সহীহ ফিক্বহুস সুন্নাহ ওযূ আবূ মালিক কামাল বিন আস-সাইয়্যিদ সালিম ১ টি

ওযূ ভঙ্গের কারণ বলতে এমন বিষয় বুঝায়, যার মাধ্যমে ওযূ নষ্ট হয়ে যায়। ওযূ ভঙ্গের কারণগুলো হলো:

১। দু’রাস্তা দিয়ে পেশাব, পায়খানা অথবা বায়ু নির্গত হওয়া:

পেশাব ও পায়খানার ব্যাপারে মহান আল্লাহ্‌ বলেন:

﴿أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ﴾

তোমাদের কেউ যদি পায়খানা থেকে আসে (সূরা মায়েদা -৬) ।

অত্র আয়াতে ‘الْغَائِطِ’ শব্দ উল্লেখ করে মল-মূত্র ত্যাগ তথা পেশাব পায়খানাকে বুঝানো হয়েছে। বিদ্বানগণ এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, দু’রাস্তা তথা সামনে ও পিছন দিয়ে পেশাব-পায়খানা নির্গত হওয়ার কারণে ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে।[1]

আর যদি তা সামনে বা পেছনের রাস্তাদিয়ে বের না হয়ে অন্য স্থান দিয়ে বের হয়। যেমন: মুত্রাশয় বা পেটের কোন স্থান যখম হয়ে নির্গত হয়। এ ক্ষেত্রে আলিমগণ মতভেদ করেছেন। কেউ শুধু নির্গত হওয়াকেই ধর্তব্য মনে করেন, যেমন আবূ হানীফা, সাওরী, আহমাদ ও ইবনে হাযম (রাহি.)। তারা বলেন, শরীরের যে কোন স্থান দিয়ে না পাক নির্গত হলে ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে।

আবার কেউ শুধু দু’রাস্তা দিয়ে নির্গত হওয়াকেই ধর্তব্য মনে করেন। যেমন: ইমাম শাফেঈ। তিনি বলেন, যদি এ দু’রাস্তা দিয়ে কোন কিছু নির্গত হয়, তাহলে ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে, যদিও নির্গত বস্ত্তটি না পাক না হয়। যেমন: কংকর বা অনুরূপ কিছু।[2]

আর বায়ু যদি পিছনের রাস্তা দিয়ে শব্দসহ বা শব্দ বিহীন নির্গত হয়, তাহলে সকলের ঐকমত্যে ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে। মহানাবী (ﷺ) বলেন,

لاَ تُقْبَلُ صَلاَةُ مَنْ أَحْدَثَ حَتَّى يَتَوَضَّأَ قَالَ رَجُلٌ مِنْ حَضْرَمَوْتَ: مَا الحَدَثُ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ؟ قَالَ: فُسَاءٌ أَوْ ضُرَاطٌ

‘যে ব্যক্তির হাদস হয় তার সালাত কবুল হবে না, যতক্ষণ না সে ওযূ করে। হাযরা-মাওতের এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আবূ হুরাইরা! হাদস কী?’ তিনি বললেন, ‘নিঃশব্দে বা সশব্দে বায়ু বের হওয়া’।[3]

যদি সামনের রাস্তা দিয়ে বায়ু নির্গত হয়, তাহলে জমহুরের মতে[4] ওযূ নষ্ট হবে এবং ইমাম আবূ হানীফা ও ইবনে হাযমের মত অনুসারে ওযূ নষ্ট হবে না। কেননা ‘فُسَاءٌ’ এবং ‘ضُرَاطٌ’ এমন দু‘টি নাম, যা পেছনের রাস্তাদিয়ে বের না হলে তাকে বায়ু বলা যায় না।[5]


আমার বক্তব্য: যদি বায়ু নির্গত হওয়া স্পষ্ট বুঝা যায়, তাহলে তা সামনের বা পেছনের যে কোন রাস্তা দিয়ে নির্গত হোক না কেন, ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে। আর যদি স্পষ্ট বুঝা না যায়, তাহলে শুধু পেছনের রাস্তাই ধর্তব্য।


সতর্ক বাণীঃ কখনও কখনও মহিলাদের লজ্জস্থান থেকে বায়ুর মত কিছু নির্গত হওয়া অনুভব করা যায়। মূলতঃ এটা একটা আলোড়ন বা ঝাকুনী। এটা নির্গত হওয়া বায়ু নয়। এ ক্ষেত্রে তার ওযূ নষ্ট হবে না। কেননা এটা একটা আওয়াজ বা অনুরূপ কিছুর স্থলাভিষিক্ত। কিন্তু যদি মহিলার পেশাব পায়খানার দার ছিড়ে একত্রিত হয়ে যায়, তাহলে গুহ্যদার দিয়ে বায়ু নির্গত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় সতর্কতা মূলক ওযূ করবে।

২। মনি, ওদি ও মযি নির্গত হলে:

মনি নির্গত হলে সকলের ঐকমত্যে ওযূ নষ্ট হবে এবং গোসল ওয়াজিব হবে। গোসলের ব্যাপারে সামনে আলোচনা করা হবে। সর্বসম্মতিক্রমে যেসব কারণে গোসল ওয়াজিব হয় সেসব কারণে ওযূ নষ্ট হয়।[6] মযির মাধ্যমে ওযূ নষ্ট হয়। যেমন আলী ইবনে তালিব (রাঃ) বলেন:

كُنْتُ رَجُلًا مَذَّاءً فَأَمَرْتُ رَجُلًا أَنْ يَسْأَلَ النَّبِيَّ ﷺ ، لِمَكَانِ ابْنَتِهِ، فَسَأَلَ فَقَالَ: تَوَضَّأْ وَاغْسِلْ ذَكَرَكَ

আমার অধিক মযি বের হত। নাবী (ﷺ) এর কন্যা আমার স্ত্রী হওয়া লজ্জার কারণে আমি একজন কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে পাঠালাম। তিনি প্রশ্ন করলে রাসূল (ﷺ) তাকে বললেন যে, তুমি ওযূ কর ও লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেল।[7]

ওদির হুকুমও অনুরূপ। সুতরাং উভয়টি (মযি ও ওদির) ক্ষেত্রে লজ্জাস্থান ধৌত করা ও ওযূ করা ওয়াজিব।

عن بن عباس قال : المني والودي والمذي أما المني فهو الذي منه الغسل وأما الودي والمذي فقال اغسل ذكرك أو مذاكيرك وتوضأ وضوءك للصلاة

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন মনি, ওদি ও মযির হুকুম হল, মনি নির্গত হলে তা ধৌত করতে হবে। আর ওদি ও মযির ব্যাপারে তিনি বলেন, তা নির্গত হলে তোমার লজ্জাস্থান ধৌত কর এবং সালাতের জন্য ওযূ কর।[8]

প্রয়োজনীয় কথা:

যে ব্যক্তি বহুমূত্র রোগে ভুগে অথবা অত্যধিক মযি নির্গত হয় কিংবা পূর্বোলেস্নখিত নাপাকী গুলো বারবার নির্গত হয়, যার ফলে শারিরীক অসুস্থতার কারণে চলাফেরা কষ্টকর হয় পড়ে, তাহলে সে তার কাপড়ে ও শরীরে যা লেগেছে তা ধুয়ে ফেলবে এবং প্রত্যেক সালাতের জন্য ওযূ করবে । যেমনটি মুস্তাহাযার রোগী করে থাকে (মুস্তাহাযার ব্যাপারে সামনে আলোচনা করা হবে)। এরূপ করার পর সালাতে অথবা ওযূ ও সালাতের মধ্যবর্তী সময়ে যা নির্গত হবে তাতে কোন ক্ষতি হবে না।

৩। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ব্যক্তি, যার কোন অনুভূতি নেই:

ঘুমের কারণে ওযূ নষ্ট হবে কি না, এ সংক্রান্ত আসার গুলো একটি অপরটির প্রকাশ্য বিরোধি। এ সংক্রান্ত এমন কিছু হাদীস রয়েছে, যা স্পষ্ট প্রমাণ করছে যে, মূলত ঘুমের কারণে ওযূ নষ্ট হয় না। আবার এমনও হাদীস রয়েছে, যা স্পষ্টভাবে ঘুম হাদাস (ওযূ ভঙ্গকারী) হওয়াকে আবশ্যক করছে। সুতরাং, এ ক্ষেত্রে বিদ্বানদের দু‘টি মাযহাব পরিলক্ষিত হয়। ১. সমন্বয় প্রদানকারী মাযহাব। ২. প্রাধান্য দানকারী মাযহাব। যারা প্রাধান্য দানকারী তাদের কেউ বলেছেন, সাধারণভাবে ঘুম ওযূকে নষ্ট করে, তা হাদাস নয়। আবার কেউ সাধারণভাবে গুমের কারণে ওযূ করা ওয়াজিব বলেছেন। তারা আরো বলেন, ঘুম হাদাসের অন্তর্ভুক্ত। আর সমন্বয়কারী মাযহাবের অনুসারীরা বলেন, ঘুম হাদাসের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং এটা শুধু হাদাসের ধারণা সৃষ্টি করে। এ সমস্ত বিদ্বানগণ মূলতঃ যে ঘুম ওযূকে ওয়াজিব করে সে ঘুমের সংজ্ঞা নিয়ে মতভেদ করেছেন। এ ক্ষেত্রে বিদ্বানগণ তিনটি পথ অবলম্বন করেছেন। ফলে তাদের মাঝে ৮ টি অভিমতের জন্ম হয়েছে।[9] তা হলো-

১ম মতামত: ঘুম সাধারণভাবে ওযূ নষ্ট করে না:

এটা সাহাবাদের একটি জামাত তথা ইবনে উমার, আবূ মুসা আল আশয়ারী (রা.) এর অভিমত। সাঈদ ইবনে যুবাইর, মাকহুল, ইবাইদাতুস সালমানী ও আওযায়ী সহ অন্যান্য বিদ্বানরাও এ মত পেশ করেছেন। তাদের দলীল হলো,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: «أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ وَالنَّبِيُّ ﷺ يُنَاجِي رَجُلًا فِي جَانِبِ المَسْجِدِ، فَمَا قَامَ إِلَى الصَّلاَةِ حَتَّى نَامَ القَوْمُ

(১) আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদিন সালাতের জন্য ইকামত দেয়া হয়ে গেল। কিন্তু নাবী (ﷺ) তখনও এক ব্যক্তির সাথে চুপি চুপি আলাপ করছিলেন। তিনি দীর্ঘক্ষণ আলাপ করলেন। এমনকি সাহাবারা সবাই ঘুমিয়ে পড়লেন। এরপর তিনি আসলেন এবং তাদের সাথে করে সালাত পড়লেন।[10]

عَنْ قَتَادَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ أَنَسًا، يَقُولُ: «كَانَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ ﷺ يَنَامُونَ ثُمَّ يُصَلُّونَ وَلَا يَتَوَضَّئُونَ» قَالَ: قُلْتُ: سَمِعْتَهُ مِنْ أَنَسٍ قَالَ: إِي وَاللهِ

(২) কাতাদাহ্ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি আনাসকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাহাবাগণ ঘুমিয়ে পড়তেন। কিন্তু পরে ওযূ না করেই সালাত পড়তেন। শুবা বলেছেন, আমি একদিন জিজ্ঞেস করলাম, আপনি একথা আনাসের কাছ থেকে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আলস্নাহর কসম আমি এটি শুনেছি![11] অপর বর্ণনায় আছে:

ينظرون الصلاة فينعسون حتى تخفق رؤوسهم , ثم يقومون إلى الصلاة

অর্থাৎ: তারা সালাতের জন্য অপেক্ষা করতেন। ফলে তারা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়তেন, এমন কি তাদের মাথা ঢোলে পড়ত। অতঃপর তারা সালাতের জন্য দ-ায়মান হতেন।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: بِتُّ لَيْلَةً عِنْدَ خَالَتِي مَيْمُونَةَ بِنْتِ الْحَارِثِ، فَقُلْتُ لَهَا: إِذَا قَامَ رَسُولُ اللهِ ﷺ فَأَيْقِظِينِي، " فَقَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقُمْتُ إِلَى جَنْبِهِ الْأَيْسَرِ، فَأَخَذَ بِيَدِي فَجَعَلَنِي مِنْ شِقِّهِ الْأَيْمَنِ، فَجَعَلْتُ إِذَا أَغْفَيْتُ يَأْخُذُ بِشَحْمَةِ أُذُنِي، قَالَ: فَصَلَّى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً

(৩) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাতে আমি আমার খালা মায়মূনা (রা.) এর ঘরে রাত্রি যপন করলাম। আমি আমার খালাকে বললাম রাসূল (ﷺ) রাতের সালাতের জন্য উঠলে আমাকে জাগিয়ে দিবেন। অতঃপর রাতে রাসূল (ﷺ) সালাত আদায়ের জন্য উঠলে আমিও তাঁর সাথে উঠলাম এবং তাঁর বাম পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তখন তিনি আমার হাত ধরে তাঁর ডান পাশে নিলেন। পরে যখনই আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম, তখন তিনি আমার কানের নিমণভাগ ধরে টান দিচ্ছিলেন। ইবনে আব্বাস বলেন, এগারো রাকআত সালাত আদায় করলেন।[12]

(৪) হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) মায়মূনা (রা.) এর বাড়িতে অবস্থানকালে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে:

ثُمَّ نَامَ، حَتَّى سَمِعْتُ غَطِيطَهُ أَوْ خَطِيطَهُ، ثُمَّ خَرَجَ إِلَى الصَّلاَةِ

এর পর তিনি শুয়ে পড়লেন। এমন কি আমি তাঁর নাক ডাকঠোর শব্দ শুনতে পেলাম। এর পর উঠে তিনি সালাতের জন্য বের হলেন।[13]

অপর বর্ণনায় রয়েছে, ثم قام فصلى ولم يتؤضأ অর্থাৎ: তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলেন। অথচ ওযূ করলেন না।

২য় অভিমত: ঘুম সাধারণ ভাবে ওযূ নষ্ট করে:

অল্প ঘুম হোক আর বেশি হোক, কেউ ঘুমালেই ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে। এটা আবূ হুরাইরা, আবূ রাফে, উরওয়াহ বিন যুবাইর, আত্বা, হাসাহ বসরী, ইবনুল মুসাইয়্যিব, যুহরী, মাযিনী, ইবনুল মুনযির ও ইবনে হাযম এর অভিমত। আলবানী এমতটিকে পছন্দ করেছেন।

(১) সফওয়ান বিন আস্সাল (রাঃ) বলেন,

(1) كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ «يَأْمُرُنَا إِذَا كُنَّا مُسَافِرِينَ أَنْ نَمْسَحَ عَلَى خِفَافِنَا وَلَا نَنْزِعَهَا ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ مِنْ غَائِطٍ وَبَوْلٍ وَنَوْمٍ إِلَّا مِنْ جَنَابَةٍ»

অর্থাৎ, আমরা যখন সফরে থাকতাম, তখন রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে জানাবাতের অপবিত্রতা ছাড়া তিনদিন ও তিন রাত মোজা না খুলে তার উপর মাসাহ করার নির্দেশ দিতেন। তবে পেশাব-পায়খান ও ঘুমের কারণে কোন সমস্যা হত না।[14]

তারা বলেন, মহানাবী (ﷺ) আম ভাবে ঘুমের কথা বলেছেন। তিনি কম বা বেশি ঘুমকে খাস করেন নি এবং কোন অবস্থাকেও খাস করেন নি। আর তিনি ঘুমকে পেশাব-পায়খানার সাথে তুলনা করে সমানভাবে বর্ণনা করেছেন।

(২) হযরত আলী ইবনে আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, «وِكَاءُ السَّهِ[15] الْعَيْنَانِ، فَمَنْ نَامَ فَلْيَتَوَضَّأْ»-অর্থাৎ, দু‘চোখ হল গুহ্যদারের বাঁধন স্বরূপ। সুতরাং যে ব্যক্তি ঘুমাবে, সে যেন ওযূ করে।[16] এ হাদীসটি যঈফ।

عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ: «إِذَا نَعَسَ أَحَدُكُمْ وَهُوَ يُصَلِّي فَلْيَرْقُدْ، حَتَّى يَذْهَبَ عَنْهُ النَّوْمُ، فَإِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا صَلَّى وَهُوَ نَاعِسٌ، لاَ يَدْرِي لَعَلَّهُ يَسْتَغْفِرُ فَيَسُبُّ نَفْسَهُ»

(৩) হযরত আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, সালাত আদায়ের অবস্থায় তোমাদের কারও যদি তন্দ্রা আসে, তবে সে যেন ঘুমের রেশ কেটে না যাওয়া পর্যন্ত ঘুমিয়ে নেয়। কারণ, তন্দ্রা অবস্থায় সালাত আদায় করলে সে জানতে পারে না, সে কি ক্ষমা চাচ্ছে, না নিজেকে গালি দিচ্ছে।[17]

অত্র হাদীস দ্বারা ইমাম বুখারী (রাহি.) তাঁর স্বীয় গ্রন্থ ‘‘সহীহুল বুখারী’’ -তে ঘুমের কারণে ওযূ ওয়াজিব হওয়ার দলীল দিয়েছেন। ইমাম বুখারী (রাহি.) এর এ দলীলের ব্যাপারে একটু ভাবার বিষয় রয়েছে, বলে আমি মনে করি। কেননা, অত্র হাদীসে ঘুমের কারণে সালাত পরিত্যাগ করার কারণ হিসেবে যা বর্ণনা করা হয়েছে তা হলো, ঘুমন্ত অবস্থায় সালাত আদায় করলে নিজেকে গালি দেয়া, অবান্তর কথা-বার্তা বলা অথবা এ সময় সালাতে মনোনিবেশ না থাকার আশঙ্কা থাকে। ফলে সালাতের একাগ্রতা নষ্ট হয়। ঘুমের কারণে ওযূ করতে হবে এ কথা এখানে বলা হয় নি। বরং এ হাদীস দ্বারা কেউ কেউ ঘুমের কারণে ওযূ নষ্ট না হওয়ার প্রমাণ দিয়েছেন। সুতরাং বিষয়টি ভেবে দেখা উচিৎ।

(৪) তারা বলেন: বিদ্বানগণ এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, যে ব্যক্তি পাগল হওয়ার কারণে আকল নষ্ট হয় অথবা অজ্ঞান হয় তার ওযূ করা ওয়াজিব। সুতরাং ঘুমের হুকুমও অনুরূপ।


৩য় অভিমত: অধিক ঘুম হলে সর্বাবস্থায় ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে, তবে অল্প ঘুম হলে নষ্ট হবে না:

এটা ইমাম মালিক এর অভিমত এবং একটি রেওয়ায়েতে ইমাম আহমাদ (রাহি.) এ অভিমত পেশ করেছেন। যুহরী, রাবিয়া ও আওয়াযীও এমতের প্রবক্তা। তারা আনাস (রাঃ) এর হাদীসকে সাহাবাদের কম ঘুমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে মনে করেন। এর প্রমাণে তারা আবূ হুরাইরা (রাঃ) এর হাদীস পেশ করেন:

عَنْ أبي هريرة قال من استحق النوم فوجب عليه الوضوء

অর্থাৎ: যে ব্যক্তি প্রবল ঘুমে আচ্ছন্ন হবে, তার ওযূ করা ওয়াজিব।[18] হাদীসটি মাওকূফ সূত্রে সহীহ। আর ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর হাদীসে বর্ণিত আছে:

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : وَجَبَ الْوُضُوءُ عَلَى كُلِّ نَائِمٍ إِلاَّ مَنْ خَفَقَ برأسه خفقة أو خفقتين

অর্থাৎ: ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রত্যেক ঘুমন্ত ব্যক্তির জন্য ওযূ করা ওয়াজিব। তবে যদি একবার অথবা দু‘বার মাথা ঢোলে তাহলে তার ওযূ ওয়াজিব নয়।[19]


৪র্থ অভিমত: শুয়ে বা হেলান দিয়ে ঘুমালে ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে:

আর যে ব্যক্তি সালাতের কোন অবস্থা তথা রুকু, সিজদ, দ-ায়মান বা বসা অবস্থায় ঘুমাবে, তার ওযূ নষ্ট হবে না। চাই সালাতে হোক বা সালাতের বাইরে হোক। এটা হাম্মাদ, সাওরী, আবূ হানীফা ও তাঁর অনুসারী, ইমাম দাউদ ও ইমাম শাফেঈ (রাহি.) এর মতামত। তাদের দলীল হলো:

(1) عن عمرو بن شعيب عن أبيه عن جده قال قال رسول الله ﷺ ليس على من نام قائما أو قاعدا وضوء حتى يضع جنبه إلى الأرض

(১) আমর বিন শুয়াইব তার পিতা হতে, তার পিতা তার দাদা হতে বর্ণনা করেন , রাসূল (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বা বসে ঘুমায় তাকে ওযূ করতে হবে না। তবে জমিনে হেলান দিয়ে ঘুমালে ওযূ করতে হবে।[20] এ হাদীসটি যঈফ। সহীহ নয়।

(২) হযরত আনাস (রাঃ) রাসূল (ﷺ) থেকে বর্ণনা করে বলেন:

إذا نام العبد في سجوده باهى الله عز وجل به ملائكته , قال : انظروا إلى عبدي, روحه عندي و جسده في طاعتي

অর্থাৎ: যখন কোন বান্দা সাজদারত অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়ে, তখন এ নিয়ে আল্লাহ্‌ তায়ালা ফেরেশতাদের কাছে গর্ববোধ করে বলে, তোমরা আমার বান্দার দিকে দেখ, তার আত্না আমার কাছে রয়েছে এবং তার শরীর আমার আনুগত্য করছে![21]

তারা মুসলিস্নর সালাত আদায়ের সকল অবস্থাকে সাজদার উপর ক্বিয়াস করে।

আমার বক্তব্য: এ হাদীসটি সনদগত ভাবে দুর্বল। ইমাম বায়হাকী বলেন, এ হাদীসে ঘুমের কারণে সালাত বাতিল করতে হবে এ কথাও বলা হয়নি। তবে হাদীসটি যদি সহীহ হয় তাহলে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, ঐ বান্দার প্রশংসা করা, যে সালাতে অটল থাকে, এমনকি এক পর্যায়ে সে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়।

৫ম মতামত: শুধু রুকু ও সাজদারত অবস্থায় ঘুমালে ওযূ নষ্ট হবে:

ইমাম নববী এ অভিমতটিকে ইমাম আহমাদ (রাহি.) এর দিকে সম্বধোন করেছেন। সম্ভবত এর কারণ হল, রুকু ও সাজদারত অবস্থায় ঘুমানোর ফলে ওযূ ভঙ্গের ধারণা সৃষ্টি হয়।

৬ষ্ঠ মতামত: শুধু সাজদারত অবস্থায় ঘুমালে ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে:

অনুরূপভাবে এটাও ইমাম আহমাদের বর্ণনা বলা হয়ে থাকে।

৭ম মতামত: সালাতের মধ্যে যে কোন অবস্থায় ঘুমালে ওযূ নষ্ট হবে না:

তবে সালাতের বাইরে ঘুমালে ওযূ নষ্ট হবে। এটা আবূ হানীফা (রাহি.) এর বর্ণনা। ৪র্থ মতামতে যে হাদীসটি উল্লেখ হয়েছে, সে হাদীসের কারণে ইমাম আবূ হানীফা (রাহি.) এ মতামত দিয়েছেন।


৮ম মতামত: যদি কেউ জমিনে বসে ঘুমায়, চায় তা সালাতে হোক কিংবা সালাতের বাইরে হোক, কম ঘুম হোক কিংবা বেশি ঘুম হোক, তাহলে ওযূ নষ্ট হবে না:

এটা ইমাম শাফেঈ (রাহি.) এর অভিমত। কারণ তাঁর নিকট ঘুম নিজে হাদাস (নাপাক) নয়। বরং তা হাদাসের ধারণা সৃষ্টি করে। ইমাম শাফেঈ বলেন, ‘‘কেননা বসে ঘুমন্ত ব্যক্তির পিছন জমিনে লেগে থাকার ফলে তা থেকে কিছু বের হওয়ার সম্ভবনা থাকেনা। বরং বের হওয়ার সময় তাকে তা সতর্ক করে দিতে পারে’’। ইমাম কঠোরকানী (রাহি.) এ অভিমতটিকে পছন্দ করেছেন। আমি মনে করি, এ মতের অনুসারীরা আনাস (রাঃ) এর হাদীসটিকে সাহাবাদের বসে ঘুমানোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে মনে করেন। অথচ হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (রাহি.) ‘ফতহুল বরী’ (১/২৫১ পৃঃ) তে তা প্রত্যাখান করে বলেন যে, এ হাদীসের ব্যাপারে ‘মুসনাদুল বায্যার’ এ সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, সাহাবাগণ তাদের পার্শ রেখে কেউ কেউ ঘুমিয়ে যেতেন। অতঃপর উঠে সালাত আদায় করতেন।[22]


বিশুদ্ধ অভিমত:

গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ব্যক্তি যে কোন কিছু বুঝতে পারে না, এমন কি তার পাশের ব্যক্তির কোন শব্দ শুনতে পায় না অথবা তার হাত থেকে কোন কিছু পড়ে গেলে তা বুঝতে পারে না কিংবা মুখ দিয়ে লালা বা এ জাতীয় কিছু নির্গত হলে তা টের পায় না, এমন ব্যক্তির ওযূ নষ্ট ইয়ে যাবে। কেননা তা হাদাসের ধারণা সৃষ্টি করে। চায় সে দাড়িয়ে, বসে, শুয়ে, রুকু কিংবা সাজদা যে কোন অবস্থায় থাক না কেন। এগুলোর কোনটির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। যদি ১ম মতের অনুসারীরা ঘুম দ্বারা এ প্রকারের ঘুম উদ্দেশ্য করে থাকেন, তাহলে আমরা তাদের মতকে সমর্থন করি। এছাড়া স্বল্প ঘুম যাকে তন্দ্রা বলা হয়, যার কারণে মানুষ কিছু অনুধাবন করতে পারে না যা পূবে আলোচিত হয়েছে, তার ফলে ওযূ নষ্ট হবে না, সে যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন। কেননা সাহাবাদের ঘুমের ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, ‘তাদের মাথা ঢোলে পড়ত’। আবার আল্লাহ্‌র রাসূলের সাথে সালাত আদায়ের ব্যাপারে বর্ণিত ইবনে আব্বাসের হাদীসও এর প্রমাণ বহন করে। এভাবেই এ ব্যাপারে বর্ণিত সকল দলীল গুলোর মাঝে আমরা সমাধান দিতে পারি। ولله الحمد والمنة ( সকল প্রশংসা ও অনুগ্রহ আল্লাহ্‌রই)।


প্রসঙ্গ কথাঃ

যেহেতু ঘুমের মাধ্যমে, ওযূ ওয়াজিব করে এমন হাদাসের ধারণা সৃষ্টি হয়, সেহেতু ওযূ ভঙ্গের বিধানটা ওযূকারীর ঘুমের অবস্থাভেদে তার উপর অর্পিত হবে এবং প্রবল ধারণাটাই বিবেচিত হবে। যদি সে সন্দেহ করে যে, ঘুমের কারণে তার ওযূ নষ্ট হয়েছে, না হয়নি? তাহলে স্পষ্ট কথা হল, ওযূ ভঙ্গ না হওয়ার বিধানই কার্যকর হবে। কেননা পূর্বে থেকেই নিশ্চিতভাবে পবিত্রতা সাব্যাস্ত আছে। সুতরাং তা সন্দেহ দ্বারা দূর হবে না। শায়খুল ইসলাম তাঁর ‘ফতওয়া’ (২১/২৩০ পৃঃ) তে এ অভিমতটিকে পছন্দ করেছেন।

৪। নেশাগ্রস্থ, জ্ঞান শূন্য কিংবা পাগল হওয়ার ফলে আকল নষ্ট হলে: সর্বসম্মতিক্রমে ওযূ নষ্ট হবে।[23] ওযূ ভঙ্গ হওয়ার ক্ষেত্রে এ অবস্থা গুলোর কারণে স্মৃতি নষ্ট হওয়াটা, ঘুমের চাইতেও বেশী গুরুতর।

৫। কোন আবরণ ছাড়া লজ্জাস্থান স্পর্শ করা চাই, তা কাম প্রবৃত্তিসহ হোক বা না হোক:

বিদ্বানগণ ওযূর ক্ষেত্রে লজ্জাস্থান স্পর্শ করার ব্যাপারে চারটি অভিমত পেশ করেছেন। এ চারটি অভিমতের দু‘টিকে প্রাধান্য দেয়ার চেষ্টা হয়েছে, আর দু‘টিকে সমন্বয় করার চেষ্টা করা হয়েছে।

১ম মতামত: সাধারণত লজ্জাস্থান স্পর্শের ফলে ওযূ নষ্ট হয় না:

এটা ইমাম আবূ হানীফা (রাহি.) এর অভিমত। ইমাম মালিক (রাহি.) এর কয়েকটি রেওয়ায়েতের মধ্যে এটি একটি রেওয়ায়েত। সাহাবাদের একটি দলের পক্ষ থেকেও এ অভিমটি বর্ণিত হয়েছে।[24]


নিম্নোক্তভাবে তারা দলীল পেশ করে থাকেন-

(ক) ত্বলাক বিন আলী থেকে বর্ণিত, একদা এক ব্যক্তি এমন অন্য এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে মহানাবী (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করলেন যিনি ওযূ করার পর পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করেছিলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন: পুরুষাঙ্গ তো একটি মাংসের টুকরা অথবা মাংসের খ- মাত্র।[25]

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, এক ব্যক্তি রাসূল (স:) কে প্রশ্ন করে বললেন:

بينما أنا أصلى فذهبت أحك فخذي فأصابت يدي ذكرى فقال النبي ﷺ إنما هو منك

অর্থাৎ, আমি যদি সালাত রত অবস্থায় রান চুলকানোর সময় লজ্জাস্থান স্পর্শ করে ফেলি, তাহলে এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি? তখন তিনি বললেন, এটাতো তোমার দেহের অংশ মাত্র।[26]

(খ) তারা বলেন যে, যদি লজ্জাস্থান রান বা উরুকে স্পর্শ করে, তহলে ওযূ ওয়াজিব নয়। এব্যাপারে কেউ মতভেদ করেন নি। আর হাত ও রানের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সামনে আলোচিত বুসরাহ[27] এর হাদীসে লজ্জাস্থান স্পর্শের ফলে ওযূ করার যে আদেশ দেয়া হয়েছে, তারা তার সামলোচনা করেন।

২য় অভিমত: সাধারণত লজ্জাস্থান স্পর্শকরলে ওযূ ভঙ্গ হয়ে যাবেঃ

এটা ইমাম মালিক (রাহি.) এর প্রসিদ্ধ অভিমত। ইমাম শাফেঈ, আহমাদ ও ইবনে হাযমও এ মতামত পেশ করেছেন। এটা অধিকংশ ছাহাবাদের পক্ষ থেকে বর্ণিত।[28] তাদের দলীল হল:

(ক) বুসরাহ বিনতে সাফওয়ান থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন, "من مس ذكره فليتوضأ" অর্থাৎ, যে ব্যক্তি তার লিঙ্গ স্পর্শ করবে, সে যেন ওযূ করে।[29]

(খ) উম্মে হাবীবাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন, "من مس فرضه فليتوضأ" অর্থাৎ, যে তার গুপ্তাঙ্গ স্পর্শ করবে, সে যেন ওযূ করে।[30]

উপরোক্ত দু‘জনের হাদীসের অনুরূপ আবূ হুরাইরা, আরওয়া বিনতে উনেইস, আয়িশা, জাবের, যায়েদ বিন খালেদ ও আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) এর পক্ষ থেকেও হাদীস বর্ণনা করেছেন।

তারা বলেন, বুসরাহ এর হাদীস ত্বলাক এর হাদীসের উপর প্রাধান্য পাবে।

তার কারণ হল:

(১) ত্বলাক (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি ক্রটিযুক্ত। আবূ যুর‘আ ও আবূ হাতেম হাদীসটি ত্রুটি পূর্ণ বলে অবহিত করেছেন। আর ইমাম নববী (রাহি.) ‘আল মাজমু’ গ্রন্থের (২/৪২ পৃঃ) তে হাদীসটি ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন, ‘‘হাদীস বিকারওদগণ হাদীসটি যঈফ হওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন’’।

(২) আর যদি তা সহীহ হয়, তাহলে বুসরাহ এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আবূ হুরাইরা (রা.) এর হাদীসটিই অগ্রগণ্য হবে। কেননা সাহাবারা মাসজিদে কুবা নির্মানের সময় ত্বলাক (রা.) মদিনায় গিয়েছেন। আর আবূ হুরাইরা (রাঃ) তার ছয় বছর পর খাসবারের বছর ইসলাম গ্রহণ করেছেন। সুতরাং আবূ হুরাইরা (রাঃ) এর হাদীস ত্বলাক (রাঃ) এর হাদীস কে মানসুখ বা রহিতকারী।[31]

(৩) ত্বলাকের হাদীসটি মূলের উপর অবশিষ্ট আছে। আর বুসারার হাদীসটি তার নাকেল (বর্ণনা কারী) হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। আর নাকেল সর্বদা অগ্রগণ্য। কেননা শরীয়াত প্রণেতার হুকুমগুলো পূর্বে যা ছিল তা থেকে নকল কারী।

(৪) লজ্জাস্থান স্পর্শের কারণে ওযূ ভঙ্গ হওয়ার বর্ণনাগুলোই অধিক এবং হাদীসগুলো বেশি প্রসিদ্ধ।

(৫) এটা অধিকাংশ সাহাবীর অভিমত।

(৬) ত্বলাক (রাঃ) এর হাদীসটি রান চুলাকানোর সময় কাপড়ের উপর দিয়ে হাত লজ্জা স্থানে স্পর্শ করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেমনটি হাদীসটির বর্ণনা দ্বারাই বুঝা যাচ্ছে যে, প্রশ্নকারী সালাত রত অবস্থায় এরূপ করেছিলেন।

৩য় অভিমত: কাম প্রবৃত্তি সহ লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওযূ নষ্ট হবে, আর কাম প্রবৃত্তি ছাড়া করলে ওযূ নষ্ট হবে না:

এটা ইমাম মালিক (রাহি.) এর একটি বর্ণনা। আল্লামা আলবানী (রাহি.) তা পছন্দ করেছেন।[32] এ অভিমত কারীদের মতে, বুসরা (রাঃ) এর হাদীস কাম প্রবৃত্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং ত্বলাক (রাঃ) এর হাদীসটি কাম প্রবৃত্তি ছাড়া স্পর্শ করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তারা বলেন, মহানাবী (ﷺ) এর বাণী ‘‘এটা তোমার শরীরের একটি অংশ’’ এর দ্বারাই তা প্রমাণিত হয়। কেননা যখন কাম প্রবৃত্তি ছাড়াই লিঙ্গস্পর্শ করা হবে, তখন তা সমস্ত অঙ্গ স্পর্শ করার মতই হবে।

৪র্থ মতামত: লিঙ্গ স্পর্শ করার কারণে সাধারণভাবে ওযূ করা মুস্তাহাব,ওয়াজিব নয়ঃ

এটা ইমাম আহমাদ (রাহি.) এর দু‘টি বর্ণনার মধ্যে একটি বর্ণনা। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহও এ মতামত পেশ করেছেন। আল্লামা ইবনে ওসাইমীন (রাহি.) এ মতের দিকেই ধাবিত হয়েছেন। তবে তিনি কাম প্রবৃত্তি ছাড়া লিঙ্গ স্পর্শ করার ক্ষেত্রে ওযূ করা মুস্তাহাব এবং কাম প্রবৃত্তিসহ স্পর্শ করলে দৃঢ়ভাবে ওযূ করার ওয়াজিব হবে বলেছেন । সতর্কতা মূলক তিনি এ কথা বলেছেন।[33] সুতরাং তারা বুসরাহ (রাঃ) এর হাদীসকে মুস্তাহাবের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মনে করেন। আর ত্বলাকের হাদীসে যে প্রশ্নটা ছিল তা মূলত ওযূ ওয়াজিব কিনা সে ব্যাপারে।


শেষোক্ত সমন্বয়কারী উভয়দল নিম্নোক্তভাবে দলীল দিয়ে থাকেনঃ

(১) ত্বলাক (রাঃ) এর পূর্বে ইসলাম গ্রহণ ও বুসরাহ (রাঃ) পরে ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে নাসখের যে দাবী করা হয়েছে তা সমালোচনার উর্ধ্বে নয়। কেননা উসূল বিদগণের নিকট এটা নাসখ (রহিত) হওয়ার উপর দলীল নয়। কারণ হলো, অনেক সময় দেখা যায় যে, পূর্বে ইসলাম গ্রহণকারী বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের কাছ থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

(২) ত্বলাক (রাঃ) এর হাদীসে এমন কারণ রয়েছে যা দূর করা সম্ভব নয়। আর তা হল, ‘লজ্জাস্থান শরীরেরই অংশ’। যখন কারণটি কোন হুকুমের সাথে জড়িত হয়ে যায়, যা দূর করা সম্ভব হয় না, তখন তার হুকুমও দূর করা সম্ভব নয়। সুতরাং তা মানসূখ করা সম্ভব নয়।

(৩) দু‘টি হাদীসের মাঝে সমন্বয় করা সম্ভব হলে, নাসখ (রহিত) করার বিধান কার্যকর হবে না। আর পূর্বের আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, এখানে নাসখের বিধান কার্যকর করা বিশুদ্ধ হবে না।

আমার বক্তব্য: ত্বলাক ইবনে আলী (রাঃ) এর হাদীসটি সহীহ হতো, তাহলে শেষোক্ত মতামতটিই শক্তিশালী স্থানে থাকত। কিন্ত ত্বলাক বিন আলী (রাঃ) এর হাদীসটি সহীহ হওয়ার মতামতটি ঠিক নয়। বরং যঈফ হওয়ার মতামতটিই যথোপযুক্ত। সুতরাং এ কথাটিই প্রতিভাত হচ্ছে যে, সাধারণভাবে লিঙ্গ স্পর্শ করলে ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে। চায় তা কামোত্তেজনা সহ হোক কিংবা কামোত্তেজনা ছাড়া হোক। কেননা কামোত্তেজনার কোন সীমা নেই এবং এটা ধর্তব্য হওয়ার উপর কোন দলীল নেই। আল্লাহ্‌ই সর্বাধিক অবগত।


পূর্বের আলোচনার আলোকে কিছু প্রয়োজনীয় কথা:

১। মহিলা যদি তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তাহলে সে ওযূ করবে:

আমর বিন শু‘আইব তার পিতা থেকে তার পিতা তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) বলেন, "من مس ذكره فليتوضأ وأيما امرأة مست فرضها فلتتوضأ " -অর্থাৎ, যে ব্যক্তি তার লিঙ্গ স্পর্শ করবে, সে যেন ওযূ করে এবং কোন মহিলা যদি তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তাহলে সে যেন ওযূ করে।[34]

হযরত আয়িশা (রা.) এর উক্তিও এ বিধানটিকে শক্তিশালী করে। إذا مست المرأة فرضها فلتتوضأ " অর্থাৎ, ‘‘মহিলা যদি তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তাহলে সে ওযূ করবে’’।[35] মূলত মহিলারা শারঈ বিধান পালনের ক্ষেত্রে পুরুষের অনুরূপ। আর এটা হল ইমাম শাফেঈ ও আহমাদ (রাহি.) এর অভিমত। আবূ হানীফা ও মালিক (রাহি.) এর বিপরীত মত পেশ করেছেন।

২। অন্যের লজ্জাস্থান স্পর্শ করা:

কোন পুরুষ তার স্ত্রীর লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে অথবা কোন নারী স্বামীর পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে, তাদের ওযূ নষ্ট হওয়ার ব্যাপারে কোন দলীল নেই। তবে এর ফলে মযি বা মনি নির্গত হলে, ওযূ নষ্ট হবে। শুধু স্পর্শ করার কারণে ওযূ নষ্ট হবে না। ইমাম মালিক ও শাফেঈ (রাহি.) এর মতে, এ ক্ষেত্রে ওযূ ওয়াজিব হবে।[36] মূলতঃ তাদের মাযহাবের মূল কথা হল, মহিলাদের স্পর্শ করলেই ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে। সামনের আলোচনায় এর বিপরীত মতামতটিকেই প্রাধান্য দেয়া হবে।

অনুরূপ ভাবে যদি কোন নারী অথবা পুরুষ ছোট বাচ্চার লিঙ্গ স্পর্শ করে তাহলে ওযূ নষ্ট হবে না। ইমাম মালিক (রাহি.) এ মতকে সমর্থন করেছেন। এটা যুহরী ও আওয়ায়ী এর অভিমত।[37]

৩। ইচ্ছাকৃত হোক বা ভুলবশত হোক, লজ্জাস্থান স্পর্শ করার বিধান সমান:[38]

এটা আওযায়ী, শাফেঈ, ইসহাক ও আহমাদ (রাহি.) এর অভিমত। আর একদল বলেন, শুধু ইচ্ছাকৃত ভাবে বা স্বেচ্ছায় লিঙ্গ স্পর্শ করলে ওযূ নষ্ট হবে। তারা হলেন, মাকহুল, জাবের বিন যায়েদ, সাঈদ বিন যুবাইর। এটা ইবনে হাযমের মাযহাব। এব্যাপারে দলীল হলো, আল্লাহ্‌র বাণী:

﴿وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ﴾

অর্থাৎ: আর এ বিষয়ে তোমরা কোন ভুল করলে তোমাদের কোন পাপ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে (পাপ হবে)।

প্রথমোক্ত মতামতটিই বিশুদ্ধ। ইবনে মুনযির বলেন, ‘‘লিঙ্গ স্পর্শ করার অর্থ যারা ‘হাদাস’ বলে থাকেন যা ওযূ ওয়াজিব করে, তারা স্পর্শ করাকে ভুল বশত বা ইচ্ছাকৃত উভয়টি সমান ধর্তব্য মনে করেন’’।

আমার বক্তব্য: ভুল-ত্রুটিগুলো শর্তসমূহ ও আরকান সমূহের সাথে সম্পৃক্ত, যার মাধ্যমে পাপের বিধান রহিত হয় কিন্তু হুকুম বহাল থাকে। আল্লাহ্‌ই সর্বাধিক অবহিত।

৪। কাপড়ের উপর দিয়ে লিঙ্গ স্পর্শ করলে ওযূ নষ্ট হবে না:

কেননা এটা স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে যে, এভাবে স্পর্শ করলে তাকে হাদাসের স্পর্শ বলা যায় না। মারুফ সূত্রে আবূ হুরাইরা (রাঃ) এর বির্ণত হদীছও এ বিধানটিকে শক্তিশালী করে- " إذا أفضى أحدكم بيده إلى ذكره ليس بينه وبينها شيء فليتوضأ " -অর্থাৎ, যে ব্যক্তি তার লিঙ্গ স্পর্শ করবে, এমতাবস্থায় তার মাঝে ও লিঙ্গের মাঝে কোন পর্দা থাকেনা, সে যেন ওযূ করে।[39]

শেষ অংশ......

[1] আল-ইজমা’ (পৃ. ১৭), ইবনু মুনযির প্রণীত আল আউসাত (১/১৪৭)।

[2] আল মুহালস্না (১/২৩২), বিদায়াতুল মুজতাহিদ (১/৪০), আল-আউসাত (১/১৩৭)।

[3] সহীহ; বুখারী (১৩৫), মুসলিম (২২৫)।

[4] বিদায়াতুল মুজতাহিদ (১/৪০), আল-উম্ম (১/১৭)।

[5] আল মুহালস্না (১/২৩২), আল-মাসবূত্ব (১/৮৩)।

[6] আল-ইফসাহ (১/৭৮), আল-ইজমা’ (পৃ. ৩১)।

[7] সহীহ; বুখারী (২৬৯), মুসলিম (৩০৩)।

[8] এর সনদ সহীহ; বাইহাক্বী (১/১১৫)।

[9] আল মুহালস্না (১/২২২-২৩১), আল ইসিত্মযকার (১/১৯১) আল আউসাত (১/১৪২), ফাতহুল বারী (১/৩৭৬), ইমাম নববী প্রণীত ‘শরহে মুসলিম’ (২/৩৭০), নাসলুলআওতার (১/২৪১)।

[10] সহীহ; বুখারী (৬৪২), মুসলিম (৩৭৬)।

[11] সহীহ; মুসলিম (৩৭৬), তিরমিযী (৭৮)।

[12] সহীহ; বুখারী (১১৭), মুসলিম (৭৬৩) শব্দগুলো মুসলিমের।

[13] সহীহ; বুখারী (১১৭), মুসলিম (১৮৪), আহমাদ (১/৩৪১)।

[14] হাসান; নাসাঈ (১/৩২), তিরমিযী (৩৫৩৫) ইবনে মাজাহ (৪৭৮), আল ইরওয়া (১০৪)।

[15] "السه"বলা হয়, গুহ্যদ্বারের বৃত্তকে। আর "الوكاء"বলা হয়, এমন ফিতা বা দড়িকে যার দ্বারা মশকের মুখ বাঁধা হয়। সুতরাং দু‘চোখ জেগে থাকাকে মশকের দড়ির সাথে তুলোনা করা হয়েছে। কেননা যখন দু‘চোখ ঘুমিয়ে যায় তখন দড়ি বা বাধন খুলে যায়। ফলে তা থেকে বায়ূ নির্গত হয়।

[16] যঈফ; আবূ দাউদ (২০৩), ইবনে মাজাহ (৪৭৭) প্রভৃতি। এভাবে যঈফ হওয়াটাই অগ্রাধিকারযোগ্য। যদিও আলবানী তাকে হাসান আখ্যা দিয়েছেন।

[17] সহীহ; বুখারী (২১২), মুসলিম (২২২)।

[18] মাওকুফ সহীহ; ইবনু আবি শায়বাহ (১/১৫৮), আবদুর রাযযাক (৪৮১) সহীহ সনদে মাওকুফ হাদীস হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এ হাদীসটি মারফূ সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে, তবে তা সহীহ নয়। যেমন দারাকুতনী তার আলঈলাল (৮/৩২৮) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। আয-যাঈফা (৯৫৪)।

[19] মাওকুফ ও মারফূ’ সূত্রে যঈফ; আবদুর রাযযাক (৪৭৯), বাইহাক্বী (১/১১৯), ঈলালুদ দারাকুতনী (৮/৩১০)।

[20] মুনকার; ইবনু আদী প্রণীত আল কামিল (৬/২৪৫৯) দারাকুতনী (১/১৬০) এবং ইমাম ত্বাবারাণী তার আল-আওসাত্ব গ্রন্থে।

[21] যঈফ; সিলসিলাতুয যঈফাহ (৯৫৩)।

[22] এর সনদ সহীহ; ইমাম বাযযার ও তার মত অনেকেই এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এবং আবূ দাউদ তার মাসায়েলে আহমাদ (পৃ. ৩১৮), গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসের সনদ শাইখাইনের শর্তানুসারে সহীহ। যেমনটি এসেছে ‘তামামুল মিন্না (পৃ. ১০০) গ্রন্থে।

[23] ইবনু মুনযির প্রণীত আলআওসাত্ব (১/১৫৫)।

[24] আল-বাদাঈ (১/৩০), শরহে ফাতালে কাদীর (১/৩৭), আল মাদূনাহ (১/৮-৯), আল-ইসিত্মযকার (১/৩০৮ থেকে পরবর্তী)।

[25] এর সনদ লাইয়্যিন; আবূ দাউদ (১৮২), তিরমিযী (৮৫), নাসাঈ (১/১০১)। এ হাদীসের সহীহ হওয়া নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে কায়েস বিন ত্বাল্ক এর কারেনে যঈফ হওয়াটাই অধিক যুক্তিযুক্ত। আলবানী এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন।

[26] এর সনদ যঈফ; আবূ দাউদ (১৮৩), আহমাদ (৪/২৩), বাইহাক্বী (১/১৩৫), প্রভৃতি।

[27] আল-আওসাত্ব (১/২০৩), শরহে মায়ানীল আসার (১/৭১-৭৯)।

[28] আল-ইসিত্মযকার (১/৩০৮), আল-মাদূনাহ (১/৮-৯) আল-উম্ম (১/১৯), আলমাজমু (১/২৪), আল-মুগনী (১/১৭৮) আল-ইনসাফ (১/২০২), আল-মুহালস্না (১/২৩৫)।

[29] সহীহ; আবূ দাউদ (১৮১), নাসাঈ (১/১০০), ইবনে হিববান (১১১২)।

[30] শাহেদ থাকার কারণে সহীহ; ইবনে মাজাহ (৪৮১), আবু ইয়া’লা (৭১৪৪), বাইহাক্বী (১/১৩০), আল-ইরওয়া (১১৭)।

[31] যারা এটাকে মানসূখের কথা বলেছেন তারা হলেন, ত্বাবারাণী তাঁর আল কাবীর (৮/৪০২) গ্রন্থে, ইবনুহিববান (৩/৪০৫ إحسان- পর্যন্ত), ইবনু হাযম তার আল মুহালস্না (১/২৩৯), হাযেমী তাঁর আল ইতেবার (৭৭) ইবনুল আরাবী তাঁর আল-আরেযা (১/১১৭), বাইহাক্বী তার আল খালাফিয়্যাত (২/২৮৯) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।

[32] দেখুন! পূর্বোলেস্নখিত মালেকী মাযহাবের উদ্বৃত গ্রন্থসহ তামামুল মিন্নাহ (১০৩ পৃঃ), এখানে ‘তামামুল মিন্নাহ’ গ্রন্থকার বলেন, আমার যতটুকু স্মরণ হচ্ছে যে, এ অভিমতটি হবে ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহ:) এর অভিমত। তবে লেখক বলেন, আমার মতে, বরং ইবনে তাইমিয়্যাহ এর অভিমত হবে ৪র্থটি, যেমন সামনে দেখবেন। সুতরাং যে ভুল করে না সে সম্মানিত।

[33] মাজমু’ আল ফাতওয়া (২১/২৪১), শারহুল মুমতি’ (১/২৩৩)।

[34] সহীহ লিগায়রিহী; আহমাদ (২/২২৩), বাইহাক্বী (১/১৩২)।

[35] এর সনদ সহীহ; শাফেঈ তাঁর আল মুসবাদ (৯০) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। বাইহাক্বী (১/১৩৩) ইমাম হাকিম একে সহীহ আখ্যা দিয়েছেন এবং এর উপরই অটল থেকেছেন। যেমন হাকিম (১/১৩৮)।

[36]মাওয়াহিবুল জালিল (১/২৯৬), আল-উম্ম (১/২০)।

[37] ইবনু আব্দিল বার প্রণীত আল-কাফী (১/১৪৯), আল-আওসাত্ব (১/২১০)।

[38] আল-মুহালস্না (১/২৪১), আল-আওসাত্ব (১/২০৫-২০৭)।

[39] হাসান; দারাকুতনী (১/১৪৭), বাইহাক্বী (১/১৩৩) আছ-সহীহাহ (১২৩৫)।