৪- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার জন্য ‘পা’ সাব্যস্ত করা

৪- إثبات الرجل والقدم لله سبحانه

৪- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার জন্য ‘পা’ সাব্যস্ত করা:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لَا تَزَالُ جَهَنَّمُ يلقى فيها وهي تَقُولُ هَلْ مِنْ مَزِيدٍ حَتَّى يَضَعَ رَبُّ الْعِزَّةِ فِيهَا رجله وفي رواية قَدَمَه فينزوي بعضها إلى بعض فَتَقُولُ قَطْ قَطْ متفق عليه

‘‘জাহান্নামে অপরাধীদেরকে নিক্ষেপ করা হতেই থাকবে। জাহান্নাম বলবেঃ আরো আছে কি? তখন মহান রাববুল আলামীন জাহান্নামে নিজের ‘পা’ রাখবেন। অন্য বর্ণনায় رجله -এর স্থলে قدمه এসেছে। এতে জাহান্নাম সংকোচিত হয়ে যাবে এবং বলবেঃ ‘যথেষ্ট হয়েছে’ ‘যথেষ্ট হয়েছে’।[1]


ব্যাখ্যা: পরকালে আল্লাহ তাআলা কাফের ও গুনাহগারদেরকে যেই আগুনের শাস্তি দিবেন, সেই শাস্তির অন্যতম নাম হচ্ছে জাহান্নাম। কেউ কেউ বলেছেন জাহান্নামের গভীরতার কারণেই এই নামে নামকরণ করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন জাহান্নাম যেহেতু খুব অন্ধকারাচ্ছন্ন, তাই একে জাহান্নাম হিসাবে নামকরণ করা হয়েছে। কারণ জাহান্নাম শব্দটি الجهومة থেকে গৃহীত হয়েছে। জুহুমাহ শব্দের অর্থ অন্ধকার।

يلقى فيها জাহান্নামে অপরাধীদেরকে নিক্ষেপ করা হতেই থাকবেঃ অর্থাৎ কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হতেই থাকবে। ঐদিকে জাহান্নাম বলবেঃ আরো আছে কি? অর্থাৎ জাহান্নাম আরো বেশী চাইতে থাকবে। কেননা জাহান্নাম অনেক প্রশস্ত। আল্লাহ তাআলা জাহান্নামকে ভর্তি করার ওয়াদা করেছেন।

حَتَّى يَضَعَ رَبُّ الْعِزَّةِ فِيهَا رجله তখন মহান রাববুল আলামীন তাতে নিজের ‘পা’ রাখবেনঃ জাহান্নাম যেহেতু অত্যন্ত বড় এবং উহা যেহেতু খুব প্রশস্ত আর আল্লাহ তাআলা জাহান্নামকে পূর্ণ করার ওয়াদা করেছেন, ঐ দিকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার রহমতের দাবী হচ্ছে, তিনি কাউকে বিনা অপরাধে শাস্তি দিবেন না, তাই তিনি ওয়াদা পূর্ণ করতে গিয়ে জাহান্নামে স্বীয় ‘পা’ রাখবেন।

فينزوي بعضها إلى بعض এতে জাহান্নাম সংকোচিত হয়ে যাবেঃ অর্থাৎ জাহান্নামের এক অংশ অন্য অংশের সাথে মিলে যাবে এবং এর উভয় পার্শ্ব পরস্পর মিশে যাবে। ফলে এর মধ্যে তখন যত বাসিন্দা থাকবে, তাদের ছাড়া আর কোন লোক প্রবেশ করার জায়গা খালী থাকবেনা।

فَتَقُولُ قَطْ قَطْ জাহান্নাম বলবেঃ ‘যথেষ্ট হয়েছে’ ‘যথেষ্ট হয়েছে’ঃ অর্থাৎ জাহান্নাম বলবে আমার জন্য এই পরিমাণই যথেষ্ট।

অত্র হাদীছের মাধ্যমে আল্লাহর ‘পা’ সাব্যস্ত হলো। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য যেমন ‘পা’ শোভনীয়, তাঁর ‘পা’ ঠিক সেরকমই। আল্লাহ তাআলার হাত এবং চেহারার মতই পা তাঁর সিফাতে যাতীয়া তথা সত্তাগত বিশেষণ।

এই হাদীছের ব্যাখ্যায় মুআত্তিলা (আল্লাহর সিফাত অস্বীকারকারী) সম্প্রদায় মারাত্মক ভুল করেছে। তারা বলেছে, قدمه (আল্লাহর ‘পা’) বলতে বিশেষ এক প্রকার সৃষ্টি উদ্দেশ্য। তারা আরো বলেছে, হাদীছের অপর বর্ণনায় যেখানে قدمه এর স্থলে رجله এসেছে। তাই ‘পা’ বলতে একদল মানুষ (কাফের) উদ্দেশ্য। যেমন বলা হয়ে থাকে رجل جراد (পঙ্গপালের একটি দল)।এই ব্যাখ্যার প্রতিবাদে বলা হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, حتى يضع ০০০الخ আল্লাহ তাআলা জাহান্নামে ‘পা’ রাখবেন। তিনি এই কথা বলেন নি যে, حتى يلقي فيها তিনি উহাতে নিক্ষেপ করবেন। যেমন হাদীছের প্রথম অংশে বলেছেন, জাহান্নামে উহার বাসিন্দাদেরকে নিক্ষেপ করা হতেই থাকবে। সেই সাথে আরো বলা হয়েছে যে, رجل শব্দকে জামাআত বা দল দ্বারা ব্যাখ্যা করা গেলেও قدم শব্দকে প্রকৃত কিংবা রূপকার্থে জামাআত বা দল দ্বারা ব্যাখ্যা করার কোন সুযোগ নেই।[2]

[1] - বুখারী, অধ্যায়: আইমান ওয়ান্ নুযুর।

[2] - এখন কেউ যদি প্রশ্ন করে, আল্লাহ তাআলা যখন জাহান্নামে ‘পা’ রাখবেন, তখন কি জাহান্নামের আগুনে আল্লাহর ‘পা’ পুড়ে যাবেনা? এর জবাবে বলা যেতে পারে, আল্লাহ তাআলার শান, বড়ত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে অজ্ঞ লোকের মনেই কেবল এই ধরণের প্রশ্ন জাগতে পারে। কারণ আল্লাহ তাআলা সবকিছুর স্রষ্টা এবং সকল বস্ত্তর ক্রিয়া ও গতি-প্রকৃতির নিয়ন্ত্রক। সকল সৃষ্টিই আল্লাহর অনুগত। আগুনও তাঁর অনুগত। আগুন তার নিজস্ব ইচ্ছা ও ক্ষমতায় জ্বলেনা এবং অন্যকেও জ্বালায়না। মানুষ যখন আগুন জ্বালায় তখন আগুণ জ্বলবে কি জ্বলবেনা, তা আল্লাহর কাছে অনুমতি সাপেক্ষ ব্যাপার। আল্লাহর অবগতি ও অনুমতিতেই আগুন জ্বলে। ইবরাহীম (আঃ)কে যখন নমরুদের বাহিনী আগুনে নিক্ষেপ করলো, তখন আল্লাহ তাআলা বললেনঃ হে আগুন! তুমি ইবরাহীমের উপর শান্তিময় ঠান্ডা হয়ে যাও। তাই সমস্ত কাঠ পুড়ে ছাই হলো এবং ইবরাহীমকে যেই রশি দিয়ে বেঁধে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, সেই রশি পুড়ল, কিন্তু ইবরাহীম (আঃ)এর একটি পশমও পুড়লনা। সুতরাং আগুন আল্লাহর ‘পা’ জ্বালিয়ে ফেলবে, এই ধারণা অবাস্তব।