «أنا رسول الله الذي إذا أصابك ضر فدعوته كشفه عنك وإن أصابك عام سنة فدعوته أنبتها لك وإذا كنت بأرض قفراء أو فلاة فضلت راحلتك فدعوته ردها عليك» . قلت: اعهد إلي. قال: «لا تسبن أحدا» قال فما سببت بعده حرا ولا عبدا ولا بعيرا ولا شاة. قال: «ولا تحقرن شيئا من المعروف وأن تكلم أخاك وأنت منبسط إليه وجهك إن ذلك من المعروف وارفع إزارك إلى نصف الساق فإن أبيت فإلى الكعبين وإياك وإسبال الإزار فإنها من المخيلة وإن الله لا يحب المخيلة وإن امرؤ شتمك وعيرك بما يعلم فيك فلا تعيره بما تعلم فيه فإنما وبال ذلك عليه» . رواه أبو داود وروى الترمذي منه حديث السلام. وفي رواية: «فيكون لك أجر ذلك ووباله عليه»

ব্যাখ্যা: খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, ধারণা করা হয় যে, মৃত ব্যক্তিকে সালাম প্রদানের সুন্নাত পদ্ধতি হচ্ছে, ‘‘আলায়কাস্ সালা-ম’’ বলা, যেমনটা সাধারণ মানুষেরা (জাহিলী যুগে) বলতো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ কথা প্রমাণিত যে, তিনি যখন কবরস্থানে প্রবেশ করতেন তখন বলতেনঃ اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْم مُؤْمِنِيْنَ। এ বাক্যে দেখা যাচ্ছে তিনি عَلَيْكُمْ -এর পূর্বে اَلسَّلَامُ শব্দ নিয়ে এসেছেন। যেভাবে জীবিতদের সালাম দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। মূলত সালামের সুন্নাতী পদ্ধতিতে জীবিত ও মৃতদের সালাম প্রদানের কোন ভিন্ন পদ্ধতি নেই।

আল্লামা ইবনুল ক্বইয়্যিম (রহঃ) তার বিখ্যাত গ্রন্থ যাদুল মা‘আদ-এ লিখেছেন, প্রথমে সালাম প্রদানের ক্ষেত্রে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শ হচ্ছে ‘‘আসসালা-মু ‘আলায়কুম ওয়া রহমাতুল্ল-হ’’ বলা। তিনি প্রথমে সালামদাতার ক্ষেত্রে ‘‘আলায়কাস সালা-ম’’ বলা অপছন্দ করতেন। অতঃপর ইবনুল ক্বইয়্যিম (রহঃ) আবূ জুরাই (রাঃ)-এর এ হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেন, কিছু লোক এমনটা ধারণা করেছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃতদের সালাম দেয়ার ক্ষেত্রেও ‘‘আসসালা-মু’’ শব্দটি প্রথমে এনে ‘‘আসসালা-মু ‘আলায়কুম’’ বলে সালাম দিতেন। তারা আরো ধারণা করেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী, ‘‘আলায়কাস্ সালা-ম’’ হচ্ছে ‘‘মৃতদের সালাম’’ এ বাক্য দ্বারা মৃতদের সালাম দেয়া শার‘ঈ বিধান। তারা এখানে বুঝতে যে ভুল করেছে তার কারণেই এ বৈপরীত্য সৃষ্টি হয়েছে। মূলত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঐ বক্তব্য তৎকালীন অবস্থা বা প্রচলনকে বুঝিয়েছে, শার‘ঈ বিধান হিসেবে বুঝায়নি।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সদাক্বার মর্যাদা

১৯১৯-[৩২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার সাহাবীগণ (অথবা তাঁর পরিবারবর্গ) একটি বকরী যাবাহ করলেন। (গোশত (গোশত/গোশত/গোসত) বণ্টনের পর) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এর আর কী বাকী আছে? ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, একটি বাহু ছাড়া আর কিছু নেই। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এর ঐ বাহুটি ছাড়া আর সবই বাকী আছে। (তিরমিযী; তিনি বলেন, এ হাদীসটি সহীহ।)[1]

وَعَن عَائِشَة إِنَّهُمْ ذَبَحُوا شَاةً فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا بَقِيَ مِنْهَا؟» قَالَتْ: مَا بَقِي مِنْهَا إِلَّا كتفها قَالَ: «بَقِي كلهَا غير كتفها» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَصَححهُ

وعن عائشة إنهم ذبحوا شاة فقال النبي صلى الله عليه وسلم: «ما بقي منها؟» قالت: ما بقي منها إلا كتفها قال: «بقي كلها غير كتفها» . رواه الترمذي وصححه

ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ বা তাঁর পরিবারবর্গ একটি ছাগল যাবাহ করার পর সেটির একটি বাহু ছাড়া বাকী সকল গোশ্‌ত (গোশত/গোস্ত/গোসত) সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করা হয়ে গেলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ছাগলটির কোন অংশ বাকী আছে? উত্তরে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, একটি বাহু বাকী আছে, যা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করা হয়নি। এ উত্তর শুনে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ছাগলটির যা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করা হয়েছে তাই মূলত আল্লাহর নিকট বাকী (জমা) আছে। আর যা তোমার নিকট জমা আছে অর্থাৎ সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করনি তা আসলে বাকী নেই। এ বক্তব্যের সমর্থনে মহান আল্লাহ তা‘আলার বাণী দেখতে পাওয়া যায় যেখানে আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ

مَا عِنْدَكُمْ يَنْفَدُ وَمَا عِنْدَ اللّهِ بَاقٍ

‘‘তোমাদের নিকট যা আছে তা নিঃশেষ হবে এবং আল্লাহর নিকট যা আছে তা স্থায়ী।’’ (সূরাহ্ আন্ নাহল ১৬ : ৯৬)

আল্ মুনযিরী বলেন, এ হাদীসের অর্থ হলো, সাহাবীগণ ছাগলটির সকল কিছুই দান করেছেন শুধু এর বাহুটি (যা জমা আছে) ছাড়া।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সদাক্বার মর্যাদা

১৯২০-[৩৩] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে মুসলিম ব্যক্তি অন্য কোন মুসলিম ব্যক্তিকে কাপড় পরাবে, সে আল্লাহ তা’আলার হিফাযাতে থাকবে যতদিন ওই কাপড়ের একটি টুকরা তাঁর পরনে থাকবে। (আহমাদ, তিরমিযী)[1]

وَعَن ابْن عَبَّاس قَالَ ك سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَا مِنْ مُسْلِمٍ كَسَا مُسْلِمًا ثَوْبًا إِلَّا كَانَ فِي حفظ من الله مادام عَلَيْهِ مِنْهُ خرقَة» . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ

وعن ابن عباس قال ك سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «ما من مسلم كسا مسلما ثوبا إلا كان في حفظ من الله مادام عليه منه خرقة» . رواه أحمد والترمذي

ব্যাখ্যা: দানকৃত কাপড়ের এক টুকরাও গায়ে থাকার অর্থ হলো কাপড়টি নষ্ট হওয়া পর্যন্ত। হাদীসটিতে বর্ণিত আল্লাহর হিফাযাত বলতে পার্থিব জগতের হিফাযাতকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। পরকালে এর অগণিত ও অপরিমেয় সাওয়াব রয়েছে। হাদীসে মুসলিম ব্যক্তিকে কাপড় পরিধান করানোর কথা বলায় বুঝা যায় কেউ যদি কোন অমুসলিম যিম্মীকে কাপড় পরিধান করায় তাহলে তার জন্য বর্ণিত অঙ্গীকার প্রযোজ্য হবে না।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সদাক্বার মর্যাদা

১৯২১-[৩৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম করে বলেন যে, তিন ব্যক্তিকে আল্লাহ ভালবাসেন- (১) যে রাতে উঠে আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, (২) যে ডান হাতে কিছু দান করে এবং গোপন রাখে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি মনে করি, তিনি বলেছেন- আপন বাম হাত থেকে (গোপন রাখে) এবং (৩) যে ব্যক্তি সৈন্যদলে থাকাবস্থায় তার সহচরগণ পরাজিত হলেও সে শত্রুর দিকে অগ্রসর হলো (এবং তাদেরকে পরাজিত করল অথবা শাহীদ হলো)। (তিরমিযী; তিনি একে গায়রে মাহফূয বা শায বলেছেন। এর একজন বর্ণনাকারী আবূ বকর ইবনু ’আইয়্যাশ বেশ ভুল করতেন। [কিন্তু অপর সানাদ অনুসারে এটা সহীহ])[1]

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ يَرْفَعُهُ قَالَ: ثَلَاثَةٌ يُحِبُّهُمُ اللَّهُ: رَجُلٌ قَامَ مِنَ اللَّيْلِ يَتْلُوا كِتَابَ اللَّهِ وَرَجُلٌ يَتَصَدَّقُ بِصَدَقَةٍ بِيَمِينِهِ يُخْفِيهَا أُرَاهُ قَالَ: مِنْ شِمَالِهِ وَرَجُلٌ كَانَ فِي سَرِيَّةٍ فَانْهَزَمَ أَصْحَابُهُ فَاسْتَقْبَلَ الْعَدُوَّ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَيْرُ مَحْفُوظٍ أَحَدُ رُوَاتِهِ أَبُو بكر بن عَيَّاش كثير الْغَلَط

وعن عبد الله بن مسعود يرفعه قال: ثلاثة يحبهم الله: رجل قام من الليل يتلوا كتاب الله ورجل يتصدق بصدقة بيمينه يخفيها أراه قال: من شماله ورجل كان في سرية فانهزم أصحابه فاستقبل العدو . رواه الترمذي وقال: هذا حديث غير محفوظ أحد رواته أبو بكر بن عياش كثير الغلط

ব্যাখ্যা: যে তিন ব্যক্তিকে আল্লাহ ভালবাসেন তারা হলেন, (এক) ঐ ব্যক্তি যিনি রাতে তাহাজ্জুদের জন্য উঠে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেন এবং সালাতে ও সালাতের বাইরে কুরআন তিলাওয়াত করেন; (দুই) আল্লাহর অধিক ভালবাসা এবং সন্তুষ্টি পাওয়ার উদ্দেশে লোক দেখানো (রিয়া) ও লোক শুনানো (সুম্‘আহ্)-এর গুনাহের ভয়ে সর্বোচ্চ গোপনীয়তার সাথে এমনভাবে দান করে যে দান ডান হাত করে কিন্তু বাম হাত জানে না। উল্লেখ্য যে, অত্র হাদীস দ্বারা ডান হাত দ্বারা দান-সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করাকে উত্তম শিষ্টাচার হিসেবে বুঝানো হয়েছে। (তিন) ঐ ব্যক্তি যে কোন ছোট সৈন্য বাহিনীর সদস্য হয়ে যুদ্ধ করছে এবং এক পর্যায়ে তার বাকী সৈন্য-সাথীরা পরাজয় বরণ করলেও তিনি আল্লাহর বাণীকে বিজয়ী করতে একাই যুদ্ধ চালিয়ে সামনের শত্রুদের দিকে অগ্রসর হন।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সদাক্বার মর্যাদা

১৯২২-[৩৫] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন প্রকার লোককে আল্লাহ ভালবাসেন। তিন প্রকার লোককে অপছন্দ করেন। আল্লাহ ভালবাসেন, ওই ব্যক্তিকে যে এক দল লোকের কাছে এসে আল্লাহর দোহাই দিয়ে চাইল, কোন আত্মীয়তা বা নৈকট্যের দোহাই দিলো না। এ দলটি তাকে কিছু না দিয়ে বিমুখ করল। এরপর এদের মধ্যে এক ব্যক্তি সংগোপনে লোকটিকে কিছু দিলো। আল্লাহ যাকে দান করেছে সে ছাড়া এ দানের কথা আর কেউ জান না। দ্বিতীয় ওই ব্যক্তি যে তার দলের সাথে গোটা রাত অতিবাহিত করল। যখন তাদের সবার কাছে ঘুম প্রিয়তম হলো এবং দলের সকলে ঘুমিয়ে পড়ল। এ সময় ওই ব্যক্তি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার কাছে কান্নাকাটি করল ও কুরআন তিলাওয়াত শুরু করল। মোকাবেলা হলে তার বাহিনী যখন পরাজিত হল তখন সে ব্যক্তি শত্রুর মোকাবেলায় সর্বশক্তি নিয়োগ করল, যতক্ষণ না শাহীদ অথবা বিজয়ী হলো। যে তিন ব্যক্তিকে আল্লাহ অপছন্দ করেন, (তারা হলো) বৃদ্ধ যিনাকারী, অহংকারী ফকীর এবং অত্যাচারী ধনী। (তিরমিযী, নাসায়ী)[1]

وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «ثَلَاثَةٌ يُحِبُّهُمُ اللَّهُ وَثَلَاثَةٌ يُبْغِضُهُمُ اللَّهُ فَأَمَّا الَّذِينَ يُحِبُّهُمُ اللَّهُ فَرَجُلٌ أَتَى قَوْمًا فَسَأَلَهُمْ بِاللَّه وَلم يسألهم بِقرَابَة بَيْنَهُ وَبَيْنَهُمْ فَمَنَعُوهُ فَتَخَلَّفَ رَجُلٌ بِأَعْيَانِهِمْ فَأَعْطَاهُ سِرًّا لَا يَعْلَمُ بِعَطِيَّتِهِ إِلَّا اللَّهُ وَالَّذِي أَعْطَاهُ وَقَوْمٌ سَارُوا لَيْلَتَهُمْ حَتَّى إِذَا كَانَ النَّوْمُ أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِمَّا يُعْدَلُ بِهِ فَوَضَعُوا رُءُوسَهُمْ فَقَامَ يَتَمَلَّقُنِي وَيَتْلُو آيَاتِي وَرَجُلٌ كَانَ فِي سَرِيَّة فلقي الْعَدو فهزموا وَأَقْبل بِصَدْرِهِ حَتَّى يُقْتَلَ أَوْ يُفْتَحَ لَهُ وَالثَّلَاثَةُ الَّذِينَ يُبْغِضُهُمُ اللَّهُ الشَّيْخُ الزَّانِي وَالْفَقِيرُ الْمُخْتَالُ والغني الظلوم» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ

وعن أبي ذر عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «ثلاثة يحبهم الله وثلاثة يبغضهم الله فأما الذين يحبهم الله فرجل أتى قوما فسألهم بالله ولم يسألهم بقرابة بينه وبينهم فمنعوه فتخلف رجل بأعيانهم فأعطاه سرا لا يعلم بعطيته إلا الله والذي أعطاه وقوم ساروا ليلتهم حتى إذا كان النوم أحب إليهم مما يعدل به فوضعوا رءوسهم فقام يتملقني ويتلو آياتي ورجل كان في سرية فلقي العدو فهزموا وأقبل بصدره حتى يقتل أو يفتح له والثلاثة الذين يبغضهم الله الشيخ الزاني والفقير المختال والغني الظلوم» . رواه الترمذي والنسائي

ব্যাখ্যা: যে তিন ব্যক্তিকে আল্লাহ ভালবাসেন তাদের প্রথমজনের বর্ণনা হাদীসে যেভাবে এসেছে তাতে মনে হতে পারে যে, যে ব্যক্তি চেয়েছে অর্থাৎ ভিক্ষুক-ই ভালবাসা প্রাপ্ত ব্যক্তি। আসলে তা নয়। উদ্দেশ্য হচ্ছে- ঐ ভিক্ষুককে দানকারী ব্যক্তি। তবে ঐ ভিক্ষুক যদি কোন আত্মীয়তার সম্পর্ককে ওয়াসীলা না করে আল্লাহর নামকে ওয়াসীলা করে ভিক্ষা চায় (যেমন- আমাদের সমাজে ভিক্ষুকরা আল্লাহর ওয়াস্তে চায়) তাহলেই দানকারী এ বিশেষ মর্যাদা পাবে। মাফাতীহ গ্রন্থকার বলেন, কেউ যখন আল্লাহর নামে কারো নিকট কিছু চায় তাহলে অন্তত আল্লাহর নামের সম্মানে তাকে দান করা আবশ্যক। যদি কেউ তাকে না দেয় তাহলে সবাই বড় গুনাহের ভাগিদার হবে। তাদের মধ্য থেকে কেউ একজন যদি ঐ ভিক্ষুককে গোপনে দান করে তাহলে দানকারী ব্যক্তি দু’টি মর্যাদার অধিকারী হবেন। (এক) সে আল্লাহ তা‘আলার নামকে সম্মান করল। (দুই) সে গোপনে দান করল। আর গোপনে দান করার পৃথক মর্যাদা রয়েছে।

‘‘আমার আয়াত তিলাওয়াত করে’’-এর অর্থ হলো আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং এর অর্থ সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করে।

‘‘বৃদ্ধ যিনাকারী’’ বলতে যুবক ব্যক্তির সাথে বৃদ্ধা মহিলার যিনা উদ্দেশ্য হতে পারে। আবার অবিবাহিত মেয়ের সাথে বিবাহিত ব্যক্তির ব্যভিচারও উদ্দেশ্য হতে পারে। যেমনটা তিলাওয়াত রহিত করা হয়েছে কিন্তু হুকুম (বিধান) জারি আছে এমন আয়াত ‘‘যখন বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা বা বিবাহিত পুরুষ-নারী যিনা করবে তাদের উভয়কে পাথর মেরে হত্যা করবে’’-এ বর্ণিত হয়েছে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সদাক্বার মর্যাদা

১৯২৩-[৩৬] আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা পৃথিবী সৃষ্টি করার পর তা দুলতে লাগল। তখন পাহাড়গুলো সৃষ্টি করে সেগুলো পৃথিবীর উপর দাঁড় করিয়ে দিলেন। পৃথিবী স্থির হয়ে গেল। পাহাড়ের শক্তি দেখে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) বিস্মিত হলেন। তারা জিজ্ঞেস করলেন, হে রাব্বুল আলামীন! আপনার সৃষ্টি জগতে পাহাড়ের চেয়ে শক্তিধর জিনিস আর কী আছে? আল্লাহ উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, আছে। তা হলো লোহা। মালাকগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে রব! লোহার চেয়ে শক্তিধর কী কিছু আছে? আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ, আগুন। মালাকগণ বললেন, পরওয়ারদিগার। আপনার সৃষ্টির মধ্যে আগুনের চেয়েও বেশী শক্তিধর কী? আল্লাহ তা’আলা বললেন, পানি। তারপর মালায়িকাহ্ জিজ্ঞেস করলেন, হে পরওয়ারদিগার! সৃষ্টির মধ্যে বাতাসের চেয়েও শক্তিধর কিছু আছে কী? আল্লাহ তা’আলা বললেন, হ্যাঁ, আছে। (আর তা হলো) আদম সন্তানের দান খায়রাত। ডান হাতে দান (এমনভাবে যে) বাম হাত হতেও গোপন করে থাকে। (তিরমিযী; তিনি বলেন, এ হাদীসটি গরীব।)[1]

মু’আয-এর হাদীস الصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الْخَطِيئَةَ (অর্থাৎ দান-সদাক্বাহ্ (সাদাকা) পাপ মিটিয়ে দেয়) ’কিতাবুল ঈমান’-এ উল্লেখ করা হয়েছে।

وَعَن أنس بن مَالك عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ الْأَرْضَ جَعَلَتْ تَمِيدُ فَخَلَقَ الْجِبَالَ فَقَالَ بِهَا عَلَيْهَا فَاسْتَقَرَّتْ فَعَجِبَتِ الْمَلَائِكَةُ مِنْ شِدَّةِ الْجِبَالِ فَقَالُوا يَا رَبِّ هَلْ مِنْ خَلْقِكَ شَيْءٌ أَشَدُّ مِنِ الْجِبَالِ قَالَ نعم الْحَدِيد قَالُوا يَا رَبِّ هَلْ مِنْ خَلْقِكَ شَيْءٌ أَشَدُّ مِنَ الْحَدِيدِ قَالَ نَعَمِ النَّارُ فَقَالُوا يَا رب هَل من خلقك شَيْء أَشد من النَّار قَالَ نعم المَاء قَالُوا يَا رب فَهَل مِنْ خَلْقِكَ شَيْءٌ أَشَدُّ مِنَ الْمَاءِ قَالَ نَعَمِ الرِّيحُ فَقَالُوا يَا رَبِّ هَلْ مِنْ خَلْقِكَ شَيْءٌ أَشَدُّ مِنَ الرِّيحِ قَالَ نَعَمِ ابْن آدم تصدق بِصَدقَة بِيَمِينِهِ يخفيها من شِمَالِهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
وَذُكِرَ حَدِيثُ مُعَاذٍ: «الصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الْخَطِيئَةَ» . فِي كتاب الْإِيمَان

وعن أنس بن مالك عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «لما خلق الله الأرض جعلت تميد فخلق الجبال فقال بها عليها فاستقرت فعجبت الملائكة من شدة الجبال فقالوا يا رب هل من خلقك شيء أشد من الجبال قال نعم الحديد قالوا يا رب هل من خلقك شيء أشد من الحديد قال نعم النار فقالوا يا رب هل من خلقك شيء أشد من النار قال نعم الماء قالوا يا رب فهل من خلقك شيء أشد من الماء قال نعم الريح فقالوا يا رب هل من خلقك شيء أشد من الريح قال نعم ابن آدم تصدق بصدقة بيمينه يخفيها من شماله» . رواه الترمذي وقال: هذا حديث غريب وذكر حديث معاذ: «الصدقة تطفئ الخطيئة» . في كتاب الإيمان

ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা‘আলা যখন সর্বপ্রথম কা‘বার জমিন সৃষ্টি করলেন এবং সেটাকে উত্তপ্ত ও এর চতুস্পার্শে বিস্তৃত করলেন তখন সেটি পানির উপর একটি থালা বা ফলকের মতো হলো। তারপর সে জমিনটি খুব নাড়াচাড়া ও আন্দোলিত হওয়া শুরু করল। এমনকি মালায়িকাহ্ বলে উঠল, এ জমিন দ্বারা মানবজাতি উপকৃত হতে পারবে না। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা পাহাড় সৃষ্টি করে তা জমিনে স্থাপিত করলেন, যাতে করে জমিন তার নিজ স্থানে স্থির হয়, তার স্থান থেকে নাড়াচাড়া না করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা আল কুরআনে বলেন,

وَأَلْقى فِي الْأَرْضِ رَوَاسِيَ أَنْ تَمِيْدَ بِكُمْ

অর্থাৎ ‘‘এবং তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয়।’’ (সূরাহ্ আন্ নাহল ১৬ : ১৫)

মালায়িকাহ্ জিজ্ঞেস করলেন, হে রব! তোমার সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে পাহাড়ের থেকে অধিক শক্তিশালী কিছু আছে কি? আল্লাহ উত্তরে বললেন, হ্যাঁ, আছে, লোহা। কারণ লোহা দ্বারা পাথর ভাঙ্গা যায় এবং পাহাড়কে মূলোৎপাটিত বা অপসারণ করা যায়। মালায়িকাহ্ এরপর একই ধরনের প্রশ্ন করলে আল্লাহ উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, লোহার থেকে অধিক শক্তিশালী হচ্ছে আগুন। কারণ আগুন লোহাকে গলিয়ে নরম করে ফেলে। আগুন থেকে অধিক শক্তিশালী হলো পানি। কারণ পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। পানি থেকে অধিক শক্তিশালী হলো বাতাস। কারণ বাতাস পানিকে বিভক্ত করে এবং শুকিয়ে ফেলে। ত্বীবী বলেন, বাতাস পানি ভর্তি মেঘমালাকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যায়।

হাদীসে উল্লিখিত বিভিন্ন পদার্থ ও এমনকি বাতাস হতে যে জিনিসটি অধিক শক্তিশালী তা হলো আদম সন্তানের ঐ দান যা সে ডান হাতে দান করে কিন্তু বাম হাত জানে না। এর কারণ হলো, দানের মধ্যে নিজ ইচ্ছার বিরোধিতা করতে হয়, (অর্থাৎ সাধারণত কোন ব্যক্তি চায় না তারই কষ্টার্জিত সম্পদ নগদ লাভ ছাড়া হাত ছাড়া করতে), নিজ (সম্পদ জমা করার) স্বভাবকে এবং শায়ত্বনকে দমন/পরাভূত করতে হয়। (কারণ মানুষের স্বভাব হলো সম্পদ জমানো এবং গণনা করা, আর শায়ত্বন (শয়তান) তো চায়-ই না যে, মানুষ আল্লাহর রাস্তায় কিছু দান করুক এবং তাঁর প্রিয় বান্দা হয়ে যাক।) উল্লেখ্য যে, এগুলো করা ব্যতীত দান করা সম্ভব হয়ে উঠে না।

দান করা অধিক শক্তিশালী হওয়ার কারণ এও হতে পারে যে, ব্যক্তির দান আল্লাহর রাগকে প্রশমিত করে। আর আল্লাহর রাগের মতো কঠিন-কঠোর কিছুই নেই। যখন আল্লাহ বাতাসের মাধ্যমে কারো উপর শাস্তি পাঠাতে চান এবং তখন কেউ যদি কাউকে কিছু দান করে তাহলে ঐ দানের কারণে ঐ শাস্তি প্রতিহত হবে। তাহলে প্রমাণিত হলো, দান বাতাস থেকেও শক্তিশালী।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১৭ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৭ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে