পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাসজিদ ও সালাতের স্থান

এ অধ্যায়ে সালাতের স্থান সংক্রান্ত বর্ণনা এসেছে। মাসজিদ এর শাব্দিক অর্থ সাজদার স্থান, আর পরিভাষিক অর্থ সালাত আদায়ের জন্য নির্ধারিত স্থান।


৬৮৯-[১] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’বাহ্ ঘরে প্রবেশ করে প্রত্যেক কোণে দু’আ করলেন, কিন্তু সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন না। পরে বের হয়ে এলেন। কা’বার সামনে দুই রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং বললেন, এটিই ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)হ্ (কিবলাহ/কিবলা)। (বুখারী)[1]

بَابُ الْمَسَاجِدِ وَمَوَاضِعِ الصَّلَاةِ

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: لَمَّا دَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْبَيْتَ دَعَا فِي نَوَاحِيهِ كُلِّهَا وَلَمْ يُصَلِّ حَتَّى خَرَجَ مِنْهُ فَلَمَّا خَرَجَ رَكَعَ رَكْعَتَيْنِ فِي قُبُلِ الْكَعْبَةِ وَقَالَ: «هَذِه الْقبْلَة» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

عن ابن عباس قال لما دخل النبي صلى الله عليه وسلم البيت دعا في نواحيه كلها ولم يصل حتى خرج منه فلما خرج ركع ركعتين في قبل الكعبة وقال هذه القبلة رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (الْبَيْتَ) অর্থাৎ- কা‘বাহ্ এবং সেটা হচ্ছে পবিত্র আল্লাহর ঘর।

অত্র হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, পবিত্র কা‘বাহ্ ঘরে দু‘আ অথবা তাকবীর দেয়া মুসতাহাব। আর এ ব্যাপারে কারো ইখতেলাফ নেই।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বার অভ্যন্তরে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেননি। আর বিলাল (রাঃ)-এর হাদীসে আদায় করেছেন। দ্বন্দ্ব সমাধান নিম্নরূপ-

* দ্বন্দ্বে হ্যাঁ-সূচক হাদীস প্রাধান্য পায় না-সূচক হাদীসের উপর।

* কা‘বাহ্ ঘরে প্রবেশের পর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্যে দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল অন্ধকার থাকার কারণে, অন্যরা দেখেননি আর বিলাল (রাঃ) তাঁর কাছে থাকায় তিনি সালাত আদায় করা দেখেছেন।

* ঘটনা দু’বার হতে পারে মক্কা বিজয়ের সময় কা‘বার অভ্যন্তরে সালাত আদায় করেছেন আর বিদায় হাজ্জে কা‘বার অভ্যন্তরে ঢুকেছেন সালাত আদায় করেননি যা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনা।

ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর হাদীস যা পরবর্তীতে বিলাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বাহ্ ঘরে সালাত আদায় করেছেন। সুতরাং বিলাল (রাঃ) সাব্যস্ত করেছেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কা‘বাহ্ ঘরে সালাত আদায় করেছেন। আর ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তা নফী (অস্বীকার) করেছেন।

আর মুহাদ্দিসীনে কিরাম বিলাল (রাঃ)-এর রিওয়ায়াত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। তার (বিলাল-এর) সাব্যস্ত করাকে অন্যের অস্বীকারের উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে দু’টি কারণে। যথা-

১. রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেদিন কা‘বাহ্ ঘরে প্রবেশ করেন সেদিন বিলাল (রাঃ) তাঁর সাথে ছিলেন। কিন্তু ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ছিলেন না।

২. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর অস্বীকার করাটা একবার উসামার দিকে আর একবার তার ভাই ফাজল (রাঃ)-এর দিকে সম্পৃক্ত করেছেন। এ সত্ত্বেও সাব্যস্ত হয়নি যে, ফাজল (রাঃ) তাদের সাথে ছিলেন। ফাজল (রাঃ) তাদের সাথে ছিলেন বলে শায (অর্থাৎ- যে বিশ্বস্ত রাবীর বিপরীতে কোন দুর্বল রাবী বর্ণনা করেন) রিওয়ায়াত ব্যতীত প্রমাণিত হয়নি।

ইমাম মুসলিম (রহঃ) কা‘বার মধ্যে সালাত অস্বীকার হওয়ার বিষয়টি উসামাহ্ (রাঃ) থেকে ইবনু ‘আব্বাস-এর মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন। যেমনভাবে এ বিষয়টি মুসান্নাফ (রহঃ) থেকে বিস্তারিত বর্ণনা আসবে এবং সেখানে সালাত আদায় করা ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর একটি বর্ণনায় ‘উসামাহ্ (রাঃ) থেকে ইমাম আহমাদ এবং অন্যান্য ইমামদের নিকট সাব্যস্ত হয়েছে।

তবে এ ব্যাপারে রিওয়ায়াতগুলো একটি আরেকটির বিপরীতমুখী হয়েছে। বিলাল (রাঃ)-এর রিওয়ায়াত এ দিক থেকে প্রাধান্যযোগ্য হয়েছে যে, তিনি এটাকে সাব্যস্ত করেছেন এবং তিনি অধিক জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। আর বিলাল (রাঃ)-এর বিপরীতে অন্য কেউ অস্বীকার সাব্যস্ত করতে পারেনি এবং এক্ষেত্রে সাব্যস্ত হওয়ার ব্যাপারে কেউ ইখতেলাফও করেনি। আর যিনি অস্বীকার করেছেন তার ব্যাপারে ইখতেলাফ রয়েছে।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, বিলাল (রাঃ)-এর রিওয়ায়াতটা প্রাধান্য দেয়া ওয়াজিব। কেননা বিলাল (রাঃ)-এর রিওয়ায়াত সাব্যস্ত করেছেন এ কারণে যে, তিনি অধিক জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। আর উসামাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণনায় তা অস্বীকার করার কারণ হচ্ছে যে, যখন তারা কা‘বাহ্ ঘরে প্রবেশ করলেন তখন দরজা বন্ধ করে দিলেন এবং দু‘আয় মশগুল হলেন। উসামাহ্ (রাঃ) দেখলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বাহ্ ঘরে দু‘আ করছেন। তখন উসামাহ্ এক কোণে দু‘আয় মশগুল হলেন যেদিকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আছেন। অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বাহ্ ঘরে সালাত আদায় করলেন আর এ সময় বিলাল (রাঃ) তার কাছে থেকে দেখলেন। কিন্তু ‘উসামাহ্ (রাঃ) তখন দূরে এবং দু‘আয় মশগুল থাকার কারণে দেখেননি।

২. আরেকটি মতে বলা হয়েছে- কেউ কেউ বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বাহ্ ঘরে দু’বার প্রবেশ করেছেন, একবার সেখানে সালাত আদায় করেছেন এবং দ্বিতীয়বার সেখানে দু‘আ, তাকবীর দিয়েছিলেন। কিন্তু সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেননি। ইবনু হিব্বান বলেনঃ আমার নিকট অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয় হলো দুই হাদীসে দু’টি সংবাদ বর্ণিত হয়েছে যা দু’ সময় ঘটেছিল।

বলা যায়, যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন কা‘বাহ্ ঘরে প্রবেশ করলেন তখন সালাত আদায় করেছেন।

যখন বিদায় হাজ্জের (হজ্জের/হজের) সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কা‘বাহ্ ঘরে প্রবেশ করেছেন তখন সালাত আদায় করেননি।

هذِه অর্থাৎ- কা‘বাহ্ القبله অর্থাৎ- যার দিকে মুখ করার নির্দেশ সাব্যস্ত হয়েছে যা ছাড়া অন্য কিছুর দিকে পরিবর্তন হবে না। যেমনভাবে بيت المقدس কে পরিবর্তন করা হয়েছে।

উক্ত হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, কা‘বাহ্ গৃহে প্রবেশ করা জায়িয। আর তাতে সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। চাই সে সালাত নফল হোক বা ফরয হোক। কারণ উক্ত দু’ সালাত মুক্বীম ব্যক্তির জন্য কা‘বাহ্ গৃহের সম্মুখে আদায় করা না করার মাঝে কোন মতানৈক্য নেই। এটা জমহূরদের মত। ইমাম মালিক তা অবৈধ বলেছেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাসজিদ ও সালাতের স্থান

৬৯০-[২] মুসলিম এ হাদীসটিকে উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ)হতেও বর্ণনা করেছেন।[1]

بَابُ الْمَسَاجِدِ وَمَوَاضِعِ الصَّلَاةِ

وَرَوَاهُ مُسْلِمٌ عَنْهُ عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ

ورواه مسلم عنه عن اسامة بن زيد

ব্যাখ্যা: রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য দরজা বন্ধ করা হয়েছিল যাতে সেখানে জনগণের ভীড় না হয়। অথবা যাতে প্রশান্ত হৃদয়ে ও বিনয়ের সাথে ‘ইবাদাত করতে পারেন। আর বুখারী এ হাদীস দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, অশোভনীয় কার্যাবলী হতে মাসজিদকে হিফাযাতের উদ্দেশে বন্ধ রাখা বৈধ। আর হাদীসে জানা যায় যে, কাবার অভ্যন্তরে প্রবেশ করা শারী‘আতসম্মত এবং মুস্তাহাব আর সেখানে সালাত আদায় করাও মুস্তাহাব।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাসজিদ ও সালাতের স্থান

৬৯১-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে ও উসামাহ্ ইবনু যায়দ, ’উসমান ইবনু ত্বলহাহ্ (রাঃ) আল হাজাবী ও বিলাল ইবনু রাবাহ্ (রাঃ)কা’বায় প্রবেশ করলেন। এরপর বিলাল (রাঃ)অথবা ’উসমান (রাঃ) ভিতর থেকে (ভীড় হবার ভয়ে) দরজা বন্ধ করে দিলেন। তারা কিছুক্ষণ ভিতরে রইলেন। ভিতর থেকে বের হয়ে এলে আমি বিলালকে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’বার ভিতরে কি করলেন? উত্তরে বিলাল (রাঃ)বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভিতরে প্রবেশ করে একটি স্তম্ভ বামে, দু’টি ডানে, আর তিনটি পিছনে রেখে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। সে সময় খানায়ে কা’বার ছয়টি স্তম্ভ বা খিলানের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল (এখন তিনটি স্তম্ভের উপর)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْمَسَاجِدِ وَمَوَاضِعِ الصَّلَاةِ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دخل الْكَعْبَة وَأُسَامَة بن زيد وبلال وَعُثْمَان بن طَلْحَة الحَجبي فَأَغْلَقَهَا عَلَيْهِ وَمَكَثَ فِيهَا فَسَأَلْتُ بِلَالًا حِينَ خَرَجَ مَاذَا صَنَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: جعل عمودا عَن يَسَارِهِ وَعَمُودَيْنِ عَنْ يَمِينِهِ وَثَلَاثَةَ أَعْمِدَةٍ وَرَاءَهُ وَكَانَ الْبَيْتُ يَوْمَئِذٍ عَلَى سِتَّةِ أَعْمِدَةِ ثُمَّ صلى

وعن عبد الله بن عمر ان رسول الله صلى الله عليه وسلم دخل الكعبة واسامة بن زيد وبلال وعثمان بن طلحة الحجبي فاغلقها عليه ومكث فيها فسالت بلالا حين خرج ماذا صنع رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال جعل عمودا عن يساره وعمودين عن يمينه وثلاثة اعمدة وراءه وكان البيت يومىذ على ستة اعمدة ثم صلى

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাসজিদ ও সালাতের স্থান

৬৯২-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মসজিদে হারাম ছাড়া, আমার এই মসজিদে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা অন্য জায়গায় এক হাজার রাক্’আত সালাত আদায় করার চেয়ে উত্তম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْمَسَاجِدِ وَمَوَاضِعِ الصَّلَاةِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَلَاةٌ فِي مَسْجِدِي هَذَا خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ صَلَاةٍ فِيمَا سِوَاهُ إِلَّا الْمَسْجِدَ الْحَرَام»

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم صلاة في مسجدي هذا خير من الف صلاة فيما سواه الا المسجد الحرام

ব্যাখ্যা: এ মাসজিদ বলতে মসজিদে নাবাবী, মসজিদে কুবা নয়।

মসজিদে নাবাবীর যে ফাযীলাত ও মাহাত্ম্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে তা কি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে নির্মিত মসজিদের অংশের সাথে নির্দিষ্ট, না পরবর্তীতে বর্ধিতাংশের মধ্যেও উক্ত ফাযীলাত রয়েছে- এ ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে।

ইমাম নাবাবী বলেন, এ মাহাত্ম্য ও মর্যাদা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নির্মিত মসজিদের অংশের জন্যই নির্দিষ্ট। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- مَسْجِدِي هذَا এটা আমার মাসজিদ। তবে হানাফী মাযহাব মতাবলম্বী ও অন্যান্য মতে বর্ধিতাংশও মসজিদের ফাযীলাতের অন্তর্ভুক্ত। ‘উমার (রাঃ) যখন মসজিদে নাবাবী বৃদ্ধি করেছিলেন বলেছিলেন যদি যুল্ হুলায়ফাহ্ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হতো, তাহলে তা রসূলের মাসজিদ হিসেবে গণ্য করা হতো।

মসজিদে নাবাবীর ফাযীলাত সম্পর্কে ত্ববারানীতে মারফূ‘ সূত্রে হাদীসে এসেছে। মসজিদে হারামে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ১ লক্ষ গুণ, আমার মসজিদে এক হাজার গুণ এবং বায়তুল আক্বসা (আকসা)‘ পাঁচশত গুণ।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের পরে মসজিদে নাবাবীর যে অংশ সম্প্রসারণ করা হয়েছে তা কি মসজিদে নাবাবীর অন্তর্ভুক্ত- এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। হানাফীদের মতে তা মসজিদে নাবাবীর অন্তর্ভুক্ত। কেননা, সাহাবীগণের উপস্থিতিতে মসজিদে নাবাবী বৃদ্ধির ব্যাপারে খুলাফায়ে রাশিদীনরা জায়িয বলেছেন। অথচ এ ব্যাপারে কোন সাহাবী অস্বীকৃতি জানাননি। আর মদীনার ইতিহাসে ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি যখন মসজিদে সম্প্রসারণের কাজটুকু শেষ করলেন, তখন তিনি বললেনঃ যদি এটা জাবানা নামক জায়গায় গিয়ে শেষ হয়। অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, যদি এটা যুলহুলায়ফায় গিয়ে শেষ হয় তাহলেও সম্পূর্ণ জায়গাটাই আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাসজিদরূপে গণ্য হবে।

تميز الطيب من الخبيث নামক গ্রন্থে বলেছেনঃ আমার মসজিদে এক রাক্‘আত সালাত আদায় করা অন্যান্য মসজিদে এক হাজার রাক্‘আত সালাত আদায় করার সমতুল্য, মসজিদে হারাম ব্যতীত। যদি তা ইয়ামানের সন্‘আ নামক জায়গা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার মসজিদে (নাবাবী) এক রাক্‘আত সালাত আদায় করা অন্যান্য মসজিদে এক হাজার রাক্‘আত সালাত আদায় করা হতেও উত্তম, মসজিদে হারাম ব্যতীত। আর মসজিদে হারামে এক রাক্‘আত সালাত আদায় করা মসজিদে নাবাবীতে একশত রাক্‘আত সালাত আদায় করা হতে উত্তম। (ইবনু হিব্বান)

ইবনু হিববানে অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে- মসজিদে হারামে এক রাক্‘আত সালাত আদায় করা মদীনার মসজিদে একশত রাক্‘আত সালাত আদায় করা হতে উত্তম।

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীস অনুরূপ প্রমাণ করে যেটা ইবনু মাজাহ মারফূ' সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছে-

মসজিদে হারামে এক রাক্‘আত সালাত আদায় করা অন্যান্য মসজিদে একহাজার রাক্‘আতের সালাত আদায় করা হতেও উত্তম।

বাযযার এবং ত্ববারানী মারফূ' সূত্রে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি হলোঃ মসজিদে হারামে এক রাক্‘আত সালাত আদায় করা অন্য মসজিদে একলক্ষ রাক্‘আত সালাত আদায় করার মতো। আর আমার মসজিদে (মসজিদে নাবাবীতে) এক রাক্‘আত সালাত আদায় করা অন্য মসজিদে একহাজার রাক্‘আত সালাত আদায় করার অনুরূপ। আর বায়তুল মুকাদ্দাসে এক রাক্‘আত সালাত আদায় করা পাঁচশত রাক্‘আত সালাত আদায়ের ন্যায়।

মুল্লা ‘আলী ক্বারী বলেছেনঃ দ্বিগুণ হওয়ার ব্যাপারে বিরোধপূর্ণ রিওয়ায়াতের মাঝে কোন সমস্যা নেই এটার উপর ভিত্তি করে যে, কম সংখ্যার হাদীসগুলো বেশী সংখ্যার হাদীসগুলোর পূর্বেকার। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা একটার উপর আরেকটাকে বৃদ্ধি করে দিয়েছেন- অবস্থা ও সংখ্যার তারতম্যের মাধ্যমে। যা বর্ণিত হয়েছেঃ নিশ্চয়ই উত্তম কর্মগুলো দশ থেকে সত্তর এ থেকে সাতশত গুণের চেয়েও বেশী বৃদ্ধি করা হয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাসজিদ ও সালাতের স্থান

৬৯৩-[৫] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন মাসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদে সফর করা যায় নাঃ (১) মসজিদে হারাম, (২) মসজিদে আক্বসা (আকসা) ও (৩) আমার এই মাসজিদ (মসজিদে নাবাবী)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْمَسَاجِدِ وَمَوَاضِعِ الصَّلَاةِ

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلَّا إِلَى ثَلَاثَةِ مَسَاجِدَ: مَسْجِدِ الْحَرَامِ وَالْمَسْجِدِ الْأَقْصَى وَمَسْجِدِي هَذَا

وعن ابي سعيد الخدري قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا تشد الرحال الا الى ثلاثة مساجد مسجد الحرام والمسجد الاقصى ومسجدي هذا

ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী- (لَا تُشَدُّ الرِّحَالُ) ‘‘সফর করা যায় না’’। মসজিদে হারাম, মসজিদে আক্বসা (আকসা) ও মসজিদে নাবাবী এ সম্মানিত স্থানগুলো ছাড়া অন্য স্থানে সফরের উদ্দেশে বের হওয়া ঠিক নয়। কারণ এগুলোর আলাদা বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা রয়েছে। কেননা তিনটি মসজিদের একটি হলো মসজিদে হারাম। এটা তাদের (মুসলিমদের) ক্বিবলাহ্ (কিবলাহ/কিবলা), যার ভিত্তি প্রস্তর করেছেন ইব্রাহীম (আঃ)।

দ্বিতীয়টি হচ্ছে পূর্ববর্তী জাতির ক্বিবলাহ্ (কিবলাহ/কিবলা)  যা সুলায়মান (আঃ) নির্মাণ করেছিলেন। এর তৃতীয়টি যা নির্মিত হয়েছে তাক্বওয়ার উপর এবং এর নির্মাতা হচ্ছেন সমগ্র সৃষ্টির উৎকৃষ্ট ব্যক্তি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী: (مَسْجِدِىْ هذَا) আমার এ মাসজিদ, অর্থাৎ- মদীনার মাসজিদ। অন্য বর্ণনায় আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাসজিদ। হাদীসে বর্ণিত এ তিনটি মসজিদের আলাদা বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা রয়েছে অন্য মসজিদের তুলনায়। কেননা তা নাবীদের মাসজিদ এবং প্রথমত সকল মানুষের ক্বিবলাহ্ (কিবলাহ/কিবলা)  এবং হাজ্জের (হজ্জের/হজের) স্থান। দ্বিতীয়ত পূর্ব জাতিরও ক্বিবলাহ্ (কিবলাহ/কিবলা)  ছিল। তৃতীয়ত এটা তাক্বওয়ার উপর গঠিত।

এ তিনটি মাসজিদ ব্যতীত অন্য সকল স্থানে সফর করার ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে, যেমন সৎ ব্যক্তির সাক্ষাতের উদ্দেশে গমন করা, হোক না তিনি মৃত অথবা জীবিত এবং সম্মানিত স্থানে সফর করা বারাকাত গ্রহণ এবং সালাত আদায়ের উদ্দেশে।

শায়খ আবূ মুহাম্মাদ আল্ জুওয়াইনী বলেন, হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী অন্য স্থানে সাওয়াবের উদ্দেশে সফর করা হারাম।

হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী সাধারণভাবে এটা প্রমাণিত হয় যে, এ তিন মাসজিদ ব্যতীত কোন স্থানে বারাকাত পাওয়া ও সালাত আদায়ের উদ্দেশে সফর করা বৈধ নয়। আর ব্যবসা, জ্ঞান অন্বেষণ বা অন্য কোন উদ্দেশে কোন স্থানে সফর করা বৈধ অন্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যা স্বতন্ত্র বিষয়।

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী ‘হুজ্জাতুল্লাহ’ কিতাবে বলেনঃ জাহিলী যুগের লোকেরা তীর্থ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এ বিশ্বাস নিয়ে সফর করতো যে, সেখানে বারাকাত পাওয়া যাবে। এ চিন্তা-চেতনাকে বন্ধ করার জন্যে যাতে আল্লাহ ছাড়া আর কারো ‘ইবাদাতের পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সেজন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ঘোষণা দিয়েছেন। আমার নিকট সত্য হলো যে, কবর এবং ওলী-আওলিয়াদের ‘ইবাদাতের স্থান এবং তূর পাহাড় সফরের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে সবই সমান।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাসজিদ ও সালাতের স্থান

৬৯৪-[৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার ঘর ও আমার মিম্বারের মধ্যখানে আছে জান্নাতের বাগানসমূহের মধ্যকার একটি বাগান। আর আমার মিম্বার হচ্ছে আমার হাওযে কাওসারের উপর। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْمَسَاجِدِ وَمَوَاضِعِ الصَّلَاةِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا بَيْنَ بَيْتِي وَمِنْبَرِي رَوْضَةٌ مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ ومنبري على حَوْضِي

وعن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما بين بيتي ومنبري روضة من رياض الجنة ومنبري على حوضي

ব্যাখ্যা: ‘জান্নাতের টুকরো’ এর ব্যাখ্যা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে, কারো মতে রূপক অর্থে ব্যবহার হয়েছে, এ স্থানে ‘ইবাদাত করলে জান্নাতে পৌঁছে যাবে যেমন- রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাত তলোয়ারের ছায়ার নীচে, অর্থাৎ- জিহাদ জান্নাতে পৌঁছে দেয়।

কারো মতে, এ স্থানে আল্লাহর রহমাত বর্ষণ ও সফলতা যা অর্জিত হয় যিকিরের (জিকিরের) মাজলিসের মাধ্যমে। বিশেষ করে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় এর ব্যাপকতা আরো বেশি ছিল। এ দৃষ্টিভঙ্গিতে বলা হয়েছে জান্নাতের বাগিচা। আর সঠিক বিশ্লেষকদের মতে এ স্থানটি ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিনে ফিরদাওস জান্নাতে স্থানান্তর করা হবে। সুতরাং এ স্থানটি ধূলিস্যাৎ হবে না অন্য স্থানের মতো।

আবার কারো মতে সম্ভাবনা এও রয়েছে যে, এ স্থানটি বাস্তবে জান্নাতেরই স্থান, এ মসজিদে অবতরণ করা হয়েছে। যেমনটি হাজারে আসওয়াদ ও মাকামে ইব্রা-হীম। ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) সংঘটিত হওয়ার পর তার মূল স্থানে ফিরিয়ে নেয়া হবে।

(وَمِنْبَرِي عَلى حَوْضِيْ) আমার মিম্বার আমার হাওযের উপর। অধিকাংশ ‘আলিমদের মতে সত্যিকার মিম্বারটি হাওযের উপর। আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং মিম্বারটি স্থানান্তর করে হাওযের উপর রাখবেন (ক্বিয়ামাতে) আর এটা শ্রেয় মত।

আবার কারো মতে উদ্দেশ্য হলো, যে ব্যক্তি সর্বান্তকরণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয় সৎ ‘আমলের সাথে জড়িত হওয়ার মানসে সে হাওযে পৌঁছবে এবং তা হতে পান করে উপকৃত হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাসজিদ ও সালাতের স্থান

৬৯৫-[৭] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রতি শনিবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়ে হেঁটে অথবা সওয়ারীতে আরোহণ করে ’মসজিদে কুবায়’ গমন করতেন। আর সেখানে দুই রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْمَسَاجِدِ وَمَوَاضِعِ الصَّلَاةِ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْتِي مَسْجِدَ قبَاء كل سبت مَا شيا وراكبا فَيصَلي فِيهِ رَكْعَتَيْنِ

وعن ابن عمر قال كان النبي صلى الله عليه وسلم ياتي مسجد قباء كل سبت ما شيا وراكبا فيصلي فيه ركعتين

ব্যাখ্যা: (مَسْجِدَ قُبَاءٍ) কুবা একটি জায়গার নাম। যা মসজিদে নাবাবী হতে তিন মাইল দূরে অবস্থিত মক্কার দিক যেতে বাম পাশে। তার নামকরণ করা হয়েছে সেখানকার একটি কূপের নামে। আর উল্লেখিত মাসজিদটি বানী ‘আমর ইবনু ‘আওফ-এর সেই প্রথম মাসজিদ। যার ভিত্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্থাপন করেছেন।

মসজিদে কুবার অন্য ফাযীলাত সংক্রান্ত হাদীস এসেছে নাসায়ীতে, যে ব্যক্তি মসজিদে কুবার উদ্দেশে বের হয়ে এসে সেখানে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে তা ‘উমরাহ্ করার সমতুল্য।

অত্র হাদীস আর অধ্যায়ের হাদীস প্রমাণ করে মসজিদে কুবার ফাযীলাত এবং সেখানে সালাত আদায়ের ফাযীলাত। তবে এখানে প্রমাণিত হয়নি দ্বিগুণ ফাযীলাত, যেমনটি তিন মসজিদে রয়েছে।

আর এ হাদীস প্রমাণ করে তিন মাসজিদ ব্যতিরেকে অন্য কোন মসজিদে সফর করা হারাম নয়। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুবায় হেঁটে ও সওয়ারীতে আসতেন। তবে এ কথার পিছনে মন্তব্য করা হয়েছে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুবায় যাওয়াটি সফরের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং হাদীসটি না-সূচক, হাদীসের বিরোধী নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাসজিদ ও সালাতের স্থান

৬৯৬-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট সকল জায়গা হতে মাসজিদই হলো সবচেয়ে প্রিয়, আর বাজার সবচেয়ে ঘৃণ্য স্থান। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْمَسَاجِدِ وَمَوَاضِعِ الصَّلَاةِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَحَبُّ الْبِلَادِ إِلَى اللَّهِ مَسَاجِدُهَا وَأَبْغَضُ الْبِلَاد إِلَى الله أسواقها» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم احب البلاد الى الله مساجدها وابغض البلاد الى الله اسواقها رواه مسلم

ব্যাখ্যা: মাসজিদ হলো আনুগত্যের ও তাক্বওয়ার ঘর, রহমাত অবতীর্ণ হওয়ার জায়গা ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের স্থান। পক্ষান্তরে বাজার হলো শায়ত্বনের (শয়তানের) কার্যক্রমের স্থান। লোভ, লালসা, খিয়ানাত, ধোঁকা, ঠকানো, সুদ, মিথ্যা কসম করা, ওয়া‘দা ভঙ্গ, ফিতনাহ্ (ফিতনা) ও উদাসীনতার ক্ষেত্র।

আলোচ্য হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ভালোবাসা এবং ক্রোধ- যা সে দু’ স্থানে সংঘটিত হয়।

কেউ কেউ বলেনঃ উল্লিখিত হাদীসের অর্থ হচ্ছে যারা মাসজিদসমূহে অবস্থান করে, তারা আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় তাদের চেয়ে যারা মাসজিদ ছাড়া অন্যান্য স্থানে অবস্থান করে। কেননা ভালোবাসা হচ্ছে প্রতিদান দেয়া এবং সরাসরি মাসজিদসমূহকে প্রতিদান দেয়ার কোন অর্থ হয় না। সুতরাং উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর যিকিরের (জিকিরের) জন্য মসজিদে অবস্থানকারী অথবা ই‘তিকাফকারী অথবা অন্যান্য কাজের জন্য। সুতরাং প্রশংসা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর হক যেখানে প্রতিষ্ঠা করে এর বিপরীতটাকে নিন্দা করা হয়েছে।

ইমাম নাবাবী বলেনঃ আল্লাহর পছন্দ ও ঘৃণা বলতে তাঁর কল্যাণ ও অকল্যাণ করার ইচ্ছা। যে ভাগ্যবান তার সাথে কল্যাণের আর যে হতভাগা তার সাথে অকল্যাণের ইচ্ছা করেন। আর মাসজিদসমূহ রহমাত নাযিল হওয়ার স্থান আর বাজারসমূহ এর বিপরীত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাসজিদ ও সালাতের স্থান

৬৯৭-[৯] ’উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশে একটি মাসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْمَسَاجِدِ وَمَوَاضِعِ الصَّلَاةِ

وَعَنْ عُثْمَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ بَنَى لِلَّهِ مَسْجِدًا بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ»

وعن عثمان رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من بنى لله مسجدا بنى الله له بيتا في الجنة

ব্যাখ্যা: যারা মাসজিদ নির্মাণ করবে কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে, না লোক দেখানো ও শুনানোর উদ্দেশে। ইবনু জাওযী বলেনঃ যে ব্যক্তি মাসজিদ নির্মাণের সময় মসজিদের ফলকে তার নাম লিখবে সে ইখলাস তথা আল্লাহর সন্তুষ্টি হতে অনেক দূরে। মাসজিদ চাই বড় হোক বা ছোট হোক। অন্য বর্ণনায় এসেছে কাতাত পাখির বাসার মতো ছোট হোক না। তবে এটা দ্বারা মুবালাগা উদ্দেশ্য।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাসজিদ ও সালাতের স্থান

৬৯৮-[১০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল মসজিদে যাবে, আল্লাহ তা’আলা তার প্রত্যেকবারে যাতায়াতের জন্য জান্নাতে একটি মেহমানদারীর ব্যবস্থা করে রাখবেন। চাই সে সকালে যাক কী সন্ধ্যায়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْمَسَاجِدِ وَمَوَاضِعِ الصَّلَاةِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ غَدَا إِلَى الْمَسْجِدِ أَوْ رَاحَ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُ نُزُلَهُ مِنَ الْجَنَّةِ كُلَّمَا غَدَا أَوْ رَاحَ»

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من غدا الى المسجد او راح اعد الله له نزله من الجنة كلما غدا او راح

ব্যাখ্যা : হাদীসের ভাষ্যমতে এই ব্যক্তি খাস করে ‘ইবাদাতের উদ্দেশে আসবে। আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হচ্ছে অন্যতম ‘ইবাদাত।

(أَعَدَّ اللّهُ لَه نُزُلَه مِنَ الْجَنَّةِ كُلَّمَا غَدَا أَوْ رَاحَ) আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে অতিথি আপ্যায়ন প্রস্ত্তত করে রাখবেন। তার প্রত্যেকবারের জন্য যখন সে সকালে বা বিকালে যাবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ ‘‘এবং সেখানে সকাল-সন্ধ্যা তাদের জন্য রুযী থাকবে।’’ (সূরাহ্ মারইয়াম ১৯ : ৬২)

এর দ্বারা উদ্দেশ্য সর্বদা নির্ধারিত দু’টি সময় না।

মাযহার বলেনঃ মানুষের স্বভাব হলো যখনই কেউ তাদের বাসায় মেহমান হিসেবে আসে তখনই খাদ্য উপস্থাপন করে তথা আপ্যায়ন করায়।

মাসজিদ আল্লাহর ঘর। যখনই এ মসজিদে প্রবেশ করে, দিনে হোক আর রাতে হোক, আল্লাহ তাকে জান্নাতের কোন না কোন প্রতিদান দিবেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা সবচেয়ে বড় সম্মানকারী, তিনি মুহসিনদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাসজিদ ও সালাতের স্থান

৬৯৯-[১১] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতে সবচেয়ে বেশী সাওয়াব পাবে ঐ ব্যক্তি দূরত্বের দিক দিয়ে যার বাড়ী সবচেয়ে বেশী দূরে। আর যে ব্যক্তি ইমামের সাথে জামা’আতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার জন্য মসজিদে গিয়ে অপেক্ষা করে, তার সাওয়াবও ঐ ব্যক্তির চেয়ে বেশী হবে যে মসজিদের নিকটে থাকে এবং তাড়াতাড়ি সালাত আদায় করেই ঘুমিয়ে থাকে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْمَسَاجِدِ وَمَوَاضِعِ الصَّلَاةِ

وَعَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَعْظَمُ النَّاسِ أَجْرًا فِي الصَّلَاةِ أَبْعَدُهُمْ فَأَبْعَدُهُمْ مَمْشًى وَالَّذِي يَنْتَظِرُ الصَّلَاةَ حَتَّى يُصَلِّيَهَا مَعَ الْإِمَامِ أَعْظَمُ أجرا من الَّذِي يُصَلِّي ثمَّ ينَام»

وعن ابي موسى الاشعري قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اعظم الناس اجرا في الصلاة ابعدهم فابعدهم ممشى والذي ينتظر الصلاة حتى يصليها مع الامام اعظم اجرا من الذي يصلي ثم ينام

ব্যাখ্যা: আহমাদ-এর বর্ণনায় এসেছে, প্রতি পদক্ষেপে দশ নেকী। হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী জামা‘আতের সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা দেরী হলেও উত্তম। যথাসময়ে একাকী সালাত আদায় করার চেয়ে। কেউ কেউ এ হাদীস হতে মাসআলাহ্ বের করেছেন যে, নিকটে মাসজিদ থাকা সত্ত্বেও দূরের মসজিদে যাওয়া মুস্তাহাব।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাসজিদ ও সালাতের স্থান

৭০০-[১২] জাবির (রাঃ) ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মসজিদে নাবাবীর পাশে কিছু জায়গা খালি হলো। এতে বানূ সালিমাহ্ গোত্র মসজিদের কাছে স্থানান্তরিত হয়ে আসতে চাইলো। এ খবর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌঁছলো। তিনি বানূ সালিমাহকে বললেন, খবর পেলাম, তোমরা নাকি জায়গা পরিবর্তন করে মসজিদের কাছে আসতে চাইছো? তারা বললো, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! আমরা এ ইচ্ছা করেছি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হে বানূ সালিমাহ্! তোমাদের জায়গাতেই তোমরা অবস্থান কর। তোমাদের ’আমলনামায় তোমাদের পায়ের চিহ্নগুলো লেখা হয়- এ কথাটি তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দু’বার বললেন। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْمَسَاجِدِ وَمَوَاضِعِ الصَّلَاةِ

وَعَن جَابر قَالَ: خَلَتِ الْبِقَاعُ حَوْلَ الْمَسْجِدِ فَأَرَادَ بَنُو سَلِمَةَ أَنْ يَنْتَقِلُوا قُرْبَ الْمَسْجِدِ فَبَلَغَ ذَلِكَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَهُمْ: «بَلَغَنِي أَنَّكُمْ تُرِيدُونَ أَنْ تَنْتَقِلُوا قُرْبَ الْمَسْجِدِ» . قَالُوا: نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَدْ أَرَدْنَا ذَلِكَ. فَقَالَ: «يَا بَنِي سَلِمَةَ دِيَارَكُمْ تُكْتَبْ آثَاركُم دِيَاركُمْ تكْتب آثَاركُم» . رَوَاهُ مُسلم

وعن جابر قال خلت البقاع حول المسجد فاراد بنو سلمة ان ينتقلوا قرب المسجد فبلغ ذلك النبي صلى الله عليه وسلم فقال لهم بلغني انكم تريدون ان تنتقلوا قرب المسجد قالوا نعم يا رسول الله قد اردنا ذلك فقال يا بني سلمة دياركم تكتب اثاركم دياركم تكتب اثاركم رواه مسلم

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীস থেকে জানা যায় যে, কল্যাণসূচক কর্মসমূহ যখন কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে সম্পাদন করা হয় তখন তার পদচিহ্নসমূহও নেকীতে লিপিবদ্ধ করা হয়।

ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ বানূ সালামাহ্ হচ্ছে আনসারীদের একটি গোত্র তাদের ব্যতীত সালামাহ্ গোত্র নামে আর কোন গোত্র ‘আরবে আর নেই।

তাদের বাড়ী-ঘর মসজিদে নাবাবী হতে অনেক দূরে ছিল। রাতের আধারে, বৃষ্টি এবং কঠিন ঠাণ্ডার সময় তারা অধিক কষ্ট করে মসজিদে গমন করতেন; তাই তারা মসজিদে নাবাবীর নিকট বসবাস করার ইচ্ছা করলেন। মদীনার চারপাশ খালি হওয়াটাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপছন্দ করলেন। তাই তিনি তাদেরকে আল্লাহর নিকট ভালো কাজের পদক্ষেপের যে প্রতিদান রয়েছে তার প্রতি উৎসাহ প্রদান করলেন।

(كتابه) দ্বারা উদ্দেশ্য বিভিন্ন কাজ পাণ্ডুলিপিতে লেখা হয়। অর্থাৎ- অধিক পদক্ষেপ প্রতিদান বৃদ্ধির কারণ।

হাদীসে আছে যে, পুণ্য কাজগুলো যখন একনিষ্ঠভাবে হবে তখন সে পুণ্য কাজের পদক্ষেপেও পুণ্য হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হবে।

আর বসবাস মসজিদের কাছাকাছি হওয়া ভালো। তবে তাঁর বিষয়টি আলাদা যে অধিক পরিমাণ পুণ্য অর্জন করতে চায় বেশী বেশী হেঁটে। বানূ সালামাবাসীরা মসজিদের নিকটবর্তী হওয়ার আবেদন করেছিল তাঁর মর্যাদার জন্য। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্তাবটি নাকচ করলেন এবং তাদেরকে জানালেন বার বার দূর হতে মসজিদে আসার মর্যাদা।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাসজিদ ও সালাতের স্থান

৭০১-[১৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাত ধরনের মানুষকে আল্লাহ তা’আলা সেদিন (কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন) তাঁর ছায়ার নীচে আশ্রয় দিবেন যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কারো ছায়া থাকবে নাঃ (১) ন্যায়পরায়ণ শাসক, (২) সেই যুবক যে যৌবন বয়সে আল্লাহর ’ইবাদাতে কাটিয়েছে, (৩) যে ব্যক্তি মাসজিদ থেকে বের হয়ে এসে আবার সেখানে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত মসজিদেই তার মন পড়ে থাকে, (৪) সেই দুই ব্যক্তি, যারা পরস্পরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে। যদি তারা একত্রিত হয় আল্লাহর জন্য হয়, আর যদি পৃথক হয় তাও আল্লাহর জন্যই হয়, (৫) সে ব্যক্তি, যে একাকী অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে আর আল্লাহর ভয়ে তার দু’ চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে, (৬) সে ব্যক্তি, যাকে কোন উচ্চ বংশীয় সুন্দরী যুবতী কু-কাজ করার জন্য আহবান জানায়। এর উত্তরে সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি, (৭) সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহর পথে গোপনে দান করে। যার বাম হাতও বলতে পারে না যে, তার ডান হতে কী খরচ করেছে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْمَسَاجِدِ وَمَوَاضِعِ الصَّلَاةِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «سَبْعَة يظلهم الله تَعَالَى فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ إِمَامٌ عَادِلٌ وَشَابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ اللَّهِ وَرجل قلبه مُعَلّق بِالْمَسْجِدِ وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِي اللَّهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللَّهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ وَرجل دَعَتْهُ امْرَأَة ذَات منصب وَجَمَالٍ فَقَالَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ»

وعن ابي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال سبعة يظلهم الله تعالى في ظله يوم لا ظل الا ظله امام عادل وشاب نشا في عبادة الله ورجل قلبه معلق بالمسجد ورجلان تحابا في الله اجتمعا عليه وتفرقا عليه ورجل ذكر الله خاليا ففاضت عيناه ورجل دعته امراة ذات منصب وجمال فقال اني اخاف الله ورجل تصدق بصدقة فاخفاها حتى لا تعلم شماله ما تنفق يمينه

ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ (يَوْمَ لَا ظِلَّ اِلَّا ظِلُّه) এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে লোক সকল প্রতিপালকের সামনে দন্ডায়মান হবে এবং সূর্যের তাপটা তাদের ওপর কঠিন আকার ধারণ করবে, ফলে তাদের ঘাম ঝরবে। আর সেখানে ‘আরশের ছায়া ছাড়া কোন ছায়া থাকবে না।

(فِي ظِلِّه) ‘‘ও তাঁর ছায়ায়’’-এর কয়েকটি মর্মার্থ হতে পারে।

* সম্মানের কারণে ‘আর্‌শ (আরশ) কে আল্লাহর দিকে সম্বোধন করা হয়েছে।

* ছায়া দ্বারা উদ্দেশ্য তত্ত্বাবধান, হিফাযাত, দায়িত্ব। যেমন বলা হয় فُلَانٌ فِىْ ظِلِّ الْمُلَكِ অমুক বাদশার তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

* তার ‘আরশের ছায়া যেমন অন্য হাদীসে এসেছে।

(سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ فِي ظِلِ عَرْشِه) সাত শ্রেণীর ব্যক্তিকে আল্লাহ তাঁর ‘আরশের ছায়ায় স্থান দিবেন।

(وَشَابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ اللهِ) ঐ যুবক যে নিজের যৌবন আল্লাহর ‘ইবাদাতে কাটিয়েছে। যুবককে খাস করার কারণ হলো, যৌবন বয়সে প্রবৃত্তির চাহিদা বেশী প্রাধান্য পায়। সুতরাং এ অবস্থায় ‘ইবাদাতে ব্যাস্ত থাকা অধিকতর তাক্বওয়ার পরিচয় বহন করে। হাদীসে এসেছে, তোমার রব ঐ যুবককে পছন্দ করেন যার কোন অভিলাষ নেই।

পরস্পরকে ভালোবাসে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে। হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ তাদের এ ভালোবাসা দীনের জন্যই অটুট থাকে, দুনিয়ার কোন কারণে বিচ্ছিন্ন করে না। শুধুমাত্র মৃত্যুই বিচ্ছিন্ন করে।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ (خَالِيًا) এমন ব্যক্তি, যে আল্লাহকে স্মরণ করে মানুষ থেকে নির্জনে তার জিহবা অথবা তার অন্তর দ্বারা আল্লাহকে স্মরণ করে।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ (فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ) তার দু’ চক্ষু প্রবাহিত হয়, অর্থাৎ- অশ্রু প্রবাহিত হয় তার অন্তরের নম্রতার দরুন। আর আল্লাহর মহত্ত্বতার প্রবল ভয়ের দরুন।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ (وَرَجُلٌ دَعَتْهُ اِمْرَأَةٌ) এমন ব্যক্তি, যাকে কোন মহিলা ডাকে। অর্থাৎ- বংশ মর্যাদাসম্পন্ন কোন মহিলা যিনার জন্য তার নিজের দিকে ডাকে।

(فَقَالَ) ‘‘অতঃপর সে বলে’’, অর্থাৎ- অশ্লীলতার ব্যাপারে তার থেকে বাঁচার জন্য ধমকের স্বরে এবং তার থেকে ওজর পেশ করে। অথবা এর উদ্দেশ্য হচ্ছে তার অন্তর থেকে নিজেকে বাধা দেয়ার জন্য।

(إِنِّىْ أَخَافُ اللّهَ) ‘‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’’। ‘ইয়ায (রহঃ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ক্ষেত্রে বংশীয় মর্যাদাওয়ালী ও সুন্দরী রমণীকে নির্দিষ্ট করেছেন। তার প্রতি অত্যধিক আগ্রহ ও তাকে পাওয়াটা কঠিন হওয়ার কারণে। আর সে এমন মহিলা যার মধ্যে বংশীয় মর্যাদা ও সুন্দর উভয়টির সমাবেশ ঘটেছে। বিশেষ করে নিজের দিকে নিজেই আহবানকারিণী। এ রকম মহিলা তার ইচ্ছা বা আকাঙক্ষায় পৌঁছার ক্ষেত্রে কষ্ট থেকে বিমুখ আর এক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করাটা একমাত্র আল্লাহর ভয়ের জন্য হয়ে থাকে। আর এটাই হচ্ছে ঈমানের স্তর এবং মহান আনুগত্য। তাই আল্লাহ তা‘আলা তার নিজস্ব ছায়ায় আশ্রয় দেয়ার মাধ্যমে এ ব্যক্তিকে মর্যাদাবান করেছেন।

(لَا تَعْلَمَ شِمَالُه مَا تُنْفِقُ يَمِينُه) ‘ডান হাত যা দান করে বাম হাত তা জানে না।’ অর্থাৎ- অত্যন্ত গোপনে দান করে। ইবনু মালিক বলেনঃ এটা নফল দানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, কেননা ফরয যাকাত তো প্রকাশ্যেই আদায় করতে হয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাসজিদ ও সালাতের স্থান

৭০২-[১৪] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘরে অথবা (ব্যাস্ততার কারণে) কারো বাজারে সালাত আদায় করার চেয়ে মসজিদে জামা’আতের সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার সাওয়াব পঁচিশ গুণ বেশী। কারণ কোন ব্যক্তি ভালো করে (সকল আদাবের প্রতি লক্ষ্য রেখে) উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে নিঃস্বার্থভাবে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার জন্যই মসজিদে আসে। তার প্রতি ক্বদমের বিনিময়ে একটি সাওয়াবে তার মর্যাদা বেড়ে যায়, আর একটি গুনাহ কমে যায়। এভাবে মসজিদে পৌঁছা পর্যন্ত (চলতে থাকে)। সালাত আদায় শেষ করে যখন সে মুসল্লায় বসে থাকে, মালায়িকাহ্ অনবরত এ দু’আ করতে থাকেঃ ’হে আল্লাহ! তুমি তাকে মাফ করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি তার ওপর রহমত বর্ষণ কর।’’ আর যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের কেউ সালাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, সে সময়টা তার সালাতের সময়ের মধ্যেই পরিগণিত হবে।

আর এক বর্ণনার শব্দ হলো, ’যখন কেউ মসজিদে গেল, আর সালাতের জন্য অবস্থান করলো সেখানে, তাহলে সে যেন সালাতেই রইল। আর মালায়িকার দু’আর শব্দাবলী আরো বেশিঃ ’’হে আল্লাহ! এই বান্দাকে ক্ষমা করে দাও। তার তওবা্ ক্ববূল কর’’। এভাবে চলতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত সে অন্য কোন মুসলিমকে কষ্ট না দেয় বা তার উযূ ছুটে না যায়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْمَسَاجِدِ وَمَوَاضِعِ الصَّلَاةِ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَلَاةُ الرَّجُلِ فِي الْجَمَاعَةِ تُضَعَّفُ عَلَى صَلَاتِهِ فِي بَيْتِهِ وَفِي سُوقِهِ خَمْسًا وَعِشْرِينَ ضِعْفًا وَذَلِكَ أَنَّهُ إِذَا تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ ثُمَّ خَرَجَ إِلَى الْمَسْجِدِ لَا يُخْرِجُهُ إِلَّا الصَّلَاةُ لَمْ يَخْطُ خُطْوَةً إِلَّا رُفِعَتْ لَهُ بِهَا دَرَجَةٌ وَحُطَّ عَنْهُ بِهَا خَطِيئَةٌ فَإِذَا صَلَّى لَمْ تَزَلِ الْمَلَائِكَةُ تُصَلِّي عَلَيْهِ مَا دَامَ فِي مُصَلَّاهُ اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِ الله ارْحَمْهُ وَلَا يَزَالُ أَحَدُكُمْ فِي صَلَاةٍ مَا انْتَظَرَ الصَّلَاةَ» . وَفِي رِوَايَةٍ: قَالَ: «إِذَا دَخَلَ الْمَسْجِدَ كَانَتِ الصَّلَاةُ تَحْبِسُهُ» . وَزَادَ فِي دُعَاءِ الْمَلَائِكَةِ: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اللَّهُمَّ تُبْ عَلَيْهِ. مَا لَمْ يُؤْذِ فِيهِ مَا لَمْ يُحْدِثْ فِيهِ

وعنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم صلاة الرجل في الجماعة تضعف على صلاته في بيته وفي سوقه خمسا وعشرين ضعفا وذلك انه اذا توضا فاحسن الوضوء ثم خرج الى المسجد لا يخرجه الا الصلاة لم يخط خطوة الا رفعت له بها درجة وحط عنه بها خطيىة فاذا صلى لم تزل الملاىكة تصلي عليه ما دام في مصلاه اللهم صل عليه الله ارحمه ولا يزال احدكم في صلاة ما انتظر الصلاة وفي رواية قال اذا دخل المسجد كانت الصلاة تحبسه وزاد في دعاء الملاىكة اللهم اغفر له اللهم تب عليه ما لم يوذ فيه ما لم يحدث فيه

ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ (عَلى صَلَاتِه فِى بَيْتِه وَفِىْ سُوْقِه) অর্থাৎ- যে ব্যক্তি অধিকাংশ সময় মসজিদে জামা‘আতে উপস্থিত না হয়ে একাকী বাড়ীতে বা বাজারে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে।

স্পষ্ট এটাই যে, উল্লেখিত সাওয়াব বৃদ্ধি হওয়াটা মসজিদে জামা‘আতের সাথে নির্দিষ্ট। সাধারণত বাড়িতে সালাত আদায় করাটা বাজারে সালাত আদায়ের চাইতে উত্তম। যেমন- হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, বাজার হচ্ছে শায়ত্বনের (শয়তানের) জায়গা। আর বাড়িতে অথবা বাজারে জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করা একাকী সালাত আদায় করার চাইতে উত্তম।

(لَا يُخْرِجُهاِلَّا الصَّلَاةُ) ‘‘তাকে সালাত ব্যতীত অন্য কিছুই বের করে না।’’ অর্থাৎ- ফরয সালাত জামা‘আতে আদায় করার সংকল্প করা।

 (تُصَلِّىْ عَلَيْهِ) (তার ওপর দরূদ পড়েন) তার জন্য কল্যাণের দু‘আ, পাপ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা এবং রহমাত কামনা করেন।

 (فِىْ مُصَلَّاهُ) সে তার সালাতের স্থানেই আছে। অর্থাৎ- মসজিদের ঐ স্থান যেখানে সে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছে। এমনভাবে সে যদি সালাতের জন্য অপেক্ষা করার নিয়্যাতে অন্য স্থানেও অবস্থান করে তাহলেও সে এরই অন্তর্ভুক্ত হবে।

 (اَللّهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِ) অর্থাৎ- সর্বক্ষণ মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তার জন্য রহমাত কামনা করতে থাকেন এই বলে যে, হে আল্লাহ! তাকে অনুগ্রহ করো। ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ রহমাত চাওয়াটা হয় ক্ষমা চাওয়ার পরে। কেননা মালায়িকাহ্’র সালাতই হচ্ছে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা।

(مَا انْتَظَرَ الصَّلَاةَ) ‘‘যতক্ষণ যে সালাতের অপেক্ষা করে’’। অর্থাৎ- সালাতের অপেক্ষায় সে যতক্ষণ অবস্থান করে। সেটা মসজিদের যে স্থানেই হোক যেখানে সে সালাত আদায় করেছে অথবা মসজিদের অন্য কোন জায়গায় হোক। অন্য এক রিওয়ায়াতে এসেছে- যখন সে মসজিদে প্রবেশ করে তখন সালাত তাকে আটকে রাখে। অর্থাৎ- মাসজিদ থেকে বের হতে বাধা প্রদান করে। সালাত আদায়ের সময় পর্যন্ত তার জন্য সালাতটি বাধা দানকারী হয়ে থাকে। তবে সালাতের পরে যিকর অথবা ই‘তিকাফের জন্য মসজিদে অবস্থান করলে উক্ত সাওয়াব হবে না। যদিও এতে বিরাট ধরনের সাওয়াব রয়েছে।

 (اَللّهُمَّ تُبْ عَلَيْهِ) হে আল্লাহ! তার তাওবাহ্ কবূল করো। তাকে তাওবাহ্ করার তাওফীক্ব দাও। অথবা তাকে এর উপর অটল রাখো।

 (مَا لَمْ يُؤْذِ فِيْهِ) যতক্ষণ সেখানে কষ্ট না দেয়। অর্থাৎ- সর্বক্ষণ মালায়িকাহ্ তার জন্য দু‘আ করতে থাকে এবং তার কথা বা কাজ দ্বারা মাজলিসে মুসলিমদের কাউকে কষ্ট না দেয়।

অন্য মতে বলা হয়েছে, যতক্ষণ মালাককে কষ্ট না দেয়। আর মসজিদে অপবিত্রতার মাধ্যমে তাদের কষ্ট দেয়া হয়। মসজিদে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভাঙ্গার মাধ্যমে মালায়িকাহ্’র কষ্ট দেয়।

(مَا لَمْ يُحْدِثْ) যতক্ষণ উযূ (ওযু/ওজু/অজু) না ভাঙ্গে। আর এটা উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গের যে কোন কারণ হতে পারে সাধারণভাবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও।

হাফিয ইবনু হাজার বলেন, হাদীস প্রমাণ করে মসজিদে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) নষ্ট হয়ে যাওয়া নাক ঝাড়ার চেয়ে খারাপ, কেননা তার জরিমানা রয়েছে আর উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গের জরিমানা নেই। বরং সে মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) ইসতিগফার ও দু‘আ কামনা হতে বঞ্চিত হয়।

হাদীস আরো প্রমাণ করে যে, অন্যান্য ‘আমলের চেয়ে সালাতের মর্যাদা বেশী। কেননা সালাত আদায়কারীর জন্য মালায়িকাহ্ রহমাত ও ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর নিকট দু‘আ করে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাসজিদ ও সালাতের স্থান

৭০৩-[১৫] আবূ উসায়দ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে সে যেন এই দু’আ পড়েঃ ’’আল্লা-হুম্মাফ্ তাহলী আব্ওয়া-বা রহমতিক’’ (হে আল্লাহ! তুমি আমার ওপর তোমার রহমতের দরজাগুলো খুলে দাও)। যখন মাসজিদ হতে বের হবে তখন বলবেঃ ’’আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা মিন্ ফাযলিক’’ (হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমার ফাযল বা অনুগ্রহ কামনা করি)। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْمَسَاجِدِ وَمَوَاضِعِ الصَّلَاةِ

وَعَنْ أَبِي أُسَيْدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلْيَقُلِ: اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ. وَإِذَا خَرَجَ فَلْيَقُلِ: الله إِنِّي أَسأَلك من فضلك . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي اسيد قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا دخل احدكم المسجد فليقل اللهم افتح لي ابواب رحمتك واذا خرج فليقل الله اني اسالك من فضلك رواه مسلم

ব্যাখ্যা: যখন মসজিদে প্রবেশ করবে এ দু‘আ পাঠ করবে (اَللّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ)। আবূ দাঊদ-এর বর্ণনায় এসেছে, প্রথমে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি সালাম ও দরূদ পাঠ করবে। পরে এ দু‘আটি পাঠ করবে।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ এ দু‘আ পাঠ করা মুস্তাহাব।

এ দু‘আ ব্যতিরেকে আরো অনেক দু‘আ এসেছে আবূ দাঊদে তার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো-

أَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْم، وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيْم، وَسْلْطَانِهِ الْقَدِيْم مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ، بِسْمِ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلّهِ، اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَعَلى الِ مُحَمَّدٍ وَسَلَّم، اَللّهُمَّ اغْفِرْلِيْ ذُنُوْبِيْ وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ.

অর্থাৎ- আমি বিতাড়িত শায়ত্বন (শয়তান) হতে মহান আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আশ্রয় প্রার্থনা করছি তাঁর করুণাময় সত্তা এবং শাশ্বত সার্বভৌম শক্তির নামে। আল্লাহর নামে (প্রবেশ করছি), দরূদ ও সালাম মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর। হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য তোমার রহমাতের দ্বার খুলে দাও।

আর বের হওয়ার সময় বলবে- (اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ)

প্রবেশের সময় রহমাতকে এবং বের হওয়ার সময় অনুগ্রহকে নির্ধারণ করার কারণ হলো রহমাত আল্লাহর কিতাবে আত্মিক ও মানসিক প্রশান্তির নি‘আমাত এবং পরকালের নি‘আমাত। যেমন- আল্লাহ বলেন, ‘‘তারা যা সঞ্চয় করে আপনার পালনকর্তার রহমাত তদপেক্ষা উত্তম।’’ (সূরাহ্ আয্ যুখরুফ ৪৩ : ৩২)

আর অনুগ্রহ হলো দুনিয়াবী নি‘আমাত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘তোমাদের ওপর তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করাতে কোন পাপ নেই।’’ (সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৯৮)

‘‘আর সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো।’’ (সূরাহ্ আল জুমু‘আহ্ ৬২ : ১০)

যে মসজিদে প্রবেশ করবে সে আল্লাহর নৈকট্য কামনা করবে। এমন কাজে ব্যাস্ত হবে যা প্রতিদান ও জান্নাতের নিকটবর্তী করবে। সুতরাং তা রহমাত ও দু‘আর সাথে সংশ্লিষ্ট। আর বের হওয়াটা হলো রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) বা যাবতীয় প্রয়োজন। এজন্য অনুগ্রহ দু‘আর সাথে সংশ্লিষ্ট


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাসজিদ ও সালাতের স্থান

৭০৪-[১৬] আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন বসার আগে দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে নেয়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْمَسَاجِدِ وَمَوَاضِعِ الصَّلَاةِ

وَعَنْ أَبِي قَتَادَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ أَنْ يجلس»

وعن ابي قتادة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال اذا دخل احدكم المسجد فليركع ركعتين قبل ان يجلس

ব্যাখ্যা: (إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمْ الْمَسْجِدَ) যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে যেন বসার পূর্বে দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করে নেয়। এখানে নিষিদ্ধ সময়সমূহও এর অন্তর্ভুক্ত। আবার কেউ কেউ বলেছেন, এ হাদীসটি নিষিদ্ধ সময় ছাড়া অন্য সময়ের সাথে নির্দিষ্ট।

কারো মতে হাদীসটি ব্যাপক। কোন কারণ ছাড়া নিষিদ্ধ সময়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা নিষেধ। কেননা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আসরের পরে যুহরের সুন্নাত সালাত বাযা করেছেন। অথচ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিষিদ্ধ সময়কে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন ‘আসরের পর, কিন্তু তিনি যুহরের সুন্নাত সালাত আদায় করেছিলেন কারণবশত। অতএব জানা গেল যে, কারণবশত নিষিদ্ধ সময়ে সালাত আদায় করা বৈধ। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন অবস্থাতেই তাহিয়্যাতুল মাসজিদ সালাত ছাড়েননি। বরং জুমু‘আর দিনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খুতবাহ্ অবস্থায় এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে বসে পড়লে তাকে তিনি দাঁড়িয়ে দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করতে বললেন।

খুতবাহ্ অবস্থায় তাহিয়্যাতুল মাসজিদ সালাত ব্যতীত অন্য কোন সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ। আর যদি তাহিয়্যাতুল মাসজিদ সালাত ত্যাগ করা যেত তাহলে এ অবস্থায় তা ত্যাগ করা যেত। কেননা লোকটি বসে পড়েছিল, আর এটা পড়তে হয় বসার পূর্বেই। লোকটি ভুলবশত এ রকম করেছিলেন। যদি তাহিয়্যাতুল মসজিদের বেশী গুরুত্ব না হত তাহলে তিনি এরূপ গুরুত্ব সহকারে নির্দেশ দিতেন না। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর খুতবাহ্ বন্ধ করে তার সাথে কথা বলেছিলেন এবং তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

(فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ) দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করবে তথা তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় করবে। অথবা তার স্থলাভিষিক্ত সালাতও হতে পারে। যেমন ফরয ও সুন্নাহ সালাত, আর এ সালাত মসজিদের সম্মানার্থে।

নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ তাহিয়্যাহ্’র নিয়্যাত শর্ত নয়, বরং যথেষ্ট হবে ফরয সালাত অথবা সুন্নাতে রাতেবা।

যদি নিয়্যাত করে তাহিয়্যাহ্’র সালাত এবং ফরয সালাতের, তাহলে এক সাথে দু’টো অর্জিত হবে।

জাহিরীদের মতে তাহিয়্যাতুল সালাত আদায় করা ওয়াজিব, আবার কারো মতে ওয়াজিব নয়; দলীল যায়দ ইবনু আসলাম সূত্রে ইবনু আবী শায়বাহ্ বর্ণিত হাদীস সাহাবীগণ মসজিদে প্রবেশ করতেন ও বের হতেন এবং সালাত আদায় করতেন না।

সুতরাং তাহিয়্যাতুল মাসজিদ সুন্নাহ্ তার জন্য যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করবে। খাত্ত্বাবী বলেনঃ ক্বাতাদার হাদীসে সাব্যস্ত হয় যখন কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে তার ওপর কর্তব্য হলো সে দু’ রাক্‘আত তাহিয়্যাতুল মসজিদে সালাত আদায় করবে বসার পূর্বে চাই জুমু‘আতে হোক বা অন্য কোন সময় হোক, ইমাম মিম্বারে থাকুক অথবা না থাকুক। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আমভাবে বলেছেন এবং নির্দিষ্ট করেননি।

আমি (ভাষ্যকার) বলি, এটাই সহীহ; তবে জাবির (রাঃ)-এর হাদীস আরো সুস্পষ্ট করেছে এটা, এক ব্যক্তি মসজিদে আসলো এমতাবস্থায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবাহ্ (খুতবা) দিচ্ছিলেন, অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করেছো? জবাব দিলো না, তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দাঁড়াও এবং দু’ রাক্‘আত আদায় করো।

তারা ইখতিলাফ করেছে ঐ লোকগুলোর ব্যাপারে যে লোকেরা ফাজরের (ফজরের) দু’ রাক্‘আত সুন্নাত সালাত মসজিদে আসার পূর্বেই বাড়িতে আদায় করেছিল। এখন সে-কি মসজিদে প্রবেশকালে দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করতে পারবে কি-না?

ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেনঃ সে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে নিবে।

ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেনঃ সে সালাত আদায় করবে না।

ইমাম রুশদ (রহঃ) বলেনঃ ইখতিলাফের কারণ হলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী ‘‘ফাজরের (ফজরের) পর সকালের সালাত ব্যতীত কোন সালাত নেই’’।

ইবনু হিব্বান তাঁর সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন আবূ যার-এর হাদীস থেকে। তিনি মসজিদে প্রবেশ করলেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করেছো। তিনি বললেনঃ না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ দাঁড়াও, অতঃপর দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করে নাও।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাসজিদ ও সালাতের স্থান

৭০৫-[১৭] কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর হতে দিনের সকালের দিক ছাড়া আগমন করতেন না। আগমন করেই তিনি প্রথমে মসজিদে প্রবেশ করতেন। দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন, তারপর সেখানে বসতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْمَسَاجِدِ وَمَوَاضِعِ الصَّلَاةِ

وَعَنْ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَقْدَمُ مِنْ سَفَرٍ إِلَّا نَهَارًا فِي الضُّحَى فَإِذَا قَدِمَ بَدَأَ بِالْمَسْجِدِ فَصَلَّى فِيهِ رَكْعَتَيْنِ ثمَّ جلس فِيهِ

وعن كعب بن مالك قال كان النبي صلى الله عليه وسلم لا يقدم من سفر الا نهارا في الضحى فاذا قدم بدا بالمسجد فصلى فيه ركعتين ثم جلس فيه

ব্যাখ্যা: কারো মতে হিকমাহ্ এ সময়টি প্রফুল্লতার সময়। এতে তার সাহাবীগণের কষ্ট অনুভব হয় না। তবে ভর দুপুরে আসার বিপরীত, কেননা সে সময়টি আরাম ও ঘুমের সময়।

فَصَلّى فِيهِ رَكْعَتَيْنِ তিনি সেখানে দু’রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। এটা যেন সন্দেহ না হয় এটা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে খাস। কেননা জাবির (রাঃ)-কে তিনি সফর হতে আগমনের সালাত আদায়ের আদেশ দিয়েছেন। আর এ সালাতটি সফর হতে আগমনের সালাত তাহিয়্যাতুল সালাত না তবে তাহিয়্যাতুল সালাতও আদায় হবে।

(ثُمَّ جَلَسَ فِيْهِ) অতঃপর তিনি বসতেন বাড়ীতে প্রবেশের পূর্বে যাতে মুসলিমরা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে এটা আল্লাহর সৃষ্টিজীবের উপর তাঁর অনুগ্রহ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাসজিদ ও সালাতের স্থান

৭০৬-[১৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শুনে অথবা দেখে মসজিদে এসে কেউ তার হারানো জিনিস খুঁজছে, সে যেন তার উত্তরে বলে, ’আল্লাহ করুন তোমার হারানো জিনিস তুমি না পাও। কারণ হারানো জিনিস খুঁজবার জন্য এ ঘর তৈরি করা হয়নি। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْمَسَاجِدِ وَمَوَاضِعِ الصَّلَاةِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ سَمِعَ رَجُلًا يَنْشُدُ ضَالَّةً فِي الْمَسْجِدِ فَلْيَقُلْ: لَا رَدَّهَا اللَّهُ عَلَيْكَ فَإِنَّ الْمَسَاجِد لم تبن لهَذَا . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من سمع رجلا ينشد ضالة في المسجد فليقل لا ردها الله عليك فان المساجد لم تبن لهذا رواه مسلم

ব্যাখ্যা: হাদীসে সাব্যস্ত হয় যে, উচ্চৈঃস্বরে হারানোর বস্ত্ত ঘোষণা দেয়া হারাম। কেননা মাসজিদ এজন্য তৈরি হয়নি, বরং তৈরি হয়েছে আল্লাহর যিকর, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়, ‘ইলম আলোচনা ইত্যাদির জন্য। তবে কারো যদি কোন কিছু খোয়া যায় মসজিদের দরজায় বসবে প্রবেশকারী ও বের হওয়া ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাসজিদ ও সালাতের স্থান

৭০৭-[১৯] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এই দুর্গন্ধময় গাছের (পেঁয়াজ বা রসূনের) কিছু খাবে সে যেন আমাদের মসজিদের নিকটবর্তী না হয়। কারণ মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) কষ্ট পান যেসব জিনিসে মানুষ কষ্ট পায়। (বুখারী ও মুসলিম)[1] (মুত্তাফাকুন ’আলায়হি ৫৬৪)

بَابُ الْمَسَاجِدِ وَمَوَاضِعِ الصَّلَاةِ

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَكَلَ مِنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ الْمُنْتِنَةِ فَلَا يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا فَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ تَتَأَذَّى مِمَّا يَتَأَذَّى مِنْهُ الْإِنْسُ»

وعن جابر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من اكل من هذه الشجرة المنتنة فلا يقربن مسجدنا فان الملاىكة تتاذى مما يتاذى منه الانس

ব্যাখ্যা: মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, যে পিঁয়াজ রসুন ও দুর্গন্ধযুক্ত শিকড় সমৃদ্ধ এক প্রকার গাছ ভক্ষণ করলো।

হাদীস প্রমাণ করে যে, রসুন বা অন্যান্য সবজি যাতে দুর্গন্ধ রয়েছে তা’ পাক করে খাওয়া বৈধ এবং বাসায় থাকলে পাক না করেও খাওয়া বৈধ। আর মসজিদে উপস্থিতির সময় যেন রান্নাকৃত হয় যাতে এ খাবারের দুর্গন্ধ মানুষ ও মালাককে কষ্ট না দেয়। আর নিষেধটা হলো কাঁচা রসুন বা এ জাতীয় কিছু সবজি খেয়ে মসজিদে আসা। মূলত রসুন পিঁয়াজ অনুরূপ সবজি খাওয়া হালাল। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বক্তব্য, হে লোক সকল! আল্লাহ যা আমার জন্য হালাল করেছেন তা আমার জন্য হারাম করা বৈধ নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাসজিদ ও সালাতের স্থান

৭০৮-[২০] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মসজিদে থুথু ফেলা গুনাহ। (যদি কেউ ফেলে) তার ক্ষতিপূরণ হলো ঐ থুথু মাটিতে পুঁতে ফেলা। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْمَسَاجِدِ وَمَوَاضِعِ الصَّلَاةِ

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْبُزَاقُ فِي الْمَسْجِد خَطِيئَة وكفارتها دَفنهَا»

وعن انس قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم البزاق في المسجد خطيىة وكفارتها دفنها

ব্যাখ্যা: ইবনু হাজার বলেন, কেউ যদি মসজিদের বাহির হতে মসজিদে থুথু ফেলে তবুও নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবে।

ক্বাযী ‘ইয়ায বলেন, পাপ তখন হবে যখন দাফন করবে না আর যদি দাফন করে তাহলে পাপ হবে না। আর নাবাবী বলেনঃ দাফন করুক বা না করুক উভয় অবস্থায় পাপ হবে।

কারো মতে, মাসজিদ যদি মাটিযুক্ত না হয় বরং চট বা গালিচা বিছানো থাকে তাহলে থুথু বাম পায়ের নীচে ফেলবে।

আমি ভাষ্যকার বলি, যখন থুথু প্রতিহত করার প্রয়োজন হয় আর মাসজিদ মসৃণ ও টাইলস্ যুক্ত হয় তাহলে বাম পায়ের নীচে ফেলবে এবং পা দ্বারা মিটাবে যাতে আর থুথুর আর চিহ্ন না থাকে। এর উপর হাদীসের মর্মার্থ প্রমাণ করে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 পরের পাতা »