৭. ১. যীশু খ্রিষ্ট বিষয়ক অশোভনীয়তা / ৭. ১. ১. আগুন জ্বালানো ও বিভক্তি সৃষ্টি

৭. ১. যীশু খ্রিষ্ট বিষয়ক অশোভনীয়তা

আমরা জানি, যীশু খ্রিষ্ট ও তাঁর প্রেরিতগণ নতুন নিয়মের ভিত্তি। তাঁদের মহিমা ও শিক্ষা প্রচারই নতুন নিয়মের মূল বিষয়। তবে এর পাশাপাশি নতুন নিয়মের মধ্যে অনেক তথ্য বিদ্যমান যা সুস্পষ্টতই অশালীন, অযৌক্তিক, কুরুচিকর এবং অমর্যাদাকর। এখানে এ জাতীয় কিছু তথ্য উল্লেখ করছি:

৭. ১. ১.  আগুন জ্বালানো ও বিভক্তি সৃষ্টি

ইঞ্জিলগুলোতে যীশুর অনেক মূল্যবান শিক্ষা বিদ্যমান। পাশাপাশি অনেক শিক্ষা বিদ্যমান যা অশোভন। অশান্তি ও বিভক্তিকে তাঁর মূল মিশন হিসেবে উল্লেখ করা এরূপ একটা বিষয়। যীশু বলেন: ‘‘আমি দুনিয়াতে আগুন জ্বালাতে এসেছি; যদি তা আগেই জ্বলে উঠত তবে কত না ভাল হত! আমাকে একটা তরিকাবন্দী নিতে হবে, আর যতদিন পর্যন্ত তা না হয় ততদিন পর্যন্ত আমার দুঃখের শেষ নেই। তোমাদের কি মনে হয় যে, আমি দুনিয়াতে শান্তি দিতে এসেছি? না, তা নয়। আমি শান্তি দিতে আসি নি বরং মানুষকে মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি। এখন থেকে এক বাড়ীর পাঁচ জন ভাগ হয়ে যাবে, তিন জন দু’জনের বিরুদ্ধে আর দু’জন তিনজনের বিরুদ্ধে। ... বাবা ছেলের বিরুদ্ধে ও ছেলে বাবার বিরুদ্ধে, মা মেয়ের বিরুদ্ধে ও মেয়ে মায়ের বিরুদ্ধে, শাশুড়ী বউয়ের বিরুদ্ধে ও বউ শাশুড়ীর বিরুদ্ধে।’’ (লূক ১২/৪৯-৫৩: মো.-০৬)

বাইবেল সমালোচকরা এ বক্তব্য আপত্তিকর বলে গণ্য করেছেন। ‘‘যীশু কি মিথ্যা বলেছেন?’’ (Did Jesus Christ Lie?) এবং ‘‘যীশুর পারিবারিক মূল্যবোধ’’ (Jesus’ Family Values) প্রবন্ধে গ্যারি ডেভানি (Gary DeVaney) লেখেছেন:

“If the average American Christian watched, saw and heard an Islamic leader, King or President say on TV: "I have come to set the Earth on fire, and how I wish it were already blazing. How great is my anguish until it is accomplished!" Would he or she claim that these were the words of an evil terrorist? Is this an ‘evil’, terrorist statement? Yes? No? Did Jesus Christ prove to be an evil / insane terrorist by making  this evil / murderous statement? Does Jesus want, demand and expect His believers and followers to fulfill His wishes? Will Jesus punish those who will not fulfill His wishes? Do you pick and choose which of Jesus' wishes you will fulfill and those you won't? How much of a God is a God who has to wish? Should Jesus Christ be arrested, put in ‘Gitmo’, water-boarded / tortured and held without charges for saying it? Or - Did Jesus outright lie when He said it?  If Jesus did say it - did Jesus prove to be evil? What kind of model was Jesus Christ to have said this? Or - did the Holy Bible lie by claiming and documenting that Jesus did say it? Responses?”

 “Was Jesus the love-model for the Crusades, the Inquisition, Hitler, George W. Bush and some of the other major tyrants throughout history? If Satan said these things, we could validate any anger towards him. Didn’t Jesus say them? Also, is one who wishes really in control? Jesus does not get my vote.”

‘‘যদি সাধারণ কোনো আমেরিকান খ্রিষ্টান টেলিভিশনের পর্দায় একজন মুসলিম নেতা, প্রেসিডেন্ট বা রাজাকে শুনেন ও দেখেন যে তিনি বলছেন: ‘আমি দুনিয়াতে আগুন জ্বালাতে এসেছি; যদি তা আগেই জ্বলে উঠত তবে কত না ভাল হত! যতদিন পর্যন্ত তা না হয় ততদিন পর্যন্ত আমার দুঃখের শেষ নেই’ তবে তিনি কি সে নেতাকে দুষ্ট সন্ত্রাসী বলে গণ্য করবেন? এ কথাটা কি একটা দুষ্ট সন্ত্রাসী বক্তব্য? হ্যাঁ অথবা না বলুন। এরূপ একটা দুষ্ট ও মারাত্মক বক্তব্য প্রদান করে যীশু কি প্রমাণ করলেন যে তিনি দুষ্ট অথবা উন্মাদ সন্ত্রাসী ছিলেন? যীশু কি ইচ্ছা, দাবি ও আশা করেছেন যে, তাঁর প্রতি বিশ্বাসীরা তাঁর ইচ্ছাগুলো বাস্তবায়ন করবে? যীশুর এ ইচ্ছা যারা পুরণ করবে না তিনি কি তাদেরকে শাস্তি দেবেন? যীশুর কোন্ বাসনা আপনি পুরণ করবেন এবং কোনগুলো পুরণ করবেন না তা কি আপনি ইচ্ছামত পছন্দ করবেন? যে ঈশ্বরকে আকাঙক্ষা করতে হয় তিনি কেমন ঈশ্বর? এ বিবৃতি প্রদান করার জন্য কি যীশুকে গ্রেফতার করে গুয়ামত্মানামো কারাগারে জল-পাটাতনে নির্যাতন করা এবং বিনা বিচারে আটকে রাখা উচিত? অথবা যীশু যখন এ কথাগুলো বলেছিলেন তিনি কি সোজাসুজি মিথ্যা বলেছিলেন? যীশু যদি এ কথা বলে থাকেন তবে তিনি কি দুষ্ট বলে প্রমাণিত হলেন? এরূপ কথা বলে যীশু কিরূপ আদর্শ বলে পরিগণিত হলেন? অথবা যীশু এরূপ কথা বলেছেন বলে উল্লেখ করে বাইবেল কি মিথ্যা বলেছে? আপনার উত্তর কী?’’[1]

‘‘যীশুই কি তাহলে ক্রুসেড, ইনকুইজিশন, হিটলার, জর্জ ডাবলিউ বুশ এবং ইতিহাসের অন্যান্য প্রসিদ্ধ অত্যাচারীর ‘প্রেম-আদর্শ’? যদি এ সব কথা শয়তান বলত তবে আমরা তার বিরুদ্ধে ক্রুদ্ধ হওয়াকে যুক্তিগ্রাহ্য বলে প্রমাণ করতাম। কিন্তু এ কথাগুলো কি যীশুই বললেন না? এছাড়া যিনি আকাঙক্ষা করেন তিনি কি সর্বশক্তিমান? যীশু আমার ভোট পাচ্ছেন না।’’[2]

[1] http://www.thegodmurders.com/id188. html
[2] http://www.thegodmurders.com/id119.html
৭. ১. ২. পারিবারিক সম্প্রীতির অবমূল্যায়ন

উপরের উদ্ধৃতিতে যীশু বলেছেন: ‘‘আমি শান্তি দিতে আসি নি বরং মানুষকে মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি। এখন থেকে এক বাড়ীর পাঁচ জন ভাগ হয়ে যাবে, তিন জন দু’জনের বিরুদ্ধে আর দু’জন তিনজনের বিরুদ্ধে। ... বাবা ছেলের বিরুদ্ধে ও ছেলে বাবার বিরুদ্ধে, মা মেয়ের বিরুদ্ধে ও মেয়ে মায়ের বিরুদ্ধে, শাশুড়ী বউয়ের বিরুদ্ধে ও বউ শাশুড়ীর বিরুদ্ধে।’’ (লূক ১২/৪৯-৫৩: মো.-০৬)

অন্যত্র যীশু বলেন: ‘‘যে কেউ মানুষের সাক্ষাতে আমাকে স্বীকার করে, আমিও আমার বেহেশতী পিতার সাক্ষাতে তাকে স্বীকার করবো। কিন্তু যে কেউ মানুষের সাক্ষাতে আমাকে অস্বীকার করে, আমিও আমার বেহেশতী পিতার সাক্ষাতে তাকে অস্বীকার করবো। মনে করো না যে, আমি দুনিয়াতে শান্তি দিতে এসেছি; শান্তি দিতে আসি নি, কিন্তু তলোয়ার দিতে এসেছি। কেননা আমি পিতার সঙ্গে পুত্রের, মায়ের সঙ্গে কন্যার এবং শাশুড়ির সঙ্গে পুত্র বধূর বিচ্ছেদ জন্মাতে এসেছি; আর নিজ নিজ পরিজনই মানুষের দুশমন হবে।’’ (মথি ১০/৩২-৩৬, মো.-১৩)

পাঠক, বিষয়টা কি শোভনীয়? পারিবারিক অশান্তিই কি যীশুর একমাত্র মিশন? কোনো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক নেতা এরূপ বক্তব্য দিলে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

খ্রিষ্টান প্রচারকরা দাবি করেন যে, এ সকল কথা রূপক হিসেবে বলা হয়েছে। কিন্তু কোন কথাটা রূপক এবং কোনটা আক্ষরিক? উপরের উদ্ধৃতিতে প্রথমে যীশু বলেছেন যে, তাঁকে স্বীকার ও অস্বীকারের উপরেই পরকালের মুক্তি। এরপর বলেছেন যে, পারিবারিক শত্রুতা সৃষ্টিই তাঁর আগমনের একমাত্র উদ্দেশ্য। প্রচারকরা প্রথম বক্তব্যকে রূপক হিসেবে গ্রহণ করতে রাজি হবেন না। বরং তাঁর এ কথাকে আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করে এর সাথে অনেকগুলো শর্ত সংযোজন করে বলবেন: ‘‘মনুষ্যদের সামনে যীশুকে ‘ঈশ্বরের ত্রিত্বের এক, পিতার সমান, রক্তমাংসে প্রকাশিত ঈশ্বর এবং মানুষের পাপের জন্য জীবনদানকারী হিসেবে স্বীকার’’ না করলে ধ্বংস অনিবার্য। কিন্তু তারা যীশুর দ্বিতীয় বক্তব্য অপ্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা দিয়ে সম্পূর্ণ অর্থহীন করে ফেলবেন। এরূপ ব্যাখ্যা কি যীশুর বক্তব্যের অবমাননা নয়? যীশুর প্রতি বিশ্বাস কি দাবি করে না যে, নিজেদের বিবেক ও রুচি বাতিল করে তাঁর সকল কথাকে আক্ষরিকভাবে গ্রহণ করতে হবে? অথবা সকল কথাই যে যার ইচ্ছা ও রুচি অনুসারে ব্যাখ্যা ও পালন করতে পারবে?

অন্যত্র যীশু বলেন: ‘‘ভাই ভাইকে, পিতা ছেলেকে মেরে ফেলবার জন্য ধরিয়ে দেবে। ছেলেমেয়েরা মা-বাবার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাদের খুন করাবে’’ (মার্ক ১৩/১২, মো.-০৬)। অন্যত্র তিনি বলেন: ‘‘তোমাদের মা-বাবা, ভাই-বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনেরা তোমাদের ধরিয়ে দেবে। তারা তোমাদের কাউকে কাউকে হত্যাও করবে’’ (লূক ২১/১৬, মো.-০৬)। তিনি আরো বলেন: ‘‘যদি কেউ আমার কাছে আসে, আর আপন পিতা-মাতা, স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে, ভাই-বোন, এমন কি নিজ প্রাণকেও অপ্রিয় জ্ঞান (hate ঘৃণা) না করে তবে সে আমার সাহাবী (মো.-০৬: উম্মত) হতে পারে না’’ (লূক ১৪/২৬, মো.-১৩)। আরো দেখুন: লূক ১২/৫১-৫৩; মথি ১০/৩৪-৩৭।

পাঠক কি স্তম্ভিত হচ্ছেন না? যীশুর উম্মত হওয়ার পূর্বশর্ত নিজের পিতামাতা, স্ত্রী-সন্তান ও আপনজনদেরকে ঘৃণা (hate) করা? নাহলে মুক্তির কোনো আশা নেই? প্রেমময় ঈশ্বর বা প্রেমময় যীশুর ধারণার সাথে কি যীশুর এ দাবি সাংঘর্ষিক নয়? যীশুর শিষ্য হওয়ার জন্য যদি পিতা, মাতা, স্ত্রী, ভাই, বোন সবাইকে ঘৃণা করা জরুরি হয় তবে অবশ্যই বিশ্বাসীকে মেনে নিতে হবে যে, যীশু পারিবারিক ভালবাসার বিরুদ্ধে।

সম্ভবত যীশুর বক্তব্যের এ অশোভনীয়তা গোপন করতেই কোনো কোনো বাংলা অনুবাদে অর্থ পরিবর্তন করা হয়েছে। ইংরেজি বাইবেলে: ‘KJV: hate not. RSV does ont hate’ এবং আরবি বাইবেলে ‘يبغض’। এর অর্থ ঘৃণা করা। কেরি বাইবেল এবং কি. মো.-২০১৩ ‘hate’ অর্থ লেখা হয়েছে ‘অপ্রিয় জ্ঞান করা’। অর্থটা কিছুটা হলেও মূলের কাছাকাছি। অপ্রিয় জ্ঞান করা বা অপছন্দ করার ইংরেজি ‘dislike’। আর হেট অর্থ ‘তীব্রভাবে অপ্রিয় জ্ঞান করা’। এনকার্টা ডিকশনারিতে ‘hate’ অর্থ বলা হয়েছে: “dislike somebody or something intensely: to dislike somebody or something intensely, often in a way that evokes feelings of anger, hostility, or animosity”: ‘‘কোনো ব্যক্তি বা বস্ত্তকে তীব্রভাবে অপছন্দ করা; প্রায়শ এমন তীব্রভাবে অপছন্দ করা যা ক্রোধ, বৈরিতা ও শত্রুতা জাগিয়ে তোলে।’’

কিন্তু পবিত্র বাইবেল ২০০০ ও কি. মো.-২০০৬ ‘hate’ অর্থ লেখেছে: ‘‘আমার চেয়ে কম প্রিয় মনে করে’’। নিঃসন্দেহে এ অনুবাদ অবিশ্বাসযোগ্য। মূল বক্তব্যে ‘আমার চেয়ে’ কথার কোনো অস্তিত্বই নেই। আর ‘hate’ শব্দকে ‘কম প্রিয় মনে করা’ বলে অনুবাদ করাও বিস্ময়কর।

সর্বোপরি, হেট (hate) অর্থ যদি ‘অপ্রিয় মনে করা’ বা ‘কম প্রিয় মনে করা’ হয় তবে সে ক্ষেত্রেও নিজের ভাইকে এরূপ করা বাইবেলের বক্তব্য অনুসারে মহাপাপ। যোহন লেখেছেন: ‘‘Whosoever hateth his brother is a murderer: যে কেহ আপন ভাইকে হেট (hate) করে (ঘৃণা করে, অপ্রিয় জ্ঞান করে, কম প্রিয় মনে করে) সে নরহমত্মা।’’ (১ যোহন ৩/১৫)।  যোহন আরো লেখেছেন: ‘‘If a man say, I love God, and hateth his brother, he is a liar: যদি কেউ বলে, আমি ঈশ্বরকে প্রেম করি, আর আপন ভাইকে ‘হেট’ (hate) করি (ঘৃণা করি, অপ্রিয় জ্ঞান করি, ঈশ্বরের চেয়ে কম প্রিয় মনে করি), সে মিথ্যাবাদী।’’ (১ যোহন/ ইউহোন্না ৪/২০)

এভাবে আমরা দেখছি ঈশ্বরকে ভালবেসে আপন ভ্রাতাকে ‘হেট’ (hate) করা- ঈশ্বরের চেয়ে কম প্রিয় মনে করা- মিথ্যাবাদিতা ছাড়া কিছুই নয়। তাহলে কিভাবে যীশু ভাইবোন, স্ত্রীসন্তানের পাশাপাশি মাতাপিতাকে ঘৃণা করতে, অপ্রিয় জ্ঞান করতে বা কম প্রিয় মনে করতে নির্দেশ দিতে পারেন?

বাইবেল সমালোচক গ্যারি ডেভানি বলেন:

“Did Jesus lie when He said that He did not come to send peace but the sword / conflict / war into your family's lives? Was it Jesus' agenda for your family members to be your enemies? Is this an evil agenda? Does Jesus prove to be evil? Are Christian families, who are not against each other, bad Christians in Jesus' eyes?”

‘‘যীশু যখন বললেন যে, তিনি শান্তি প্রদানের জন্য আসেননি, বরং আপনার পারিবারিক জীবনে তরবারি/ সংঘাত/ যুদ্ধ প্রদানের জন্য এসেছেন তখন কি তিনি মিথ্যা বলেছেন? এটাই কি যীশুর কার্যক্রম-এজেন্ডা ছিল যে, আপনার পরিবারের সদস্যদেরকে আপনার শত্রু বানাবেন? এটা কি কোনো অশুভ এজেন্ডা? যীশু কি অশুভ বলে প্রমাণিত? যে সকল খ্রিষ্টান পারিবারিক জীবনে একে অপরের শত্রু নন তারা কি যীশুর দৃষ্টিতে খারাপ খ্রিষ্টান?’’[1]

“If Jesus wants this - I am not on His side. ... I am starting to feel really sad. ... How is Jesus' C&V model designed to be better for human beings? Isn’t Jesus supposed to be our loving, righteous, wholesome family model? My sensitivities can not support Jesus if this is His attitude. ... It is evident that believers have gone from deception to denial and now they are in delusion to worship, promote, support and finance such a character as Jesus Christ.

‘‘যীশু যদি এটা দাবি করেন তবে আমি তাঁর পক্ষে নেই। ... আমি বাস্তবিকই বিষণ্ণ হতে শুরু করেছি। ... অধ্যায় ও শ্লোক নির্ধারিত যীশুর এ সকল উদ্ধৃতি মানবতার কল্যাণ ও উন্নয়নের  জন্য কিরূপ আদর্শ পেশ করছে?  প্রেমময় সততাপূর্ণ সজীব সুস্থ পরিবারের জন্য যীশু আমাদের আদর্শ হবেন এটাই কি প্রত্যাশিত নয়? এটাই যদি যীশুর মনোভাব হয়ে থাকে তবে আমার সংবেদনশীলতা তাঁকে সমর্থন করতে পারছে না। ... এটা সুস্পষ্ট যে, বিশ্বাসীরা প্রতারণা থেকে অস্বীকারে গিয়েছেন। এখন তারা একটা মোহ বিভ্রমের মধ্যে রয়েছেন যে, তারা ‘যীশু’ নামক এরূপ একটা চরিত্রের ইবাদত, আরাধনা, প্রচার ও অর্থায়ন করছেন।’’[2]

[1] http://www.thegodmurders.com/id188.html
[2] www.thegodmurders.com/id119.html

যীশু পিতামাতাকে সম্মান করতে নির্দেশ দিয়েছেন (মথি ১৯/১৯)। কিন্তু ইঞ্জিলগুলোর বর্ণনা অনুসারে তিনি তাঁর মাতাকে সম্মান করেননি; বরং তাঁর সাথে অশালীন ও রূঢ় ব্যবহার করেছেন। যীশুর মা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে চাইলে তিনি সাক্ষাৎ দিতে অস্বীকার করেন। উপরন্তু তাঁর মাতৃত্বের প্রতি কটাক্ষ করে বলেন, যারা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে না তারা তাঁর মা বা ভাইবোন হতে পারেন না। মার্কের ভাষ্য নিম্নরূপ: ‘‘এর পরে যীশুর মা ও ভাইয়েরা সেখানে আসলেন এবং বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে যীশুকে ডেকে পাঠালেন। যীশুর চারিদিকে তখন অনেক লোক বসেছিল। তারা যীশুকে বলল, ‘আপনার মা ও ভাইয়েরা বাইরে আপনার খোঁজ করছেন।’ যীশু বললেন: কে আমার মা, আর কারা আমার ভাই? (Who is my mother, or my brethren?) যারা তাঁকে ঘিরে বসে ছিল তিনি তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এই তো আমার মা ও ভাইয়েরা! ঈশ্বরের ইচ্ছা যারা পালন করে তারাই আমার ভাই, বোন ও মা।’’ (মার্ক ৩/৩১-৩৫ বা.-২০০০। পুনশ্চ: মথি ১২/৪৬-৫০; লূক ৮/১৯-২১)

এখানে প্রশ্ন হল, কারো মা অবিশ্বাসী হলেই কি তার মাতৃত্ব অস্বীকার করা যায়? অবিশ্বাসী মাতা সাক্ষাৎ করতে চাইলে সাক্ষাৎ প্রদান অস্বীকার করতে হবে?

ইঞ্জিলের অন্য বর্ণনায় একদিন তাঁর মা তাঁকে বলেন যে, তাদের আঙ্গুর-রস (wine মদ) নেই। তখন যীশু তাকে বলেন: Woman, what have I to do with thee? অর্থাৎ, হে নারী, তোমার সাথে আমার কী করার আছে? কেরি: ‘‘হে নারি, আমার সঙ্গে তোমার বিষয় কী?’’ কি. মো.-১৩: ‘‘ঈসা তাঁকে বললেন, হে নারী, এই বিষয়ে তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্ক কি?’’  (যোহন/ ইউহোন্না ২/৪)

যীশু ক্রুশবিদ্ধ অবস্থায় তাঁর মাতাকে দেখে বলেন: ‘‘হে নারী, ঐ দেখ, তোমার পুত্র (Woman, behold thy son!)’’। (যোহন/ ইউহোন্না ১৯/২৬, মো.-১৩) এভাবে জীবনের শেষ মুহূর্তেও তিনি মাকে ‘হে নারী’ বলে সম্বোধন করছেন!

এখানে আমরা দুটো বিষয় দেখছি যা বিশ্বাস করা খুবই কঠিন:

প্রথমত: নিজের মাতাকে ‘হে নারী’ (Woman) বলে সম্বোধন করা যে কোনো ধর্মীয় ও মানবীয় বিচারে অন্যায় ও অশোভন কর্ম। অথচ আমরা দেখছি যে, যীশু জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এভাবেই আচরণ করছেন। কোনো বিশ্বাসী খ্রিষ্টান কি নিজের সন্তানদেরকে যীশুর এ আচরণ শিক্ষা দেবেন? তিনি কি নিজের মায়ের সাথে এ আচরণ করবেন? কেউ যদি এরূপ আচরণ করে তবে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

আমরা ইতোপূর্বে বলেছি যে, নিজের মাতাকে এভাবে ‘ওহে মহিলা’ বা ‘হে নারী’ বলে সম্বোধন করা যে অশোভনীয় ও অশালীন তা সম্ভবত খ্রিষ্টান প্রচারকরাও বুঝতে পারেন। আর এজন্যই বিভিন্ন বাংলা অনুবাদে ‘হে নারী’ কথাটা বাদ দিয়ে অনুবাদ করা হয়েছে। কিন্তু যীশুর আচরণকে অশোভন মনে করে গোপন করা কি বিশ্বাসের পরিপন্থী নয়? যীশু যা বলেছেন ও করেছেন তা সৃদৃঢ়ভাবে সঠিক বলে বিশ্বাস, প্রচার ও প্রবর্তন করাই কি বিশ্বাসের দাবি নয়? বাইবেল থেকে কোনো শব্দ বা বাক্য অশোভন মনে করে বাদ দেওয়া কি বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক নয়?

দ্বিতীয়ত: নিজের মা যতই ভুল করুন না কেন, কোনো সন্তানের কি বলা শোভনীয় যে, আমার সাথে তোমার কী সম্পর্ক? তোমার বিষয় নিয়ে আমার কী দায়? মাতার কথার উত্তরে সন্তানের এ বক্তব্য কি যীশুর পবিত্র ব্যক্তিত্বের সাথে শোভনীয়? তাঁর অনুসারীদের জন্য এ আচরণ কি অনুকরণীয় আদর্শ? কোনো বিশ্বাসী খ্রিষ্টান কি এ আচরণকে শোভনীয় বলে বিশ্বাস করেন? তিনি কি নিজের সন্তানদেরকে এরূপ আচরণ করতে শেখাবেন? নিজে এরূপ করবেন? আর যদি তিনি এরূপ আচরণ অশোভন বলে বিশ্বাস করেন তবে তাকে স্বীকার করতে হবে, যীশু সর্বদা মাতাকে অসম্মান করতেন অথবা ইঞ্জিলগুলো মিথ্যা লেখেছে।

যীশু শেখালেন যে, কেউ তার ভাইয়ের উপরে রাগ করলে বিচারের দায়ে পড়বে। ‘‘তোমাদের সংগে যে কেউ খারাপ ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে কিছুই কোরো না; বরং যে কেউ তোমার ডান গালে চড় মারে তাকে অন্য গালেও চড় মারতে দিয়ো।’’ (মথি ৫/২২, ৩৯)। অথচ তিনিই তাঁর মায়ের কথায় ক্রুদ্ধ হয়ে এরূপ অশোভন আচরণ করছেন! তিনিই বলছেন, মাতাকে সম্মান কর (মথি ১৯/১৯)। অথচ তিনিই মাতাকে এভাবে অসম্মান করছেন! যীশু ইহুদি ধর্মগুরুদের নিন্দা করে বলেছেন: ‘‘তাঁরা যা কিছু করতে বলেন তা কোরো এবং যা পালন করবার হুকুম দেন তা পালন কোরো। কিন্তু তাঁরা যা করেন তোমরা তা কোরো না, কারণ তাঁরা মুখে যা বলেন কাজে তা করেন না।’’ (মথি ২৩/৩) ইঞ্জিলগুলো কি যীশুকে এরূপ কোনো ধর্মগুরু হিসেবে চিত্রিত করছে? যীশুর পারিবারিক মূল্যবোধ (Jesus' Family Values) প্রবন্ধে গ্যারি ডেভানি (Gary DeVaney) লেখেছেন:

“Did the Bible ever emphasize Jesus loving His brothers or sisters; His father, or mother ...? Many times the Bible did say there was a disciple, whom Jesus loved. Can you explain what that was about?  In your value system, is Jesus Christ and God "right and good" about what is "right and good" for human beings? ... Jesus said to her: Woman, how does your concern affect Me? Catholic Woman, what do I have to do with thee? KJV Jesus' arrogance loses me. Catholic BN: A Hebrew expression of hostility - a denial of common interest. Behold! This Catholic Bible Note actually criticized Jesus' comment. Matthew 12:46-49 ... Who is My mother? Who are My brothers? Jesus doesn't acknowledge His family. Jesus rejects them. What a sad example of Jesus' family values. In Luke 2:50 Jesus, age 12, disappeared from His parents for 3 days with no apology.”

‘‘বাইবেল কি কখনো গুরুত্ব দিয়েছে যে, যীশু তাঁর ভাইবোনদেরকে, পিতাকে বা মাতাকে ভালবাসতেন? ... বাইবেল অনেকবার উল্লেখ করেছে যে, যীশুর একজন শিষ্য ছিল যাকে তিনি ‘প্রেম করতেন’। কিসের প্রেক্ষাপটে এটা ছিল তা কি আপনি ব্যাখ্যা করতে পারবেন? আপনার মূল্যবোধ বিবেচনায় মানুষের জন্য যা সঠিক ও ভাল যীশু এবং ঈশ্বর কি সে বিষয়গুলোতে সঠিক ও ভাল? ... ক্যাথলিক ভার্শনের পাঠ অনুসারে যীশু তাঁর মাকে বলেন: ‘‘হে নারী, তোমার উদ্বেগ আমাকে প্রভাবিত করবে কিভাবে?’’। কিং জেমস ভার্শন অনুসারে যীশু বলেন: ‘‘হে নারী, তোমার সাথে আমার কী করার আছে?’’ যীশুর ঔদ্ধত্য আমাকে হারাচ্ছে। ক্যাথলিক বাইবেলের টীকায় বলা হয়েছে যে, যীশু তাঁর মাকে যে কথাটা বলেছেন এটা হিব্রু ভাষায় বৈরিতা প্রকাশ ও পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করার জন্য ব্যবহার করা হত। ক্যাথলিক বাইবেলের টীকা বাস্তবে যীশুর মন্তব্যের সমালোচনা করছে। মথি ১২/৪৬-৪৯.. যীশু বললেন কে আমার মা? কে আমার ভাই? যীশু তাঁর পরিবারকে স্বীকৃতি দিলেন না। যীশু তাঁদেরকে প্রত্যাখ্যান করলেন। যীশুর পারিবারিক মূল্যবোধের এটা অত্যন্ত দুঃখজনক নমুনা! লূক ২/৫০: যীশু ১২ বছর বয়সের সময় তাঁর পিতামাতা থেকে ৩ দিন উধাও হয়ে থাকেন, কোনো কৈফিয়ত বা ক্ষমা প্রার্থনা ছাড়াই।’’[1]

[1] http://www.thegodmurders.com/id119.html

মানুষের বিশ্বাস তাকে সৎ ও মানবপ্রেমিক করে। ধর্মগ্রন্থের অনুসরণ ও সৎ থাকাই ঈমানের প্রমাণ ও ফল। সৎ মানুষ তৈরিই বিশ্বাসের বড় অলৌকিকত্ব। এজন্য ধর্মপ্রবর্তকরা সর্বদা ঈমানের প্রমাণ ও ফল হিসেবে সততা ও পূণ্যকর্মের কথা উল্লেখ করেছেন। বাইবেলের মধ্যেও এরূপ অনেক নির্দেশনা বিদ্যমান। কিন্তু এগুলোর বিপরীতে বাইবেলের মধ্যে যীশুর মুখে এমন কিছু কথা উল্লেখ করা হয়েছে যা কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভণ্ডদের মুখেই শোভা পায়। যেমন বিভিন্ন স্থানে ঈমান বা বিশ্বাসের প্রমাণ হিসেবে ভূত তাড়ানো, সাপ ধরা, বিষ পান ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। যীশু বলেন: ‘‘দেখ, আমি তোমাদেরকে সাপ ও বিছার উপর দিয়ে হেঁটে যাবার ক্ষমতা দিয়েছি এবং তোমাদের শত্রুর (the enemy: তোমাদের শত্রু শয়তানের) সমস্ত শক্তির উপরেও ক্ষমতা দিয়েছি। কোনো কিছুই তোমাদের ক্ষতি করবে না।’’ (লূক ১০/১৯, মো.-০৬)

তিনি আরো বলেন: ‘‘আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমরা সন্দেহ না করে যদি বিশ্বাস কর তবে ডুমুর গাছের উপরে আমি যা করেছি তোমরাও তা করতে পারবে। কেবল তা নয়, কিন্তু যদি এই পাহাড়কে বল, ‘উঠে সাগরে গিয়ে পড়’, তবে তাও হবে।’’ (মথি ২১/১৮-২১; মার্ক ১১/১২-২৩, মো.-০৬)

তিনি বলেন: ‘‘আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, যদি একটা সর্ষে দানার মত বিশ্বাসও তোমাদের থাকে তবে তোমরা এই পাহাড়কে বলবে, ‘এখান থেকে সরে ওখানে যাও’, আর তাতে ওটা সরে যাবে।’’ (মথি ১৭/২০)

তিনি অন্যত্র বলেন: ‘‘একটা সরিষা-দানার মতও যদি তোমাদের বিশ্বাস থাকে তবে তোমরা এই তুঁত গাছটাকে বলতে পারবে, ‘শিকড় সুদ্ধ উঠে গিয়ে নিজেকে সাগরে পুঁতে রাখ।’ তাতে সেই গাছটি তোমাদের কথা শুনবে।’’ (লূক ১৭/৬, মো.-০৬)

তিনি বলেন: ‘‘আর যারা ঈমান আনে, এই চিহ্নগুলো তাদের অনুবর্তী হবে; তারা আমার নামে বদ-রূহ ছাড়াবে, তারা নতুন নতুন ভাষায় কথা বলবে, তারা সাপ তুলবে, এবং প্রাণনাশক কিছু পান করলেও তাতে কোন মতে তাদের ক্ষতি হবে না; তারা অসুস্থদের উপরে হাত রাখবে, আর তারা সুস্থ হবে।’’ (মার্ক ১৬/১৮, মো.-১৩)

যোহন ১৪/১২ অনুসারে যীশু বলেন: ‘‘সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে আমাতে বিশ্বাস করে, আমি যে সকল কার্য করিতেছি, সেও করিবে, এমন কি, এ সকল ‎হইতেও বড় বড় কার্য করিবে; কেননা আমি পিতার নিকটে যাইতেছি...।’’

আমরা দেখেছি যে, এ কথাগুলো বাস্তবতার আলোকে ভুল। লক্ষ-কোটি বিশ্বাসী কেউই এগুলো করছেন না। এরচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটা বিষয় পাঠক লক্ষ্য করুন:

(ক) মানুষ বিশ্বাসী হয় মহান স্রষ্টার প্রেম, তাঁর সন্তুষ্টি ও মুক্তির প্রত্যাশায়। দুনিয়ার জীবনে অলৌকিক ক্ষমতা অর্জনের জন্য ঈমান গ্রহণ বা কর্ম করা মূলতই ভণ্ডামি এবং জাগতিক ক্ষমতা অর্জনের অপচেষ্টা। যাদুকররা এরূপ করেন।

(খ) নবীদের অলৌকিক কর্ম তাঁদের সত্যতা প্রমাণের জন্য। পুরাতন নিয়মের নবীদের কর্ম বর্ণনায় আমরা দেখি না যে, তাঁরা তাঁদের জাতিদেরকে বিশ্বাসের মাধ্যমে অলৌকিক ক্ষমতা লাভের লোভ দেখিয়েছেন। তাঁরা মূলত বিশ্বাসের মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রেম ও পুরস্কারের লোভ দেখিয়েছেন। ধর্মের মূল চেতনা থেকে বঞ্চিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষেরাই এরূপ বুজরুকি বা ভেল্কিবাজি খুঁজে বেড়ায়। অতীতে ও বর্তমানে অনেক ভণ্ড এরূপ ‘বুজরুকি’ বা ভেল্কির লোভ  দেখিয়ে ভক্ত টানেন। প্রকৃত ধর্ম প্রচারকরা কখনোই এরূপ করেন না। যীশু কেন এরূপ বুজরুকি বা ভেল্কির লোভ দেখাবেন? যীশু কি কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষদেরকে ভেল্কি দেখিয়ে ধর্মান্তর করতে শেখালেন?

(গ) অতীতে ও বর্তমানে অনেক ভণ্ড এরূপ অনেক ভেল্কি বা অলৌকিক কর্ম প্রদর্শন করেছেন। তাদের কর্ম কি আমরা বিশ্বাসের প্রমাণ হিসেবে গণ্য করব? অতীতে ও বর্তমানে  কোনো সাধারণ বা অসাধারণ খ্রিষ্টান ধার্মিক বা ধর্মগুরু এ সকল কাজ করে দেখাতে পারছেন না। ভূত তাড়ানো বা রোগ সারানোর মত অতি সাধারণ কিছু কবিরাজি তারা করেন। নাস্তিক, আস্তিক, ধ্যানবাদী, যাদুকর ও সকল ধর্মের ওঝারাই এরূপ করিরাজি করেন। এছাড়া কিছুই তাঁরা দেখাতে পারছেন না। পাহাড় বা তুঁতগাছ তো দূরের কথা একটা লতাগুল্মকেও তারা আদেশ করে সমুদ্রে স্থানান্তরিত করতে পারছেন না। এটা কি তাঁদের শর্ষে দানা পরিমাণ বিশ্বাসও না থাকার প্রমাণ?

(ঘ) এটা একটা অবাস্তব শিক্ষা যা অনেক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বাইবেল সমালোচক গ্যারি ডেভানি (Gary DeVaney) লেখেছেন:

“If your child believed Jesus and picked up a deadly serpent and was killed- would you then consider Jesus to be sinful? If you publicly promoted this C&V to people and some acted on your words and died, wouldn't you go to prison? Jesus Christ proves not to be a good model for humanity.”

“Mark 16:17-18 ... Many "faithful" Christians have died due to this specific Bible C&V. Would you honestly want your impressionable, trusting kids to read and believe this C&V and then to prove their faith by actually picking up serpents with their hands or drinking any deadly thing?   Please! Please! Please! Do not do the snake and poison thing at home or anywhere else! Do you honestly support and promote every C&V in the Bible? How can you promote and support Jesus Christ if He tells you to "in His name" do these things?”

“You do believe Jesus - don't you? ... Did Jesus Christ lie in either or both of these C&Vs concerning poisonous serpents? Come on! Would a sane person put a live Cobra in his or her own lap or in your child's lap to prove that Jesus did not lie? (Do not ever do that!).”

‘‘যদি আপনার শিশু যীশুকে বিশ্বাস করে একটা মারাত্মক সাপ তুলে নেয় এবং নিহত হয়, তবে আপনি কি যীশুকে অপরাধী বা পাপী বলে গণ্য করবেন? যদি আপনি গণমানুষের মধ্যে বাইবেলের এ শ্লোকটা প্রচার ও প্রবর্তন করেন এবং কিছু মানুষ আপনার কথা অনুসারে কর্ম করে মৃত্যুবরণ করে তবে কি আপনি কারাগারে যাবেন না? আমার দৃষ্টিতে যীশু খ্রিষ্ট মানবতার জন্য সুন্দর আদর্শ বলে প্রমাণিত নন।’’[1]

‘‘মার্ক ১৬/১৭-১৮.. এ শ্লোকদ্বয়ের কারণে অনেক ‘বিশ্বাসী’ খ্রিষ্টান মৃত্যুবরণ করেছেন। আপনি কি বিশ্বস্ততার সাথে চাইবেন যে, আপনার অবুঝ ও আস্থাশীল সন্তানেরা বাইবেলের এ শ্লোকগুলো পাঠ করুক এবং তা বিশ্বাস করুক? এরপর তাদের বিশ্বাস বাস্তবে প্রমাণ করতে সাপ নিয়ে হাতে ধরুক বা বিষাক্ত কিছু পান করুক? পস্নীজ! পস্নীজ! পস্নীজ! সাপ ও বিষের দ্রব্য বাড়িতে বা অন্য কোথাও রাখবেন না। আপনি কি বিশ্বস্ততার সাথেই বাইবেলের সকল কথা বিশ্বাস ও প্রচার করেন? যীশু যদি তাঁর নামে এ সকল কর্ম করতে বলেন তবে আপনি কিভাবে তা সমর্থন ও প্রচার করবেন?’’[2]

‘‘আপনি কি যীশুকে বিশ্বাস করেন? বিষাক্ত সাপ বিষয়ক উপরের উদ্ধৃতির সবগুলোতে বা কোনোটাতে কি যীশু খ্রিষ্ট মিথ্যা বলেছেন?  আসুন! যীশুর সত্যবাদিতা প্রমাণের জন্য কোনো সুস্থবুদ্ধি ব্যক্তি কি তার নিজের কোলে অথবা আপনার শিশুর কোলে কি একটা জীবন্ত গোখরা সাপ রাখবেন? (কখনোই এরূপ করবেন না!)’’[3]

[1] Jesus' Sins: http://www.thegodmurders.com/id90.html
[2] Jesus’ Family Values: http://www.thegodmurders.com/id119.html
[3] Did Jesus Christ Lie? http://www.thegodmurders.com/id188.html

আমাদের সমাজে মুর্খ, গ্রাম্য ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষদের মধ্যে ‘কারামতি’, ভেল্কি বা অলৌকিক গল্পকাহিনী বলে যেমন ভক্ত যোগাড় করার প্রতিযোগিতা চলে, ইঞ্জিল ও নতুন নিয়মের অন্যান্য পুস্তকে অনেকটা তেমনিভাবে ঈসা মাসীহকে চিত্রিত করা হয়েছে। ইঞ্জিলগুলোতে তাঁর কিছু শিক্ষা ও উপদেশের কথা বলা হয়েছে, যেগুলোর মধ্যে কিছু অতিরঞ্জন ও প্রান্তিকতা রয়েছে বলে আমরা দেখব। বাকি সবই ভূত ছাড়ানো, রোগ ভাল করা, মৃতকে জীবিত করা ইত্যাদির গল্প। নতুন নিয়মের পুস্তকগুলোতে যীশুর কোনো শিক্ষা, আদর্শ বা চরিত্র দেখিয়ে মানুষদেরকে খ্রিষ্টধর্মের দাওয়াত দেওয়া হয়নি। মূলত অলৌকিকতার গল্প বলে মানুষদেরকে তাঁর ভক্ত হতে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। অবিকল আমাদের সমাজের গুরু, গোসাই, দয়াল বাবা বা খাজা বাবার প্রচারকদের মত। আর এজন্য বর্তমানে ইউরোপ-আমেরিকার শিক্ষিত, বিজ্ঞান-মনস্ক ও বিবেকবান মানুষদের কাছে খ্রিষ্টধর্ম তার আবেদন হারিয়েছে। বিশেষত যারাই বাইবেল পড়ছেন তারাই খ্রিষ্টধর্ম ও বাইবেলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন। সম্ভবত এজন্যই খ্রিষ্টান প্রচারকরা আফ্রিকা ও এশিয়ার গ্রামগঞ্জের অশিক্ষিত, অল্পশিক্ষিত, ভক্তিপ্রবণ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষদেরকে তাদের প্রচারণার জন্য বেছে নিয়েছেন।

মজার বিষয় যে, যীশুর অলৌকিকতার নামে ইঞ্জিলগুলোতে সে সকল বর্ণনা বিদ্যমান তার অনেকগুলোই অলৌকিকতা নয়; বরং অমানবিকতা বলে গণ্য। একান্ত মূর্খ ভক্তই শুধু এরূপ কাহিনী শুনে অভিভূত হবে। আর যে কোনো বিবেকবানের মধ্যে এ সব কাহিনী শত প্রশ্নের জন্ম দেবে। এরূপ একটা কাহিনী বৃক্ষ হত্যার কাহিনী। বৈপরীত্য প্রসঙ্গে তৃতীয় অধ্যায়ে আমরা গল্পটা আলোচনা করেছি। এখানে শুধু এ গল্পের অশোভনীয়তা পর্যালোচনা করব। আমরা দেখেছি, মার্ক লেখেছেন: ‘‘... দূর থেকে পাতায় ঢাকা একটি ডুমুর গাছ দেখে, হয়তো তা থেকে কিছু ফল পাবেন বলে কাছে গেলেন; কিন্তু কাছে গেলে পাতা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলেন না; কেননা তখন ডুমুর ফলের সময় ছিল না। তিনি গাছটিকে বললেন, এখন থেকে কেউ কখনও তোমার ফল ভোজন না করুক। ... রবিব, দেখুন, আপনি যে ডুমুরগাছটিকে বদদোয়া দিয়েছিলেন, সেটি শুকিয়ে গেছে। ...।’’ (মার্ক ১১/১২-২২, মো.-১৩)

সুপ্রিয় পাঠক, এখানে নিম্নের বিষয়গুলো লক্ষণীয়:

(১) যীশু খ্রিষ্ট নয়, কোনো সাধারণ বুদ্ধিমান মানুষের ক্ষেত্রে কি পাঠক এরূপ আচরণ আশা করেন? ভাদ্র মাস আমের সময় নয়। কোনো ২৫/৩০ বছর বয়স্ক মূর্খ বাঙালিও কি আশ্বিন বা কার্তিক মাসে আম খুঁজতে আম গাছের নিচে যাবেন? যীশু খ্রিষ্টের মত মহান মানুষকে এত বড় নির্বোধরূপে কল্পনা করা কি সম্ভব?

(২) একটু কষ্ট পেলেই অভিশাপ দেওয়া কি ধর্মের নির্দেশনা? আমরা ইতোপূর্বে ইলীশায় (আল-ইয়াসা) নবীর অভিশাপের ঘটনা দেখেছি। তাঁকে ‘টাক’ বলার কারণে তিনি অভিশাপ দিয়ে ৪২ জন শিশুকে ভল্লুক দ্বারা হত্যা করেন! যীশুর এ অভিশাপ আরো বেশি অযৌক্তিক। ইলীশায়র ঘটনায় শিশুরা অপরাধ করেছিল, যদিও শিশুদের এ অপরাধ ধর্তব্য নয় এবং বাইবেল বর্ণিত ইলীশায়ের প্রতিক্রিয়া অমানবিক। কিন্তু এ বর্ণনায় যীশুর প্রতিক্রিয়া কি আরো অনেক বেশি অমানবিক নয়?

এ গাছটা কোনো অপরাধ করেনি। অথচ যীশু তাকে অভিশাপ দিলেন। ঈশ্বর, ঈশ্বর-পুত্র বা কোনো নবী তো দূরের কথা ১৫/২০ বছর বয়সী কোনো স্বাভাবিক বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষও ফলের মৌসুম ছাড়া অন্য সময়ে গাছে ফল না থাকার কারণে গাছের উপর রাগ করতে পারেন না। মৌসুমেও কোনো গাছে ফল না থাকলে কোনো বিবেকবান মানুষ গাছের উপর রাগ করতে পারেন না। কারণ অ-মৌসুমে বা মৌসুমে ফল দানের ক্ষমতা তো গাছের নেই। তাহলে এ অভিশাপ কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

(৩) এটা কি পাপ নয়? অকারণে মহান আল্লাহর একটা সৃষ্টি ধ্বংস করা কি পাপ নয়? যদি কেউ দাবি করেন যে, এটা পাপ নয় তবে তার কাছে প্রশ্ন হল: আপনার বাগানের কিছু গাছ যদি এভাবে বিনষ্ট করা হয় তবে আপনি কি তা অন্যায়, পাপ ও অপরাধ বলে গণ্য করবেন না? পাহাড়ে বা জঙ্গলেও যদি কোনো কারণ ছাড়া অল্প বা বেশি কিছু গাছ এভাবে অভিশাপ দিয়ে, বিষ ঢেলে বা পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে বা শুকিয়ে দেওয়া হয় তবে আপনি কি তা অপরাধ বলে গণ্য করবেন না?

(৪) ধ্বংসই কি অলৌকিকত্ব বা মুজিযা? ধ্বংসপ্রিয়তাই কী বাইবেলীয় ভাববাদী, যীশু ও প্রেরিতদের বৈশিষ্ট্য? যীশু বিনা অপরাধে গাছটা শুকিয়ে মারলেন এবং এতে প্রেরিতরা ব্যথিত না হয়ে চমৎকৃত হলেন! কারামত দিয়ে গাছে ফল না ধরিয়ে গাছ শুকিয়ে মারা কি নির্বুদ্ধিতা ও পাপ নয়? যীশু কি এরূপ পাপে লিপ্ত হতেন?

(৫) যীশুর অলৌকিক ক্ষমতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হত যে, তিনি ডুমুরগাছটার ফলদানের জন্য প্রার্থনা করতেন এবং গাছটা তৎক্ষণাৎ ফলে পূর্ণ হত। এরপর তিনি- গাছটা মালিকানাধীন হলে মালিকের অনুমতিক্রমে- গাছ থেকে ফল ভক্ষণ করতেন। এতে মালিকও লাভবান হত। সর্বোপরি অগণিত মানুষ ‘এ চিরফলবান’ বৃক্ষ দেখে ও এর ফল খেয়ে বিশ্বাসী হতে পারতেন।

ইঞ্জিলগুলো যীশুর অন্য একটা অলৌকিক কর্মের বর্ণনায় লেখেছে যে, তিনি একজন বা দু’জন পাগলের অনেকগুলো ভূত বের করে দু ’হাজার শূকরের দেহে প্রবেশ করান; এতে শূকরগুলো সমুদ্রে ডুবে মরে। তৃতীয় অধ্যায়ে ঘটনার স্থান বিষয়ক বৈপরীত্য আমরা আলোচনা করেছি। এখানে গণ-আত্মহত্যার গল্পটা দেখুন:

‘‘তাতে বদ-রূহরা ফরিয়াদ করে তাঁকে বললো, যদি আমাদের ছাড়িয়ে দেন, তবে ঐ শূকরের পালে পাঠিয়ে দিন। তিনি তাদেরকে বললেন, চলে যাও। তখন তারা বের হয়ে সেই শূকরের পালে প্রবেশ করলো; আর দেখ, সমস্ত শূকর মহাবেগে ঢালু পাড় দিয়ে দৌড়ে গিয়ে সাগরে পড়লো ও পানিতে ডুবে মারা গেল। তখন যারা পাল চড়াচ্ছিল তারা পালিয়ে গেল।’’ (মথি ৮/৩১-৩৩, মো.-১৩; লূক ৮/৩২-৩৪।)

মার্কের বর্ণনায়: ‘‘তখন সেই নাপাক রূহরা বের হয়ে শূকরদের মধ্যে প্রবেশ করলো; তাতে সেই শূকর-পাল, কমবেশ দুই হাজার শূকর, মহাবেগে দৌড়ে ঢালু পাড় দিয়ে সাগরে গিয়ে পড়লো এবং সাগরে ডুবে মারা গেল।’’ (মার্ক ৫/১১-১৭)

সুপ্রিয় পাঠক, এ ঘটনাটাকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন? এটা কি অকারণ হত্যাযজ্ঞ নয়? নিম্নের বিষয়গুলো লক্ষ্য করুন:

(১) ভূত তাড়ানোর জন্য কি ভূত বা নাপাক রূহকে অন্যের দেহে প্রবেশের ব্যবস্থা করা জরুরি? এভাবে অকারণে দু’ হাজার প্রাণ বিনষ্ট না করে কি ভূত ছাড়ানো যেত না? বর্তমানে সারা বিশ্বের সকল সমাজেই এরূপ ভূত তাড়ানোর কুসংস্কার বিদ্যমান। কিন্তু কোনো ওঝা, ফাদার, সেন্ট, পাদরি, কবিরাজ, ‘ঠাকুর’ বা ‘হুজুর’ যদি ভূত তাড়ানোর নামে ২০০০ ছাগল, ভেড়া বা শূকর হত্যা করে তবে আপনি তা কিভাবে নেবেন? যীশু কি পারতেন না যে, শূকরগুলোকে হত্যা না করে ভূতগুলোকেই সাগরে পাঠিয়ে দেবেন? একেবারেই যদি তিনি অক্ষম হতেন, তবে অন্তত একজন পাগলের ভূতগুলোকে একটা শূকরের দেহের মধ্যে প্রবেশ করাতেন। তাহলে অন্তত একটা শূকর হত্যার মধ্য দিয়ে ভূত তাড়ানোর কর্মটা সম্পন্ন হতো।

(২) একেবারেই অকারণে, খেলাচ্ছলে যদি কেউ ২০০০ নয়, দুটা গরু, ছাগল, ভেড়া বা শূকর এভাবে হত্যা করে তবে আপনি তাকে কী বলবেন?

(৩) এ অকারণ হত্যাকাণ্ড কি মহাপাপ নয়? কোনো কারণ ও প্রয়োজন ছাড়াই দু’ হাজার প্রাণিকে হত্যা করা হল। উপরন্তু এগুলো মালিকানাধীন শূকর ছিল। এভাবে কিছু মানুষের বিপুল সম্পদ বা আজীবনের সঞ্চয় বিনষ্ট করে তাদের মহাক্ষতি করা হল। সম্ভবত এজন্যই এ ভয়ঙ্কর ধ্বংসযজ্ঞের কারামতি দেখে এলাকার মানুষ ঈমান গ্রহণের পরিবর্তে যীশুকে দ্রুত তাদের এলাকা পরিত্যাগের অনুরোধ করেন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো ও তাদের আপনজনদের ক্রুদ্ধ হয়ে গোলমাল পাকানোর আগেই! (মার্ক ৫/১৭)

(৪) পাঠক যদি এ কর্মকে পাপ নয় বলে দাবি করেন তবে প্রশ্ন হল, আপনার ২০০০ ছাগল বা শূকর যদি এভাবে হত্যা করা হয় তবে আপনি অসন্তুষ্ট হবেন না তো? যদি জঙ্গলের বন্য দু’ হাজার হরিণ বা খরগোশ অকারণে হত্যা করা হয় তবে আপনি একে অমানবিক বলবেন না তো?

৭. ১. ৭. অলৌকিক কর্মে অক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা

অলৌকিকতার নামে উপরের বিবেকবিরুদ্ধ কর্মগুলোর বিপরীতে ইঞ্জিলের মধ্যে অলৌকিক কর্মে যীশুর অক্ষমতার কথা বলা হয়েছে। ইঞ্জিলের বর্ণনায় যীশু নিজ গ্রাম ‘নাযারেথ’ বা ‘নাসরত’ গ্রামে বড় কোনো অলৌকিক কর্ম করতে সক্ষম হলেন না।

মার্ক ৬/৫-৬: “he could there do no mighty work, save that he laid his hands upon a few sick folk, and healed them.”

কি. মো.-২০০৬:: ‘‘তারপর তিনি কয়েকজন অসুস্থ লোকের উপর হাত রেখে তাদের সুস্থ করলেন, কিন্তু সেখানে আর কোন অলৌকিক কাজ করা সম্ভব হল না। লোকেরা তাঁর উপর ঈমান আনল না দেখে তিনি খুব আশ্চর্য হলেন।’’

কি. মো.-১৫: ‘‘তখন তিনি সেই স্থানে আর কোনো কুদরতি-কাজ করতে পরলেন না; কেবল কয়েক জন রোগগ্রস্ত লোকের উপরে হাত রেখে তাদেরকে সুস্থ করলেন। আর তিনি তাদের ঈমান না আনার দরুন আশ্চর্য জ্ঞান করলেন।’’

ইঞ্জিলের এ বর্ণনায় পাঠকরাও খুব আশ্চর্য হন! একজন সমালোচক লেখেছেন: “Must Jesus have a non-familiar audience before His miracles can be performed? This certainly shows some of Jesus' limitations. Who really knew Jesus better than the people in his homeland. It indicated that those who truly knew Jesus didn't much believe in Him. What else could it mean?”

‘‘যীশুর অলৌকিক কার্য সম্পাদনের জন্য কি তাঁর সামনে অপরিচিত দর্শকবৃন্দ থাকা জরুরি ছিল? এটা নিশ্চিতভাবেই যীশুর কিছু সীমাবদ্ধতা প্রদর্শন করে। যীশুর নিজের শহরের মানুষদের চেয়ে তাঁকে অধিক ভালভাবে আর কেউই জানত না। এটা প্রমাণ করে যে, যারা যীশুকে সত্যিকারভাবে জানতেন তারা তাঁকে তেমন বিশ্বাস করতেন না। এ ছাড়া এ কথার আর কী অর্থ হতে পারে?’’[1]

আরেকটা অলৌকিক কর্ম প্রসঙ্গে লূক লেখেছেন: ‘‘তাদের মধ্যে একজন স্ত্রীলোক বারো বছর ধরে রক্তস্রাব রোগে ভুগছিল। ডাক্তারদের পিছনে সে তার সব কিছুই খরচ করেছিল, কিন্তু কেউই তাকে ভাল করতে পারেনি। সে পিছন দিক থেকে ঈসার কাছে এসে তাঁর চাদরের কিনারা ছুঁলো, আর তখনই তার রক্তস্রাব বন্ধ হল। তখন ঈসা বললেন,‘কে আমাকে ছুঁলো?’ সবাই অস্বীকার করলে পর পিতর ও তাঁর সংগীরা ঈসাকে বললেন, ‘হুজুর, লোকেরা আপনার চারপাশে চাপাচাপি করে আপনার উপর পড়ছে।’ তবুও ঈসা বললেন, ‘আমি জানি, কেউ আমাকে ছুঁয়েছে, কারণ আমি বুঝতে পারলাম আমার মধ্য থেকে শক্তি বের হল।’ সেই স্ত্রীলোকটা যখন দেখল সে ধরা পড়েছে তখন কাঁপতে কাঁপতে ঈসার সামনে সে উপুড় হয়ে পড়ল।’’ (লূক ৮/৪৩-৪৭, মো.-০৬)

মার্কও ঘটনাটা লেখেছেন। তাঁর বর্ণনায় রয়েছে: ‘‘ঈসা তখনই বুঝলেন যে, তাঁর মধ্য থেকে শক্তি বের হয়েছে। সেজন্য তিনি ভিড়ের চারিদিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কে আমার কাপড় ছুঁলো?’ তার সাহাবীরা বললেন, আপনি তো দেখছেন লোকে আপনার চারপাশে ঠেলাঠেলি করছে, আর তবুও আপনি বলছেন, কে আপনাকে ছুঁলো?’ এই কাজ কে করেছে তা দেখবার জন্য তবুও ঈসা চারদিকে তাকাতে লাগলেন। সেই স্ত্রীলোকটার যা হয়েছে তা বুঝে সে কাঁপতে কাঁপতে এসে ঈসার পায়ে পড়ল এবং সব বিষয় জানাল। (মার্ক ৫/৩০-৩২, মো.-০৬)

এ ঘটনায় আমরা দেখছি যে, যীশুর অলৌকিক জ্ঞান ও ক্ষমতা খুবই সীমাবদ্ধ। আমরা দেখি যে, আমাদের সমাজে অনেক ঠাকুর, সাঁই বাবা, গোসাই বাবা, পীর বাবা ও এ জাতীয় অনেক ভণ্ড ধর্মগুরু এর চেয়ে অনেক অলৌকিক ক্ষমতা দেখান। এদের ভক্তবৃন্দ আরো অনেক বড় বড় কারামতি বা অলৌকিক কর্মের গল্প বলেন ও লেখেন। এরূপ ‘বাবার আশীর্বাদ’ পেয়ে সুস্থ হওয়ার জন্য তাকে স্পর্শ করা লাগে না, দূর থেকে তাকে ধ্যান করলেই হয়। এছাড়া এ সকল গুরু বা বাবা নাকি না দেখেই বলে দিতে পারেন কে তাকে ছুঁয়েছে বা তার বিষয়ে কে কি কথা বলেছে!

কিন্তু ইঞ্জিলের বর্ণনায় যীশুর অলৌকিক ক্ষমতা কম! তাঁকে না ছুঁয়ে ভাল হওয়া যায় না। কেউ তাঁকে ছুঁলে তিনি তার পরিচয় জানতে পারেন না। তাঁর থেকে শক্তি বের হওয়া বুঝতে পারলেও শক্তিটা কার কাছে গেল তা জানার ক্ষমতা তাঁর ছিল না!

[1] http://www.thegodmurders.com/id134.html
৭. ১. ৮. গ্রামবাসী ও আত্মীয়দের অবিশ্বাস!

উপরে আমরা দেখলাম যে, নিজ গ্রামের মানুষদের অবিশ্বাস দেখে যীশু নিজেই আশ্চর্য হলেন। নাসরাত গ্রামবাসীদের অবিশ্বাস বিষয়ে লূক লেখেছেন: ‘‘এই কথা শুনে মজলিস-খানার সমস্ত লোক রেগে আগুন হল। তাঁরা উঠে ঈসাকে গ্রামের বাইরে তাড়িয়ে নিয়ে চলল, আর তাঁকে নীচে ফেলে দেবার জন্য তাদের গ্রামটা যে পাহাড়ের গায়ে ছিল সেই পাহাড়ের চূড়ায় তাঁকে নিয়ে গেল।’’ (লূক ৪/২৮-২৯, মো.-০৬)।

আরো অবিশ্বাস্য যীশুর পরিবারের অবিশ্বাসা। যোহন লেখেছেন, ‘‘কারণ তার ভাইয়েরাও তাঁর উপরে ঈমান আনেনি’’ (যোহন/ ইউহোন্না ৭/৫, মো.-১৩)।

মার্ক লেখেছেন, তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাঁকে পাগল মনে করতেন: ‘‘এই কথা শুনে তাঁর আত্মীয়েরা (family) তাঁকে ধরে নিতে আসলেন। কেননা তারা বললো, সে পাগল হয়েছে।’’ (মার্ক ৩/২১-২২, মো.-১৩)

ইঞ্জিলের এ বর্ণনা অবিশ্বাস্য। ইঞ্জিলের বর্ণনায় যীশুর জন্মের আগে থেকেই তাঁর পিতামাতা ও পরিবার তাঁর অলৌকিকত্ব সম্পর্কে ভালভাবে জেনেছেন। তিনি নিজের জীবনের প্রায় ত্রিশটা বছর তাদের মধ্যে কাটিয়েছেন। তারা কিভাবে তাঁকে অবিশ্বাস করলেন? তারা তাঁকে মাসীহ হিসেবে বিশ্বাস না করুন, অন্তত সৎ ও বুদ্ধিমান মানুষ হিসেবে তো বিশ্বাস করবেন? কিন্তু তারা তাঁকে পাগল বলে ধরতে চাচ্ছেন?

গ্যারি ডেভানি (Gary DeVaney) লেখেছেন: “Jesus had been around His relatives for years and He obviously did not sell even them on His perfection. These are two very shocking testimonies! What kind of Biblical C&V testimonies did Jesus Christ's blood relatives give Him? Do you think they could possibly get to Heaven?”

‘‘যীশু নিজ পরিবার-আত্মীয়দের মধ্যে অনেক বছর বসবাস করেছেন। বাহ্যত তিনি তাদের নিকট নিজের শুদ্ধতাও বিক্রয় করতে পারেননি। এখানে অত্যন্ত বেদনাদায়ক দুটা সাক্ষ্য বিদ্যমান! বাইবেলের উদ্ধৃতিতে যীশুর রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়রা তাঁর বিষয়ে কী সাক্ষ্য প্রদান করলেন? আপনি কি মনে করেন যে, তাদের পক্ষে বেহেশতে যাওয়া সম্ভব হবে?’’[1]

[1] New Testament – Jesus; http://www.thegodmurders.com/id134.html

নতুন নিয়মে কোথাও কোথাও যীশুর দয়ার্দ্রতা ও সুন্দর আচরণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কোথাও কোথাও তাঁর এমন আচরণের কথা বলা হয়েছে যা অসৌজন্যমূলক। যেমন মথি ও মার্ক লেখেছেন যে, যীশু যখন শিষ্যদেরকে বলেন যে, তাঁকে দুঃখভোগ করে মরতে হবে, তখন তাঁর প্রিয়তম শিষ্য পিতর অনুযোগ করে বলেন, গুরু এরূপ না হউক। তখন তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে পিতরকে বলেন: ‘‘আমার সম্মুখ হইতে দূর হও, শয়তান, তুমি আমার পথের বাঁধা; কেননা যা আল্লাহর, তা নয়, কিন্তু যা মানুষের, তা-ই তুমি ভাবছো।’’ (মথি ১৬/২৩, মো.-১৩; মার্ক ৮/৩৩)

এ বক্তব্য অনিয়ন্ত্রিত আচরণ ও অনিয়ন্ত্রিত ক্রোধের প্রকাশ, যা যীশুর মহান ব্যক্তিত্ব থেকে একেবারেই অনাকাঙিক্ষত, বিশেষত কোনো ধার্মিক মানুষকে বা সাধারণ মানুষকে ‘শয়তান’ বলে গালি দেওয়া।

অন্যত্র যীশু ইহুদি ধর্মগুরু ও পণ্ডিতদেরকেও এভাবে গালি দিয়েছেন। কেউ যদি মথির ২৩ অধ্যায় পাঠ করেন তবে যীশুর গালির বহর দেখবেন। যীশু ইহুদি ধর্মগুরুদেরকে অনেক কঠোর ভাষায় গালি দিয়েছেন ও ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘হা অধ্যাপক ও ফরীশীগণ, কপটরা, ধিক্ তোমাদিগকে!’ মো.-০৬: ভণ্ড আলেম ও ফরীশীরা, ঘৃণ্য আপনারা (মথি: ২৩/১৩, ১৪, ১৫, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯), হা অন্ধ পথ-প্রদর্শকেরা, ধিক্ তোমাদিগকে!’ (মথি: ২৩/১৬),  ‘অন্ধ ফরীশী’ (অন্ধ ফরীশীরা মথি: ২৩/২৬), ‘সর্পেরা, কালসর্পের বংশেরা’, মো.-০৬: সাপের দল আর সাপের বংশধরেরা (মথি: ২৩/৩৩)।

তিনি বারবারই বিরুদ্ধবাদীদেরকে ‘সাপের বংশধর’ (generation of vipers) বলে গালি দিয়েছেন (মথি ১২/৩৪; লূক ৩/৭; মথি ২৩/৩৩)। এছাড়া মূঢ়, মূর্খ, অন্ধ ইত্যাদি তাঁর বহুল ব্যবহৃত গালি: হে মূঢ়েরা, হে মূর্খরা, মূঢ়েরা ও অন্ধেরা: মূর্খ ও অন্ধের দল Ye fools/ Ye fools and blind (মথি: ২৩/১৬, ২৩/১৭, ২৩/১৯, লূক ১১/৪০)। এমনকি নিজের শিষ্যদেরকেও তিনি এভাবে মূঢ়েরা বা মূর্খরা (O fools) বলে সম্বোধন করেছেন (লূক ২৪/২৫)

অন্যায়ের প্রতিবাদ ধার্মিকদের দায়িত্ব। তবে বিরুদ্ধবাদীদের এভাবে গালি দেওয়া খুবই অসৌজন্যমূলক। এছাড়া কথাগুলো সাম্প্রদায়িক হানাহানির উৎস। কারণ ধর্মপ্রবর্তকের প্রতিটা কর্ম ও কথাই অনুসারীরা অনুকরণ করতে ভালবাসেন। যীশুর এ সকল কথাতে বিধর্মীদেরকে এভাবে গালি দেওয়া, অবজ্ঞা করা ও হেয় করে কথা বলা যীশুর অনুসারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া খুবই স্বাভাবিক।

গ্যারি ডেভানি লেখেছেন যে, যীশু নিজেই বলেছেন: ‘‘যে কেউ আপন ভাইয়ের প্রতি ক্রোধ (angry) করে, সে বিচারের দায়ে পড়বে; আর যে কেউ আপন ভাইকে বলে, ‘রে নির্বোধ’, সে মহাসভার বিচারের দায়ে পড়বে; আর যে কেউ বলে, ‘রে মূঢ় (fool)’, সে দোজখের আগুনের দায়ে পড়বে।’’ (মথি ৫/২২) কিন্তু এর বিপরীতে যীশু নিজেই ‘ক্রোধ’ করেন: ‘‘তখন তিনি তাদের অন্তরের কঠিনতার করুন দুঃখিত হয়ে সক্রোধে (with anger) তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করে সেই লোকটিকে বললেন...।’’ (মার্ক ৩/৫) এবং যীশু নিজেই অন্যদেরকে বারবার মূঢ় বা মূর্খ (fool) বলে উল্লেখ করছেন। এগুলো কি ‘‘আমার কথা শোন, আমার কাজ দেখ না’’ নীতির প্রকাশ? যীশুর বক্তব্য ও যীশুর বিষয়ে ইঞ্জিলের বর্ণনা উভয়ই যদি সঠিক হয় তবে আমাদের সকলের সাথে যীশুকেও মহাসভার দায়ে পড়তে হবে এবং অগ্নিময় নরকেই থাকতে হবে![1]

এরূপ ক্রোধের প্রকাশ আমরা দেখি ধর্মধাম বা শলোমনের মন্দির (মসজিদে আকসা) পরিষ্কার করার ঘটনায়। ‘‘ইহুদিদের উদ্ধার-ঈদের সময় কাছে আসলে পর ঈসা জেরুজালেমে গেলেন। তিনি সেখানে দেখলেন, লোকেরা বায়তুল মোকাদ্দসের মধ্যে গরু, ভেড়া আর কবুতর বিক্রি করছে এবং টাকা বদল করে দেবার জন্য লোকেরাও বসে আছে। এই সব দেখে তিনি দড়ি দিয়ে একটা চাবুক তৈরী করলেন, আর তা দিয়ে সমস্ত গরু, ভেড়া এবং লোকদেরও সেখান থেকে তাড়িয়ে দিলেন। টাকা বদল করে দেবার লোকদের টাকা-পয়সা ছড়িয়ে দিয়ে তিনি তাদের টেবিলগুলো উল্টে ফেললেন।’’  (যোহন/ ইউহান্না: ২/১৩-১৫, মো.-০৬)

কী কঠিন ক্রোধে যীশু এ কাজ করেছিলেন তা অনুধাবন করতে পাঠক একটু কল্পনা করুন। সকল খ্রিষ্টান চার্চের মধ্যে ও পাশে এবং আমাদের দেশেও ঈদ এবং ওয়ায মাহফিলের মাঠের মধ্যে বা পাশে অনুষ্ঠান বা পর্বের সময়ে বিস্কুট, চকলেট ও সাধারণ পণ্যের দোকান বসে। আপনি যদি দোকানগুলো ভেঙে দেন, টাকাপয়সা কেড়ে নিয়ে ছড়িয়ে দেন তবে প্রতিক্রিয়া কেমন হবে? এবং কাজটা আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন? মানুষের এভাবে হঠাৎ কষ্ট না দিয়েও কি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যেত না?

এরূপ আচরণের খারাপ প্রভাব বিশ্বাসী বা ভক্তের উপর পড়তে পারে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিটলার। তিনি একজন বিশ্বাসী খ্রিষ্টান হিসেবে যীশুকে তার অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন এবং এ ঘটনা-ই তার কর্মকাণ্ডর ভিত্তি বলে জানান। ১২ এপ্রিল ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তার বক্তৃতায় বলেন:

“My feelings as a Christian points me to my Lord and Savior as a fighter. It points me to the man who once in loneliness, surrounded only by a few followers, recognized these Jews for what they were and summoned men to fight against them and who, God's truth! was greatest not as a sufferer but as a fighter. In boundless love as a Christian and as a man I read through the passage which tells us how the Lord at last rose in His might and seized the scourge to drive out of the Temple the brood of vipers and adders.  How terrific was His fight for the world against the Jewish poison. To-day, after two thousand years, with deepest emotion I recognize more profoundly than ever before in the fact that it was for this that He had to shed His blood upon the Cross. As a Christian I have no duty to allow myself to be cheated, but I have the duty to be a fighter for truth and justice.... And if there is anything which could demonstrate that we are acting rightly it is the distress that daily grows. For as a Christian I have also a duty to my own people.... When I go out in the morning and see these men standing in their queues and look into their pinched faces, then I believe I would be no Christian, but a very devil if I felt no pity for them, if I did not, as did our Lord two thousand years ago, turn against those by whom to-day this poor people is plundered and exploited. "

‘‘একজন খ্রিষ্টান হিসেবে আমার অনুভূতি আমাকে শিক্ষা দেয় যে, আমার প্রভু ও ত্রাণকর্তা একজন যোদ্ধা ছিলেন। তা আমাকে শেখায়, সামান্য কয়েকজন শিষ্য পরিবেষ্টিত একজন একাকী মানুষ এ সকল ইহুদি কী তা চিনতে পেরেছিলেন। তিনি মানুষদেরকে ইহুদিদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আহবান করেছিলেন। এবং ঈশ্বরের সত্য হল তিনি যোদ্ধা হিসেবে সবচেয়ে বড় ছিলেন, যাতনা ভোগকারী হিসেবে নন। একজন মানুষ হিসেবে এবং একজন খ্রিষ্টান হিসেবে আমি সীমাহীন ভালবাসা নিয়ে সে কথাগুলো পাঠ করি, যেগুলো বলে যে, শেষ পর্যন্ত প্রভু কিভাবে তাঁর ক্ষমতায় উত্থিত হলেন এবং চাবুক তুলে নিলেন মন্দির থেকে কালসর্পের বাচ্চা ও সর্পের বংশধরদেরকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। ইহুদি বিষ থেকে বিশ্বকে মুক্ত করতে তাঁর যুদ্ধ ছিল অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। দু হাজার বছর পরে, আজ, গভীরতম আবেগ দিয়ে আমি অনুভব করছি- পূর্বের যে কোনো সময় থেকে অধিক প্রগাঢ়ভাবে- এ জন্যই তিনি ক্রুশের উপরে নিজের রক্ত ঢেলেছিলেন। একজন খ্রিষ্টান হিসেবে নিজেকে প্রতারিত হতে দেওয়ার কোনো দায়িত্ব আমার নেই। বরং আমার দায়িত্ব হল সত্য ও ন্যায়ের জন্য আমাকে যোদ্ধা হতে হবে। দৈনন্দিন ক্রমবর্ধমান বেদনাই প্রমাণ করছে যে, আমরা সঠিকভাবে কর্ম করছি। কারণ একজন খ্রিষ্টান হিসেবে আমার নিজের জনগণের প্রতিও আমার দায়িত্ব আছে। ... যখন আমি সকালে বের হই, লাইনে দাঁড়ানো মানুষগুলোকে দেখি এবং তাদের ক্লিষ্ট মুখগুলো দেখি তখন আমি বিশ্বাসে বলীয়ান হই যে, আমি যদি এদের জন্য বেদনা অনুভব না করি, দু হাজার বছর আগে আমাদের প্রভু যেভাবে যাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন, যাদের দ্বারা আজ এ সকল দরিদ্র মানুষ লুণ্ঠিত ও শোষিত সেই ইহুদিদের বিরুদ্ধে যদি সেভাবে না দাঁড়াই তবে আমি খ্রিষ্টান নই; বরং একান্তই শয়তান।’’[2]

বিশ্বাসী খ্রিষ্টান হিসেবে শব্দচয়নের ক্ষেত্রেও হিটলার যীশুর অনুসরণ করেছেন। তিনিও ইহুদিদেরকে ‘সাপ’ (vipers/ adders) বলেই আখ্যায়িত করেছেন।

[1] http://www.thegodmurders.com/id134.html; http://www.thegodmurders.com/id91.html
[2] http://www.nobeliefs.com/DarkBible/ darkbible6.htm; www.adolfhitler.ws/

যীশু বলেছেন: ‘‘যে আপন প্রাণ ভালবাসে সে তা হারায়; আর যে এই দুনিয়াতে আপন প্রাণ অপ্রিয় জ্ঞান করে (ঘৃণা করে: hate), সে অনন্ত জীবনের জন্য তা রক্ষা করবে।’’ (যোহন/ ইউহোন্না ১২/২৫, মো.-১৩)

এভাবে তিনি শিক্ষা দিচ্ছেন যে, জীবনের মায়া বা ভালবাসা অনন্ত মৃত্যুর কারণ এবং দুনিয়াতে নিজের জীবনকে ঘৃণা করা পরকালের অনন্ত জীবন লাভের পথ। কিন্তু এর বিপরীতে আমরা দেখছি যে, ইহুদিরা যখন যীশুকে হত্যা করার পরিকল্পনা শুরু করল তখন তিনি প্রকাশ্যে তাদের মধ্যে যাতায়াত বন্ধ করে দিলেন: ‘‘অতএব সেদিন থেকে তারা তাঁকে হত্যা করার পরামর্শ করত লাগল। তাতে ঈসা আর প্রকাশ্যরূপে ইহুদীদের মধ্যে যাতায়াত করলেন না...।’’ (যোহন ১১/৫৩-৫৪, মো.-১৩)

ইঞ্জিলের বর্ণনায় সুস্পষ্ট যে, তিনি ইহুদিদের হাতে ‘বধ’ হওয়ার ষড়যন্ত্র থেকে আত্মরক্ষার জন্য, অর্থাৎ ইহুদিদের ভয়ে এবং জীবনের মায়ায় প্রকাশ্যে যাতায়াত বন্ধ করে দেন। বিষয়টা খুবই বিস্ময়কর! নিজের জীবনকে ভালবাসলে অনন্ত জীবন হারাতে হবে বলে জানালেন যীশু, অথচ তিনিই নিজের জীবনের ভালবাসায় প্রকাশ্যে যাতায়াত বন্ধ করে দিলেন! বিষয়টা কি বিশ্বাসযোগ্য?

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 পরের পাতা »