-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪১. অতঃপর যখন আমরা প্রত্যেক উম্মত হতে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব(১) এবং আপনাকে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব তখন কি অবস্থা হবে?(২)
(১) এখানে আখেরাতের ময়দানের দৃশ্যকে সামনে উপস্থিত করার প্রতি লক্ষ্য করতে বলা হয়েছে। এতে মক্কাবাসী কাফেরদের ভীতি প্রদর্শনও উদ্দেশ্য বটে। তাদের কি অবস্থা হবে, যখন হাশরের ময়দানে প্রত্যেক উম্মতের নবীগণকে নিজ নিজ উম্মতের পাপ-পুণ্য ও সৎ-অসৎ আমলের সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করা হবে এবং যখন আপনিও নিজের উম্মতের সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। আর বিশেষ করে সেই কাফের-মুশরিকদের সম্পর্কে আল্লাহর আদালতে সাক্ষ্য দান করবেন যে, তারা প্রকাশ্য সব মু'জিযা প্রত্যক্ষ করা সত্বেও মিথ্যারোপ করেছে এবং আল্লাহর তাওহীদ ও আমার রেসালাতে বিশ্বাস স্থাপন করে নি। হাদীসে বর্ণিত আছে, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে বলেছেন, আমাকে কুরআন শোনাও। আব্দুল্লাহ বললেন, আপনি কি আমার কাছ থেকে শুনতে চান, অথচ কুরআন আপনার উপরই নাযিল হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ পড়। আব্দুল্লাহ বললেন, অতঃপর আমি সূরা আন-নিসা পড়তে আরম্ভ করলাম। তারপর এ আয়াত অর্থাৎ (فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ) পর্যন্ত পৌছার পর তিনি বললেন, এবার থাম। তারপর যখন আমি তার দিকে চোখ তুলে তাকালাম, দেখলাম, তার চোখ থেকে অশ্র গড়িয়ে পড়ছে। [মুসলিমঃ ৮০০]
(২) কোন কোন মনীষী বলেছেন, هَٰؤُلَاءِ এর দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে উপস্থিত কাফের মুনাফেকদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আবার অনেকের মতে কিয়ামত পর্যন্ত আগত গোটা উম্মতের প্রতিই এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে। যাই হোক, এতে বোঝা গেল যে, বিগত উম্মতসমূহের নবী-রাসূলগণ নিজ নিজ উম্মতের সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত হবেন এবং স্বয়ং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও স্বীয় উম্মতের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দান করবেন। কুরআনুল কারীমের এই বর্ণনারীতির দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর আর কোন নবীর আগমন ঘটবে না, যিনি স্বীয় উম্মতের উপর সাক্ষ্য দান করতে পারেন। অন্যথায় কুরআনুল কারীমে তার (অর্থাৎ সে নবীর এবং তার সাক্ষ্যদানের) বিষয়ও উল্লেখ থাকত। এ হিসেবে উক্ত আয়াতটি খতমে নবুওয়াতেরও একটি প্রমাণ।
তাফসীরে জাকারিয়া(৪১) তখন তাদের কি অবস্থা হবে, যখন প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে একজন সাক্ষী (নবী) উপস্থিত করব এবং তোমাকেও তাদের সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব? [1]
[1] প্রত্যেক উম্মতের মধ্য থেকে তাদের পয়গম্বর আল্লাহর নিকট সাক্ষ্য দিয়ে বলবেন যে, হে আল্লাহ! আমি তোমার বার্তা আমার জাতির নিকট পৌঁছে দিয়েছি। তারা মানেনি, তাতে আমার কি দোষ? অতঃপর তাদের উপর নবী করীম (সাঃ) সাক্ষ্য দেবেন যে, হে আল্লাহ! এই নবীরা সকলে সত্যবাদী। তিনি (সাঃ) এই সাক্ষ্য সেই কুরআনের ভিত্তিতে দিবেন, যা তাঁর উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং যাতে বিগত নবীগণ ও তাঁদের জাতির ইতিবৃত্ত প্রয়োজনানুযায়ী বর্ণিত হয়েছে। এটা হবে এক কঠিন মুহূর্ত। এর কল্পনা শরীরে কম্পন সৃষ্টি করে দেয়। হাদীসে এসেছে যে, একদা রসূল (সাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর কাছ থেকে কুরআন শোনার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। তিনি কুরআন শুনাতে শুনাতে যখন এই আয়াতে এসে পৌঁছলেন, তখন রসূল (সাঃ) বললেন, থামো, যথেষ্ট হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি দেখলাম তাঁর দু’চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে। (সহীহ বুখারী) কিছু লোক বলে থাকে, সাক্ষ্য সেই দিতে পারবে, যে সবকিছু স্বচক্ষে দেখবে। এই জন্যই তারা ‘শাহীদ’ এর অর্থ করেঃ উপস্থিত ও প্রত্যক্ষদর্শী এবং এইভাবে নবী করীম (সাঃ)-এর ব্যাপারে বুঝায় যে তিনি ‘হাযির-নাযির’ (সর্বত্র উপস্থিত এবং সব কিছুই দেখেন।) কিন্তু নবী করীম (সাঃ)-কে ‘হাযির-নাযির’ মনে করলে তাঁকে আল্লাহর গুণে শরীক করা হবে। আর এটা হল শিরক। কেননা, ‘হাযির-নাযির’ হওয়া কেবলমাত্র আল্লাহ তাআলার গুণ। ‘শাহীদ’ শব্দ থেকে ‘হাযির-নাযির’ হওয়া প্রমাণ করার কথা অতি দুর্বল। কারণ, নিশ্চিত জ্ঞানের ভিত্তিতেও সাক্ষ্য দেওয়া যায়। আর কুরআনে বর্ণিত ঘটনাদির চেয়ে অধিক নিশ্চিত জ্ঞান আর কিসের মাধ্যমে হতে পারে? এই নিশ্চিত জ্ঞানের ভিত্তিতেই মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উম্মতকেও কুরআন [شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ] ‘‘বিশ্বের সমস্ত মানুষের সাক্ষী হবে’’ বলেছে। যদি সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ‘হাযির-নাযির’ হওয়া জরুরী হয়, তাহলে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সকল উম্মতকে ‘হাযির-নাযির’ বলে বিশ্বাস করতে হবে। মোট কথা, রসূল (সাঃ)-এর ব্যাপারে এই ধরনের বিশ্বাস রাখা শিরক ও ভিত্তিহীন। أَعَاذَنَا اللهُ مِنْهُ
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪২. যারা কুফর করেছে এবং রাসূলের অবাধ্য হয়েছে তারা সেদিন কামনা করবে, যদি তারা মাটির সাথে মিশে যেত(১)। আর তারা আল্লাহ হতে কোন কথাই গোপন করতে পারবে না(২)।
(১) এ আয়াতে হাশরের মাঠে কাফেরদের দূরাবস্থার বিবরণ দান প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এরা কিয়ামতের দিন কামনা করবে যে, হায়! আমরা যদি ভূমির সাথে মিশে যেতাম, ভূমি যদি দ্বিধা হয়ে যেত আর আমরা তাতে ঢুকে গিয়ে মাটি হয়ে যেতাম এবং এখানকার জিজ্ঞাসাবাদ ও হিসাব-নিকাশ থেকে যদি অব্যাহতি লাভ করতে পারতাম। হাশরের ময়দানে কাফেররা যখন দেখবে, সমস্ত জীব-জন্তু একে অপরের কাছ থেকে কৃত অত্যাচারের প্রতিশোধ নেয়ার পর মাটিতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে, তখন তাদের আক্ষেপ হবে এবং কামনা করবে - হায়! আমরাও যদি মাটি হয়ে যেতাম। যেমন অন্য সূরায় বলা হয়েছে, “আর কাফেররা বলবে, কতই না উত্তম হত যদি আমরা মাটি হয়ে যেতাম।” [সূরা আন-নাবা: ৪০]
(২) অর্থাৎ এই কাফেররা নিজেদের বিশ্বাস ও কৃতকর্ম সম্পর্কে আল্লাহর কাছে কোন কিছুই গোপন রাখতে পারবে না। তাদের হাত-পা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্বীকার করবে, নবীরাসূলগণ সাক্ষ্য দান করবেন এবং আমলনামাসমূহেও সবকিছু বিধৃত থাকবে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, কুরআনের এক জায়গায় বলা হয়েছে, কাফেররা কোন কিছুই গোপন করতে পারবে না। আবার অন্যত্র বলা হয়েছে, তারা কছম খেয়ে খেয়ে বলবে (وَاللَّهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشْرِكِينَ) অর্থাৎ “আল্লাহর কছম আমরা শির্ক করিনি।” [সূরা আল-আনআমঃ ২৩] বাহ্যতঃ এ দুটি আয়াতের মধ্যে যে বৈপরীত্য দেখা যায় তার কারণ কি? তখন ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা উত্তরে বললেন, ব্যাপারটি এমন হবে যে, যখন প্রথমে কাফেররা লক্ষ্য করবে শুধুমাত্র মুসলিম ছাড়া অন্য কেউ জান্নাতে যাচ্ছে না, তখন তারা একথা স্থির করে নেবে যে, আমাদেরকেও নিজেদের শির্ক ও অসৎকর্মের বিষয় অস্বীকার করা উচিত। হয়ত আমরা এভাবে মুক্তি পেয়েও যেতে পারি।
কিন্তু এ অস্বীকৃতির পর স্বয়ং তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোই তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে আরম্ভ করবে এবং গোপন করার যে মতলব তারা স্থির করেছিল, তাতে সম্পূর্ণভাবে অকৃতকার্য হয়ে পড়বে এবং তখন সবই স্বীকার করে নেবে। এজন্যই বলা হয়েছে (وَلَا يَكْتُمُونَ اللَّهَ حَدِيثًا) ‘কোন কিছুই গোপন করতে পারবে না’। যদি কেউ ভাল কাজ করে তাও সে বলবে, এক হাদীসে এসেছে হাশরের দিন আল্লাহ তা’আলা তার কোন বান্দাকে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করবেন যাকে তিনি সম্পদ দিয়েছিলেনঃ দুনিয়াতে তুমি কি কাজ করেছ? তখন সে কোন কথাই গোপন করবে না। সে বলবেঃ হে আমার রব, আপনি আমাকে সম্পদ দিয়েছেন, আমি মানুষের সাথে বেচা-কেনা করতাম। আমার স্বভাব ছিল মানুষকে ছাড় দেয়ার। আমি ধনীদের সাথে সহজ ব্যবহার করতাম আর দরিদ্রদেরকে সময় দিতাম। তখন আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ আমি এটা করার জন্য তোমার চেয়েও বেশী উপযুক্ত। আমার বান্দাকে তোমরা ছাড় দাও। [মুসলিমঃ ১৫৬০]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪২) যারা অবিশ্বাস করেছে এবং রসূলের অবাধ্য হয়েছে, তারা সেদিন কামনা করবে যে, যদি তারা মাটির সাথে মিশে যেত! এবং তারা (সেদিন) আল্লাহ হতে কোন কথাই গোপন করতে পারবে না।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
* তাহলে তার কথা ভিন্ন, সে গোসল না করেও শুধু তায়াম্মুম করে নামায পড়তে পারবে। কেউ কেউ বলেছেন, এখানে সালাত অর্থ সালাত আদায়স্থল। তাহলে অর্থ হবে, তোমরা অপবিত্র অবস্থায় সালাত আদায়স্থল তথা মসজিদে যেতে পারবে না। তবে পথ অতিক্রমের উদ্দেশ্যে যাওয়া যাবে। (যুবদাতুত-তাফসীর)।
৪৩. হে মুমিনগণ! নেশাগ্রস্ত অবস্থায়(১) তোমরা সালাতের নিকটবর্তী হয়ে না, যতক্ষন পর্যন্ত না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার(২) এবং যদি তোমরা মুসাফির না হও তবে অপবিত্র অবস্থাতেও নয়, যতক্ষন পর্যন্ত না তোমরা গোসল কর(৩)। আর যদি তোমরা পীড়িত হও অথবা সফরে থাক বা তোমাদের কেউ শৌচস্থান থেকে আসে অথবা তোমরা নারী সম্ভোগ কর এবং পানি না পাও তবে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম কর(৪) সুতরাং মাসেহ কর তোমরা তোমাদের চেহারা ও হাত, নিশ্চয় আল্লাহ পাপ মোচনকারী, ক্ষমাশীল।
(১) আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইসলামী শরীআতকে একটি বৈশিষ্ট্য এই দান করেছেন যে, এর প্রতিটি বিধি-বিধানকে তিনি সরল ও সহজ করেছেন। তারই এক বিশেষ দিক হচ্ছে এই যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যাদের মন-মানসকে একান্ত নিষ্পাপ করে তৈরী করেছিলেন এমন বিশেষ বিশেষ কিছু লোক ছাড়া মদ্যপান ছিল সমগ্র আরববাসীর পুরাতন অভ্যাস। কিন্তু বিশেষ বিশেষ লোকেরা কখনো এই দুষ্ট বস্তুর ধারে কাছেও যেতেন না। যেমন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বেও কখনো মদ স্পর্শ করেননি। এছাড়া বলতে গেলে সমগ্র জাতিই ছিল এ বদ অভ্যাসে লিপ্ত। আর এ কথা সর্বজনবিদিত যে, কোন বস্তু একবার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেলে মানুষের পক্ষে তা পরিহার করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে মদ্যপান কিংবা অন্যান্য নেশাজনিত অভ্যাস মানুষকে এমনভাবে কাবু করে বসে যে, তা থেকে বেরিয়ে আসাকে সে মৃত্যুর শামিল মনে করতে থাকে আল্লাহ তা'আলার নিকট মদ্যপান ও নেশা করা ছিল হারাম।
বিশেষতঃ ইসলাম গ্রহণ করার পর মুসলিমদেরকে এর অভিশাপ থেকে রক্ষা করা ছিল আল্লাহ তা’আলার অভিপ্রায়। কিন্তু সহসা একে হারাম করে দেয়া হলে, মানুষের পক্ষে এ নির্দেশ পালন করা একান্তই কঠিন হত। কাজেই প্রথমে এর উপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হল এবং এর অশুভ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সতর্কীকরণের মাধ্যমে মানুষের মন-মস্তিস্ককে একে পরিহার করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হল। সুতরাং আলোচ্য আয়াতে শুধুমাত্র এ হুকুমই দেয়া হয়েছে যে, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের ধারে কাছেও যেও না। যার মর্ম ছিল এই যে, সালাতের সময় সালাতের প্রতি মনোনিবেশ করা ফরয। এ সময় মদ্যপান করা যাবে না। এতে মুসলিমগণ উপলব্ধি করলেন যে, এটা এমন এক মন্দ বস্তু যা মানুষকে সালাতে বাধা দান করে। কাজেই দেখা গেল অনেকে এ নির্দেশ আসার সাথে সাথেই মদ্যপান পরিহার করলেন এবং অনেকে এর মন্দ দিকগুলো সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করতে আরম্ভ করলেন। শেষ পর্যন্ত সূরা আল-মায়েদার আয়াতে মদের অপবিত্রতা ও হারাম হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশ নাযিল হল এবং যে কোন অবস্থায় মদ্যপান সম্পূর্ণভাবে হারাম হয়ে গেল।
(২) আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ মদ হারাম হওয়ার পূর্বে আমাদেরকে এক আনসার দাওয়াত দিল। দাওয়াত শেষে আব্দুর রহমান ইবন আউফ এগিয়ে গিয়ে মাগরিবের সালাতের ইমামতি করলেন। তিনি সূরা আল-কাফেরুন তেলাওয়াত করতে গিয়ে এলোমেলো করে ফেললেন। ফলে এ আয়াত নাযিল হয় যাতে মদ খাওয়ার পর বিবেকের সুস্থতা না ফেরা পর্যন্ত সালাত আদায় করতে নিষেধ করা হয়েছে। [আল-আহাদীসুল মুখতারাহঃ ২/১৮৮ নং ৫৬৭, অনুরূপ ২/১৮৭ নং ৫৬৬; আবু দাউদঃ ৩৬৭১; তিরমিযী: ৩০২৬]
(৩) অপবিত্র অবস্থা থেকে গোসল করার নিয়ম বর্ণনায় হাদীসে এসেছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন জানাবতের গোসল করতেন, তখন প্রথমে দু’ হাত ধুয়ে নিতেন। তারপর সালাতের অজুর মত অজু করতেন। তারপর পানিতে আঙ্গুল ঢুকিয়ে তা দিয়ে মাথার চুলের গোড়ায় পানি পৌছাতেন। তারপর তার মাথায় তিন ক্রোশ পানি দিতেন এবং সারা শরীরে পানি প্রবাহিত করতেন। [বুখারী: ২৪৮]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পা ধোয়া ব্যতীত সালাতের অজুর মত অজু করলেন, তার লজ্জাস্থান ধৌত করলেন, যে সমস্ত ময়লা লেগেছিল তাও ধৌত করলেন, তারপর তার নিজের শরীরে পানি প্রবাহিত করলেন। তারপর দু' পা সরিয়ে নিয়ে ধৌত করলেন। এটাই ছিল তার অপবিত্রতা থেকে গোসল করার পদ্ধতি। [বুখারী: ২৪৯]
(৪) আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, এক সফরে তিনি তার বোন আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে একটি হার ধার করে নিয়েছিলেন। তিনি সেটা হারিয়ে ফেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটা খুঁজতে এক ব্যক্তিকে পাঠান এবং তিনি তা খুঁজে পান ইত্যবসরে সালাতের ওয়াক্ত হয়ে যায়, কিন্তু তাদের নিকট পানি ছিল না। লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অভিযোগ করল। তখন তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল হয়। উসাইদ ইবনে হোদাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন, আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন। যখনি কোন অপছন্দনীয় ব্যাপার আপনার উপর ঘটে গেছে, তখনি তা আপনার এবং উম্মতে মুসলিমার জন্য কল্যাণের কারণ হয়েছে। [বুখারীঃ ৩৩৬, মুসলিমঃ ৩৬৭]
মূলতঃ তায়াম্মুমের হুকুম একটি পুরস্কার- যা এ উম্মতেরই বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ্ তা'আলার কতই না অনুগ্রহ যে, তিনি অযু-গোসল প্রভৃতি পবিত্রতার নিমিত্ত এক বস্তুকে পানির স্থলাভিষিক্ত করে দিয়েছেন, যার প্রাপ্তি পানি অপেক্ষাও সহজ। বলাবাহুল্য, ভূমি ও মাটি সর্বত্রই বিদ্যমান। হাদীসে বর্ণিত আছে যে, এ সহজ ব্যবস্থাটি একমাত্র উম্মতে মুহাম্মাদীকেই দান করা হয়েছে।
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৩) হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা নেশার অবস্থায় নামাযের নিকটবর্তী হয়ো না,[1] যতক্ষণ না তোমরা কি বলছ, তা বুঝতে পার এবং অপবিত্র অবস্থাতেও নয়, যদি তোমরা পথচারী না হও,[2] যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা গোসল কর।[3] আর যদি তোমরা অসুস্থ হও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ পায়খানা (শৌচস্থান) হতে আসে অথবা তোমরা নারী-সম্ভোগ কর এবং পানি না পাও, তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর; (তা) মুখে ও হাতে বুলিয়ে নাও।[4] নিশ্চয় আল্লাহ পরম মার্জনাকারী, অত্যন্ত ক্ষমাশীল।
[1] এই নির্দেশ ছিল ঐ সময়ে, যখন মদ হারাম হওয়ার কথা তখনো নাযিল হয়নি। কোন এক খাবার দাওয়াতে মদ পানের পর নামাযে দাঁড়ালে নেশার ঘোরে ইমাম সাহেব কুরআন পড়তে ভুল করেন। (বিস্তারিত জানার জন্য দ্রষ্টব্যঃ তিরমিযী, তাফসীর সূরা নিসা) ফলে এই আয়াত অবতীর্ণ করে বলা হয় যে, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামায পড়ো না। অর্থাৎ, তখন কেবল নামাযের নিকটবর্তী সময়ে মদপান করতে নিষেধ করা হয়। মদপানের পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা ও তার হারাম হওয়ার নির্দেশ পরে নাযিল হয়। (এটা হল মদের ব্যাপারে দ্বিতীয় নির্দেশ যা শর্ত-সাপেক্ষ।)
[2] এর অর্থ এই নয় যে, পথে বা সফরে থাকা অবস্থায় পানি না পাওয়া গেলে অপবিত্র অবস্থাতেই নামায পড়ে নাও (যেমন অনেকে মনে করে), বরং অধিকাংশ উলামাদের নিকট এর অর্থ হল, অপবিত্র অবস্থায় তোমরা মসজিদে বসো না, তবে মসজিদ হয়ে কোথাও যাওয়ার দরকার হলে যেতে পার। কোন কোন সাহাবীর ঘর এমন ছিল যে, সেখানে মসজিদের সীমানা হয়ে যাওয়া ছাড়া তাঁদের কোন উপায় ছিল না। আর এই কারণেই মসজিদ-সীমানার ভিতর হয়ে অতিক্রম করে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। (ইবনে কাসীর) মুসাফিরের বিধান তো পরে আসবে।
[3] অর্থাৎ, অপবিত্র অবস্থাতেও নামায পড়বে না। কারণ, নামাযের জন্য পবিত্রতা অত্যাবশ্যক।
[4] এখানের যাদের জন্য তায়াম্মুম বিধেয়, তাদের কথা বলা হচ্ছেঃ
(ক) অসুস্থ ব্যক্তি বলতে এমন রোগীকে বুঝানো হয়েছে, যে ওযু করলে ক্ষতি অথবা রোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা করে।
(খ) সফর বা মুসাফির সাধারণ শব্দ তাতে সফর লম্বা হোক বা সংক্ষিপ্ত; পানি না পেলে তায়াম্মুম করার অনুমতি আছে। পানি না পাওয়া গেলে তায়াম্মুম করার অনুমতি তো গৃহবাসী (অমুসাফির)-এরও আছে, কিন্তু রোগী ও মুসাফিরের এই ধরনের প্রয়োজন সাধারণতঃ বেশী দেখা দেয়, তাই বিশেষ করে তাদের জন্য এই অনুমতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
(গ) পেশাব-পায়খানার প্রয়োজন পূরণকারী এবং
(ঘ) স্ত্রীর সাথে সহবাসকারীও যদি পানি না পায়, তাহলে তাদের জন্যও তায়াম্মুম করে নামায পড়ার অনুমতি আছে। আর তায়াম্মুম করার নিয়ম হল, পবিত্র মাটিতে একবার হাত দু’টিকে মেরে উভয় হাতকে কবজি পর্যন্ত বুলিয়ে নিয়ে (কনুই পর্যন্ত নয়) মুখে বুলিয়ে নিবে। নবী করীম (সাঃ) তায়াম্মুম সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘উভয় হাত এবং মুখমন্ডলের জন্য একবার মাটিতে মারতে হবে।’’ (মুসনাদ আহমাদ ৪/২৬৩) [صَعِيْدًا طَيِّبًا] এর অর্থ হল, পবিত্র মাটি। মাটি থেকে উৎপন্ন প্রতিটি জিনিস নয়, যেমন অনেকে মনে করে। হাদীসে এটা আরো পরিষ্কার করে বলে দেওয়া হয়েছেঃ (جُعِلَتْ تُرْبَتُهَا لَنَا طَهُوْرًا إِذَا لَمْ نَجِدِ المَاءَ) ‘‘পানি না পাওয়া গেলে যমীনের মাটিকে আমাদের জন্য পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ (মুসলিম ৫২২নং)
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৪. আপনি কি তাদেরকে দেখেননি যাদেরকে কিতাবের এক অংশ দেয়া হয়েছিল? তারা ভ্রান্ত পথ ক্রয় করে এবং তোমরাও পথভ্রষ্ট হও- এটাই তারা চায়।(১)
(১) এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, ইয়াহুদী নাসররা নিজেরা পথভ্রষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ঈমানদারদেরকেও পথভ্রষ্ট করতে চায়। অন্য আয়াতে তাদের সংখ্যা অনেক বলে বর্ণনা করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে যে, তারা মুসলিমদের মুর্তাদ হয়ে যাওয়া কামনা করে। আরও বলা হয়েছে যে, তাদের কাছে সত্য স্পষ্ট হওয়ার পরও কেবলমাত্র হিংসার বশবর্তী হয়েই তারা এটা করে থাকে। যেমন আল্লাহ বলেন, “কিতাবীদের অনেকেই চায়, যদি তারা তোমাদেরকে তোমাদের ঈমান আনার পর কাফেররূপে ফিরিয়ে নিতে পারত! সত্য স্পষ্ট হওয়ার পরও তাদের নিজেদের পক্ষ থেকে বিদ্বেষবশতঃ (তারা এটা করে থাকে) [সূরা আল-বাকারাহ: ১০৯] আরও বলেন, “কিতাবীদের একদল চায় যেন তোমাদেরকে বিপথগামী করতে পারে, অথচ তারা নিজেদেরকেই বিপথগামী করে। আর তারা উপলব্ধি করে না।” [সূরা আলে ইমরান: ৬৯]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ইয়াহুদীদের নেতাদের মধ্যে রিফা'আ ইবন যায়েদ যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে কথা বলত, তখন সে তার জিহবা ঘুরিয়ে বলত: হে মুহাম্মাদ! তুমি ভাল করে আমাদেরকে শোনাও যাতে আমরা বুঝতে পারি। তারপর সে ইসলামের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়াত। তখন আল্লাহ তা'আলা এ আয়াত নাযিল করেন। [আত-তাফসীরুস সহীহ]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৪) তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যাদেরকে কিতাবের এক অংশ দেওয়া হয়েছে? তারা বিভ্রান্তি ক্রয় করে এবং চায় যে, তোমরাও পথভ্রষ্ট হও।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৫. আল্লাহ তোমাদের শক্ৰদেরকে ভালভাবে জানেন। আর অভিভাবকত্বে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সাহায্যেও আল্লাহই যথেষ্ট।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৫) বস্তুতঃ আল্লাহ তোমাদের শত্রুদেরকে ভালভাবে জানেন। আর অভিভাবক হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সাহায্যকারী হিসাবেও আল্লাহই যথেষ্ট।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
* আরবীতে ‘রা’ইনা শব্দের অর্থ ‘আমাদের তত্ত্বাবধান করুন’। ইয়াহূদীরা শব্দটিকে বিকৃত করে উচ্চারণ করত, যা তাদের ভাষায় (হিব্রুতে) গালি হিসেবে ব্যবহৃত হত। এ সম্পর্কে আরো দ্র. সূরা বাকারার ১০৪ নং আয়াতের টীকা।
৪৬. ইয়াহুদীদের মধ্যে কিছু লোক কথাগুলো স্থানচ্যুত করে বিকৃত করে(১) এবং বলে, “শুনলাম ও অমান্য করলাম” এবং শোনে না শোনার মত; আর নিজেদের জিহবা কুঞ্চিত করে এবং দ্বীনের প্রতি তাচ্ছিল্ল করে বলে, রাইনা(২)। কিন্তু তারা যদি বলত, শুনলাম ও মান্য করলাম এবং শুনুন ও আমাদের প্রতি লক্ষ্য করুন, তবে তা তাদের জন্য ভাল ও সঙ্গত হত। কিন্তু তাদের কুফরীর জন্য আল্লাহ্ তাদেরকে লা'নত করেছেন। ফলে তাদের অল্প সংখ্যকই ঈমান আনে।
(১) অর্থাৎ ইয়াহুদীরা তাওরাতে বর্ণিত আল্লাহর হুদুদসমূহ বিকৃত করত। [আত-তাফসীরুস সহীহ]
(২) সূরা আল-বাকারাহ এর ১০৪ নং আয়াতে এ শব্দের ব্যাখ্যা করা হয়েছে। মূলত: বাক্যটি দ্ব্যর্থবোধক। তারা এটাকে খারাপ অর্থে ব্যবহার করত।
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৬) ইয়াহুদীদের কিছু লোক (তাওরাতের) বাক্যাবলী বিকৃত করে এবং (মুহাম্মাদকে) বলে, ‘আমরা (তোমার কথা) শুনলাম ও অমান্য করলাম’ এবং ‘শোন! যেন শোনা না হয়।’[1] আর নিজেদের জিহ্বা কুঞ্চিত করে এবং ধর্মের প্রতি তাচ্ছিল্য করে বলে, ‘রায়িনা’। কিন্তু তারা যদি বলত, ‘শুনলাম ও মান্য করলাম’ এবং ‘শোন ও উনযুরনা (আমাদের খেয়াল কর)’ তবে তা তাদের জন্য উত্তম ও সুসঙ্গত হত। কিন্তু তাদের অবিশ্বাসের জন্য আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেছেন। অতএব, তাদের অল্পসংখক লোকই বিশ্বাস করবে। [2]
[1] ইয়াহুদীদের বহু ধৃষ্টতা ও বদমায়েশির মধ্যে একটা এটাও ছিল যে, তারা ‘আমরা শুনলাম’ বলার সাথে সাথেই বলে দিত যে, ‘অমান্য করলাম।’ অর্থাৎ, আমরা তোমার আনুগত্য করব না। এটা মনে মনে বলত অথবা নিজেদের সঙ্গী-সাথীদেরকে বলত বা অতি বড় অভদ্রতা ও বাহাদুরী দেখিয়ে সামনা-সামনিই বলে দিত। অনুরূপ غَيْرَ مُسْمَعٍ অর্থাৎ, তোমার কথা যেন শোনা না হয়, বদ্দুআ করে এ রকম বলত। অর্থাৎ, তোমার কথা যেন গৃহীত না হয়। আর رَاعِنَا সম্পর্কে জানার জন্য দ্রষ্টব্যঃ সূরা বাক্বারার ১০৪ নং আয়াতের টীকা।
[2] অর্থাৎ, তাদের মধ্যে ঈমান আনয়নকারী লোকের সংখ্যা খুবই নগণ্য হবে। পূর্বে আলোচিত হয়েছে যে, ইয়াহুদীদের মধ্য থেকে ঈমান আনয়নকারীদের সংখ্যা দশ পর্যন্তও পৌঁছেনি। অথবা এর অর্থ হল, তারা অনেক অল্প বিষয়ের উপর ঈমান আনবে। অথচ ফলপ্রসূ ঈমানের দাবী হল, সমস্ত বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
* দাউদ (আঃ) এর উম্মতের উপর সাবত বা শনিবারে ইবাদাত করা ফরয ছিল এবং পরীক্ষাস্বরূপ এ দিনে মাছ শিকার করা নিষিদ্ধ ছিল। এ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাছ শিকার করায় আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে আযাবস্বরূপ বানরে পরিণত করেছিলেন।
৪৭. হে কিতাবপ্রাপ্তগণ, তোমাদের কাছে যা আছে তার সমর্থকরূপে আমরা যা নাযিল করেছি তাতে তোমরা ঈমান আন(১), আমরা মুখমণ্ডলগুলোকে বিকৃত করে তারপর সেগুলোকে পিছনের দিকে ফিরিয়ে দেয়ার আগে(২) অথবা আসহাবুস সাবতকে যেরূপ লা’নত করেছিলাম(৩) সেরূপ তাদেরকে লা'নত করার আগে। আর আল্লাহর আদেশ কার্যকরী হয়েই থাকে।
(১) ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার একদল ইয়াহুদী সর্দার যেমন আব্দুল্লাহ ইবন সুওরিয়া, কাব ইবন আসওয়াদ প্রমুখদের সাথে কথোপকথন চলার সময় বলেছিলেন, হে ইয়াহুদীরা তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং ঈমান আন। আল্লাহর শপথ, তোমরা জান যে, আমি যা নিয়ে এসেছি তা বাস্তবিকই হক। তখন তারা বলল, মুহাম্মাদ আমরা তা জানি না। তারা যা জানত তা অস্বীকার করল এবং কুফরতে বহাল রইলো। তখন আল্লাহ তা'আলা এ আয়াত নাযিল করেন। [তাবারী]
(২) ঘুরিয়ে দেয়া বা উল্টে দেয়ার মধ্যে দুটি সম্ভাবনাই থাকতে পারে মুখমণ্ডলের আকার অবয়ব মুছে দিয়ে গোটা চেহারাকে পশ্চাদিকে ফিরিয়ে দেয়াও হতে পারে, আবার মুখমণ্ডলকে গর্দানের মত সমান্তরাল করে দেয়াও হতে পারে। অর্থাৎ মুখমণ্ডলকে গদানের দিকে উল্টে না দিয়ে বরং গর্দানের মত পরিস্কার ও সমান্তরাল করে দেয়া। [রুহুল মা'আনী] তবে মুজাহিদ বলেন, এখানে পশ্চাদিকে ফিরিয়ে দেয়ার অর্থ, হক পথ থেকে তাদেরকে বিচ্যুত করে দেয়া যাতে তারা পশ্চাতে ফেলে আসা ভ্ৰষ্ট পথেই ফিরে যায়। [আত-তাফসীরুস সহীহ]
(৩) ‘আসহাবুস সাবত’ অর্থ শনিবারের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গ। আল্লাহ্ তাআলা ইয়াহুদীদেরকে শনিবারে মাছ শিকার করতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু তারা সে নির্দেশকে হীলা-বাহানা করে অমান্য করেছিল। তখন আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে বানরে রুপান্তরিত করেছিলেন। [দেখুন, সূরা আল-বাকারাহ: ৬৫] তা ছিল নিঃসন্দেহে অভিশাপ। এ আয়াতে সে ধরনের অভিশাপের ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৭) হে গ্রন্থধারিগণ! তোমরা তোমাদের নিকট যা আছে তার সমর্থনরূপে আমি যা অবতীর্ণ করেছি তাতে বিশ্বাস স্থাপন কর, এর পূর্বে যে, আমি বহু লোকের মুখমন্ডল বিকৃত করে পিছনের দিকে ফিরিয়ে দেব[1] অথবা শনিবার অমান্যকারীদেরকে যেরূপ অভিসম্পাত করেছিলাম, সেরূপ তাদেরকে অভিসম্পাত করব। [2] বস্তুতঃ আল্লাহর আদেশ কার্যকর হয়েই থাকে। [3]
[1] অর্থাৎ, আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে তোমাদের কর্মের কারণে এই শাস্তি দিতে পারেন।
[2] শনিবারের এ ঘটনা সূরা আ’রাফ ১৬৩নং আয়াতে আসবে। সামান্য ইঙ্গিত পূর্বে (সূরা বাক্বারাহ ৬৫নং আয়াতে)ও করা হয়েছে। অর্থাৎ, তোমরাও তাদের মত অভিশপ্ত গণ্য হতে পার।
[3] অর্থাৎ, যখন তিনি কোন কিছুর আদেশ করেন, তখন না কেউ তাঁর বিরোধিতা করতে পারে, আর না কেউ তাঁকে বাধা দিতে পারে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৮. নিশ্চয় আল্লাহ তার সাথে শরীক(১) করাকে ক্ষমা করেন না। এছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করেন(২)। আর যে-ই আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে এক মহাপাপ রটনা করে।
(১) আয়াতে আল্লাহ তা'আলার সত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কে যেসব বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে, যে কোন সৃষ্ট বস্তুর ব্যাপারে তেমন কোন বিশ্বাস পোষণ করাই হল শির্ক। অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন সৃষ্ট বস্তুকে ইবাদাত কিংবা মহব্বত ও সম্মান প্রদর্শনে আল্লাহর সমতুল্য মনে করাই শির্ক। জাহান্নামে পৌছে মুশরিকরা যে উক্তি করবে, আল্লাহ তা'আলা তা উল্লেখ করেছেন যে, “আল্লাহর শপথ, আমরা প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত ছিলাম যখন আমরা তোমাদেরকে বিশ্ব-পালনকর্তার সমতুল্য স্থির করেছিলাম।” [সূরা আশ-শু'আরাঃ ৯৭-৯৮] শির্কের প্রকারভেদ সম্পর্কে সূরা আল-বাকারাহ এর ২২ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখানে এটা জানা আবশ্যক যে, যুলুম ও অবিচার তিন প্রকার। এক প্রকার যুলুম যা আল্লাহ্ তাআলা কখনো ক্ষমা করবেন না। দ্বিতীয় প্রকার যুলুম যা মাফ হতে পারে। আর তৃতীয় প্রকার যুলুমের প্রতিশোধ আল্লাহ তা'আলা না নিয়ে ছাড়বেন না। প্রথম প্রকার যুলুম হচ্ছে শির্ক, দ্বিতীয় প্রকার আল্লাহর হকে ক্রটি করা এবং তৃতীয় প্রকার বান্দার হক বিনষ্ট করা। [ইবন কাসীর]
এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, তিনি তার সাথে শির্ক করাকে ক্ষমা করবেন না। এর বাইরে যত গোনাহ আছে সবই তিনি যার জন্যে ইচ্ছে ক্ষমা করে দিবেন। আর যে তার সাথে কাউকে শরীক করে সে অবশ্যই এক বড় মিথ্যা অপবাদ রটনা করল। অন্য আয়াতে অবশ্য আল্লাহ্ তা'আলা শির্ককারীদের মধ্যে যারা তাওবা করবে তাদেরকে ক্ষমা করার কথা ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ বলেন, “আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহকে ডাকে না, ... তবে যদি তারা তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে।” [সূরা আল-ফুরকান: ৭০] সুতরাং তাওবাহ করলে শির্কও মাফ হয়ে যায়।
(২) আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ আমরা কবীরা গোনাহকারীর জন্য ইস্তেগফার করা থেকে বিরত থাকতাম। শেষ পর্যন্ত যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ আয়াত শুনলাম এবং আরো শুনলাম যে, তিনি বলছেনঃ আমি আমার দো’আকে গচ্ছিত রেখেছি আমার উম্মতের কবীরা গোনাহগারদের সুপারিশ করার জন্য। ইবন উমর বলেনঃ এরপর আমাদের অন্তরে যা ছিল, তা অনেকটা কেটে গেল ফলে আমরা ইস্তেগফার করতে থাকলাম ও আশা করতে থাকলাম। [মুসনাদে আবি ইয়া'লাঃ ৫৮১৩]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৮) নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে অংশী (শিরক) করার অপরাধ ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্যান্য অপরাধ যার জন্য ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন। [1] আর যে কেউ আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপন (শিরক) করে, সে এক মহাপাপ করে। [2]
[1] অর্থাৎ, এমন অপরাধ ও গুনাহ, যা থেকে তওবা না করেই মুমিন মারা গেছে। আল্লাহ তাআলা কারো জন্য চাইলে কোন প্রকারের শাস্তি না দিয়েই তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং অনেককে শাস্তি দেওয়ার পর ক্ষমা করবেন। আবার অনেককে নবী করীম (সাঃ)-এর সুপারিশে ক্ষমা করবেন। কিন্তু আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করার অপরাধ কোন অবস্থাতেই মাফ হবে না। কেননা, মুশরিকের উপর তিনি জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন।
[2] অন্যত্র বলেছেন, [إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ] "শিরক হল সব চেয়ে বড় অন্যায়।" (লুকমানঃ ১৩) হাদীসেও শিরককে সব থেকে বড় পাপ গণ্য করা হয়েছে। أَكْبَرُ الْكَبَائِرِ الشِّرْكُ بِاللهِ ...।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৯. আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা নিজেদেরকে পবিত্র মনে করে? বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছে পবিত্র করেন।(১) আর তাদের উপর সূতা পরিমাণও যুলুম করা হবে না।
(১) আয়াতের ভাষ্য হচ্ছে, নিজেকে কেউ যেন দোষ-ত্রুটির উর্ধ্বে মনে না করে। মূলত: আত্মপ্রশংসা এবং নিজেকে ক্রটিমুক্ত মনে করা বৈধ নয়। ইয়াহুদীরা নিজেদেরকে পবিত্র বলে বর্ণনা করত। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তা'আলা এ আয়াতে তাদের পবিত্রতা বর্ণনা করে; তাদের ব্যাপারে বিস্মিত হওয়াই উচিত। এতে প্রতীয়মান হয় যে, কারো পক্ষে নিজের কিংবা অন্য কারো পবিত্রতা বর্ণনা করা জায়েয নয়। এই নিষিদ্ধতার কয়েকটি কারণ রয়েছে-
অধিকাংশ ক্ষেত্রে আত্মপ্রশংসার কারণ হয়ে থাকে অহমিকা বা আত্মগৰ্ব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর প্রশংসা করা থেকে বেঁচে থাক। কেননা, তা হচ্ছে জবাই করা।’ [ইবন মাজাহঃ ৩৭৪৩] কাতাদা বলেন, এখানে ইয়াহুদীদেরকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। তারা নিজেদের প্রশংসায় কোন প্রকার কসুর করত না। তারা নিজেদেরকে আল্লাহর সন্তান-সন্তুতি ও তার প্রিয়পাত্র বলে দাবী করত। [তাবারী]
দ্বিতীয়তঃ শেষ পরিণতি সম্পর্কে শুধুমাত্র আল্লাহ্ তা'আলাই অবগত যে, তা পবিত্রতা কিংবা পরহেযগারীর মধ্যেই হবে কিনা। কাজেই নিজে নিজেকে পবিত্র বলে আখ্যায়িত করা তাকওয়ার পরিপন্থি। এক বর্ণনায় এসেছে, সালমা বিনতে যয়নব রাদিয়াল্লাহু আনহা তার মাতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কি? তখন যেহেতু আমার নাম ছিল بَرَّة (বাররাহ বা পাপমুক্ত), কাজেই আমি তাই বললাম। তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমরা নিজেরা নিজেদেরকে পাপমুক্ত বলে বর্ণনা করো না। কারণ, একমাত্র আল্লাহ তা'আলাই জানেন, তোমাদের মধ্যে কে পবিত্র। অতঃপর বাররাহ নামটি পাল্টিয়ে তিনি যয়নব রেখে দিলেন। [বুখারীঃ ৫৮৩৯, মুসলিমঃ ২১৪১]
নিষিদ্ধতার আরো এক কারণ এই যে, অধিকাংশ সময় এ ধরনের দাবী করতে গিয়ে মানুষের মনে এমন ধারণা সৃষ্টি হতে থাকে যে, সে লোক আল্লাহ্ তা'আলার দরবারে এজন্য প্রিয় যে, সে যাবতীয় দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত। অথচ কথাটি সর্বৈব মিথ্যা। কারণ, মানুষের মধ্যে অসংখ্য ক্রটি-বিচ্যুতি বিদ্যমান থাকে। নিষিদ্ধতার আরেক কারণ হল, মানুষ জানে না তার কৃত আমল আল্লাহর দরবারে কবুল হচ্ছে কিনা। কেননা, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, যখন (وَالَّذِينَ يُؤْتُونَ مَا آتَوْا وَقُلُوبُهُمْ وَجِلَةٌ أَنَّهُمْ إِلَىٰ رَبِّهِمْ رَاجِعُونَ) ‘আর যারা তাদেরকে যা দেয়া হয়েছে তা দেয় এমতাবস্থায় যে, তাদের অন্তর ভীত-সন্ত্রস্ত এজন্যে যে তারা তাদের রব এর কাছে প্রত্যাবর্তন করবে’। [সূরা আল-মু'মিনূনঃ ৬০] এ আয়াত নাযিল হল, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম তারা কি ঐ সম্প্রদায় যারা মদ খায় এবং চুরি করে? তিনি বললেন, না, হে সিদ্দিকের মেয়ে! তারা হল ঐ সমস্ত ব্যক্তি যারা সালাত-সাওম আদায় করে এবং ভয় করে যে তাদের থেকে কবুল করা হবে না। [তিরমিযীঃ ৩১৭৫, ইবন মাজাহঃ ৪১৯৮, মুসনাদে আহমাদঃ ৬/১৫৯]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৯) তুমি কি তাদেরকে দেখনি যারা নিজেদেরকে পবিত্র মনে করে? অথচ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করে থাকেন। আর তাদের প্রতি খেজুরের আঁটির ফাটলে সুতো বরাবর (সামান্য পরিমাণ)ও যুলুম করা হবে না। [1]
[1] ইয়াহুদীরা নিজ মুখেই নিজেদের বড়াই ও প্রশংসা করত। যেমন তারা বলত, আমরা আল্লাহর পুত্র এবং তাঁর প্রিয়পাত্র ইত্যাদি। আল্লাহ বললেন, কাউকে প্রশংসাভাজন ও পবিত্র করণের কাজও আল্লাহর এবং কে পবিত্র তা তিনিই জানেন। فَتِيْل খেজুরের আঁটির ফাটলে অতি সূক্ষ্ণ ও পাতলা সুতোর মত যে অংশ থাকে সেটাকেই ‘ফাতীল’ বলা হয়। অর্থাৎ, এইটুকু সামান্য পরিমাণ যুলুমও করা হবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫০. দেখুন! তারা আল্লাহ সম্বন্ধে কিরূপ মিথ্যা উদ্ভাবন করে; আর প্রকাশ্য পাপ হিসেবে এটাই যথেষ্ট।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫০) দেখ! তারা আল্লাহ সম্বন্ধে কিরূপ মিথ্যা উদ্ভাবন করছে। [1] আর প্রকাশ্য পাপ হিসাবে এটিই যথেষ্ট। [2]
[1] অর্থাৎ, নিজেদের পবিত্রতার দাবী করে।
[2] অর্থাৎ, তাদের পবিত্র হওয়ার দাবী তাদের মিথ্যুক হওয়ার জন্য যথেষ্ট। কুরআনে কারীমের এই আয়াত এবং তার শানে নুযুলের বর্ণনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, একে অপরের প্রশংসা করা বিশেষ করে আত্মপ্রশংসা করার দাবী করা ঠিক ও জায়েয নয়। এই কথাটাকেই মহান আল্লাহ কুরআনের অন্যত্র এইভাবে বলেছেন, [فَلا تُزَكُّوا أَنْفُسَكُمْ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقَى] (النجم: 32) ‘‘অতএব তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না। আল্লাহই ভাল জানেন তোমাদের মধ্যে আল্লাহভীরু কে?’’ (সূরা নাজমঃ ৩২) মিকদাদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে এসেছে যে, নবী করীম (সাঃ) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা যেন মুখোমুখি প্রশংসাকারীদের মুখে ধুলো ছিটিয়ে দিই।’’ (মুসলিম ৩০০২নং) অপর এক হাদীসে এসেছে যে, রসূল (সাঃ) এক ব্যক্তিকে অপরজনের মুখোমুখি প্রশংসা করতে দেখলে বললেন, হায় হায়! তুমি তোমার সঙ্গীর গর্দান কেটে ফেললে।’’ তিনি বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যদি কাউকে একান্তই তার সঙ্গীর প্রশংসা করতে হয়, তাহলে সে যেন বলে, আমি ওকে এইরূপ মনে করি। আর আল্লাহর জ্ঞানের উপর কারো প্রশংসা করি না।’’ (বুখারী ২৬৬২নং)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান