সকল ধর্মেই শান্তির কথা বলা হয়েছে এবং সকল ধর্মেই বৃহত্তর শান্তির জন্য সীমিত অশান্তি গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য ভয়ঙ্কর অপরাধীর শাস্তি এবং প্রয়োজনে সশস্ত্র শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধ ও জিহাদ অধ্যায়ে আমরা এ বিষয়ে বাইবেলের  নির্দেশনা বিস্তারিত আলোচনা করব। তবে ঢালাওভাবে নিরস্ত্র শত্রুদের হত্যার বিষয়ে যীশু খ্রিষ্টের একটা  নির্দেশ নিম্নরূপ: ‘‘পরন্তু আমার এই যে শত্রুগণ ইচ্ছা করে নাই যে, আমি তাহাদের উপরে রাজত্ব করি, তাহাদিগকে এই স্থানে আন, আর আমার সাক্ষাতে বধ কর।’’ (কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬: ‘‘আমার শত্রুরা যারা চায়নি আমি বাদশাহ হই, তাদের এখানে নিয়ে এস এবং আমার সামনে মেরে ফেল’’ (But those mine enemies, which would not that I should reign over them, bring hither, and slay them before me)।’’ (লূক ১৯/২৭)

প্রিয় পাঠক, একটু ভাবুন! নবী-রাসূল তো দূরের কথা কোনো জালিম শাসক কি এরূপ নির্দেশ দিতে পারেন? কেউ হয়ত বলতে পারেন, যুদ্ধের ময়দানে শত্রুদেরকে হত্যা কর। কোনো জালিম হয়ত বলতে পারে, আমার রাজত্বের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করে তাদেরকে হত্যা কর। কিন্তু শুধু তার রাজত্ব চায় না বলে নিরস্ত্র মানুষদেরকে ধরে এনে জবাই করা!! তাও আবার নিজের সামনে!

যীশুর এ নির্দেশ এবং পুরাতন ও নতুন নিয়মের যুদ্ধ ও হত্যার অন্যান্য নির্দেশ অতীতে খ্রিষ্টান ধর্মগুরু ও পোপরা আক্ষরিকভাবেই পালন করেছেন। তারা  লক্ষ লক্ষ মুসলিম, ইহুদি, পৌত্তলিক ও ভিন্নমতের খ্রিষ্টানদেরকে নির্বিচারে এবং কল্পনাতীত নির্মমতার সাথে হত্যা করেছেন বা আগুনে পুড়িয়ে মেরেছেন। অনুসন্ধিৎসু পাঠক যে কোনো এনসাইক্লোপিডিয়া, উইকিপিডিয়া বা গুগলে নিম্নের বিষয়গুলো অধ্যয়ন করলে তা বুঝতে পারবেন: Christian Persecutions, DEMOLISH THEM, Theodosian Code, Christian advocacy of persecution, heresy, The Protestant theory of persecution, Moriscos, Crusades, Christian terrorism, European colonization of the Americas, History of the Jews in Spain, Baptism of Poland, Christianization of Kievan Rus', Christianization, Conquistador, Santería, Inquisition, Waldensians, Lollardy, Cathari, Catharism, Ku Klux Klan, New Christian Public Worship Regulation Act 1874, genocide, Massacre of Saint Bartholomew's Day, The Wars of Religion ইত্যাদি।

বর্তমানে খ্রিষ্টান প্রচারক ও ধর্মগুরুরা যীশুর এ বক্তব্যকে রূপক অর্থে ব্যাখ্যা করেন। তাঁরা বলেন, এটা দুনিয়ার জন্য বলা হয়নি; বরং পরকালের জন্য বলা হয়েছে। যারা যীশুকে বাদশাহ হিসেবে মেনে নেননি, তাদেরকে পরকালে এভাবে হত্যা করা হবে। এ ব্যাখ্যাটা অপ্রাসঙ্গিক। এ বক্তব্যের মধ্যে এবং লূকের ১৯ অধ্যায়ের প্রাসঙ্গিকতার মধ্যে এ ব্যাখ্যার কোনোই ইঙ্গিত নেই। তারপরও এ ব্যাখ্যা সরল অর্থের চেয়ে অধিক ভয়ঙ্কর। দুনিয়ায় হত্যা করলে তো পরকালে বাঁচার আশা থাকে। কিন্তু পরকালের হত্যা অনন্ত মরণ! কিন্তু কোন অপরাধে! লক্ষ কোটি বছরের পৃথিবীতে যীশুর পূর্বে ও পরে যীশুর নামও শুনেনি কোটি কোটি মানুষ। অনেকে নাম শুনেও ‘বাদশাহ’ হিসেবে তাঁকে গ্রহণ করেননি। সবাইকেই হত্যা করতে হবে? আবার তাঁর সামনে নিয়ে হত্যা করতে হবে? আরো ভয়ঙ্কর বিষয় স্বয়ং ঈশ্বর তাঁর সৃষ্টির কাউকে তাঁর শত্রু বলবেন? অথচ ইঞ্জিলেরও অন্যান্য স্থানে যীশু বলেছেন যে, তিনি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন না। তাঁকে গ্রহণ না করলেও অভিযোগ নেই। তিনি কারো বিচার করবেন না! যীশুর কোন্ কথা বিশ্বাস করলে এ অনন্ত হত্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে?

যীশু অন্যত্র বলেছেন: ‘‘তোমাদের শত্রুদেরও মহববত কোরো। যারা তোমাদের জুলুম করে তাদের জন্য মুনাজাত করো, যেন লোকে দেখতে পায় যে, তোমরা সত্যিই তোমাদের বেহেশতী পিতার সন্তান। তিনি তো ভাল-মন্দ সকলের উপর তাঁর সূর্য উঠান এবং সৎ ও অসৎ লোকদের উপর বৃষ্টি দেন।’’ (মথি ৫/৪৪-৪৫, মো.-২০০৬)

এখানে যীশু শত্রুদের মহববত করতে শেখালেন। অথচ তিনি নিজে তাঁর রাজত্ব না চাওয়ার কারণে মানুষকে শত্রু বলে আখ্যায়িত করলেন এবং এরপর তাদের হত্যার নির্দেশ দিলেন! এটাই কি শত্রুকে প্রেম করার বাস্তব নির্দশন?

‘যীশুর পাপসমূহ’ (Jesus' Sins) প্রবন্ধে গ্যারি ডেভানি বলেন:

“Luke 19:27 is the prime C&V that proved to me that Jesus Christ was out in my value system. ... Would Jesus declare people enemies for not following Him; then, have them murdered? ... I view that Jesus made a sinful, murderous command. I do not want a tyrant like that ruling over me - or anyone else. Revelation 2:23 Jesus (The Son of Man) said: I will also kill her children... KJV  Would Jesus murder children too? How can I believe Jesus would do such a thing? Jesus is definitely OUT!  Luke 19:27 & Revelation 2:23 Both sound like the cruel, tyrannical Old Testament God. Critic: Everything you take issue with was written spiritually, metaphorically. What’s your point? Would you be content if your daughter gets married only spiritually, metaphorically?”

‘‘লূক ১৯/২৭ বাইবেলের মূল শ্লোক যা আমার কাছে প্রমাণ করেছে যে, আমার নৈতিক মূল্যবোধের মানদণ্ড যীশু বহিষ্কৃত। যীশু কি তাঁকে অনুসরণ না করার জন্য মানুষদেরকে তাঁর শত্রু বলে ঘোষণা করবেন? এরপর তাদেরকে হত্যা করার নির্দেশ দেবেন? আমার দৃষ্টিতে যীশু একটা পাপপূর্ণ রক্তপিপাসু নির্দেশ দিয়েছেন। আমি চাই না যে, এরূপ কোনো নৃশংস ব্যক্তি আমার উপর বা অন্য কারো উপর কর্তৃত্ব করুন। প্রকাশিত বাক্য ২/২৩-এ যীশু (মনুষ্যপুত্র) বলেছেন: ‘‘আর আমি মারি দ্বারা তাহার সন্তানগণকে বধ করিব’’। তাহলে কি যীশু সন্তানদেরকেও হত্যা করবেন? আমি কিভাবে বিশ্বাস করব যে, যীশু এরূপ কাজ করবেন? যীশু নিশ্চিতভাবেই বহিষ্কৃত হয়ে গেলেন। লূক ১৯/২৭ ও প্রকাশিত বাক্য ২/২৩ উভয়ই পুরাতন নিয়মের হিংস্র ও নৃশংস ঈশ্বরের মতই কথা বলে। সমালোচক: তুমি যাকে ইস্যু বানাচ্ছ সেগুলো মূলত আধ্যাত্মিকভাবে এবং রূপক অর্থে বলা হয়েছে। গ্যারি: আপনার মত কী? আপনি কি চান যে, আপনার মেয়েটা আধ্যাত্মিকভাবে এবং রূপকভাবে বিবাহিত হোক?’’[1]

অন্যত্র ডেভানির মতানুসারে বাইবেল: লূক ১৯/২৭ (The Bible According To DeVaney: Luke 19:27) প্রবন্ধে গ্যারি ডেভানি (Gary DeVaney) লেখেছেন:

“Question from a radio talk-show host: Gary, what is the one Bible chapter and verse that you think best sums up the Bible? Gary DeVaney: I view that would be Luke 19:27. Q: Why? .... Luke 19:27 best expresses the murderous attitude and the evil, blackmail threat of Jesus Christ / God.  Luke 19:27 explains that if you don't obey Jesus Christ and make Him your authority / King, you are to be slain. Luke 19:27 documents Jesus Christ as being a tyrannical terrorist to human beings and that the New Testament continues to qualify as a terrorist handbook. ... Voltaire wrote: "Christianity is the most ridiculous, the most absurd and bloody religion that has ever infected the world.”

‘‘এক রেডিও টকশোতে উপস্থাপক প্রশ্ন করেন: গ্যারি, বাইবেলের কোন শ্লোকটা বাইবেলকে সর্বোত্তমভাবে উপস্থাপন করে বলে আপনি মনে করেন? গ্যারি: আমার দৃষ্টিতে সেটা হল লূক ১৯/২৭। ... লূক ১৯/২৭ যীশু খ্রিষ্টের/ ঈশ্বরের রক্তপিপাসু মনোভঙ্গি এবং যীশু খ্রিষ্টের অশুভ বস্নাকমেল হুমকির সর্বোত্তম প্রকাশ। লূক ১৯/২৭ ব্যাখ্যা করেছে যে, আপনি যদি যীশু খ্রিষ্টকে মান্য না করেন এবং তাঁকে আপনার কর্তা বা ‘বাদশাহ’ হিসেবে গ্রহণ না করেন তবে আপনাকে নিহত হতে হবে। লূক ১৯/২৭ যীশু খ্রিষ্টকে মানুষদের জন্য নৃশংস সন্ত্রাসী হিসেবে প্রমাণ করে এবং প্রমাণ করে যে, নতুন নিয়ম এখনো সন্ত্রাসীদের কর্মপুস্তক। .. ভল্টেয়ার লেখেছেন: ‘বিশ্বের সবচেয়ে হাস্যকর, সবচেয়ে অযৌক্তিক এবং রক্তলোলুপ ধর্ম হল খ্রিষ্টধর্ম, যা বিশ্বকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত করেছে।’’[2]

[1] http://www.thegodmurders.com/id90.html
[2] http://www.thegodmurders.com/id118.html