৬. ৫. ৬. শাইখ আব্দুল কাদির জীলানীর নসীহত

আহলুস সুন্নাত ও আহলুল বিদ‘আত বিষয়ে শাইখ আব্দুল কাদির জীলানী রাহ. (৪৭১-৫৬১ হি) তাঁর গুনিয়াতুত তালিবীন গ্রন্থে নিম্নরূপ নসীহত করেছেন: ‘‘সতর্ক ও জ্ঞানী মু’মিন ব্যক্তির উচিত আল্লাহর বাণী আর রাসুলে খোদা (সা)-এর হাদিস সমুহের সাধারণ ও বাহ্যিক অর্থ অবগত হয়ে তদানুযায়ী আমল অর্থাৎ কাজ করা ও অনুগত থাকা। এ ব্যাপারে নতুন কথা প্রচার করা, মনগড়া কোন কিছু বলা, কথা কমবেশী করা ও নিজ ইচ্ছা মোতাবেক ব্যাখ্যা দেয়া নিতান্তই অনুচিত। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন, শরীআতে বেদআতের প্রচলন ও পথভ্রষ্টতার কোন অবকাশ না থাকে; কারণ এ পরিণামে ধ্বংস ডেকে আনে। ...

সূন্নাত ও জমাত: মূলত প্রত্যেক মু’মিন লোকের উপরে সূন্নাত ও জামা‘আতের অনুসরণ ওয়াজিব। সুন্নাত বলতে সেই পথ বুঝায়, প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) যে পথে জীবন অতিবাহিত করে গেছেন। আর জামা’ত বলতে চার খলিফা (রাঃ)-এর প্রদর্শিত পথ; তাদের খেলাফত কালে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত সিদ্ধান্তবলী। প্রকৃতপক্ষে তাঁরা সবাই ছিলেন সরল সঠিক পথের সন্ধানদাতা, এ কাজে তাঁদের যোগ্যতা প্রশ্নাতীত; কারণ তাঁদের পথের সন্ধান দেয়া হয়েছিল, (আল্লাহ্ তায়া’লা দিয়েছিলেন)।

আহলে বেদাত: ভাল হয় বেদাতী লোকজনের সাথে মেলামেশা বন্ধ করে দেয়া; তাদের সাথে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত না হওয়া; তাদের সালাম না করা। আমাদের ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, বেদাতবকারীকে সালাম করলে বুঝা যায়, তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব আছে। কেননা রাসুল (ﷺ) এরশাদ করেন, ‘তোমরা পরষ্পর সালাম দেয়ার প্রথা চালু কর, যাতে বন্ধুত্ব বৃদ্ধি পায় তোমাদের  মধ্যে।’ ....

বেদাতীদের চিহ্ন ও পরিচয়: কতিপয় চিহ্ন ও বৈশিষ্ট বিদ্যমান, যা দ্বারা আহলে বিদাতী মানুষকে চেনা সহজ। বেদাতী মানুষ হাদিসকে অবজ্ঞা করে। বেদাতী জেন্দিক গোত্র আহলে হাদিস (আহলুস সুন্নাহ) অর্থাৎ হাদিস অনুসারীদের মিথ্যাবাদী আখ্যা দেয়। ক্বাদরিয়া ফেরকা আখ্যা দেয় মুজাবিবরাহ। হাদিস অনুসারীদের মুশাবিবহাহ বলে জাহমিয়্যাহ গোত্র আর রাফেজিরা বলে নাসেবাহ। এ ধরণের অবজ্ঞা-সূচক নামকরণের কারণ হল, ঐ সকল বেদাতী দল হাদীস অনুসারীদের প্রতি শত্রুতা ও ঈর্ষা পোষণ করে থাকে। মূলত আহলে সূন্নাত তথা হাদিস অনুগামী ব্যক্তিদের পরিচয় একটা মাত্র নামেই, তা হল, আহলে হাদিস (অর্থাৎ আহলু সুন্নাহ)। এ ছাড়া অন্য নামে তারা আখ্যায়িত নন। বস্ত্তত বেদাতী মানুষ নিজেদের জন্য যে উপাধী (আহলে সুন্নাত) গ্রহণ করে থাকে তা ভিত্তিহীন, কেননা তাদের জীবন এর বিপরীত সাক্ষ্য দেয় । ...

মুক্তিপ্রাপ্ত দল: উল্লেখিত তেহাত্তর শ্রেণীর কথা রাসুলে মাকবুল (ﷺ) বলে গিয়েছেন। এদের মধ্যে মাত্র একটা শ্রেণী নাজাত অর্থাৎ মুক্তি লাভ করবে। এবং সেই দল হল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’ত। এ দলকে ক্বাদরিয়া ও মু’তাজিলা সম্প্রদায়ের লোক মুজাবিবরা নামে অভিহিত করে থাকে। কারণ হিসেবে বলে, এ দল মনে করে সমগ্র সৃষ্ট জগত আল্লাহ তায়া’লার ইচ্ছা ও শক্তির দ্বারাই উদ্ভূত। মুরজিয়া শ্রেণী উক্ত দলকে শাককিয়া নাম দেয়; কারণ তারা ঈমানে হ্রাস-বৃদ্ধি স্বীকার করে এবং তাদের প্রত্যেকেই বলে, ইনশা’ল্লাহ আমি একজন মু’মিন। রাফেজী শ্রেনী বলে, এ দল নাছাবিয়া, কেননা এ দলের নিয়ম দলের সমস্ত লোকের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে তারা ইমাম (রাষ্ট্রপ্রধান) মনোনীত করে থাকে। .... বাতেনিয়া শ্রেণী উক্ত দলকে বলে হাশাবিয়া। কারণ উক্ত দলের লোকজন  রাসুলে করিম (ﷺ)-এর হাদিস ও সাহাবায়ে কেরামদের জীবন অনুসরন করে থাকে। এ ভাবে আহলে সূন্নাত ওয়াল জামা’ত অর্থাৎ সূন্নাতের অনুসারী দলকে অন্যান্য শ্রেণীর মানুষেরা যেমন খুশী তেমন নাম দিয়েছে, অথচ তাদের প্রদত্ত কোন নামই এ দলের উপযুক্ত নয়, প্রযোজ্য হতে পারে না। প্রকৃত পক্ষে এ দলের যথার্থ ও সঠিক নাম আহলে সূন্নাত এবং আসহাবে হাদিস। তারা হাদিসের অনুসারী, রাসুলের অনুসারী হিসেবেই এ নাম পাওয়ার যোগ্য।[1]

[1] শাইখ আব্দল কাদির জীলানী, গুনিয়াতুত তালেবীন, বঙ্গানুবাদ, অনুবাদক: নুরুল আলম রইসী,পৃ. ১৯৭-১৯৯, ২১১। অনুবাদের বানানে সামান্য পরিবর্তন ও সাধু রীতির স্থলে চলতি রীতি ব্যবহার করা হয়েছে।