সহীহ ফিক্বহুস সুন্নাহ ওযূ আবূ মালিক কামাল বিন আস-সাইয়্যিদ সালিম ১ টি

১। মিসওয়াক করা:

কোন কোন সময় মিসওয়াক করা মুস্তাহাব: সে বিষয়ে ‘‘سنن الفطرة’’ অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে।

২। ওযূর শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা:

সকল কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা শরীয়াত সম্মত উত্তম কাজ। ওযূর সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলার ব্যাপারে কিছু যঈফ হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যদিও কতিপয় আলিম এগুলোকে সহীহ বলেছেন।

তন্মধ্যে একটি হাদীস হলো:

وَلَا وُضُوءَ لِمَنْ لَمْ يَذْكُرِ اسْمَ اللَّهِ تَعَالَى عَلَيْهِ

অর্থাৎ: যে ওযূর শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলল না তার ওযূ হবে না।[1] এ ব্যাপারে আরও হাদীস রয়েছে, যেগুলো নিতান্তই যঈফ। এটা দলীলের অযোগ্য। এজন্য ইমাম আহমাদ (রাহি.) বলেন, এ ব্যাপারে সহীহ সনদে বর্ণিত কোন হাদীস আছে বলে আমার জানা নেই।

আমার বক্তব্য: যে সমস্ত রাবী রাসূল (ﷺ) এর ওযূর পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন, তাদের বর্ণিত হাদীসগুলো ‘বিসমিল্লাহ’ বলা ওয়াজিব না হওয়াকেই শক্তিশালী করে। তারা কেউ হাদীসে ‘বিসমিল্লাহ’ বলার কথা উল্লেখ করেন নি। এটা ইমাম সাওরী, মালিক, শাফেঈ ও আসহাবে রা’য়দের অভিমত এবং ইমাম আহমাদের একটি বর্ণনা।[2]

৩। ওযূর শুরুতে দু’হাত কব্জিসহ ধৌত করা:

যেমন- ওসমান (রাঃ) রাসূল (ﷺ) এর ওযূর পদ্ধতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন:

فَأَفْرَغَ عَلَى كَفَّيْهِ ثَلاَثَ مِرَارٍ، فَغَسَلَهُمَا

তিনি উভয় হাতের তালুতে তিনবার পানি ঢেলে তা ধুয়ে নিলেন ।[3]

৪। এক অঞ্জলি পনি নিয়ে একই সাথে কুলি ও নাকে পানি দিবে, এরূপ তিনবার করবে:

যেমন- মহানাবী (ﷺ) এর ওযূর পদ্ধতি শিক্ষা প্রদানে আবদুল্লাহ বিন যায়েদ (রাঃ) এর হাদীস:

فمَضْمَضَ، وَاسْتَنْشَقَ مِنْ كَفٍّ وَاحِدَةٍ فَفَعَلَ ذَلِكَ ثَلَاثًا

অর্থাৎ: তিনি এক অঞ্জলি পনি নিয়ে একই সাথে কুলি ও নাকে পানি দিলেন, এরূপ তিনি তিনবার করলেন।[4]

৫। সিয়াম পালনকারী ব্যতীত অন্যরা ভালভাবে কুলি করবে ও নাকে পানি দেবে:

যেমন লাকীত্ব বিন সাবরাহ থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, وَبَالِغْ فِي الِاسْتِنْشَاقِ إِلَّا أَنْ تَكُونَ صَائِمًا

অর্থাৎ: সিয়াম পালনকারী না হলে, নাকে ভালভাবে পানি পৌঁছাও।[5]

৬। বাম হাতের পূর্বে ডান হাত ধৌত করা :

যেমন: মহানাবী (ﷺ) এর ওযূর পদ্ধতি বর্ণনায় ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

ثُمَّ أَخَذَ غَرْفَةً مِنْ مَاءٍ، فَغَسَلَ بِهَا يَدَهُ اليُمْنَى، ثُمَّ أَخَذَ غَرْفَةً مِنْ مَاءٍ، فَغَسَلَ بِهَا يَدَهُ اليُسْرَى، ثُمَّ مَسَحَ بِرَأْسِهِ، ثُمَّ أَخَذَ غَرْفَةً مِنْ مَاءٍ، فَرَشَّ عَلَى رِجْلِهِ اليُمْنَى حَتَّى غَسَلَهَا، ثُمَّ أَخَذَ غَرْفَةً أُخْرَى، فَغَسَلَ بِهَا رِجْلَهُ، يَعْنِي اليُسْرَى

এরপর আর এক অাঁজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে ডান হাত ধুলেন। এরপর আর এক অাঁজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে তাঁর বাঁ হাত ধুলেন। এরপর তিনি মাথা মাসাহ করলেন। এরপর আর এক অাঁজলা পানি নিয়ে ডান পায়ের উপর ঢেলে দিয়ে তা ধুয়ে ফেললেন। এরপর আর এক অাঁজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে বাম পা ধুলেন।[6]

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ ﷺ «يُعْجِبُهُ التَّيَمُّنُ، فِي تَنَعُّلِهِ، وَتَرَجُّلِهِ، وَطُهُورِهِ، وَفِي شَأْنِهِ كُلِّهِ

রাসূল (ﷺ) জুতা পরিধান, মাথা আঁচড়ানো ও পবিত্রতা অর্জন তথা সকল কাজ ডান দিক থেকে শুরু করতে ভালবাসতেন।[7]

৭। অঙ্গসমূহ তিনবার করে ধৌত করা:

মহানাবী (ﷺ) থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘‘তিনি এবার একবার করে ওযূ করেছেন’’।[8] তিনি দু’বার ‘‘দু’বার করে ওযূ করেছেন’’।[9] ওযূর ক্ষেত্রে অধিক পরিপূর্ণতা হল, অঙ্গসমূহ তিনবার করে ধৌত করা, যেমনটি মহানাবী (ﷺ) করেছেন। পূর্বে বর্ণিত উসমান (রাঃ)ও আবদুল্লাহ বিন যায়েদ (রাঃ) এর হাদীসদ্বয়ে তা বর্ণিত হয়েছে।


দু’টি সতর্ক বাণী:

(ক) মাথা মাসাহ একবার করতে হবে। দু’বার বা তিনবার করা যাবে না ।

এ ব্যাপারে মহানাবী (ﷺ) এর ওযূর পদ্ধতিতে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। তিনবার মাসাহ করার ব্যাপারে বর্ণিত রেওয়ায়াতগুলোর একটিও সহীহ নয়। আর যে বর্ণনা গুলো দু’বার মাসাহ করার ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে সেগুলো মহানাবী (ﷺ) এর বাণী- ‘ فَأَقْبَلَ بِهِمَا وَأَدْبَرَ’ এ ব্যাখ্যা। যেমনটি ইবনু আব্দিল বার বলেছেন।[10] মাসাহ করার সময় মাথার উপর বারবার হাত ফিরানোকে পুনরাবৃত্তি বলা যায় না। কেননা পুনরাবৃত্তি হয়ে থাকে কেবল নতুন পানি নেয়ার মাধ্যমে। উপরন্তু পুনরাবৃত্তি করা হয় অঙ্গসমূহ ধৌত করার ক্ষেত্রে। মাসাহ করার ক্ষেত্রে নয়।[11] মাথা মাসাহ পুনরাবৃত্তি না করার ক্ষেত্রে শক্তিশালী দলীল হলো, জনৈক আরাবীর হাদীস, যিনি মহানাবী (ﷺ) এর কাছে এসে ওযূর পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে মহানাবী (ﷺ) তাকে প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার তিনবার করে ধৌত করে দেখিয়ে দিলেন।

অতঃপর বললেন:

هَكَذَا الْوُضُوءُ، فَمَنْ زَادَ عَلَى هَذَا فَقَدْ أَسَاءَ وَتَعَدَّى وَظَلَمَ

অর্থাৎ: এভাবেই ওযূ করতে হবে। যে ব্যক্তি এর চেয়ে বেশিবার ধৌত করবে, সে ভুল করবে, সীমালঙ্ঘন করবে ও জুলুম করবে।[12]

হাফেজ ‘ফাতহ’ গ্রন্থে (পৃ:১/২৯৮) বলেন, সাঈদ ইবনে মানসুর এর বর্ণনায় সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, মহানাবী (ﷺ) একবার মাসাহ করেছেন। সুতরাং এটা প্রমাণ করে যে, একবারের অধিক মাসাহ করা পছন্দনীয় নয়। আর তিনবার মাসাহ করার হাদীসগুলো যদি সহীহ হয়, তাহলে দলীলগুলো একত্রিত করার স্বার্থে বলা যায় যে, তা মাসাহ পূর্ণ করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কেননা তা সম্পূর্ণ মাথার জন্য পূর্ণাঙ্গ মাসাহ।

আমার বক্তব্য: এটা ইমাম শাফেঈ ব্যতীত ইমাম আবূ হানীফা, মালিক ও আহমাদ (রাহি.) এর সহীহ অভিমত।[13]

(খ) যে ব্যক্তি পরিপূর্ণভাবে ওযূ করবে তার জন্য তিন বারের বেশি অঙ্গ ধৌত করা মাকরূহ:

ওযূর অঙ্গসমূহ তিনবার করে ধৌত করার ফলে তা স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পরিপূর্ণ হয়। তবে তিন বারের বেশি ধৌত করা মাকরূহ। যেমন হাদীস বর্ণিত হয়েছে - فَمَنْ زَادَ عَلَى هَذَا فَقَدْ أَسَاءَ وَتَعَدَّى وَظَلَمَ -অর্থাৎ, যে ব্যক্তি এর চেয়ে বেশিবার ধৌত করবে, সে ভুল করবে, সীমালঙ্ঘন করবে ও জুলুম করবে। তবে এ অতিরিক্তটা ক্ষতি পূরণের ক্ষেত্রে হলে প্রযোজ্য নয়। যদি তিনবার কিংবা তার কম ধৌত করার মাধ্যমেই উত্তমরূপে ওযূ করা যায়, তাহলে তিনবারের বেশি ধৌত করা মাকরূহ। এ মাসআলাটির ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই।[14]

৮। ঘন দাড়ি খিলাল করা:

পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, দাড়ি যদি ঘন হওয়ার ফলে মুখের চামড়া দেখা না যায়, তাহলে বাহ্যিকভাবে তা ধুয়ে ফেললেই চলবে। এখানে আমরা অতিরিক্তভাবে বর্ণনা করছি যে, পানি দ্বারা তা খিলাল করা মুস্তাহাব।

عَنْ أَنَسٍ يَعْنِي ابْنَ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ كَانَ إِذَا تَوَضَّأَ، أَخَذَ كَفًّا مِنْ مَاءٍ فَأَدْخَلَهُ تَحْتَ حَنَكِهِ فَخَلَّلَ بِهِ لِحْيَتَهُ» ، وَقَالَ: هَكَذَا أَمَرَنِي رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ

আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) যখন ওযূ করতেন, তখন তিনি এক কোশ পানি হাতে নিয়ে থুতনির নীচে দিয়ে তা দ্বারা দাড়ি খিলাল করতেন। তিনি আরো বলেন, আমার প্রতিপাল আমাকে এরূপ করার নির্দেশ দিয়েছেন।[15]

এ বিষয়টিকে মুস্তাহাব বলে প্রমাণ করা যায়, পূর্বে উল্লেখিত ‘মাসীউস সালাত বা সালাতে ভত্বলাকারী’ এর ঘটনায় বর্ণিত রিফায়াহ বিন রা‘ফে এর হাদীস দ্বারা।

৯। অঙ্গসমূহ ঘর্ষণ করা:

عن عبد الله بن زيد قال رأيت النبي ﷺ يتوضأ فجعل يدلك ذراعيه

আবদুল্লাহ বিন যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে ওযূ করতে দেখলাম। অতঃপর তিনি তার দু‘বাহু কচ্লাতে শুরু করলেন।[16]

১০। দু’হাত ও পায়ের আঙ্গুলসমূহ খিলাল করা:

أَسْبِغِ الْوُضُوءَ، وَخَلِّلْ بَيْنَ الْأَصَابِعِ، وَبَالِغْ فِي الِاسْتِنْشَاقِ إِلَّا أَنْ تَكُونَ صَائِمًا -অর্থাৎ, উত্তমরূপে ওযূ কর, আঙ্গুলসমূহের মাঝে খিলাল কর এবং সিয়াম পালনকারী না হলে, নাকে ভালভাবে পানি পৌঁছাও।[17]

যদি আঙ্গুল সমূহ ও তার আশে-পাশের অংশ খিলাল করা ছাড়া ভালভাবে ধৌত করা সম্ভব না হয়, তাহলে তা খিলাল করা ওয়াজিব। যেমনটি আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি।

১১। যে স্থানসমূহ ধৌত করা ফরয তা বেশি করে ধৌত করা:

মুস্তাহাব হলো: পরিপূর্ণভাবে ওযূ করা এবং মাথার অগ্রভাগ পর্যন্ত মুখমণ্ডল বেশি করে ধৌত করা। এটাকে ‘‘إطالة الغرة’’ তথা, উজ্জ্বলতা দীর্ঘ করণ বলা হয়। আর দু’কনুই ও পায়ে গিঁট বেশি করে ধেŠত করা। এটাকে ‘‘إطالة التحجيل’’ তথা; শ্রভ্রতা দীর্ঘকরণ বলা হয়। আবূ হুরাইরা (রাঃ) এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:

إِنَّ أُمَّتِي يَأْتُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ أَثَرِ الْوُضُوءِ، فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غُرَّتَهُ فَلْيَفْعَلْ

ক্বিয়ামতের দিন আমার উম্মাতকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে যে ওযূর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমণ্ডল থাকবে উজ্জ্বল। তাই তোমাদের মধ্যে যে এ উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিতে পারে, সে যেন তা করে।[18]

عَنْ نُعَيْمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْمُجْمِرِ، قَالَ: رَأَيْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ يَتَوَضَّأُ فَغَسَلَ وَجْهَهُ فَأَسْبَغَ الْوُضُوءَ، ثُمَّ غَسَلَ يَدَهُ الْيُمْنَى حَتَّى أَشْرَعَ فِي الْعَضُدِ، ثُمَّ يَدَهُ الْيُسْرَى حَتَّى أَشْرَعَ فِي الْعَضُدِ، ثُمَّ مَسَحَ رَأْسَهُ، ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَهُ الْيُمْنَى حَتَّى أَشْرَعَ فِي السَّاقِ، ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى حَتَّى أَشْرَعَ فِي السَّاقِ "، ثُمَّ قَالَ: " هَكَذَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَتَوَضَّأُ.

নু’আইম ইবনে আবদুলস্নাহ্ আল-মুজমির থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন : আমি আবূ হুরাইরা (রাঃ) কে ওযূ করতে দেখেছি। তিনি খুব ভালোভাবে মুখমণ্ডল ধুলেন, এরপর ডান হাত ধুলেন এবং বাহুর কিছু অংশ ধুলেন। পরে বাম হাত ও বাহুর কিছু অংশসহ ধুলেন। এরপর মাথা মাসাহ করলেন। অতঃপর ডান পা ও নলার কিছু অংশ ধুলেন, এরপর বাম পা ও নলার কিছু অংশ একইভাবে ধুলেন। অতঃপর বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে এভাবে ওযূ করতে দেখেছি।[19] আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন:

سَمِعْتُ خَلِيلِي ﷺ يَقُولُ: «تَبْلُغُ الْحِلْيَةُ مِنَ الْمُؤْمِنِ، حَيْثُ يَبْلُغُ الْوَضُوءُ»

আমি আমার বন্ধু রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, যে স্থান পর্যন্ত ওযূর পানি পৌঁছবে, সে স্থান পর্যন্ত মু‘মিন ব্যক্তির চাকচিক্য অথবা সৌন্দর্যও পৌঁছবে।[20]

১২। পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হওয়া:

হযরত আনাস (রা.) বলেন,

كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يَغْسِلُ، أَوْ كَانَ يَغْتَسِلُ، بِالصَّاعِ إِلَى خَمْسَةِ أَمْدَادٍ، وَيَتَوَضَّأُ بِالْمُدِّ

রাসূল (ﷺ) এক ছা (৪ মুদ) থেকে ৫ মুদ পর্যন্ত পানি দিয়ে গোসল এবং এক মুদ পানি দিয়ে ওযূ করতেন।[21]

১ সা = ৪ মুদ, আর এক মুদ = প্রসিদ্ধ প্রায় আধা লিটারের সমান ।

১৩। ওযূর পর দু‘আ পাঠ করা:

ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন:

مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُبْلِغُ - أَوْ فَيُسْبِغُ - الْوَضُوءَ ثُمَّ يَقُولُ: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ إِلَّا فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ

অর্থাৎ: তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি উত্তম ও পূর্ণাঙ্গরূপে ওযূ করার পর বলে:

«أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ»

অর্থাৎ, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আলস্নাহ্ ছাড়া প্রকৃত কোনো ইলাহ নেই , তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর বান্দাহ্ ও রাসূল। তাহলে তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হয়। সে ইচ্ছা করলে এর যে কোনো দরজা দিয়ে (জান্নাতে) প্রবেশ করতে পারবে।[22]

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: " مَنْ تَوَضَّأَ فَقَالَ: سُبْحَانَكَ اللهُمَّ، وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ، كُتِبَ فِي رَقٍّ ثُمَّ طُبِعَ بِطَابَعٍ فَلَمْ يُكْسَرْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ওযূ করার পর বলবে:

«سُبْحَانَكَ اللهُمَّ، وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ»

অর্থাৎ:‘মহা পবিত্র আপনি হে আল্লাহ্‌! আপনার প্রশংসার সাথে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আমি আপনার নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার দিকেই ফিরে যাচ্ছি (অর্থাৎ তাওবা করছি)। তাহলে তার জন্য কাগজে তার আমল নামা লিখে এমনভাবে মুদ্রণ করা হবে, যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত নষ্ট হবে না।[23]

১৪। ওযূর পর দু’রাকআত সালাত আদায় করা:

উসমান (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে আমার এ ওযূর মত করে ওযূ করতে দেখেছি। এর পর রাসূল (ﷺ) বলেছেন:

مَنْ تَوَضَّأَ نَحْوَ وُضُوئِي هَذَا، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ لاَ يُحَدِّثُ فِيهِمَا نَفْسَهُ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ

‘যে ব্যক্তি আমার মত এ রকম উযু করবে, তারপর দু’রাক’আত সালাত আদায় করবে, যাতে দুনিয়ার কোন খেয়াল করবে না, তার পেছনের গুনাহ্ মাফ করে দেয়া হবে’।[24]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ لِبِلاَلٍ: «عِنْدَ صَلاَةِ الفَجْرِ يَا بِلاَلُ حَدِّثْنِي بِأَرْجَى عَمَلٍ عَمِلْتَهُ فِي الإِسْلاَمِ، فَإِنِّي سَمِعْتُ دَفَّ نَعْلَيْكَ بَيْنَ يَدَيَّ فِي الجَنَّةِ» قَالَ: مَا عَمِلْتُ عَمَلًا أَرْجَى عِنْدِي: أَنِّي لَمْ أَتَطَهَّرْ طَهُورًا، فِي سَاعَةِ لَيْلٍ أَوْ نَهَارٍ، إِلَّا صَلَّيْتُ بِذَلِكَ الطُّهُورِ مَا كُتِبَ لِي أَنْ أُصَلِّيَ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী (ﷺ) একদিন ফজরের সালাতের সময় বিলাল (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন: হে বিলাল! ইসলাম গ্রহণের পর সর্বাধিক আশাব্যঞ্জক যে আমল তুমি করেছ, তার কথা আমার নিকট ব্যক্ত কর। কেননা, জান্নাতে আমি আমার সামনে তোমার পাদুকঠোর আওয়াজ শুনতে পেয়েছি। বিলাল (রাঃ) বললেন: দিন রাতের যে কোন প্রহরে আমি ত্বহারাত বা পবিত্রতা অর্জন করেছি, তখনই সে ত্বহারাত দ্বারা সালাত আদায় করেছি, যে পরিমাণ সালাত আদায় করা আমার তাক্দীরে লেখা ছিল। আমার কাছে এর চাইতে অধিক আশাব্যঞ্জক হয়, এমন কোন বিশেষ আমল আমি করিনি।[25]


ওযূর পর অঙ্গ সমূহ মুছে শুষ্ক করা বৈধ:

এ ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়নি। সুতরাং তা বৈধ। যদি বলা হয় যে, এ ব্যাপারে হযরত মায়মুনা (রা.) থেকে হাদীস বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি রাসূল (ﷺ) এর গোসলের পর একটি গামছা নিয়ে আসলেন, কিন্তু তা দিয়ে তিনি শরীর মুছলেন না। বরং হাত দিয়ে শরীর মুছতে মুছতে চলে গেলেন।[26]

এ ক্ষেত্রে আমরা বলব, এটি শুধু এক দিনের ঘটনা, যা কয়েকটি বিষয়ের সম্ভবনা রাখে। হয়তবা তিনি গামছাটি গ্রহণ করেন নি তা অপরিষ্কারর থাকার কারণে , অথবা তিনি পানি দ্বারা গামছাটি ভিজে যাওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন, ইত্যাদি। হযরত মায়মুনা (রা.) এর গামছা আনার মাধ্যমে এ নিদর্শন পাওয়া যায় যে, তাঁর অঙ্গ মুছার অভ্যাস ছিল।[27] নিম্নোক্ত হাদীসটি এটা বৈধ হওয়ার দলীল কে আরও শক্তিশালী করে।

أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ تَوَضَّأَ، فَقَلَبَ جُبَّةَ صُوفٍ كَانَتْ عَلَيْهِ، فَمَسَحَ بِهَا وَجْهَهُ

অর্থাৎ, একদা রাসূল (ﷺ) ওযূ করলেন এবং তিনি তার পরিধানের পশমী জুববা উঠিয়ে তাঁর মুখমণ্ডল মাসাহ করলেন।[28]

ইমাম তিরমিযি (রাহি.) (৫৪) বলেন, মহানাবী (ﷺ) এর সাহাবাগণ ও তাদের পরবর্তী বিদ্বানগণ ওযূর পর রুমাল বা গামছা ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছেন। যারা এটাকে অপছন্দ মনে করেন। তাদের অপছন্দের কারণ হল- তারা বলে থাকেন যে, ওযূকে পরিমাপ করা হবে।


নখের উপর প্রলেপ থাকলে ওযূ বিশুদ্ধ হবে না:[29]

কেননা এর ফলে যে সমস্ত স্থানে পানি পেঁŠছানো ফরয, সে সমস্ত স্থানে তা পানি পেঁŠছাতে বাধা প্রদান করে। তবে শুধু রং , যেমনঃ মেহেদী দ্বারা রং করা বা অনুরূপ কিছু হলে, তাতে কোন সমস্যা নেই, তথাপিও তা ওযূ ও সালাতের পূর্বে দূর করাই উত্তম। যেমন:

عن ابن عباس قال نساءنا يختضبن أحسن خضاب يختضبن بعد العشاء وينزعن قبل الفجر .

অর্থাৎ: ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমাদের মহিলারা উত্তম খেজাব ব্যবহার করে। তারা ঈশার সালাতের পরে খেজাব ব্যবহার করে এবং ফজরের পূর্বে তা খুলে ফেলে।[30]

যে মহিলা ওযূ ছাড়াই হাতে মেহেদী বা খেজাব লাগাবে অতঃপর সালাতের সময় হবে, তার ব্যাপারে ইবরাহীম আন নাখঈ বলেন, تنزع ما على يديها إذا أرادت أن تصلي . - অর্থাৎ: যখন সে সালাত আদায় করার জন্য ইচ্ছা করবে, তখন হাতে যা লাগানো থাকবে তা মুছে ফেলবে।[31]

[1] যঈফ; আবূ দাউদ (১০১), তিরমিযী (২৫), আহমাদ (২/৪১৮) প্রভৃতি। এখানে হাদীসটি যঈফ হওয়াটাই অপ্রাধিকার প্রাপ্ত। যদিও আলবানী তার আল-ইরওয়া (১/১২২) গ্রন্থে একে হাসান আখ্যা দিয়েছেন।

[2] ফাতহুল কাদীর (১/২২২), মাওয়াহিবুল জালিল (১/২৬৬) আল-মাজমু’ (১/৩৮৫), আল-ইনসাফ (১/১২৮)।

[3] সহীহ; বুখারী (১৫৯), মুসলিম (২২৬)।

[4] সহীহ; মুসলিম (২৩৫), তিরমিযী (২৮), ইবনে মাজাহ (৪০৫)।

[5] সহীহ; আবূ দাউদ (১৪২), নাসাঈ (১/৬৬), ইবনে মাজাহ (৪০৭) আহমাদ (৪/৩৩)।

[6] সহীহ; বুখারী (১৪০)।

[7] সহীহ; বুখারী (১৬৮), মুসলিম (২৬৮)।

[8] সহীহ; বুখারী (১৫৬), ইবনে আববাসের সূত্রে।

[9] সহীহ; বুখারী (১৫৭), আবদুলস্নাহ ইবনে যায়েদ এর সূত্রে।

[10] ইমাম বাইহাক্বী প্রণীত আল-খালাফীয়াত (১/৩৩৬)।

[11] মুকাদ্দামাতু ইবনে রাশাদ আলাল মাদূনাহ (পৃ. ১৬)।

[12] সহীহ; নাসাঈ (১/৮৮), ইবনে মাজাহু (৪২২), আহমাদ (২/১৮০)।

[13] আল-মাসবূত্ব (১/৫), হাশিয়াতুদ দাসূক্বী (১/৯৮) আল-মুগনী (১/১২৭), আল-উম্ম (১/২৬)।

[14] আত-তামহীদ (২০/১১৭) ইবনু আব্দিলবার প্রণীত।

[15] সহীহ লিগাইরীহী; আবূ দাউদ (১৪৫), বাইহাক্বী (১/৫৪), হাকিম (১/১৪৯), আল ইরওয়া (৯২)।

[16] সহীহ; ইবনে হিববান (১০৮২), বাইহাক্বী (১/১৯৬)।

[17] সহীহ; এর তাখরীজ পূর্বে করা হয়েছে।

[18] সহীহ; বুখারী (৩৬), মুসলিম (২৪৬)।

[19] সহীহ; মুসলিম (২৪৬)।

[20] মুসলিম (২৫০)।

[21] সহীহ; বুখারী (১৯৮), মুসলিম (৩২৫)।

[22] সহীহ; মুসলিম (২৩৪)।

[23] সহীহ; ইমাম নাসাঈ তাঁর আল-কুবরা (৯৯০৯), হাকিম (১/৫৬৪) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসের আরও কিছু শাহিদ হাদীস রয়েছে।

[24] সহীহ; বুখারী (৬৪৩৩), মুসলিম (২২৬)।

[25] সহীহ; বুখারী (১১৪৯), মুসলিম (২৪৫৮)।

[26] সহীহ; বুখারী (২৭০)।

[27] আশ-শারহুল মুমতি’ (১/১৮১), যাদুল মায়াদ (১/১৯৭)।

[28] এর সনদ হাসানের নিকটবর্তী; ইবনে মাজাহ (৪৬৮,৩৫৬৪)।

[29] ফিক্বহুস সুন্নাহ লিননিসা (পৃ. ৩৯)।

[30] এর সনদ সহীহ; ইবনে আবি শায়বা (১/১২০)।

[31] এর সনদ সহীহ; বাইহাকী (১/৭৭, ৭৮)।