আর-রাহীকুল মাখতূম মক্কা বিজয়ের যুদ্ধ (غَزْوَةُ فَتْحِ مَكَّةَ) আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী (রহঃ) ২৩ টি

ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম মক্কা বিজয় সম্পর্কে লিখতে গিয়ে লিখেছেন যে, ‘এ ছিল সে মহাবিজয় যার মাধ্যমে আল্লাহ স্বীয় দ্বীনকে, স্বীয় রাসূল (ﷺ)-কে, স্বীয় সৈন্যসম্পদকে এবং স্বীয় আমানত রক্ষাকারী দলকে ইজ্জত দান করেছেন এবং স্বীয় শহর ও স্বীয় ঘরকে, বিশ্ববাসীর জন্য হেদায়াতের কেন্দ্রের মর্যাদায় ভূষিত করেছেন। কাফির ও মুশরিকদের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করেছেন। এ বিজয়ে আসমানবাসীগণের অন্তরেও খুশীর ঢল নেমেছিল এবং তাদের মান-ইজ্জতের রশ্মিগুলো আকাশের চূড়ার কাঁধের উপর বিস্তৃতি লাভ করেছিল, যার ফলে মানুষ দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে লাগল এবং পৃথিবীর মুখমণ্ডল আলোর ঝলকে উজ্জ্বলতর হয়ে উঠল।[1]

হুদায়বিয়াহর সন্ধি সংক্রান্ত আলোচনায় এটা উল্লেখিত হয়েছে যে, এ সন্ধি চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল, কেউ যদি মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে চায় তাহলে হতে পারে। পক্ষান্তরে কেউ যদি কুরাইশদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে চায় তাহলে তাকেও সে সুযোগ এবং স্বীকৃতি দিতে হবে। অধিকন্তু, এ রকম আশ্রিত কোন ব্যক্তি কিংবা গোত্র যদি আক্রান্ত হয়, তাহলে এ আক্রমণকে আশ্রয়দাতা পক্ষের উপর আক্রমণ বলে গণ্য করা হবে।

উল্লেখিত শর্তের আওতায় বনু খুযা’আহ গোত্র রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আশ্রিত হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং বনু বাকর কুরায়শদের আশ্রিত হিসেবে। এভাবে আপাতঃদৃষ্টিতে উভয় গোত্র পারস্পরিক হিংসা বিদ্বেষ ও দ্বন্দ্ব সংঘাত থেকে নিস্কৃতি ও নিরাপত্তা লাভ করল। কিন্তু যেহেতু উল্লেখিত গোত্রদ্বয়ের মধ্যে জাহেলিয়াত যুগ হতে পারস্পরিক শত্রুতা বিবাদ চলে আসছিল সেহেতু চুক্তিবদ্ধ দুটি পক্ষের আশ্রিত হয়েও প্রতিহিংসার প্রশ্নটি তাদের মন থেকে অপসৃত হল না। সেজন্য যখন ইসলাম প্রভাব বিস্তার আরম্ভ করল ও হুদাইবিয়ার চুক্তি লিপিবদ্ধ হল তখন কুরাইশদের পক্ষ অবলম্বন করার মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান পূর্বাপেক্ষা শক্তিশালী মনে করে বনু বাকর গোত্র বনু খুযাআ’হর উপর তাদের পুরাতন শত্রুতার প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য মোক্ষম সুযোগ মনে করল। এ ধারণার প্রেক্ষিতে নাওফাল বিন মুয়াবিয়া দাইলী ৮ম হিজরীর শা‘বান মাসে বনু বকরের একটি বাহিনী নিয়ে রাতের আঁধারে বনু খুযা’আহকে আক্রমণ করে বসল। ঐ সময় বনু খুযা’আহ গোত্র ওয়াতীর নামক এক ঝর্ণার ধারে শিবির স্থাপন করে বসবাস করছিল এ আক্রমণে খুযা’আহ গোত্রের অনেক লোক নিহত হয়।

এ যুদ্ধে কুরাইশগণ অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে বনু বাকরকে সাহায্য করে। এমন কি রাতের অন্ধকারে কুরাইশ যোদ্ধাগণও এ যুদ্ধে বনু বকরের পক্ষে অংশ গ্রহণ করে। এ যুদ্ধে বনু খুযা’আহর বহুলোক নিহত হয় এবং তাদেরকে সেখান থেকে বিতাড়িত করে হারাম পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।

হারামে পৌঁছে বনু বাকর বলল, ‘হে নাওফাল! এখন তো আমরা হারামে প্রবেশ করেছি। তোমাদের উপাস্য! তোমাদের উপাস্য! এর উত্তরে নাওফাল একটি অত্যন্ত গুরুতর কথা বলল। সে বলল, ‘হে বনু বাকর! আজ কোন উপাস্য নেই, প্রতিশোধ গ্রহণ করে নাও। আমার জীবনের কসম! তোমরা হারামে চুক্তি করেছ, তা সত্ত্বেও কি হারামে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারবে না?’

এদিকে বনু খুযা’আহ গোত্র মক্কায় পৌঁছে বুদাইল বিন ওয়ারাক্বা খুযা’য়ী এবং নিজেদের মুক্ত করা দাস রাফি’র গৃহে আশ্রয় গ্রহণ করে। অতঃপর ‘আমর বিন সালিম খুযা’য়ী সেখান থেকে বাহির হয়ে তৎক্ষণাৎ মদীনা অভিমুখে যাত্রা করেন। মদীনা পৌঁছে তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর খিদমতে উপস্থিত হলেন।

সে সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মসজিদে নাবাবীতে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর মাঝে অবস্থান করছিলেন। ‘আমর বিন সালিম বললেন,

يا رب إني ناشدٌ محمدًا

 

حلف أبينا وأبيه إلا تلدا

كُنتَ لنا أبًا وكنا ولدًا

 

ثَمت أسلمنا ولم ننزع يدا

فانصر هداك الله نصرًا (عتدا)

-

وادع عباد الله يأتوا مددا

فيهم رسول الله قد تجرّدا

-

أبيض مثل الشمس ينمو صعدا

إن سيم خسفًا وجهه تربدا

-

في فيلق في البحر تجري مزبدًا

إن قريشًا لموافوك الموعدا

-

ونقضوا ميثاقك المؤكدا

وجعلوا لي في كداء رصدا

-

وزعموا أن لست تدعو إحدا

وهم أذلّ وأقلّ عددا

-

هم (وجدونا) بالحطيم هُجّدا

وقتلونا رُكّعًا وسُجّدًا

অর্থ : ‘হে প্রতিপালক! আমি মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর নিকটে তাঁর প্রতিজ্ঞা এবং তাঁর পিতার পুরাতন প্রতিজ্ঞার দোহাই উদ্ধৃত করছি।[2] আপনারা শিশু ছিলেন এবং আমরা ছিলাম জন্মদাতা।[3] অতঃপর আমরা অনুগত হয়েছি এবং কখনও হাত টেনে নেই নি। আল্লাহ আপনাদেরকে হিদায়াত করুন আপনি শক্তভাবে সাহায্য করুন এবং আল্লাহর বান্দাদের আহবান করুন। তাঁরা সাহায্যের জন্য আসবেন যেখানে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) থাকেন। অস্ত্রসজ্জিত এবং পূর্ণিমার চাঁদের মতো এবং গমের রঙের মতো সুন্দর। তাদের উপর যদি অত্যাচার করা হয় এবং তাদের অবমাননা করা হয় তবে মুখমণ্ডল বিবর্ণ করে উঠবে। আপনি এক যুদ্ধপ্রিয় সৈন্যদলের মধ্যে আগমন করবেন যা হবে ফেনায় পরিপূর্ণ সমুদ্রের ন্যায় তরঙ্গযুক্ত। কুরাইশগণ অবশ্যই আপনার প্রতিজ্ঞার বিরোধিতা করেছে এবং আপনার পরিপক্ক অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। তারা আমার জন্য কোদা নামক স্থানে গোপনে অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং মনে করেছে যে সাহায্যের জন্য আমি কাউকেও আহবান করব না। অথচ তারা বড়ই নিকৃষ্ট এবং সংখ্যায় অল্প। তারা রাত্রি বেলায় ওয়াতিরে আক্রমণ চালিয়েছে এবং আমাদেরকে রুকু ও সিজদাহহ অবস্থায় হত্যা করেছে। অর্থাৎ আমরা ছিলাম মুসলিম এবং আমাদেরকে তাঁরা হত্যা করেছে।’

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘হে ‘আমর বিন সালিম, তোমাকে সাহায্য করা হয়েছে। এর পর আকাশে মেঘমালার একটি অংশ দেখতে পাওয়া যায়। নাবী কারীম (ﷺ) বললেন, ‘এ মেঘমালা বনু কা’বের সাহায্যের শুভ সংবাদে চমকাচ্ছে।

এর পর বুদাইল বিন ওয়ারাক্বা’ খুযা’য়ীর তত্ত্বাবধানে বনু খুযা’আহর একটি দল মদীনায় আগমন করেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে অবহিত করলেন কারা নিহত হয়েছেন এবং কিভাবে কুরাইশগণ বনু বাকরকে সাহায্য করেছে। এরপর এ লোক মক্কায় ফিরে গেলেন।

[1] যাদুল মা‘আদ ২য় খন্ড ১৬০ পৃঃ।

[2] এ দ্বারা সে প্রতি্জ্ঞার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা বনু খোযায়া এবং বনু হাশেমের মধ্যে আব্দুল মুত্তালিবের সময় হতে চলে আসছিল।

[3] এ দ্বারা সে কথার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে যা আবদে মানাফের মা অর্থাৎ কুসাইয়ের স্ত্রী হুবা খোযায়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ জন্য পুরো পরিবারটাকে বনু খোযায়ার সন্তান বলা হয়েছে।
নতুনভাবে সন্ধিচুক্তির জন্য আবূ সুফইয়ানের মদীনা আগমন (أَبُوْ سُفْيَانَ يَخْرُجُ إِلَى الْمَدِيْنَةِ لِيُجَدِّدَ الصُّلْحَ):

এতে কোন সন্দেহ নেই যে, কুরাইশ এবং তার সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ দল যা করেছিল তা ছিল প্রকাশ্য অঙ্গীকারভঙ্গ এবং সন্ধিচুক্তির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তাদের এ ধরণের কাজকর্মকে কোনক্রমেই সঠিক কিংবা সঙ্গত বলা যেতে পারে না। এ কারণে কুরাইশরাও সঙ্গে সঙ্গে এটা অনুধাবন করল যে, অঙ্গীকার ভঙ্গ করে সত্যি সত্যিই তারা অন্যায় করেছে এবং এর ফলাফল অত্যন্ত তিক্ত ও ভয়াবহ হতে পারে। এ আশঙ্কায় তারা একটি পরামর্শ বৈঠকের আয়োজন করে। এ বৈঠকে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, চুক্তির পুনরুজ্জীবনের জন্য দলের পরিচালক আবূ সুফইয়ানকে অনতিবিলম্বে মদীনায় প্রেরণ করা হোক।

সন্ধি চুক্তি ভঙ্গের পর কুরাইশগণ কী করতে পারে সে সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সাহাবা কেরামের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন। এমন অবস্থার প্রেক্ষাপটে তিনি তাঁদের বললেন, ‏(‏كَأَنَّكُمْ بِأَبِيْ سُفْيَانَ قَدْ جَاءَكُمْ لِيَشُدُّ الْعَقْدَ، وَيَزِيْدُ فْي الْمُدَّةِ‏) ‘আমি যেন আবূ সুফইয়ানকে দেখছি যে, অঙ্গীকারনামা পুন: দৃঢ়তর করা এবং সন্ধিচুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য সে মদীনায় এসে গিয়েছে।

এদিকে কুরাইশদের পরামর্শ বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবূ সুফইয়ান যখন উসফান নামক স্থানে পৌঁছলেন তখন বুদাইল বিন ওয়ারাক্বার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত হয়ে গেল। বুদাইল মদীনা হতে প্রত্যাবর্তন করছিলেন। আবূ সুফইয়ান বুঝতে পারল যে, সে নাবী কারীম (ﷺ)-এর নিকট থেকে ফিরে আসছে। ‘সে তাকে জিজ্ঞেস করল, ‘বুদাইল! কোথা থেকে আসছ?’

বুদাইল বলল, ‘আমি খুযা’আহর সঙ্গে এ পার্শ্ববর্তী তীরে এবং উপত্যকায় গিয়েছিলাম।’

আবূ সুফইয়ান জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি কি মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর নিকট গিয়েছিলে? ’

সে বলল, ‘না’।

কিন্তু বুদাইল যখন মক্কার দিকে রওয়ানা হয়ে গেল তখন আবূ সুফইয়ান বলল, ‘সে যদি মদীনায় গিয়ে থাকে তাহলে সেখানে তার উটকে যে ফলের আঁটি খাইয়েছিল তা থেকেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। অতৎপর সে বুদাইল যেখানে তার উটকে বসিয়েছিল সেখানে গেল এবং উটের বিষ্টায় খেজুরের বীচি দেখতে পেল। খেজুরের বীচি পরখ করে সে বলল, ‘আল্লাহর কসম! বুদাইল মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর নিকট গিয়েছিল।

যাহোক, আবূ সুফইয়ান মদীনায় গিয়ে পৌঁছল এবং নিজ কন্যা উম্মুল মু’মিনীন হাবীবা (রাঃ)-এর ঘরে গেল। সে যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বিছানায় বসার ইচ্ছা করল তখন তিনি বিছানা জড়িয়ে নিলেন। এ অবস্থা দেখে আবূ সুফইয়ান বলল, ‘হে আমার কন্যা! তুমি কি মনে করছ যে, এ বিছানা আমার জন্য উপযু্ক্ত নয়, না আমি এ বিছানার উপযুক্ত নই?’

উম্মুল মু’মিনীন বললেন, ‘এ হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বিছানা, আপনি হচ্ছেন অপবিত্র মুশরিক।’

শুনে আবূ সুফইয়ান বলতে লাগল, ‘আল্লাহর কসম! আমার পরে তোমার অমঙ্গল রয়েছে।’

অতঃপর আবূ সুফইয়ান সেখান থেকে বের হয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট গেল এবং কথাবার্তা বলল। নাবী কারীম (ﷺ) তার কোন কথারই উত্তর দিলেন না। এর পর সে আবূ বাকর (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে তাঁকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সঙ্গে কথা বলতে বলল। তিনি বললেন, ‘আমি তোমাদের জন্য কেন সুপারিশ করব?’ আল্লাহর কসম! আমি যদি একটি লাঠি ছাড়া অন্য কিছু না পাই তাহলে তার দ্বারাই তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করব, তবুও তোমাদের ক্ষমা করব না।’

অতঃপর সে আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর নিকট গেল। সেখানে ফাতিমাহ এবং হাসানও (রাঃ) ছিলেন। হাসান (রাঃ) তখনো ছোট ছিলেন এবং লাফালাফি করে বেড়াচ্ছিলেন। আবূ সুফইয়ান বলল, ‘হে আলী! অন্যান্যদের তুলনায় তোমাদের সঙ্গে আমার গাঢ় বংশীয় সম্পর্ক আছে। আমি এখন একটি বিশেষ প্রয়োজনে এসেছি। এমনটি যেন না হয় যে, আমাকে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যেতে হয়। তুমি আমার জন্য মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর নিকট সুপারিশ কর। আলী (রাঃ) বললেন, ‘আবূ সুফইয়ান! তোমার উপর দুঃখ, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একটি কথার উপর কৃতসংকল্প হয়ে গিয়েছেন। সে ব্যাপারে আমরা তাঁর নিকট কোন কথাই বলতে পারব না। এরপর সে ফাতিমাহ (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বলল, ‘আপনি কি আমার জন্য এতটুকু করতে পারবেন যে, আপনার এ ছেলেকে নির্দেশ করবেন যেন সে লোকজনের মাঝে আমার আশ্রয়ের ব্যাপারে ঘোষণা দিয়ে সর্ব সময়ের জন্য আরবের নেতা হয়ে যাবে। ফাতিমাহ বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমার এ ছেলে তেমন উপযুক্ত হয় নি যে, সে লোকজনের মাঝে কারো আশ্রয়ের জন্য ঘোষণা করতে পারবে। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপস্থিতিতে অন্য কেউ ঘোষণা দিতেও পারবে না।

উদ্দেশ্য সাধনে ব্যর্থ হয়ে আবূ সুফইয়ানের সামনে পৃথিবী অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেল। অত্যন্ত ভীত সন্ত্রস্ত্র চিন্তিত ও নৈরাশ্যজনক অবস্থায় সে বলল, ‘হে হাসানের পিতা! আমি অনুধাবন করছি যে অবস্থা অত্যন্ত কঠিন ও সঙ্গীন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতএব, আমাকে ভবিস্যৎকর্মপন্থার ব্যাপারে কিছুটা ইঙ্গিত প্রদান কর।’

আলী (রাঃ) বললেন, ‘আল্লাহর কসম! তোমার উপকারে আসতে পারে এমন কোন পথ আমি দেখছি না। তবে যেহেতু তুমি বনু কিনানাহর সর্দার, সেহেতু জনগণের সম্মুখে দন্ডায়মান হয়ে আশ্রয়ের ঘোষণা করে দাও। অতঃপর আপন দেশে প্রত্যাবর্তন কর।

আবূ সুফইয়ান বলল, ‘তুমি কি মনে করছ যে, এটা আমার জন্য ফলপ্রসূ হবে।’

আলী (রাঃ) বললেন, ‘না, আল্লাহর কসম! তোমার জন্য এটা ফলপ্রসূ হবে আমি তা মনে করি না। কিন্তু এর বিকল্প অন্য কোন কিছুই আমার মনে আসছেনা। এরপর আবূ সুফইয়ান মসজিদের মধ্যে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করল, ‘হে জনগণ! সকলের মাঝে আমি আশ্রয়ের ঘোষণা করছি। অতঃপর স্বীয় উটের পিঠে আরোহণ করে মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেল।

অতঃপর সে যখন কুরাইশদের নিকট গিয়ে পৌঁছল তখন কুরাইগণ তার পিছনের অবস্থা সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করতে লাগল। আবূ সুফইয়ান বলল, ‘আমি মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর নিকট গিয়ে কথাবার্তা বললাম, কিন্তু আল্লাহর কসম! তিনি কোন উত্তর দেন নি। এরপর আবূ কোহাফার ছেলের নিকট গেলাম, কিন্তু তাঁর মধ্যে কোন মঙ্গল দেখতে পেলাম না। সেখান থেকে উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তাঁকে পেলাম সব চাইতে শত্রুর ভূমিকায়। অতঃপর গেলাম আলীর নিকটে, মন মানসিকতার ক্ষেত্রে তাঁকে পেলাম সব চাইতে নরম অবস্থায়। সে আমাকে কিছু পরামর্শ দিল এবং সেই মোতাবেক কাজ করলাম। কিন্তু কার্যকর হবে কিনা তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই। লোকেরা বলল, ‘সে পরামর্শটা কী?’

আবূ সুফইয়ান বলল, ‘তাঁর পরামর্শ ছিল, আমি জনগণের নিকট আশ্রয়ের ঘোষণা করে দেই। পরে আমি তাই করলাম।’

কুরাইশগণ বলল, ‘তাহলে কি মুহাম্মাদ (ﷺ) তা বাস্তবায়ন করে মেনে নিয়েছে।’

লোকেরা বলল, ‘তুমি ধ্বংস হও। ঐ ব্যক্তি (আলী) তোমার সঙ্গে কেবল রহস্যই করেছে।

আবূ সুফইয়ান বলল, ‘আল্লাহর কসম! এ ছাড়া অন্য কোন উপায়ই ছিল না।’

সঙ্গোপণে যুদ্ধ প্রস্তুতি (التَّهِيؤُ لِلْغَزْوَةِ وَمُحَاوَلَةِ الْإِخْفَاءِ):

ইমাম তাবারানীর বর্ণনা সূত্রে জানা যায় যে, অঙ্গীকার ভঙ্গের তিন দিন পূর্বেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আয়িশাহ (রাঃ)-কে সফরের জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় প্রস্তুতি সঙ্গোপনে সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। কিন্তু এ খবর কেউ জানতেন না। আয়িশাহ (রাঃ) যখন প্রস্তুতি পর্বে ব্যাপৃত ছিলেন তখন আবূ বাকর (রাঃ) সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘কন্যা! এ কিসের প্রস্তুতি?’

উত্তরে তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি জানি না।’

আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, ‘এ তো বনু আসফার অর্থাৎ রোমকদের সাথে যুদ্ধের সময় নয়। তাহলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ইচ্ছা আবার কোন দিকের? আয়িশাহ বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমার জানা নেই।’

তৃতীয় দিবসে প্রত্যুষে ‘আমর বিন সালিম খুযা’য়ী ৪০ জন ঘোড়সওয়ার সহ মদীনায় এসে উপস্থিত হলেন এবং পূর্বেকার কবিতাটি পড়লেন, ........ শেষ পর্যন্ত। তখন সাধারণ লোকেরা জানতে পারলেন যে, অঙ্গীকার ভঙ্গ করা হয়েছে। এরপর এল বুদাইল। অতঃপর আবূ সুফইয়ান এল। অবস্থার প্রেক্ষাপটে জনগণ পরিস্থিতির প্রকৃতি অনুধাবন করলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে বললেন, ‘মক্কা যেতে হবে।’ সঙ্গে সঙ্গে তিনি এ প্রার্থনাও করলেন যে, ‏(‏اللّٰهُمَّ خُذِ الْعُيُوْنَ وَالْأَخْبَارَ عَنْ قُرَيْشٍ حَتّٰى نَبَغْتُهَا فِيْ بِلاَدِهَا‏)‏‏ ‘হে আল্লাহ! গোয়েন্দাদের এবং কুরাইশদের নিকট এ সংবাদ পৌঁছতে বাধার সৃষ্টি কর এবং থামিয়ে দাও যাতে আমরা তাদের অজানতেই একেবারে তাদের মাথার উপর গিয়ে পৌঁছতে পারি।’

অতঃপর অত্যন্ত সঙ্গোপনে উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে ৮ম হিজরী রমাযান মাসের প্রথম ভাগে আবূ ক্বাতাদাহ বিন রিব’য়ী (রাঃ)-এর নেতৃত্বে আট জন মুজাহিদ সমন্বয়ে গঠিত একটি ছোট বাহিনীকে বাতনে আযমের দিকে প্রেরণ করেন। এ স্থানটি যী খাশাব এবং যিল মারওয়াহর মধ্যস্থলে মদীনা হতে প্রায় ৩৬ আরবী মাইল দূরত্বে অবস্থিত। উদ্দেশ্য ছিল এ অভিযান প্রত্যক্ষ করে সাধারণ মানুষ যেন ধারণা করে যে, নাবী কারীম (ﷺ) এ অঞ্চল অভিমুখে যাত্রা করবেন এবং শেষ পর্যন্ত খবরটি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু এ দলটি নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে পৌঁছলেন তখন তাঁরা জানতে পারলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হয়ে গিয়েছেন। অতঃপর তাঁরাও গিয়ে নাবী কারীম (ﷺ)-এর সঙ্গে মিলিত হলেন।[1]

এদিকে হাতিব বিন আবী বালতাআ’হ কুরাইশের নিকট এক পত্র লিখে এ সংবাদ প্রেরণ করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মক্কা আক্রমণ করতে যাচ্ছেন। বিনিময় প্রদানের প্রতিশ্রুতি সাপেক্ষে তিনি এক মহিলার মাধ্যমে পত্রটি প্রেরণ করেন। মহিলা তাঁর চুলের খোঁপার মধ্যে পত্রটি রেখে পথ চলছিল। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আসমান হতে ওহীর মাধ্যমে হাতেবের এ গতিভঙ্গী ও ক্রিয়াকর্ম সম্পর্কে অবহিত হলেন। এ প্রেক্ষিতে তিনি আলী (রাঃ), মিক্বদাদ (রাঃ), যুবাইর এবং আবূ মারসাদ গানাভী (রাঃ)-কে এ বলে প্রেরণ করলেন যে, ‘তোমরা ‘খাখ’ নামক উদ্যানে গিয়ে সেখানে একটি হাওদানশীন মহিলাকে দেখতে পাবে, সে পত্রটি তার কাছ থেকে উদ্ধার করতে হবে। উল্লেখিত সাহাবীগণ ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে মহিলার নাগাল পাওয়ার জন্য ছুটে চললেন। তাঁদের অগ্রাভিযানের এক পর্যায়ে তাঁরা উটের পিঠে আরোহণকারিণী মহিলাটির নাগাল পেলেন। তাঁরা তাঁকে উটের পিঠ থেকে অবতরণ করিয়ে জিজ্ঞেস করলেন তার কাছে কোন পত্র আছে কিনা। কিন্তু সে তার নিকট পত্র থাকার কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করল। তার উটের হাওদা তল্লাশী করেও তাঁরা কোন পত্র না পাওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়লেন। অবশেষে আলী (রাঃ) বললেন, ‘আমি আল্লাহর কসম করে বলছি যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মিথ্যা বলেন নি, কিংবা আমরাও মিথ্যা বলছিনা। হয় তুমি পত্রখানা বাহির করে দেবে, নতুবা আমরা তোমাকে একদম উলঙ্গ করে তল্লাশী চালাব। সে যখন তাদের দৃঢ়তা অনুধাবন করল, তখন বলল, ‘আচ্ছা তাহলে তোমরা অন্য দিকে মুখ ফিরাও।’ অন্য দিকে মুখ ফেরালে মহিলা তার খোঁপা থেকে পত্রখানা বের করে তাঁদের নিকট সমর্পণ করল। তাঁরা পত্রখানা নিয়ে নাবী কারীম (ﷺ)-এর নিকট গিয়ে পৌঁছল। পত্রখানা খুলে পড়া হল। তাতে লেখা ছিল,

হাতিব বিন বালতাআ’হর পক্ষ হতে কুরাইশদের প্রতি, অতঃপর কুরাইশগণকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মক্কা অভিমুখে অগ্রসর হওয়ার সংবাদ দেয়া হয়েছিল।[2]

নাবী কারীম (ﷺ) হাতিবকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেন তুমি এহেন গুরুতর কাজ করেছ?

তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এ ব্যাপারে আমার বিরুদ্ধে তাড়াতাড়ি কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না। আল্লাহর কসম! আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের উপর পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে। আমি স্বধর্মত্যাগী হই নি এবং আমার মধ্যে কোন পরিবর্তনও আসেনি। কুরাইশদের সঙ্গে আমার কোন রক্তের সম্পর্কও নেই। তবে কথা হচ্ছে, কোন ব্যাপারে আমি তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলাম এবং আমার পরিবারের সদস্য এবং সন্তান-সন্ততিরা সেখানেই আছে। তাদের সঙ্গে আমার এমন কোন আত্মীয়তা বা সম্পর্ক নেই যে, তারা আমার পরিবারের লোকজনদের দেখাশোনা করবে। পক্ষান্তরে আপনার সঙ্গে যাঁরা রয়েছেন মক্কায় তাঁদের সকলেরই আত্মীয় স্বজন রয়েছে। যাঁরা তাঁদের রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। যদিও সম্পূর্ণ বেআইনী ও অধিকার বহির্ভূত তবুও ঐ একই উদ্দেশ্যের প্রেক্ষাপটে আমি কুরাইশদের জন্য একটু এহসানি করতে চেয়েছিলাম যার বিনিময়ে তারা আমার আত্মীয় স্বজনদের প্রতি যত্নশীল হবে।

এ কথাবার্তার প্রেক্ষিতে উমার বিন খাত্তাব (রাঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে অনুমতি দিন আমি তার গ্রীবা কর্তন করে ফেলি। কারণ, সে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং সে মুনাফিক্ব হয়ে গিয়েছে। রাসূলে কারীম (ﷺ) তখন বললেন,

‏(‏إِنَّهُ قَدْ شَهِدَ بَدْراً، وَمَا يُدْرِيْكَ يَا عُمَرُ لَعَلَّ اللهُ قَدْ اِطَّلَعَ عَلٰى أَهْلِ بَدْرٍ فَقَالَ‏:‏ اِعْمَلُوْا مَا شِئْتُمْ فَقَدْ غَفَرْتُ لَكُمْ‏)

‘হে উমার! তুমি কি জান না যে, সে বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছে। আর হতে পারে আল্লাহ তা‘আল্লাহ এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের সামনে প্রকাশিত হয়ে বলে দিয়েছেন যে, ‘তোমরা যা চাও তা কর, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি।’

এ কথা শ্রবণ করে উমার (রাঃ)-এর চক্ষুদ্বয় অশ্রু সজল হয়ে উঠল। অতঃপর বললেন, ‘আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ﷺ) ভাল জানেন।[3]

এভাবে আল্লাহ তা‘আলা গোয়েন্দাদের গ্রেফতার করিয়ে দেন এবং মুসলিমগণের যুদ্ধ প্রস্তুতি সংক্রান্ত কোন খবর কুরাইশদের নিকট পৌঁছানোর পথ বন্ধ করে দেন।

[1] এটা ওই বাহিনী যাদের সঙ্গে আমর বিন আহবতের দেখা হলে সে ইসলামী ক্বায়দায় সালাম করে। কিন্তু মোহাল্লাম বিন জোসামা পুর্বের ক্রোধের কারণে তাকে হত্যা করেন এবং তার্ উট ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিজ দখলে নিয়ে নেন। এ প্রেক্ষিতে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়, ‘ওয়ালা তাকুলু লিমান আলকা ইলাই কুমুস সালা মা লাসতা মু’মিনা’... শেষ পর্যন্ত।

অর্থ: যিনি তোমাদের প্রতি সালাম করেন তাকে তুমি ‘মুমিন নও’ বোলনা। আয়ত নাজিল হওয়ার কারণে সাহাবা কেরাম মোহাল্লামকে নাবী (সাঃ)-এর দরবারে নিয়ে আসলেন এ হেতু যে, নাবী (সাঃ) তাঁর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। কিন্তু মোহাল্লাম যখন নাবী (সাঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত হলেন তখন তিনি তিন বার বললেন, ‘হে আল্লাহ মোহাল্লামকে ক্ষমা কর না।’ এ কথা শুনে মোহল্লাম নিজ কাপড়ের অাঁচলে অশ্রু মুছতে মুছতে সেখান থেকে্ উঠে গেলেন। ইবনু ইসাহাকের বর্ণনা থেকে জানা যায়, তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা বলেছেন যে, পরে আল্লাহর নাবী (সাঃ) তাঁর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। যাদুল মা’আদ ২য় খন্ড ১৫০ পৃঃ, ইবনু হিশাম ২য় খন্ড ৬২২, ৬২৭ ও ৬২৮ পৃঃ।

[2] ইমাম সুহাইলী কতকগুলো যুদ্ধের ঐতিহাসিক বিবরণের উদ্ধৃতি পূর্বক এ পত্রের বিবরণ দিয়েছেন,তার বিষয়বস্তু হচ্ছে, ‘অতৎপর, হে কুরাইশগণ রাসূলে কারীম (সাঃ) তোমাদের আক্রমণের উদ্দেশ্যে রাত্রির অন্ধকারে প্রবাহিত সমুদ্র স্রোতের ন্যায় অগণিত সৈন্য সম্পদ নিয়ে মক্কা অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছেন। আল্লাহর কসম! তিনি যদি একাকীও তোমাদের নিকটে যান তাহলেও আল্লাহ তাঁকে সাহায্য করে তাঁর ওয়াদা পূরণ করবেন। অতএব, নিজেদের ব্যাপার তোমরা চিন্তা করে নিও। তোমাদের প্রতি আমার সালাম। ইমাম ওয়াক্বিদী একটি মুরসাল সনদে বর্ণিত বিষয়বস্তু উদ্ধৃত করে বলেছেন যে, হাতেব সোহাইল বিন আমর, সাফওয়ান বিন উমাইয়া এবং একরামার নিকট এ পত্র লিখেছিলেন যে, নাবী কারীম (সাঃ) লোকদের মাঝে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। আমি তোমাদের ছাড়া অন্য কারো ধারণা করি না এবং আমি চাচ্ছি যে, আমার দ্বারা তোমাদের একটি উপকার হোক । ফাতহুল বারী ৭ম খন্ড ৫২১ পৃঃ।

[3] সহীহুল বুখারী ১ম খন্ড ৪২২, ২য় খন্ড ৬১২ পৃঃ। যুবাইর এবং আবূ মুরশেদের নামের অতিরিক্ত উল্লেখ সহীহুল বুখারীর অন্য বর্ণনায় উল্লেখিত হয়েছে।
ইসলামী বাহিনী মক্কার পথে (الْجَيْشُ الْإِسْلاَمِيْ يَتَحَرَّكُ نَحْوَ مَكَّةَ):

৮ম হিজরী ১০ই রমাযান নাবী কারীম (ﷺ) মক্কা অভিমুখে যাত্রা করেন। তাঁর দশ হাজার সাহাবী (রাঃ)-এর এক বাহিনী। এ সময় মদীনার প্রশাসনিক দায়িত্ব অর্পণ করা হয় আবূ রুহম গিফারী (রাঃ)-এর উপর।

জুহফাহ কিংবা তার কিছু আগে নাবী কারীম (ﷺ)-এর চাচা আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাত হয়। ইসলাম গ্রহণ করে স্বীয় পরিবার পরিজনসহ তিনি মদীনা হিজরত করে যাচ্ছিলেন। আবার আবওয়া নামক স্থানে নাবী কারীম (ﷺ)-এর চাচাতো ভাই আবূ সুফইয়ান বিন হারিস এবং ফুফাতো ভাই আব্দুল্লাহ বিন উমাইয়ার সঙ্গে সাক্ষাত হয়। তাদের উভয়কে দেখে নাবী কারীম (ﷺ) মুখ ফিরিয়ে নেন। কারণ এরা উভয়েই নাবী কারীম (ﷺ)-কে দারুণ দুঃখ কষ্ট দিয়েছিল এবং তাঁর নামে কুৎসা রটনা করেছিল। এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে উম্মু সালামাহ (রাঃ) আরয করেন, এমনটি হওয়া উচিত নয় যে, আপনার চাচাতো এবং ফুফাতো ভাই আপনার নিকট সব চেয়ে বেশী হতভাগ্য হবে। এদিকে আলী (রাঃ) আবূ সুফইয়ান বিন হারিসকে শিখিয়ে দিলেন যে, তুমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সম্মুখে গিয়ে সে কথা বল যা ইউসুফের ভাইয়েরা তাঁকে বলেছিলেন।

‏(‏قَالُوْا تَاللهِ لَقَدْ آثَرَكَ اللهُ عَلَيْنَا وَإِن كُنَّا لَخَاطِئِيْنَ‏)‏ ‏[‏يوسف‏:‏91‏]‏

‘আল্লাহর কসম! আল্লাহ আপনাকে আমাদের উপর সম্মানিত করেছেন এবং নিশ্চয়ই আমরা দোষী ছিলাম।’ [ইউসুফ (১২) : ৯১]

কারণ, নাবী কারীম (ﷺ) এটা পছন্দ করবেন না যে, অন্য কারো উত্তর তাঁর চাইতে উত্তম ছিল। অতএব, আবূ সুফইয়ান তা’ই করল এবং উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাৎক্ষণিকভাবে বললেন,

‏(‏قَالَ لاَ تَثْرَيبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ يَغْفِرُ اللهُ لَكُمْ وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ‏)‏ ‏[‏يوسف‏:‏92‏]‏

‘অদ্য তোমাদের উপর কোন নিন্দা নেই। আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং তিনি দয়াশীলদের চাইতেও অধিক দয়ালু।’ [ইউসুফ (১২) : ৯২]

এ প্রেক্ষিতে আবূ সুফইয়ান কবিতার নিম্নরূপ কয়েকটি চরণ আবৃত্তি করে শোনাল,

لعغمرك إني حين أجمل راية لتغلب خيل اللات خيل محمد

لكالمدلج الحيران أظلم ليله فهٰذَا أواني حين أهدى فأهتدي

هداني هاد غير نفسي ودلني عَلٰى الله من طردته كل مطرد

অর্থ : ‘তোমার জীবনের কসম! সেই সময় আমি এ জন্য পতাকা উত্তোলন করেছিলাম যে, লাতের ঘোড়সওয়ার মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর ঘোড়সওয়ারের উপর বিজয়ী হবে, তখন আমার অবস্থা সে রাত্রিকালের প্রবাসীর ন্যায় ছিল যে অন্ধকারে দিগ্বিদিক হারিয়ে ঘুরতে থাকে। কিন্তু এখন সময় এসে গেছে যে, আমাকে পথ দেখানো হবে এবং আমি হিদায়াত লাভ করব। আমাকে আমার আত্মার পরিবর্তে একজন পথ প্রদর্শক হিদায়াত করেছেন এবং সে ব্যক্তিই আমাকে আল্লাহর পথের কথা বলেছেন যাকে আমি প্রতি মুহূর্তে তিরস্কারের মাধ্যমে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম।

এ কবিতা শ্রবণান্তে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তার বক্ষে একটি থাবা মারলেন এবং বললেন, ‘প্রতি মুহূর্তে তুমি আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলে।[1]

[1] আবূ সুফইয়ানের ইসলাম গ্রহণের ফলে পরবর্তী সময়ে তাঁর মধ্যে অনেক গুণাবলীর সমাবেশ লক্ষ্য করা যায়। তিনি যখন হতে ইসলাম গ্রহণ করেন তখন হতে লজ্জায় রাসূলে কারীম (সাঃ)-এর সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ান নাই। নাবী কারীম (সাঃ) তাঁকে ভালবাসতেন এবং তাঁর জন্য জান্নাতের শুভ সংবাদ দিতেন এবং বলতেন আমার আশা আছে যে, এ হামযাহর বিনিময় প্রমাণিত হবে। মৃত্যুর সময় আবূ সুফইয়ান বলতেছিলেন, ‘আমার জন্য ক্রন্দন করনা। কারণ ইসলাম গ্রহণ করার পর আমি কখনো পাপের কথা বলিনি।’ যাদুল মা‘আদ ২য় খন্ড ১৬২-১৬৩ পৃঃ।
মাররুয যাহরান নামক স্থানে ইসলামী সৈন্যদের শিবির স্থাপন (الْجَيْشُ الْإِسْلَامِيْ يَنْزِلُ بِمَرِّ الظَّهْرَانِ):

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) নিজ সফর অব্যাহত রাখলেন। এ সফর কালে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং সাহাবীগণ (রাঃ) রোযাবস্থায় ছিলেন। কিন্তু উসফান এবং কুদাইদের মধ্যবর্তী স্থানে কাদীদ নামক ঝর্ণার নিকট পৌঁছে রোযা ভঙ্গ করলেন।[1] সাহাবীগণও রোযা ভঙ্গ করলেন। এরপর আবার সফর অব্যাহত রাখলেন, এভাবে রাত্রির পূর্বভাগ সফর করে মাররুয যাহরান ফাত্বিমাহ উপত্যকায়- পৌঁছে অবতরণ করলেন। সেখানে তাঁর নির্দেশক্রমে লোকেরা পৃথক পৃথক আগুন জ্বালাল। এভাবে দশ হাজার স্থানে আগুন জ্বালানো হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উমার বিন খাত্তাব (রাঃ)-কে প্রহরী নিযুক্ত করেন।

[1] সহীহুল বুখারী ২য় খন্ড ৬১৩ পৃঃ।
আবূ সুফইয়ান নাবী কারীম (সাঃ)-এর দরবারে (أَبُوْ سُفْيَانَ بَيْنَ يَدَي رَسُوْلِ اللهِ ﷺ‏):

মাহরুয যাহরানে শিবির স্থাপনের পর আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাদা খচ্চরের উপর আরোহণ করে বের হলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল যদি উপযুক্ত কোন লোক পাওয়া যায় তাহলে তার মাধ্যমে কুরাইশদের নিকট এ খবরটি পাঠানো যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মক্কা প্রবেশের পূর্বেই তারা যেন নাবী কারীম (ﷺ)-এর নিকট উপস্থিত হয় এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে।

এদিকে আল্লাহ তা‘আলা কুরাইশদের নিকট খবর পাঠাবার সমস্ত পথ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এ কারণে এ সংক্রান্ত কোন খবরাখবরই তাদের নিকট পৌঁছেনি। তবে তারা অত্যন্ত ভীত ও আতঙ্কিত অবস্থায় কাল যাপন করছিল এবং আবূ সুফইয়ান বারবার বাইরে খবরাখবর নেয়ার চেষ্টা করছিল। ঐ সময় সে এবং হাকীম বিন হিযাম এবং বুদাইল বিন ওয়ারাক্বা খবর জানাবার জন্য বাহিরে গিয়েছিল।

আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি রাসূলে কারীম (ﷺ)-এর খচ্চরের উপর সোওয়ার হয়ে যাচ্ছিলাম এমন সময় আবূ সুফইয়ান এবং বুদাইল বিন ওয়ারকার কথোপকথন আমার কর্ণগোচর হল। আবূ সুফইয়ান বলল, আল্লাহর কসম! অদ্য রাত্রির মতো এত অধিক আগুন এবং সৈন্য আমি ইতোপূর্বে কখনো দেখি নি।

উত্তরে বুদাইল বলল, ‘আল্লাহর কসম! এরা বনু খুযা’আহ। যুদ্ধ তাদের রাগান্বিত করেছে।’

আবূ সুফইয়ান বলল, ‘বনু খুযা’আহ সংখ্যায় কতই না অল্প এবং নিকৃষ্ট সৈন্যবাহিনীতে এত লোকজন এবং এত আগুন তারা পাবে কোথায়?’

আব্বাস (রাঃ) বললেন, ‘আমি তাদের কথোপকথন শুনে সব কিছু বুঝে নিলাম এবং বললাম, ‘আবূ হানযালাহ না কি? সে আমার কণ্ঠস্বর চিনতে পেরে বলল, ‘আবূ ফযল না কি?’

আমি বললাম, হ্যাঁ’।

সে বলল, ‘কী ব্যাপার? আমার পিতামাতা তোমার জন্য উৎসর্গিত হোক ।’

আমি বললাম, ‘সেখানে লোকজনসহ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রয়েছেন। হায় কুরাইশদের ধ্বংস! আল্লাহর শপথ!’

সে বলল, ‘এখন উপায় কী? আমার পিতামাতা তোমার জন্য উৎসর্গিত হোক ।’

আমি বললাম, ‘আল্লাহর কসম! তিনি যদি তোমাদের পেয়ে যান তাহলে গ্রীবা কর্তন করে ফেলবেন। অতএব, এসো আমার এ খচ্চরের পেছনে বসে যাও। আমি তোমাদেরকে রাসূলে কারীম (ﷺ)-এর নিকট নিয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ অতঃপর আবূ সুফইয়ান আমার পিছনে উঠে বসল। তার অন্য দু’ বন্ধু ফিরে চলে গেল।

আব্বাস (রাঃ) বলছেন, ‘আমি আবূ সুফইয়ানকে নিয়ে চললাম। যখন কোন উনুনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন সেখানকার লোকেরা বলছিলেন, কে যায়?’ কিন্তু পরক্ষণেই যখন দেখত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর খচ্চর এবং আমি তার সোওয়ার তখন বলত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর চাচা এবং তাঁর (নাবী কারীম (ﷺ)) খচ্চর। এভাবে চলতে চলতে যখন উমার বিন খাত্তাব (রাঃ)-এর উনুনের নিকট গেলাম, তিনি বললেন, ‘কে’? অতঃপর গাত্রোত্থান করে আমার নিকট আসলেন এবং আমার পিছনে আবূ সুফইয়ানকে দেখে তিনি বললেন, ‘আবূ সুফইয়ান আল্লাহর দুশমন। যাক আল্লাহর অশেষ প্রশংসা যে কোন অঙ্গীকার কিংবা কৌশল ছাড়াই তাকে আমাদের মধ্যে পাওয়া গেছে।’ এ কথা বলার পর সেখান থেকে বের হয়ে তিনি দ্রুতপদে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অবস্থান স্থলের দিকে এগিয়ে গেলেন। আমিও খচ্চরকে উত্তেজিত করে দ্রুত এগিয়ে চললাম।

আমি কিছুক্ষণ আগেই সেখানে গিয়ে পৌঁছলাম এবং খচ্চর পৃষ্ঠ থেকে অবতরণ করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট উপবিষ্ট হলাম। ইতোমধ্যে উমার (রাঃ)-ও এসে পৌঁছলেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! ইনি আবূ সুফইয়ান! আমাকে নির্দেশ দেয়া হোক , আমি তাঁর গর্দান কেটে ফেলি।’ তখন আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আমি তাঁকে আশ্রয় দিয়েছি। তারপরে আমি রাসূল (ﷺ)-এর নিকট বসে তাঁর মাথা ধরে বললাম, ‘আল্লাহর কসম! আমি ছাড়া অন্য কেউ আজ রাত্রে আপনার সাথে কানাঘুষা করবে না।’ এদিকে আবূ সুফইয়ান সম্পর্কে উমার (রাঃ) বারবার বলতে থাকলেন। তখন আমি বললাম, উমার (রাঃ) থাম, আল্লাহর কসম! এ যদি বনু আদী বিন কা‘ব গোত্রের লোক হত, তুমি এমন কথা বলতে না । উমার (রাঃ) বললেন, ‘আব্বাস তুমি থাম, আল্লাহর কসম! তোমার ইসলাম গ্রহণ আমার নিকট খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণের চেয়ে (সে যদি ইসলাম গ্রহণ করত) অধিক পছন্দনীয় ছিল। ইহার কারণ এই যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট তোমার ইসলাম গ্রহণ খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণের চেয়ে অধিক পছন্দনীয় ছিল।’

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‏‏(‏اِذْهَبْ بِهِ يَا عَبَّاسُ إِلٰى رَحْلِكَ، فَإِذَا أَصْبَحَتْ فَأْتِنِيْ بِهِ)‏ ‘আব্বাস একে (আবূ সুফইয়ানকে) নিজ তাঁবুতে নিয়ে যাও, প্রত্যুষে আমার নিকট নিয়ে এসো। নাবী কারীম (ﷺ) এ নির্দেশ মোতাবেক তাকে তাঁবুতে নিয়ে যান এবং সকালে নাবী কারীম (ﷺ)-এর খিদমতে হাযির করেন। তাঁকে দেখে তিনি (ﷺ) বললেন, ‏(‏وَيْحَكَ يَا أَبَا سُفْيَانَ، أَلَمْ يَأْنِ لَكَ أَنْ تَعْلَمَ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ‏؟‏‏)‏ ‘হে আবূ সুফইয়ান! তোমার উপর দুঃখ হচ্ছে এ জন্য যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এ মহাসত্য উপলব্ধি করার সময় কি এখনো তোমার হয় নি?

আবূ সুফইয়ান বলল, ‘আমার পিতামাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক । আপনি যে, কত সহনশীল, কত সম্মানিত এবং স্বজনরক্ষক! আমি বুঝে নিয়েছি যে, যদি অন্য কোন উপাস্য থাকত তাহলে এতদিন তা আমার কাজে আসত।’

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন,‏(‏وَيْحَكَ يَا أَبَا سُفْيَانَ، أَلَمْ يَأْنِ لَكَ أَنْ تَعْلَمَ أَنِّيْ رَسُوْلُ اللهُ‏؟‏‏)‏ ‘আবূ সুফইয়ান! তোমার জন্য সত্যিই দুঃখ হয়। এখনো কি তোমার বুঝবার সময় আসে নি যে, আমি সত্যিই আল্লাহর রাসূল (ﷺ) অর্থাৎ আমি যে সত্যিই আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এ সত্য উপলব্ধি করা কি এখনো তোমার পক্ষে সম্ভব হয় নি।’

আবূ সুফইয়ান বলল, ‘আমার মাতাপিতা আপনার উপর উৎসর্গিত হোক। আপনি কতইনা ধৈর্য্যশীল, কতইনা দয়ালু ও আত্মীয়তা সম্পর্ক স্থাপনকারী! কিন্তু ঐ ব্যাপারে এখনো কিছু না কিছু সংশয় তো আছেই। এ প্রেক্ষিতে আব্বাস (রাঃ) বললেন, ‘ওহে শোন! গ্রীবা কর্তনের পূর্বেই ইসলাম কবুল করে নাও এবং এ কথা স্বীকার করে নাও যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ উপাস্য হওয়ার যোগ্যতা রাখেনা এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল (ﷺ)। আব্বাস (রাঃ)-এর এ কথার প্রেক্ষিতে আবূ সুফইয়ান ইসলাম কবুল করলেন এবং সত্যের সাক্ষ্য প্রদান করে কালেমা পাঠ করলেন।

আব্বাস (রাঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আবূ সুফইয়ান সম্মান প্রিয়, তাই তাঁকে কোন সম্মান প্রদান করুন। নাবী কারীম (ﷺ) বললেন,

‏(‏نَعَمْ، مَنْ دَخَلَ دَارَ أَبِيْ سُفْيَانَ فَهُوْ آمْنٌ، وَمَنْ أَغْلَقَ عَلَيْهِ بَابَهُ فَهُوْ آمِنٌ، وَمَنْ دَخَلَ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ فَهُوَ آمِنٌ‏)‏‏.‏

‘ঠিক আছে, যে ব্যক্তি আবূ সুফইয়ানের ঘরে প্রবেশ করবে সে আশ্রিত হবে এবং যে নিজ ঘরের দরজা ভিতর হতে বন্ধ করে নেবে সে আশ্রিত হবে এবং যে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে সেও আশ্রিত হবে।

ইসলামী সৈন্য মাররায্যাহরান হতে মক্কার দিকে (الْجَيْشُ الْإِسْلاَمِيْ يُغَادِرُ مَرِّ الظَّهْرَانِ إِلٰى مَكَّةَ):

ঐ সকালেই মঙ্গলবার ৮ম হিজরী ১৭ ই রমাযান রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মাররুয যাহরান হতে মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হলেন। তিনি আব্বাস (রাঃ)-কে এ বলে নির্দেশ প্রদান করলেন যে, ‘আবূ সুফইয়ানকে উপত্যকার সংকীর্ণতার উপর পর্বত প্রান্তে থামিয়ে রাখবে যাতে ঐ পথ দিয়ে গমণাগমণকারী আল্লাহর সৈনিকদের সে স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করতে পারে। আব্বাস (রাঃ) রাসলুল্লাহ (ﷺ)-এর নির্দেশ পালন করলেন। এদিকে গোত্রগুলো নিজ নিজ পতাকা বহন করছিলেন এবং সেখান দিয়ে যখন কোন গোত্র গমন করত তখন আবূ সুফইয়ান জিজ্ঞেস করতেন, এ সকল লোকজন কারা?’ উত্তরে আব্বাস (রাঃ) উদাহরণস্বরূপ হয় তো বলতেন, ‘বনু সুলাইম। আবূ সুফইয়ান তখন বলতেন, ‘সুলাইমের সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক?

অতঃপর পরবর্তী গোত্রের গমনের সময় আবূ সুফইয়ান জিজ্ঞেস করলেন এরা কারা?

আবূ সুফইয়ান বললেন, ‘মুযায়নাহ’।

আবূ সুফইয়ান বললেন, ‘মুযায়নাহর সঙ্গে আমার সম্পর্ক কী?’

এমনিভাবে গোত্রগুলো এক এক করে গমন করল, যখন কোন গোত্র গমন করত তখন আবূ সুফইয়ান আব্বাস (রাঃ)-কে তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেন, যখন তাঁর প্রশ্নের উত্তর দেয়া হতো তখন তিনি গোত্রের নাম ধরে বলতেন, ‘এর সঙ্গে আমার সম্পর্ক কী?’

অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন তাঁর সবুজ দলের মাঝে অত্যন্ত জাঁকজমক ও জমকালো অবস্থার মধ্য দিয়ে আগমন করলেন তিনি মুহাজির ও আনসারদের দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলেন। এখানে মানুষ ব্যতিরেকে শুধু লোহার বেড়া দেখা যাচ্ছিল। আবূ সুফইয়ান বললেন, ‘সুবহানল্লাহ! হে আব্বাস! এরা কারা?’

তিনি বললেন, ‘আনসার ও মুহাজিরগণের জাঁকজমকপূর্ণ অবস্থার মধ্য দিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আগমন করছেন।’ আবূ সুফইয়ান বললেন, ‘এদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষমতা কি কারো কখনো হতে পারে?’

এরপর আরো বললেন, ‘আবুল ফযল! তোমার ভাতিজার রাজত্ব আল্লাহ বড় জবরদস্ত করে দিয়েছেন।’

আব্বাস (রাঃ) বললেন, ‘আবূ সুফইয়ান! এ হচ্ছে নবুওয়াতী সম্মান।’

আবূ সুফইয়ান বললেন, ‘হ্যাঁ’, এখন তো তাই বলতে হবে।’

এ সময়ে আরও একটি ঘটনা ঘটে যায়। আনসারদের পতাকা ছিল সা‘দ বিন উবাইদা (রাঃ)-এর নিকট। তিনি আবূ সুফইয়ানের নিকট দিয়ে যেতে যেতে বললেন, ‘আজ রক্তক্ষরণ এবং মারপিটের দিন, আজ হারামকে হালাল করা হবে।’

আজ কুরাইশদের ভাগ্যে অপমান নির্ধারিত করে রেখেছেন। অতঃপর যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সেখানে দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তখন আবূ সুফইয়ান বললেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আপনি সে কথা শুনেননি যা সা‘দ বলল। তিঁনি বললেন, সা‘দ কী বলেছেন, আবূ সুফইয়ান বললেন, ‘এ কথা বলেছে।’

এ কথা শুনে উসমান (রাঃ) এবং আব্দুর রহমান বিন আওফ (রাঃ) আরয পেশ করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা এ ভয় করছি যে, সা‘দ আবার না জানি কুরাইশদের মারধর শুরু করে দেয়।’

আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বললেন, (‏بَلْ الْيَوْمَ يَوْمٌ تُعَظَّمُ فِيْهِ الْكَعْبَةِ، الْيَوْمَ يَوْمٌ أَعَزَّ اللهُ فِيْهِ قُرَيْشاً‏)‏ ‘না তা হবে না, বরং আজকের দিনটি হবে সে দিন যে দিন কা‘বা ঘরের যথাযোগ্য মর্যাদা প্রদর্শিত হবে। আজকের দিনটি হবে সে দিন যে দিন আল্লাহ তা‘আলা কুরাইশদের ইজ্জত প্রদান করবেন। ’

এর পর নাবী কারীম (ﷺ) লোক পাঠিয়ে সা‘দ (রাঃ)-এর নিকট থেকে পতাকা আনিয়ে নিয়ে তাঁর পুত্র কায়েসের হাতে প্রদান করেন। উদ্দেশ্য ছিল এটা তাঁকে বুঝতে দেয়া যে, পতাকা খানা তাঁর হাতেই রইল, তাঁর থেকে বের হল না। অবশ্য, এ কথাও বলা হয়েছে যে, নাবী কারীম (ﷺ) পতাকা নিয়ে যুবাইর (রাঃ)-এর হাতে প্রদান করেছিলেন।

আকস্মিকভাবে ইসলামী সৈন্য কুরাইশদের মাথার উপর (قُرَيْشٌ تَبَاغَتَ زَحْفَ الْجَيْشِ الْإِسْلاَمِيْ):

রাসূলে কারীম (ﷺ) যখন আবূ সুফইয়ানের নিকট হতে চলে গেলেন তখন আব্বাস (রাঃ) তাঁকে বললেন, ‘শীঘ্র এখন মক্কায় নিজ সম্প্রদায়ের নিকট প্রত্যাবর্তন কর।’ আবূ সুফইয়ান অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে মক্কায় ফিরে এসে উচ্চকণ্ঠে এ বলে আহবান জানালেন, ‘ওহে কুরাইশগণ! মুহাম্মাদ (ﷺ) এমন এক বিশাল বাহিনী নিয়ে মক্কা আগমন করছেন যার সঙ্গে মোকাবেলা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষমতা কারও নেই। কিন্তু যারা আবূ সুফইয়ানের গৃহে প্রবেশ করবে তারা আশ্রিত হবে। এ কথা শুনে তাঁর স্ত্রী হিন্দা বিনতে ‘উতবাহ এসে তাঁর মোচ ধরে বলল, ‘মেরে ফেল এ চর্বিযুক্ত ও শক্ত মাংসধারী মশককে। এরূপ সংবাদ পরিবেশকারী ও পূর্বাভাষদাতা বিনষ্ট হোক।

আবূ সুফইয়ান বলল, ‘তোমাদের সর্বনাশ হোক। দেখ, তোমাদের জীবন সম্পর্কে এ মহিলা যেন তোমাদের ধোঁকায় নিক্ষেপ না করে। কারণ মুহাম্মাদ (ﷺ) এত অধিক সংখ্যক সৈন্য নিয়ে আগমন করছেন যে, এর সঙ্গে মোকাবেলা করার সাধ্য কারও নেই। এমতাবস্থায় যে আবূ সুফইয়ানের ঘরে প্রবেশ করবে সে আশ্রয় লাভ করবে।

লোকেরা বলল, ‘আল্লাহ যেন তোমাকে ধ্বংস করে। তোমার বাড়ি আমাদের কত জনের আশ্রয় স্থান হবে?’

আবূ সুফইয়ান বললেন, ‘আরো কথা আছে। যারা ভিতর থেকে নিজ নিজ ঘরের দরজা বন্ধ রাখবে তারাও আশ্রিত বলে গণ্য হবে। অধিকন্তু, যারা মসজিদুল হারামে গিয়ে প্রবেশ করবে তারাও আশ্রিত বলে গণ্য হবে। এ কথা শোনার পর লোকেরা সকলে নিজ নিজ ঘর ও মসজিদুল হারাম অভিমুখে পলায়ন করতে থাকল।

তবে কিছু সংখ্যক লম্পটকে তারা মুসলিমগণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিল এবং বলল যে, ‘এদেরকে আমরা অগ্রভাগে রাখছি। যদি কুরাইশগণ কৃতকার্য হয় তাহলে আমরা তাদের সঙ্গে মিলিত হব, কিন্তু যদি তাদের খুব মারধর করা হয় তাহলে আমাদের নিকট হতে যা কিছু চাওয়া হবে আমরা মেনে নিব।

মুসলিমগণের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য এ সকল নির্বোধ কুরাইশগণ ইকরামা বিন আবূ জাহল, সফওয়ান বিন উমাইয়া এবং সোহাইল বিন আমরের পরিচালনায় খান্দাময় একত্রিত হল। তাদের মধ্যে বনু বাকর গোত্রের হেমাস বিন ক্বায়স নামক এক লোকও ছিল যে, ইতোপূর্বে অস্ত্র ঠিক ঠাক করছিল। এ প্রেক্ষিতে তার স্ত্রী এক দিন বলেছিল, ‘আমি যা কিছু দেখছি তা কিসের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে?’

সে বলল, ‘মুহাম্মাদ ও তাঁর সাথীদের সঙ্গে মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।’

স্ত্রী বলল, ‘আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ (ﷺ) এবং তাঁর সঙ্গী সাথীদের মোকাবেলায় কোন কিছুই স্থির হতে পারবে না।’

সে বলল, ‘আল্লাহর শপথ! আমার আশা যে, আমি মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর কোন সঙ্গীকে তোমার খাদেম করে ছাড়ব।’ তারপর সে বলল,

إن يقبلوا اليوم فمالي عِلَّه ** هٰذَا ســلاح كامــل وألَّه

وذو غِرَارَيْن سريع السَّلَّة **

অর্থ : তারা যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসে তবে আমার কোন আপত্তি হবে না। এ হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র, লম্বা ফলা বিশিষ্ট বর্শা এবং আকস্মিক আক্রমণাত্মক দু’ ধার বিশিষ্ট তরবারী রয়েছে।

খান্দামর যুদ্ধে এ ব্যক্তিও এসেছিল।

যূ-তুওয়া নামক স্থানে ইসলামী সৈন্য (الْجَيْشُ الْإِسْلاَمِيْ بِذِيْ طُوٰى):

অগ্রগমনের এক পর্যায়ে রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর বাহিনী মাররুয যাহরান হতে যু তুওয়ায় গিয়ে পৌঁছলেন, সে সময় আল্লাহ প্রদত্ত বিজয়ীর সম্মানের জন্য অত্যধিক বিনয়ের সঙ্গে নাবী কারীম (ﷺ) স্বীয় মস্তক এমন ভাবে অবনমিত রেখেছিলেন যে, দাড়ির লোম সওয়ারীর খড়ির সঙ্গে গিয়ে লাগছিল। নাবী কারীম (ﷺ) যু তুওয়ায় গিয়ে সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা বিধান ও বিন্যাস করে নিলেন। ডান পাশে নিযুক্ত করলেন খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)-কে। সে স্থানে ছিল আসলাম, সুলাইম, গিফার, মুযায়নাহ, জুহায়ানাহ এবং আরও অন্যান্য গোত্রসমূহ। খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)-কে নির্দেশ দেয়া হল নীচু অঞ্চল দিয়ে মক্কায় প্রবেশ করতে। কুরাইশগণ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে তাদের সকলকে হত্যা করে দিবে, তারপর সাফা পাহাড়ের উপর নাবী কারীম (ﷺ)-এর সঙ্গে সাক্ষাত করবে।

যুবাইর বিন ‘আউওয়াম (রাঃ) ছিলেন বাম পাশে। তাঁর সঙ্গে ছিল রাসূলে কারীম (ﷺ)-এর পতাকা। নাবী কারীম (ﷺ) তাঁকে দির্দেশ প্রদান করলেন মক্কার উপরিভাগ অর্থাৎ কাদা’ নামক স্থান দিয়ে প্রবেশ করতে এবং হাজূনে গিয়ে পতাকা উত্তোলন করে তথায় তাঁর জন্য অপেক্ষা করতে।

পদাতিক সৈন্যদের নেতৃত্বে ছিলেন আবূ উবাইদাহ (রাঃ)। তাঁকে নির্দেশ প্রদান করেছিলেন, বাতনে ওয়াদীর পথ দিয়ে এমনভাবে অগ্রসর হতে যাতে তিনি রাসূলে কারীম (ﷺ)-এর পূর্বেই মক্কায় অবতরণ করতে সক্ষম হন।

মক্কায় ইসলামী সৈন্যের প্রবেশ (الْجَيْشُ الْإِسْلاَمِيْ يَدْخُلُ مَكَّةَ):

উপর্যুক্ত এ নির্দেশনা লাভের পর ভিন্ন ভিন্ন বাহিনী নিজ নিজ নির্ধারিত পথ ধরে অগ্রসর হতে থাকলেন। খালিদ বিন ওয়ালীদের বাহিনীর সম্মুখে যে সকল মুশরিক এসেছিল তাদের সকলকেই হত্যা করা হল। অবশ্য, তাঁর বন্ধুদের মধ্যে থেকে কুরয বিন জাবির ফিহরী এবং খুনাইস বিন খালিদ বিন রাবী’আহ শাহাদাতের পিয়ালা পান করেন। এর কারণ ছিল এই যে এ দু’ জন সেনা বাহিনী থেকে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ভিন্ন পথ ধরে গমন করছিলেন। সেই অবস্থায় তাদের হত্যা করা হয়।

খান্দামায় পৌঁছানোর পর খালিদ (রাঃ) এবং কুরাইশ লম্পটদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সামান্য সংঘর্ষে বারো জন মুশরিক নিহত হওয়ার পর তাদের মধ্যে পলায়নের হিড়িক পড়ে যায়। হেমাস বিন ক্বায়স- যে মুসলিমগণের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য পূর্ব থেকেই অস্ত্রশস্ত্র ঠিক-ঠাক করে রেখেছিল- যুদ্ধক্ষেত্রে পলায়ন করার পর নিজ গৃহে প্রবেশ করল এবং তার স্ত্রীকে বলল, দরজা বন্ধ করে দাও।’ তার স্ত্রী বলল, ‘ওই কথাটি কোথায় গেল যা তুমি বলতেছিলে?’ উত্তরে সে বলল,

إنك لو شهدت يوم الخندمة إذ فر صفوان وفر عكرمه

واستقبلتنا بالسيوف المسلمه يقطعن كل ساعد وجمجمه

ضربا فلا يسمع إلا غمغمه لهم نهيت خلفنا وخمهمه

অর্থ: ‘তুমি যদি খান্দামায় যুদ্ধের অবস্থা দেখতে যখন সাফওয়ান ও ইকরামা পলায়ন করতে উদ্যত হয় এবং উন্মুক্ত তরবারী দিয়ে আমাদের অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করা হয় যা হাতের কবজি এবং মাথার খুলিগুলোকে এমন ভাবে কর্তন করছিল যে পিছনে তাদের গর্জন ও গোলমাল ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছিল না। তবে তুমি নিন্দনীয় একটুও কথা বলতে পারতে না।’

এরপর খালিদ (রাঃ) দৃপ্ত পদে মক্কার গলি পথগুলো অতিক্রম করে সাফা পাহাড়ের উপর রাসূলুল্লাহর (ﷺ) সঙ্গে মিলিত হন।

এদিকে যুবাইর (রাঃ) অগ্রভাগে এগিয়ে গিয়ে হাজুন নামক স্থানে ফাতাহ মসজিদের নিকট রাসূলুল্লাহর (ﷺ) পতাকা উত্তোলন এবং তাঁর জন্য একটি তাঁবু নির্মাণ করেন। অতঃপর সেখানে একটানা অবস্থান করতে থাকলেন যতক্ষণ না রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সেখানে আগমন করলেন।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 পরের পাতা »