সূরাঃ আন-নিসা | An-Nisa | سورة النساء - আয়াতঃ ৪১
৪:৪১ فَکَیۡفَ اِذَا جِئۡنَا مِنۡ کُلِّ اُمَّۃٍۭ بِشَهِیۡدٍ وَّ جِئۡنَا بِکَ عَلٰی هٰۤؤُلَآءِ شَهِیۡدًا ﴿ؕ؃۴۱﴾
فکیف اذا جىنا من کل امۃۭ بشهید و جىنا بک علی هولاء شهیدا ؃۴۱

অতএব কেমন হবে যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকে উপস্থিত করব তাদের উপর সাক্ষীরূপে? আল-বায়ান

সুতরাং তখন কী অবস্থা দাঁড়াবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মাতের মধ্য হতে এক একজনকে সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকেও হাজির করব তাদের উপর সাক্ষ্য দানের জন্য। তাইসিরুল

অনন্তর তখন কি দশা হবে যখন আমি প্রত্যেক ধর্ম/সম্প্রদায় হতে সাক্ষী আনয়ন করব এবং তোমাকেই তাদের প্রতি সাক্ষী করব? মুজিবুর রহমান

So how [will it be] when We bring from every nation a witness and we bring you, [O Muhammad] against these [people] as a witness? Sahih International

৪১. অতঃপর যখন আমরা প্রত্যেক উম্মত হতে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব(১) এবং আপনাকে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব তখন কি অবস্থা হবে?(২)

(১) এখানে আখেরাতের ময়দানের দৃশ্যকে সামনে উপস্থিত করার প্রতি লক্ষ্য করতে বলা হয়েছে। এতে মক্কাবাসী কাফেরদের ভীতি প্রদর্শনও উদ্দেশ্য বটে। তাদের কি অবস্থা হবে, যখন হাশরের ময়দানে প্রত্যেক উম্মতের নবীগণকে নিজ নিজ উম্মতের পাপ-পুণ্য ও সৎ-অসৎ আমলের সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করা হবে এবং যখন আপনিও নিজের উম্মতের সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। আর বিশেষ করে সেই কাফের-মুশরিকদের সম্পর্কে আল্লাহর আদালতে সাক্ষ্য দান করবেন যে, তারা প্রকাশ্য সব মু'জিযা প্রত্যক্ষ করা সত্বেও মিথ্যারোপ করেছে এবং আল্লাহর তাওহীদ ও আমার রেসালাতে বিশ্বাস স্থাপন করে নি। হাদীসে বর্ণিত আছে, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে বলেছেন, আমাকে কুরআন শোনাও। আব্দুল্লাহ বললেন, আপনি কি আমার কাছ থেকে শুনতে চান, অথচ কুরআন আপনার উপরই নাযিল হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ পড়। আব্দুল্লাহ বললেন, অতঃপর আমি সূরা আন-নিসা পড়তে আরম্ভ করলাম। তারপর এ আয়াত অর্থাৎ (فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ) পর্যন্ত পৌছার পর তিনি বললেন, এবার থাম। তারপর যখন আমি তার দিকে চোখ তুলে তাকালাম, দেখলাম, তার চোখ থেকে অশ্র গড়িয়ে পড়ছে। [মুসলিমঃ ৮০০]

(২) কোন কোন মনীষী বলেছেন, هَٰؤُلَاءِ এর দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে উপস্থিত কাফের মুনাফেকদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আবার অনেকের মতে কিয়ামত পর্যন্ত আগত গোটা উম্মতের প্রতিই এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে। যাই হোক, এতে বোঝা গেল যে, বিগত উম্মতসমূহের নবী-রাসূলগণ নিজ নিজ উম্মতের সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত হবেন এবং স্বয়ং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও স্বীয় উম্মতের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দান করবেন। কুরআনুল কারীমের এই বর্ণনারীতির দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর আর কোন নবীর আগমন ঘটবে না, যিনি স্বীয় উম্মতের উপর সাক্ষ্য দান করতে পারেন। অন্যথায় কুরআনুল কারীমে তার (অর্থাৎ সে নবীর এবং তার সাক্ষ্যদানের) বিষয়ও উল্লেখ থাকত। এ হিসেবে উক্ত আয়াতটি খতমে নবুওয়াতেরও একটি প্রমাণ।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪১) তখন তাদের কি অবস্থা হবে, যখন প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে একজন সাক্ষী (নবী) উপস্থিত করব এবং তোমাকেও তাদের সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব? [1]

[1] প্রত্যেক উম্মতের মধ্য থেকে তাদের পয়গম্বর আল্লাহর নিকট সাক্ষ্য দিয়ে বলবেন যে, হে আল্লাহ! আমি তোমার বার্তা আমার জাতির নিকট পৌঁছে দিয়েছি। তারা মানেনি, তাতে আমার কি দোষ? অতঃপর তাদের উপর নবী করীম (সাঃ) সাক্ষ্য দেবেন যে, হে আল্লাহ! এই নবীরা সকলে সত্যবাদী। তিনি (সাঃ) এই সাক্ষ্য সেই কুরআনের ভিত্তিতে দিবেন, যা তাঁর উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং যাতে বিগত নবীগণ ও তাঁদের জাতির ইতিবৃত্ত প্রয়োজনানুযায়ী বর্ণিত হয়েছে। এটা হবে এক কঠিন মুহূর্ত। এর কল্পনা শরীরে কম্পন সৃষ্টি করে দেয়। হাদীসে এসেছে যে, একদা রসূল (সাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর কাছ থেকে কুরআন শোনার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। তিনি কুরআন শুনাতে শুনাতে যখন এই আয়াতে এসে পৌঁছলেন, তখন রসূল (সাঃ) বললেন, থামো, যথেষ্ট হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি দেখলাম তাঁর দু’চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে। (সহীহ বুখারী) কিছু লোক বলে থাকে, সাক্ষ্য সেই দিতে পারবে, যে সবকিছু স্বচক্ষে দেখবে। এই জন্যই তারা ‘শাহীদ’ এর অর্থ করেঃ উপস্থিত ও প্রত্যক্ষদর্শী এবং এইভাবে নবী করীম (সাঃ)-এর ব্যাপারে বুঝায় যে তিনি ‘হাযির-নাযির’ (সর্বত্র উপস্থিত এবং সব কিছুই দেখেন।) কিন্তু নবী করীম (সাঃ)-কে ‘হাযির-নাযির’ মনে করলে তাঁকে আল্লাহর গুণে শরীক করা হবে। আর এটা হল শিরক। কেননা, ‘হাযির-নাযির’ হওয়া কেবলমাত্র আল্লাহ তাআলার গুণ। ‘শাহীদ’ শব্দ থেকে ‘হাযির-নাযির’ হওয়া প্রমাণ করার কথা অতি দুর্বল। কারণ, নিশ্চিত জ্ঞানের ভিত্তিতেও সাক্ষ্য দেওয়া যায়। আর কুরআনে বর্ণিত ঘটনাদির চেয়ে অধিক নিশ্চিত জ্ঞান আর কিসের মাধ্যমে হতে পারে? এই নিশ্চিত জ্ঞানের ভিত্তিতেই মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উম্মতকেও কুরআন [شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ] ‘‘বিশ্বের সমস্ত মানুষের সাক্ষী হবে’’ বলেছে। যদি সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ‘হাযির-নাযির’ হওয়া জরুরী হয়, তাহলে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সকল উম্মতকে ‘হাযির-নাযির’ বলে বিশ্বাস করতে হবে। মোট কথা, রসূল (সাঃ)-এর ব্যাপারে এই ধরনের বিশ্বাস রাখা শিরক ও ভিত্তিহীন। أَعَاذَنَا اللهُ مِنْهُ

তাফসীরে আহসানুল বায়ান