৮৮ : ১
هَلۡ اَتٰىكَ حَدِیۡثُ الۡغَاشِیَۃِ ؕ﴿۱﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১. আপনার কাছে কি আচ্ছন্নকারীর (কিয়ামতের) সংবাদ এসেছে?
-
তাফসীরে জাকারিয়া১। তোমার কাছে কি সমাচ্ছন্নকারী (কিয়ামতে)র সংবাদ এসেছে? [1]
[1] هَل শব্দটি قَد শব্দের অর্থে ব্যবহার হয়েছে। (অর্থাৎ, অবশ্যই তোমার কাছে সমাচ্ছন্নকারী কিয়ামতের সংবাদ এসেছে।) غاشِيَة (সমাচ্ছন্নকারী) বলে কিয়ামতকে বোঝানো হয়েছে। এই জন্য যে, তার ভয়াবহতা সারা সৃষ্টিকে সমাচ্ছন্ন করে ফেলবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৮৮ : ২
وُجُوۡهٌ یَّوۡمَئِذٍ خَاشِعَۃٌ ۙ﴿۲﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২. সেদিন অনেক চেহারা হবে অবনত(১),
(১) কিয়ামতে মুমিন ও কাফের আলাদা আলাদা বিভক্ত দু' দল হবে এবং মুখমণ্ডল দ্বারা পৃথকভাবে পরিচিত হবে। এই আয়াতে কাফেরদের মুখমণ্ডলের এক অবস্থা এই বর্ণিত হয়েছে যে, তা خَاشِعَةٌ অর্থাৎ হেয় হবে। خشوع শব্দের অর্থনত হওয়া ও লাঞ্ছিত। হওয়া। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া২। সেদিন বহু মুখমন্ডল হবে লাঞ্ছিত; [1]
[1] অর্থাৎ, কাফেরদের মুখমন্ডল। خَاشِعَة অর্থ হল অবনত, বিনীত বা লাঞ্ছিত। যেমন, নামাযী নামাযের অবস্থায় আল্লাহর সামনে মিনতির সাথে বিনীত থাকে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৮৮ : ৩
عَامِلَۃٌ نَّاصِبَۃٌ ۙ﴿۳﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. ক্লিষ্ট, ক্লান্ত(১),
(১) দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থা হবে (عَامِلَةٌ نَاصِبَةٌ) বাকপদ্ধতিতে অবিরাম কর্মের কারণে পরিশ্রান্ত ব্যক্তিকে عَامِلَةٌ এবং ক্লান্ত ও ক্লিষ্ট ব্যক্তিকে বলা হয় نَاصِبَةٌ। [ফাতহুল কাদীর] কাফেরদের এ অবস্থা কখন হবে? এ নিয়ে কয়েকটি মত রয়েছে। কোন কোন মুফাসসিরের মতে, কাফেরদের এ দুরাবস্থা দুনিয়াতেই হবে। কেননা, আখেরাতে কোন কর্ম ও মেহনত নেই। [ফাতহুল কাদীর] কেননা, অনেক কাফের দুনিয়াতে মুশরিকসুলভ ইবাদত এবং বাতিল পন্থায় অধ্যবসায় ও সাধনা করে থাকে। হিন্দু যোগী ও নাসারা পাদ্রী অনেক এমন আছে, যারা আন্তরিকতা সহকারে আল্লাহ্ তা'আলারই সন্তুষ্টির জন্যে দুনিয়াতে ইবাদত ও সাধনা করে থকে এবং এতে অসাধারণ পরিশ্রম স্বীকার করে। কিন্তু এসব ইবাদত মুশরিকসুলভ ও বাতিল পন্থায় হওয়ার কারণে আল্লাহর কাছে সওয়াব ও পুরস্কার লাভের যোগ্য হয় না।
অতএব, তাদের মুখমণ্ডল দুনিয়াতেও ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত রইল এবং আখেরাতে তাদেরকে লাঞ্ছনা ও অপমানের অন্ধকার আচ্ছন্ন করে রাখবে। খলীফা ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন শাম সফর করেন তখন জনৈক নাসারা বৃদ্ধ পাদ্ৰী তাঁর কাছ দিয়ে যেতে দেখলেন। সে তাঁর ধর্মীয় ইবাদত সাধনা ও মোজাহাদায় এত বেশী আত্মনিয়োগ করেছিল যে, অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে চেহারা বিকৃত এবং দেহ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল। তার পোশাকের মধ্যেও কোন শ্ৰী ছিল না। খলীফা তাকে দেখে অশ্রু সংবরণ করতে পারলেন না। ক্ৰন্দনের কারণ জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বললেনঃ এই বৃদ্ধার করুণ অবস্থা দেখে আমি ক্ৰন্দন করতে বাধ্য হয়েছি। বেচারী স্বীয় লক্ষ্য অজর্নের জন্যে জীবনপণ পরিশ্রম ও সাধনা করেছে কিন্তু সে তার লক্ষ্য অজর্নে ব্যর্থ হয়েছে এবং আল্লাহর সন্তুটি অর্জন করতে পারেনি। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন। [ইবন কাসীর]
কাতাদাহ রাহেমাহুল্লাহর মতে, তাদের অবিরাম কষ্ট ও ক্লান্তি দু’টোই আখেরাতে হবে। সে হিসেবে আয়াতের অর্থ, যারা দুনিয়াতে আল্লাহর ইবাদত করতে অহংকার করেছিল তাদেরকে সেদিন কর্মে খাটানো হবে এবং তাদেরকে জাহান্নামে প্রতিষ্ঠিত করা হবে; এমতাবস্থায় যে তারা তাদের ভারী জিঞ্জির ও ভারী বোঝাসমূহ বহন করতে থাকবে। অনুরূপভাবে তারা হাশরের মাঠের সে বিপদসংকুল সময়ে নগ্ন পা ও শরীর নিয়ে কঠিন অবস্থায় অবস্থান করতে থাকবে, যার পরিমান হবে পঞ্চাশ হাজার বছর। হাসান বসরী ও সাঈদ ইবনে জুবাইর রাহেমাহুমাল্লাহ বলেন, তারা যেহেতু দুনিয়াতে আল্লাহর জন্য কোন নেক আমল করেনি, সেহেতু সেখানে তারা জাহান্নামে কঠিন খাটুনি ও কষ্ট করবে। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, তাদেরকে কঠিন কঠিন পাহাড়ে ওঠা-নামার কাজে লাগানো হবে। পরে কষ্ট ও ক্লান্তি উভয়টিরই সম্মুখীন হবে। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া৩। কর্মক্লান্ত পরিশ্রান্ত। [1]
[1] ناصِبَة ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত। অর্থাৎ, তাদের আযাব এমন কষ্টদায়ক হবে যে, তাতে তাদের অবস্থা খুবই করুণ হবে। এর দ্বিতীয় অর্থ এটাও নেওয়া যেতে পারে যে, দুনিয়াতে আমল করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ, তারা অনেক অনেক আমল করেছে। কিন্তু সে সব আমল বাতিল ধর্ম অনুযায়ী অথবা বিদআত ভিত্তিক হবে। আর এ জন্যই ‘ইবাদত’ ও ‘ক্লান্তকর আমল’ মওজুদ থাকা সত্ত্বেও তারা জাহান্নামে যাবে। এই অর্থানুযায়ী ইবনে আব্বাস (রাঃ) عامِلَة نَاصِبَة শব্দ থেকে উদ্দেশ্য ‘খ্রিষ্টান’ বুঝিয়েছেন। (সহীহ বুখারী সূরা গাশিয়ার ব্যাখ্যা পরিচ্ছেদ)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৮৮ : ৪
تَصۡلٰی نَارًا حَامِیَۃً ۙ﴿۴﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. তারা প্রবেশ করবে জ্বলন্ত আগুনে(১);
(১) حامية শব্দের অর্থ গরম উত্তপ্ত। অগ্নি স্বাভাবতই উত্তপ্ত। এর সাথে উত্তপ্ত বিশেষণ যুক্ত করা এ কথা বলার জন্যে যে, এই অগ্নির উত্তাপ দুনিয়ার অগ্নির ন্যায় কোন সময় কম অথবা নিঃশেষ হয় না। বরং এটা চিরন্তন উত্তপ্ত। সে আগুন তাদেরকে সবদিক থেকে ঘিরে ধরবে। [সা’দী]
তাফসীরে জাকারিয়া৪। তারা প্রবেশ করবে জ্বলন্ত অগ্নিতে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৮৮ : ৫
تُسۡقٰی مِنۡ عَیۡنٍ اٰنِیَۃٍ ؕ﴿۵﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. তাদেরকে অত্যন্ত উষ্ণ প্রস্রবণ থেকে পান করানো হবে;
-
তাফসীরে জাকারিয়া৫। তাদেরকে উত্তপ্ত প্রস্রবণ হতে (পানি) পান করানো হবে। [1]
[1] এখানে ‘উত্তপ্ত পানি’ বলে অত্যন্ত গরম ফুটন্ত পানিকে বোঝানো হয়েছে, যার উষ্ণতা শেষ পর্যায়ে পৌঁছে থাকে। (ফতহুল ক্বাদীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৮৮ : ৬
لَیۡسَ لَهُمۡ طَعَامٌ اِلَّا مِنۡ ضَرِیۡعٍ ۙ﴿۶﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬. তাদের জন্য খাদ্য থাকবে না কাঁটাযুক্ত গুল্ম ছাড়া(১),
(১) ضَرِيعٌ শব্দের অর্থ করা হয়েছে, কাঁটাযুক্ত গুল্ম। অর্থাৎ জাহান্নামীরা কোন খাদ্য পাবে না কেবল এক প্রকার কণ্টকবিশিষ্ট ঘাস। পৃথিবীর মাটিতে এ ধরনের গুল্ম ছড়ায়। দুৰ্গন্ধযুক্ত বিষাক্ত কাঁটার কারণে জন্তু-জানোয়ার এর ধারে কাছেও যায় না। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত যে, ضَرِيعٌ হচ্ছে জাহান্নামের একটি গাছ। যা খেয়ে কেউ মোটা তাজা হবে না এবং এতে ক্ষুধা থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে না। [ফাতহুল কাদীর]
লক্ষণীয় যে, কুরআন মজীদে কোথাও বলা হয়েছে, জাহান্নামের অধিবাসীদের খাবার জন্য “যাক্কূম” দেয়া হবে। কোথাও বলা হয়েছে, “গিস্লীন” (ক্ষতস্থান থেকে ঝরে পড়া তরল পদাৰ্থ) ছাড়া তাদের আর কোন খাবার থাকবে না। আর এখানে বলা হচ্ছে, তারা খাবার জন্য কাঁটাওয়ালা শুকনো ঘাস ছাড়া আর কিছুই পাবে না। এ বর্ণনাগুলোর মধ্যে মূলত কোন বৈপরীত্য নেই। এর অর্থ এও হতে পারে যে, জাহান্নামের অনেকগুলো পর্যায় থাকবে। বিভিন্ন অপরাধীকে তাদের অপরাধ অনুযায়ী সেই সব পর্যায়ে রাখা হবে। তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের আযাব দেয়া হবে। আবার এর অর্থ এও হতে পারে যে, তারা “যাক্কূম” খেতে না চাইলে “গিস্লীন” পাবে এবং তা খেতে অস্বীকার করলে কাটাওয়ালা ঘাস ছাড়া আর কিছুই পাবে না। মোটকথা, তারা কোন মনের মতো খাবার পাবে না। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া৬। তাদের জন্য বিষাক্ত কণ্টক ব্যতীত কোন খাদ্য নেই। [1]
[1] ضَرِيع এক প্রকার কাঁটাদার বৃক্ষ যা শুকিয়ে গেলে পশুরাও ভক্ষণ করতে অপছন্দ করে। মোট কথা, এটাও যাক্কুমের মত এক প্রকার অতি তিক্ত, বদমজাদার এবং অতি অপবিত্র নোংরা খাবার হবে। যা ভক্ষণ করলে জাহান্নামীদের না শরীর পুষ্ট হবে, আর না তাদের ক্ষুধা নিবারণ হবে ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৮৮ : ৭
لَّا یُسۡمِنُ وَ لَا یُغۡنِیۡ مِنۡ جُوۡعٍ ؕ﴿۷﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭. যা তাদেরকে পুষ্ট করবে না এবং তাদের ক্ষুধা নিবৃত্ত করবে না।
-
তাফসীরে জাকারিয়া৭। যা পুষ্ট করে না এবং ক্ষুধাও নিবারণ করে না।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৮৮ : ৮
وُجُوۡهٌ یَّوۡمَئِذٍ نَّاعِمَۃٌ ۙ﴿۸﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৮. অনেক মুখমণ্ডল সেদিন হবে আনন্দোজ্জ্বল,
-
তাফসীরে জাকারিয়া৮। (পক্ষান্তরে) বহু মুখমন্ডল হবে সেদিন আনন্দোজ্জ্বল।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৮৮ : ৯
لِّسَعۡیِهَا رَاضِیَۃٌ ۙ﴿۹﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৯. নিজেদের কাজের সাফল্যে পরিতৃপ্ত(১),
(১) অর্থাৎ দুনিয়ায় তারা যেসব প্রচেষ্টা চালিয়ে ও কাজ করে এসেছে আখেরাতে তার চমৎকার ফল দেখে তারা আনন্দিত হবে। [ফাতহুল কাদীর] এটা তাদের প্রচেষ্টার কারণেই সম্ভব হয়েছে। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া৯। নিজেদের কর্মসাফল্যে পরিতুষ্ট।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৮৮ : ১০
فِیۡ جَنَّۃٍ عَالِیَۃٍ ﴿ۙ۱۰﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০. সুউচ্চ জান্নাতে—
-
তাফসীরে জাকারিয়া১০। (তারা স্থান পাবে) সমুন্নত জান্নাতে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান