بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ১৬/ আন-নাহাল | An-Nahl | سورة النحل আয়াতঃ ১২৮ মাক্কী
১৬:১ اَتٰۤی اَمۡرُ اللّٰهِ فَلَا تَسۡتَعۡجِلُوۡهُ ؕ سُبۡحٰنَهٗ وَ تَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ ﴿۱﴾
اتی امر الله فلا تستعجلوه سبحنهٗ و تعلی عما یشرکون ۱

আল্লাহর আদেশ এসে গেছে, সুতরাং তার জন্য তাড়াহুড়া করো না। তিনি পবিত্র এবং তারা যা শিরক করে, তা থেকে ঊর্ধ্বে। আল-বায়ান

আল্লাহর নির্দেশ এসে গেছে, অতএব এর জন্য তাড়াহুড়ো করো না। তিনি মহান পবিত্র, তারা যাকে শরীক সাব্যস্ত করে তাত্থেকে তিনি বহু ঊর্ধ্বে। তাইসিরুল

আল্লাহর আদেশ আসবেই; সুতরাং ওটা ত্বরান্বিত করতে চেওনা; তিনি মহিমান্বিত এবং তারা যাকে শরীক করে তিনি তার উর্ধ্বে। মুজিবুর রহমান

The command of Allah is coming, so be not impatient for it. Exalted is He and high above what they associate with Him. Sahih International

১. আল্লাহর(১) আদেশ আসবেই(২); কাজেই তা(৩) তাড়াতাড়ি পেতে চেয়ো না। তিনি মহিমান্বিত এবং তারা যা শরীক করে তিনি তা থেকে ঊর্ধ্বে(৪)।

(১) এ সূরা নাহ্‌লকে বিশেষ কোন ভূমিকা ছাড়াই কঠোর শাস্তির সতর্কবাণী ও ভয়াবহ বিষয়বস্তু দ্বারা শুরু করা হয়েছে। এর কারণ ছিল মুশরিকদের এই উক্তি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে কেয়ামত ও আযাবের ভয় দেখায় এবং বলে যে, আল্লাহ তা'আলা তাকে জয়ী করা এবং বিরোধীদেরকে শাস্তি দেয়ার ওয়াদা করেছেন। আমাদের তো এরূপ কিছু ঘটবে বলে মনে হয় না। এর উত্তরে বলা হয়েছেঃ আল্লাহর নির্দেশ এসে গেছে। তোমরা তাড়াহুড়া করো না। [দেখুন, আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]

(২) অর্থাৎ তা একেবারে আসন্ন হয়ে উঠেছে। তার প্রকাশ ও প্রয়োগের সময় নিকটবর্তী হয়েছে। ব্যাপারটা একেবারেই অবধারিত ও সুনিশ্চিত অথবা একান্ত নিকটবর্তী এ ধারণা দেবার জন্য ব্যাক্যটি অতীতকালের ক্রিয়াপদের সাহায্যে বর্ণনা করা হয়েছে। [আদওয়াউল বায়ান; আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর] তবে এ “আদেশ বা ফায়সালা” কি ছিল এবং কোন আকৃতিতে এসেছে? এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত আছেঃ

* কোন কোন মুফাসসির বলেন যে, এখানে ‘আল্লাহর নির্দেশ’ বলে কেয়ামত বোঝানো হয়েছে। এর এসে যাওয়ার অর্থও এই যে, আসা অতি নিকটবর্তী। সমগ্র জগতের বয়সের দিক দিয়ে দেখলে কেয়ামতের নিকটবর্তী হওয়া কিংবা এসে পৌছাও দূরবর্তী কোন বিষয় নয়। অথবা, তা অবশ্যম্ভাবী হওয়ার কারণে অতীতকালের পদ ব্যবহার করা হয়েছে। অন্য আয়াতেও বলা হয়েছে, “মানুষের হিসেব-নিকেশের সময় আসন্ন, কিন্তু তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে রয়েছে।” [সূরা আল-আম্বিয়া: ১] আরও এসেছে, “কিয়ামত কাছাকাছি হয়েছে, আর চাঁদ বিদীর্ণ হয়েছে” [সূরা আল-কামারঃ ১] [ইবন কাসীর]

* কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ ‘আল্লাহর নির্দেশ’ বলে এখানে আল্লাহর আদেশ নিষেধ সম্পর্কিত, হালাল হারাম সম্বলিত বিধানাবলী বোঝানো হয়েছে। [কুরতুবী]

* কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ এখানে ‘আল্লাহর নির্দেশ’ বলে তাদের উপর যে শাস্তি আসার কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করাতেন তা বুঝানো হয়েছে। আযাবের ব্যাপারে কুরাইশ বংশীয় কাফেরদের সবরের পেয়ালা কানায় ভরে উঠেছিল এবং শেষ ও চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করার সময় এসে গিয়েছিল বলেই অতীতকালের ক্রিয়াপদ দ্বারা একথা বলা হয়েছে। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]

(৩) কাফের মুশরিকগণের চিরাচরিত নিয়ম ছিল যে, তারা আল্লাহর আযাবকে কামনা করত, তারা ভাবত যে আল্লাহর আযাব যদি আসবে তবে আসে না কেন? কিন্তু আল্লাহর নিয়ম হলো, তিনি কোন জাতিকে ধ্বংস করার পূর্বে তাকে প্রচুর সময় দেন। এ ব্যাপারটি আল্লাহ তা'আলা অন্যান্য আয়াতেও উল্লেখ করেছেন। [দেখুন, সূরা আল-আনকাবুতঃ ৫৩, ৫৪] [ইবন কাসীর]

(৪) এখানে তাদের শির্ক বলতে, তারা যে আযাব তাড়াতাড়ি চাচ্ছিল, অথবা কিয়ামত তাড়াতাড়ি চাচ্ছিল তা-ই বোঝানো হয়েছে। কেননা এর দ্বারা তারা মূলত: আল্লাহর ওয়াদাকে ভ্রান্ত সাব্যস্ত করেছে, এটা কুফর ও শির্ক। তারা মনে করছে যে, আল্লাহ এটা করতে সম্ভব নন। তিনি সেটা করতে পারবে না। আর অপারগতা মূলত: বান্দাদের গুণ। বান্দাদের গুণকে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা শির্ক। এ হিসেবে তারা শির্কে লিপ্ত হয়েছিল। [ফাতহুল কাদীর] নতুবা আল্লাহর সাথে কারো শরীক হবার প্রশ্নই ওঠে না। তাঁর সত্তা এর অনেক ঊর্ধ্বে এবং এ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র। মোটকথাঃ তারা যে শির্ক করছে আল্লাহ্ তা'আলা তা থেকে পবিত্র। একটি কঠোর সতর্কবাণীর মাধ্যমে তাওহীদের দাওয়াত দেয়া এই আয়াতের সারমর্ম।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১) আল্লাহর আদেশ আসবেই;[1] সুতরাং তোমরা তা ত্বরান্বিত করতে চেয়ো না। তিনি মহিমার্নিত এবং ওরা যাকে অংশী করে তিনি তার উর্ধে।

[1] আদেশ বলতে কিয়ামতকে বুঝানো হয়েছে, অর্থ কিয়ামত নিকটবর্তী যাকে তোমরা দূর মনে কর। অতএব তোমরা এ ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করো না। অথবা সেই আযাবকে বুঝানো হয়েছে যা মুশরিকরা চাইত। এ কথাটি ভবিষ্যৎকালের ক্রিয়ার পরিবর্তে অতীতকালের ক্রিয়া দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে, যেহেতু তার আগমনে কোন সন্দেহ নেই।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬:২ یُنَزِّلُ الۡمَلٰٓئِکَۃَ بِالرُّوۡحِ مِنۡ اَمۡرِهٖ عَلٰی مَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِهٖۤ اَنۡ اَنۡذِرُوۡۤا اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاتَّقُوۡنِ ﴿۲﴾
ینزل الملىکۃ بالروح من امرهٖ علی من یشاء من عبادهٖ ان انذروا انهٗ لا اله الا انا فاتقون ۲

তিনি ফেরেশতাদের আপন নির্দেশে ওহী* দিয়ে নাযিল করেন তার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার প্রতি; যেন তোমরা সতর্ক কর যে, আমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। অতএব, তোমরা আমাকে ভয় কর। আল-বায়ান

তিনি তাঁর এ রূহকে (ওহী) যে বান্দাহর উপর চান স্বীয় নির্দেশক্রমে ফেরেশতাদের মাধ্যমে অবতীর্ণ করেন (এই মর্মে যে) তোমরা সতর্ক কর যে, আমি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, কাজেই আমাকে ভয় কর। তাইসিরুল

তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা নির্দেশ সম্বলিত ওহীসহ মালাক/ফেরেশতা প্রেরণ করেন, এই মর্মে সতর্ক করার জন্য, আমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই; সুতরাং আমাকে ভয় কর। মুজিবুর রহমান

He sends down the angels, with the inspiration of His command, upon whom He wills of His servants, [telling them], "Warn that there is no deity except Me; so fear Me." Sahih International

* রূহ শব্দের অর্থ আত্মা, ওহীকে রূহ বলা হয় এ কারণে যে, ওহীর মাধ্যমেই মানুষের অন্তর জীবন লাভ করে।

২. তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছে(১) স্বীয় নির্দেশে রূহ(২)-ওহীসহ ফিরিশতা- পাঠান এ বলে যে, তোমরা সতর্ক কর, নিশ্চয় আমি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই(৩); কাজেই তোমরা আমার ব্যাপারে তাকওয়া অবলম্বন কর।(৪)

(১) এখানে যার প্রতি ইচ্ছা বলে তাঁর নবী-রাসূলদের বুঝানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর] [এ ব্যাপারে আরো দেখা যেতে পারে সূরা আল-হাজ্জঃ ৭৫, সূরা গাফেরঃ ১৫, ১৬]

(২) আয়াতে روح শব্দ বলে ইবনে আব্বাসের মতে ওহী বুঝানো হয়েছে। যা নবুওয়াতের রূহ। এ রূহ বা প্রাণসত্তায় উজ্জীবিত হয়েই নবী কাজ করেন ও কথা বলেন। স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক জীবনে প্রাণের যে মর্যাদা এ ওহী ও নবুওয়াতী প্রাণসত্তা নৈতিক জীবনে সেই একই মর্যাদার অধিকারী। ওহী দ্বারা মুমিনদের প্রাণ উজ্জীবিত হয়। এ ওহীর একটি হচ্ছে কুরআন। দ্বীনে কুরআনের মর্যাদা যেমন শরীরের সাথে রূহের সম্পর্ক। [ফাতহুল কাদীর] তাই কুরআনের বিভিন্ন স্থানে ওহীর জন্য ‘রূহ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। [দেখুনঃ সূরা আস-শূরাঃ ৫২] কোন কোন তাফসীরবিদগণের মতে রূহ শব্দ দ্বারা এখানে হেদায়াত বোঝানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর] অবশ্য দু' অর্থের মধ্যে বৈপরীত্য নেই।

(৩) এ আয়াতে ইতিহাসগত দলীল দ্বারা তাওহীদ প্রমাণিত হয়েছে যে, আদম 'আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত দুনিয়ার বিভিন্ন ভূখণ্ডে এবং বিভিন্ন সময়ে যে রাসূলই আগমন করেছেন তিনি জনসমক্ষে তাওহীদের বিশ্বাসই পেশ করেছেন। [দেখুন সূরা আল-আম্বিয়াঃ ২৫] অথচ বাহ্যিক উপায়াদীর মাধ্যমে এক জনের অবস্থা ও শিক্ষা অন্যজনের মোটেই জানা ছিল না। চিন্তা করুন, হাজার হাজার নবী-রাসূল, যারা বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন দেশে এবং বিভিন্ন ভূখণ্ডে জন্মগ্রহণ করেছেন, তারা সবাই যখন একই বিষয়ের প্রবক্তা, তখন স্বভাবতঃই মানুষ একথা বুঝতে বাধ্য হয় যে, বিষয়টি ভ্রান্ত হতে পারে না। বিশ্বাস স্থাপনের জন্য এককভাবে এ যুক্তিটিই যথেষ্ট।

(৪) এই বাক্যের মাধ্যমে এ সত্যটি সুস্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছে যে, নবুওয়াতের রূহ যেখানেই যে ব্যক্তির ওপর অবতীর্ন হয়েছে সেখানেই তিনি এ একটিই দাওয়াত নিয়ে এসেছেন যে সার্বভৌম কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত এবং একমাত্র তাকেই ভয় করতে হবে, তিনি একাই এর হকদার। তিনি ছাড়া আর দ্বিতীয় এমন কোন সত্তা নেই যার অসন্তুষ্টির ভয়, যার শাস্তির আশংকা এবং যার নাফরমানির অশুভ পরিণামের ভয় করা যাবে। তিনি ছাড়া আর কারো ইবাদত করা যাবে না।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২) তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা[1] স্বীয় নির্দেশে অহী (প্রত্যাদেশ)[2] সহ ফিরিশতা অবতীর্ণ করেন, এই মর্মে সতর্ক করবার জন্য যে, আমি ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই; সুতরাং তোমরা আমাকে ভয় কর।

[1] অর্থাৎ, নবী রসূলগণ, যাঁদের উপর অহী অবতীর্ণ হত। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,{اللهُ أَعْلَمُ حَيْثُ يَجْعَلُ رِسَالَتَهُ} নবুঅতের দায়িত্ব কাকে দেবেন তা আল্লাহ ভালভাবেই জানেন। (সূরা আনআম ১২৪) {يُلْقِي الرُّوحَ مِنْ أَمْرِهِ عَلَى مَن يَشَاء مِنْ عِبَادِهِ لِيُنذِرَ يَوْمَ التَّلَاقِ}  তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা অহী করেন স্বীয় আদেশসহ, যাতে সে সতর্ক করতে পারে কিয়ামত দিন সর্ম্পকে। (সূরা মু’মিন ১৫)

[2] এখানে الروح বলতে অহী (প্রত্যাদেশ)। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে,{وَكَذَلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ رُوحًا مِّنْ أَمْرِنَا مَا كُنتَ تَدْرِي مَا الْكِتَابُ وَلَا الْإِيمَانُ}  অর্থাৎ, এভাবে আমি নিজ নির্দেশে তোমার প্রতি অহী (প্রত্যাদেশ) করেছি রূহ। তুমি তো জানতে না গ্রন্থ কি, ঈমান (বিশ্বাস) কি। (সূরা শূরা ৫২)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬:৩ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ بِالۡحَقِّ ؕ تَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ ﴿۳﴾
خلق السموت و الارض بالحق تعلی عما یشرکون ۳

তিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন যথাযথই, তারা যা শরীক করে, তা থেকে তিনি ঊর্ধ্বে। আল-বায়ান

তিনি (বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্তে) প্রকৃতভাবেই আসমানসমূহ যমীন সৃষ্টি করেছেন, তারা যাকে আল্লাহর অংশীদার গণ্য করে তাত্থেকে তিনি বহু ঊর্ধ্বে। তাইসিরুল

তিনি যথাযথভাবে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন; তারা যাকে শরীক করে তিনি তার উর্ধ্বে। মুজিবুর রহমান

He created the heavens and earth in truth. High is He above what they associate with Him. Sahih International

৩. তিনি যথাযথভাবে(১) আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন; তারা যা শরীক করে তিনি তার ঊর্ধ্বে।(২)

(১) এখান থেকে আবার তাওহীদের দলীল-প্রমাণাদি পেশ করা হচ্ছে। [ফাতহুল কাদীর] প্রথমে আসমান ও যমীনকে আল্লাহ তা'আলা যে যথার্থরূপে সৃষ্টি করেছেন সেটা বর্ণনা করছেন। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা আসমান ও যমীন কোন খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করেননি। বরং এগুলোর সৃষ্টির পিছনে অনেক হিকমত রয়েছে। এগুলোর সৃষ্টি হক কারণেই হয়েছে আর তা হচ্ছে এগুলো আল্লাহর একত্ববাদ ও কুদরাতের উপর প্রমাণ জীবিত করতে সক্ষম। অথবা এগুলো নিজেরাই প্রমাণ করবে যে, এগুলো ধ্বংসশীল। [ফাতহুল কাদীর] তাছাড়া এগুলো সৃষ্টির পিছনে আল্লাহর এক মহান উদ্দেশ্য হলোঃ যারা খারাপ কাজ করেছে তাদেরকে শাস্তি আর যারা ভাল কাজ করেছে তাদেরকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করবেন। [দেখুনঃ সূরা আন-নাজমঃ ৩১] [ইবন কাসীর]

(২) আল্লাহর সাথে যাদেরকে শরীক করা হয়, তারা কোনভাবেই আল্লাহর সমকক্ষ হতে পারে না। তিনি তাদের শরীক করা থেকে অনেক উর্ধ্বে, অনুরূপভাবে কোন শরীকের শরীক হওয়া থেকেও তিনি অনেক উর্ধ্বে। [ফাতহুল কাদীর] তিনি সর্বদিক থেকে উর্ধ্বে। সম্মানের দিক থেকে উর্ধ্বে তিনি, অবস্থানের দিক থেকেও তিনি আরশের উপর। সবকিছুর উপরে তাঁর অবস্থান, আর ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির দিক থেকেও তার সমকক্ষ কেউ নেই।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩) তিনি যথাযথভাবে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন;[1] তারা যাকে অংশী করে, তিনি তার ঊর্ধ্বে।

[1] অর্থাৎ, শুধু অযথা খেল-তামাশার জন্য সৃষ্টি করিনি, বরং এক লক্ষ্যকে সামনে রেখে করা হয়েছে, আর তা হল পুণ্যের প্রতিদান ও পাপের শাস্তিদান; যেমন পূর্বে বিস্তারিত আলোচনা হল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬:৪ خَلَقَ الۡاِنۡسَانَ مِنۡ نُّطۡفَۃٍ فَاِذَا هُوَ خَصِیۡمٌ مُّبِیۡنٌ ﴿۴﴾
خلق الانسان من نطفۃ فاذا هو خصیم مبین ۴

তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ‘নুতফা’* থেকে, অথচ সে প্রকাশ্য বিতন্ডাকারী। আল-বায়ান

তিনি শুক্র-কীট থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন অথচ সে প্রকাশ্য ঝগড়াটে সেজে বসল। তাইসিরুল

তিনি শুক্র হতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। অথচ দেখ, সে প্রকাশ্য বিতন্ডাকারী। মুজিবুর রহমান

He created man from a sperm-drop; then at once, he is a clear adversary. Sahih International

* ‘নুতফা’ হচ্ছে নারী ও পুরুষের যৌথ বীর্য, যা ভ্রুণে পরিণত হয়।

৪. তিনি শুক্র হতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন(১); অথচ দেখুন, সে প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী(২)!

(১) শানকীতী বলেন, এ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন যে, তিনি শুক্র থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। সে শুক্র হচ্ছে পুরুষ ও মহিলার সম্মিলিত বীর্য। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আমরা তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্রবিন্দু হতে।” [সূরা আল ইনসান: ২] অর্থাৎ পুরুষ ও মহিলার বীর্যের সংমিশ্রণে। এটা জানার পর আরও একটি জিনিস জানা দরকার, তাহচ্ছে অন্যত্র আল্লাহ জানিয়েছেন যে বীর্য সেটির একটি বের হয় পিঠ থেকে, সেটি পুরুষের শুক্র, অপরটি বের হয় বুকের উপরের পাঁজর থেকে, সেটি মহিলার শুক্র। আল্লাহ বলেন, “অতএব মানুষ যেন চিন্তা করে দেখে তাকে কী থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে! তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি হতে, এটা নির্গত হয় মেরুদণ্ড ও পিঞ্জরাস্থীর মধ্য থেকে।” [সূরা আত-তারেকঃ ৫–৭]

(২) যেহেতু মানুষ সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ট, তাই প্রথমেই মানুষ সৃষ্টির বিবরণ দিয়ে আল্লাহর একত্ববাদ ও কুদরতের আলোচনা শুরু করা হচ্ছে। [ফাতহুল কাদীর] ‘মানুষ প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী’ এর দুই অর্থ হতে পারে এবং সম্ভবত এখানে এ দুই অর্থই প্রযোজ্য। একটি অর্থ হচ্ছে, মহান আল্লাহ একটি তুচ্ছ শুক্রবিন্দু থেকে এমন মানুষ তৈরী করেছেন যে বিতর্ক ও যুক্তি প্ৰর্দশন করার যোগ্যতা রাখে এবং নিজের বক্তব্য ও দাবীর পক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশ করতে পারে। [কুরতুবী] দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, এই দুর্বল মানবকে যখন বল ও বাকশক্তি দান করা হলো, তখন সে আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কেই বিতর্ক উত্থাপন করতে লাগলো। যে মানুষকে আল্লাহ শুক্রবিন্দুর মত নগণ্য জিনিস থেকে তৈরী করেছেন তার অহংকারের বাড়াবাড়িটা দেখ, সে আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতার মোকাবিলায় নিজেকে পেশ করার জন্য বিতর্কে নেমে এসেছে। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

সে হিসেবে মানুষকে এ মর্মে সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে, বড় বড় বুলি আওড়ানোর আগে নিজের সত্তার দিকে একবার তাকাও। কোন আকারে কোথা থেকে বের হয়ে তুমি কোথায় এসে পৌঁছেছো? কোথায় তোমার প্রতিপালনের সূচনা হয়েছিল? তারপর কোন পথ দিয়ে বের হয়ে তুমি দুনিয়ায় এসেছো? তারপর কোন পর্যায় অতিক্রম করে তুমি যৌবন বয়সে পৌছেছে এখন নিজেকে বিস্মৃত হয়ে কার মুখের ওপর কথার তুবড়ি ছোটাচ্ছে? [এ ব্যাপারে সূরা ফুরকানঃ ৫৪, ৫৫ এবং সূরা ইয়াসীনঃ ৭৭–৭৯ আয়াতসমূহ দেখুন] অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের এস্বভাবটি ব্যাখ্যা করেছেন। একবার তিনি তার হাতের তালুতে থুতু ফেললেন, তারপর তাতে তার তর্জনী রেখে বললেনঃ মহান আল্লাহ বলেন, হে বনী আদম! কিভাবে তুমি আমাকে অপারগ করতে পার? অথচ তোমাকে আমি এ ধরণের হীনতা থেকে সৃষ্টি করেছি। তারপর যখন তোমার রূহ ওখানে (তিনি তার কণ্ঠনালির দিকে ইঙ্গিত করলেন) পৌছে, তখন তুমি বলঃ আমি সাদকা করব। তখন কি তার আর সদকার সময় বাকী আছে? [ইবনে মাজাহঃ ২৭০৭; মুসনাদে আহমাদঃ ৪/২১০]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪) তিনি মানুষকে বীর্য হতে সৃষ্টি করেছেন; পরে সে প্রকাশ্য বিতন্ডাকারী হয়ে বসল! [1]

[1] অর্থাৎ, এক জড়পদার্থ হতে যা জীবন্ত দেহ থেকে নির্গত হয়, যাকে বীর্য বলা হয়। তাকে বিভিন্ন পর্যায়ে পার করার পর এক পূর্ণ আকার দান করা হয়। তারপর তাতে (রূহ, বিশেষ) জীবন দান করা হয়। এরপর মায়ের পেট হতে পৃথিবীতে আনা হয়। পৃথিবীতে সে জীবন যাপন করতে করতে যখন জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়, তখন সে তার প্রতিপালক আল্লাহর ব্যাপারে বিতর্ক করে, তাঁকে অস্বীকার করে বা তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬:৫ وَ الۡاَنۡعَامَ خَلَقَهَا ۚ لَکُمۡ فِیۡهَا دِفۡءٌ وَّ مَنَافِعُ وَ مِنۡهَا تَاۡکُلُوۡنَ ﴿۪۵﴾
و الانعام خلقها ۚ لکم فیها دفء و منافع و منها تاکلون ۵

আর চতুষ্পদ জন্তুগুলো তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন তাতে রয়েছে উষ্ণতার উপকরণ ও বিবিধ উপকার। আর তা থেকে তোমরা আহার গ্রহণ কর। আল-বায়ান

তিনি চতুস্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে তোমাদের জন্য আছে (শীত) নিবারক আর বহু উপকারিতাও, আর সেগুলো থেকে তোমরা আহার কর। তাইসিরুল

তিনি চতুস্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন; তোমাদের জন্য ওতে শীত নিবারক উপকরণ এবং আরও বহু উপকার রয়েছে; এবং ওটা হতে তোমরা আহার্য পেয়ে থাক। মুজিবুর রহমান

And the grazing livestock He has created for you; in them is warmth and [numerous] benefits, and from them you eat. Sahih International

৫. আর চতুস্পদ জন্তুগুলো, তিনি তা সৃষ্টি করেছেন; তোমাদের জন্য তাতে শীত নিবারক উপকরণ ও বহু উপকার রয়েছে। এবং সেগুলো থেকে তোমরা আহার করে থাক।(১)

(১) এখানে ঐসব বস্তু সৃষ্টি করার কথা বলা হয়েছে, যেগুলো মানুষের উপকারার্থে বিশেষভাবে সৃজিত হয়েছে। যেমন, উট, গরু, ছাগল ইত্যাদি গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] অধিকাংশ ক্ষেত্রে أنعام দ্বারা উট বোঝানো হয়ে থাকে। [কুরতুবী] এরপর এ সমস্ত জন্তু দ্বারা যে সব উপকার হয় তন্মধ্যে দুটি উপকার বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

(এক) (لَكُمْ فِيهَا دِفْءٌ) অর্থাৎ এসব জন্তুর পশম দ্বারা মানুষ বস্ত্র এবং চামড়া দ্বারা পরিধেয়, টুপি ও বিছানা তৈরী করে শীতকালে উত্তাপ হাসিল করে। [তাবারী]

(দুই) (وَمِنْهَا تَأْكُلُونَ) অর্থাৎ মানুষ এসব জন্তু যবেহ করে খাদ্যও তৈরী করতে পারে। যতদিন জীবিত থাকে ততদিন দুধ দ্বারা উৎকৃষ্ট খাদ্য তৈরী করে। [ইবন কাসীর] অন্যান্য সাধারণ উপকার বোঝানোর জন্য বলা হয়েছে- (وَمَنَافِعُ) বা উপকারাদী’ অর্থাৎ জন্তুগুলোর মাংস, চামড়া, অস্থি ও পশমের মধ্যে আরো অসংখ্য উপকারিতা নিহিত রয়েছে। কারও কারও মতে এর দ্বারা এগুলোকে বাহন হিসেবে ব্যবহার করা বোঝানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর] তবে সম্ভবত: এ সংক্ষিপ্ত বর্ণনার মধ্যে ঐসব নবাবিস্কৃত বস্তুর প্রতিও ইঙ্গিত রয়েছে, যেগুলো জৈব উপাদান দ্বারা মানুষের খাদ্য, পোষাক, ঔষধ ও ব্যবহার্য দ্রব্যাদি প্রস্তুতের ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত আবিস্কৃত হয়েছে অথবা ভবিষ্যতেও কিয়ামত পর্যন্ত আবিস্কৃত হবে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫) তিনি চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন; তোমাদের জন্য ওতে শীত নিবারক উপকরণ ও বহু উপকার রয়েছে;[1] আর তা হতে তোমরা আহার্য পেয়ে থাক।

[1] মহান আল্লাহ উক্ত অনুগ্রহের সাথে অন্য এক অনুগ্রহের কথা ব্যক্ত করছেন যে, চতুষ্পদ জন্তু (উট, গরু, ছাগল ইত্যাদি) তিনিই সৃষ্টি করেছেন, যার লোম ও পশম হতে তোমরা গরম কাপড় তৈরী করে নিজেদেরকে শীত থেকে রক্ষা কর। অনুরূপ তাদের মাধ্যমে অন্যান্য উপকারও লাভ করে থাক, যেমন তাদের দুধ পান করা, তাদেরকে বাহনরূপে ব্যবহার করা, তাদের মাধ্যমে মালপত্র বহন করা, চাষ করা ইত্যাদি।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬:৬ وَ لَکُمۡ فِیۡهَا جَمَالٌ حِیۡنَ تُرِیۡحُوۡنَ وَ حِیۡنَ تَسۡرَحُوۡنَ ﴿۪۶﴾
و لکم فیها جمال حین تریحون و حین تسرحون ۶

আর তোমাদের জন্য তাতে রয়েছে সৌন্দর্য যখন সন্ধ্যায় তা ফিরিয়ে আন এবং সকালে চারণে নিয়ে যাও। আল-বায়ান

তোমরা গর্বভরে সৌন্দর্য অনুভব কর যখন তোমরা সন্ধ্যাবেলা সেগুলোকে বাড়ীর পানে হাঁকিয়ে আন আর সকাল বেলা বিচরণের জন্য পাঠাও। তাইসিরুল

আর যখন তোমরা গোধূলি লগ্নে ওদেরকে চারণভূমি হতে গৃহে নিয়ে আসো এবং প্রভাতে যখন ওদেরকে চারণভূমিতে নিয়ে যাও তখন তোমরা ওর সৌন্দর্য উপভোগ কর এবং গৌরব অনুভব কর। মুজিবুর রহমান

And for you in them is [the enjoyment of] beauty when you bring them in [for the evening] and when you send them out [to pasture]. Sahih International

৬. আর তোমরা যখন গোধূলি লগ্নে তাদেরকে চারণভূমি হতে ঘরে নিয়ে আস এবং প্রভাতে যখন তাদেরকে চারণভূমিতে নিয়ে যাও তখন তোমরা তাদের সৌন্দর্য উপভোগ কর।(১)

(১) কাতাদা বলেন, যখন এগুলো বড় স্তন, লম্বা চুটিসহ চলে তখন তোমরা সেগুলো দেখে আনন্দে আপ্লুত হও। আর যখন মাঠে চরতে যায় তখনও তোমরা সেগুলো দেখে খুশি হও। [তাবারী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬) আর যখন তোমরা সন্ধ্যায় ওদেরকে চারণভূমি হতে গৃহে নিয়ে আস এবং প্রভাতে যখন ওদেরকে চারণ ভূমিতে নিয়ে যাও, তখন তোমরা ওর সৌন্দর্য উপভোগ কর। [1]

[1] تريحون যখন সন্ধ্যায় চারণভূমি থেকে বাড়িতে নিয়ে এসো, تسرحون যখন সকালে চারণ ভূমিতে নিয়ে যাও। এই দুই সময় তারা মানুষের চোখে পড়ে, যাতে তোমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। উক্ত দুই সময় ছাড়া তারা দৃষ্টির আড়ালে থাকে বা আস্তাবলে বদ্ধ থাকে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬:৭ وَ تَحۡمِلُ اَثۡقَالَکُمۡ اِلٰی بَلَدٍ لَّمۡ تَکُوۡنُوۡا بٰلِغِیۡهِ اِلَّا بِشِقِّ الۡاَنۡفُسِ ؕ اِنَّ رَبَّکُمۡ لَرَءُوۡفٌ رَّحِیۡمٌ ۙ﴿۷﴾
و تحمل اثقالکم الی بلد لم تکونوا بلغیه الا بشق الانفس ان ربکم لرءوف رحیم ۙ۷

আর এগুলো তোমাদের বোঝা বহন করে এমন দেশে নিয়ে যায়, ভীষণ কষ্ট ছাড়া যেখানে তোমরা পৌঁছতে সক্ষম হতে না। নিশ্চয় তোমাদের রব দয়াশীল, পরম দয়ালু। আল-বায়ান

আর এগুলো তোমাদের ভার বোঝা বহন ক’রে এমন স্থান পর্যন্ত নিয়ে যায়, প্রাণান্তকর ক্লেশ ছাড়া যেখানে তোমরা পৌঁছতে পারতে না, তোমাদের প্রতিপালক অবশ্যই বড়ই দয়ার্দ্র, বড়ই দয়ালু। তাইসিরুল

আর ওরা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় দূরদেশে যেখানে প্রাণান্ত ক্লেশ ব্যতীত তোমরা পৌঁছতে পারতেনা; তোমাদের রাব্ব অবশ্যই দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু। মুজিবুর রহমান

And they carry your loads to a land you could not have reached except with difficulty to yourselves. Indeed, your Lord is Kind and Merciful. Sahih International

৭. আর তারা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় এমন দেশে যেখানে প্রাণান্ত কষ্ট ছাড়া তোমরা পৌছতে পারতে না(১)। তোমাদের রব তো অবশ্যই দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।(২)

(১) এখানে এসব জন্তুর আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকার বর্ণনা করে বলা হয়েছে যে, এগুলো তোমাদের ভারী জিনিষপত্রকে দূর-দূরান্তের শহরে পৌছে দেয়, যেখানে তোমাদের এবং তোমাদের জিনিষপত্রের পৌছা প্রাণান্তকর পরিশ্রম ব্যতীত সম্ভবপর নয়। উট ও গরু বিশেষভাবে মানুষের এ সেবা বিরাটাকারে সম্পন্ন করে থাকে। কারণ, এমনও অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে এসব নবাবিস্কৃত যান-বাহন অকেজো হয়ে পড়ে। এরূপ ক্ষেত্রে মানুষ বাধ্য হয়ে এসব জন্তুকে আজো কাজে লাগায়। [এ ব্যাপারে আরো দেখুন সূরা আল-মু'মিনূনঃ ২১, ২২, গাফেরঃ ৭৯–৮১]

(২) অর্থাৎ আল্লাহ যেহেতু দয়ালু ও রহমতের আধার তাই তিনি তোমাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে এগুলোকে সৃষ্টি করে তোমাদের করায়ত্ব করে দিয়েছেন। [ইবন কাসীর] এ ব্যাপারে কুরআনের অন্যান্য স্থানেও উল্লেখ করা হয়েছে। [দেখুনঃ সূরা আয-যুখরুফঃ ১২–১৪]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭) আর ওরা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় দূর দেশে; যেথায় প্রাণান্তকর কষ্ট ব্যতীত তোমরা পৌঁছতে পারতে না; তোমাদের প্রতিপালক অবশ্যই চরম স্নেহশীল, পরম দয়ালু।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬:৮ وَّ الۡخَیۡلَ وَ الۡبِغَالَ وَ الۡحَمِیۡرَ لِتَرۡکَبُوۡهَا وَ زِیۡنَۃً ؕ وَ یَخۡلُقُ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۸﴾
و الخیل و البغال و الحمیر لترکبوها و زینۃ و یخلق ما لا تعلمون ۸

আর (তিনি সৃষ্টি করেছেন) ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা, তোমাদের আরোহণ ও শোভার জন্য এবং তিনি সৃষ্টি করেন এমন কিছু, যা তোমরা জান না। আল-বায়ান

তিনি ঘোড়া, খচ্চর ও গর্দভ সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা ওগুলোতে আরোহণ করতে পার আর শোভা-সৌন্দর্যের জন্যও; তিনি পয়দা করেন অনেক কিছু যা তোমাদের জানা নেই। তাইসিরুল

তোমাদের আরোহনের জন্য ও শোভার জন্য তিনি সৃষ্টি করেছেন অশ্ব, খচ্চর, গর্দভ এবং তিনি সৃষ্টি করেন এমন অনেক কিছু যা তোমরা অবগত নও। মুজিবুর রহমান

And [He created] the horses, mules and donkeys for you to ride and [as] adornment. And He creates that which you do not know. Sahih International

৮. আর তোমাদের আরোহনের জন্য এবং শোভার জন্য তিনি সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা(১) এবং তিনি সৃষ্টি করেন এমন অনেক কিছু, যা তোমরা জান না।(২)

(১) উট, বলদ ইত্যাদির বোঝা বহনের কথা আলোচিত হওয়ার পর ঐসব জন্তুর কথা প্রসঙ্গতঃ উত্থাপন করা উপযুক্ত মনে করা হয়েছে, যেগুলো সৃষ্ট হয়েছে সওয়ারী ও বোঝা বহনের উদ্দেশ্যে। বলা হয়েছে, আমি ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা এগুলোতে সওয়ার হও। আর তোমাদের শোভা ও সৌন্দর্যের উপকরণ হওয়াও এগুলোকে সৃষ্টি করার অন্যতম কারণ। [তাবারী]।

(২) অর্থাৎ বিপুল পরিমাণ জিনিস এমন আছে যা মানুষের উপকার করে যাচ্ছে। অথচ কোথায় কত সেবক তার সেবা করে যাচ্ছে বরং কি সেবা করছে সে সম্পর্কে মানুষ কিছুই জানে না। সওয়ারীর তিনটি জন্তু ঘোড়া, খচ্চর ও গাধার কথা বিশেষভাবে বর্ণনা করার পর পরিশেষে অন্যান্য যানবাহন সম্পর্কে ভবিষ্যত পদবাচ্যে ব্যবহার করে বলা হয়েছে- (وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُونَ) অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা ঐসব বস্তু সৃষ্টি করবেন, যেগুলো তোমরা জান না। যেমন, কীট-পতঙ্গ ও যমীনে অন্যান্য প্রাণী। যেগুলো যমীনের নীচে থাকে বা শুষ্ক স্থানে বা সমুদ্রে অবস্থান করে। যেগুলো মানুষ দেখতে পায়নি বা শুনতেও পায়নি। [কুরতুবী] কারও কারও মতে এখানে আল্লাহ্ তাআলা জান্নাতে জান্নাতীদের জন্য এবং জাহান্নামে জাহান্নামীদের জন্য যা সৃষ্টি করবেন বা করেছেন তা-ই বুঝিয়েছেন। [কুরতুবী] তাছাড়া সম্ভবত: এখানে ঐসব নবাবিস্কৃত যানবাহন ও গাড়ী বোঝানো হয়েছে, যেগুলোর অস্তিত্ব প্রাচীনকালে ছিল না; যেমন, রেল, মটর, বিমান ইত্যাদি।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮) তোমাদের আরোহণের জন্য ও শোভার জন্য তিনি সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা।[1] আর তিনি সৃষ্টি করেন এমন অনেক কিছু যা তোমরা অবগত নও। [2]

[1] অর্থাৎ, তাদের সৃষ্টির আসল উদ্দেশ্য ও উপকারিতা তাদেরকে বাহনরূপে ব্যবহার করা। তা সত্ত্বেও সেসব সৌন্দর্যের কারণও বটে। ঘোড়া, খচ্চর ও গাধাকে পৃথকভাবে উল্লেখ করার কারণে কোন কোন ফকীহ প্রমাণ করেছেন যে, ঘোড়াও হারাম যেমন গাধা ও খচ্চর হারাম। তাছাড়া খাদ্যরূপে ব্যবহার্য পশুর উল্লেখ প্রথমেই এসে গেছে। সেই কারণে এই আয়াতে যে সব পশুর উল্লেখ রয়েছে তা শুধু বাহনের জন্য। কিন্তু তাঁদের এই দলীল সঠিক নয়, কারণ সহীহ হাদীসে ঘোড়ার গোশত হালাল হওয়ার কথা প্রমাণিত। জাবের (রাঃ) বলেন নবী (সাঃ) ঘোড়ার গোশত খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। (বুখারীঃ যবেহ অধ্যায়, মুসলিম শিকার অধ্যায়) তাছাড়া সাহাবায়ে কিরামগণ নবী (সাঃ) এর উপস্থিতিতে খাইবার ও মদীনায় ঘোড়া যবেহ করে গোশত রান্না করেছেন ও খেয়েছেন। আর নবী (সাঃ) নিষেধ করেননি। (দেখুন মুসলিম উক্ত অধ্যায়, আহমাদ ৩/৩৫৬, আবু দাউদঃ খাদ্য অধ্যায়) এই কারণে অধিকাংশ উলামা ঘোড়ার গোশত হালাল বলেছেন। (তাফসীর ইবনে কাসীর) এখানে ঘোড়ার উল্লেখ শুধু বাহনরূপে করা হয়েছে। কারণ তার অধিক ব্যবহার এই উদ্দেশেই হয়ে থাকে এবং তা পৃথিবীতে সর্বযুগে এত বেশি মূল্যবান ও দামী থেকেছে যে তাকে খাবারের জন্য খুব কম ব্যবহার করা হয়েছে। ছাগল-ভেড়ার মত তা সাধারণতঃ যবেহ করে ভক্ষণ করা হয় না। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, বিনা স্পষ্ট প্রমাণে তাকে হারাম সাব্যস্ত করা যেতে পারে।

[2] ভূগর্ভে, সমুদ্রে, মরুভূমিতে এবং জঙ্গলে মহান আল্লাহ অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী সৃষ্টি করে থাকেন, যার জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া কারো নেই। এর সঙ্গে নব আবিষ্কৃত সকল বাহনও এসে যায়, যা আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান ও যোগ্যতা প্রয়োগ করে তাঁরই সৃষ্ট বস্তুকে বিভিন্নভাবে কাজে লাগিয়ে মানুষ তৈরী করেছে। যেমন বাস, ট্টেন, রেলগাড়ি, জলজাহাজ ও বিমান ইত্যাদি অসংখ্য যানবাহন এবং আরো অনেক কিছু, যা ভবিষ্যতে আশা করা যায়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬:৯ وَ عَلَی اللّٰهِ قَصۡدُ السَّبِیۡلِ وَ مِنۡهَا جَآئِرٌ ؕ وَ لَوۡ شَآءَ لَهَدٰىکُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ ﴿۹﴾
و علی الله قصد السبیل و منها جاىر و لو شاء لهدىکم اجمعین ۹

আর সঠিক পথ বাতলে দেয়া আল্লাহর দায়িত্ব, এবং পথের মধ্যে কিছু আছে বক্র। আর তিনি যদি ইচ্ছা করতেন তবে তোমাদের সকলকে হিদায়াত করতেন। আল-বায়ান

আল্লাহরই দায়িত্বে রয়েছে সরল পথপ্রদর্শন। পথগুলোর মধ্যে বাঁকা পথও আছে। তিনি যদি ইচ্ছে করতেন তাহলে অবশ্যই তোমাদের সকলকেই সঠিক পথ প্রদর্শন করতেন। তাইসিরুল

সরল পথ আল্লাহর কাছে পৌঁছায়, কিন্তু পথগুলির মধ্যে বক্র পথও রয়েছে। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সকলকেই সৎ পথে পরিচালিত করতেন। মুজিবুর রহমান

And upon Allah is the direction of the [right] way, and among the various paths are those deviating. And if He willed, He could have guided you all. Sahih International

৯. আর সরল পথ আল্লাহর কাছে পৌছায়(১), কিন্তু পথগুলোর মধ্যে বাঁকা পথও আছে(২)। আর তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদের সবাইকেই সৎপথে পরিচালিত করতেন।

(১) (قَصْدُ السَّبِيلِ) শব্দের অর্থঃ সরল পথ, মধ্যম পথ। এমন পথ যা উদ্দেশ্যে পৌছে দেয়। [কুরতুবী] এর দ্বারা এখানে ইসলাম, হক্ক পথ বুঝানো হয়েছে। [কুরতুবী] পূর্ববর্তী আয়াতসমূহে দুনিয়ার বাহ্যিক পথসমূহের বর্ণনার পর এ আয়াতে দ্বীনি পথের কথা আলোচনা করা হচ্ছে। দুনিয়াতে যেমন চলার পথ আল্লাহর সৃষ্টি তেমনি আখেরাতের পথে কিভাবে চলতে হবে তাও মহান আল্লাহ শিখিয়ে দিচ্ছেন। তিনি জানাচ্ছেন যে, হক পথ হচ্ছে সেটিই যা আল্লাহর কাছে পৌছায়। [ইবন কাসীর] অন্য আয়াতেও এসেছে, “আল্লাহ বললেন, এটাই আমার কাছে পৌছার সরল পথ।” [সূরা আল হিজর: ৪১] আরও বলেন, “আর এ পথই আমার সরল পথ।

কাজেই তোমরা এর অনুসরণ কর এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করবে না, করলে তা তোমাদেরকে তার পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। [সূরা আল-আনআমঃ ১৫৩]। অথবা আয়াতের অর্থ, হক পথ বর্ণনা করা আল্লাহর যিম্মায়। তিনি সেটা রাসূল, দলীল-প্রমাণাদির মাধ্যমে বর্ণনা করেন। [কুরতুবী: মুয়াসসার, আত-তাফসীরুস সহীহ] দুনিয়াতে যেমন অনেক পথ আছে কিন্তু সব পথই গন্তব্যস্থানে পৌছাতে পারে না শুধু সে পথই সঠিক গন্তব্যে পৌছাবে যে পথের সন্ধানদাতা সে পথ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত, তেমনিভাবে দ্বীনি ব্যাপারেও অনেকে অনেক পথের দিকে আহবান জানাবে কিন্তু আল্লাহ্ তা'আলার প্রদর্শিত পথ ছাড়া অপরাপর কোন পথই সঠিক গন্তব্যে পৌছাতে সহযোগিতা করতে পারবে না। [সা’দী]

(২) তাওহীদ, রহমত ও রবুবীয়াতের যুক্তি পেশ করতে গিয়ে এখানে ইঙ্গিতে নবুওয়াতের পক্ষেও একটি যুক্তি পেশ করা হয়েছে। এ যুক্তির সংক্ষিপ্তসার হচ্ছেঃ দুনিয়ায় মানুষের জন্য চিন্তা ও কর্মের অনেকগুলো ভিন্ন ভিন্ন পথ থাকা সম্ভব এবং কার্যত আছেও। যেমন, ইয়াহুদীবাদ, নাসারাবাদ, মজুসীবাদ ইত্যাদি। [ইবন কাসীর] এসব পথ তো আর একই সংগে সত্য হতে পারে না। সত্য একটিই বাকীগুলো সঠিক পথ নয়। বরং বাঁকা পথ। সেগুলো দ্বারা আল্লাহর কাছে পৌছা যায় না। আর এসব পথে মানুষ হিদায়াতও পায় না। এসব পথে চলে হক পথে আসাও সম্ভব হয় না। [কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯) সরল পথের নির্দেশ করা আল্লাহর দায়িত্ব।[1] আর পথগুলির মধ্যে বক্রপথও আছে; তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সকলকেই সৎপথে পরিচালিত করতেন। [2]

[1] অর্থাৎ, সরল পথ প্রদর্শন করা আল্লাহর দায়িত্ব এবং তিনি তা করেছেন। সুতরাং তিনি হিদায়াত ও ভ্রষ্টতা দু’টিকেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সেই কারণে পরে বলছেন যে, কিছু পথ হল বক্র, অর্থাৎ বাঁকা ও ভ্রষ্ট।

[2] কিন্তু যেহেতু তাতে মানুষকে বাধ্য করে দেওয়া হত, পরীক্ষা নেওয়ার কোন অর্থ থাকত না, সেই কারণে আল্লাহ নিজ ইচ্ছায় সকলকে বাধ্য করেননি, বরং দুই রাস্তার জ্ঞানদান করে মানুষকে ইচ্ছার স্বাধীনতা দান করেছেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬:১০ هُوَ الَّذِیۡۤ اَنۡزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً لَّکُمۡ مِّنۡهُ شَرَابٌ وَّ مِنۡهُ شَجَرٌ فِیۡهِ تُسِیۡمُوۡنَ ﴿۱۰﴾
هو الذی انزل من السماء ماء لکم منه شراب و منه شجر فیه تسیمون ۱۰

তিনিই সে সত্তা, যিনি আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন, যাতে রয়েছে তোমাদের জন্য পানীয় এবং তা থেকে হয় উদ্ভিত, যাতে তোমরা জন্তু চরাও। আল-বায়ান

তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন যাতে আছে তোমাদের জন্য পানীয় আর তাতে জন্মে বৃক্ষ লতা যা তোমাদের পশুগুলোকে খাওয়াও। তাইসিরুল

তিনিই আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন। ওতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা হতে জন্মায় উদ্ভিদ যাতে তোমরা পশু চারণ করে থাক। মুজিবুর রহমান

It is He who sends down rain from the sky; from it is drink and from it is foliage in which you pasture [animals]. Sahih International

১০. তিনিই আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করেন। তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা থেকে জন্মায় উদ্ভিদ যাতে তোমরা পশু চারণ করে থাক।(১)

(১) পূর্বের আয়াতসমূহে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন যমীনে যে সমস্ত প্রাণী চলাফেরা করে তাদেরকে মানুষের উপকারের জন্য সৃষ্টি করেছেন সে ঘোষণা দিয়েছেন। এখানে আকাশ থেকে বৃষ্টি নাযিল করার মাধ্যমে মানুষের কি উপকার সাধিত হয় সেটা বর্ণনা করছেন। [ইবন কাসীর] এর মধ্যে প্রথমেই হচ্ছে পানি। তিনি আকাশ থেকে যে পানি নাযিল করেন সেগুলোকে তিনি সুমিষ্ট করেছেন, লবনাক্ত করেন নি। [ইবন কাসীর] অনুরূপভাবে মানুষের জন্য বৃক্ষের ব্যবস্থা করেছেন। شجر শব্দটি প্রায়ই বৃক্ষ অর্থে ব্যবহৃত হয়, যা কাণ্ডের উপর দণ্ডায়মান থাকে। কোন কোন সময় এমন প্রত্যেক বস্তুকেও شجر বলা হয় যা ভূ-পৃষ্ঠে উৎপন্ন হয়। ঘাস, লতা-পাতা ইত্যাদিও এর অন্তর্ভুক্ত থাকে। আলোচ্য আয়াতে এ অর্থই বোঝানো হয়েছে। [কুরতুবী] কেননা, এর পরেই জন্তুদের চলার কথা বলা হয়েছে। ঘাসের সাথেই এর বেশীর ভাগ সম্পর্ক। (تُسِيمُونَ) শব্দটির অর্থ জন্তুকে চারণক্ষেত্রে চরার জন্য ছেড়ে দেয়া। [কুরতুবী; ইবন কাসীর] অর্থাৎ তোমাদের জন্য এমন গাছের ব্যবস্থা করেছেন যাতে তোমাদের জীব-জন্তু চরে বেড়াতে পারে। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০) তিনিই আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, ওতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা হতে (জন্মায়) উদ্ভিদ; যাতে তোমরা পশুচারণ করে থাক।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১২৮ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 · · · 10 11 12 13 পরের পাতা »