আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো কোন আমল সবচেয়ে উত্তম? তিনি বলেন:

«إِيمَانٌ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ» قِيلَ: ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ: «جِهَادٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ» قِيلَ: ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ: «حَجٌّ مَبْرُورٌ».

“আল্লাহ ও তার রাসূলের ওপর ঈমান”। বলা হলো অতঃপর কী? তিনি বললেন: “আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা”। বলা হলো অতঃপর কি? তিনি বললেন: “মাবরুর হজ”[1]।[2]

[1] সহীহ বুখারী হাদীস নং ১৫১৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৬।

[2] আহলে ইলমগণ মাবরুর হজের একাধিক অর্থ বর্ণনা করেছেন, সকল অর্থের সারমর্ম হচ্ছে: মাবরুর বলা হয় এমন হজকে, যার সকল বিধান যথাযথ পালন করা হয় এবং যে ইখলাস ও ইহসানের সাথে আদায় করার কথা সেভাবে আদায় করা হয়। কেউ বলেছেন: যে হজে কোনো পাপ সংগঠিত হয় না তাই মাবরুর হজ। কেউ বলেছেন: মাবরুর অর্থ খালিস, যে হজ খালিস আল্লাহর জন্য করা হয় তাই মাবরুর।

কেউ বলেছেন: মাবরুর অর্থ মাকবুল অর্থাৎ কবুল হজ। মাকবুল হজের কতক আলামত: ১. হজের পর ভালো কাজে অধিক নিবেদিত হওয়া। ২. ইবাদতের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া। ৩. অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থায় ফেরা। ৪. হজ থেকে ফিরে পাপে লিপ্ত না হওয়া।

হাসান বসরি রহ. বলেন: হাজীর দুনিয়া ত্যাগী ও আখিরাত মুখী হয়ে প্রত্যাবর্তন করা হজ কবুল হওয়ার আলামত। -অনুবাদক।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন:

يَا رَسُولَ اللَّهِ، نَرَى الْجِهَادَ أَفْضَلَ الْعَمَلِ، أَفَلَا نُجَاهِدُ؟، قَالَ: «لَا، لَكنَّ أَفْضَلَ الْجِهَادِ حَجٌّ مَبْرُورٌ».

“হে আল্লাহর রাসূল, আমরা তো জিহাদকে সর্বোত্তম আমল জ্ঞান করি, আমরা কি জিহাদ করবো না? তিনি বললেন: না, তোমাদের জন্য উত্তম জিহাদ মাবরুর হজ”।[1]

>
[1] সহীহ বুখারী হাদীস নং ১৫২০।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করি:

«يَا رَسُولَ اللَّهِ، عَلَى النِّسَاءِ جِهَادٌ ؟ قَالَ: «نَعَمْ، عَلَيْهِنَّ جِهَادٌ لَا قِتَالَ فِيهِ، الْحَجُّ وَالْعُمْرَةُ».

“হে আল্লাহর রাসূল, নারীদের ওপর কি জিহাদ আছে? তিনি বললেন: হ্যাঁ, তাদের ওপর জিহাদ আছে, তাতে মারামারি নেই, হজ ও উমরা”[1]।[2]

>
[1] আহমদ, হাদীস নং ২৩৯৪১; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৯০১; সহীহ ইবন খুযাইমাহ, হাদীস নং ২৮৭৭।

[2] শিক্ষণীয় বিষয়: ২ ও ৩ নং ফাতওয়ার বিষয় এক, দু’টি প্রশ্নই করেছেন আম্মাজান আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা। ফাতওয়া দু’টি থেকে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়:

ক. জিহাদের মর্যাদা, সাওয়াব ও ফযীলত নারী-পুরুষ সবার নিকট প্রসিদ্ধ ছিল।

খ. ইসলামের প্রথম যুগে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সর্বোত্তম আমল ও ফযীলত লাভ করার ক্ষেত্রে আগ্রহী ছিল।

গ. ইসলাম তার অনুসারীদের উপর সাধ্যাতীত দায়িত্ব অর্পণ করে না, নারীদের থেকে জিহাদ রহিত করা তার এক দৃষ্টান্ত।

ঘ. মুসলিমরা বীরের জাতি। জান্নাতের জন্য তাদের নারীরাও নিজেকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত।

ঙ. মাবরুর হজ ফযীলতপূর্ণ ও নারীদের জন্য জিহাদ সমতুল্য। -অনুবাদক।

জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, আমি ভীরু ও দুর্বল। তিনি তাকে বলেন: এমন জিহাদের দিকে অগ্রসর হও যেখানে ক্ষমতা প্রদর্শন নেই, আর তা হলো হজ”।[1]

[1] মু‘জামুল আওসাত লিত তাবরানী, হাদীস নং ৪২৮৭ ও ২৯১০; দারাকুতনি; বায়হাকি। আলবানি হাদিসটি সহীহ বলেছেন।

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেন, কোন হজ উত্তম? তিনি বলেন:

«الْعَجُّ وَالثَّجُّ»

“আজ্জু ও সাজ্জু”। তিরমিযী বলেনে হাদীসটি গরীব। আজ্জু অর্থ উচ্চস্বরে তালবিয়াহ পাঠ করা, আর সাজ্জু অর্থ কুরবানি করা।[1]

>
[1] ‘আজ্জু’ এর আভিধানিক অর্থ উচ্চস্বরে আওয়াজ করা। হজের ক্ষেত্রে আজ্জু অর্থ উচ্চস্বরে তালবিয়াহ পাঠ করা। কতক আভিধানিক তালবিয়ার সাথে দো‘আ ও ফরিয়াদকে যুক্ত করেছেন, অর্থাৎ আজ্জু অর্থ হজে উচ্চস্বরে তালবিয়া, দুআ ও আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করা। আর ‘সাজ্জু’ এর আভিধানিক অর্থ প্রবাহিত করা। হজের ক্ষেত্রে সাজ্জু অর্থ হাদি ও কুরবানির পশুর রক্ত প্রবাহিত করা। এ দু’টি ইবাদত হজের প্রাণ। আজ্জু ইবাদত আঞ্জাম দিতে হয় মুখ দিয়ে আর সাজ্জু ইবাদত আঞ্জাম দিতে হয় তামাত্তু ও কিরান হজকারীর ছুরি দিয়ে। -অনুবাদক।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, কিসে হজ ফরয করে? তিনি বললেন: “সম্বল ও সওয়ারী”।[1] হাদীসটি ইমাম তিরমিযী ইবন উমার সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন হাসান।

[1] এ প্রশ্নের উৎস কুরআনুল কারিমের একটি আয়াত, যেখানে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “মানুষের উপর আল্লাহর জন্য কাবার হজ্জ করা ফরয, যে সেখান পৌঁছতে সক্ষম”। আয়াতে সক্ষমতা বলতে কি বুঝায় সেটা জানার জন্য জনৈক সাহাবী প্রশ্ন করেছেন। সক্ষমতার ব্যাখ্যায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৌলিক দু’টি বিষয় উল্লেখ করেছেন: ১. সম্বল তথা খাবার, পরিধেয় বস্ত্র ও থাকার ব্যয়ভারের মালিকানা। ২. বায়তুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছার যানবাহন বা তার ভাড়ার মালিক হওয়া। এ দু’টি সক্ষমতা মানুষের উপর হজ ফরয করে।

আহল ইলমগণ সম্বল ও সওয়ারীর ব্যাখ্যাস্বরূপ আরো কিছু শর্ত যোগ করেছেন, যেমন সাবালক হওয়া, শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হওয়া, ব্যক্তির ওপর যাদের ভরণপোষণ ওয়াজিব হজ থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত তাদের ভরণপোষণ দিতে সক্ষম হওয়া এবং ফিরে এসে অবশিষ্ট অর্থ ও সম্পত্তি দিয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করার ক্ষমতা রাখা যেরূপ হজ করার পূর্বে ছিল। আর নারীর ক্ষেত্রে আরও একটি অতিরিক্ত শর্ত হচ্ছে, স্বামী বা অন্য কোনো মাহরাম সাথে থাকা জরুরি, যিনি তার সাথে হজ বা উমরার সফর সঙ্গী হবেন। এসব শর্তও দলীল দ্বারা প্রমাণিত। -অনুবাদক।

জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন: হে আল্লাহর রাসূল, আমার স্ত্রী হজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে, এ দিকে আমার নামও অমুক অমুক যুদ্ধে লিখা হয়েছে? তিনি বললেন: “যাও, তোমার স্ত্রীর সাথে হজ কর”।[1] ইবন আব্বাস থেকে বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেন।

[1] পুরো হাদীস নিম্নরূপ, ইবন আব্বাস নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেন:

«لا يخلون رجل بامرأة، ولا تسافرن امرأة وإلا معها محرم»، فقام رجل فقال: يا رسول الله اكتتبت في غزوة كذا وكذا، وخرجت امرأتي حاجة؟ قال: «اذهب فحج مع امرأتك».

“কোনো পুরুষ নারীর সাথে একাকীত্ব অবলম্বন করবে না এবং কোনো নারী মাহরাম ব্যতীত সফর করবে না, তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল: হে আল্লাহর রাসূল, আমার নাম অমুক অমুক যুদ্ধে লিখা হয়েছে, এ দিকে আমার স্ত্রীও হজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে? তিনি বললেন: যাও, তোমার স্ত্রীর সাথে হজ কর”। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

শাইখ ইবন বায রহ. বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিষেধাজ্ঞা “নারী কখনো মাহরাম ব্যতীত সফর করবে না” হজ ও গায়রে হজ সব সফরকে শামিল করে। অতএব সফরসঙ্গী পুরুষ মাহরাম ব্যতীত নারীর উপর হজ ফরয হবে না। কতক আহলে-ইলম বলেছেন: নারী নারীদের সাথে পুরুষ মাহরাম ব্যতীত হজ করতে পারবে যদি তাদের সাথে আমানতদার ব্যক্তিবর্গ থাকেন। তাদের এ কথার সপক্ষে কোনো দলিল নেই, বরং উল্লেখিত হাদিস তাদের বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে”। মাজমু ফাতাওয়া ইবন বায: (১৬/৩৮০) -অনুবাদক।

জনৈক নারী সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, যার স্বামী ও সম্পদ রয়েছে কিন্তু স্বামী তাকে হজের অনুমতি দেয় না? তিনি বললেন: “স্বামীর অনুমতি ব্যতীত তার যাত্রা করার সুযোগ নেই”।[1]

>
[1] দারাকুতনি, বায়হাকি ও তাবরানি ফিস সাগীর। দেখুন: তালখিসুর হাবির: (২/২৮৯)।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো ওমরা কি ওয়াজিব? তিনি বললেন: “না, তবে ওমরা উত্তম”।[1]

[1] ইমাম তিরমিযী জাবের থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেন, অতঃপর বলেন হাসান ও সহীহ। [তবে শাইখ আলবানী রহ. হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন। -সম্পাদক]

জনৈক নারী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, আপনার সাথে হজ করার সমতুল্য কি? তিনি বললেন: “রমযানে ওমরা করা”[1]।[2]

>
[1] আহমদ।

[2] হজের নির্দিষ্ট মাস ও দিন রয়েছে কিন্তু ওমরার তা নেই। ওমরা সারা বছর যখন ইচ্ছা করা যায়, তবে রমযান মাসের ওমরায় অনেক ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অন্যান্য মাসের ওমরায় নেই। আবু মাকাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত মুসনাদে আহমদ ও ইবনে মাজার হাদিস থেকে জানি রমযানের ওমরা হজের সমপরিমাণ। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে আরো ব্যাখ্যাসহ হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক আনসারী নারীকে বলেন: “কিসে তোমাকে বাঁধা দিয়েছে আমাদের সাথে হজ করনি?” সে বলল: আমাদের দু’টি উট ছিল, একটির উপর অমুকের বাবা ও তার ছেলে যাত্রা করেছে। অপরটি আমাদের জন্য রেখে গেছে, আমরা তা দিয়ে কৃষি জমি সেচ করতাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

«فإذا كان رمضان اعتمري فيه، فإن عمرةً في رمضان حجة».

“যখন রমযান আসবে ওমরা কর, কারণ রমযানের ওমরা হজ”। নবীর সাথে হজ করতে না পারা নারীকে তিনি রমযানে ওমরা করার নির্দেশ দিচ্ছেন যেন হজের বরাবর সাওয়াব হাসিল হয়। এতে আশ্চর্যের কিছু নেই, কারণ রমযান মাস কল্যাণের মাস, তাই রমযানের ওমরা হজের সমান হওয়া অস্বাভাবিক নয়, তবে তার দ্বারা হজের ফরজ আদায় হবে না। এ জাতীয় ফজিলতের উদাহরণ, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«من قرأ "قل هو الله أحد" فقد قرأ ثلث القرآن». متفق عليه.

“যে সূরা ইখলাস পাঠ করল, সে কুরআনুল কারীমের এক তৃতীয়াংশ পাঠ করল”। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম) অনুরূপ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«صلاة في مسجدي -أي المسجد النبوي- أفضل من ألف صلاة فيما سواه إلا المسجد الحرام، وصلاة في المسجد الحرام أفضل من مئة ألف صلاة فيما سواه».

“আমার মসজিদে এক সালাত অন্যান্য মসজিদে এক হাজার সালাত থেকে উত্তম মসজিদে হারাম ব্যতীত, আর মসজিদে হারামে এক সালাত অন্যান্য মসজিদে এক শো হাজার সালাত থেকে উত্তম”। (আহমদ ও ইবন মাজাহ)।

এসব ফযীলতের অর্থ এটা নয় যে, নবীর মসজিদে এক সালাত এক হাজার সালাতের মোকাবিলায় যথেষ্ট, অতএব পরবর্তী এক হাজার সালাত না পড়লেও হবে, এরূপ অর্থ কেউ বুঝে না। রমযানের ওমরা হজের বরাবর অর্থ সাওয়াবের ক্ষেত্রে বরাবর, সুতরাং রমযানের ওমরা ফরয হজের মোকাবেলায় যথেষ্ট নয়। এ জাতীয় হাদীস দ্বারা উৎসাহ প্রদান ও আল্লাহর অনুগ্রহের পরিমাণ বুঝানো উদ্দেশ্য। হজ ওমরা থেকে উত্তম সন্দেহ নেই, রমযানের ওমরায় হজের সমপরিমাণ সাওয়াব আছে, কিন্তু হজের যে বৈশিষ্ট্য, ফযীলত ও মর্যাদা রয়েছে যেমন আরাফা ও রমির দো‘আ করা, নহর করা, ইত্যাদি ওমরাতে কোথায়? -অনুবাদক।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫৭ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 পরের পাতা »