৩- আল্লাহ তাআলা আশ্চর্যান্বিত হন এবং হাসেন

৩- إثبات أن الله يعجب ويضحك

৩- আল্লাহ তাআলা আশ্চর্যান্বিত হন এবং হাসেন:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«عَجِبَ رَبُّنَا مِنْ قُنُوطِ عِبَادِهِ وَقُرْبِ غِيَرِهِ يَنْظُرُ إِلَيْكُمْ آزِلِينَ قَنِطِينَ فَيَظَلُّ يَضْحَكُ يَعْلَمُ أَنَّ فَرَجَكُمْ قَرِيبٌ»

‘‘আমাদের রব তাঁর বান্দাদের নিরাশ হওয়াতে এবং তিনি যে তাদের অবস্থা অচিরেই পরিবর্তন করে দিবেন তাতে আশ্চর্যবোধ করেন। তোমরা অনাবৃষ্টি, দুর্ভিক্ষ, সংকীর্ণতা এবং আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ থাকা অবস্থায় আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে দেখেন। এ অবস্থায় তিনি হাসতে থাকেন। তিনি জানেন যে, তোমাদের বিপদ মুক্তি, আরাম-আয়েশ ও সুখ-শান্তির সময় অতি নিকটে। এ হাদীছটি হাসান।


ব্যাখ্যা: عَجِبَ رَبُّنَا আমাদের রব আশ্চর্যবোধ করেনঃ অভিধানগ্রন্থ ‘আলমিসবাহ’ নামক কিতাবে রয়েছে, তাজ্জব দুই প্রকার বিষয় ও বস্ত্ত থেকে হতে পারে। (১) এমন বিষয় ও বস্ত্ত থেকে আশ্চর্যবোধ হয়, যাতে আশ্চর্যবোধকারী ঐ বস্ত্ত বা বিষয়ের প্রশংসা করে। এই প্রকার আশ্চর্যবোধের মধ্যে আশ্চর্যবোধকারী বিষয়টিকে সুন্দর ও ভাল মনে করে এবং তার প্রতি নিজের সন্তুষ্টির কথা জানায়। (২) এমন বিষয় হতে আশ্চর্যবোধ করা হয়, যাকে আশ্চর্যবোধকারী অপছন্দ করে। এই প্রকার আশ্চর্যবোধের মধ্যে আশ্চর্যবোধকারী কোন বিষয়ের প্রতিবাদ করে এবং উহার নিন্দা করে।

مِنْ قُنُوطِ عِبَادِهِ তাঁর বান্দাদের নিরাশ হওয়া থেকেঃ কোন জিনিষ হতে একেবারে নিরাশ হয়ে যাওয়াকে قنوط বলা হয়। তবে এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে বৃষ্টি বর্ষণ হওয়া এবং অনাবৃষ্টির অপকারিতা বিদূরিত হওয়া থেকে নিরাশ হওয়া।

وَقُرْبِ غِيَرِهِ অচিরেই অবস্থার পরিবর্তন হওয়াঃ غيره শব্দের গাইন বর্ণে যের দিয়ে এবং ইয়া বর্ণে যবর দিয়ে পড়তে হবে। অর্থাৎ কঠিন অবস্থাকে ভাল অবস্থার মাধ্যমে পরিবর্তন করা।

يَنْظُرُ إِلَيْكُمْ آزِلِينَ তোমরা অনাবৃষ্টি, দুর্ভিক্ষ, সংকীর্ণতা এবং আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ থাকা অবস্থায় আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে দেখেনঃ الأزل থেকে آزلين শব্দটি গঠন করা হয়েছে। الأزل -এর যা বর্ণে সাকীন দিয়ে পড়তে হবে। এর অর্থ হচ্ছে সংকীর্ণতা ও নিরাশায় নিপতিত হওয়া। বলা হয়ে থাকে أزل يأزل أزلا অর্থাৎ অনাবৃষ্টি, দুর্ভিক্ষ এবং অভাব-অনটনে নিপতিত হয়েছে।

فَيَظَلُّ يَضْحَكُ তিনি হাসতে থাকেনঃ এটি আল্লাহ তাআলার ঐ সমস্ত সিফাতে ফেলিয়াসমূহের (কর্মগত বিশেষণসমূহের) মধ্যে গণ্য, যা মাখলুকের কোন সিফাতের মত নয়। সুতরাং এই হাদীছে আল্লাহ তাআলার কর্ম সম্পর্কিত সিফাতসমূহ থেকে দু’টি সিফাত সাব্যস্ত করা হয়েছে। সিফাত দু’টি হচ্ছে আশ্চর্যান্বিত হওয়া এবং হাসা। আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য শোভনীয় পদ্ধতিতেই এই দু’টি সিফাত তাঁর জন্য সাব্যস্ত করতে হবে। আল্লাহর আশ্চর্যান্বিত হওয়া এবং হাসা মাখলুকের আশ্চর্যবোধ করা ও হাসার মত নয়। হাদীছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার জন্য নযর তথা দৃষ্টিও সাব্যস্ত করা হয়েছে। এটিও আল্লাহর কর্মগত সিফাতের অন্তর্ভূক্ত। তিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি দৃষ্টি দেন। আসমান ও যমীনের কোন কিছুই আল্লাহ তাআলার নিকট গোপন নয়।