সহীহ হাদীছ দ্বারা আল্লাহ তাআলার জন্য সাব্যস্ত গুণাবলীতে বিশ্বাস করা আবশ্যক

সহীহ হাদীছ দ্বারা আল্লাহ তাআলার জন্য সাব্যস্ত গুণাবলীতে বিশ্বাস করা আবশ্যক:

অতঃপর শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেন,

وَمَا وَصَفَ الرَّسُولُ بِهِ رَبَّهُ عَزَّ وَجَلَّ مِنَ الأَحَادِيثِ الصِّحَاحِ الَّتِي تَلَقَّاهَا أَهْلُ الْمَعْرِفَةِ بِالْقَبُولِ؛ وَجَبَ الإيمَانُ بِهَا كَذَلِك

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সহীহ হাদীছসমূহে তাঁর প্রভুকে যেই সুউচ্চ গুণাবলীতে বিশেষিত করেছেন এবং হাদীছ সম্পর্কে পারদর্শী আলেমগণ যেসব হাদীছ কবুল করে নিয়েছেন, সেই হাদীছগুলোর প্রতি ঈমান আনয়ন করা এবং তাতে আল্লাহ তাআলার যেসব অতি সুন্দর নাম ও সু্উচ্চ গুণাবলী রয়েছে তা বিশ্বাস করা আবশ্যক।


ব্যাখ্যা: وما وصف به থেকে শুরু করে بالقبول পর্যন্ত সবগুলো শব্দ মিলে মুবতাদা হয়েছে। আরوجب الإيمان بها كذالك হচ্ছে তার খবর। অর্থাৎ কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা নিজেকে যেসব গুণে গুণান্বিত করেছেন, তার প্রতি ঈমান আনয়ন করা যেমন জরুরী, তেমনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সহীহ হাদীছে আল্লাহ তাআলার যেসব গুণাবলী বর্ণনা করেছেন, তার প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে বলেনঃ ﴿وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى إِنْ هُوَ إِلا وَحْيٌ يُوحَى﴾ ‘‘এবং তিনি প্রবৃত্তির তাড়নায় কোন কথা বলেন না। তা অহী ছাড়া অন্য কিছু নয়, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ হয়। (সূরা নাজমঃ ৩-৪) সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতও আল্লাহর পক্ষ হতে অহী স্বরূপ। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

﴿وَأَنزَلَ اللَّهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُن تَعْلَمُ ۚ وَكَانَ فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا﴾

‘‘আল্লাহ তোমার উপর কিতাব ও হিকমত নাযিল করেছেন, এমনসব বিষয় তোমাকে শিখিয়েছেন যা তোমার জানা ছিলনা এবং তোমার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ অনেক বেশী’’। (সূরা নিসাঃ ১১৩) এখানে কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে কুরআনুল কারীম আর হিকমত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সুন্নাত। সুতরাং সুন্নাতে যা বর্ণিত হয়েছে, তাতে বিশ্বাস করা আবশ্যক। বিশেষ করে আকীদাহ সম্পর্কিত বিষয়ে যা বর্ণিত হয়েছে তার প্রতি ঈমান আনয়ন করা ওয়াজিব। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

﴿وَمَاَآتاَكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا﴾

‘‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেন, তা থেকে তোমরা বিরত থাকো’’। (সূরা হাশরঃ ৭)

সুতরাং হাদীছ গ্রহণ করার শর্ত হচ্ছে, তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহীহ সূত্রে প্রমাণিত হওয়া চাই। এই জন্যই ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেছেনঃ من الأحاديث الصحاح। الصحاح শব্দটি صحيح -এর বহুবচন। পরিভাষায়والحديث الصحيح هو ما نقله راو عدل تام الضبط عن مثله من غير شذوذ ولا علة সহীহ ঐ হাদীছকে বলা হয়, যা বর্ণনা করেছেন পূর্ণ স্মরণ শক্তি সম্পন্ন ন্যায় পরায়ন বর্ণনাকারী তাঁর অনুরূপ আরেকজন বর্ণনাকারী থেকে। সেই সাথে বর্ণনাটি যেন شاذ (বিরল) এবং معلول (ত্রুটিযুক্ত) না হয়। কাজেই হাদীছ সহীহ হওয়ার জন্য পাঁচটি শর্ত রয়েছে। (১) বর্ণনাকারীদের আদালত তথা ন্যায় পরায়নতা, (২) তাদের স্মরণ শক্তি, (৩) হাদীছের সনদ মুত্তাসিল হওয়া, (৪) হাদীছের সনদ সকল ইল্লত তথা দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত হওয়া এবং (৫) হাদীছটি শায (অন্যান্য সহীহ হাদীছের বিপরীত) না হওয়া। [1]تَلَقَّاهَا أَهْلُ الْمَعْرِفَةِ بِالْقَبُولِ হাদীছ সম্পর্কে পারদর্শী আলেমগণ যেসব হাদীছ কবুল করে নিয়েছেনঃ অর্থাৎ যেই হাদীছকে মুহাদ্দিছগণ গ্রহণ করেছেন এবং যার উপর আমল করেছেন, তাকে সহীহ হাদীছ বলে। মুহাদ্দিছগণ ব্যতীত অন্যদের কথা হাদীছের ক্ষেত্রে অগ্রহণযোগ্য। অতঃপর শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) সুন্নাতে বর্ণিত আল্লাহ তাআলার অনেক সিফাতের উদাহরণ পেশ করেছেন।

[1] - কোনো নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর এমন বর্ণনাকে শায বলা হয়, যা তার চেয়ে অধিক নির্ভরযোগ্য অথবা অধিক সংখ্যক নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর বর্ণনার বিপরীত। এ ক্ষেত্রে অধিক নির্ভরযোগ্য রাবীর বর্ণনাটিই গ্রহণযোগ্য হবে এবং তার উপর আমল করা হবে।
১- আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য শোভনীয় পদ্ধতিতে দুনিয়ার আসমানে তাঁর নেমে আসা সুসাব্যস্ত

১- ثبوت النزول الإلهي إلى سماء الدنيا على ما يليق بجلال الله

১- আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য শোভনীয় পদ্ধতিতে দুনিয়ার আসমানে তাঁর নেমে আসা সুসাব্যস্ত:

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেন,

من ذلك مثل قوله صلى الله عليه وسلم يَنزل رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ يَقُولُ مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَه متفق عليه

‘‘হাদীছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার যেসব গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: আমাদের মহান প্রভু আল্লাহ তাআলা রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেনঃ কোন দু’আকারী আছে কি? আমি তার দু’আ কবুল করবো। কোন সাহায্য প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে দান করবো। কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করবো’’।[1]


ব্যাখ্যাঃ আমাদের রব নেমে আসেনঃ যেভাবে নেমে আসা আল্লাহর বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য শোভা পায়, তিনি সেভাবেই নেমে আসেন। আমরা তাতে বিশ্বাস করি। আল্লাহর নেমে আসাকে সৃষ্টির নেমে আসার সাথে তুলনা করিনা। সূরা শুরার ১১ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ﴾ ﴿‘‘তাঁর সদৃশ কোন কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’’।

سماء الدنيا দুনিয়ার আসমানঃ এখানে মাউসুফকে সিফাতের দিকে সম্বন্ধিত করা হয়েছে। অর্থাৎ মূল বাক্যটি এ রকম ছিল, السماء الدنيا অর্থাৎ দুনিয়ার নিকটতম আসমান।

حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেনঃ ثلث শব্দের বিশেষণ হিসাবে الآخرُ শব্দের শেষ বর্ণে পেশ দিয়ে পড়তে হবে। এতে বুঝা যাচ্ছে যে, নুযুলে ইলাহী তথা দুনিয়ার আসমানে আল্লাহ তাআলার নেমে আসার সময় নির্ধারিত রয়েছে।

فَأَسْتَجِيبَ لَهُ আমি তার দু’আ কবুল করবোঃ প্রশ্নবোধক বাক্যের জবাব হিসাবে فأستجيب ফেলে মুযারেটি মানসুব হয়েছে। এমনি فأعطيه এবং فأغفرله ফেল দু’টিও একই কারণে মানসুব হয়েছে। فاستجيب له অর্থ হচ্ছে, আমি তার দু’আ কবুল করবো বা তার ডাকে সাড়া দেবো।

হাদীছ থেকে আল্লাহ তাআলার নেমে আসার দলীল পাওয়া যায়। নামা বা অবতরণ করা আল্লাহ তাআলার কর্মসমূহের অন্যতম। একই সাথে হাদীছ দ্বারা আল্লাহ তাআলা উপরে থাকা সাব্যস্ত হলো। কেননা নেমে আসা উপর থেকেই হয়। হাদীছে ঐসব লোকদের প্রতিবাদ করা হয়েছে, যারা আল্লাহর নেমে আসাকে তাঁর রহমত বা আদেশ আগমণ করার দ্বারা ব্যাখ্যা করে। এই ব্যাখ্যা সঠিক নয়। কারণ আসল হচ্ছে শব্দের প্রকৃত অর্থ গ্রহণ করা এবং প্রকৃত অর্থ বাদ না দেয়া। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেনঃ من يدعوني فأستجيب له কে আমার কাছে দুআ করবে, আমি তার দু’আ কবুল করবো। এখান থেকে কি এই কথা বুঝা যায়, আল্লাহর রহমত বা তাঁর আদেশ এইভাবে শেষ রাতে ডাকাডাকি করে এবং কথা বলে?এই হাদীছ থেকে আল্লাহর কালামও সাব্যস্ত হয়। কেননা এতে রয়েছে فيقول ০০০الخ অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা বলেন। এখানে দান করা, দুআ কবুল করা এবং ক্ষমা করা সিফাতও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার জন্য সাব্যস্ত করা হয়েছে। এগুলো আল্লাহ তাআলার সিফাতে ফেলীয়ার অন্তর্ভূক্ত। যেই হাদীছ ইমাম বুখারী ও মুসলিম উভয়েই বর্ণনা করেছেন, উহাকে মুত্তাফাকুন আলাইহি বলে।

[1] - বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুদ্ দাওয়াত।
২- এই কথা সাব্যস্ত করা যে, আল্লাহ তাআলা খুশী হন ও হাসেন

২- إثبات أن الله يفرح ويضحك

২- এই কথা সাব্যস্ত করা যে, আল্লাহ তাআলা খুশী হন ও হাসেন

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لَلَّهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ حِينَ يَتُوبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ برَاحِلَتِهِ بِأَرْضِ فَلَاةٍ فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ فَأَيِسَ مِنْهَا فَأَتَى شَجَرَةً فَاضْطَجَعَ فِي ظِلِّهَا قَدْ أَيِسَ مِنْ رَاحِلَتِهِ فَبَيْنَا هُوَ كَذَلِكَ إِذَا هُوَ بِهَا قَائِمَةً عِنْدَهُ فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ اللَّهُمَّ أَنْتَ عَبْدِي وَأَنَا رَبُّكَ أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ

‘‘বান্দা যখন আল্লাহর কাছে তাওবা করে, তখন তিনি তোমাদের ঐ ব্যক্তির চেয়েও অধিক খুশী হন, যে তার বাহনে আরোহন করে সফরে বের হল। বাহনের উপরেই ছিল তার খাদ্য-পানীয় ও সফর সামগ্রী। মরুভূমির উপর দিয়ে সফর করার সময় বিশ্রামার্থে সে একটি বৃক্ষের নীচে থামলো। অতঃপর মাটিতে মাথা রেখে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে দেখল তার বাহন কোথায় যেন চলে গেছে। সে নিরাশ হয়ে একটি গাছের নীচে এসে আবার শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর সে দেখতে পেলো, তার হারানো বাহনটি সমুদয় খাদ্য-পানীয়সহ মাথার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। বাহনটির লাগাম ধরে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে উঠলো, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা, আমি তোমার প্রভু। অতি আনন্দের কারণেই সে এত বড় ভুল করে ফেলেছে।[1]


ব্যাখ্যা: الله শব্দের মধ্যে প্রথমে যেই লাম অক্ষরটি প্রবেশ করেছে, তাকে লামে ইবতেদা বলা হয়। আর أشد فرحا এর মধ্যে فرحا শব্দটি তামীয হিসাবে মানসুব হয়েছে। الفرح শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে আনন্দিত ও খুশী হওয়া এবং অন্তরের মধ্যে ফুর্তি অনুভব হওয়া। পাপাচার ছেড়ে দিয়ে আনুগত্যের দিকে ফিরে আসাকে তাওবা বলা হয়।

برَاحِلَتِهِ তার বাহনেঃ الراحلة বলা হয় ঐ উটনীকে, যা বোঝা বহন করার বয়সে উপনীত হয়েছে।

الحديثঃ ফেলে মুকাদ্দারের কারণে الحديث শব্দটি মানসুব হয়েছে। উহ্য বাক্যটি হচ্ছে أكمل الحديث হাদীছটি পূর্ণরূপে পড়ুন। কেননা শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) হাদীছ থেকে শুধু দলীল গ্রহণের স্থানটুকু উল্লেখ করেছেন। (আর আমি পূর্ণ হাদীছটিই উল্লেখ করেছি)।

এই হাদীছ থেকে আল্লাহর আনন্দিত হওয়া ও খুশী হওয়া প্রমাণিত হলো। তাঁর বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য যেভাবে খুশী হওয়া শোভনীয়, তিনি সেভাবেই খুশী হন। এটিও আল্লাহর সিফাতে কামালিয়ার অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহর খুশী হওয়া কোন মাখলুকের খুশী হওয়ার মত নয়। এটি তাঁর অন্যান্য সিফাতের মতই। আল্লাহর খুশী হওয়া তাঁর অনুগ্রহ ও দয়ার খুশী। আল্লাহ তাআলা বান্দার তাওবার কারণে এমন খুশী হন না যে, তাওবার প্রতি তাঁর প্রয়োজন ছিল এবং বান্দার তাওবার মাধ্যমে তিনি উপকৃত হবেন। কেননা আনুগত্যকারীর আনুগত্য আল্লাহর কোন উপকার করেনা এবং পাপাচারীর পাপাচারও আল্লাহর কোন ক্ষতি করেনা।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,

يَضْحَكُ اللَّهُ إِلَى رَجُلَيْنِ يَقْتُلُ أَحَدُهُمَا الْآخَرَ يَدْخُلَانِ الْجَنَّةَ

‘‘আল্লাহ তাআলা এমন দু’জন লোকের প্রতি হাসেন, যাদের একজন অন্যজনকে হত্যা করে। অতঃপর তারা উভয়েই জান্নাতে প্রবেশ করে।[2]


ব্যাখ্যা: হাদীছের শেষাংশে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কারণ উল্লেখ করেছেন।

«يُقَاتِلُ هَذَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ عز وجل فَيُستشهد ثُمَّ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَى الْقَاتِلِ فيسلم فيقاتل في سبيل الله عز وجل فَيُسْتَشْهَدُ»

‘‘মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করতে গিয়ে অন্য কাফেরের হাতে শহীদ হয়। অতঃপর আল্লাহ তাআলা হত্যাকারীর প্রতি অনুগ্রহ করেন। ফলে সে তাওবা করে এবং ইসলাম কবুল করে নেয়। পরবর্তীতে সেও আল্লাহর পথে জেহাদ করতে গিয়ে শহীদ হয়। এতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার পূর্ণ অনুগ্রহ এবং সীমাহীন রহমতের প্রমাণ মিলে। কেননা মুসলিমগণ আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করে। কখনো এমন হয় যে, কাফেরদের কেউ তাদের কাউকে হত্যা করে ফেলে। এতে আল্লাহ তাআলা নিহত মুসলিমকে শাহাদাতের মাধ্যমে সম্মানিত করেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা সেই হত্যাকারী কাফেরের উপরও অুনগ্রহ করেন এবং তাকে ইসলামের পথ দেখান। ফলে সেও জেহাদে গিয়ে শহীদ হয়। পরিণামে সকলেই জান্নাতে প্রবেশ করে।

এটি আসলেই আশ্চর্যের বিষয়। হাসি সাধারণত ঐসব বিস্ময়কর বিষয় থেকেই হয়ে থাকে, যা সাধারণত খুব কমই সংঘটিত হয়। উপরের হাদীছের মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম যে, আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার জন্য হাসা বিশেষণ সাব্যস্ত। হাসি তাঁর সিফাতে ফেলিয়ার মধ্যে শামিল। আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য যেভাবে হাসা শোভনীয়, আমরা তাঁর জন্য সেভাবেই হাসি সাব্যস্ত করি। তাঁর হাসি মানুষের হাসার মত নয়।[3]

[1] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওবা।

[2] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জিহাদ।

[3] - আমরা বিশ্বাস করি, আল্লাহ তাআলা তাওবাকারীর প্রতি খুশী হন এবং আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করতে গিয়ে নিহত ব্যক্তি এবং হত্যাকারীর ক্রিয়া-কর্ম দেখে হাসেন। তবে আমাদেরকে এ কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, খুশী হওয়া এবং হাসা আল্লাহর গুণাবলীর অন্যতম একটি গুণ। আমরা এতে কোন প্রশ্ন উত্থাপন ব্যতীতই বিশ্বাস করি। আল্লাহর শানে যেমন হাসা মুনাসেব (শোভনীয়) হয় তিনি সেভাবেই হাসেন। তাঁর হাসা কোন মাখলুকের হাসার মত নয়।
৩- আল্লাহ তাআলা আশ্চর্যান্বিত হন এবং হাসেন

৩- إثبات أن الله يعجب ويضحك

৩- আল্লাহ তাআলা আশ্চর্যান্বিত হন এবং হাসেন:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«عَجِبَ رَبُّنَا مِنْ قُنُوطِ عِبَادِهِ وَقُرْبِ غِيَرِهِ يَنْظُرُ إِلَيْكُمْ آزِلِينَ قَنِطِينَ فَيَظَلُّ يَضْحَكُ يَعْلَمُ أَنَّ فَرَجَكُمْ قَرِيبٌ»

‘‘আমাদের রব তাঁর বান্দাদের নিরাশ হওয়াতে এবং তিনি যে তাদের অবস্থা অচিরেই পরিবর্তন করে দিবেন তাতে আশ্চর্যবোধ করেন। তোমরা অনাবৃষ্টি, দুর্ভিক্ষ, সংকীর্ণতা এবং আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ থাকা অবস্থায় আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে দেখেন। এ অবস্থায় তিনি হাসতে থাকেন। তিনি জানেন যে, তোমাদের বিপদ মুক্তি, আরাম-আয়েশ ও সুখ-শান্তির সময় অতি নিকটে। এ হাদীছটি হাসান।


ব্যাখ্যা: عَجِبَ رَبُّنَا আমাদের রব আশ্চর্যবোধ করেনঃ অভিধানগ্রন্থ ‘আলমিসবাহ’ নামক কিতাবে রয়েছে, তাজ্জব দুই প্রকার বিষয় ও বস্ত্ত থেকে হতে পারে। (১) এমন বিষয় ও বস্ত্ত থেকে আশ্চর্যবোধ হয়, যাতে আশ্চর্যবোধকারী ঐ বস্ত্ত বা বিষয়ের প্রশংসা করে। এই প্রকার আশ্চর্যবোধের মধ্যে আশ্চর্যবোধকারী বিষয়টিকে সুন্দর ও ভাল মনে করে এবং তার প্রতি নিজের সন্তুষ্টির কথা জানায়। (২) এমন বিষয় হতে আশ্চর্যবোধ করা হয়, যাকে আশ্চর্যবোধকারী অপছন্দ করে। এই প্রকার আশ্চর্যবোধের মধ্যে আশ্চর্যবোধকারী কোন বিষয়ের প্রতিবাদ করে এবং উহার নিন্দা করে।

مِنْ قُنُوطِ عِبَادِهِ তাঁর বান্দাদের নিরাশ হওয়া থেকেঃ কোন জিনিষ হতে একেবারে নিরাশ হয়ে যাওয়াকে قنوط বলা হয়। তবে এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে বৃষ্টি বর্ষণ হওয়া এবং অনাবৃষ্টির অপকারিতা বিদূরিত হওয়া থেকে নিরাশ হওয়া।

وَقُرْبِ غِيَرِهِ অচিরেই অবস্থার পরিবর্তন হওয়াঃ غيره শব্দের গাইন বর্ণে যের দিয়ে এবং ইয়া বর্ণে যবর দিয়ে পড়তে হবে। অর্থাৎ কঠিন অবস্থাকে ভাল অবস্থার মাধ্যমে পরিবর্তন করা।

يَنْظُرُ إِلَيْكُمْ آزِلِينَ তোমরা অনাবৃষ্টি, দুর্ভিক্ষ, সংকীর্ণতা এবং আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ থাকা অবস্থায় আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে দেখেনঃ الأزل থেকে آزلين শব্দটি গঠন করা হয়েছে। الأزل -এর যা বর্ণে সাকীন দিয়ে পড়তে হবে। এর অর্থ হচ্ছে সংকীর্ণতা ও নিরাশায় নিপতিত হওয়া। বলা হয়ে থাকে أزل يأزل أزلا অর্থাৎ অনাবৃষ্টি, দুর্ভিক্ষ এবং অভাব-অনটনে নিপতিত হয়েছে।

فَيَظَلُّ يَضْحَكُ তিনি হাসতে থাকেনঃ এটি আল্লাহ তাআলার ঐ সমস্ত সিফাতে ফেলিয়াসমূহের (কর্মগত বিশেষণসমূহের) মধ্যে গণ্য, যা মাখলুকের কোন সিফাতের মত নয়। সুতরাং এই হাদীছে আল্লাহ তাআলার কর্ম সম্পর্কিত সিফাতসমূহ থেকে দু’টি সিফাত সাব্যস্ত করা হয়েছে। সিফাত দু’টি হচ্ছে আশ্চর্যান্বিত হওয়া এবং হাসা। আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য শোভনীয় পদ্ধতিতেই এই দু’টি সিফাত তাঁর জন্য সাব্যস্ত করতে হবে। আল্লাহর আশ্চর্যান্বিত হওয়া এবং হাসা মাখলুকের আশ্চর্যবোধ করা ও হাসার মত নয়। হাদীছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার জন্য নযর তথা দৃষ্টিও সাব্যস্ত করা হয়েছে। এটিও আল্লাহর কর্মগত সিফাতের অন্তর্ভূক্ত। তিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি দৃষ্টি দেন। আসমান ও যমীনের কোন কিছুই আল্লাহ তাআলার নিকট গোপন নয়।

৪- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার জন্য ‘পা’ সাব্যস্ত করা

৪- إثبات الرجل والقدم لله سبحانه

৪- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার জন্য ‘পা’ সাব্যস্ত করা:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لَا تَزَالُ جَهَنَّمُ يلقى فيها وهي تَقُولُ هَلْ مِنْ مَزِيدٍ حَتَّى يَضَعَ رَبُّ الْعِزَّةِ فِيهَا رجله وفي رواية قَدَمَه فينزوي بعضها إلى بعض فَتَقُولُ قَطْ قَطْ متفق عليه

‘‘জাহান্নামে অপরাধীদেরকে নিক্ষেপ করা হতেই থাকবে। জাহান্নাম বলবেঃ আরো আছে কি? তখন মহান রাববুল আলামীন জাহান্নামে নিজের ‘পা’ রাখবেন। অন্য বর্ণনায় رجله -এর স্থলে قدمه এসেছে। এতে জাহান্নাম সংকোচিত হয়ে যাবে এবং বলবেঃ ‘যথেষ্ট হয়েছে’ ‘যথেষ্ট হয়েছে’।[1]


ব্যাখ্যা: পরকালে আল্লাহ তাআলা কাফের ও গুনাহগারদেরকে যেই আগুনের শাস্তি দিবেন, সেই শাস্তির অন্যতম নাম হচ্ছে জাহান্নাম। কেউ কেউ বলেছেন জাহান্নামের গভীরতার কারণেই এই নামে নামকরণ করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন জাহান্নাম যেহেতু খুব অন্ধকারাচ্ছন্ন, তাই একে জাহান্নাম হিসাবে নামকরণ করা হয়েছে। কারণ জাহান্নাম শব্দটি الجهومة থেকে গৃহীত হয়েছে। জুহুমাহ শব্দের অর্থ অন্ধকার।

يلقى فيها জাহান্নামে অপরাধীদেরকে নিক্ষেপ করা হতেই থাকবেঃ অর্থাৎ কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হতেই থাকবে। ঐদিকে জাহান্নাম বলবেঃ আরো আছে কি? অর্থাৎ জাহান্নাম আরো বেশী চাইতে থাকবে। কেননা জাহান্নাম অনেক প্রশস্ত। আল্লাহ তাআলা জাহান্নামকে ভর্তি করার ওয়াদা করেছেন।

حَتَّى يَضَعَ رَبُّ الْعِزَّةِ فِيهَا رجله তখন মহান রাববুল আলামীন তাতে নিজের ‘পা’ রাখবেনঃ জাহান্নাম যেহেতু অত্যন্ত বড় এবং উহা যেহেতু খুব প্রশস্ত আর আল্লাহ তাআলা জাহান্নামকে পূর্ণ করার ওয়াদা করেছেন, ঐ দিকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার রহমতের দাবী হচ্ছে, তিনি কাউকে বিনা অপরাধে শাস্তি দিবেন না, তাই তিনি ওয়াদা পূর্ণ করতে গিয়ে জাহান্নামে স্বীয় ‘পা’ রাখবেন।

فينزوي بعضها إلى بعض এতে জাহান্নাম সংকোচিত হয়ে যাবেঃ অর্থাৎ জাহান্নামের এক অংশ অন্য অংশের সাথে মিলে যাবে এবং এর উভয় পার্শ্ব পরস্পর মিশে যাবে। ফলে এর মধ্যে তখন যত বাসিন্দা থাকবে, তাদের ছাড়া আর কোন লোক প্রবেশ করার জায়গা খালী থাকবেনা।

فَتَقُولُ قَطْ قَطْ জাহান্নাম বলবেঃ ‘যথেষ্ট হয়েছে’ ‘যথেষ্ট হয়েছে’ঃ অর্থাৎ জাহান্নাম বলবে আমার জন্য এই পরিমাণই যথেষ্ট।

অত্র হাদীছের মাধ্যমে আল্লাহর ‘পা’ সাব্যস্ত হলো। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য যেমন ‘পা’ শোভনীয়, তাঁর ‘পা’ ঠিক সেরকমই। আল্লাহ তাআলার হাত এবং চেহারার মতই পা তাঁর সিফাতে যাতীয়া তথা সত্তাগত বিশেষণ।

এই হাদীছের ব্যাখ্যায় মুআত্তিলা (আল্লাহর সিফাত অস্বীকারকারী) সম্প্রদায় মারাত্মক ভুল করেছে। তারা বলেছে, قدمه (আল্লাহর ‘পা’) বলতে বিশেষ এক প্রকার সৃষ্টি উদ্দেশ্য। তারা আরো বলেছে, হাদীছের অপর বর্ণনায় যেখানে قدمه এর স্থলে رجله এসেছে। তাই ‘পা’ বলতে একদল মানুষ (কাফের) উদ্দেশ্য। যেমন বলা হয়ে থাকে رجل جراد (পঙ্গপালের একটি দল)।এই ব্যাখ্যার প্রতিবাদে বলা হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, حتى يضع ০০০الخ আল্লাহ তাআলা জাহান্নামে ‘পা’ রাখবেন। তিনি এই কথা বলেন নি যে, حتى يلقي فيها তিনি উহাতে নিক্ষেপ করবেন। যেমন হাদীছের প্রথম অংশে বলেছেন, জাহান্নামে উহার বাসিন্দাদেরকে নিক্ষেপ করা হতেই থাকবে। সেই সাথে আরো বলা হয়েছে যে, رجل শব্দকে জামাআত বা দল দ্বারা ব্যাখ্যা করা গেলেও قدم শব্দকে প্রকৃত কিংবা রূপকার্থে জামাআত বা দল দ্বারা ব্যাখ্যা করার কোন সুযোগ নেই।[2]

[1] - বুখারী, অধ্যায়: আইমান ওয়ান্ নুযুর।

[2] - এখন কেউ যদি প্রশ্ন করে, আল্লাহ তাআলা যখন জাহান্নামে ‘পা’ রাখবেন, তখন কি জাহান্নামের আগুনে আল্লাহর ‘পা’ পুড়ে যাবেনা? এর জবাবে বলা যেতে পারে, আল্লাহ তাআলার শান, বড়ত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে অজ্ঞ লোকের মনেই কেবল এই ধরণের প্রশ্ন জাগতে পারে। কারণ আল্লাহ তাআলা সবকিছুর স্রষ্টা এবং সকল বস্ত্তর ক্রিয়া ও গতি-প্রকৃতির নিয়ন্ত্রক। সকল সৃষ্টিই আল্লাহর অনুগত। আগুনও তাঁর অনুগত। আগুন তার নিজস্ব ইচ্ছা ও ক্ষমতায় জ্বলেনা এবং অন্যকেও জ্বালায়না। মানুষ যখন আগুন জ্বালায় তখন আগুণ জ্বলবে কি জ্বলবেনা, তা আল্লাহর কাছে অনুমতি সাপেক্ষ ব্যাপার। আল্লাহর অবগতি ও অনুমতিতেই আগুন জ্বলে। ইবরাহীম (আঃ)কে যখন নমরুদের বাহিনী আগুনে নিক্ষেপ করলো, তখন আল্লাহ তাআলা বললেনঃ হে আগুন! তুমি ইবরাহীমের উপর শান্তিময় ঠান্ডা হয়ে যাও। তাই সমস্ত কাঠ পুড়ে ছাই হলো এবং ইবরাহীমকে যেই রশি দিয়ে বেঁধে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, সেই রশি পুড়ল, কিন্তু ইবরাহীম (আঃ)এর একটি পশমও পুড়লনা। সুতরাং আগুন আল্লাহর ‘পা’ জ্বালিয়ে ফেলবে, এই ধারণা অবাস্তব।
৫- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার আহবান, আওয়াজ এবং কালাম রয়েছে

৫- إثبات النداء والصوت والكلام لله تعالى

৫- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার আহবান, আওয়াজ এবং কালাম রয়েছে:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«يَقُولُ تَعَالَى يَا آدَمُ! فَيَقُولُ لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ فَيُنَادِي بِصَوْتٍ إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكَ أَنْ تُخْرِجَ مِنْ ذُرِّيَّتِكَ بَعْثًا إِلَى النَّارِ» مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

‘‘আল্লাহ্ তাআলা কিয়ামতের দিন আদমকে বলবেনঃ হে আদম! আদম বলবেঃ আমি তোমার আহবানে সাড়া দিচ্ছি ও তোমার আনুগত্যের উপর সর্বদা সুদৃঢ় আছি এবং তোমার আনুগত্যের জন্য প্রস্ত্তত রয়েছি। আল্লাহ্ তাআলা তখন আওয়াজ উঁচু করে এই বলে ডাক দিবেন, আল্লাহ তোমাকে নির্দেশ দিচ্ছেনঃ তোমার বংশধর থেকে একদল লোককে বের করে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বুখারী ও মুসলিম।[1]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,

مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا سَيُكَلِّمُهُ رَبُّهُ وَلَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ تُرْجُمَانٌ»

‘‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার সাথে অচিরেই তার প্রভু কথা বলবেন না। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা অচিরেই তোমাদের সকলের সাথেই কথা বলবেন। কথা বলার সময় বান্দার মাঝে এবং তার রবের মাঝে কোন দোভাষী থাকবে না।[2]


ব্যাখ্যা: لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ আমি তোমার আহবানে সাড়া দিচ্ছি ও তোমার আনুগত্যের উপর সর্বদা সুদৃঢ় আছি এবং তোমার আনুগত্যের জন্য প্রস্ত্তত রয়েছিঃ لبيك শব্দটি ألب بالمكان সে অমুক স্থানে অবস্থান করেছে, -এই বাক্য থেকে নেওয়া হয়েছে। যখন কেউ কোন স্থানে অবস্থান করে, তখন বলা হয়ঃ ألبَّ بالمكان। মাফউলে মুতলাক হিসাবে لبيك শব্দটি মানুসব হয়েছে। তাগিদ স্বরূপ এটিকে দ্বি-বচন ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ আমি তোমার আনুগত্য করার জন্য বারবার প্রস্ত্তত ও সুদৃঢ় রয়েছি।[3]

سعديك শব্দটি المساعدة থেকে নেওয়া হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে আমি তোমার অনুগত আছি এবং আনুগত্য করার জন্য বারবার তোমার কাছে সাহায্য চাচ্ছি।

فَيُنَادِي অতঃপর ডাক দিবেনঃ এখানে দাল বর্ণে যের দিয়ে পড়তে হবে। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা ডাক দিবেন।

بصوت আওয়াজ সহকারেঃ এই শব্দটি ينادي এর তাগিদ স্বরূপ এসেছে। কেননা ডাক দেয়া বা আহবান করা সাধারণতঃ আওয়াজের সাথেই হয়ে থাকে। এটি আল্লাহ তাআলার এই বাণীর মতই। আল্লাহ তাআলা বলেনঃوَكَلَّمَ اللَّهُ مُوسَى تَكْلِيمًا ‘‘আল্লাহ মূসার সাথে কথা বলেছেন ঠিক যেমনভাবে কথা বলা হয়’’। (সূরা নিসাঃ ১৪৬)

بعثا إلى النار জাহান্নামের বাহিনীঃ এখানে بعث শব্দটি مبعوث অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ আগুনের দিকে প্রেরিত বাহিনীকে বের করো। উহার অর্থ হলো জাহান্নামের অধিবাসীদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা করো।

উপরের হাদীছ থেকে প্রমাণ পাওয়া গেল যে, আল্লাহর পক্ষ হতে এমন আওয়াজসহ কথা এবং আহবান হয়, যা শোনা যায়। কিয়ামতের দিন আল্লাহর পক্ষ হতে আহবান আসবে। হাদীছে রয়েছে, আল্লাহ তাআলা যখন ইচ্ছা এবং যেভাবে ইচ্ছা কথা বলেন এবং ডাক দেন।

مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا سَيُكَلِّمُهُ তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার সাথে অচিরেই তার প্রভু কথা বলবেন নাঃ এখানে সাহাবীদেরকে সম্বোধন করা হলেও সর্বকালের সকল মুমিন উদ্দেশ্য। আর আল্লাহ তাআলা বিনা মধ্যস্থতায় কথা বলবেন। আল্লাহর মাঝে এবং বান্দার মাঝে কোন দোভাষী থাকবেনা। যে ব্যক্তি এক ভাষার কথা অন্য ভাষার মাধ্যমে বর্ণনা করে, তাকে দোভাষী বলা হয়। অর্থাৎ এক ভাষার কথা অন্য ভাষায় অনুবাদকারীর নাম তারজুমান।এই হাদীছ থেকেও দলীল পাওয়া যায় যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাঁর বান্দাদের সাথে কথা বলবেন। তিনি যখন ইচ্ছা কথা বলেন। আল্লাহর কালাম তাঁর সিফাতে ফেলিয়ার অন্তর্ভূক্ত। এই কথাও প্রমাণিত হলো যে, তিনি কিয়ামতের দিন প্রত্যেক মুমিনের সাথেই কথা বলবেন।

[1] - সহীহ বুখারীতে হাদীছটির পূর্ণ বিবরণ এভাবে এসেছে যে, আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ্ তাআলা কিয়ামতের দিন আদমকে বলবেনঃ হে আদম! আদম বলবেনঃ আমি হাজির আছি, প্রস্ত্তত আছি। সব কল্যাণ আপনার হাতেই। আল্লাহ্ তাআলা নির্দেশ দিবেনঃ জাহান্নামী দলকে বের কর। আদম বলবেনঃ জাহান্নামী দলের সংখ্যা কত? আল্লাহ্ বলবেনঃ প্রতি হাজারে নয়শ নিরানববই জন। সে সময় (চরম ভয়াবহ অবস্থার কারণে) শিশুরা বৃদ্ধ হয়ে যাবে, প্রত্যেক গর্ভবতীর গর্ভপাত হয়ে যাবে। তুমি মানুষকে মাতালের মত দেখতে পাবে। অথচ তারা মাতাল নয়। কিন্তু আল্লাহর আযাব অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! সেই একজন আমাদের মধ্যে কে হবেন? তিনি বললেনঃ তোমরা আনন্দিত হও। তোমাদের মধ্য থেকে হবে একজন এবং ইয়াজুজ-মা’জুজ থেকে হবে বাকী নয়শত নিরানববই জন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ যার হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ! আমি আশা করি জান্নাতবাসীর চারভাগের একভাগ হবে তোমরা। একথা শুনে আমরা তাকবীর পাঠ করলাম। তারপর তিনি বললেনঃ আমার আশা, তোমরাই হবে জান্নাতবাসীর তিনভাগের একভাগ। একথা শুনে আমরা তাকবীর পাঠ করলাম। তারপর তিনি বললেনঃ আমার আশা, তোমরাই হবে জান্নাতবাসীর অর্ধেক। এবারও আমরা উঁচু আওয়াজে তাকবীর ধ্বনি দিলাম। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা তো অন্যান্য লোকদের তুলনায় একটি সাদা বলদের চামড়ায় একটি কালো লোমের ন্যায় অথবা একটি কালো বলদের চামড়ায় একটি সাদা লোমের ন্যায়।

[2] - সহীহ বুখারী হাদীছ নং- ৬৫৩৯।

[3] - এই শব্দের অর্থ বর্ণনায় আরো বলা হয়েছে, হে আল্লাহ! আমি তোমার আহবানে বারবার সাড়া দিচ্ছি। হাজীগণ যখন ইহরামের কাপড় পরিধান করে لبيك أللهم لبيك পাঠ করেন, তখন এই তালবীয়ার মর্মার্থ দাড়ায়, হে আল্লাহ! তুমি তোমার নবী খলীল ইবরাহীম (আঃ)এর জবানে যে আহবান জানিয়েছো, তাতে আমি সাড়া দিচ্ছি এবং তোমার অনুগত হয়ে এখানে হাযির হয়েছি।
৬- আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সৃষ্টির উপরে রয়েছেন এবং তিনি তাঁর আরশের উপর সমুন্নত হয়েছেন

৬- إثبات علو الله على خلقه واستوائه على عرشه

৬- আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সৃষ্টির উপরে রয়েছেন এবং তিনি তাঁর আরশের উপর সমুন্নত হয়েছেন:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোগীকে ঝাড়-ফুঁক করার সময় বলেছেন,

«رَبُّنَا اللَّهُ الَّذِى فِى السَّمَاءِ تَقَدَّسَ اسْمُكَ أَمْرُكَ فِى السَّمَاءِ وَالأَرْضِ كَمَا رَحْمَتُكَ فِى السَّمَاءِ فَاجْعَلْ رَحْمَتَكَ فِى الأَرْضِ اغْفِرْ لَنَا حُوبَنَا وَخَطَايَانَا أَنْتَ رَبُّ الطَّيِّبِينَ أَنْزِلْ رَحْمَةً مِنْ رَحْمَتِكَ وَشِفَاءً مِنْ شِفَائِكَ عَلَى هَذَا الْوَجَعِ»

‘‘তিনিই আমাদের প্রভু, যিনি আকাশে রয়েছেন। হে আমাদের প্রভু! তোমার নাম পবিত্র। তোমার হুকুম আসমানে ও যমীনে। আসমানে যেমন তোমার রহমত রয়েছে তেমনি যমীনেও তোমার রহমত নাযিল করো। আমাদের গুনাহ ও ভুল-ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করো। তুমি পবিত্রদের প্রতিপালক। তোমার নিকট হতে রহমত নাযিল করো এবং তোমার ‘শিফা’ হতে ‘শিফা’ নাযিল কর। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে এই দুআ পাঠ করবে, আল্লাহর ইচ্ছায় সে সুস্থ হবে ইনশা-আল্লাহ্।[1] এই হাদীছটি হাসান বা বিশুদ্ধ। ইমাম আবু দাউদ এবং অন্যান্য মুহাদ্দিছগণ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,

«أَلا تَأْمَنُونِي وَأَنَا أَمِينُ مَنْ فِي السَّمَاءِ، يَأْتِينِي خَبَرُ السَّمَاءِ صَبَاحًا وَمَسَاءً»

‘‘আমার উপর কি তোমাদের আস্থা নেই? অথচ আমি ঐ আল্লাহর একজন আস্থাভাজন ব্যক্তি, যিনি আকাশে আছেন। আমার কাছে সকাল-বিকাল আকাশের খবর আসছে। আওআলের হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃوالعرش فوق ذلك والله فوق العرش وَهُوَ يَعْلَمُ مَا أَنتُمْ عَليْهِ ‘‘তার উপর আল্লাহর আরশ। আর আল্লাহ্ আরশের উপর। তিনি তোমাদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন’’।[2] হাদীছটি হাসান। আবু দাউদ এবং অন্যান্য ইমামগণ এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন। একটি দাসীকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করেছিলেন,

«أَيْنَ اللَّهُ؟ قَالَتْ: فِي السَّمَاءِ قَالَ مَنْ أَنَا؟ قَالَتْ: أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ قَالَ: أَعْتِقْهَا فَإِنَّهَا مُؤْمِنَةٌ»

‘‘আল্লাহ কোথায়? সে জবাবে বলেছিলঃ আসমানের উপর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ আমি কে? সে বললঃ আপনি আল্লাহর রাসূল। তিনি তখন দাসীর মনিবকে বললেনঃ তুমি একে আযাদ করে দাও। কারণ সে মুমিন।[3]


ব্যাখ্যাঃ রোগীকে ঝাড়-ফুঁক করার সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপরোক্ত দুআ পাঠ করতেন। অর্থাৎ রোগীর জন্য সুস্থতা প্রার্থনা করে এই দুআ পাঠ করতেন। কুরআন ও হাদীছের দুআর মাধ্যমে রোগীকে ঝাড়-ফুঁক করা বৈধ। আর শির্কী কথা ও কর্ম দ্বারা ঝাড়-ফুঁক করা নিষিদ্ধ।

رَبُّنَا اللَّهُ الَّذِى فِى السَّمَاءِ আমাদের প্রভু রয়েছেন আসমানেঃ في السماء বলতে على السماء অর্থাৎ আকাশের উপরে উদ্দেশ্য। সুতরাং এখানে في হরফে জারটি على অর্থে ব্যবহৃত। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ فَسِيحُوا فِي الْأَرْضِ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ ‘‘কাজেই তোমরা দেশের মধ্যে আরো চার মাস চলাফেরা করো’’। (সূরা তাওবাঃ ২) এখানেও في হরফে জারটি على অর্থে ব্যবহৃত। في অক্ষরটি আসল অর্থে তথা যারফিয়া হিসাবেও ব্যবহৃত হওয়া বিশুদ্ধ। তখন السماء দ্বারা সাধারণভাবে উপর বুঝাবে।

تَقَدَّسَ اسْمُكَ তোমার নাম পবিত্রঃ অর্থাৎ তোমার অতি সুন্দর নামগুলো প্রত্যেক দোষ-ত্রুটি হতে পবিত্র। اسم শব্দটি এখানে একবচন হলেও মুযাফ হওয়ার কারণে এর দ্বারা আল্লাহর সকল পবিত্র নামই উদ্দেশ্য হবে।

أَمْرُكَ فِى السَّمَاءِ وَالأَرْضِ তোমার হুকুম আসমানে ও যমীনেঃ অর্থাৎ আসমান ও যমীনে তোমার ঐসব সৃষ্টি ও নির্ধারণগত আদেশ কার্যকর হয়, যার মাধ্যমে সবকিছুই সৃষ্টি ও সংঘটিত হয়। এই অর্থেই আল্লাহ তাআলার নিম্নের বাণীটি ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

﴿إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ﴾

‘‘আল্লাহ তাআলা যখন কিছুর ইচ্ছা করেন তখন তিনি শুধু তাকে বলেন যে, হয়ে যাও। সাথে সাথেই তা হয়ে যায়’’। (সূরা ইয়াসীনঃ ৮২)[4] এমনি আল্লাহর আরেক প্রকার আদেশ রয়েছে, যা শরীয়তের ঐসব আদেশকে অন্তর্ভূক্ত করেছে, যা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন।

كَمَا رَحْمَتُكَ فِى السَّمَاءِ فَاجْعَلْ رَحْمَتَكَ فِى الأَرْضِ আসমানে যেমন তোমার রহমত রয়েছে, তেমনি যমীনেও তোমার রহমত নাযিল করোঃ এখানে আল্লাহ তাআলার যেই রহমত আসমানের সকল বাসিন্দাকে নিজের মধ্যে শামিল করে নিয়েছে ঐ রহমতের উসীলায় আল্লাহর কাছে চাওয়া হয়েছে যে, তিনি যেন যমীনবাসীর জন্যও তার রহমতের একটি অংশ নির্ধারণ করেন।

اغْفِرْ لَنَا حُوبَنَا وَخَطَايَانَا আমাদের গুনাহ ও ভুল-ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করোঃ এখানে আল্লাহর নিকট মাগফিরাত কামনা করা হয়েছে। المغفرة অর্থ হচ্ছে ঢেকে রাখা এবং পাপাচার থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। মাথাকে ঢেকে রাখার জন্য এবং শত্রুর আঘাত থেকে মাথাকে হেফাযত করার জন্য মাথায় যেই হেলমেট (المِغْفَر পরিধান করা হয়, তা এই المغفرة শব্দ থেকেই নেয়া হয়েছে। এখানে الحوب হচ্ছে الإثم (অপরাধ)। আর الخطايا এবং الذنوب একই অর্থে ব্যবহৃত। উহা হচ্ছে গুনাহ ও পাপসমূহ।

أنت رب الطيبين তুমি পবিত্রদের প্রতিপালকঃ এই বাক্যের মাধ্যমেও উসীলা দেয়া হয়েছে। طيب শব্দের বহুবচন الطيبون। তারা হচ্ছেন নবী এবং তাদের অনুসারীগণ। আল্লাহর রুবুবীয়াতকে উক্ত শ্রেণীর লোকদের প্রতি সম্বন্ধিত করার দ্বারা তাদের সম্মান, মর্যাদা ও তাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা বুঝানো হয়েছে। অন্যথায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সবকিছুরই প্রভু ও মালিক।

أَنْزِلْ رَحْمَةً مِنْ رَحْمَتِكَ তোমার নিকট হতে রহমত নাযিল করোঃ অর্থাৎ যেই রহমতটি তুমি সৃষ্টি করেছো, তা তুমি আমাদের উপর নাযিল করো। আল্লাহর রহমত দুই প্রকার। (১) আল্লাহর যেই রহমত তাঁর অন্যতম সিফাত অর্থে ব্যবহৃত,[5] সে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍّ ‘‘আর আমার রহমত প্রতিটি জিনিষকেই পরিব্যাপ্ত করে রয়েছে’’। (সূরা আরাফঃ ১৫৬)

(২) আবার রহমতকে কখনো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার দিকে তাঁর ক্রিয়া হিসাবে সম্বন্ধিত করা হয়। তখন উহা ঐসব মাখলুকের অন্তর্ভূক্ত হয়, যা সৃষ্টিকর্তার দিকে সম্বন্ধিত করা হয়েছে। যেমন এই হাদীছে রহমত শব্দটি তাঁর দিকে সম্বন্ধিত করা হয়েছে। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিম্নের এই হাদীছে বলেছেনঃ

«خَلَقَ اللَّهُ مِائَةَ رَحْمَةٍ فَوَضَعَ وَاحِدَةً بَيْنَ خَلْقِهِ وَخَبَأَ عِنْدَهُ مِائَةً إِلاَّ وَاحِدَةً»

‘‘আল্লাহ তাআলা একশটি রহমত সৃষ্টি করেছেন। তার সৃষ্টির মধ্যে তা থেকে মাত্র একটি রহমত ছেড়েছেন। আর ৯৯টি রহমত তাঁর নিকট রেখে দিয়েছেন। রোগী যেহেতু আল্লাহর রহমতের প্রতি মুহতাজ, তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর রবের কাছে রোগীর উপর রহমত নাযিল করার আবেদন করেছেন, যাতে তিনি এর মাধ্যমে রোগীকে শিফা দান করেন।

এই হাদীছ থেকে দলীল পাওয়া যাচ্ছে যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার জন্য ‘উলু’ তথা উপরে হওয়া সাব্যস্ত। আরো সাব্যস্ত করা হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা আসমানের উপর। পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে যে, উলু তথা উপরে হওয়া আল্লাহ তাআলার সত্তাগত সিফাত। সেই সাথে আরো জানা গেল যে, আল্লাহ তাআলার রুবুবীয়াত, তাঁর ইলাহীয়াত, তাঁর পবিত্রতা, সকল সৃষ্টির উপরে হওয়া, তাঁর সকল আদেশ, তাঁর রহমত ইত্যাদি সিফাত তুলে ধরার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ করা মুস্তাহাব।

أَلا تَأْمَنُونِي তোমাদের কি আমার উপর আস্থা নেই? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ হতে ঐ ব্যক্তিকে সম্বোধন করে এই কথা বলা হয়েছে, যে তাঁর কতক মাল বণ্টনে আপত্তি উত্থাপন করেছিল।[6] এখানে যেই ألا অব্যয়টি এসেছে, তা বাক্যের শুরুতে ব্যবহৃত হয় এবং তা দ্বারা সতর্ক করা উদ্দেশ্য হয়। আর تأمنون শব্দটি الأمانة থেকে নেওয়া হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে পক্ষপাতিত্ব ও খেয়ানত না করা। অর্থাৎ তোমরা কি মাল বণ্টনের ক্ষেত্রে আমার উপর আস্থাশীল নও?

وَأَنَا أَمِينُ مَنْ فِي السَّمَاء অথচ আমি ঐ সত্তার একজন আস্থা ভাজন ব্যক্তি, যিনি আসমানের উপর রয়েছেনঃ আসমানে যিনি রয়েছেন, তিনি হলেন আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা। তিনি আমাকে তাঁর অহী, রেসালাত এবং শরীয়তের তাবলীগ করার উপর আমানতদার বানিয়েছেন। সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমানতদারী এবং সত্যবাদীতার সাক্ষ্যদাতা হিসাবে আল্লাহ তাআলাই যথেষ্ট।

উপরোক্ত হাদীছ থেকে দলীল পাওয়া যাচ্ছে যে, আল্লাহর জন্য উলু (উপরে হওয়া বিশেষণ) সাব্যস্ত। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, من في السماء যিনি রয়েছেন আসমানের উপর। একটু পূর্বে এই বাক্যের ব্যাখ্যা অতিক্রান্ত হয়েছে।

والعرش فوق ذلك উহার উপর আল্লাহর আরশঃ এই বাক্যের ব্যাখ্যা পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে। অর্থাৎ ঐসব সৃষ্টির উপর, যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীর জন্য হাদীছে বর্ণনা করেছেন। তাতে আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী দূরত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে এক আসমান থেকে অন্য আসমান পর্যন্ত দূরত্ব, প্রত্যেক আসমানের পূরত্ব, সপ্তম আসমানের উপরস্থ সাগর, সেই সাগরের উপর থেকে নীচ পর্যন্ত দূরত্ব এবং ঐ সাগরের উপর সাতটি বিশাল আকারের ওয়াল (বিশেষ আকৃতির আট ফেরেশতা) থাকার কথা বর্ণনা করা রয়েছে। অতঃপর বলা হয়েছে যে, উহার উপর আল্লাহ তাআলার আরশ।

والله فوق العرش আর আল্লাহ্ আরশের উপরেঃ অর্থাৎ তাঁর বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য যেভাবে আরশের উপর সমুন্নত হওয়া শোভনীয়, তিনি সেভাবেই আরশের উপর সমুন্নত রয়েছেন।

وَهُوَ يَعْلَمُ مَا أَنتُمْ عَليْهِ তিনি তোমাদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেনঃ অর্থাৎ তিনি তাঁর ইলমের মাধ্যমে তোমাদের সকল অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন, যা থেকে কোন বস্ত্তই গোপনীয় নয়।

উপরের হাদীছ থেকে প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ তাআলার জন্য আরশের উপর সমুন্নত হওয়া সুসাব্যস্ত। আর আল্লাহ তাআলার আরশ সমস্ত মাখলুকের উপরে এবং তিনি স্বীয় ইলমের মাধ্যমে বান্দাদের সমস্ত আমলকে পরিবেষ্টন করে আছেন। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপনীয় নয়।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাসীকে সম্বোধন করে বলেছেন, আল্লাহ কোথায়? সে ছিল মুআবীয়া ইবনুল হাকামের দাসী। দাসীর মনিব মুআবীয়া দাসীর উপর ক্রোধান্বিত হলেন। ক্রোধান্বিত হয়ে তিনি তাঁর দাসীকে চপেটাঘাত করলেন। অতঃপর তিনি অনুতপ্ত হলেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিষয়টি জানালেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আরো জানালেন যে, আমি কি তাকে মুক্ত করে দিবো না? তিনি বললেনঃ আমার কাছে ওকে নিয়ে এসো। তিনি দাসীকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিয়ে আসলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাসীকে জিজ্ঞেস করলেনঃ أين الله আল্লাহ কোথায়? এতে দলীল পাওয়া যায় যে, আল্লাহ কোথায়? এই প্রশ্ন করা জায়েয আছে।

দাসী তখন বললঃ في السماء আসমানের উপরঃ অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আসমানের উপর। এই বাক্যের ব্যাখ্যা পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাসীকে আরো প্রশ্ন করলেন যে, আমি কে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে দাসীর বিশ্বাস কী ছিল, তা জানার জন্য তাকে এই প্রশ্ন করা হয়েছে।

দাসী তখন বললঃ أنت رسول الله ‘‘আপনি আল্লাহর রাসূল’’। এই বাক্যের মাধ্যমে দাসী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য রেসালাতের সাক্ষ্য দিল। তিনি তখন দাসীর মনিব মুআবীয়াকে বললেনঃ أَعْتِقْهَا فَإِنَّهَا مُؤْمِنَةٌ তুমি একে আযাদ করে দাও, কারণ সে মুমিন। এতে প্রমাণ পাওয়া গেল, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিবে আল্লাহ তাআলা উপরে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল, সে মুমিন হিসাবে গণ্য হবে। আরো জানা গেল যে, দাসমুক্তির জন্য ঈমান পূর্বশর্ত।এই হাদীছে সমস্ত সৃষ্টির উপরে অবস্থিত সাত আসমানের উপর আল্লাহ তাআলার সমুন্নত হওয়ার দলীল পাওয়া গেল। এতে আরো প্রমাণ পাওয়া গেল যে, আল্লাহর দিকে ইঙ্গিত করার সময় আঙ্গুল বা শরীরের অন্য কোন অঙ্গ দিয়ে উপরের দিকে ইঙ্গিত করা বৈধ।

[1] - আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তিবব। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছটিকে মুনকার (অসুদ্ধ) বলেছেন। দেখুনঃ মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীছ নং- ১৫৫৫।

[2] - আওআলের হাদীছের বিস্তারিত বিবরণ এই যে, আববাস বিন আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ) বলেনঃ আমরা একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে খোলা ময়দানে বসা ছিলাম। তখন আমাদের মাথার উপর দিয়ে একটি মেঘখন্ড অতিক্রম করার সময় তিনি বললেনঃ তোমরা কি জান এটি কী? আমরা বললামঃ এটি মেঘ। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা কি জান আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানের দূরত্ব কত? আমরা বললামঃ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই অধিক জানেন। তিনি বললেনঃ উভয়ের মধ্যে রয়েছে পাঁচশত বছরের দূরত্ব। এমনি প্রত্যেক আকাশ ও তার পরবর্তী আকাশের মধ্যবর্তী দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশত বছরের পথ। এভাবে সপ্তম আকাশের উপর রয়েছে একটি সাগর। সাগরের গভীরতা হচ্ছে আকাশ ও যমীনের মধ্যবতী দূরত্বের সমান। সাগরের উপরে রয়েছে আটটি পাহাড়ী পাঠা (পাঠার আকৃতিতে ফেরেশতা)। তাদের হাঁটু থেকে পায়ের খুর পর্যন্ত দূরত্ব আসমান ও যমীনের মধ্যবতী দূরত্বের সমান। তারা আল্লাহর আরশ পিঠে বহন করে আছে। আরশ এত বিশাল যে, তার উপরের অংশ থেকে নীচের অংশের দূরত্ব হচ্ছে আসমান ও যমীনের মধ্যবতী দূরত্বের সমান। আর আল্লাহ্ তাআলা রয়েছেন আরশের উপরে। তবে এই হাদীছটি সহীহ ও যঈফ হওয়ার ব্যাপারে আলেমদের যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। তবে যে প্রধান দু’টি বিষয়কে কেন্দ্র করে হাদীছটি এসেছে যথা আল্লাহর বড়ত্ব এবং তাঁর আরশে সমুন্নত হওয়া সে বিষয়টি সুসাব্যস্ত ও সর্বজন স্বীকৃত বিধায় হাদীছের মর্মার্থ সঠিক।

[3] - সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং- ১২২৭।

[4] - আল্লাহ তাআলার আমর বা আদেশ দুই প্রকার। (১) আমরে কাওনী। আল্লাহ যেই আদেশ দ্বারা আসমান-যমীনের সকল বিষয় সৃষ্টি, তাদবীর ও পরিচালনা করেন, তা হচ্ছে আল্লাহর সৃষ্টিগত আদেশ। (২) আল্লাহ তাআলার আরেক প্রকার আদেশ রয়েছে, যা দ্বারা শরীয়তের আদেশ উদ্দেশ্য। যেমন নামাযের আদেশ, যাকাতের আদেশ, আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচরণের আদেশ ইত্যাদি আরো অনেক আদেশ রয়েছে। তদ্রুপ অন্যান্য পাপাচার থেকেও নিষেধ করা হয়েছে। এগুলো শরঈ ও দ্বীনী আদেশ-নিষেধের অন্তর্ভূক্ত।

[5] - আর এই কথাটি সর্বদাই স্মরণ রাখা দরকার যে, আল্লাহর কোনো সিফাতই সৃষ্টি নয়।

[6] - সহীহ বুখারীতে এই হাদীছটি বিস্তারিত উল্লেখিত হয়েছে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«بَعَثَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ رضي الله عنه إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنَ الْيَمَنِ بِذُهَيْبَةٍ فِي أَدِيمٍ مَقْرُوظٍ، لَمْ تُحَصَّلْ مِنْ تُرَابِهَا، قَالَ: فَقَسَمَهَا بَيْنَ أَرْبَعَةِ نَفَرٍ بَيْنَ عُيَيْنَةَ بْنِ بَدْرٍ، وَأَقْرَعَ بْنِ حابِسٍ، وَزَيْدِ الْخَيْلِ، وَالرَّابِعُ: إِمَّا عَلْقَمَةُ، وَإِمَّا عَامِرُ بْنُ الطُّفَيْلِ، فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ أَصْحَابِهِ: كُنَّا نَحْنُ أَحَقَّ بِهَذَا مِنْ هَؤُلاءِ، قَالَ: فَبَلَغَ ذَلِكَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: «أَلا تَأْمَنُونِي وَأَنَا أَمِينُ مَنْ فِي السَّمَاءِ، يَأْتِينِي خَبَرُ السَّمَاءِ صَبَاحًا وَمَسَاءً». قَالَ: فَقَامَ رَجُلٌ غَائِرُ الْعَيْنَيْنِ، مُشْرِفُ الْوَجْنَتَيْنِ، نَاشِزُ الْجَبْهَةِ، كَثُّ اللِّحْيَةِ، مَحْلُوقُ الرَّأْسِ، مُشَمَّرُ الأزَارِ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، اتَّقِ اللَّهَ، قَالَ: «وَيْلَكَ أَوَلَسْتُ أَحَقَّ أَهْلِ الأرْضِ أَنْ يَتَّقِيَ اللَّهَ»؟ قَالَ: ثُمَّ وَلَّى الرَّجُلُ، قَالَ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلاَ أَضْرِبُ عُنُقَهُ؟ قَالَ: «لاَ، لَعَلَّهُ أَنْ يَكُونَ يُصَلِّي». فَقَالَ خَالِدٌ: وَكَمْ مِنْ مُصَلٍّ يَقُولُ بِلِسَانِهِ مَا لَيْسَ فِي قَلْبِهِ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: «إِنِّي لَمْ أُومَرْ أَنْ أَنْقُبَ عَنْ قُلُوبِ النَّاسِ وَلا أَشُقَّ بُطُونَهُمْ». قَالَ: ثُمَّ نَظَرَ إِلَيْهِ وَهُوَ مُقَفٍّ، فَقَالَ: «إِنَّهُ يَخْرُجُ مِنْ ضِئْضِئِ هَذَا قَوْمٌ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ رَطْبًا لا يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ، يَمْرُقُونَ مِنَ الدِّينِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ». وَأَظُنُّهُ قَالَ: «لَئِنْ أَدْرَكْتُهُمْ لأقْتُلَنَّهُمْ قَتْلَ ثَمُودَ» (بخارى:4351)

‘‘আলী বিন আবু তালেব (রাঃ) ইয়ামান থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য পরিচ্ছন্ন চামড়ার থলের মধ্যে সামান্য স্বর্ণ পাঠিয়েছিলেন, যা ধুলাবালি থেকে তখনো আলাদা করা হয়নি। তিনি চারজনের মধ্যে সোনাটি বন্টন করে দিলেন। এরা হচ্ছেনঃ উয়াইনা ইবনে বদর, আকরা বিন হাবেস, যায়েদুল খাইল আর চতুর্থ জন হচ্ছেন আলকামাহ বা আমের ইবনে তুফাইল। তার সাথীদের একজন বললঃ এ লোকগুলোর চেয়ে আমরা এর বেশী হকদার। বর্ণনাকারী বলেনঃ কথাটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কানে পৌঁছল। তিনি বললেনঃ তোমাদের কি আমার উপর আস্থা নেই? অথচ আমি ঐ আল্লাহর একজন আস্থা ভাজন ব্যক্তি, যিনি আকাশে আছেন। আমার কাছে দিন-রাত আকাশের খবর আসছে। এ সময় এমন এক ব্যক্তি দাঁড়াল, যার চোখ দু’টি ছিল ব্রুর মধ্যে লুকায়িত, গাল ছিল ফোলা, কপাল ছিল উঁচু, দাড়ি ছিল ঘন, মাথা ছিল ন্যাড়া এবং লুঙ্গি ছিল অনেক উপরে। সে বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ্কে ভয় করুন। তিনি বললেনঃ তুমি ধ্বংস হয়ে যাও, সারা দুনিয়ার মাঝে আমি কি আল্লাহ্কে সবচেয়ে বেশী ভয় করার হকদার নই? বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর লোকটি চলে গেল। খালেদ বিন ওয়ালীদ আরজ করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি তাঁকে হত্যা করব না? তিনি জবাবে বললেনঃ না, হয়তবা সে নামায পড়ে। খালেদ বিন ওয়ালীদ বললেনঃ এমন অনেক নামাযী আছে যারা মুখে এমন কথা বলে যা তাদের মনের মধ্যে নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ আমাকে লোকদের দিল চিরে ফেলার ও তাদের পেট ফেঁড়ে ফেলার আদেশ দেয়া হয় নি। বর্ণনাকারী বলেনঃ তারপর তিনি ঐ লোকটির দিকে চোখ তুলে তাকালেন। তখনো সে পিঠ ফিরে চলে যাচ্ছিল। তিনি তার দিকে দৃষ্টি রেখে বললেনঃ ঐ ব্যক্তির বংশে এমন এক প্রজন্মের উদ্ভব হবে, যারা সুমিষ্ট স্বরে কুরআন পড়বে, কিন্তু তা তাদের গলার নীচে যাবে না। দ্বীন তাদের কাছ থেকে এমনভাবে ছিটকে পড়বে, যেমনভাবে ধনুক থেকে তীর বের হয়ে যায়। বর্ণনাকারী বলেনঃ আমার মনে পড়ছে যে, তিনি একথাও বলেছেনঃ আমি যদি সেই জাতিকে পাই, তাহলে সামুদ জাতির মত তাদেরকে হত্যা করবো’’।
৭- এটি সাব্যস্ত করা যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর মাখলুকের সাথেই। এটি সাব্যস্ত করা আরশের উপর তাঁর সমুন্নত হওয়ার পরিপন্থি নয়

৭- إثبات معية الله لخلقه وأنها لاتنافي علوه فوق عرشه

৭- এটি সাব্যস্ত করা যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর মাখলুকের সাথেই। এটি সাব্যস্ত করা আরশের উপর তাঁর সমুন্নত হওয়ার পরিপন্থি নয়:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

أَفْضَلُ الإِيمَانِ أَنْ تَعْلَمَ أَنَّ اللهَ مَعَكَ حَيْثُمَا كُنْتَ" حَدِيثٌ حَسَنٌ.أخرجه الطبراني من حديث عبادة بن الصامت

‘‘সর্বোত্তম ঈমান হলো তুমি জানবে যে, যেখানেই থাক না কেন, আল্লাহ তোমার সাথেই’’।[1] হাদীছটি হাসান। ইমাম তাবারানী উবাদাহ বিন সামেত (রাঃ) থেকে এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,

إِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ إِلَى الصَّلاةِ؛ فَلاَ يَبْصُقَنَّ قِبَلَ وَجْهِهِ، وَلاَ عَنْ يَمِينِهِ؛ فَإِنَّ اللهَ قِبَلَ وَجْهِهِ، وَلَكِنْ عَنْ يَسَارِهِ، أَوْ تَحْتَ قَدَمِهِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ،

‘‘তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়াবে, তখন সে যেন তার সামনের দিকে থুথু না ফেলে। এমনকি ডান দিকেওনা। কেননা আল্লাহ তাআলা তাঁর সামনে রয়েছেন।[2] একান্ত যদি থুথু ফেলতেই হয় তাহলে বাম দিকে অথবা বাম পায়ের নীচে ফেলবে। বুখারী ও মুসলিম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,

اللهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ وَالأَرْضِ وَرَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ فَالِقَ الْحَبِّ وَالنَّوَى مُنْزِلَ التَّوْرَاةِ وَالإِنْجِيلِ وَالْقُرْآنَ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِي وَمِنْ شَرِّ كُلِّ دَابَّةٍ أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا، أَنْتَ الأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيءٌ، وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ؛ اقْضِ عَنِّي الدَّيْنَ وَأَغْنِنِي مِنَ الْفَقْرِ رِوَاه مُسْلِمٌ،

‘‘হে আল্লাহ! হে সাত আসমান ও যমীনের প্রভু! হে আরশে আযীমের রব! হে আমাদের প্রতিপালক এবং সকল বস্ত্তর প্রতিপালক! হে দানা ও বীচি বিদীর্ণকারী! হে তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআন অবতীর্ণকারী! আমি তোমার নিকট আমার নফসের অনিষ্ট হতে এবং ভূপৃষ্ঠে প্রত্যেক বিচরণকারীর অনিষ্ট হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যার ললাট তুমি ধারণ করে আছ।

হে আল্লাহ! তুমিই الأَوَّل (প্রথম)। তোমার পূর্বে কেউ ছিলনা। তুমিই الآخر (সর্বশেষ), তোমার পর কিছুই অবশিষ্ট থাকবেনা। তুমিই الظَاهِر (সবকিছুর উপরে), তোমার উপরে আর কিছুই নেই। তুমিই البَاطِن (মাখলুকের অতি নিকটে), তোমার চেয়ে অধিক নিকটে আর কিছু নেই’’।[3] তুমি আমার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করো এবং আমাকে দারিদ্রের কবল থেকে মুক্ত করো। ইমাম মুসলিম এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন।

সাহাবীগণ যখন আল্লাহর যিকির করার সময় তাদের আওয়াজ উঁচু করলেন তখন তিনি বললেন,

أَيُّهَا النَّاسُ! اِرْبَعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ؛ فَإِنَّكُمْ لاَ تَدْعُونَ أَصَمَّ وَلاَ غَائِبًا إِنَّمَا تَدْعُونَ سَمِيعًا بَصِيرًا قَرِيبًا، إِنَّ الَّذي تَدْعُونَهُ أَقْرَبُ إِلَى أَحَدِكُمْ مِنْ عُنُقِ رَاحِلَتِهِ" مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

‘‘হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের জন্য সহজ পন্থা অবলম্বন করো। কেননা তোমরা তো বধির বা দূরে অবস্থানকারী কাউকে আহবান করছো না। যাকে তোমরা আহবান করছো তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা এবং অতি নিকটে। তোমাদের কেউ বাহনে আরোহন করা অবস্থায় তার বাহনের ঘাড়ের যত নিকটবর্তী থাকে, তোমরা যাকে আহবান করছো, তিনি তার চেয়েও আহবানকারীর অধিক নিকটে’’।


ব্যাখ্যাঃ أَفْضَلُ الإِيمَانِ সর্বোত্তম ঈমানঃ অর্থাৎ ঈমানের বৈশিষ্টগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম বৈশিষ্ট হচ্ছে তুমি যেখানেই থাক না কেন, এই কথা বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ তোমার সাথেই। পূর্বোক্ত কথার মধ্যে দলীল পাওয়া যায় যে, ঈমানের তারতম্য হয়। অর্থাৎ সকল মুমিনের ঈমান এক সমান নয়।

أَنْ تَعْلَمَ أَنَّ اللهَ مَعَكَ তুমি জানবে যে, আল্লাহ তোমার সাথেইঃ অর্থাৎ ইলমের মাধ্যমে এবং তোমার যাবতীয় অবস্থা সম্পর্কে অবগত হওয়ার মাধ্যমে তিনি তোমার সাথেই, তুমি যেখানেই থাকোনা কেন। যে ব্যক্তি ইহা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে, তার ভিতর ও বাহির একই রকম হবে এবং সকল স্থানেই আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে চলবে। ইমাম তাবারানী হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।

ইমাম তাবারানী হচ্ছেন, আবুল কাসেম সুলায়মান আল-লাখমী। হাদীছের যেসব হাফেয বিপুল সংখ্যক হাদীছ বর্ণনা করেছেন, তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি মু’জামুল কাবীরে এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন।

এই হাদীছে দলীল পাওয়া গেল যে, আল্লাহ তাআলা ইলমের মাধ্যমে মাখলুকের সাথেই এবং তিনি তাদের আমলসমূহ সম্পর্কে পূর্ণ অবগত। সুতরাং বান্দার উপর আবশ্যক হলো সবসময় এই কথা মনে রাখা। এতে তার আমল সুন্দর হবে।

إِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ إِلَى الصَّلاةِ তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়ায়ঃ অর্থাৎ নামায শুরু করে, তখন সে যেন তার সামনের দিকে থুথু না ফেলে। হাদীছে উল্লেখিত قبل শব্দের ‘কাফ’ বর্ণে যের দিয়ে এবং ‘বা’ বর্ণে যবর দিয়ে পড়তে হবে।

فَإِنَّ اللهَ قِبَلَ وَجْهِهِ কেননা আল্লাহ তাআলা তার সামনের দিকে রয়েছেনঃ এটি হচ্ছে নামাযীকে কিবলার দিকে থুথু নিক্ষেপ করতে নিষেধ করার কারণ। কেননা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নামাযীর চেহারার দিকে রয়েছেন। অর্থাৎ সামনের দিকে রয়েছেন। যেভাবে সামনে থাকা আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য শোভনীয়, তিনি সেভাবেই নামাযীর সামনে থাকেন।[4] এতে করে এটি আবশ্যক হয়না যে, তিনি মাখলুকের সাথে একদম মিলিত অবস্থায় রয়েছেন। বরং আসমানসূহের উপর আরশে তিনি সমুন্নত। আরশে সমুন্নত হয়েও তিনি মাখলুকের অতি নিকটে এবং তাদের সকলকে পরিবেষ্টনকারী।

নামাযী যেন তার ডান দিকেও থুথু না ফেলে। কেননা ডান দিকের আলাদা মর্যাদা রয়েছে এবং নামাযীর ডান দিকে রয়েছে দু’জন ফেরেশতা। যেমন বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় এসেছে।

وَلَكِنْ عَنْ يَسَارِهِ أَوْ تَحْتَ قَدَمِهِ একান্ত যদি নামাযী ব্যক্তিকে থুথু ফেলতেই হয় তাহলে বাম দিকে অথবা বাম পায়ের নীচে ফেলবেঃ অর্থাৎ নামাযী ব্যক্তি যদি থুথু ফেলতে বাধ্য হয়, তাহলে সে যেন তাঁর বাম দিকে কিংবা বাম পায়ের নীচে থুথু নিক্ষেপ করে।

এই হাদীছ থেকে প্রমাণিত হলো, আসমানসমূহের উপরে আরশে সমুন্নত হয়েও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নামাযী বান্দার নিকটবর্তী হন এবং নামাযীর দিকে বিশেষভাবে অগ্রসর হন (মনোনিবেশ করেন)।

اللهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ وَالأَرْضِ হে আল্লাহ! হে সাত আসমান ও যমীনের প্রভুঃ اللهم এর মূল হচ্ছে يا ألله। আল্লাহ শব্দের পূর্ব হতে হরফে নেদা يا কে ফেলে দিয়ে তার বদলে শেষে ميم বাড়ানো হয়েছে। হে সাত আসমানের প্রভু! অর্থাৎ উহার স্রষ্টা ও মালিক।

وَرَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ আরশে আযীমের রবঃ অর্থাৎ এমন বিশাল আরশের মালিক, যার বিশালতা সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ অবগত নয়। আরশ হচ্ছে আল্লাহর সর্ববৃহৎ সৃষ্টি। আরশের ব্যাখ্যা পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে।

رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ হে আমাদের প্রতিপালক এবং সকল বস্ত্তর প্রতিপালক! অর্থাৎ আমাদের সৃষ্টিকর্তা, রিযিক দাতা, সকল জিনিষের সৃষ্টিকর্তা এবং সবকিছুর মালিক। এতে সাব্যস্ত হলো, সবকিছুর প্রতিপালনকারী একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা।

فَالِقَ الْحَبِّ وَالنَّوَى দানা ও বীচি বিদীর্ণকারীঃ খাদ্য দ্রব্যের দানা ও খেজুরের বীচিকে উদ্গত করণের জন্য বিদীর্ণকারী। মুসা (আঃ)এর উপর তাওরাত, ঈসা (আঃ)এর উপর ইঞ্জিল অবতীর্ণকারী এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর কুরআন অবতীর্ণকারী। এই হাদীছে তাওরাত, ইঞ্জিল এবং কুরআন, -এই তিনটি কিতাবের ফযীলত প্রমাণিত হলো। আরো জানা গেল যে, এই কিতাবগুলো আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে অবতীর্ণ হয়েছে। أعوذ بك আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছিঃ অর্থাৎ হে আল্লাহ আমি তোমার আশ্রয় গ্রহণ করছি এবং তোমার পথকেই আকঁড়ে ধরছি।وَمِنْ شَرِّ كُلِّ دَابَّةٍ তোমার নিকট ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী প্রত্যেক প্রাণীর অনিষ্ট হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছিঃ ভূপৃষ্ঠে যেসব প্রাণী বিচরণ করে, সেগুলোর প্রত্যেকটিকেই دابة বলা হয়।

أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا যার ললাট তুমি ধারণ করে আছোঃ মাথার সামনের অংশকে ললাট বা কপাল বলা হয়। অর্থাৎ হে আল্লাহ! ঐসব অনিষ্টকারী প্রাণী যেহেতু তোমার ক্ষমতা ও আয়ত্তাধীন এবং তুমি যেভাবে ইচ্ছা সেগুলোকে সেভাবেই পরিচালনা করো, তাই তুমি আমার উপর থেকে ঐগুলোর অনিষ্ট দূর করে দাও। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দু’আয় বলতেন,

«أَنْتَ الأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيءٌ، وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ»

‘‘হে আল্লাহ! তুমিই الأَوَّل (প্রথম)। তোমার পূর্বে কিছুই ছিলনা। তুমিই الآخر (সর্বশেষ), তোমার পর কিছুই থাকবেনা। তুমিই الظَاهِر (সবকিছুর উপরে), তোমার উপরে আর কিছুই নেই। তুমিই البَاطِن (অতি নিকটে), তোমার চেয়ে অধিক নিকটে আর কিছুই নেই’’।[5] আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার এই চারটি নামের মধ্যে দু’টি নাম তাঁর চিরস্থায়িত্ব ও অবিনশ্বরতার প্রমাণ করে। এই দু’টি নাম হচ্ছে الأَوَّل (প্রথম এবং الآخر (সর্বশেষ)। আর বাকী দু’টি নাম আল্লাহ তাআলা সকল সৃষ্টির উপরে সমুন্নত হওয়া এবং সৃষ্টির একদম নিকটে হওয়ার প্রমাণ করে। এই নাম দু’টি হচ্ছে الظَاهِر (প্রকাশ্যমান) এবং البَاطِن (অতি নিকটে)। হাদীছের মধ্যে এই শেষ দু’টি নামই হচ্ছে মহল্লে শাহেদ। অর্থাৎ এখান থেকেই শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) দলীল গ্রহণ করেছেন যে, আল্লাহ তাআলা সকল মাখলুকের উপরে এবং তিনি নিকটেও। কেননা আল্লাহ তাআলার এই নাম দু’টিতে আল্লাহর জন্য علو (মাখলুকের উপরে সমুন্নত হওয়া) এবং قرب (সৃষ্টির নিকটে হওয়া) সাব্যস্ত করা হয়েছে। আল্লাহর এ দু’টি সিফাত পরস্পর বিরোধী ও সাংঘর্ষিক নয়। আল্লাহ তাআলা উপরে সমুন্নত হয়েও মাখলুকের নিকটে এবং মাখলুকের নিকটবর্তী হয়েও সকল মাখলুকের উপরে সমুন্নত।

اقْضِ عَنِّي الدَّيْنَ তুমি আমার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করোঃ অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমার উপর থেকে তোমার হকসমূহ এবং মাখলুকের হকসমূহ আদায়ের ব্যবস্থা করো। বান্দা নিজের শক্তিতে অসৎকাজ করতে অক্ষম এবং নিজের শক্তিতে কোন সৎকাজই করতে পারেনা, -এখানে তাই বলা হয়েছে।

وَأَغْنِنِي مِنَ الْفَقْرِ এবং আমাকে দারিদ্রের কবল থেকে মুক্ত করোঃ الفقر অর্থ হচ্ছে প্রয়োজন, অভাব। ফকীর বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে যার কিছুই নেই অথবা যার কাছে প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য বস্ত্ত রয়েছে। এই হাদীছ থেকে আরো জানা গেল যে, প্রয়োজন পূরণ করার জন্য এবং দুআ কবুলের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নাম ও সিফাতের উসীলা দেয়া বৈধ।

সাহাবীগণ যখন আল্লাহর যিকির করার সময় তাদের আওয়াজ উঁচু করলেনঃ এটি ছিল খায়বারের যুদ্ধের ঘটনা। যেমন এই হাদীছের কোন কোন সনদে সুস্পষ্ট করেই তা বলা হয়েছে। সাহাবীগণ যেই যিকিরের মধ্যে আওয়াজ উঁচু করেছিল, তা ছিল তাকবীর। অর্থাৎ তারা উঁচু আওয়াজে ألله أكبر ألله أكبر لاإله إلا الله বলছিল। اربعوا অর্থ হচ্ছে ارفقوا অর্থাৎ নিজেদের জন্য সহজ করো।

فَإِنَّكُمْ لاَ تَدْعُونَ أَصَمَّ وَلاَ غَائِبًا কেননা তোমরা তো বধির বা দূরে অবস্থানকারী কাউকে আহবান করছো নাঃ এটি হচ্ছে আওয়াজ অতিরিক্ত উুঁচ না করার এবং নিজেদের উপর সহজ করার আদেশ দেয়ার কারণ। অর্থাৎ তোমরা তো এমন কাউকে ডাকছো না, যিনি তোমাদের ডাক শুনেন না এবং তোমাদেরকে দেখেন না। সুতরাং এখানে আল্লাহ তাআলার পবিত্র সত্তা থেকে এমন আপদ ও ত্রুটি নাকোচ করা হয়েছে, যা শ্রবণ করার প্রতিবন্ধক এবং তাঁর পবিত্র সত্তা হতে এমন দোষ-ত্রুটি নাকোচ করা হয়েছে, যা আল্লাহ তাআলার জন্য শ্রবণ করার প্রতিবন্ধক। সেই সাথে হাদীছে উক্ত দোষ দু’টির বিপরীত গুণ সাব্যস্ত করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ إِنَّمَا تَدْعُونَ سَمِيعًا بَصِيرًا قَرِيبًا যাকে তোমরা আহবান করছো তিনি তো সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা এবং তোমাদের অতি নিকটে। সুতরাং আওয়াজ উঁচু করার কোন দরকার নেই।

إِنَّ الَّذي تَدْعُونَهُ أَقْرَبُ إِلَى أَحَدِكُمْ مِنْ عُنُقِ رَاحِلَتِهِ তোমাদের কেউ বাহনে আরোহন করা অবস্থায় তার বাহনের ঘাড়ের যত নিকটবর্তী থাকে, তোমরা যাকে আহবান করছো, তিনি তার চেয়েও আহবানকারীর অধিক নিকটেঃ সুতরাং যারা আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করে এবং যারা তাঁর যিকির করে তিনি তাদের অতি নিকটে। তাই আওয়াজ উঁচু করে দুআ করার প্রয়োজন নেই। তিনি এত নিকটে যে, আওয়াজ নীচু করে দুআ করলে যেভাবে শুনেন, উঁচু আওয়াজে দুআ করলেও ঠিক সেভাবেই শুনেন।

হাদীছ থেকে দলীল পাওয়া যাচ্ছে যে, যারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে দুআ করে, আল্লাহ তাআলা তাদের নিকটবর্তী হন। হাদীছে ইহা সাব্যস্ত করা হয়েছে। তিনি উঁচু আওয়াজগুলো যেমন শুনেন, নীচু ও অস্পষ্ট আওয়াজগুলো সেভাবেই শুনেন।

উপরের সবগুলো হাদীছ প্রমাণ করছে যে, আল্লাহ মাখলুকের সাথে, তাদের নিকটে, তিনি মাখলুকের সব আওয়াজ শুনেন এবং তিনি তাদের সমস্ত নড়াচড়া (আমলসমূহ) দেখেন। আর তিনি যে সৃষ্টির উপরে এবং আরশের উপর সমুন্নত এটি তার বিরোধী নয়।আল্লাহর মাঈয়াত তথা সৃষ্টির সাথে থাকার ব্যাখ্যা এবং উহার প্রকারভেদ কুরআনুল কারীমের দলীল-প্রমাণসহ পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে।

[1] - এই হাদীছ প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তাআলা স্বীয় সত্তাসহ আরশের উপর সমুন্নত হয়েও মাখলুকের সাথে ও নিকটে। মাখলুকের নিকটে থাকা আরশের উপর সমুন্নত হওয়ার পরিপন্থী নয়। তিনি ইলম ও ক্ষমতার মাধ্যমে মাখলুকের অতি নিকটে। আলেমদের থেকে এই ব্যাখ্যাও বর্ণিত হয়েছে। সুফীদের যেসব লোক আরশের উপরে আল্লাহ তাআলার সমুন্নত হওয়াকে অস্বীকার করে এবং বলে যে, আল্লাহ তাআলা স্বীয় সত্তাসহ মাখলুকের সাথে, তাদের কথা সম্পূর্ণ বাতিল।

[2] - আল্লাহ তাআলা তাঁর সকল বান্দার নিকবর্তী হলেও তিনি বিশেষভাবে নামাযীর নিকটবর্তী হন। আরশের উপর সমুন্নত হওয়া এবং একই সময় নামাযীর সামনে হওয়া আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও মর্যাদার সাথে সাংঘর্ষিক নয়।

[3] - সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যিক্র ওয়াদ্ দু’আ।

[4] - আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আরশের উপর সমুন্নত। কেউ যদি প্রশ্ন করে আরশের উপর থেকে নামাযীর সামনে তাঁর দৃষ্টি রাখেন কিভাবে? এর জবাব হচ্ছে, আল্লাহই ভাল জানেন, তিনি কিভাবে নামাযীর সামনে তাঁর দৃষ্টি রাখেন। ঠিক এই প্রশ্ন করাও ভুল যে, আল্লাহ তাআলা আরশের উপর থাকা সত্ত্বেও শেষ রাতে কীভাবে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। কেননা আল্লাহর সুমহান গুণাবলীর কোনোটির ব্যাপারেই এই প্রশ্ন করা যাবেনা যে, তার ধরণ কী? আল্লাহর সিফাত সংক্রান্ত আয়াত ও হাদীছগুলো সাহাবীগণ শুনেছেন। তাদের কেউ এ বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন নি। সুতরাং তিনি কিভাবে নামাযীর নিকটবর্তী হন বা সিজদার স্থানে দৃষ্টি রাখেন? এই প্রশ্ন করা বিদআত। এ বিষয়ে ইমাম মালেক (রঃ)এর উক্তি পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে। বান্দার জন্য একই সময় একাধিক স্থানে থাকা অসম্ভব, আল্লাহর জন্য আরশের উপর থেকেও দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করা নামাযীর নিকটবর্তী হওয়া বা নামাযীর সিজদার স্থানে দৃষ্টি রাখা মোটেই অসম্ভব নয় এবং বিবেক-বুদ্ধির মাধ্যমে বুঝার বহির্ভূতও নয়।

পূর্বাকাশে সকাল বেলা যখন সূর্য উদিত হয়, তখন যদি আমরা পূর্ব দিকে ফিরে দাঁড়াই এবং বিকাল বেলা যখন পশ্চিমাকাশে সূর্য অস্ত যায়, তখন আমরা যদি পশ্চিম দিকে ফিরি তখন সূর্য আমাদের সমানে থাকে। অথচ তা থাকে আকাশে এবং আমাদের বহু উপরে। সূর্য আমাদের সামনে প্রকাশিত হওয়ার জন্য আকাশ থেকে নেমে আসেনা। আল্লাহর সৃষ্টি যদি একই সাথে উপরে এবং আমাদের সামনে থাকতে পারে, তাহলে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ তাআলার জন্য আরশের উপরে এবং নামাযীর সামনে থাকা কি করে অসম্ভব হতে পারে!!!

[5] - বিজ্ঞ আলেম ও কালাম শাস্ত্রবিদগণ আল্লাহ তাআলার এই নামগুলোর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। মুসলিম শরীফে বর্ণিত উপরোক্ত সহীহ হাদীছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যেহেতু এগুলোর ব্যাখ্যা এসে গেছে, তাই এসব ব্যাখ্যার কোন প্রয়োজন ছিলনা। আল্লাহ তাআলার এই চারটি নাম তথা الأَوَّل (সর্বপ্রথম) ও الآخر (সর্বশেষ) এবং الظَاهِر (সবকিছুর উপরে) ও البَاطِن (অতি নিকটে) প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তাআলা সমস্ত সৃষ্টিকেই সকল দিক থেকে পরিবেষ্টন করে আছেন। الأَوَّل (সর্বপ্রথম) ও الآخر (সর্বশেষ) -এই দু’টি নাম প্রমাণ করে যে, তিনি সমস্ত কাল ও যামানাকে পরিবেষ্টন করে রয়েছেন। অর্থাৎ স্থান, কাল এবং তাতে যত মাখলুক সৃষ্টি করা হয়েছে, তা সৃষ্টি করার পূর্বেও তিনি ছিলেন। স্থান, কাল ও সমস্ত মাখলুক ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরও তিনি অবশিষ্ট থাকবেন। অর্থাৎ যখন কিছুই ছিল না তখনো তিনি ছিলেন এবং যখন কিছুই থাকবেনা তখনো তিনি থাকবেন।

আর আল্লাহ তাআলার الظَاهِر (সবকিছুর উপরে) ও البَاطِن (অতি নিকটে) এই নাম দু’টি প্রমাণ করে যে, তিনি উর্ধ্বজগৎ এবং নিম্নজগতের সকল স্থান এবং সেসব স্থানের সবকিছুকেই (তাঁর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা দ্বারা) ঘেরাও করে আছেন।

আল্লাহর যাহের নামটি প্রমাণ করে যে, তিনি সকল মাখলুকের উপরে। আরবী ভাষায় প্রত্যেক বস্ত্তর উপরের অংশকে যাহের বলা হয়। সকল মাখলুক তাঁর নীচে। তাঁর উপরে কোন মাখলুক নেই।

কেউ কেউ যাহের অর্থ করেছেন যে, তিনি প্রকাশ্য। তাদের মতে الظهور থেকে الظاهر নামটি এসেছে। ظهور অর্থ প্রকাশিত হওয়া। সুতরাং তিনি তাঁর নিদর্শন, দলীল-প্রমাণ এবং কার্যাবলীর মাধ্যমে মানুষের বিবেকের নিকট অত্যন্ত প্রকাশিত। আর তিনি الباطن অপ্রকাশ্য এই হিসাবে যে, দুনিয়ার অন্যান্য দৃশ্যমান জিনিষের মত তাঁকে দেখা যায়না।

সুতরাং এই চারটি নামের মূল অর্থই হচ্ছে আল্লাহ তাআলা সকল সৃষ্টিকে সকল দিক থেকেই ঘেরাও করে আছেন। সৃষ্টির সূচনার পূর্বেই আল্লাহ তাআলা বিদ্যমান থাকা এবং সব সৃষ্টির শেষেও অনন্তকাল তিনি অবশিষ্ট থাকা প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম যে সকল বস্ত্ত সৃষ্টি করেছেন এবং সবশেষে যে সকল বস্ত্ত সৃষ্টি করবেন, তার সবই তিনি পরিবেষ্টন করে আছেন। তিনি যাহের তথা সবকিছুর উপরে হওয়া এবং বাতেন তথা সবকিছুর নিকটে হওয়ার দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, তিনি প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল বস্ত্তকেই (তাঁর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা দ্বারা) ঘেরাও করে আছেন।

সেই হিসাবে আল্লাহ তাআলার الأول নামটি তাঁর সর্বপ্রথম হওয়ার প্রমাণ করে। তাঁর الآخر নামটি তার চিরস্থায়িত্বের প্রমাণ করে। তাঁর الظاهر নামটি প্রমাণ করে যে, তিনি সবকিছুরে উপরে এবং তিনি সর্বাধিক মহান। আর আল্লাহ তাআলার الباطن নামটি প্রমাণ করে যে, তিনি সৃষ্টির অতি নিকটে এবং তাদের সাথে।

আল্লাহ তাআলার الباطن নামটির ব্যাখ্যায় আলেমদের থেকে বিভিন্ন উক্তি পাওয়া যায়। সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ অর্থাৎ তুমি অতি নিকটে, তোমার চেয়ে অধিক নিকটে আর কিছুই নেই। এ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, الباطن অর্থ নিকটে। সুতরাং আল্লাহ তাআলা মাখলুকের নিকটবর্তী এবং তিনি স্বীয় ইলমের মাধ্যমে তাদেরকে বেষ্টন করে আছেন। তিনি তাদের সকল গোপন এবং অস্পষ্ট বিষয় ও অবস্থা সম্পর্কে জানেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنكُمْ وَلَٰكِن لَّا تُبْصِرُونَ আমি তোমাদের চেয়ে সেই মুমূর্ষ ব্যক্তির অধিক নিকটবর্তী, কিন্তু তোমরা দেখতে পাওনা। (সূরা ওয়াকিয়াঃ ৮৫) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ

﴿وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهِ نَفْسُهُ وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ﴾

‘‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি। আর তাদের মনে যেসব কুমন্ত্রণা উদিত হয় তা আমি জানি৷ আমি তার ঘাড়ের শাহ রগের চেয়েও অধিক নিকটে আছি’’। (সূরা কাফঃ ১৬)

এই আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে যে, আমার ক্ষমতা ও জ্ঞান ভিতর ও বাহির থেকে এমনভাবে মানুষকে পরিবেষ্টন করে আছে যে, আমার ক্ষমতা ও জ্ঞান তার যতটা নিকটে ততটা নিকটে তার ঘাড়ের শিরাও নয় । তার কথা শোনার জন্য আমাকে কোথাও থেকে আসতে হয়না । তার মনের মধ্যে উদিত কল্পনাসমূহ পর্যন্ত আমি সরাসরি জানি । অনুরূপভাবে তাকে যদি কোন সময় পাকড়াও করতে হয় তখনো আমাকে কোথাও থেকে এসে তাকে পাকড়াও করতে হয়না। সে যেখানেই থাকুক, সর্বদা আমার আয়ত্বাধীনেই আছে যখন ইচ্ছা আমি তাকে পাকড়াও করবো।

কেউ কেউ বলেছেনঃ الباطن অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টির দৃষ্টিসীমা ও ধারণার অন্তরালে এবং অপ্রকাশ্য। যারা এই কথা বলেছেন, তাদের কেউ কেউ একটু বাড়িয়ে ব্যাখ্যা করেছেন যে, আল্লাহ তাআলা যেহেতু অপ্রকাশ্য, তাই পৃথিবীর কোথাও তাঁকে খুঁজে বের করা বা তাঁর দেখা পাওয়া যাবেনা। তিনি সব গুপ্ত জিনিসের চেয়ে অধিক গুপ্ত। কারণ, ইন্দ্রীয়সমূহ দ্বারা তাঁর সত্তাকে অনুভব ও উপলব্ধি করা তো দূরের কথা বিবেক-বুদ্ধি, চিন্তাভাবনা ও কল্পনা পর্যন্ত তাঁর গভীর রহস্য ও বাস্তবতাকে স্পর্শ করতে পারেনা।

যারা আল্লাহ তাআলার الباطن নামের উপরোক্ত অর্থ বর্ণনা করেছেন, তারা তাঁর الظاهر নামের অর্থ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন যে, যাহের অর্থ প্রকাশ্য। তারা উভয় নামের অর্থ এভাবে করেছেন যে, তিনিই প্রকাশ্য, তিনিই অপ্রকাশ্য। তিনি সব প্রকাশ্যের চেয়ে অধিক প্রকাশ্য। কারণ পৃথিবীতে যেসব জিনিষের প্রকাশ দেখা যায় তা তাঁরই গুণাবলী, তাঁরই কার্যাবলী এবং তাঁরই নূরের প্রকাশ।

কেউ কেউ বলেছেনঃ الباطن অর্থ হচ্ছে هو العالم بما بطن يقال بطنت الأمر اذا عرفت باطنهতিনি সকল গুপ্ত বস্ত্ত সম্পর্কে অবগত। যেমন বলা হয়, بطنت الأمر আমি বিষয়টির গোপন অবস্থা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এই কথা আপনি ঠিক তখনই বলেন, যখন ঐ বিষয়ের গুপ্ত ব্যাপার সম্পর্কে জানতে পারেন। দেখুনঃ শাইখ সিন্দী (রঃ)এর টিকাসহ ইবনে মাজাহ, (৮/২১৭)

এখানে একটি কথা বিশেষভাবে স্মরণ রাখা দরকার যে, হাদীছে যেহেতু বলা হয়েছে الظاهر অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা সবকিছুর উপরে, তাঁর উপরে আর কিছু নেই, তাই যাহেরের মোকাবেলায় الباطن এর অর্থ এ রকম বলা যাবেনা যে, তিনি সবকিছুর নীচে, তাঁর নীচে আর কিছুই নেই, নাউযুবিল্লাহ। সুতরাং আল্লাহ আমাদের নীচে, -এটি বলা অবৈধ। কেননা কোন কিছুর নীচে হওয়া ত্রুটিপূর্ণ সিফাত বা বিশেষণ। আল্লাহ তাআলার সত্তা উপরে হওয়ার বিশেষণে বিশেষিত, নীচে হওয়ার বিশেষণে নয়। উপরে হওয়া আল্লাহর সিফাতে যাতীয়া বা সত্তাগত গুণ।

মোটকথা আল্লাহ তাআলার উপরোক্ত চারটি নামের ব্যাখ্যায় উপরে বর্ণিত অর্থগুলোর সবগুলোই বা অধিকাংশই সঠিক। তবে ঐ নামগুলোর ব্যাখ্যায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা বলেছেন, তাই আমাদের বিশ্বাস করা ও মেনে নেওয়া আবশ্যক। যেই অর্থ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, তার বিপরীত ব্যাখ্যা সাহাবী, তাবেঈ এবং সালাফে সালেহীন থেকে কিছুই পাওয়া যায়নি। সুতরাং তা গ্রহণ করাই অধিক নিরাপদ।
৮- মুমিনগণ কিয়ামতের দিন তাদের রবকে দেখতে পাবে

৮- إثبات رؤية المؤمنين لربهم يوم القيامة

৮- মুমিনগণ কিয়ামতের দিন তাদের রবকে দেখতে পাবে:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هَذَا الْقَمَرَ ليلة البدر لا تُضَامُّونَ فِي رُؤْيَتِهِ، فَإِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ لا تُغْلَبُوا عَلَى صَلاةٍ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا فَافْعَلُوا» (بخارى:554)

‘‘কোন অসুবিধা ছাড়াই তোমরা যেমন পূর্ণিমার রাতে চন্দ্রকে দেখতে পাও, সেভাবেই তোমরা অচিরেই তোমাদের প্রভুকে দেখতে পাবে। সুতরাং তোমাদের যদি এই পরিমাণ সামর্থ থাকে, সূর্য উদয় এবং অস্তের পূর্বের নামায হতে কোন বস্তুই তোমাদেরকে পরাভুত করতে পারবেনা, তাহলে উক্ত নামাযদ্বয়কে তোমরা যথাসময়ে আদায় করো।


ব্যাখ্যাঃ এখানে إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ দ্বারা মুমিনদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। سترون এর মধ্যে যে سين অক্ষরটি প্রবেশ করেছে, তা ভবিষ্যৎকালের জন্য হলেও এখানে তা দ্বারা তাগিদ তথা বাক্যের বিষয়কে শক্তিশালী করা উদ্দেশ্য। অর্থাৎ তোমরা তোমাদের চোখ দ্বারা আল্লাহ তাআলাকে দেখবে। মুমিনগণ তাদের রবকে দেখার বিষয়ে বর্ণিত হাদীছগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে মুতাওয়াতির তথা ব্যাপক সংখ্যক বর্ণনাকারীর সূত্রে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।[1]

كَمَا تَرَوْنَ هَذَا الْقَمَرَ ليلة البدر তোমরা যেমন পূর্ণিমার রাতে এই চন্দ্রকে দেখতে পাওঃ অর্থাৎ চন্দ্র তার পরিপূর্ণ রূপ গ্রহণ করার রাতে। এটি হচ্ছে মাসের ১৪তম রাত। ঐ রাতে চন্দ্র আলোতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এখানে এই তাশবীহ তথা আল্লাহর দিদারকে পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখার সাথে তুলনা করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, জোর দিয়ে আল্লাহর দিদারকে সত্য হিসাবে সাব্যস্ত করা এবং তার দ্বারা রূপকার্থ উদ্দেশ্য হওয়ার সন্দেহকে দূর করা। বিশেষভাবে স্মরণ রাখতে হবে যে, এখানে আল্লাহর দিদারকে পূর্ণিমার রাতের মেঘহীন আকাশে চাঁদ দেখার সাথে তুলনা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলাকে চাঁদের সাথে তুলনা করা হয়নি। কেননা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার সদৃশ আর কিছুই নেই।

لا تُضَامُّونَ فِي رُؤْيَتِهِ উহাকে দেখতে তোমাদের কোন অসুবিধা হয়নাঃ تا বর্ণে পেশ দিয়ে এবং ميم বর্ণে যবর দিয়ে পড়া হয়েছে। অর্থাৎ তোমাদের উপর এমন কোনো যুলুম হয়না যে, ভীড়ের কারণে কেউ দেখতে পাবে আবার কেউ দেখতে পাবেনা।

لاتضامون এর তা تا বর্ণে যবর দিয়ে এবং ميم বর্ণে তাশদীদ দিয়ে পড়া হয়েছে। এভাবে পড়া হলে এর মাসদার হবে التضامّ। অর্থাৎ পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখার জন্য তোমাদের একজনকে অন্যজনের কাছে গিয়ে মিশতে হয়না। এই বর্ণনা অনুসারে অর্থ হবে, চাঁদ দেখার জন্য তোমাদের সবাইকে এক স্থানে জড়ো হওয়ার প্রয়োজন হয়না। যাতে খুব ভীড় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

উভয় বর্ণনার অর্থ একসাথে এই হবে যে, নিশ্চয়ই তোমরা তোমাদের রবকে দেখতে পাবে। এই দেখা সত্য। তোমাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকেই দেখতে পাবে।

فَإِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ لا تُغْلَبُوا সুতরাং তোমাদের যদি সামর্থ থাকে যে, কোনো বস্ত্তই তোমাদেরকে পরাভুত করতে পারবেনাঃ অর্থাৎ সূর্যোদয়ের পূর্বের নামাযটি পড়া হতে তোমরা পরাজিত হয়ে যাবেনা। এটি হচ্ছে ফজরের নামায। আর সূর্য ডুবার পূর্বেও একটি নামায থেকে পরাভূত হবেনা। তা হচ্ছে আসরের নামায। তোমরা যদি উক্ত নামায দু’টি যথা সময়ে আদায়ের সামর্থ রাখো, তাহলে নামাযদ্বয় আদায় করার ক্ষেত্রে কোন প্রকার ত্রুটি ও গাফেলতী করোনা। বরং জামাআতের সাথে এবং সঠিক সময়ে এই নামায দু’টি আদায়ে যত্নবান হও। এই দু’টি নামাযকে খাস করে উল্লেখ করার কারণ হলো, এতে ফেরেশতাগণ একসাথে মিলিত হয়।[2] সুতরাং আসর ও ফজরের নামায পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের মধ্যে সর্বোত্তম। তাই যে ব্যক্তি এই নামায দু’টি যত্নসহকারে আদায় করবে, সে সর্বোত্তম পুরস্কার পাওয়ার উপযুক্ত হবে। আর সেটি হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকা।

হাদীছ থেকে দলীল পাওয়া যাচ্ছে যে, কিয়ামতের দিন খোলাখুলিভাবে এবং কপালের চোখ দিয়ে প্রকাশ্যভাবেই মুমিনগণ তাদের রবকে দেখতে পাবে।[3] যে আয়াতগুলোতে আল্লাহর দিদার সাব্যস্ত হয়েছে সেগুলোর ব্যাখ্যা করার সময় ঐসব লোকের আলোচনা ও প্রতিবাদ পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে, যারা এই মাসআলায় বিরোধীতা করেছে। অর্থাৎ কিয়ামতের দিন আল্লাহর দিদারকে অস্বীকার করেছে।


[1] - যারীর, সুহাইব, আনাস, আবু হুরায়রা, আবু মুসা, আবু সাঈদ ও অন্যান্য সাহাবী (রাঃ) হতে সহীহ এবং সুনানের কিতাবগুলোতে এসমস্ত হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

«أَنَّ النَّاسَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ نَرَى رَبَّنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَلْ تُضَارُّونَ فِي الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ قَالُوا لَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ فَهَلْ تُضَارُّونَ فِي الشَّمْسِ لَيْسَ دُونَهَا سَحَابٌ قَالُوا لَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ فَإِنَّكُمْ تَرَوْنَهُ كَذَلِكَ»

‘‘একদল লোক বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি কিয়ামতের দিন আমাদের প্রভুকে দেখতে পাব? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ পূর্ণিমার রাত্রিতে চন্দ্রকে দেখতে কি তোমাদের কোন অসুবিধা হয়? তারা বললঃ না কোন অসুবিধা হয়না। তিনি আবার বললেনঃ আকাশে মেঘ না থাকলে সূর্য দেখতে তোমাদের কোন অসুবিধা হয় কি? তারা বললঃ না কোন অসুবিধা হয়না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমরা কিয়ামতের দিন এরকম পরিস্কারভাবেই আল্লাহকে দেখতে পাবে’’। কাইস বিন আবু হাযেম বলেনঃ

«سَمِعْتُ جَرِيرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ وَهُوَ يَقُولُ كُنَّا جُلُوسًا عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ نَظَرَ إِلَى الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ فَقَالَ أَمَا إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هَذَا الْقَمَرَ لَا تُضَامُّونَ فِي رُؤْيَتِهِ»

‘‘আমি জারির বিন আব্দুল্লাহকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেনঃ একদা পুর্ণিমার রাত্রিতে আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর পাশে বসা ছিলাম। তিনি চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আমাদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ কোন রকম অসুবিধা ছাড়াই তোমরা যেভাবে এই চন্দ্রটিকে দেখতে পাচ্ছ অচিরেই সেভাবে তোমরা তোমাদের প্রভুকে দেখতে পাবে’’।

সুতরাং প্রকাশ্যভাবেই মু’মিনগণ কিয়ামতের দিন আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখতে পাবে। এটিই হবে বেহেশতের ভিতরে মু’মিনদের জন্য সবচেয়ে বড় নেয়ামত। যারা এর বিরোধীতা করবে তাদের কথা গ্রহণযোগ্য নয়। ‘‘যেমন কর্ম তেমন ফল’’ এই মূলনীতির ভিত্তিতে তারা আল্লাহর দর্শন থেকে বঞ্চিত হবেন বলে আলেমদের যে বক্তব্য রয়েছে সেটাই প্রণিধানযোগ্য।

[2] - আসর ও ফজরের নামাযে ফেরেশতাদের মিলিত হওয়ার হাদীছটি হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

«يَتَعَاقَبُونَ فِيكُمْ مَلَائِكَةٌ بِاللَّيْلِ وَمَلَائِكَةٌ بِالنَّهَارِ وَيَجْتَمِعُونَ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ وَصَلَاةِ الْعَصْرِ ثُمَّ يَعْرُجُ الَّذِينَ بَاتُوا فِيكُمْ فَيَسْأَلُهُمْ وَهُوَ أَعْلَمُ بِهِمْ كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادِي فَيَقُولُونَ تَرَكْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ وَأَتَيْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ»

‘‘তোমাদের নিকট রাতে একদল ফেরেশতা এবং দিনে একদল ফেরেশতা পালাক্রমে আগমণ করে থাকেন। তারা ফজর ও আসরের নামাযের সময় একসাথে একত্রিত হয়। অতঃপর তোমাদের কাছে যে দলটি ছিল, তারা উপরে উঠে যায়। মহান আল্লাহ জানা সত্ত্বেও তাদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ আমার বান্দাদেরকে কি অবস্থায় ছেড়ে এসেছো? তাঁরা বলেনঃ আমরা তাদেরকে নামায অবস্থায় ছেড়ে এসেছি এবং যখন তাদের কাছে গিয়েছিলাম, তখন তারা নামাযেই ছিল’’। (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং- ৫৩০)

[3] - এখান থেকে সুস্পষ্ট রূপেই প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর আকার রয়েছে। তবে তা কেমন, তা আমরা জানিনা। কিন্তু যিনি তাঁর সৃষ্টিকে এত সৌন্দর্য দান করেছেন, তিনি অতি সুন্দর হবেন, - এটি যুক্তি ও বিবেক দ্বারা সমর্থিত। হাদীছে রয়েছে, إن الله جميل يحب الجمال অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা অতি সুন্দর। তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। সুতরাং আল্লাহ নিরাকার এই কথা বলা মারাত্মক ভূল।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৯ পর্যন্ত, সর্বমোট ৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে