-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫১. আর স্মরণ কর, যখন আমরা মূসার সাথে চল্লিশ রাতের অঙ্গিকার করেছিলাম(১),তার (চলে যাওয়ার) পর তোমরা গো-বৎসকে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ করেছিলে(২); আর তোমরা হয়ে গেলে যালিম।(৩)
১. এখানে চল্লিশ রাতের ব্যাপারে এটা বলেন নি যে, এ চল্লিশ রাতের ওয়াদা প্রথমেই নিয়েছিলেন কি না? কিন্তু অন্যত্র বলে দিয়েছেন যে, তাকে প্রথমে ত্রিশ রাতের ওয়াদা করেছিলেন তারপর আরও দশ রাত বাড়িয়ে দিয়ে তা চল্লিশে পূর্ণ করে দিলেন। [সূরা আল-আরাফ: ১৪২]
২. এখানে গো বৎসের উৎস ও কারিগর সম্পর্কে কিছু বলেন নি। অন্যত্র সেটা বিস্তারিত এসেছে। আল্লাহ বলেন, “মূসার সম্প্রদায় তার অনুপস্থিতিতে নিজেদের অলংকার দিয়ে একটি বাছুর তৈরী করল, একটা দেহ, যা ‘হাম্বা’ শব্দ করত। তারা কি দেখল না যে, ওটা তাদের সাথে কথা বলে না ও তাদেরকে পথও দেখায় না? তারা ওটাকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করল এবং তারা ছিল যালেম [সূরা আল-আরাফ: ১৪৮]
আরও বলেন, “তারা বলল, আমরা আপনাকে দেয়া অঙ্গীকার স্বেচ্ছায় ভংগ করিনি; তবে আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল লোকের অলংকারের বোঝা এবং আমরা তা আগুনে নিক্ষেপ করি, অনুরূপভাবে সামিরাও (সেখানে কিছু মাটি) নিক্ষেপ করে। তারপর সে তাদের জন্য গড়লো এক বাছুর, এক অবয়ব, যা হাম্বা রব করত। তারা বলল, “এ তোমাদের ইলাহ এবং মূসারও ইলাহ, কিন্তু মূসা ভুলে গেছে।” (সূরা ত্বা-হাঃ ৮৭-৮৮]
৩. এ ঘটনা ঐ সময়ের যখন ফিরআউন সমুদ্রে নিমজ্জিত হওয়ার পর ইসরাঈল-বংশধররা কারো কারো মতে মিশরে ফিরে এসেছিল, আবার কারো কারো মতে অন্য কোথাও বসবাস করছিল। তখন মূসা আলাইহিস সালাম-এর খেদমতে ইসরাঈল-বংশধররা আরয করলো যে, আমরা এখন সম্পূর্ণ নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত। যদি আমাদের জন্য কোন শরীআত নির্ধারিত হয়, তবে আমাদের জীবন বিধান হিসেবে আমরা তা গ্রহণ ও বরণ করে নেবো। মূসা আলাইহিস সালাম-এর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তাআলা অঙ্গীকার প্রদান করলেন যে, আপনি তুর পর্বতে অবস্থান করে একমাস পর্যন্ত আমার ইবাদাতে নিমগ্ন থাকার পর আপনাকে এক কিতাব দান করবো। মূসা আলাইহিস সালাম তাই করলেন।
এরপর আল্লাহ্ তা'আলা মূসা আলাইহিস সালাম-কে অতিরিক্ত আরও দশদিন ইবাদাত করতে নির্দেশ দিলেন। এভাবে চল্লিশ দিন পূর্ণ হলো আর আল্লাহ্ তা'আলা মূসা আলাইহিস সালাম-কে তাওরাত দিলেন। মূসা আলাইহিস সালাম তো ওদিকে তুর-পর্বতে রইলেন, এদিকে সামের নামক এক ব্যক্তি সোনা-রূপা দিয়ে গোবৎসের একটি প্রতিমূর্তি তৈরী করলো এবং তার কাছে পূর্ব থেকে সংরক্ষিত জিবরীল আলাইহিস সালাম-এর ঘোড়ার খুরের তলার কিছু মাটি প্রতিমূর্তির ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়ায় সেটি শব্দ করতে থাকলো। আর ইসরাঈল-বংশধররা তারই পূজা করতে শুরু করে দিল। [তাফসীরে মা'আরিফুল কুরআন]
তাফসীরে জাকারিয়া৫১। (স্মরণ কর,) যখন মূসার জন্য চল্লিশ রাত্রি নির্ধারিত করেছিলাম, তখন তার প্রস্থানের পর তোমরা গো-বৎসকে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ করেছিলে; বাস্তবে তোমরা ছিলে অনাচারী। (1)
(1) এই গোবৎস পূজার ঘটনা সেই সময় ঘটেছিল, যখন ফিরআউন-সম্প্রদায়ের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বানী-ইস্রাঈলেরা 'সীনা' (সিনাই) নামক উপদ্বীপে পৌঁছে ছিল। সেখানে মহান আল্লাহ মূসা (আঃ)-কে তাওরাত দেওয়ার লক্ষ্যে চল্লিশ রাতের জন্য ত্বূর পাহাড়ে ডেকেছিলেন। মূসা (আঃ)-এর যাওয়ার পর বানী-ইস্রাঈলেরা সামেরীর চক্রান্তে গোবৎস পূজা শুরু করে দিয়েছিল। মানুষ কতই না বাস্তববাদী যে, মহান আল্লাহর মহিমার কত বৃহৎ বৃহৎ নিদর্শনাবলী দেখা সত্ত্বেও এবং তাঁর নবী (মূসা এবং হারুন আলাইহিমাসসালাম) তাদের মাঝে বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও গোবৎসকে নিজেদের উপাস্য মনে করে নিলো! বর্তমানে মুসলমানরাও শির্কী আক্বীদা-বিশ্বাস ও কার্যকলাপে লিপ্ত রয়েছে। কিন্তু তারা মনে মনে ভাবে, মুসলিম মুশরিক কিভাবে হয়? এই মুসলিম মুশরিকরা শির্ককে কেবল পাথরের মূর্তি পূজার সাথে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। তারাই নাকি শুধু মুশরিক। অথচ এই নামমাত্র মুসলিম কবরের গম্বুজের সাথে তা-ই করে, যা প্রতিমা-পূজারী নিজের মূর্তির সাথে করে থাকে -أَعَاذَنَا اللهُ مِنْهُ-।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫২. এর পরও আমরা তোমাদেরকে ক্ষমা করেছিলাম যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।
-
তাফসীরে জাকারিয়া৫২। এরপরও আমি তোমাদের ক্ষমা করেছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
*- সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী তাওরাতের বাণীসমগ্র।
৫৩. আর স্মরণ কর, যখন আমরা মূসাকে কিতাব ও ‘ফুরকান(১) দান করেছিলাম; যাতে তোমরা হিদায়াত লাভ করতে পার।
১. ফুরকান’ দ্বারা হয়ত তাওরাতের অন্তর্ভুক্ত শরীআতী বিধানমালাকে বুঝানো হয়েছে। কেননা, শরীআতের মাধ্যমে যাবতীয় বিশ্বাসগত ও কর্মগত মতবিরোধের মীমাংসা হয়ে যায়। অথবা মু'জিযা বা অলৌকিক ঘটনাকে বুঝানো হয়েছে- যা দ্বারা সত্য ও মিথ্যার দাবীর ফয়সালা হয়। অথবা ফুরকানের মানে হচ্ছে দ্বীনের এমন জ্ঞান, বোধ ও উপলব্ধি, যার মাধ্যমে মানুষ হক ও বাতিল এবং সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। অথবা স্বয়ং তাওরাতই এর অর্থ। কেননা, এর মধ্যেও মীমাংসাকারীর জন্য প্রয়োজনীয় উভয় গুণ ও বৈশিষ্ট্যের সমাবেশ রয়েছে।
তাফসীরে জাকারিয়া৫৩। (স্মরণ কর,) যখন আমি মূসাকে কিতাব ও (সত্যকে মিথ্যা হতে) পৃথককারী বস্তু দান করেছিলাম; যাতে তোমরা সৎপথে পরিচালিত হও। (1)
(1) এটাও লোহিত সাগর অতিক্রম করার পরের ঘটনা। (ইবনে কাসীর) হতে পারে তাওরাত গ্রন্থকেই 'ফুরক্বান'(সত্য ও মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী বস্তু) বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কেননা, প্রত্যেক আসমানী কিতাব সত্য ও মিথ্যার মাঝে পৃথককারী হয়। অথবা মুজিযাকে 'ফুরক্বান' বলা হয়েছে। কারণ, মুজিযাও হক ও বাতিল জানার ব্যাপারে বড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫৪. আর ম্মরণ কর,যখন মূসা আপন জাতির লোকদের বললেন, ‘হে আমার জাতি! গো-বৎসকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে তোমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছ, কাজেই তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করে তোমাদের স্রষ্টার কাছে তাওবা কর। তোমাদের সৃষ্টিকর্তার নিকট এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তারপর তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছিলেন। অবশ্যই তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
-
তাফসীরে জাকারিয়া৫৪। আর মূসা যখন আপন সম্প্রদায়ের লোককে বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! গো-বৎসকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে তোমরা নিজেদের প্রতি ঘোর অনাচার করেছ। সুতরাং তোমরা তোমাদের স্রষ্টার দিকে ফিরে যাও (তওবা কর) এবং তোমরা নিজেদেরকে হত্যা কর। তোমাদের স্রষ্টার নিকট এটাই শ্রেয়। তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাপরায়ণ হবেন। নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (1)
(1) যখন মূসা (আঃ) নিজ সম্প্রদায়কে শির্ক থেকে সতর্ক করলেন, তখন তাদের মধ্যে তাওবা করার প্রেরণা সৃষ্টি হল। তাওবার পদ্ধতি (প্রায়শ্চিত্ত) আপোস-হত্যা নির্বাচিত হল। {فَاقْتُلُوْآ أَنْفُسَكُمْ} (তোমরা নিজেদেরকে হত্যা কর) এই আয়াতের দু'টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে, (ক) সকলকে দুই কাতারে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় এবং তারা একে অপরকে হত্যা করে। (খ) যারা শির্ক করেছিল তাদেরকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় এবং যারা শির্ক থেকে বেঁচে ছিল, তাদেরকে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ফলে শির্কমুক্তরা মুশরিকদেরকে হত্যা করে। হতদের সংখ্যা ৭০ হাজার বলা হয়েছ (ইবনে কাসীর ও ফাতহুল ক্বাদীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫৫. আর স্মরণ কর, যখন তোমরা বলেছিলে, “হে মূসা আমরা আল্লাহকে প্রকাশ্যভাবে না দেখা পর্যন্ত তোমাকে কখনও বিশ্বাস করব না, ফলে তোমাদেরকে বজ্ৰ পাকড়াও করলো, যা তোমরা নিজেরাই দেখছিলে।
-
তাফসীরে জাকারিয়া৫৫। আর যখন তোমরা বলেছিলে, ‘হে মূসা! আমরা আল্লাহকে প্রত্যক্ষভাবে না দেখা পর্যন্ত তোমাকে কখনো বিশ্বাস করব না।’ তখন তোমরা বজ্রাহত হয়েছিলে এবং নিজেরা তা প্রত্যক্ষ করেছিলে। (1)
(1) তূর পাহাড়ে তাওরাত আনতে যাওয়ার সময় মূসা (আঃ) ৭০ জন লোককে সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন। প্রত্যাবর্তনকালে তারা মূসা (আঃ)-কে বলল, মহান আল্লাহকে প্রকাশ্যে না দেখা পর্যন্ত আমরা তোমার কথা বিশ্বাস করার জন্য প্রস্তুত নই। তাই শাস্তি স্বরূপ তাদের উপর বজ্রপাত হয় এবং তারা মারা যায়। আর তাদের প্রত্যক্ষ করার অর্থ হল, প্রথমে যাদের উপর বজ্রপাত হয়েছিল শেষের লোকেরা তা প্রত্যক্ষ করছিল এবং দেখতে দেখতে সকলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫৬. তারপর আমরা তোমাদেরকে পুনর্জীবিত করেছি তোমাদের মৃত্যুর পর যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।
-
তাফসীরে জাকারিয়া৫৬। মৃত্যুর পর আমি তোমাদেরকে পুনর্জীবিত করলাম, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
*‘মান্না’ এক ধরণের সুস্বাদু খাবার, যা শিশিরের মত গাছের পাতায় ও ঘাসের উপর জমে থাকত। আল্লাহ বিশেষভাবে তা বনী ইসরাঈলের জন্য প্রেরণ করেছিলেন।
৫৭. আর আমরা মেঘ দ্বারা তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করলাম এবং তোমাদের নিকট মান্না’ ও ‘সাল্ওয়া(১) প্রেরণ করলাম। (বলেছিলাম), আহার কর উত্তম জীবিকা, যা আমরা তোমাদেরকে দান করেছি। আর তারা আমাদের প্রতি যুলুম করেনি, বরং তারা নিজেদের প্রতিই যুলুম করেছিল।
১. ইসরাঈল-বংশধরদের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন-এর প্রেরিত আসমানী খাবার। যা গাছের উপরে কুয়াশার ন্যায় জমা হয়ে থাকত। এ সম্পর্কে সায়ীদ ইবনে যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “আল-কামআ” [এক প্রকার উদ্ভিদ, যা অনেকটা মাশরুমের মত] মান্না এর অন্তর্ভুক্ত। আর এর পানি চোখের আরোগ্য। [বুখারীঃ ৪৪৭৮] আর সালওয়া হলো এক প্রকার পাখি, যা চড়ুই পাখি থেকে আকারে একটু বড়।
তাফসীরে জাকারিয়া৫৭। আমি মেঘ দ্বারা তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করলাম, তোমাদের নিকট ‘মান্ন্’ ও ‘সাল্ওয়া’ প্রেরণ করলাম। (1) (আর বললাম,) যে সকল ভাল জিনিস তোমাদের জন্য দিলাম তা থেকে আহার কর। তারা (নির্দেশ না মেনে) আমার প্রতি কোন অন্যায় করেনি, বরং তারা নিজেদেরই প্রতি অন্যায় করেছিল।
(1) অধিকাংশ মুফাসসিরগণের মতে এটা মিসর ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী তীহ্ প্রান্তরের ঘটনা। যখন তারা আল্লাহর আদেশে আমালিকাদের জনপদে প্রবেশ করতে অস্বীকার করেছিল এবং তারই শাস্তি স্বরূপ বানী-ইস্রাঈল চল্লিশ বছর পর্যন্ত তীহ্ প্রান্তরে পড়েছিল। কারো কারো নিকট এই নির্দিষ্টীকরণও সঠিক নয়। সীনা (সিনাই) মরুভূমিতে অবতরণের পর যখন সর্বপ্রথম পানি ও খাদ্যের সমস্যা দেখা দিল, তখন এই ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
অনেকের মতে 'মান্ন্' আল্লাহর অবতীর্ণ এক প্রকার ক্বুদরতী চিনি যা পাথর, গাছের পাতা ও ঘাসের উপর শিশির-বিন্দুর মত জমা হত; যা মধুর মত মিষ্টি হত এবং শুকিয়ে আঠার মত জমে যেত। আবার কেউ বলেছেন, এটা মধু বা মিষ্টি পানি। বুখারী ও মুসলিম ইত্যাদির বর্ণনায় এসেছে যে, ছত্রাক (ব্যাঙের ছাতা) মূসা (আঃ)-এর উপর নাযিল হওয়া এক প্রকার 'মান্ন্' এর অর্থ হল, যেভাবে বানী-ইস্রাঈলরা বিনা পরিশ্রমে 'মান্ন্' খাদ্য লাভ করেছিল, অনুরূপ ছত্রাক আপনা আপনিই হয়, কাউকে তা লাগাতে হয় না। (তাফসীর আহসানুত্ তাফাসীর) আর 'সালওয়া' এক প্রকার পাখী যাকে জবাই করে তারা ভক্ষণ করত। (ফাতহুল ক্বাদীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫৮. আর স্মরণ কর, যখন আমরা বললাম, এই জনপদে প্রবেশ করে তা হতে যা ইচ্ছে স্বাচ্ছন্দ্যে আহার কর এবং দরজা দিয়ে নতশিরে প্রবেশ কর। আর বলঃ ‘ক্ষমা চাই। আমরা তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করব। অচিরেই আমরা মুহসীনদেরকে বাড়িয়ে দেব।
-
তাফসীরে জাকারিয়া৫৮। (স্মরণ কর) যখন আমি বললাম, এ জনপদ (শহরে) (1) প্রবেশ কর এবং তার মধ্যে যেখানে ইচ্ছা স্বচ্ছন্দে আহার কর, সিজদানত(2) হয়ে (নগরের দ্বারে) প্রবেশ কর এবং বল, ‘ক্ষমা চাই’, (3) আমি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করব এবং সৎকর্মপরায়ণ লোকদের প্রতি আমার দান বৃদ্ধি করব।
(1) এ জনপদ বা শহর বলতে অধিকাংশ মুফাসসিরগণের নিকট (প্যালেষ্টাইনের জেরুজালেম) বায়তুল মাক্বদিস।
(2) এই সিজদার অর্থ কারো নিকট নতশিরে প্রবেশ করা। আবার কেউ এর অর্থ নিয়েছেন, কৃতজ্ঞতার সিজদা। অর্থাৎ, আল্লাহর দরবারে নম্রতা ও বিনয়ের প্রকাশ সহ কৃতজ্ঞতা স্বীকার ক’রে প্রবেশ কর।
(3) حِطَّة এর অর্থ হল, আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দাও।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫৯. কিন্তু যালিমরা তাদেরকে যা বলা হয়েছিল তার পরিবর্তে অন্য কথা বলল কাজেই আমরা যালিমদের প্রতি তাদের অবাধ্যতার কারণে আকাশ হতে শাস্তি নাযিল করলাম(১)।
১. হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মহামারী এমন একটি রোগ যা বনী ইসরাঈলের উপর অথবা তোমাদের পূর্বের লোকদের উপর আকাশ থেকে প্রেরণ করা হয়েছিল। সুতরাং যখন তোমরা কোথাও এর সংবাদ কোথাও শুনতে পাবে তখন সেখানে যাবে না। আর তোমরা যেখানে থাক সেখানে নাযিল হলে সেখান থেকে পালিয়ে যেও না।” [বুখারী: ৩৪৭৩, মুসলিম: ২২১৮]
তাফসীরে জাকারিয়া৫৯। কিন্তু যারা অন্যায় করেছিল, তারা তাদেরকে যা বলা হয়েছিল, তার পরিবর্তে অন্য কথা বলল। (1) সুতরাং অনাচারীদের প্রতি আমি আকাশ হতে শাস্তি (2) প্রেরণ করলাম, কারণ তারা সত্যত্যাগ করেছিল।
(1) এর স্পষ্ট বর্ণনা সহীহ বুখারী ও মুসলিম ইত্যাদিতে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, সিজদানত অবস্থায় প্রবেশ কর, কিন্তু তারা পাছাকে যমীনে হিঁচড়াতে হিঁচড়াতে প্রবেশ করে এবং 'হিত্ত্বাহ' এর পরিবর্তে (হিনত্বাহ) হাববাতুন ফী শারাহ (অর্থাৎ, শীষে গম) বলতে বলতে প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে কতই না অবাধ্যতা ও ধৃষ্টতা জন্ম নিয়েছিল এবং আল্লাহর বিধানের সাথে তারা কিভাবে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত এ থেকে তা সহজেই অনুমেয়। বস্তুতঃ যখন কোন জাতি চারিত্রিক ও আচার-আচরণে অধঃপতনের শিকার হয়, তখন আল্লাহর বিধানের সাথেও তাদের কার্যকলাপ অনুরূপ হয়ে যায়।
(2) এই আকাশ হতে আগত শাস্তি বা আসমানী আযাব কি ছিল? কয়েকটি উক্তি এ ব্যাপারে এসেছে। যেমন, আল্লাহর গযব, কঠিন ঠান্ডাজনিত কুয়াশা অথবা প্লেগ রোগ। শেষোক্ত অর্থের সমর্থন হাদীসে পাওয়া যায়। নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, এই প্লেগ সেই আযাব ও শাস্তির অংশ যা তোমাদের পূর্বে কোন জাতির উপর নাযিল করা হয়েছিল। তোমাদের উপস্থিতিতে কোন স্থানে যদি এই প্লেগ মহামারী দেখা দেয়, তাহলে সেখান থেকে বের হবে না এবং কোন স্থানে যদি এই মহামারী হয়েছে বলে শোন, তবে সেখানে প্রবেশ করবে না। (সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ সালাম, পরিচ্ছেদঃ প্লেগ, কুলক্ষণ এবং ভবিষ্যদ্বাণী ইত্যাদি ২২১৮নং)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬০. আর স্মরণ কর, যখন মূসা তার জাতির জন্য পানি চাইলেন। আমরা বললাম, আপনার লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত করুন। ফলে তা হতে বারোটি প্রস্রবণ প্রবাহিত হল। প্রত্যেক গোত্র নিজ নিজ পানি গ্রহণের স্থান জেনে নিল। (বললাম) আল্লাহর দেয়া জীবিকা হতে তোমরা খাও, পান কর এবং যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়িয়ে না।
-
তাফসীরে জাকারিয়া৬০। আর (স্মরণ কর) যখন মূসা তাঁর সম্প্রদায়ের জন্য পানি প্রার্থনা করল, আমি বললাম, ‘তোমার লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত কর।’ ফলে তা হতে বারোটি প্রস্রবণ প্রবাহিত হল। (1) প্রত্যেক গোত্র নিজ নিজ পান-স্থান (ঘাট) চিনে নিল। (বললাম,) ‘আল্লাহর দেওয়া জীবিকা হতে তোমরা পানাহার কর এবং পৃথিবীর বুকে অনর্থ (শান্তি-ভঙ্গ) করে বেড়িও না।’
(1) এই ঘটনা কারো মতে তীহ্ প্রান্তরের এবং কারো মতে সীনা মরুভূমির। সেখানে পানির প্রয়োজন দেখা দিলে মহান আল্লাহ মূসা (আঃ)-কে বললেন, তোমার লাঠি পাথরে মারো। এইভাবে পাথর থেকে বারোটি ঝরনাধারা প্রবাহিত হয়। গোত্রও বারোটি ছিল। প্রত্যেক গোত্র নিজের নিজের ঝরনা থেকে পানি পান করত। আর এটাও একটি মু’জিযা (অলৌকিক ঘটনা) ছিল যা আল্লাহ তাআলা মূসা (আঃ) দ্বারা প্রদর্শন করেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান