সহীহ হাদীছ দ্বারা আল্লাহ তাআলার জন্য সাব্যস্ত গুণাবলীতে বিশ্বাস করা আবশ্যক

সহীহ হাদীছ দ্বারা আল্লাহ তাআলার জন্য সাব্যস্ত গুণাবলীতে বিশ্বাস করা আবশ্যক:

অতঃপর শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেন,

وَمَا وَصَفَ الرَّسُولُ بِهِ رَبَّهُ عَزَّ وَجَلَّ مِنَ الأَحَادِيثِ الصِّحَاحِ الَّتِي تَلَقَّاهَا أَهْلُ الْمَعْرِفَةِ بِالْقَبُولِ؛ وَجَبَ الإيمَانُ بِهَا كَذَلِك

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সহীহ হাদীছসমূহে তাঁর প্রভুকে যেই সুউচ্চ গুণাবলীতে বিশেষিত করেছেন এবং হাদীছ সম্পর্কে পারদর্শী আলেমগণ যেসব হাদীছ কবুল করে নিয়েছেন, সেই হাদীছগুলোর প্রতি ঈমান আনয়ন করা এবং তাতে আল্লাহ তাআলার যেসব অতি সুন্দর নাম ও সু্উচ্চ গুণাবলী রয়েছে তা বিশ্বাস করা আবশ্যক।


ব্যাখ্যা: وما وصف به থেকে শুরু করে بالقبول পর্যন্ত সবগুলো শব্দ মিলে মুবতাদা হয়েছে। আরوجب الإيمان بها كذالك হচ্ছে তার খবর। অর্থাৎ কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা নিজেকে যেসব গুণে গুণান্বিত করেছেন, তার প্রতি ঈমান আনয়ন করা যেমন জরুরী, তেমনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সহীহ হাদীছে আল্লাহ তাআলার যেসব গুণাবলী বর্ণনা করেছেন, তার প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে বলেনঃ ﴿وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى إِنْ هُوَ إِلا وَحْيٌ يُوحَى﴾ ‘‘এবং তিনি প্রবৃত্তির তাড়নায় কোন কথা বলেন না। তা অহী ছাড়া অন্য কিছু নয়, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ হয়। (সূরা নাজমঃ ৩-৪) সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতও আল্লাহর পক্ষ হতে অহী স্বরূপ। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

﴿وَأَنزَلَ اللَّهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُن تَعْلَمُ ۚ وَكَانَ فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا﴾

‘‘আল্লাহ তোমার উপর কিতাব ও হিকমত নাযিল করেছেন, এমনসব বিষয় তোমাকে শিখিয়েছেন যা তোমার জানা ছিলনা এবং তোমার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ অনেক বেশী’’। (সূরা নিসাঃ ১১৩) এখানে কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে কুরআনুল কারীম আর হিকমত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সুন্নাত। সুতরাং সুন্নাতে যা বর্ণিত হয়েছে, তাতে বিশ্বাস করা আবশ্যক। বিশেষ করে আকীদাহ সম্পর্কিত বিষয়ে যা বর্ণিত হয়েছে তার প্রতি ঈমান আনয়ন করা ওয়াজিব। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

﴿وَمَاَآتاَكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا﴾

‘‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেন, তা থেকে তোমরা বিরত থাকো’’। (সূরা হাশরঃ ৭)

সুতরাং হাদীছ গ্রহণ করার শর্ত হচ্ছে, তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহীহ সূত্রে প্রমাণিত হওয়া চাই। এই জন্যই ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেছেনঃ من الأحاديث الصحاح। الصحاح শব্দটি صحيح -এর বহুবচন। পরিভাষায়والحديث الصحيح هو ما نقله راو عدل تام الضبط عن مثله من غير شذوذ ولا علة সহীহ ঐ হাদীছকে বলা হয়, যা বর্ণনা করেছেন পূর্ণ স্মরণ শক্তি সম্পন্ন ন্যায় পরায়ন বর্ণনাকারী তাঁর অনুরূপ আরেকজন বর্ণনাকারী থেকে। সেই সাথে বর্ণনাটি যেন شاذ (বিরল) এবং معلول (ত্রুটিযুক্ত) না হয়। কাজেই হাদীছ সহীহ হওয়ার জন্য পাঁচটি শর্ত রয়েছে। (১) বর্ণনাকারীদের আদালত তথা ন্যায় পরায়নতা, (২) তাদের স্মরণ শক্তি, (৩) হাদীছের সনদ মুত্তাসিল হওয়া, (৪) হাদীছের সনদ সকল ইল্লত তথা দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত হওয়া এবং (৫) হাদীছটি শায (অন্যান্য সহীহ হাদীছের বিপরীত) না হওয়া। [1]تَلَقَّاهَا أَهْلُ الْمَعْرِفَةِ بِالْقَبُولِ হাদীছ সম্পর্কে পারদর্শী আলেমগণ যেসব হাদীছ কবুল করে নিয়েছেনঃ অর্থাৎ যেই হাদীছকে মুহাদ্দিছগণ গ্রহণ করেছেন এবং যার উপর আমল করেছেন, তাকে সহীহ হাদীছ বলে। মুহাদ্দিছগণ ব্যতীত অন্যদের কথা হাদীছের ক্ষেত্রে অগ্রহণযোগ্য। অতঃপর শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) সুন্নাতে বর্ণিত আল্লাহ তাআলার অনেক সিফাতের উদাহরণ পেশ করেছেন।

[1] - কোনো নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর এমন বর্ণনাকে শায বলা হয়, যা তার চেয়ে অধিক নির্ভরযোগ্য অথবা অধিক সংখ্যক নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর বর্ণনার বিপরীত। এ ক্ষেত্রে অধিক নির্ভরযোগ্য রাবীর বর্ণনাটিই গ্রহণযোগ্য হবে এবং তার উপর আমল করা হবে।