ইসলামী জীবন-ধারা হাই ও হাঁচির আদব আবদুল হামীদ ফাইযী ১ টি

পূর্বের হাদীসে উল্লেখ হয়েছে যে, মহান আল্লাহ হাঁচিকে পছন্দ করেন। কারণ হাঁচিতে বান্দার কষ্টের লাঘব হয়। শ্বাসপথে আটকে থাকা শ্লেষ্মা হাঁচির ফলে পরিষ্কার হয়ে যায়। হার্টের ধমনীসমূহ অবরোধমুক্ত ও উন্মুক্ত হয়। আর সে জন্যই এর আদবে আল্লাহর প্রশংসা করতে হয় এবং যেহেতু আল্লাহর রহমত না হলে হাঁচি না হওয়ার ফলে শ্বাসপথ রুদ্ধ হতে পারে অথবা একটানা সুড়সুড় করতে পারে তাই যে হাঁচির পর আল্লাহর প্রশংসা করে, তার জন্য শ্রোতাকে দু‘আ করতে হয়।

আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘মুসলিমের উপর মুসলিমের ৫টি অধিকার রয়েছে; সালামের জবাব দেওয়া, রোগীকে সাক্ষাৎ করে সান্ত্বনা দেওয়া, জানাযায় অংশগ্রহণ করা, দাওয়াত কবুল করা এবং হাঁচির পর ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বললে তার জবাবে ‘য়্যারহামুকাল্লাহ’ বলা।’’[1]

উপরোক্ত হাদীসে এ কথাও উল্লেখ হয়েছে যে, যে হাঁচি দেবে সে সশব্দে বলবে,اَلْحَمْدُ لله ‘আলহামদু লিল্লা-হ’। আর যে তার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা শুনবে সে তার জন্য দু‘আ করে বলবে, يَرْحَمُكَ الله ‘ইয়ারহামুকাল্লা-হ’ (অর্থাৎ আল্লাহ তোমাকে রহম করুন)।

অন্য এক বর্ণনা মতে হাঁচির পর ‘আল-হামদু লিল্লাহি আলা কুল্লি হাল’ও বলা যায়।[2] যেমন ‘আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ বলাও বিধেয়।[3]

উল্লেখ্য যে, হাঁচির পর যদি হাঁচিদাতা ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ না বলে, তাহলে তার জন্য দু‘আ করা বিধেয় নয়। বরং আল্লাহর নবী (ﷺ) বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ হাঁচলে সে যদি ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বলে, তাহলে তার জন্য (দু‘আ করে বল,) ‘য়্যারহামুকাল্লা-হ’ বল। আর সে যদি ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ না বলে, তাহলে তার জন্য (ঐ দু‘আ) বলো না।’’[4]

অবশ্য ‘হামদ’ শুনতে না পেয়ে ঠোঁট হিলানো দেখে যদি বুঝা যায় যে, সে ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বলেছে, তাহলে তার জন্যও দু‘আ করতে হবে। পক্ষান্তরে ‘হামদ’ বলার জন্য হাঁচিদাতাকে স্মরণ বা উপদেশ দেওয়া বিধেয় নয়।[5]

অতঃপর যে হাঁচি দিয়েছে সে নিজের জন্য দু‘আ করতে শুনলে ঐ ব্যক্তির জন্যও দু‘আ করবে এবং বলবে, يَهْدِيْكُمُ اللهُ وَيُصْلِحْ بَالَكُمْ

(য়্যাহদীকুমুল্লা-হু অয়্যুস্লিহ বা-লাকুম)

অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদেরকে সৎপথ দেখান এবং তোমাদের অন্তর সংশোধন করেন।[6]

হাঁচিদাতা কাফের হলে এবং সে হাঁচির পর ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বললে, তার জওয়াবেও উক্ত দু‘আ বলতে হয়।[7]

ইবনে উমার (রাঃ) কে হাঁচির হাম্দের জবাবে ‘য়্যারহামুকাল্লাহ’ বলা হলে তিনি তার বদলায় ‘য়্যারহামুনাল্লাহু অইয়্যাকুম, অয়্যাগফিরু লানা অলাকুম’ বলতেন।[8]

হাঁচির সময় মুখে হাত অথবা কাপড় রেখে যথাসম্ভব শব্দ কম করুন। যাতে মজলিসে আপনার হাঁচির শব্দে লোকেরা চমকে বা বিরক্ত না হয়ে যায় এবং আপনার নাক বা মুখ থেকে সবেগে নির্গত শ্লেষ্মা অথবা থুথু অপরের গায়ে গিয়ে না লাগে। আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসুল (ﷺ) যখন হাঁচতেন, তখন নিজ হাত অথবা কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে নিতেন এবং শব্দ কম করতেন।[9]

যদি কেউ একাধিকবার হাঁচে, তাহলে ৩ বারের অধিক হাঁচলে আর উত্তর দিতে হয় না। তখন তা তার সর্দির ফলে হচ্ছে বলে জানতে হবে।[10] নামাযে হাঁচলে নিম্নের দু‘আ পড়ুন

اَلْحَمْدُ للهِ حَمْداً كَثِيْراً طَيِّباً مُّبَارَكاً فِيْهِ مُبَارَكاً عَلَيْهِ كَمَا يُحِبُّ رَبُّنَا وَيَرْضى

উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লা-হি হামদান কাসীরান ত্বাইয়িবাম মুবা-রাকান ফীহি মুবা-রাকান আলাইহি কামা য়্যুহিব্বু রাব্বুনা অ য়্যারয্বা।

অর্থঃ হে আমাদের প্রভু! তোমারই যাবতীয় প্রশংসা, অগণিত পবিত্রতা ও বরকতময় প্রশংসা (যেমন আমাদের প্রতিপালক ভালোবাসেন ও সন্তুষ্ট হন।[11]

[1]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ১২৪০, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২১৬২

[2]. আবূ দাঊদ হা/৫০৩৩

[3]. সহীহুল জা’মে হা/৬৮৬

[4]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ১৯১৯৭, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২৯৯২

[5]. যাদুল মাআদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা.২/৪৪২

[6]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৭/১২৫

[7]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ১৯০৮৯, আবূ দাঊদ হা/৫০৩৮, তিরমিযী হা/২৭৩৯

[8]. মালেক ১৮০০, যাদুল মাআদ ২/৪৩৭

[9]. আবূ দাঊদ হা/৫০২৯, তিরমিযী হা/২৭৪৫

[10]. আবু দাঊদ ৫০৩৪

[11]. আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/ ৯৯২