-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১. নিশ্চয় আমরা কুরআন নাযিল করেছি(১) লাইলাতুল কদরে(২);
(১) এখানে বলা হয়েছে, আমি কদরের রাতে কুরআন নাযিল করেছি। আবার অন্যত্র বলা হয়েছে, “রমযান মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে।” [সূরা আল-বাকারাহ: ১৮৫] এ থেকে জানা যায়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে হেরা গুহায় যে রাতে আল্লাহর ফেরেশতা অহী নিয়ে এসেছিলেন সেটি ছিল রামাদান মাসের একটি রাত। এই রাতকে এখানে কদরের রাত বলা হয়েছে। সূরা দোখানে এটাকে মুবারক রাত বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, “অবশ্যি আমরা একে একটি বরকতপূর্ণ রাতে নাযিল করেছি।” [সূরা আদ-দুখান: ৩]
এ আয়াত থেকে পরিষ্কার জানা যায় যে, কুরআন পাক লাইলাতুল-কদরে অবতীর্ণ হয়েছে। এর এক অর্থ এই যে, সমগ্র কুরআন লওহে মাহফুয থেকে লাইলাতুল-কদরে অবতীর্ণ করা হয়েছে, অতঃপর জিবরীল একে ধীরে ধীরে তেইশ বছর ধরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে পৌছাতে থাকেন। দ্বিতীয় অর্থ এই যে, এ রাতে কয়েকটি আয়াত অবতরণের মাধ্যমে কুরআন অবতরণের ধারাবাহিকতা সূচনা হয়ে যায়। এরপর অবশিষ্ট কুরআন পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে পূর্ণ তেইশ বছরে নাযিল করা হয়। [আদওয়াউল বায়ান]
(২) কুরআন মাজীদের সুস্পষ্ট বর্ণনা দ্বারা একথা প্রমাণিত হয় যে, লাইলাতুল-কদর রামাদান মাসে। কিন্তু সঠিক তারিখ সম্পর্কে আলেমগণের বিভিন্ন উক্তি রয়েছে যা সংখ্যায় চল্লিশ পর্যন্ত পৌছে। এ-সব উক্তির নির্ভুল তথ্য এই যে, লাইলাতুল-কদর রামাদান মাসের শেষ দশ দিনের মধ্যে আসে; কিন্তু এরও কোন তারিখ নির্দিষ্ট নেই; বরং যে কোন রাত্রিতে হতে পারে। আবার প্রত্যেক রামাদানে তা পরিবর্তিতও হতে পারে। সহীহ হাদীসদৃষ্টি এই দশ দিনের বেজোড় রাত্রিগুলোতে লাইলাতুল-কদর হওয়ার সম্ভাবনা অধিক।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “রামাদানের শেষ দশকে লাইলাতুল-কদর অন্বেষণ কর।” [বুখারী: ২০২১] অন্য বর্ণনায় আছে “তোমরা তা শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলোতে তালাশ কর।” [বুখারী: ২০২০, মুসলিম: ১১৬৯, তিরমিযী: ৭৯২] সুতরাং যদি লাইলাতুল-কদরকে রামাদানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলোতে ঘূর্ণায়মান এবং প্রতি রামাদানে পরিবর্তনশীল মেনে নেয়া যায়, তবে লাইলাতুল-কদরের দিন-তারিখ সম্পর্কিত হাদীসসমূহের মধ্যে কোন বিরোধ অবশিষ্ট থাকে না। এটিই প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত। [ইবন হাজার: ফাতহুল বারী, ৪/২৬২–২৬৬]
তাফসীরে জাকারিয়া১। নিশ্চয়ই আমি এ (কুরআন)কে অবতীর্ণ করেছি মর্যাদাপূর্ণ রাত্রিতে (শবেকদরে)। [1]
[1] অর্থাৎ, এই রাতে তা (কুরআন) অবতীর্ণ আরম্ভ করেছেন। অথবা তা ‘লাওহে মাহ্ফূয’ হতে দুনিয়ার আসমানে অবস্থিত ‘বাইতুল ইযযাহ’তে এক দফায় অবতীর্ণ করেছেন। আর সেখান থেকে প্রয়োজন মোতাবেক নবী (সাঃ) এর উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং তা ২৩ বছরে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। জ্ঞাতব্য যে, ‘লাইলাতুল কদর’ রমযান মাসেই হয়ে থাকে; অন্য কোন মাসে নয়। এর প্রমাণ, মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘‘রমযান মাস; যাতে কুরআনকে অবতীর্ণ করা হয়েছে।’’ (সূরা বাক্বারাহ ১৮৫ নং আয়াত)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২. আর আপনাকে কিসে জানাবে লাইলাতুল কদর কী?
-
তাফসীরে জাকারিয়া২। আর কিসে তোমাকে জানাল, মর্যাদাপূর্ণ রাত্রি কি? [1]
[1] এখানে প্রশ্নবাচক শব্দ ব্যবহার করে এই রাতের মর্যাদা ও গুরুত্ব অধিকরূপে ব্যক্ত করা হয়েছে। যেন সৃষ্টি এর সুগভীর রহস্য পূর্ণরূপে জানতে সক্ষম নয়। একমাত্র আল্লাহই এ ব্যাপারে পূর্ণরূপ অবগত।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।(১)
(১) মুফাস্সিরগণ এর অর্থ করেছেন, এ রাতের সৎকাজ কদরের রাত নেই এমন হাজার মাসের সৎকাজের চেয়ে ভালো। [মুয়াসসার] এ শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীসেও বিস্তারিত বলা হয়েছে। হাদীসে এসেছে, রামাদান আগমনকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তোমাদের নিকট রামাদান আসন্ন। মুবারক মাস। আল্লাহ্ এর সাওম ফরয করেছেন। এতে জান্নাতের দরজাসমূহ খোলা হয়ে থাকে এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানগুলোকে বেঁধে রাখা হয়। এতে এমন এক রাত রয়েছে যা হাজার মাস থেকেও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাত্রির কল্যান থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সে তো যাবতীয় কল্যান থেকে বঞ্চিত হলো।” [নাসায়ী: ৪/১২৯, মুসনাদে আহমাদ: ২/২৩০, ৪২৫]
অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে কেউ ঈমান ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদর রাত্রিতে সালাত আদায় করতে দাঁড়াবে তার পূর্ববর্তী সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।” [বুখারী: ১০৯১, মুসলিম: ৭৬০, আবু দাউদ: ১৩৭২, নাসায়ী: ৮/১১২, তিরমিযী: ৮০৮, মুসনাদে আহমাদঃ ২/৫২৯]
তাফসীরে জাকারিয়া৩। মর্যাদাপূর্ণ রাত্রি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। [1]
[1] অর্থাৎ, এক রাত্রির ইবাদত হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা উত্তম। আর হাজার মাসে ৮৩ বছর ৪ মাস হয়। উম্মতে মুহাম্মাদিয়ার উপর কত বড় আল্লাহর অনুগ্রহ যে, তিনি তাকে তার সংক্ষিপ্ত আয়ুষ্কালে অধিকাধিক সওয়াব অর্জন করার সহজ পন্থা দান করেছেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. সে রাতে ফিরিশতাগণ ও রূহ নাযিল হয়(১) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত(২) নিয়ে।
(১) الروح বলে কি বুঝানো হয়েছে মতপার্থক্য থাকলেও প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত হলো এর দ্বারা জিবরীলকে বোঝানো হয়েছে। জিবরীল আলাইহিস সালামের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার কারণে সমস্ত ফেরেশতা থেকে আলাদা করে তার উল্লেখ করা হয়েছে। জিবরীলের সাথে ফেরেশতারাও সে রাত্ৰিতে অবতরণ করে। [ফাতহুল কাদীর] হাদীসে আছে, “লাইলাতুল-কদরের রাত্রিতে পৃথিবীতে ফেরেশতারা এত বেশী অবতরণ করে যে, তাদের সংখ্যা পাথরকুচির চেয়েও বেশী।” [মুসনাদে আহমাদ: ২/৫১৯, মুসনাদে তায়ালাসী: ২৫৪৫]
(২) সকল সিদ্ধান্ত বা প্রত্যেক হুকুম বলতে অন্যত্র বর্ণিত “আমরে হাকীম” (বিজ্ঞতাপূর্ণ কাজ) [সূরা আদ-দোখান: ৪] বলতে যা বুঝানো হয়েছে তার কথাই এখানে বলা হয়েছে। অর্থাৎ ফেরেশতাগণ শবে-কদরে সারা বছরের অবধারিত ঘটনাবলী নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করে। কোন কোন তাফসীরবিদ একে سلام এর সাথে সম্পর্কযুক্ত করে এ অর্থ করেছেন যে, এ রাত্রিটি যাবতীয় অনিষ্ট ও বিপদাপদ থেকে শান্তিস্বরূপ। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া৪। ঐ রাত্রিতে ফিরিশতাগণ ও রূহ (জিবরীল) অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। [1]
[1] এখানে ‘রূহ’ বলে জিবরীল (আঃ)-কে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, জিবরীল (আঃ) সহ ফিরিশতাগণ এই রাতে ঐ সকল কর্ম আঞ্জাম দেওয়ার উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে অবতরণ করেন, যা আল্লাহ এক বছরের জন্য ফায়সালা করে থাকেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. শান্তিময়(১) সে রাত, ফজরের আবির্ভাব পর্যন্ত।(১)
(১) অর্থাৎ সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত সারাটা রাত শুধু শান্তিই শান্তি, মঙ্গলই মঙ্গল তথা কল্যাণে পরিপূর্ণ। সে রাত্র সর্বপ্রকার অনিষ্ট থেকে মুক্ত। [তাবারী]
(২) অৰ্থাৎ লাইলাতুল-কদরের এই বরকত রাত্রির শুরু অর্থাৎ সূর্যাস্তের পর হতে ফজরের উদয় পর্যন্ত বিস্তৃত। [সা’দী]
তাফসীরে জাকারিয়া৫। শান্তিময়[1] সেই রাত্রি ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত।
[1] অর্থাৎ এতে কোন প্রকার অমঙ্গল নেই। অথবা এই অর্থে ‘শান্তিময়’ যে, মু’মিন এই রাতে শয়তানের অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকে। অথবা ‘সালাম’-এর অর্থ প্রচলিত ‘সালাম’ই। যেহেতু এ রাতে ফিরিশতাগণ ঈমানদার ব্যক্তিদেরকে সালাম পেশ করেন। কিংবা ফিরিশতাগণ আপোসে এক অপরকে সালাম দিয়ে থাকেন।
শবেকদর রাত্রের জন্য নবী (সাঃ) খাস দু’আ বলে দিয়েছেনঃ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউবুন তুহিব্বুল আফ্ওয়া ফা’ফু আন্নী।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে পছন্দ কর। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। (তিরমিযী দা’ওয়াত পরিচ্ছেদ, ইবনে মাজাহ দু’আ অধ্যায়, দু’আ বিল্আফবে ওয়াল আফিইয়াহ পরিচ্ছেদ।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান