ফল ও ফসলের যাকাত সংক্রান্ত বিভিন্ন মাসআলা:

১. ফসলের মালিকের ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে, চাষি জমির মালিক হোক বা বৈধ চুক্তিতে অপরের জমি চাষ করুক, যেমন ভাড়া বা হেবা অথবা অবৈধভাবে তাতে চাষ করুক যেমন জবরদখল। যদি জমির মালিক ও চাষির মাঝে চাষবাসের চুক্তি হয়, যেমন চুক্তি করল: জমির মালিক জমি দিবে, চাষি চাষ করার যাবতীয় খরচ বহন করবে, যেমন চাষ করা, পানি দেওয়া, কাঁটা ও সংগ্রহ করা ইত্যাদি, তারপর চুক্তি মোতাবেক উভয় ফসল ভাগ করবে। যদি বণ্টন শেষে দু’জনের অংশ যাকাতের নিসাব পরিমাণ না হয় যাকাত ওয়াজিব হবে না, কারণ ফসলের যাকাতে যৌথ মালিকানার প্রভাব নেই, পশুর বিষয়টি ব্যতিক্রম, যেমন পূর্বে বলেছি, এটিই বিশুদ্ধ মত।

২. যে ফল ও ফসলে যাকাত ওয়াজিব হয়, সেই ফল ও ফসল যদি পাঁচ ওসাক হয় যাকাত ওয়াজিব হবে। পাঁচ ওসাক পূর্ণ করার জন্য এক ফসল অপর ফসলের সাথে যোগ করবে না। অতএব, খেজুরের সাথে কিশমিশ কিংবা যবের সাথে গম যোগ করবে না। যখন যেই প্রকার নিসাব পরিমাণ হবে তখন সেই প্রকারের যাকাত দিবে। যদি একই প্রকার ফসল বিভিন্ন জাতের হয়, তখন এক জাত অপর জাতের যোগ করবে, যেমন কাঁচা, আধা পাকা ও পাকা খেজুর, একটি অপরটির সাথে যোগ করে হিসেব করবে।

৩. এক প্রকার ফসল পাঁচ ওসাক হলে যাকাত ওয়াজিব হবে। যদি মালিক একজন হয় এক বা একাধিক ক্ষেতের ফসল যোগ করবে, ক্ষেতের মধ্যবর্তী দূরত্ব যাই হোক, যদি পাঁচ ওসাক হয় যাকাত দিবে। অনুরূপ কেউ গ্রীষ্মকালে ফসল করেছে, যা নিসাব পরিমাণ হয় নি, আবার বসন্তকালে একই ফসল করেছে, উভয় মৌসুমের ফসল যদি যৌথভাবে নিসাব পরিমাণ হয় এক-দশমাংশ যাকাত দিবে, কারণ বছর এক।

৪. জমি চাষ করতে যে অর্থ ব্যয় হয়, যেমন চাষ করা, ফসল কাটা, সংগ্রহ করা, মেশিন লাগানো, পানির কুপ খনন ও প্রণালি তৈরি করা ইত্যাদি যাকাত থেকে নিবে কি না?

আহলে ইলমদের বিশুদ্ধ মাযহাব, -অধিকাংশ আলিমও বলেছেন- যদি চাষি চাষ করার জন্য ঋণ করে, তাহলে ঋণের পরিমাণ যাকাত থেকে পরিশোধ করবে। চাষি যদি নিজ থেকে খরচ করে এবং সে ঋণগ্রস্ত নয়, চাষের খরচ যাকাত থেকে নিবে না। এটি একটি বিষয়।

ইমাম খাত্তাবী রহ. বলেছেন: “চাষি যদি নির্দিষ্ট খরচ দিয়ে কুপ খনন ও নালা-প্রণালা তৈরি করে, অতঃপর তা নষ্ট হয় ও পানি কমে যায় এবং পুনরায় নতুন খরচে কুপ খনন করা জরুরি হয়, তবে চাষি এক-দশমাংশের অর্ধেক অর্থাৎ বিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিবে। এটি মালিকের প্রতি এক প্রকার সহানুভূতি।[1]

৫. ফসল সংগ্রহ ও মাপার সময় চাষি, চাষির পরিবার ও চতুষ্পদ জন্তু যা খায় বা দুর্বলরা নেয় বা কাটার সময় সদকা করে সেগুলো চাষির থেকে গুনবে না।

৬. ইবন কুদামাহ রহ. বলেছেন: যদি টাকার বিনিময়ে সেচ করে বছরের প্রথম অর্ধেকে একটি ফসল তুলে, যা নিসাব পরিমাণ নয়। অতঃপর বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিনা খরচে একই ফসল করে এবং দুই বারের ফসল যৌথভাবে নিসাব পরিমাণ হয়, তাহলে যাকাত ওয়াজিব হবে। যাকাতের পরিমাণ: এক-দশমাংশের তিন চতুর্থাংশ।[2] অর্থাৎ মোট ফসলের ৭.৫% যাকাত দিবে।[3]

৭. কারও দু’টি বাগান একটি অর্থ দিয়ে অপরটি অর্থ ছাড়া সেচ করে, নিসাব হিসেব করার সময় দুই বাগানের ফসল যোগ করবে, অতঃপর যে বাগান বিনা অর্থে সেচ করে তার এক-দশমাংশ যাকাত দিবে, অর্থাৎ ফসলের ১০%, আর যে বাগান অর্থ দিয়ে সেচ করে তার এক দশমাংশের অর্ধেক অর্থাৎ বিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিবে, যা মোট ফসলের ৫%।

৮. এক ফসলে যখন একবার উশর তথা এক-দশমাংশ যাকাত ওয়াজিব হয়, সেই ফসলে দ্বিতীয়বার উশর ওয়াজিব হবে না, তার ওপর দিয়ে যত বছর অতিক্রম করুক, তার উদাহরণ: জনৈক চাষির এক বছর থেকেও অধিক সময় ধরে একটি ফসল আছে, যার যাকাত সে একবার দিয়েছে, কিন্তু তার নিসাব কমে নি, দ্বিতীয়বার এই ফসলে যাকাত ওয়াজিব হবে না, তবে ফসলের কোনো অংশ যদি ব্যবসার জন্য নির্ধারিত করে, সে অংশ ব্যবসায়ী পণ্যের অন্তর্ভুক্ত হবে। তার ওপর বছর পূর্ণ হলে ব্যবসায়ী পণ্য হিসেবে যাকাত দিবে, যেমন পূর্বে আলোচনা করেছি।[4]

৯. ইবন উসাইমীন রহ. বলেন: “কাউকে বলা হল, এই ক্ষেতের ফসল তুলো, বিনিময়ে তুমি এক তৃতীয়াংশ নিবে, আর তোমার মালিক নিবে দুই-তৃতীয়াংশ। যদি এই শর্তে সে ফসল তোলে তার এক-তৃতীয়াংশে যাকাত ওয়াজিব হবে না, যদিও তা পাঁচ ওসাক অর্থাৎ নিসাব পরিমাণ হয়। কারণ, যখন যাকাত ওয়াজিব হয়েছে তখন সে ফসলের মালিক ছিল না, মালিক হয়েছে ফসল তোলার পর।[5]

>
[1] মাআলিমুস সুনান: (২/৭০২)।

[2] একশ‘ কেজির একদশমাংস ১০ কেজি, এই ১০ কেজির তিন চতুর্থাংশ ৭.৫ কেজি। অতএব এরূপ ফসল থেকে একশ‘ কেজি থেকে ৭.৫ কেজি যাকাত দিবে। -অনুবাদক।

[3] আল-মুগনি: (২/৬৯৯)।

[4] আল-মুগনি: (২/৭০২)।

[5] আশ-শারহুল মুমতি‘: (৬/৭৯)।