পরিচ্ছেদঃ ১৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয

৯৭৮-[১] মু’আবিয়াহ্ ইবনু হাকাম (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সালাত আদায় করি। যখন মুসল্লীদের মাঝে থেকে একজন হাঁচি দিলো তখন আমি ’ইয়ারহামুকাল্ল-হ’ বললাম। ফলে লোকজন আমার প্রতি দৃষ্টি ক্ষেপন করল। আমি বললাম, তোমাদের মা সন্তানহারা শোকাহত হোক। তোমাদের কি হলো যে, তোমরা আমার দিকে এমন করে তাকাচ্ছ? মুসল্লীরা আমাকে নীরব করানোর জন্য নিজ নিজ রানের উপর হাত দিয়ে মারতে লাগল। আমি যখন লক্ষ্য করলাম তারা আমাকে চুপ থাকতে বলছে, তখন আমি নীরব হয়ে গেলাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষ করলেন। আমার মাতা-পিতা তাঁর জন্যে উৎসর্গ হোক। তার চেয়ে এত চমৎকার শিক্ষাদানে কোন শিক্ষক তার পরবর্তীকালে বা তার পূর্ববর্তীকালে আমি দেখিনি। তিনি আমাকে না ধমকি দিলেন, না মারলেন, না বকলেন। তিনি শুধু এতটুকু বললেন, এ সালাতে মানবীয় কথাবার্তা বলা উপযুক্ত নয়। সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হলো ’তাসবীহ’ পড়া, ’তাকবীর’ বলা ও কুরআন পড়ার নাম। অথবা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি বলেছেন।

আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি জাহিলী যুগ ত্যাগকারী এক নতুন বান্দা। আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামে নিয়ে আসছেন। আমাদের মধ্যে অনেকে গণকের কাছে আসে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাদের কাছে আসবে না। আমি আবেদন করলাম, আমাদের অনেকে শুভ-অশুভ লক্ষণ মানে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা এমন একটা বিষয় যা তারা নিজেদের মনের মধ্যে পেয়ে থাকে। তা যেন তাদেরকে কোন কাজ থেকে বিরত না রাখে। মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)বলেন, আমি আবার বললাম, আমাদের মধ্যে এমন কতগুলো লোক আছে যারা রেখা টানে (ভবিষ্যদ্বাণী করে)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নবীদের মধ্যে একজন নবী রেখা টানতেন। অতএব কারো রেখা টানা এ নবীর রেখা টানার সাথে মিল থাকলে ঠিক আছে। (মুসলিম; মিশকাত সংকলকের উক্তি- তিনি বলেন, আমি ’’ওয়ালাকিন্নী সাকাততু’’-কে সহীহ মুসলিম ও হুমায়দীর পুস্তকে এভাবে পেয়েছি। তবে জামিউল উসূল-এর লেখক লাকিন্নী শব্দের উপর كذا শব্দের দ্বারা বিশুদ্ধতার প্রতি ইশারা করছে।)[1]

بَابُ مَا لَا يَجُوْزُ مِنَ الْعَمَلِ فِي الصَّلَاةِ وَمَا يُبَاحُ مِنْهُ

عَن مُعَاوِيَة ابْن الْحَكَمِ قَالَ: بَيْنَا أَنَا أُصَلِّي مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ عَطَسَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ فَقُلْتُ: يَرْحَمُكَ اللَّهُ. فَرَمَانِي الْقَوْم بِأَبْصَارِهِمْ. فَقلت: وَا ثكل أُمِّيَاهُ مَا شَأْنُكُمْ تَنْظُرُونَ إِلَيَّ فَجَعَلُوا يَضْرِبُونَ بِأَيْدِيهِمْ عَلَى أَفْخَاذِهِمْ فَلَمَّا رَأَيْتُهُمْ يُصَمِّتُونَنِي لَكِنِّي سَكَتُّ فَلَمَّا صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبِأَبِي هُوَ وَأُمِّي مَا رَأَيْتُ مُعَلِّمًا قَبْلَهُ وَلَا بَعْدَهُ أَحْسَنَ تَعْلِيمًا مِنْهُ فَوَاللَّهِ مَا كَهَرَنِي وَلَا ضَرَبَنِي وَلَا شَتَمَنِي قَالَ: «إِنَّ هَذِهِ الصَّلَاةَ لَا يَصْلُحُ فِيهَا شَيْءٌ من كَلَام النَّاس إِنَّمَا هُوَ التَّسْبِيحُ وَالتَّكْبِيرُ وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ» أَوْ كَمَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. قلت: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي حَدِيثُ عَهْدٍ بِجَاهِلِيَّةٍ وَقد جَاءَ اللَّهُ بِالْإِسْلَامِ وَإِنَّ مِنَّا رِجَالًا يَأْتُونَ الْكُهَّانَ. قَالَ: «فَلَا تَأْتِهِمْ» . قُلْتُ: وَمِنَّا رِجَالٌ يَتَطَيَّرُونَ. قَالَ: «ذَاكَ شَيْءٌ يَجِدُونَهُ فِي صُدُورِهِمْ فَلَا يَصُدَّنَّهُمْ» . قَالَ قُلْتُ وَمِنَّا رِجَالٌ يَخُطُّونَ. قَالَ: «كَانَ نَبِيٌّ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ يَخُطُّ فَمَنْ وَافَقَ خَطَّهُ فَذَاكَ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ قَوْلُهُ: لَكِنِّي سَكَتُّ هَكَذَا وُجِدَتْ فِي صَحِيحِ مُسْلِمٍ وَكِتَابِ الْحُمَيْدِيِّ وَصُحِّحَ فِي «جَامِعِ الْأُصُولِ» بِلَفْظَةِ كَذَا فَوْقَ: لكني

عن معاوية ابن الحكم قال: بينا أنا أصلي مع رسول الله صلى الله عليه وسلم إذ عطس رجل من القوم فقلت: يرحمك الله. فرماني القوم بأبصارهم. فقلت: وا ثكل أمياه ما شأنكم تنظرون إلي فجعلوا يضربون بأيديهم على أفخاذهم فلما رأيتهم يصمتونني لكني سكت فلما صلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فبأبي هو وأمي ما رأيت معلما قبله ولا بعده أحسن تعليما منه فوالله ما كهرني ولا ضربني ولا شتمني قال: «إن هذه الصلاة لا يصلح فيها شيء من كلام الناس إنما هو التسبيح والتكبير وقراءة القرآن» أو كما قال رسول الله صلى الله عليه وسلم. قلت: يا رسول الله إني حديث عهد بجاهلية وقد جاء الله بالإسلام وإن منا رجالا يأتون الكهان. قال: «فلا تأتهم» . قلت: ومنا رجال يتطيرون. قال: «ذاك شيء يجدونه في صدورهم فلا يصدنهم» . قال قلت ومنا رجال يخطون. قال: «كان نبي من الأنبياء يخط فمن وافق خطه فذاك» . رواه مسلم قوله: لكني سكت هكذا وجدت في صحيح مسلم وكتاب الحميدي وصحح في «جامع الأصول» بلفظة كذا فوق: لكني

ব্যাখ্যা: (إِنَّ هذِهِ الصَّلَاةَ) এ বাক্যে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, কোন সালাতেই মানুষের সাথে কথা বলা বৈধ নয়। তা ফরয বা নফল যাই হোক।

ইমাম শাওকানী বলেন, (كَلَامُ النَّاسِ) দ্বারা উদ্দেশ্য অন্যের সাথে কথা বলা। ক্বাযী বলেনঃ কথাকে মানুষের দিকে সম্বন্ধ করার উদ্দেশ্য হল সালাতে দু‘আ ও তাসবীহ পাঠ করা বৈধ। অত্র হাদীসকে সালাতে যে কোন ধরনের কথা বলা নিষেধের প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। তা প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয় যাই হোক। এমনকি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সংশোধনের উদ্দেশে হলেও তা নিষেধ। এ অভিমত পোষণ করেন হানাফীগণ।

ইমাম মালিক-এর মতে সালাতের সংশোধন ব্যতীত স্বেচ্ছায় কথা বলা হারাম এবং এ ধরনের কথা সালাত বিনষ্ট করে। পক্ষান্তরে সালাতের সংশোধনের উদ্দেশে স্বেচছায় কথা বলা বৈধ। আর ভুল ও অজ্ঞতাবশতঃ কথা বললে সালাত বিনষ্ট হবে না। এর প্রমাণ যুল্ ইয়াদায়নের প্রসিদ্ধ হাদীস।

সালাতে হাঁচির জওয়াব দেয়া নিষেধ। আর তা এমন কথা যা সালাত বিনষ্ট করে।

হাঁচিদাতার জন্য স্বয়ং ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ বলা বৈধ। কেননা তা মানুষের সাথে কথা বলার অন্তর্ভুক্ত নয়।

যারা সালাতের মধ্যে দু‘আ মাসূরাহ্ ব্যতীত দু‘আ করা অবৈধ বলেন তারা এ হাদীসটিকে দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন। এর জওয়াব এই যে, বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা নির্দিষ্ট ও অনির্দিষ্ট দু‘আ করার অনুমতি পাওয়া যায়। আর দু‘আ মানুষের সাথে কথা বলা নয়। সালাতে কথা বলা হারাম হওয়ার বিষয় মক্কার ঘটনা। আর সালাতে দু‘আ করার অনুমতির ঘটনা মদীনার। অতএব সালাতে যে কোন ধরনের বৈধ বিষয়ে দু‘আ করা জায়িয।

(فَلَا تَأْتِهِمْ) তুমি তাদের কাছে আসবে না। ‘আলিমগণ বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (كُهَّانَ) গণকদের কাছে যেতে নিষেধ করেছেন তার কারণ এই যে, তারা অদৃশ্য বিষয়ে কথা বলে এবং এর মধ্যে কিছু সঠিক বলে প্রমাণিত হয় ফলে এর দ্বারা মানুষের ফিতনার মধ্যে পতিত হওয়ার আশংকা রয়েছে এজন্য যে, শারী‘আতের অনেক বিষয় সম্পর্কে মানুষদেরকে সন্দেহের মধ্যে ফেলে দেয়। আর অনেক সহীহ হাদীস দ্বারা গণকদের নিকট যাওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রমাণিত এবং তাদের কথা বিশ্বাস করাও নিষেধ।

(يَتَطَيَّرُوْنَ) তারা শুভাশুভ গ্রহণ করে। জাহিলী যুগে লোকেরা বিভিন্ন পশু পাখী দ্বারা শুভাশুভ গ্রহণ করত। পশু-পাখী ডানদিকে গেলে তা শুভ মনে করত। আর বামদিকে গেলে অশুভ মনে করত। এটা তাদের উদ্দিষ্ট কাজ সম্পাদনে বাধা প্রদান করত। ফলে শারী‘আত এ ধরনের কার্যকলাপ অসার বলে সাব্যস্ত করেছে এবং এ ধরনের কাজ করতে নিষেধ করেছে।

(كَانَ نَبِيٌّ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ يَخُطُّ) নাবীদের মধ্যে কোন এক নাবী রেখা টানতেন সে নাবী কে ছিলেন? বলা হয়ে থাকে যে, তিনি ইদরীস (আঃ) অথবা দানিয়াল (আঃ)। যার রেখা টানা সেই নাবীর রেখা টানার সাথে মিলে যাবে তা বৈধ। কিন্তু তার রেখার পদ্ধতি কি ছিল তা জানার কোন সুস্পষ্ট পন্থা জানা নেই। তাই রেখা টানা বৈধ নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ১৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয

৯৭৯-[২] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাতরত অবস্থায় সালাম দিতাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের সালামের জবাব দিতেন। আমরা যখন নাজাশী বাদশাহর নিকট থেকে ফিরে এসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম দিলাম, তখন তিনি আমাদের সালামের জবাব দেননি। আমরা আরজ করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা আপনাকে সালাতের মধ্যে সালাম দিতাম, আপনি সালামের জবাব দিতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সালাতের মধ্যে অবশ্যই ব্যস্ততা আছে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ مَا لَا يَجُوْزُ مِنَ الْعَمَلِ فِي الصَّلَاةِ وَمَا يُبَاحُ مِنْهُ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: كُنَّا نُسَلِّمُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ فِي الصَّلَاةِ فَيَرُدُّ عَلَيْنَا فَلَمَّا رَجَعْنَا مِنْ عِنْدِ النَّجَاشِيِّ سَلَّمْنَا عَلَيْهِ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْنَا فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ كُنَّا نُسَلِّمُ عَلَيْكَ فِي الصَّلَاةِ فَتَرُدُّ عَلَيْنَا فَقَالَ: إِنَّ فِي الصَّلَاةِ لَشُغْلًا

وعن عبد الله بن مسعود قال: كنا نسلم على النبي صلى الله عليه وسلم وهو في الصلاة فيرد علينا فلما رجعنا من عند النجاشي سلمنا عليه فلم يرد علينا فقلنا: يا رسول الله كنا نسلم عليك في الصلاة فترد علينا فقال: إن في الصلاة لشغلا

ব্যাখ্যা: (فَلَمَّا رَجَعْنَا مِنْ عِنْدِ النَّجَاشِيِّ) যখন আমরা নাজাশীর নিকট থেকে ফিরে এলাম। নাজাশী হাবশার বাদশাহের উপাধি। হাদীসে বর্ণিত নাজাশীর নাম ছিল ‘‘আসহামা’’ তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় ইসলাম গ্রহণ করেন এবং নবম হিজরী সালে ইন্তিকাল করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের নিয়ে তার গায়িবী জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় অবস্থানকালে তাঁর নির্দেশে একদল সহাবা (সাহাবা) তাদের দীন রক্ষার্থে হাবশায় হিজরত করেন। অতঃপর তাদের নিকট সংবাদ পৌঁছে যে, মক্কার মুশরিকগণ ইসলাম গ্রহণ করেছেন ফলে তারা স্বদেশে ফিরে আসে। এখানে এসে তারা দেখতে পায় যে, প্রকৃত অবস্থা তার বিপরীত। বরং তাদের উপর মুশরিকদের নির্যাতনের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পায়। এতে তারা পুনরায় হাবশাতে হিজরত করেন। এবার তাদের সংখ্যা পূর্বের চাইতে আরো অনেক বেশী ছিল। উল্লেখ্য যে ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) উভয় দলের সাথে হিজরতের সহযাত্রী ছিলেন।

প্রথমবার তিনি মক্কাতে ফিরে আসেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হিজরতের পূর্বে। আর দ্বিতীয়বার তিনি ফিরে মদীনাতে আসেন যা বাদ্‌র (বদর) যুদ্ধের প্রাক্কালে ছিল। হাদীসে বর্ণিত ফিরে আসা দ্বিতীয়বার ফিরে আসাই উদ্দেশ্য। এতে প্রমাণিত হয় যে, সালাতে কথা বলার নিষেধাজ্ঞা মক্কাতে ছিল না। বরং এ নিষেধাজ্ঞা ছিল মদীনাতে যেমনটি যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ)-এর হাদীস থেকে জানা যায় তিনি বলেনঃ আমরা সালাতে কথা বলতাম। কোন ব্যক্তি সালাতরত অবস্থায় তার পাশের সঙ্গীর সাথে কথা বলত। অতঃপর এ আয়াত নাযিল হল, وَقُوْمُوْا لِلّهِ قَانِتِيْنَ ‘‘তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনয়ের সাথে দাঁড়াও’’- (সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৩৮)। তখন আমাদেরকে নীরব থাকতে আদেশ দেয়া হল এবং কথা বলতে নিষেধ করা হল। অত্র আয়াতটি সর্বসম্মতিক্রমে মাদানী আয়াত। এতে বুঝা গেল যে, সালাতরত অবস্থায় কথা বলার নিষেধাজ্ঞা মদীনাতে জারী হয়।

‘‘আমরা তাকে সালাম দিলে তিনি আমাদের প্রতি উত্তর করলেন না’’ অর্থাৎ কথার মাধ্যমে তিনি আমাদের সালামের জওয়াব দিলেন না। ইবনু আবী শায়বাতে ইবনু সীরীন হতে মুরসাল সানাদে বর্ণিত আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশারাতে ইবনু মাস্‘ঊদ-এর সালামের জওয়াব দিয়েছিলেন।

‘‘সালাতে ব্যাস্ততা আছে’’ ইমাম নাবাবী বলেনঃ মুসল্লীর কাজ হল তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) নিয়ে ব্যাস্ত থাকা। তিনি কি বলেন তা চিন্তা করা। অতএব সালাতের কাজ বাদ দিয়ে সালামের জওয়াব দেয়া বা অন্য কোন কাজে লিপ্ত হবে না।

এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, সালাতরত ব্যক্তিকে সালাম দেয়া হলে তিনি সালাত শেষে কথার মাধ্যমে সালামের জওয়াব দিবেন। অথবা সালাতরত অবস্থায় ইশারায় সালামের জওয়াব দিবেন। যদি কথার মাধ্যমে সালামের জওয়াব দেন তাহলে সালাত বিনষ্ট হয়ে যাবে। ইমাম আবূ হানীফার মতে সালাতরত অবস্থায় সালামের কোন জওয়াব দিবে না। না কথার মাধ্যমে না ইশারায়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ১৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয

৯৮০-[৩] মু’আয়ক্বীব (রাঃ)থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এক লোক সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো যে ব্যক্তি সালাতে সাজদার স্থানের মাটি সমান করে। তিনি বললেন, যদি তা করতেই চাও তবে শুধু একবার তা করবে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ مَا لَا يَجُوْزُ مِنَ الْعَمَلِ فِي الصَّلَاةِ وَمَا يُبَاحُ مِنْهُ

وَعَنْ مُعَيْقِيبٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الرَّجُلِ يُسَوِّي التُّرَابَ حَيْثُ يَسْجُدُ؟ قَالَ: «إِنْ كُنْتَ فَاعِلًا فَوَاحِدَةً»

وعن معيقيب عن النبي صلى الله عليه وسلم في الرجل يسوي التراب حيث يسجد؟ قال: «إن كنت فاعلا فواحدة»

ব্যাখ্যা: ‘‘যদি তা করতেই চাও তবে শুধু একবার করবে’’- অত্র হাদীসে সালাতরত অবস্থায় এমন কাজ করতে বারণ করা হয়েছে যা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বিনষ্টের কারণ হয় অথবা সালাতের একাগ্রতার মধ্যে বিঘ্ন ঘটায়। তা সত্ত্বেও এ রকম কাজ মাত্র একবার করার অনুমতি দেয়া হয়েছে যাতে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতে তার কষ্ট না হয়।

ইমাম নাবাবী বর্ণনা করেন, এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, সালাতরত অবস্থায় পাথর স্পর্শ করা বা মাটি সমান করা মাকরূহ। তবে প্রয়োজনবশতঃ মাত্র একবার এরূপ করা বৈধ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ১৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয

৯৮১-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে কোমর বা কাঁধে হাত রেখে ক্বিয়াম (কিয়াম) করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ مَا لَا يَجُوْزُ مِنَ الْعَمَلِ فِي الصَّلَاةِ وَمَا يُبَاحُ مِنْهُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَن الخصر فِي الصَّلَاة

وعن أبي هريرة قال: نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الخصر في الصلاة

ব্যাখ্যা: الخصر এর অথ الاختصار অর্থাৎ কোমরে হাত স্থাপন করা। যদিও এ শব্দের দ্বারা কি উদ্দেশ্য সে বিষয়ে ‘আলিমগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে, তথাপি ইমাম নাবাবী বলেনঃ উপরে বর্ণিত অর্থটিই সঠিক। আল্লামা ইরাকীও তাই বলেছেন।

সালাতরত অবস্থায় কোমরে হাত স্থাপন করা হারাম। আহলে যাহিরদের অভিমত এটাই। ইবনু ‘উমার (রাঃ), ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ), ‘আয়িশাহ্ (রাঃ), ইমাম মালিক, ইমাম শাফি‘ঈ, ইমাম আবূ হানীফাহ্, ইমাম আওযা‘ঈ ও অন্যান্যদের মতে সালাতরত অবস্থায় কোমরে হাত স্থাপন করা মাকরূহ। তবে আহলে যাহিরগণ যা বলেছেন তাই সঠিক। কেননা এমন কোন দলীল পাওয়া যায় না যা দ্বারা হাদীসের প্রকাশ্য অর্থকে বাধাগ্রস্ত করে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ১৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয

৯৮২-[৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাতে এদিক-সেদিক দৃষ্টি নিক্ষেপ করার ব্যাপারে প্রশ্ন করেছি। তিনি বলেছেন, এটা ছোঁ মারা। শায়ত্বন (শয়তান) বান্দাকে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হতে ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ مَا لَا يَجُوْزُ مِنَ الْعَمَلِ فِي الصَّلَاةِ وَمَا يُبَاحُ مِنْهُ

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: سَأَلَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الِالْتِفَاتِ فِي الصَّلَاةِ فَقَالَ: «هُوَ اختلاس يختلسه الشَّيْطَان من صَلَاة العَبْد»

وعن عائشة رضي الله عنها قالت: سألت رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الالتفات في الصلاة فقال: «هو اختلاس يختلسه الشيطان من صلاة العبد»

ব্যাখ্যা: সালাতে الِالْتِفَاتِ অর্থাৎ দৃষ্টি ফেরানো তিন প্রকার যথাঃ

১. কোন প্রয়োজন ব্যতিরেকে বক্ষ পরিবর্তন না করে শুধুমাত্র চেহারা ডান বা বাম দিকে ঘুরানো জমহূর ‘আলিমদের মতে এমন করা মাকরূহ। আহলে যাহিরদের মতে হারাম।

২. শুধুমাত্র চোখ ডান বা বাম দিকে ফেরানো। এতে কোন ক্ষতি নেই যদিও তা উত্তমের বিপরীত।

৩. ক্বিবলার দিক থেকে বক্ষকে অন্যদিকে ফেরানো। সর্বসম্মতক্রমে এ কাজ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বিনষ্টকারী।

অত্র হাদীস থেকে প্রথম প্রকার দৃষ্টি ফেরানো উদ্দেশ্য।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ১৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয

৯৮৩-[৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ লোকেরা যেন সালাতে দু’আ করার সময় নযরকে আসমানের দিকে ক্ষেপন না করে। অন্যথায় তাদের দৃষ্টিকে ছোঁ মেরে নেয়া হবে। (মুসলিম)[1]

بَابُ مَا لَا يَجُوْزُ مِنَ الْعَمَلِ فِي الصَّلَاةِ وَمَا يُبَاحُ مِنْهُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ عَنْ رَفْعِهِمْ أَبْصَارَهُمْ عِنْدَ الدُّعَاءِ فِي الصَّلَاةِ إِلَى السَّمَاءِ أَوْ لَتُخْطَفَنَّ أَبْصَارهم» . رَوَاهُ مُسلم

وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لينتهين أقوام عن رفعهم أبصارهم عند الدعاء في الصلاة إلى السماء أو لتخطفن أبصارهم» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: সালাতরত অবস্থায় আকাশের দিকে তাকানো নিষেধ হওয়ার কারণ এই যে, এতে মুসল্লী সালাতের অবস্থা থেকে বেরিয়ে যায় এবং ক্বিবলামুখী থাকার যে নিয়ম তা থেকেও সে বিমুখ হয়।

হাদীসের শিক্ষাঃ

সালাতরত অবস্থায় আকাশের দিকে তাকানো হারাম। শাফি‘ঈদের নিকট তা মাকরূহ।

ইবনু হাযম বলেনঃ এতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বিনষ্ট হয়। সালাত ব্যতীত সাধারণ দু‘আর সময় আকাশের দিকে তাকানো সম্পর্কে কাযী শুরাইহ বলেনঃ তা মাকরূহ। তবে অধিকাংশ ‘আলিমদের মতে তা বৈধ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ১৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয

৯৮৪-[৭] আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে লোকজন নিয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পড়াতে দেখেছি। এমতাবস্থায় নাতনি উমামাহ্ বিনতু আবুল ’আস তখন তাঁর কাঁধে থাকত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন রুকূ’তে যেতেন উমামাকে নিচে নামিয়ে রাখতেন। আবার যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) হতে মাথা উঠাতেন, তাকে আবার কাঁধে উঠিয়ে দিতেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ مَا لَا يَجُوْزُ مِنَ الْعَمَلِ فِي الصَّلَاةِ وَمَا يُبَاحُ مِنْهُ

وَعَن أبي قَتَادَة قَالَتْ: رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَؤُمُّ النَّاسَ وَأُمَامَةُ بِنْتُ أَبِي الْعَاصِ عَلَى عَاتِقِهِ فَإِذَا رَكَعَ وَضَعَهَا وَإِذَا رَفَعَ مِنَ السُّجُودِ أَعَادَهَا

وعن أبي قتادة قالت: رأيت النبي صلى الله عليه وسلم يؤم الناس وأمامة بنت أبي العاص على عاتقه فإذا ركع وضعها وإذا رفع من السجود أعادها

ব্যাখ্যা: শিক্ষণীয় দিক হল-

কোন ব্যক্তি যদি সালাতরত অবস্থায় কোন মানুষ অথবা কোন পবিত্র পশু বহন করে তা হলে সালাত বিনষ্ট হয় না।

শিশুর শরীর ও তার কাপড় পবিত্র যতক্ষণ না তার মধ্যে অপবিত্র জিনিস না পাওয়া যাবে।

অল্প কাজ দ্বারা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ভঙ্গ হয় না।

কোন কাজ ধারাবাহিকভাবে না করে যদি তা একাধিকবার করা হয় তাতেও সালাত ভঙ্গ হয় না।

শিশু ও দুর্বলদের প্রতি নম্রতা প্রদর্শন ও দয়া প্রদর্শন ইসলামী বিধানের অন্তর্গত।

শিশুদের মসজিদে নেয়া বৈধ।

শিশু বালক বা বালিকা যেই হোক তাকে সালাতরত অবস্থায় বহন করা বৈধ। সালাত ফরযই হোক বা নফল হোক এতে কোন পার্থক্য নেই।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ১৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয

৯৮৫-[৮] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতে তোমাদের কারো ’হাই’ আসলে যথাসাধ্য তা আটকে রাখবে। কারণ (’হাই’ দেয়ার সময়) শায়ত্বন (শয়তান) (মুখে) ঢুকে যায়। (মুসলিম)[1]

بَابُ مَا لَا يَجُوْزُ مِنَ الْعَمَلِ فِي الصَّلَاةِ وَمَا يُبَاحُ مِنْهُ

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا تَثَاءَبَ أَحَدُكُمْ فَلْيَكْظِمْ مَا اسْتَطَاعَ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ» . رَوَاهُ مُسلم

وعن أبي سعيد الخدري قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «إذا تثاءب أحدكم فليكظم ما استطاع فإن الشيطان يدخل» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (فَلْيَكْظِمْ مَا اسْتَطَاعَ) সাধ্যানুযায়ী ‘হাই’ প্রতিরোধ করবে। অর্থাৎ দাঁতের উপর দাঁত চেপে ধরে দুই ঠোঁট মিলিয়ে মুখ বন্ধ করবে। তাতেও যদি ‘হাই’ থামাতে সক্ষম না হয় তাহলে মুখের উপর হাত রাখবে।

ইবনু ‘আরাবী বলেনঃ সর্বাবস্থায় ‘হাই’ প্রতিরোধ করতে হবে কেননা তা শায়ত্বনের (শয়তানের) কাজ। বিশেষ করে সালাতের মধ্যে অবশ্যই ‘হাই’ প্রতিরোধ করতে হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ১৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয

৯৮৬-[৯] ইমাম বুখারীর এক বর্ণনায় আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কারও সালাতের মধ্যে ’হাই’ আসে, তখন সে যেন স্বীয়শক্তি অনুযায়ী তা প্রতিরাধ করতে চেষ্টা করে এবং ’হা’ করে মুখ খুলে না দেয়। নিশ্চয়, এটা শায়ত্বনের (শয়তানের) পক্ষ হতেই হয়ে থাকে, শায়ত্বন (শয়তান) তাতে হাসে।[1]

بَابُ مَا لَا يَجُوْزُ مِنَ الْعَمَلِ فِي الصَّلَاةِ وَمَا يُبَاحُ مِنْهُ

وَفِي رِوَايَةِ الْبُخَارِيِّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: إِذَا تَثَاءَبَ أَحَدُكُمْ فِي الصَّلَاةِ فَلْيَكْظِمْ مَا اسْتَطَاعَ وَلَا يَقُلْ: هَا فَإِنَّمَا ذَلِكُمْ مِنَ الشَّيْطَان يضْحك مِنْهُ

وفي رواية البخاري عن أبي هريرة قال: إذا تثاءب أحدكم في الصلاة فليكظم ما استطاع ولا يقل: ها فإنما ذلكم من الشيطان يضحك منه

ব্যাখ্যা: (وَلَا يَقُلْ: هَا) ‘‘হা বলবে না ’’ অর্থাৎ ‘হাই’ তোলার সময় আওয়াজ করবে না। (فَإِنَّمَا ذَلِكُمْ مِنَ الشَّيْطَان) ‘‘এটা শায়ত্বনের (শয়তানের) কাজ’’ অর্থাৎ ‘হাই’ তোলা অথবা ‘‘হা’’ বলা শায়ত্বনের (শয়তানের) কাজ।

ইবনু বাত্তাল বলেনঃ হাই তোলাকে শায়ত্বনের (শয়তানের) কাজ বলার মর্ম হল যে, শায়ত্বন (শয়তান) এ কাজে সন্তুষ্ট হয়। এর মাধ্যমে সে মানুষকে এ কাজের অবস্থায় দেখতে পছন্দ করে। কেননা এতে সে অলস হয়ে পরে। আর শায়ত্বন (শয়তান) এটাই চায়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ১৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয

৯৮৭-[১০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ গত রাতে একটি ’দুষ্ট জিন্’ আমার নিকট ছুটে এসেছে, আমার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বিনষ্ট করার জন্য। আল্লাহ তা’আলা আমাকে ক্ষমতা দিলেন। ফলে আমি তাকে ধরে ফেললাম। আমি ইচ্ছা করলাম মসজিদে নাবাবীর কোন একটি খুঁটির সাথে একে বেঁধে ফেলতে, যাতে তোমরা সকলে একে দেখতে পারো। সে মুহূর্তে আমার ভাই সুলায়মান (রাঃ)-এর এ দু’আটি স্মরণ করলাম, ’’রাব্বি হাবলী মুলকান লা- ইয়ান্বাগী লিআহাদীম মিম্ বা’দী’’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাকে এমন একটি বাদশাহী দান করো, যা আমার পর আর কারো জন্যে সমীচীন হবে না)। তারপর আমি একে অপদস্ত করে ফেরত দিয়েছি। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ مَا لَا يَجُوْزُ مِنَ الْعَمَلِ فِي الصَّلَاةِ وَمَا يُبَاحُ مِنْهُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ عِفْرِيتًا مِنَ الْجِنِّ تَفَلَّتَ الْبَارِحَةَ لِيَقْطَعَ عَلَيَّ صَلَاتِي فَأَمْكَنَنِي اللَّهُ مِنْهُ فَأَخَذْتُهُ فَأَرَدْتُ أَنْ أَرْبِطَهُ عَلَى سَارِيَةٍ مِنْ سَوَارِي الْمَسْجِدِ حَتَّى تَنْظُرُوا إِلَيْهِ كُلُّكُمْ فَذَكَرْتُ دَعْوَةَ أَخِي سُلَيْمَانَ: (رَبِّ هَبْ لِي مُلْكًا لَا يَنْبَغِي لِأَحَدٍ مِنْ بَعْدِي)
فَرَدَدْتُهُ خَاسِئًا

وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن عفريتا من الجن تفلت البارحة ليقطع علي صلاتي فأمكنني الله منه فأخذته فأردت أن أربطه على سارية من سواري المسجد حتى تنظروا إليه كلكم فذكرت دعوة أخي سليمان: (رب هب لي ملكا لا ينبغي لأحد من بعدي) فرددته خاسئا

ব্যাখ্যা: (لِيَقْطَعَ عَلَيَّ صَلَاتِي) ‘‘আমার সালাত বিনষ্ট করার জন্য’’ জিন বিভিন্ন আকৃতি ধরতে সক্ষম। হয়তঃ সে কুকুরের আকৃতি ধরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করতে যেয়েছিল যাতে তাঁর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বিনষ্ট হয়। যেমন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কালো শায়ত্বন (শয়তান) সালাত বিনষ্ট করে। অথবা জিনটি এমন কাজ করতে উদ্যত হয়েছিল যা থেকে তাকে বিরত রাখতে সীমাতিরিক্ত কাজ করতে হত যাতে সালাত বিনষ্ট হয়।

‘‘আমি তাকে বেঁধে রাখার ইচ্ছা করেছিলাম’’ হাদীসের এ অংশ প্রমাণ করে যে, মসজিদে বন্দী বেঁধে রাখা বৈধ।

শায়খ ‘আবদুল হক দেহলভী বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলা সুলায়মান (আঃ)-কে যে বাদশাহী দিয়েছিলেন তাতে বায়ু, জিন্ ও শায়ত্বনকে তার অনুগত করে দিয়েছিলেন যা সুলায়মান (আঃ)-এর বিশেষত্ব বুঝায়। যদি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিন বেঁধে ফেলতেন তাহলে জিনের ওপর তাঁর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হত। এতে বুঝা যেত সুলায়মান (আঃ)-এর দু‘আ কবূল হয়নি। এজন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিন্ না বেঁধে তা ছেড়ে দিয়েছিলেন যাতে সুলায়মান (আঃ)-এর দু‘আ অক্ষুণ্ণ থাকে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ১৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয

৯৮৮-[১১] সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ সালাতের মধ্যে যে ব্যক্তির কাছে কোন কিছু আপতিত হয় সে ব্যক্তি যেন ’সুবহা-নাল্ল-হ’ পড়ে নেয়। আর হাত তালি একমাত্র মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট।

আরো এক বর্ণনায় আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ’তাসবীহ পড়া পুরুষদের বেলায়, আর হাত তালি দেয়া নারীদের বেলায় প্রযোজ্য। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ مَا لَا يَجُوْزُ مِنَ الْعَمَلِ فِي الصَّلَاةِ وَمَا يُبَاحُ مِنْهُ

وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «مَنْ نَابَهُ شَيْءٌ فِي صَلَاتِهِ فَلْيُسَبِّحْ فَإِنَّمَا التَّصْفِيقُ لِلنِّسَاءِ»
وَفِي رِوَايَةٍ: قَالَ: «التَّسْبِيحُ لِلرِّجَالِ والتصفيق للنِّسَاء»

وعن سهل بن سعد قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم «من نابه شيء في صلاته فليسبح فإنما التصفيق للنساء» وفي رواية: قال: «التسبيح للرجال والتصفيق للنساء»

ব্যাখ্যা: (التَّصْفِيقُ لِلنِّسَاءِ) হাতের তালুতে তালু লাগিয়ে আওয়াজ করা মহিলাদের জন্য বিধিবদ্ধ। কেননা মহিলাদের গলার আওয়াজ পর্দার অন্তর্ভুক্ত। জমহূর ‘উলামাদের অভিমত এই যে, সালাতে কোন বিঘ্ন ঘটলে পুরুষ ‘সুবহানা-ল্ল-হ’ বলবে আর মহিলা হাতের তালুতে তালু মেরে সতর্ক করবে। ইমাম মালিক-এর মতে নারী পুরুষ সবাই ‘সুবহা-নাল্ল-হ’ বলবে। ইমাম কুরতুবী বলেনঃ নারীদের জন্য হাতের তালুতে তালু মেরে আওয়াজ করে সতর্ক করার বিধান প্রমাণ ও যুক্তিগত উভয় থেকেই সঠিক। কেননা মহিলাদের কণ্ঠস্বর নিম্নগামী করতে তারা আদিষ্ট। এজন্যই তারা আযান দিতে পারে না এবং পুরুষের উপস্থিতিতে ইক্বামাত দিতে পারবে না। আর পুরুষদের জন্য হাতে তালি বাজানো নিষেধ এজন্য যে, তা মহিলাদের বৈশিষ্ট্য।

হাদীসের শিক্ষাঃ

  1. সালাতরত ব্যক্তি যদি ক্বিবলার দিক থেকে মুখ না ফিরিয়ে কোন দিকে তাকায় তাতে সালাত বিনষ্ট হয় না।
  2. মহিলাদের জন্য সুন্নাত হল হাতে তালি বাজিয়ে তারা ইমামকে সতর্ক করবে। আর পুরুষদের জন্য সুন্নাত হল তারা ‘সুবহানাল্ল-হ’ বলবে।
  3. ইমামকে সতর্ক করার জন্য পুরুষ মুক্তাদী যদি ‘সুবহা-নাল্ল-হ’ বলে এবং মহিলা মুক্তাদী হাতে তালি বাজায় তাহলে তাদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বিনষ্ট হয় না।

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে