পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ ও মুনাফিক্বীর নিদর্শন

জমহূরসহ পূর্বপরের সকল ’আলিমের মতে পাপসমূহ দু’ভাগে বিভক্ত কতগুলো বড় পাপ আর কতগুলো ছোট পাপ। এ বিষয়ে সূরা আন্ নিসা’র ৩১ নং এবং সূরাহ্ আন্ নাজ্ম-এর ৩২ নং আয়াতসহ কুরআন সুন্নাহর অসংখ্য প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে। তবে কাবীরার সংজ্ঞার ক্ষেত্রে জমহূরের মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়েছে। ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-এর ভাষ্য মতে- ’’কাবীরাহ্ (কবিরা) ঐসব পাপ যেগুলোর ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’আলা জাহান্নাম, গযব, অভিশাপ অথবা ’আযাবের কথা বলেছেন’’। কারো কারো মতে, কাবীরাহ্ (কবিরা) ঐসব পাপ যাতে জড়িত হলে দুনিয়ায় হাদ্দ বা শাস্তি অবধারিত হয়েছে এবং আখিরাতে জাহান্নামের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তবে অগ্রাধিকারযোগ্য অভিমত হলোঃ কাবীরাহ্ (কবিরা) ঐসব পাপ যেগুলোকে বড় বলা হয়েছে বা যা সম্পাদনে আখিরাতে শাস্তির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে বা যেগুলোর ক্ষেত্রে গযব, অভিশাপের কথা বলা হয়েছে বা হাদ্দ অবধারিত হয় বা যার সম্পাদনকারীকে ফাসিক্ব বলে অভিহিত করা হয়েছে।

জেনে রাখা ভালো যে, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যুগের অধিকাংশ ’আলিমের মতে গুনাহ দুই ভাগে বিভক্ত। কাবীরাহ্ (কবিরা) ও সগীরাহ্। এ বিষয়ে কুরআনে ও হাদীসে প্রমাণাদি স্পষ্ট।

আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ’’তোমরা যদি নিষিদ্ধকৃত কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ পরিহার কর তাহলে আমি তোমাদের ছোট গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিব।’’ (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪: ৩১)

আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ ’’যারা কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ থেকে এবং অশ্লীল কার্য থেকে বেঁচে থাকে সগীরাহ্ গুনাহ্ ব্যতিরেকে।’’ (সূরাহ্ আন্ নাজম ৫৩: ৩২)

সহীহ হাদীসগুলো থেকে প্রমাণিত যে, এমন কিছু গুনাহ রয়েছে যা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) রমাযানের সিয়াম, হাজ্জ (হজ/হজ্জ), ’উমরাহ্ ও ’আরাফাহ্ দিবসের সিয়াম, ’আশূরার সিয়াম এবং সৎকার্য দ্বারা মাফ হয়ে যায়। আবার এমন কিছু গুনাহ্ রয়েছে যা উপরোক্ত কার্যাবলী দ্বারা মাফ হয়ে যায় না। যেমন সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে ’’যতক্ষণ সে কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ্ না করে।’’

যে সকল গুনাহের ব্যাপারে স্পষ্ট প্রমাণাদি রয়েছে তা কাবীরাহ্ (কবিরা) বা মহাপাপ। অথবা ঐ গুনাহের ফলে পরকালে শাস্তির ওয়া’দা অথবা আল্লাহর অসন্তুষ্টি লা’নাত কিংবা অপরাধের ইহকালীন শাস্তি বা তা কঠোরভাবে অস্বীকার করা হয়েছে বা তা সম্পাদনকারীকে ফাসিক্ব বলে ভূষিত করা হয়েছে ওগুলো কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ্।


৪৯-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর কাছে সর্বাধিক বড় গুনাহ কোনটা? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমাকে যিনি সৃষ্টি করেছেন, সেই আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা। অতঃপর পুনরায় সে জিজ্ঞেস করলো, তারপর কোনটা? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার সন্তান তোমার সাথে খাবে- এ ভয়ে তাকে হত্যা করা। পুনরায় প্রশ্ন করলো, তারপর কোনটা? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করা। তিনি [ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ)] বলেছেন, এর সমর্থনে আল্লাহ তা’আলা (কুরআনে) অবতীর্ণ করলেনঃ ’’তারাই আল্লাহর প্রকৃত বান্দা, যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে মা’বূদ হিসেবে গণ্য করে না, আল্লাহ যাদের হত্যা করা হারাম করে দিয়েছেন, আইনের বিধান ছাড়া তাদের (অন্যায়ভাবে) হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। আর যে এগুলো করে সে শাস্তির সাক্ষাৎ লাভ করবে।’’- (সূরাহ্ আল ফুরক্বান ২৫: ৬৮)। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْكَبَائِرِ وَعَلَامَاتِ النِّفَاقِ- الفصل الأول

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيُّ الذَّنْبِ أَكْبَرُ عِنْدَ اللَّهِ قَالَ أَنْ تَدْعُوَ لِلَّهِ نِدًّا وَهُوَ خَلَقَكَ قَالَ ثُمَّ أَيٌّ قَالَ ثمَّ أَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ خَشْيَةَ أَنْ يَطْعَمَ مَعَكَ قَالَ ثمَّ أَي قَالَ ثمَّ أَن تُزَانِي بحليلة جَارك فَأنْزل الله عز وَجل تَصْدِيقَهَا (وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يزنون وَمن يفعل ذَلِك يلق أثاما)
الْآيَة

عن عبد الله بن مسعود قال قال رجل يا رسول الله اي الذنب اكبر عند الله قال ان تدعو لله ندا وهو خلقك قال ثم اي قال ثم ان تقتل ولدك خشية ان يطعم معك قال ثم اي قال ثم ان تزاني بحليلة جارك فانزل الله عز وجل تصديقها والذين لا يدعون مع الله الها اخر ولا يقتلون النفس التي حرم الله الا بالحق ولا يزنون ومن يفعل ذلك يلق اثاماالاية

Chapter: Major Sins and the Signs of Hypocrisy - Section 1


‘Abdallah b. Mas'ud said that a man asked God’s messenger, what was the greatest sin in God’s sight, to which he replied, “That you should treat anything as equal to God when He has created you." “What next?’’ he asked, to which he replied, “That you should kill your child for fear that he may eat along with you.”. ‘‘What next?" he asked, to which he replied, “That you should commit adultery with your neighbour’s wife." God has revealed words which verify this :
“Those who do not invoke another god along with God, or kill one whom God has declared inviolate without a just cause, or commit fornication..." *

(Bukhari and Muslim.)

* Quran, 25:68

ব্যাখ্যা: এ হাদীসের মধ্যে এ ইঙ্গিত রয়েছে যে, একক আল্লাহর সাথে পৃথিবীর কোন কিছুকে শরীক করা সব চাইতে কদর্য বা খারাপ কাজ। শির্কের পরে কোন কাজ অধিক অপরাধমূলক? এ প্রশ্নের জবাবে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ স্বীয় আদরের সন্তানকে এ আশঙ্কায় হত্যা করা যে, সে তোমার সাথে খাবার খাবে। হত্যা করাটাই একটা অপরাধ। এ হত্যা কাজের সাথে যখন স্বীয় সন্তান হত্যার বিষয় যুক্ত হয় তখন তা আরো কদর্য বা বেশী অপরাধ বলে সাব্যস্ত হয়। এ হাদীসটি ঐ আয়াতের সমার্থক যেখানে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘দরিদ্র হবার ভয়ে তোমরা স্বীয় সন্তানদের হত্যা করো না’’- (সূরাহ্ বানী ইসরাঈল ১৭ঃ ৩১)।

‘‘তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করা’’ এ বাক্যাংশের ব্যাখ্যায় ইমাম নাবাবী বলেন, تزاني শব্দের মর্মার্থ হলো ‘‘তার সম্মতিক্রমে তার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া’’। এতে ব্যভিচারের সাথে আরো দু’টি অপরাধযুক্ত আছে। সে ঐ মহিলাকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে বিগড়িয়ে দিয়েছে এবং তার অন্তরকে ব্যভিচারীর প্রতি আকৃষ্ট করেছে। এ কাজ দু’টি আরো কদর্য। আর এ কাজটি তার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে করা যা আরো অধিক কদর্য। আরো মহা অপরাধ। কেননা প্রতিবেশী তার নিকট থেকে আশা করে যে, সে তার পক্ষ হয়ে প্রতিবেশীর ও তার স্ত্রীর জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকবে। তার দ্বারা নিরাপত্তা লাভ করবে। আর তাকে তো এ আদেশই দেয়া হয়েছে যে, সে প্রতিবেশীকে সম্মান করবে। তার প্রতি দয়াপ্রদর্শন করবে। সে যখন এ সবের পরিবর্তে তার স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করে, তার স্ত্রীকে তার বিরুদ্ধে বিগড়িয়ে দেয়- তখন তা কদর্যের শেষ সীমানায় পৌঁছে যায়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ ও মুনাফিক্বীর নিদর্শন

৫০-[২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কাউকে আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, কাউকেও হত্যা করা, মিথ্যা শপথ করা বড় গুনাহ। (বুখারী)[1]

بَابُ الْكَبَائِرِ وَعَلَامَاتِ النِّفَاقِ- الفصل الأول

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْكَبَائِرُ الْإِشْرَاكُ بِاللَّهِ وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ وَقَتْلُ النَّفْسِ وَالْيَمِين الْغمُوس» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن عبد الله بن عمرو عن النبي صلى الله عليه وسلم قال الكباىر الاشراك بالله وعقوق الوالدين وقتل النفس واليمين الغموس رواه البخاري

Chapter: Major Sins and the Signs of Hypocrisy - Section 1


‘Abdallah b. ‘Amr reported God’s messenger as saying, “The major sins are associating other objects of worship with God, disobedience to parents, murder, and deliberate perjury (al-yamin al-ghamus)."

Bukhari transmitted it.

ব্যাখ্যা: আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপন করার মর্মার্থ হলো আল্লাহ ব্যতিরেকে অন্য কাউকে ইলাহ গ্রহণ করা। এর দ্বারা উদ্দেশ হলো কুফরী করা। বিশেষভাবে শির্কের উল্লেখ করার কারণ হলো এর অস্তিত্বের প্রাধান্য বিশেষ করে তৎকালীন ‘আরব দেশসমূহে। অতএব কুফরীর অন্যান্য প্রকার সম্পর্কে সতর্ক করার উদ্দেশে তা উল্লেখ করা হয়েছে।

পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়ার মর্মার্থ হলো তাদের আদেশ অমান্য করা এবং তাদের সেবা না করা। এ থেকে উদ্দেশ্য হলো সন্তান কর্তৃক এমন কথা ও কাজ সম্পাদিত হওয়া যার কারণে পিতা-মাতা কষ্ট পায়। তবে শির্ক ও আল্লাহর অবাধ্যতার ব্যাপারটি স্বতন্ত্র। অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা শপথ করাও কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। মিথ্যা শপথ বলতে অতীতে ঘটে যাওয়া কোন বিষয় সম্পর্কে স্বেচ্ছায় মিথ্যা শপথ করাকে বুঝানো হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, সে যা করেনি সে সম্পর্কে এমন বলা যে, আল্লাহর শপথ আমি অবশ্যই তা করেছি। আর যা করেছে সে সম্পর্কে বলা যে, আল্লাহর শপথ আমি এটি করিনি। এ ধরনের শপথকে غُمُوْسً বলার কারণ এই যে, এ ধরনের শপথ শপথকারীকে জাহান্নামে প্রবেশ করায়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ ও মুনাফিক্বীর নিদর্শন

৫১-[৩] আর আনাস (রাঃ) এর বর্ণনায় ’মিথ্যা শপথ’-এর পরিবর্তে ’’মিথ্যা সাক্ষ্য’’ দেয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْكَبَائِرِ وَعَلَامَاتِ النِّفَاقِ- الفصل الأول

وَفِي رِوَايَةِ أَنَسٍ: «وَشَهَادَةُ الزُّورِ» بَدَلُ: «الْيَمِينُ الْغمُوس»

وفي رواية انس وشهادة الزور بدل اليمين الغموس

Chapter: Major Sins and the Signs of Hypocrisy - Section 1


Anas’s version has “false witness” (shahadat al-zur) instead of ‘‘deliberate perjury."

(Bukhari and Muslim.)

ব্যাখ্যা: মিথ্যা সাক্ষ্যকে زور নামকরণের কারণ এই যে, এই সাক্ষ্য দ্বারা সত্য থেকে বাতিলের দিকে ঝুঁকিয়ে দেয়া হয়। হাফিয ইবনু হাজার বলেন, زور এর সংজ্ঞা হলো কোন বস্তুকে তার বিপরীত গুণ দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা। কথাকেও زُوْرِ বলা হয়ে থাকে যা মিথ্যা ও না-হক বা বাতিলকে শামিল করে। যখন زُّوْرِ শব্দটিকে সাক্ষ্যের সাথে সম্বন্ধ করা হয় তখন তা শক্ত মিথ্যা সাক্ষ্যকেই বুঝায়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ ও মুনাফিক্বীর নিদর্শন

৫২-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ (হে লোক সকল!) সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় হতে তোমরা দূরে থাকবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! এ সাতটি বিষয় কী? জবাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (১) আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা। (২) যাদু করা। (৩) শারী’আতের অনুমতি ব্যতীত কাউকে (অন্যায়ভাবে) হত্যা করা। (৪) সুদ খাওয়া। (৫) (অন্যায়ভাবে) ইয়াতীমের মাল খাওয়া। (৬) জিহাদের মাঠ থেকে পালিয়ে আসা। (৭) নির্দোষ ও সতী-সাধ্বী মুসলিম মহিলার বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْكَبَائِرِ وَعَلَامَاتِ النِّفَاقِ- الفصل الأول

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللَّهِ وَالسِّحْرُ وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَكْلُ الرِّبَا وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلَاتِ»

وعن ابي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال اجتنبوا السبع الموبقات قالوا يا رسول الله وما هن قال الشرك بالله والسحر وقتل النفس التي حرم الله الا بالحق واكل الربا واكل مال اليتيم والتولي يوم الزحف وقذف المحصنات المومنات الغافلات

Chapter: Major Sins and the Signs of Hypocrisy - Section 1


Abu Huraira reported God’s messenger as saying, “Avoid the seven noxious things." When his hearers asked, “What are they, messenger of God?" he replied, “Associating anything with God, magic, killing one whom God has declared inviolate without a just cause, devouring usury, consuming the property of an orphan, turning back when the army advances, and slandering chaste women who are believers but indiscreet."

(Bukhari and Muslim.)

ব্যাখ্যা : মানাবী (রহঃ) বলেন, সর্বাপেক্ষা বড় গুনাহ্ হলো শির্ক, অতঃপর অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা।

(سِحْرٌ) সিহর (যাদু) বলা হয় এমন বিষয়কে যা সাধারণ নিয়মের বহির্ভূত। তা সংঘটিত হয় দুষ্ট লোকেদের দ্বারা। জমহূর (অধিকাংশ) ‘আলিমদের মতানুযায়ী যাদুর বাস্তবতা রয়েছে এবং তার প্রভাবও বিদ্যমান। যা মানুষের মেজাজ বিগড়িয়ে দেয়। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, যাদু হারাম। তন্মধ্যে কিছু আছে কুফরী আর কিছু এমন যা কুফরী নয় তবে কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ্। যদি যাদুর মধ্যে এমন কথা ও কাজ থাকে যা কুফরীর পর্যায়ের তাহলে এমন যাদু কুফরী নচেৎ তা কুফরী নয়। সর্বাবস্থায় যাদু শিখা এবং তা শিক্ষা দেয়া হারাম।

যে কোন পন্থায় সুদগ্রহণ করা এবং অন্যায়ভাবে ইয়াতীমের মাল আত্মসাৎ করা কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা তখনই কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ্ বলে গণ্য হবে যখন শত্রুর সংখ্যা মুসলিমের দ্বিগুণের অধিক না হবে। মুসলিম সতীসাধ্বী নারীদের বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ। কাফির নারীদের প্রতি এরূপ অপবাদ দেয়া কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ নয়।

গাফিলাত বলতে সে সমস্ত নারীকে বুঝায়, যারা অশ্লীল কাজ কর্ম হতে মুক্ত। তবে যারা অশ্লীল কর্ম থেকে মুক্ত নয়, এরূপ নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করা হারাম নয় যদি তাদের অশ্লীলতা প্রকাশমান হয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ ও মুনাফিক্বীর নিদর্শন

৫৩-[৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যিনাকারী যখন যিনা করে তখন আর সে ঈমানদার থাকে না। চোর যখন চুরি করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। মদ্যপ যখন মদ পান করে তখন তার আর ঈমান থাকে না। যখন ডাকাত এভাবে ডাকাতি করে যে, যখন চোখ তোলে তাকিয়ে থাকে তখন তার ঈমান থাকে না। এভাবে কেউ যখন গনীমাতের মালে খিয়ানাত করে, তখন তার ঈমান থাকে না। অতএব সাবধান! (এসব গুনাহ হতে দূরে থাকবে)। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْكَبَائِرِ وَعَلَامَاتِ النِّفَاقِ- الفصل الأول

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَا يشرب الْخمر حِين يشْربهَا وَهُوَ مُؤمن وَلَا يَسْرِقُ السَّارِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَا ينتهب نهبة ذَات شرف يرفع النَّاس إِلَيْهِ أَبْصَارهم فِيهَا حِينَ يَنْتَهِبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَا يَغُلُّ أَحَدُكُمْ حِين يغل وَهُوَ مُؤمن فإياكم إيَّاكُمْ»

وعن ابي هريرة رضي الله عنه ان النبي صلى الله عليه وسلم قال لا يزني الزاني حين يزني وهو مومن ولا يشرب الخمر حين يشربها وهو مومن ولا يسرق السارق حين يسرق وهو مومن ولا ينتهب نهبة ذات شرف يرفع الناس اليه ابصارهم فيها حين ينتهبها وهو مومن ولا يغل احدكم حين يغل وهو مومن فاياكم اياكم

Chapter: Major Sins and the Signs of Hypocrisy - Section 1


Abu Huraira reported God’s messenger as saying, “When one commits fornication he is not a believer, when one steals he is not a believer, when one drinks wine he is not a believer, when one takes plunder on account of which men raise their eyes at him he is not a believer, and when one of you defrauds he is not a believer; so beware, beware!"

(Bukhari and Muslim.)

ব্যাখ্যা: হাদীসের প্রকাশমান অর্থ দ্বারা বুঝা যায় যে, কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি মু’মিন নয় যেমনটি খারিজী এবং মু‘তাযিলাগণ বলে থাকে। তবে জামা‘আত তাদের বিপরীত মত পোষণ করেন এবং এ হাদীসের বিভিন্ন ব্যাখ্যা করেছেন। এ হাদীস এবং কুরআন ও অন্যান্য হাদীসের মধ্যে সমন্বয় করার উদ্দেশে, যে দলীলগুলো প্রমাণ বহন করে যে, শির্ক ব্যতীত অন্য কোন কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ্’র দরুন কাউকে কাফির বলা যায় না। বরং এমন ব্যক্তি মু’মিন, তবে তাদের ঈমান অসম্পূর্ণ। যদি তারা তাওবাহ্ করে তবে শাস্তি থেকে রেহাই পাবে। আর যদি তাওবাহ্ ব্যতীত কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহে লিপ্ত থেকেই মারা যায় তাহলে তারা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের ক্ষমাও করতে পারেন আবার শাস্তিও দিতে পারেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ ও মুনাফিক্বীর নিদর্শন

৫৪-[৬] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনায় এটাও আছে, হত্যাকারী যখন অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে, সে সময়ও তার ঈমান থাকে না। ’ইকরিমাহ্ (রহঃ) বলেন, আমি ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কিরূপে ঈমান তার থেকে বের করে নেয়া হবে? তিনি বললেন, এভাবে (এ কথা বলে) তিনি তার হাতের অঙ্গুলিসমূহ পরস্পরের ফাঁকের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে, পরে তা পৃথক করে নিলেন। অতঃপর সে যদি তওবা্ করে, তাহলে পুনরায় ঈমান তার মধ্যে এভাবে ফিরে আসবে- এ কথা বলে পুনরায় তিনি দুই হাতের আঙ্গুলসমূহ পরস্পরের ফাঁকের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন। আর আবূ ’আবদুল্লাহ ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেছেন, সে মু’মিন থাকে না। অর্থাৎ- সে প্রকৃত বা পূর্ণ মু’মিন থাকে না কিংবা তার ঈমানের নূর থাকে না। এটা বুখারীর বর্ণনার হুবহু শব্দাবলী।[1]

بَابُ الْكَبَائِرِ وَعَلَامَاتِ النِّفَاقِ- الفصل الأول

وَفِي رِوَايَة ابْن عَبَّاس: «وَلَا يَقْتُلُ حِينَ يَقْتُلُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ» . قَالَ عِكْرِمَةُ: قُلْتُ لِابْنِ عَبَّاسٍ: كَيْفَ يُنْزَعُ الْإِيمَانُ مِنْهُ؟ قَالَ: هَكَذَا وَشَبَّكَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ ثُمَّ أَخْرَجَهَا فَإِنْ تَابَ عَادَ إِلَيْهِ هَكَذَا وَشَبَّكَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ وَقَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ: لَا يَكُونُ هَذَا مُؤْمِنًا تَامًّا وَلَا يَكُونُ لَهُ نُورُ الْإِيمَان. هَذَا لفظ البُخَارِيّ

وفي رواية ابن عباس ولا يقتل حين يقتل وهو مومن قال عكرمة قلت لابن عباس كيف ينزع الايمان منه قال هكذا وشبك بين اصابعه ثم اخرجها فان تاب عاد اليه هكذا وشبك بين اصابعه وقال ابو عبد الله لا يكون هذا مومنا تاما ولا يكون له نور الايمان هذا لفظ البخاري

Chapter: Major Sins and the Signs of Hypocrisy - Section 1


The version of Ibn ‘Abbas contains “When one commits murder he is not a believer.” ‘Ikrima said that he asked Ibn 'Abbas how faith could be snatched away from him, and he replied “Thus (interlacing his fingers and then separating them), but if he repents, it will return to him thus,” and he interlaced his fingers. Aba ‘Abdallah said that such a one is not a perfect believer and does not possess the light of faith. This is Bukhari's wording.

ব্যাখ্যা: এ হাদীসের সারসংক্ষেপ এই যে, অন্তরে বিশ্বাস করা মৌখিক স্বীকৃতি প্রদান এবং বিশ্বাস ও স্বীকৃতি অনুপাতে কাজ করার নাম ঈমান। আর এ নূর অর্থ ঈমানের পূর্ণতা আর তা হলো সৎকাজ সম্পাদন করা এবং নিষিদ্ধ কাজ হতে বিরত থাকা। অতএব কোন ব্যক্তি যদি আদিষ্ট কাজে ত্রুটি করে অথবা ব্যভিচার, মদপান ও চুরির মতো গুনাহের কাজে জড়িয়ে পরে তখন তার নূর চলে যায় তার ঈমানের পূর্ণতা দূর হয়ে যায়। ফলে এমন ব্যক্তি পাপ-পঙ্কিলতার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ ও মুনাফিক্বীর নিদর্শন

৫৫-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুনাফিক্বের নিদর্শন তিনটি- (১) যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে; (২) যখন ওয়া’দা করে, তা ভঙ্গ করে এবং (৩) যখন তার নিকট কোন আমানাত রাখা হয়, তার খিয়ানত (বিশ্বাসঘাতকতা) করে। ইমাম মুসলিমের বর্ণনায় আরো আছে, চাই সে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করুক ও সিয়াম পালন করুক এবং দাবী করে সে মুসলিম।[1]

بَابُ الْكَبَائِرِ وَعَلَامَاتِ النِّفَاقِ- الفصل الأول

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ( «آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلَاثٌ» . زَادَ مُسْلِمٌ: «وَإِنْ صَامَ وَصَلَّى وَزَعَمَ أَنَّهُ مُسْلِمٌ» . ثُمَّ اتَّفَقَا: «إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ وَإِذَا اؤتمن خَان»

وعن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اية المنافق ثلاث زاد مسلم وان صام وصلى وزعم انه مسلم ثم اتفقا اذا حدث كذب واذا وعد اخلف واذا اوتمن خان

Chapter: Major Sins and the Signs of Hypocrisy - Section 1


Abu Huraira reported God's messenger as saying, “There are three signs of a hypocrite.” Muslim added, “Even if he fasts, prays, and asserts that he is a Muslim.” Thereafter both Bukhari and Muslim said, “When he speaks he lies, when he makes a promise he breaks it, and when he is trusted he betrays his trust.”

ব্যাখ্যা: নিফাক্বের শাব্দিক অর্থ হলো আভ্যন্তরীণ বিষয় বাহ্যিক বিষয়ের বিপরীত হওয়া। এ বৈপরীত্য যদি বিশ্বাসের ক্ষেত্রে হয় তবে তা নিফাকুল কুফর। একে বড় নিফাক্ব বা মুনাফিক্বী বলা হয়। আর এ নিফাক্ব যদি বিশ্বাসের ক্ষেত্রে না হয় তবে তা নিফাকুল ‘আমল। আর তা কোন কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রেও হতে পারে। আবার কাজ না করার ক্ষেত্রেও হতে পারে। আর এ ধরনের নিফাক্বকে ছোট মুনাফিক্বী বলা হয়। আর তা হলো বাহ্যিকভাবে কোন কাজ সুন্দরভাবে সম্পাদন করা, কিন্তু দীনের আভ্যন্তরীণ বিষয়কে সংরক্ষণ না করা। যদিও এ ধরনের লোকেরা মুসলিমদের ন্যায় সালাত (সালাত/নামায/নামাজ), সওম ও অন্যান্য ‘ইবাদাতমূলক কাজ সম্পাদন করে তবুও তারা মুনাফিক্ব। এ হাদীসে বিশেষভাবে তিনটি অভ্যাসকে মুনাফিক্বের নিদর্শনরূপে উল্লেখ করার কারণ এই যে, এ তিনটি অভ্যাস নিফাক্বের ভিত্তি। কেননা মিথ্যা হলো বাস্তবের বিপরীত সংবাদ দেয়া।

আর আমানাতের হক হলো তা তার মালিকের নিকট ফেরত দেয়া। আর আমানাত হলো খিয়ানাতের বিপরীত। আর ওয়া‘দা ভঙ্গ করা অর্থ ওয়া‘দার বিপরীত কাজ করা। আর এ বৈপরীত্যই নিফাক্বের মূল। যার মধ্যে এগুলোর সমাবেশ ঘটবে এবং তা অভ্যাসে পরিণত করে নিবে এবং তা অব্যাহত রাখবে, ফলে তার ব্যক্তি সত্তার মধ্যে এগুলো দৃঢ় হয়ে যাবে। যার অবস্থা এমন হয়ে যাবে যে তার মধ্যে সত্য প্রবেশের কোন রাস্তা থাকবে না এবং আমানাতের উপযোগী থাকবে না। যার অবস্থা এরূপ হবে তাকে মুনাফিক্বরূপে নামকরণ করাই বেশী উপযোগী। আর মু’মিনের মধ্যে এ রকম কোন অভ্যাস পাওয়া গেলেও তা ক্ষণিকের জন্য। যদিও সে কিছু সময় এ কাজে লিপ্ত থাকে পরক্ষণেই তা আবার ত্যাগ করে। কোন একটি অভ্যাস তার মধ্যে পাওয়া গেলে অন্যটি অনুপস্থিত থাকে। এসবগুলো একত্রে এবং স্থায়ীভাবে কেবলমাত্র মুনাফিক্বের মধ্যেই পাওয়া সম্ভব।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ ও মুনাফিক্বীর নিদর্শন

৫৬-[৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ চারটি স্বভাব যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে খাঁটি মুনাফিক্ব এবং যার মধ্যে তার একটি দেখা যাবে তার মধ্যে মুনাফিক্বের একটি স্বভাব থাকবে, যে পর্যন্ত না সে তা পরিহার করবে- (১) যখন তার নিকট কোন আমানত রাখা হয় সে তা খিয়ানত করে, (২) যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে, (৩) যখন ওয়াদা করে, ভঙ্গ করে এবং (৪) যখন কারো সাথে ঝগড়া-বিবাদ করে, তখন সে অশ্লীলভাষী হয়। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْكَبَائِرِ وَعَلَامَاتِ النِّفَاقِ- الفصل الأول

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا وَمَنْ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنَ النِّفَاقِ حَتَّى يَدَعَهَا إِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ وَإِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ وَإِذا خَاصم فجر»

وعن عبد الله بن عمرو ان النبي صلى الله عليه وسلم قال اربع من كن فيه كان منافقا خالصا ومن كانت فيه خصلة منهن كانت فيه خصلة من النفاق حتى يدعها اذا اوتمن خان واذا حدث كذب واذا عاهد غدر واذا خاصم فجر

Chapter: Major Sins and the Signs of Hypocrisy - Section 1


‘Abdallah b. ‘Amr reported God's messenger as saying, “Four characteristics constitute anyone who possesses them a sheer hypocrite, and anyone who possesses one of them possesses a characteristic of hypocrisy till he abandons it:

when he is trusted he betrays his trust, when he talks he lies, when he makes a covenant he acts treacherously, and when he quarrels he deviates from the truth.”

(Bukhari and Muslim.)

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে বর্ণিত চারটি অভ্যাস যার মধ্যে আছে সে খাঁটি মুনাফিক্ব। অর্থাৎ- এ চারটি অভ্যাসের ব্যাপারে সে খাঁটি মুনাফিক্ব। অন্যান্য বিষয়ে নয়। অথবা এর দ্বারা মুনাফিক্বদের সাথে এরূপ ব্যক্তির সাদৃশ্য আধিক্য বুঝানো হয়েছে অথবা যার মধ্যে এ অভ্যাসগুলো স্থায়ীভাবে গেড়ে বসেছে সে খাঁটি মুনাফিক্ব। প্রশ্ন হতে পারে যে পূর্বের হাদীসে মুনাফিক্বের আলামত ৩টি অভ্যাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। এ হাদীসে কিভাবে চারটি অভ্যাসের কথা বলা হলো? এর জওয়াব এই যে মুসলিমের বর্ণনাটি যেভাবে এসেছে তা দ্বারা সীমাবদ্ধতা বুঝায় না। তাতে হাদীসের শব্দ এরূপ مِنْ عَلَامَةِ الْمُنَافِقٍ ثَلَاثٌ মুনাফিক্বের নিদর্শনের মধ্যে তিনটি নিদর্শন। এতে বুঝা যায় যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সময় কিছু নিদর্শনের কথা আলোচনা করেছেন। আবার অন্য সময় অন্য কিছু নিদর্শনের কথা আলোচনা করেছেন। অথবা বলা যায় যে, নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করার অর্থ এ নয় যে, এর সংখ্যা এর চাইতে বেশী হবে না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ ও মুনাফিক্বীর নিদর্শন

৫৭-[৯] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুনাফিক্বের দৃষ্টান্ত সে বকরীর ন্যায়, যে দুই ছাগপালের মধ্যে থেকে (নরের খোঁজে) একবার এ পালে ঝুঁকে আর একবার ঐ পালের দিকে দৌড়ায়। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْكَبَائِرِ وَعَلَامَاتِ النِّفَاقِ- الفصل الأول

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مثل الْمُنَافِق كَمثل الشَّاة الْعَائِرَةِ بَيْنَ الْغُنْمَيْنِ تَعِيرُ إِلَى هَذِهِ مَرَّةً وَإِلَى هَذِه مرّة» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابن عمر عن النبي صلى الله عليه وسلم قال مثل المنافق كمثل الشاة العاىرة بين الغنمين تعير الى هذه مرة والى هذه مرة رواه مسلم

Chapter: Major Sins and the Signs of Hypocrisy - Section 1


Ibn ‘Umar reported God's messenger as saying, “The hypocrite is like a ewe which goes to and fro between two flocks, turning at one time to the one and at another time to the other.”

Muslim transmitted it.

ব্যাখ্যা: (الْعَائِرَةِ) এমন ছাগলকে বলা হয় যে পাঁঠা চায় ফলে তা দু’টি পালের মাঝে দৌড়াদৌড়ি করে। কোন একটি দলের সাথে স্থায়ীভাবে থাকে না। তদ্রূপ মুনাফিক্ব বাহ্যিকরূপে মু’মিনের সঙ্গী অথচ তার অন্তর মুশরিকের সাথে। সে এমনটি করে তার প্রবৃত্তির তাড়নায় ও অসৎ উদ্দেশে এবং তার প্রবৃত্তি যা চায় তার দিকে ঝুঁকে পড়ার কারণে। ফলে সে দুই পাল ছাগলের মাঝে যাতায়াতকারী ছাগলের মতই।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৯ পর্যন্ত, সর্বমোট ৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে