بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ২/ আল-বাকারা | Al-Baqara | سورة البقرة আয়াতঃ ২৮৬ মাদানী
২ : ৫১ وَ اِذۡ وٰعَدۡنَا مُوۡسٰۤی اَرۡبَعِیۡنَ لَیۡلَۃً ثُمَّ اتَّخَذۡتُمُ الۡعِجۡلَ مِنۡۢ بَعۡدِهٖ وَ اَنۡتُمۡ ظٰلِمُوۡنَ ﴿۵۱﴾
و اذ وعدنا موسی اربعین لیلۃ ثم اتخذتم العجل من بعدهٖ و انتم ظلمون ﴿۵۱﴾
• আর যখন আমি মূসাকে চল্লিশ রাতের ওয়াদা দিয়েছিলাম অতঃপর তোমরা তার যাওয়ার পর বাছুরকে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ করেছিলে, আর তোমরা ছিলে যালিম।

-আল-বায়ান

• যখন মূসার উপর চল্লিশ রজনীর ওয়া‘দা করেছিলাম (কিতাব প্রদানের জন্য), তার (প্রস্থানের) পর তোমরা তখন বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিলে, বস্তুতঃ তোমরা তো ছিলে যালিম।

-তাইসিরুল

• এবং যখন আমি মূসার সঙ্গে চল্লিশ রজনীর অঙ্গীকার করেছিলাম, অনন্তর তোমরা গো-বৎসকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিলে এবং তোমরা ছিলে অত্যাচারী।

-মুজিবুর রহমান

• And [recall] when We made an appointment with Moses for forty nights. Then you took [for worship] the calf after him, while you were wrongdoers.

-Sahih International

৫১. আর স্মরণ কর, যখন আমরা মূসার সাথে চল্লিশ রাতের অঙ্গিকার করেছিলাম(১),তার (চলে যাওয়ার) পর তোমরা গো-বৎসকে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ করেছিলে(২); আর তোমরা হয়ে গেলে যালিম।(৩)

১. এখানে চল্লিশ রাতের ব্যাপারে এটা বলেন নি যে, এ চল্লিশ রাতের ওয়াদা প্রথমেই নিয়েছিলেন কি না? কিন্তু অন্যত্র বলে দিয়েছেন যে, তাকে প্রথমে ত্রিশ রাতের ওয়াদা করেছিলেন তারপর আরও দশ রাত বাড়িয়ে দিয়ে তা চল্লিশে পূর্ণ করে দিলেন। [সূরা আল-আরাফ: ১৪২]

২. এখানে গো বৎসের উৎস ও কারিগর সম্পর্কে কিছু বলেন নি। অন্যত্র সেটা বিস্তারিত এসেছে। আল্লাহ বলেন, “মূসার সম্প্রদায় তার অনুপস্থিতিতে নিজেদের অলংকার দিয়ে একটি বাছুর তৈরী করল, একটা দেহ, যা ‘হাম্বা’ শব্দ করত। তারা কি দেখল না যে, ওটা তাদের সাথে কথা বলে না ও তাদেরকে পথও দেখায় না? তারা ওটাকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করল এবং তারা ছিল যালেম [সূরা আল-আরাফ: ১৪৮]

আরও বলেন, “তারা বলল, আমরা আপনাকে দেয়া অঙ্গীকার স্বেচ্ছায় ভংগ করিনি; তবে আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল লোকের অলংকারের বোঝা এবং আমরা তা আগুনে নিক্ষেপ করি, অনুরূপভাবে সামিরাও (সেখানে কিছু মাটি) নিক্ষেপ করে। তারপর সে তাদের জন্য গড়লো এক বাছুর, এক অবয়ব, যা হাম্বা রব করত। তারা বলল, “এ তোমাদের ইলাহ এবং মূসারও ইলাহ, কিন্তু মূসা ভুলে গেছে।” (সূরা ত্বা-হাঃ ৮৭-৮৮]

৩.  এ ঘটনা ঐ সময়ের যখন ফিরআউন সমুদ্রে নিমজ্জিত হওয়ার পর ইসরাঈল-বংশধররা কারো কারো মতে মিশরে ফিরে এসেছিল, আবার কারো কারো মতে অন্য কোথাও বসবাস করছিল। তখন মূসা আলাইহিস সালাম-এর খেদমতে ইসরাঈল-বংশধররা আরয করলো যে, আমরা এখন সম্পূর্ণ নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত। যদি আমাদের জন্য কোন শরীআত নির্ধারিত হয়, তবে আমাদের জীবন বিধান হিসেবে আমরা তা গ্রহণ ও বরণ করে নেবো। মূসা আলাইহিস সালাম-এর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তাআলা অঙ্গীকার প্রদান করলেন যে, আপনি তুর পর্বতে অবস্থান করে একমাস পর্যন্ত আমার ইবাদাতে নিমগ্ন থাকার পর আপনাকে এক কিতাব দান করবো। মূসা আলাইহিস সালাম তাই করলেন।

এরপর আল্লাহ্ তা'আলা মূসা আলাইহিস সালাম-কে অতিরিক্ত আরও দশদিন ইবাদাত করতে নির্দেশ দিলেন। এভাবে চল্লিশ দিন পূর্ণ হলো আর আল্লাহ্ তা'আলা মূসা আলাইহিস সালাম-কে তাওরাত দিলেন। মূসা আলাইহিস সালাম তো ওদিকে তুর-পর্বতে রইলেন, এদিকে সামের নামক এক ব্যক্তি সোনা-রূপা দিয়ে গোবৎসের একটি প্রতিমূর্তি তৈরী করলো এবং তার কাছে পূর্ব থেকে সংরক্ষিত জিবরীল আলাইহিস সালাম-এর ঘোড়ার খুরের তলার কিছু মাটি প্রতিমূর্তির ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়ায় সেটি শব্দ করতে থাকলো। আর ইসরাঈল-বংশধররা তারই পূজা করতে শুরু করে দিল। [তাফসীরে মা'আরিফুল কুরআন]

তাফসীরে জাকারিয়া

৫১। (স্মরণ কর,) যখন মূসার জন্য চল্লিশ রাত্রি নির্ধারিত করেছিলাম, তখন তার প্রস্থানের পর তোমরা গো-বৎসকে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ করেছিলে; বাস্তবে তোমরা ছিলে অনাচারী। (1)

(1) এই গোবৎস পূজার ঘটনা সেই সময় ঘটেছিল, যখন ফিরআউন-সম্প্রদায়ের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বানী-ইস্রাঈলেরা 'সীনা' (সিনাই) নামক উপদ্বীপে পৌঁছে ছিল। সেখানে মহান আল্লাহ মূসা (আঃ)-কে তাওরাত দেওয়ার লক্ষ্যে চল্লিশ রাতের জন্য ত্বূর পাহাড়ে ডেকেছিলেন। মূসা (আঃ)-এর যাওয়ার পর বানী-ইস্রাঈলেরা সামেরীর চক্রান্তে গোবৎস পূজা শুরু করে দিয়েছিল। মানুষ কতই না বাস্তববাদী যে, মহান আল্লাহর মহিমার কত বৃহৎ বৃহৎ নিদর্শনাবলী দেখা সত্ত্বেও এবং তাঁর নবী (মূসা এবং হারুন আলাইহিমাসসালাম) তাদের মাঝে বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও গোবৎসকে নিজেদের উপাস্য মনে করে নিলো! বর্তমানে মুসলমানরাও শির্কী আক্বীদা-বিশ্বাস ও কার্যকলাপে লিপ্ত রয়েছে। কিন্তু তারা মনে মনে ভাবে, মুসলিম মুশরিক কিভাবে হয়? এই মুসলিম মুশরিকরা শির্ককে কেবল পাথরের মূর্তি পূজার সাথে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। তারাই নাকি শুধু মুশরিক। অথচ এই নামমাত্র মুসলিম কবরের গম্বুজের সাথে তা-ই করে, যা প্রতিমা-পূজারী নিজের মূর্তির সাথে করে থাকে -أَعَاذَنَا اللهُ مِنْهُ-।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ : ৫২ ثُمَّ عَفَوۡنَا عَنۡكُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ ذٰلِكَ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُوۡنَ ﴿۵۲﴾
ثم عفونا عنكم من بعد ذلك لعلكم تشكرون ﴿۵۲﴾
• তারপর আমি তোমাদেরকে এ সবের পর ক্ষমা করেছি, যাতে তোমরা শোকর আদায় কর।

-আল-বায়ান

• এরপরও আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছি যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।

-তাইসিরুল

• এর পরেও আমি তোমাদেরকে মার্জনা করেছিলাম - যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।

-মুজিবুর রহমান

• Then We forgave you after that so perhaps you would be grateful.

-Sahih International

৫২. এর পরও আমরা তোমাদেরকে ক্ষমা করেছিলাম যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

৫২। এরপরও আমি তোমাদের ক্ষমা করেছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ : ৫৩ وَ اِذۡ اٰتَیۡنَا مُوۡسَی الۡكِتٰبَ وَ الۡفُرۡقَانَ لَعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُوۡنَ ﴿۵۳﴾
و اذ اتینا موسی الكتب و الفرقان لعلكم تهتدون ﴿۵۳﴾
• আর যখন আমি মূসাকে দিয়েছিলাম কিতাব ও ফুরকান* যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও।

-আল-বায়ান

• স্মরণ কর, যখন আমি মূসাকে কিতাব ও ফুরকান দিয়েছিলাম, যাতে তোমরা সৎপথ অবলম্বন কর।

-তাইসিরুল

• আর যখন আমি মূসাকে গ্রন্থ এবং সত্য ও মিথ্যার প্রভেদকারী নির্দেশ দিয়েছিলাম, যেন তোমরা সুপথ প্রাপ্ত হও।

-মুজিবুর রহমান

• And [recall] when We gave Moses the Scripture and criterion that perhaps you would be guided.

-Sahih International

*- সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী তাওরাতের বাণীসমগ্র।

৫৩. আর স্মরণ কর, যখন আমরা মূসাকে কিতাব ও ‘ফুরকান(১) দান করেছিলাম; যাতে তোমরা হিদায়াত লাভ করতে পার।

১.  ফুরকান’ দ্বারা হয়ত তাওরাতের অন্তর্ভুক্ত শরীআতী বিধানমালাকে বুঝানো হয়েছে। কেননা, শরীআতের মাধ্যমে যাবতীয় বিশ্বাসগত ও কর্মগত মতবিরোধের মীমাংসা হয়ে যায়। অথবা মু'জিযা বা অলৌকিক ঘটনাকে বুঝানো হয়েছে- যা দ্বারা সত্য ও মিথ্যার দাবীর ফয়সালা হয়। অথবা ফুরকানের মানে হচ্ছে দ্বীনের এমন জ্ঞান, বোধ ও উপলব্ধি, যার মাধ্যমে মানুষ হক ও বাতিল এবং সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। অথবা স্বয়ং তাওরাতই এর অর্থ। কেননা, এর মধ্যেও মীমাংসাকারীর জন্য প্রয়োজনীয় উভয় গুণ ও বৈশিষ্ট্যের সমাবেশ রয়েছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

৫৩। (স্মরণ কর,) যখন আমি মূসাকে কিতাব ও (সত্যকে মিথ্যা হতে) পৃথককারী বস্তু দান করেছিলাম; যাতে তোমরা সৎপথে পরিচালিত হও। (1)

(1) এটাও লোহিত সাগর অতিক্রম করার পরের ঘটনা। (ইবনে কাসীর) হতে পারে তাওরাত গ্রন্থকেই 'ফুরক্বান'(সত্য ও মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী বস্তু) বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কেননা, প্রত্যেক আসমানী কিতাব সত্য ও মিথ্যার মাঝে পৃথককারী হয়। অথবা মুজিযাকে 'ফুরক্বান' বলা হয়েছে। কারণ, মুজিযাও হক ও বাতিল জানার ব্যাপারে বড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ : ৫৪ وَ اِذۡ قَالَ مُوۡسٰی لِقَوۡمِهٖ یٰقَوۡمِ اِنَّكُمۡ ظَلَمۡتُمۡ اَنۡفُسَكُمۡ بِاتِّخَاذِكُمُ الۡعِجۡلَ فَتُوۡبُوۡۤا اِلٰی بَارِئِكُمۡ فَاقۡتُلُوۡۤا اَنۡفُسَكُمۡ ؕ ذٰلِكُمۡ خَیۡرٌ لَّكُمۡ عِنۡدَ بَارِئِكُمۡ ؕ فَتَابَ عَلَیۡكُمۡ ؕ اِنَّهٗ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِیۡمُ ﴿۵۴﴾
و اذ قال موسی لقومهٖ یقوم انكم ظلمتم انفسكم باتخاذكم العجل فتوبوا الی بارئكم فاقتلوا انفسكم ذلكم خیر لكم عند بارئكم فتاب علیكم انهٗ هو التواب الرحیم ﴿۵۴﴾
• আর যখন মূসা তার কওমকে বলেছিল, ‘হে আমার কওম, নিশ্চয় তোমরা বাছুরকে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ করে নিজদের উপর যুলম করেছ। সুতরাং তোমরা তোমাদের সৃষ্টিকর্তার কাছে তাওবা কর। অতঃপর তোমরা নিজদেরকে হত্যা কর। এটি তোমাদের জন্য তোমাদের সৃষ্টিকর্তার নিকট উত্তম। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের তাওবা কবূল করলেন। নিশ্চয় তিনি তাওবা কবূলকারী, পরম দয়ালু।

-আল-বায়ান

• স্মরণ কর, মূসা যখন আপন কওমের লোককে বলল, ‘হে আমার কওম! বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ ক’রে তোমরা নিজেদের প্রতি কঠিন অত্যাচার করেছ, কাজেই তোমরা তোমাদের সৃষ্টিকর্তার নিকট তাওবাহ কর এবং তোমরা নিজেদেরকে (নিরপরাধীরা অপরাধীদেরকে) হত্যা কর, তোমাদের স্রষ্টার নিকট এটাই শ্রেয়, অতঃপর তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করলেন, তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’

-তাইসিরুল

• আর যখন মূসা স্বীয় সম্প্রদায়কে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়! নিশ্চয়ই তোমরা গো-বৎসকে উপাস্য রূপে গ্রহণ করে তোমাদের নিজেদের প্রতি অত্যাচার করেছ। অতএব তোমরা তোমাদের রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তোমরা তোমাদের নিজ নিজ প্রাণ বিসর্জন দাও, তোমাদের রবের নিকট এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর; অনন্তর তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করলেন, নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, করুণাময়।

-মুজিবুর রহমান

• And [recall] when Moses said to his people, "O my people, indeed you have wronged yourselves by your taking of the calf [for worship]. So repent to your Creator and kill yourselves. That is best for [all of] you in the sight of your Creator." Then He accepted your repentance; indeed, He is the Accepting of repentance, the Merciful.

-Sahih International

৫৪. আর ম্মরণ কর,যখন মূসা আপন জাতির লোকদের বললেন, ‘হে আমার জাতি! গো-বৎসকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে তোমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছ, কাজেই তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করে তোমাদের স্রষ্টার কাছে তাওবা কর। তোমাদের সৃষ্টিকর্তার নিকট এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তারপর তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছিলেন। অবশ্যই তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

৫৪। আর মূসা যখন আপন সম্প্রদায়ের লোককে বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! গো-বৎসকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে তোমরা নিজেদের প্রতি ঘোর অনাচার করেছ। সুতরাং তোমরা তোমাদের স্রষ্টার দিকে ফিরে যাও (তওবা কর) এবং তোমরা নিজেদেরকে হত্যা কর। তোমাদের স্রষ্টার নিকট এটাই শ্রেয়। তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাপরায়ণ হবেন। নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (1)

(1) যখন মূসা (আঃ) নিজ সম্প্রদায়কে শির্ক থেকে সতর্ক করলেন, তখন তাদের মধ্যে তাওবা করার প্রেরণা সৃষ্টি হল। তাওবার পদ্ধতি (প্রায়শ্চিত্ত) আপোস-হত্যা নির্বাচিত হল। {فَاقْتُلُوْآ أَنْفُسَكُمْ} (তোমরা নিজেদেরকে হত্যা কর) এই আয়াতের দু'টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে, (ক) সকলকে দুই কাতারে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় এবং তারা একে অপরকে হত্যা করে। (খ) যারা শির্ক করেছিল তাদেরকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় এবং যারা শির্ক থেকে বেঁচে ছিল, তাদেরকে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ফলে শির্কমুক্তরা মুশরিকদেরকে হত্যা করে। হতদের সংখ্যা ৭০ হাজার বলা হয়েছ (ইবনে কাসীর ও ফাতহুল ক্বাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ : ৫৫ وَ اِذۡ قُلۡتُمۡ یٰمُوۡسٰی لَنۡ نُّؤۡمِنَ لَكَ حَتّٰی نَرَی اللّٰهَ جَهۡرَۃً فَاَخَذَتۡكُمُ الصّٰعِقَۃُ وَ اَنۡتُمۡ تَنۡظُرُوۡنَ ﴿۵۵﴾
و اذ قلتم یموسی لن نؤمن لك حتی نری الله جهرۃ فاخذتكم الصعقۃ و انتم تنظرون ﴿۵۵﴾
• আর যখন তোমরা বললে, ‘হে মূসা, আমরা তোমার প্রতি ঈমান আনব না, যতক্ষণ না আমরা প্রকাশ্যে আল্লাহকে দেখি’। ফলে বজ্র তোমাদেরকে পাকড়াও করল আর তোমরা তা দেখছিলে।

-আল-বায়ান

• স্মরণ কর, যখন তোমরা বলেছিলে, ‘হে মূসা! আমরা আল্লাহকে সরাসরি না দেখা পর্যন্ত তোমাকে কক্ষনো বিশ্বাস করব না’। তখন বজ্র তোমাদেরকে পাকড়াও করেছিল আর তোমরা নিজেরাই তা প্রত্যক্ষ করছিলে।

-তাইসিরুল

• এবং যখন তোমরা বলেছিলেঃ হে মূসা! আমরা আল্লাহকে প্রকাশ্যভাবে দর্শন না করা পর্যন্ত তোমাকে বিশ্বাস করবনা - তখন বজ্রপাত তোমাদেরকে আক্রমণ করেছিল এবং তোমরা তা প্রত্যক্ষ করেছিলে।

-মুজিবুর রহমান

• And [recall] when you said, "O Moses, we will never believe you until we see Allah outright"; so the thunderbolt took you while you were looking on.

-Sahih International

৫৫. আর স্মরণ কর, যখন তোমরা বলেছিলে, “হে মূসা আমরা আল্লাহকে প্রকাশ্যভাবে না দেখা পর্যন্ত তোমাকে কখনও বিশ্বাস করব না, ফলে তোমাদেরকে বজ্ৰ পাকড়াও করলো, যা তোমরা নিজেরাই দেখছিলে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

৫৫। আর যখন তোমরা বলেছিলে, ‘হে মূসা! আমরা আল্লাহকে প্রত্যক্ষভাবে না দেখা পর্যন্ত তোমাকে কখনো বিশ্বাস করব না।’ তখন তোমরা বজ্রাহত হয়েছিলে এবং নিজেরা তা প্রত্যক্ষ করেছিলে। (1)

(1) তূর পাহাড়ে তাওরাত আনতে যাওয়ার সময় মূসা (আঃ) ৭০ জন লোককে সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন। প্রত্যাবর্তনকালে তারা মূসা (আঃ)-কে বলল, মহান আল্লাহকে প্রকাশ্যে না দেখা পর্যন্ত আমরা তোমার কথা বিশ্বাস করার জন্য প্রস্তুত নই। তাই শাস্তি স্বরূপ তাদের উপর বজ্রপাত হয় এবং তারা মারা যায়। আর তাদের প্রত্যক্ষ করার অর্থ হল, প্রথমে যাদের উপর বজ্রপাত হয়েছিল শেষের লোকেরা তা প্রত্যক্ষ করছিল এবং দেখতে দেখতে সকলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ : ৫৬ ثُمَّ بَعَثۡنٰكُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ مَوۡتِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُوۡنَ ﴿۵۶﴾
ثم بعثنكم من بعد موتكم لعلكم تشكرون ﴿۵۶﴾
• অতঃপর আমি তোমাদের মৃত্যুর পর তোমাদেরকে পুনঃজীবন দান করলাম, যাতে তোমরা শোকর আদায় কর।

-আল-বায়ান

• অতঃপর তোমাদের মৃত্যুর পর আমি তোমাদেরকে আবার জীবিত করলাম, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।

-তাইসিরুল

• অতঃপর তোমাদের মৃত্যুর পর আমি তোমাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলাম, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।

-মুজিবুর রহমান

• Then We revived you after your death that perhaps you would be grateful.

-Sahih International

৫৬. তারপর আমরা তোমাদেরকে পুনর্জীবিত করেছি তোমাদের মৃত্যুর পর যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

৫৬। মৃত্যুর পর আমি তোমাদেরকে পুনর্জীবিত করলাম, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ : ৫৭ وَ ظَلَّلۡنَا عَلَیۡكُمُ الۡغَمَامَ وَ اَنۡزَلۡنَا عَلَیۡكُمُ الۡمَنَّ وَ السَّلۡوٰی ؕ كُلُوۡا مِنۡ طَیِّبٰتِ مَا رَزَقۡنٰكُمۡ ؕ وَ مَا ظَلَمُوۡنَا وَ لٰكِنۡ كَانُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ یَظۡلِمُوۡنَ ﴿۵۷﴾
و ظللنا علیكم الغمام و انزلنا علیكم المن و السلوی كلوا من طیبت ما رزقنكم و ما ظلمونا و لكن كانوا انفسهم یظلمون ﴿۵۷﴾
• আর আমি তোমাদের উপর মেঘের ছায়া দিলাম এবং তোমাদের প্রতি নাযিল করলাম ‘মান্না’* ও ‘সালওয়া’**। তোমরা সে পবিত্র বস্ত্ত থেকে আহার কর, যা আমি তোমাদেরকে রিয্ক দিয়েছি। আর তারা আমার প্রতি যুলম করেনি, বরং তারা নিজদেরকেই যুলম করত।

-আল-বায়ান

• আমি মেঘ দ্বারা তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করলাম, তোমাদের কাছে মান্না ও সালওয়া প্রেরণ করলাম, (আর বললাম)তোমাদেরকে যা দান করেছি তাথেকে বৈধ বস্তুগুলো খাও, আর মূলত তারা আমার প্রতি কোন যুলম করেনি, বরং তারা নিজেদের প্রতিই যুলম করেছিল।

-তাইসিরুল

• এবং আমি তোমাদের উপর মেঘমালার ছায়া দান করেছিলাম এবং তোমাদের প্রতি ‘মান্না’ ও ‘সালওয়া’ অবতীর্ণ করেছিলাম; আমি তোমাদেরকে যে উপজীবিকা দান করেছি সেই পবিত্র জিনিস হতে আহার কর; এবং তারা আমার কোন অনিষ্ট করেনি, বরং তারা নিজেদের অনিষ্ট করেছিল।

-মুজিবুর রহমান

• And We shaded you with clouds and sent down to you manna and quails, [saying], "Eat from the good things with which We have provided you." And they wronged Us not - but they were [only] wronging themselves.

-Sahih International

*‘মান্না’ এক ধরণের সুস্বাদু খাবার, যা শিশিরের মত গাছের পাতায় ও ঘাসের উপর জমে থাকত। আল্লাহ বিশেষভাবে তা বনী ইসরাঈলের জন্য প্রেরণ করেছিলেন।

৫৭. আর আমরা মেঘ দ্বারা তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করলাম এবং তোমাদের নিকট মান্না’ ও ‘সাল্‌ওয়া(১) প্রেরণ করলাম। (বলেছিলাম), আহার কর উত্তম জীবিকা, যা আমরা তোমাদেরকে দান করেছি। আর তারা আমাদের প্রতি যুলুম করেনি, বরং তারা নিজেদের প্রতিই যুলুম করেছিল।

১. ইসরাঈল-বংশধরদের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন-এর প্রেরিত আসমানী খাবার। যা গাছের উপরে কুয়াশার ন্যায় জমা হয়ে থাকত। এ সম্পর্কে সায়ীদ ইবনে যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “আল-কামআ” [এক প্রকার উদ্ভিদ, যা অনেকটা মাশরুমের মত] মান্না এর অন্তর্ভুক্ত। আর এর পানি চোখের আরোগ্য। [বুখারীঃ ৪৪৭৮] আর সালওয়া হলো এক প্রকার পাখি, যা চড়ুই পাখি থেকে আকারে একটু বড়।

তাফসীরে জাকারিয়া

৫৭। আমি মেঘ দ্বারা তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করলাম, তোমাদের নিকট ‘মান্ন্’ ও ‘সাল্ওয়া’ প্রেরণ করলাম। (1) (আর বললাম,) যে সকল ভাল জিনিস তোমাদের জন্য দিলাম তা থেকে আহার কর। তারা (নির্দেশ না মেনে) আমার প্রতি কোন অন্যায় করেনি, বরং তারা নিজেদেরই প্রতি অন্যায় করেছিল।

(1) অধিকাংশ মুফাসসিরগণের মতে এটা মিসর ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী তীহ্ প্রান্তরের ঘটনা। যখন তারা আল্লাহর আদেশে আমালিকাদের জনপদে প্রবেশ করতে অস্বীকার করেছিল এবং তারই শাস্তি স্বরূপ বানী-ইস্রাঈল চল্লিশ বছর পর্যন্ত তীহ্ প্রান্তরে পড়েছিল। কারো কারো নিকট এই নির্দিষ্টীকরণও সঠিক নয়। সীনা (সিনাই) মরুভূমিতে অবতরণের পর যখন সর্বপ্রথম পানি ও খাদ্যের সমস্যা দেখা দিল, তখন এই ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

অনেকের মতে 'মান্ন্' আল্লাহর অবতীর্ণ এক প্রকার ক্বুদরতী চিনি যা পাথর, গাছের পাতা ও ঘাসের উপর শিশির-বিন্দুর মত জমা হত; যা মধুর মত মিষ্টি হত এবং শুকিয়ে আঠার মত জমে যেত। আবার কেউ বলেছেন, এটা মধু বা মিষ্টি পানি। বুখারী ও মুসলিম ইত্যাদির বর্ণনায় এসেছে যে, ছত্রাক (ব্যাঙের ছাতা) মূসা (আঃ)-এর উপর নাযিল হওয়া এক প্রকার 'মান্ন্' এর অর্থ হল, যেভাবে বানী-ইস্রাঈলরা বিনা পরিশ্রমে 'মান্ন্' খাদ্য লাভ করেছিল, অনুরূপ ছত্রাক আপনা আপনিই হয়, কাউকে তা লাগাতে হয় না। (তাফসীর আহসানুত্ তাফাসীর) আর 'সালওয়া' এক প্রকার পাখী যাকে জবাই করে তারা ভক্ষণ করত। (ফাতহুল ক্বাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ : ৫৮ وَ اِذۡ قُلۡنَا ادۡخُلُوۡا هٰذِهِ الۡقَرۡیَۃَ فَكُلُوۡا مِنۡهَا حَیۡثُ شِئۡتُمۡ رَغَدًا وَّ ادۡخُلُوا الۡبَابَ سُجَّدًا وَّ قُوۡلُوۡا حِطَّۃٌ نَّغۡفِرۡ لَكُمۡ خَطٰیٰكُمۡ ؕ وَ سَنَزِیۡدُ الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿۵۸﴾
و اذ قلنا ادخلوا هذه القریۃ فكلوا منها حیث شئتم رغدا و ادخلوا الباب سجدا و قولوا حطۃ نغفر لكم خطیكم و سنزید المحسنین ﴿۵۸﴾
• আর স্মরণ কর, যখন আমি বললাম, ‘তোমরা প্রবেশ কর এই জনপদে। আর তা থেকে আহার কর তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী, স্বাচ্ছন্দ্যে এবং দরজায় প্রবেশ কর মাথা নীচু করে। আর বল ‘ক্ষমা’। তাহলে আমি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং নিশ্চয় আমি সৎকর্মশীলদেরকে বাড়িয়ে দেব’।

-আল-বায়ান

• স্মরণ কর, যখন আমি বললাম, এ জনপদে প্রবেশ কর, সেখানে যা ইচ্ছে স্বচ্ছন্দে আহার কর, দ্বার দিয়ে নতশিরে প্রবেশ কর এবং বল; ‘ক্ষমা চাই’। আমি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করব এবং সৎকর্মশীলদের প্রতি আমার দান বৃদ্ধি করব।

-তাইসিরুল

• এবং যখন আমি বললামঃ তোমরা এই নগরে প্রবেশ কর, অতঃপর যা ইচ্ছা স্বচ্ছন্দে আহার কর এবং সাজদাহবনতভাবে দ্বারে প্রবেশ কর এবং তোমরা বলঃ আমরা ক্ষমা প্রার্থনা করছি, তাহলে আমি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করব এবং অচিরেই সৎকর্মশীলগণকে অধিকতর দান করব।

-মুজিবুর রহমান

• And [recall] when We said, "Enter this city and eat from it wherever you will in [ease and] abundance, and enter the gate bowing humbly and say, 'Relieve us of our burdens.' We will [then] forgive your sins for you, and We will increase the doers of good [in goodness and reward]."

-Sahih International

৫৮. আর স্মরণ কর, যখন আমরা বললাম, এই জনপদে প্রবেশ করে তা হতে যা ইচ্ছে স্বাচ্ছন্দ্যে আহার কর এবং দরজা দিয়ে নতশিরে প্রবেশ কর। আর বলঃ ‘ক্ষমা চাই। আমরা তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করব। অচিরেই আমরা মুহসীনদেরকে বাড়িয়ে দেব।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

৫৮। (স্মরণ কর) যখন আমি বললাম, এ জনপদ (শহরে) (1) প্রবেশ কর এবং তার মধ্যে যেখানে ইচ্ছা স্বচ্ছন্দে আহার কর, সিজদানত(2) হয়ে (নগরের দ্বারে) প্রবেশ কর এবং বল, ‘ক্ষমা চাই’, (3) আমি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করব এবং সৎকর্মপরায়ণ লোকদের প্রতি আমার দান বৃদ্ধি করব।

(1) এ জনপদ বা শহর বলতে অধিকাংশ মুফাসসিরগণের নিকট (প্যালেষ্টাইনের জেরুজালেম) বায়তুল মাক্বদিস।

(2) এই সিজদার অর্থ কারো নিকট নতশিরে প্রবেশ করা। আবার কেউ এর অর্থ নিয়েছেন, কৃতজ্ঞতার সিজদা। অর্থাৎ, আল্লাহর দরবারে নম্রতা ও বিনয়ের প্রকাশ সহ কৃতজ্ঞতা স্বীকার ক’রে প্রবেশ কর।

(3) حِطَّة এর অর্থ হল, আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দাও।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ : ৫৯ فَبَدَّلَ الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا قَوۡلًا غَیۡرَ الَّذِیۡ قِیۡلَ لَهُمۡ فَاَنۡزَلۡنَا عَلَی الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا رِجۡزًا مِّنَ السَّمَآءِ بِمَا كَانُوۡا یَفۡسُقُوۡنَ ﴿۵۹﴾
فبدل الذین ظلموا قولا غیر الذی قیل لهم فانزلنا علی الذین ظلموا رجزا من السمآء بما كانوا یفسقون ﴿۵۹﴾
• অতঃপর যালিমরা পবিবর্তন করে ফেলল সে কথা যা তাদেরকে বলা হয়েছিল, ভিন্ন অন্য কথা দিয়ে। ফলে আমি তাদের উপর আসমান থেকে আযাব নাযিল করলাম, কারণ তারা পাপাচার করত।

-আল-বায়ান

• কিন্তু যারা অত্যাচার করেছিল তারা তাদেরকে যা বলা হয়েছিল তার পরিবর্তে অন্য কথা বলল, কাজেই যালিমদের প্রতি আমি আকাশ হতে শাস্তি প্রেরণ করলাম, কারণ তারা সত্য ত্যাগ করেছিল।

-তাইসিরুল

• অনন্তর যারা অত্যাচার করেছিল তাদেরকে যা বলা হয়েছিল, তৎপরিবর্তে তারা সেই কথার পরিবর্তন করল, পরে অত্যাচারীরা যে দুস্কর্ম করেছিল তজ্জন্য আমি তাদের উপর আকাশ হতে শাস্তি অবতীর্ণ করেছিলাম।

-মুজিবুর রহমান

• But those who wronged changed [those words] to a statement other than that which had been said to them, so We sent down upon those who wronged a punishment from the sky because they were defiantly disobeying.

-Sahih International

৫৯. কিন্তু যালিমরা তাদেরকে যা বলা হয়েছিল তার পরিবর্তে অন্য কথা বলল কাজেই আমরা যালিমদের প্রতি তাদের অবাধ্যতার কারণে আকাশ হতে শাস্তি নাযিল করলাম(১)।

১. হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মহামারী এমন একটি রোগ যা বনী ইসরাঈলের উপর অথবা তোমাদের পূর্বের লোকদের উপর আকাশ থেকে প্রেরণ করা হয়েছিল। সুতরাং যখন তোমরা কোথাও এর সংবাদ কোথাও শুনতে পাবে তখন সেখানে যাবে না। আর তোমরা যেখানে থাক সেখানে নাযিল হলে সেখান থেকে পালিয়ে যেও না।” [বুখারী: ৩৪৭৩, মুসলিম: ২২১৮]

তাফসীরে জাকারিয়া

৫৯। কিন্তু যারা অন্যায় করেছিল, তারা তাদেরকে যা বলা হয়েছিল, তার পরিবর্তে অন্য কথা বলল। (1) সুতরাং অনাচারীদের প্রতি আমি আকাশ হতে শাস্তি (2) প্রেরণ করলাম, কারণ তারা সত্যত্যাগ করেছিল।

(1) এর স্পষ্ট বর্ণনা সহীহ বুখারী ও মুসলিম ইত্যাদিতে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, সিজদানত অবস্থায় প্রবেশ কর, কিন্তু তারা পাছাকে যমীনে হিঁচড়াতে হিঁচড়াতে প্রবেশ করে এবং 'হিত্ত্বাহ' এর পরিবর্তে (হিনত্বাহ) হাববাতুন ফী শারাহ (অর্থাৎ, শীষে গম) বলতে বলতে প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে কতই না অবাধ্যতা ও ধৃষ্টতা জন্ম নিয়েছিল এবং আল্লাহর বিধানের সাথে তারা কিভাবে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত এ থেকে তা সহজেই অনুমেয়। বস্তুতঃ যখন কোন জাতি চারিত্রিক ও আচার-আচরণে অধঃপতনের শিকার হয়, তখন আল্লাহর বিধানের সাথেও তাদের কার্যকলাপ অনুরূপ হয়ে যায়।

(2) এই আকাশ হতে আগত শাস্তি বা আসমানী আযাব কি ছিল? কয়েকটি উক্তি এ ব্যাপারে এসেছে। যেমন, আল্লাহর গযব, কঠিন ঠান্ডাজনিত কুয়াশা অথবা প্লেগ রোগ। শেষোক্ত অর্থের সমর্থন হাদীসে পাওয়া যায়। নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, এই প্লেগ সেই আযাব ও শাস্তির অংশ যা তোমাদের পূর্বে কোন জাতির উপর নাযিল করা হয়েছিল। তোমাদের উপস্থিতিতে কোন স্থানে যদি এই প্লেগ মহামারী দেখা দেয়, তাহলে সেখান থেকে বের হবে না এবং কোন স্থানে যদি এই মহামারী হয়েছে বলে শোন, তবে সেখানে প্রবেশ করবে না। (সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ সালাম, পরিচ্ছেদঃ  প্লেগ, কুলক্ষণ এবং ভবিষ্যদ্বাণী ইত্যাদি ২২১৮নং)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ : ৬০ وَ اِذِ اسۡتَسۡقٰی مُوۡسٰی لِقَوۡمِهٖ فَقُلۡنَا اضۡرِبۡ بِّعَصَاكَ الۡحَجَرَ ؕ فَانۡفَجَرَتۡ مِنۡهُ اثۡنَتَاعَشۡرَۃَ عَیۡنًا ؕ قَدۡ عَلِمَ كُلُّ اُنَاسٍ مَّشۡرَبَهُمۡ ؕ كُلُوۡا وَ اشۡرَبُوۡا مِنۡ رِّزۡقِ اللّٰهِ وَ لَا تَعۡثَوۡا فِی الۡاَرۡضِ مُفۡسِدِیۡنَ ﴿۶۰﴾
و اذ استسقی موسی لقومهٖ فقلنا اضرب بعصاك الحجر فانفجرت منه اثنتاعشرۃ عینا قد علم كل اناس مشربهم كلوا و اشربوا من رزق الله و لا تعثوا فی الارض مفسدین ﴿۶۰﴾
• আর স্মরণ কর, যখন মূসা তার কওমর জন্য পানি চাইল, তখন আমি বললাম, ‘তুমি তোমার লাঠি দ্বারা পাথরকে আঘাত কর’। ফলে তা থেকে উৎসারিত হল বারটি ঝরনা। প্রতিটি দল তাদের পানি পানের স্থান জেনে নিল। তোমরা আল্লাহর রিয্ক থেকে আহার কর ও পান কর এবং ফাসাদকারী হয়ে যমীনে ঘুরে বেড়িয়ো না।

-আল-বায়ান

• স্মরণ কর, যখন মূসা (আ.) তার কওমের জন্য পানি প্রার্থনা করল, আমি বললাম, ‘তোমার লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত কর’। ফলে তাথেকে বারটি ঝর্ণা প্রবাহিত হল, প্রত্যেক গোত্র নিজ নিজ পানের জায়গা চিনে নিল,(বললাম) ‘আল্লাহ প্রদত্ত রিয্ক হতে তোমরা পানাহার কর এবং দুষ্কৃতিকারীর মত পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করো না’।

-তাইসিরুল

• এবং যখন মূসা স্বীয় সম্প্রদায়ের জন্য পানি প্রার্থনা করেছিল তখন আমি বলেছিলামঃ তুমি স্বীয় লাঠি দ্বারা প্রস্তরে আঘাত কর, অনন্তর তা হতে দ্বাদশ প্রস্রবন বিনিঃসৃত হল, প্রত্যেকেই স্ব স্ব স্থান জেনে নিল, তোমরা আল্লাহর উপজীবিকা হতে আহার কর ও পান কর এবং পৃথিবীতে শান্তি ভঙ্গকারী রূপে বিচরণ করনা।

-মুজিবুর রহমান

• And [recall] when Moses prayed for water for his people, so We said, "Strike with your staff the stone." And there gushed forth from it twelve springs, and every people knew its watering place. "Eat and drink from the provision of Allah, and do not commit abuse on the earth, spreading corruption."

-Sahih International

৬০. আর স্মরণ কর, যখন মূসা তার জাতির জন্য পানি চাইলেন। আমরা বললাম, আপনার লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত করুন। ফলে তা হতে বারোটি প্রস্রবণ প্রবাহিত হল। প্রত্যেক গোত্র নিজ নিজ পানি গ্রহণের স্থান জেনে নিল। (বললাম) আল্লাহর দেয়া জীবিকা হতে তোমরা খাও, পান কর এবং যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়িয়ে না।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

৬০। আর (স্মরণ কর) যখন মূসা তাঁর সম্প্রদায়ের জন্য পানি প্রার্থনা করল, আমি বললাম, ‘তোমার লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত কর।’ ফলে তা হতে বারোটি প্রস্রবণ প্রবাহিত হল। (1) প্রত্যেক গোত্র নিজ নিজ পান-স্থান (ঘাট) চিনে নিল। (বললাম,) ‘আল্লাহর দেওয়া জীবিকা হতে তোমরা পানাহার কর এবং পৃথিবীর বুকে অনর্থ (শান্তি-ভঙ্গ) করে বেড়িও না।’

(1) এই ঘটনা কারো মতে তীহ্ প্রান্তরের এবং কারো মতে সীনা মরুভূমির। সেখানে পানির প্রয়োজন দেখা দিলে মহান আল্লাহ মূসা (আঃ)-কে বললেন, তোমার লাঠি পাথরে মারো। এইভাবে পাথর থেকে বারোটি ঝরনাধারা প্রবাহিত হয়। গোত্রও বারোটি ছিল। প্রত্যেক গোত্র নিজের নিজের ঝরনা থেকে পানি পান করত। আর এটাও একটি মু’জিযা (অলৌকিক ঘটনা) ছিল যা আল্লাহ তাআলা মূসা (আঃ) দ্বারা প্রদর্শন করেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৫১ থেকে ৬০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২৮৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 7 · · · 26 27 28 29 পরের পাতা »