بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ২/ আল-বাকারা | Al-Baqara | سورة البقرة আয়াতঃ ২৮৬ মাদানী
২ : ২৬১ مَثَلُ الَّذِیۡنَ یُنۡفِقُوۡنَ اَمۡوَالَهُمۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ كَمَثَلِ حَبَّۃٍ اَنۡۢبَتَتۡ سَبۡعَ سَنَابِلَ فِیۡ كُلِّ سُنۡۢبُلَۃٍ مِّائَۃُ حَبَّۃٍ ؕ وَ اللّٰهُ یُضٰعِفُ لِمَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَ اللّٰهُ وَاسِعٌ عَلِیۡمٌ ﴿۲۶۱﴾
مثل الذین ینفقون اموالهم فی سبیل الله كمثل حبۃ انبتت سبع سنابل فی كل سنبلۃ مائۃ حبۃ و الله یضعف لمن یشآء و الله واسع علیم ﴿۲۶۱﴾
• যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মত, যা উৎপন্ন করল সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে রয়েছে একশ’ দানা। আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।

-আল-বায়ান

• যারা আল্লাহর পথে নিজেদের মাল ব্যয় করে, তাদের (দানের) তুলনা সেই বীজের মত, যাত্থেকে সাতটি শীষ জন্মিল, প্রত্যেক শীষে একশত করে দানা এবং আল্লাহ যাকে ইচ্ছে করেন, বর্ধিত হারে দিয়ে থাকেন। বস্তুতঃ আল্লাহ প্রাচুর্যের অধিকারী, জ্ঞানময়।

-তাইসিরুল

• যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে তাদের উপমা যেমন একটি শস্যবীজ, তা হতে উৎপন্ন হল সাতটি শীষ, প্রত্যেক শীষে (উৎপন্ন হল) এক শত শস্য, এবং আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন বর্ধিত করে দেন; বস্তুতঃ আল্লাহ হচ্ছেন অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ।

-মুজিবুর রহমান

• The example of those who spend their wealth in the way of Allah is like a seed [of grain] which grows seven spikes; in each spike is a hundred grains. And Allah multiplies [His reward] for whom He wills. And Allah is all-Encompassing and Knowing.

-Sahih International

২৬১. যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের উপমা একটি বীজের মত, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে একশ শস্যদানা। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছে বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেন। আর আল্লাহ সর্বব্যাপী প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।(১)

(১) ২৬২ থেকে ২৮৩ পর্যন্ত মোট ২১টি আয়াত। এগুলোতে অর্থনীতি সংক্রান্ত বিশেষ নির্দেশ ও বক্তব্য পেশ করা হয়েছে। এসব নির্দেশ বাস্তবায়িত হলে বর্তমান বিশ্ব যেসব অর্থনৈতিক সমস্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে সেগুলোর সমাধান আপনা-আপনিই বের হয়ে আসবে। আজ কোথাও পুঁজিবাদী অর্থনীতি এবং কোথাও এর জবাবে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রবর্তিত রয়েছে। এসব নীতির পারস্পরিক সংঘাতের ফলে গোটা বিশ্ব মারামারি, কাটাকাটি ও যুদ্ধ-বিগ্রহের উত্তপ্ত লাভায় পরিপূর্ণ হয়ে অগ্নিগিরির রূপ ধারণ করেছে। এসব আয়াতে ইসলামী অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বর্ণিত হয়েছে। এটি দু’ভাগে বিভক্ত, এক. প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অভাবগ্রস্ত, দীন-দুঃখীদের জন্য ব্যয় করার শিক্ষা, যাকে সাদাকাহ বলা হয়। দুই. সুদের লেন-দেনকে হারাম করে তা থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ। প্রথমে দান সাদাকাহর ফযীলত, সেদিকে উৎসাহ দান এবং সে সম্পর্কিত বিধানাবলী বর্ণিত হয়েছে সবশেষে সুদভিত্তিক কারবারের অবৈধতা, নিষেধাজ্ঞা এবং ঋণদানের বৈধ পস্থার বর্ণনা রয়েছে। [মাআরিফুল কুরআন, সংক্ষেপিত]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৬১) যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস্য-বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মে, প্রতিটি শীষে থাকে একশত শস্য-দানা। আর আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন।[1] আল্লাহ মহাদানশীল, মহাজ্ঞানী।

[1] এটা হল আল্লাহর পথে ব্যয় করার ফযীলত। ‘আল্লাহর পথ’-এর উদ্দেশ্য যদি জিহাদ হয়, তাহলে তার অর্থ হবে জিহাদে ব্যয়কৃত টাকা-পয়সার এই নেকী পাওয়া যায়। আর যদি এর উদ্দেশ্য হয় সমস্ত কল্যাণের পথ, তবে এই ফযীলত হবে নফল সাদাকা-খয়রাতের। আর অন্যান্য নেকীসমূহ (একটি নেকীর প্রতিদান দশগুণ)এর আওতাভুক্ত হবে। (ফাতহুল ক্বাদীর) অর্থাৎ, সাদাকা-খয়রাতের সাধারণ প্রতিদান ও নেকী অন্যান্য কল্যাণকর কাজের চেয়ে বেশী। আর আল্লাহর পথে ব্যয় করার গুরুত্ব ও ফযীলত এত বেশী হওয়ার কারণ হল, যতক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধসামগ্রী ও অস্ত্র-শস্ত্রের ব্যবস্থা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সৈন্যের পারদর্শিতাও শূন্যের কোটায় থাকবে। আর যুদ্ধসামগ্রী ও অস্ত্র-শস্ত্রের ব্যবস্থা টাকা-পয়সা ব্যতীত করা যেতে পারে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ : ২৬২ اَلَّذِیۡنَ یُنۡفِقُوۡنَ اَمۡوَالَهُمۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ ثُمَّ لَا یُتۡبِعُوۡنَ مَاۤ اَنۡفَقُوۡا مَنًّا وَّ لَاۤ اَذًی ۙ لَّهُمۡ اَجۡرُهُمۡ عِنۡدَ رَبِّهِمۡ ۚ وَ لَا خَوۡفٌ عَلَیۡهِمۡ وَ لَا هُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ ﴿۲۶۲﴾
الذین ینفقون اموالهم فی سبیل الله ثم لا یتبعون ما انفقوا منا و لا اذی لهم اجرهم عند ربهم و لا خوف علیهم و لا هم یحزنون ﴿۲۶۲﴾
• যারা আল্লাহর রাস্তায় তাদের সম্পদ ব্যয় করে, অতঃপর তারা যা ব্যয় করেছে, তার পেছনে খোঁটা দেয় না এবং কোন কষ্টও দেয় না, তাদের জন্য তাদের রবের নিকট তাদের প্রতিদান রয়েছে এবং তাদের কোন ভয় নেই, আর তারা চিন্তিত হবে না।

-আল-বায়ান

• যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ধন ব্যয় করে নিজেদের দানের কথা মনে করিয়ে দেয় না আর (দান গ্রহীতাকে) কষ্ট দেয় না, তাদের প্রতিদান তাদের প্রতিপালকের নিকট নির্ধারিত আছে, তাদের কোন ভয় নেই, মর্মপীড়াও নেই।

-তাইসিরুল

• যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ধন সম্পদ ব্যয় করে, এবং ব্যয় করার পর অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করেনা, কষ্টও দেয়না, তাদের জন্য তাদের রবের নিকট রয়েছে পুরস্কার; বস্তুতঃ তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবেনা।

-মুজিবুর রহমান

• Those who spend their wealth in the way of Allah and then do not follow up what they have spent with reminders [of it] or [other] injury will have their reward with their Lord, and there will be no fear concerning them, nor will they grieve.

-Sahih International

২৬২. যারা আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ ব্যয় করে(১) তারপর যা ব্যয় করে তা বলে বেড়ায় না এবং কোন প্রকার কষ্টও দেয় না, তাদের প্রতিদান রয়েছে তাদের রব-এর নিকট। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।

(১) আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করাকে কুরআনুল কারীম কোথাও إنْفَاق শব্দে, কোথাও إطْعَام শব্দে, কোথাও صَدَقَة শব্দে এবং কোথাও إيْتَاءُ الزَّكَاة শব্দে ব্যক্ত করেছে। কুরআনের এসব শব্দ এবং বিভিন্ন স্থানে এগুলোর ব্যবহারের প্রতি লক্ষ্য করলে জানা যায় যে, إنْفَاق - إطْعَام - صَدَقَة প্রভৃতি শব্দগুলো ব্যাপক অর্থবোধক এবং সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সর্বপ্রকার দান-সদকা ও ব্যয়কেই বোঝায়; তা ফরয, ওয়াজিব কিংবা নফল, মুস্তাহাব যাই হোক। ফরয যাকাত বোঝাবার জন্য কুরআন একটি স্বতন্ত্র শব্দ إيْتَاءُ الزَّكَاة ব্যবহার করেছে। এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, এ বিশেষ সদকাটি আদায় করা ও ব্যয় করার মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এখানে বেশীর ভাগ إنْفَاق শব্দ এবং কোথাও صَدَقَة শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ এই যে, এখানে সাধারণ দান-সদকা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। [মা'আরিফুল কুরআন]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৬২) যারা আল্লাহর পথে আপন ধন ব্যয় করে, অতঃপর যা ব্যয় করে, তার কথা বলে বেড়ায় না এবং (ঐ দানের বদলে কাউকে) কষ্টও দেয় না,[1] তাদের পুরস্কার রয়েছে তাদের প্রতিপালকের নিকট, বস্তুতঃ তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।

[1] আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় বা দান করার উল্লিখিত ফযীলত কেবল সেই ব্যক্তিই লাভ করবে, যে স্বীয় সম্পদ দান করে অনুগ্রহ প্রকাশ করবে না এবং সে মুখ দিয়ে এমন কোন তুচ্ছ বাক্যও বের করবে না, যা কোন গরীব-অভাবীর সম্মানে আঘাত হানে এবং সে তাতে ব্যথা অনুভব করে। কেননা, এটা এত বড় অপরাধ যে, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তিন শ্রেণীর মানুষের সাথে কথা বলবেন না। তাদের মধ্যে একজন হল, (দান করে) অনুগ্রহ প্রকাশকারী ব্যক্তি।’’ (মুসলিম ১০৬নং)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ : ২৬৩ قَوۡلٌ مَّعۡرُوۡفٌ وَّ مَغۡفِرَۃٌ خَیۡرٌ مِّنۡ صَدَقَۃٍ یَّتۡبَعُهَاۤ اَذًی ؕ وَ اللّٰهُ غَنِیٌّ حَلِیۡمٌ ﴿۲۶۳﴾
قول معروف و مغفرۃ خیر من صدقۃ یتبعها اذی و الله غنی حلیم ﴿۲۶۳﴾
• উত্তম কথা ও ক্ষমা প্রদর্শন শ্রেয়, যে দানের পর কষ্ট দেয়া হয় তার চেয়ে। আর আল্লাহ অভাবমুক্ত, সহনশীল।

-আল-বায়ান

• যে দানের পর কষ্ট দেয়া হয় তার চেয়ে ভাল কথা ও ক্ষমা উত্তম; বস্তুতঃ আল্লাহ অভাবমুক্ত ও পরম সহিষ্ণু।

-তাইসিরুল

• যে দানের পশ্চাতে থাকে ক্লেশ, সেই দান অপেক্ষা উত্তম বাক্য ও ক্ষমাই উৎকৃষ্ট এবং আল্লাহ মহা সম্পদশালী, সহিষ্ণু।

-মুজিবুর রহমান

• Kind speech and forgiveness are better than charity followed by injury. And Allah is Free of need and Forbearing.

-Sahih International

২৬৩. যে দানের পর কষ্ট দেয়া হয় তার চেয়ে ভাল কথা ও ক্ষমা উত্তম। আর আল্লাহ অভাবমুক্ত, পরম সহনশীল।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৬৩) যে দানের পশ্চাতে (যাচ্ঞাকারীকে) কষ্ট দেওয়া হয়, তার চেয়ে (তাকে) মিষ্টি কথা বলা এবং ক্ষমা করা উত্তম। [1] আর আল্লাহ অভাবমুক্ত, পরম সহনশীল।

[1] ভিক্ষুকের সাথে নম্রভাবে ও দয়ামাখা স্বরে কথা বলা অথবা দু’আ-বাক্য (আল্লাহ তাআ’লা তোমাকে ও আমাকে তাঁর অনুগ্রহ ও করুণা দানে ধন্য করুন! ইত্যাদি) দ্বারা তাকে উত্তর দেওয়াই হল ‘মিষ্টি বা উত্তম কথা’। আর ‘ক্ষমা করা’র অর্থ হল, ভিক্ষুকের অভাব-অনটন ও তার প্রয়োজনের কথা মানুষের সামনে প্রকাশ না করে তা গোপন করা। অনুরূপ ভিক্ষুকের মুখ দিয়ে যদি কোন অনুচিত কথা বেরিয়ে যায়, তা ক্ষমা করে দেওয়াও এর আওতাভুক্ত। অর্থাৎ, ভিক্ষুকের সাথে নম্রভাবে দয়ামাখা স্বরে কথা বলা, তাকে ক্ষমা করা এবং তার (ব্যাপার) গোপন করা সেই সাদাকার চেয়ে উত্তম, যে সাদাকা করার পর (যাকে সাদাকা দেওয়া হয়) তাকে মানুষের সামনে অপমানিত করে কষ্ট দেওয়া হয়। এই জন্যই হাদীসে বলা হয়েছে, ‘‘উত্তম কথা সাদাকার সমতুল্য।’’ (মুসলিম ১০০৯নং) অনুরূপ নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ‘‘তুমি কোনও নেকীর কাজকে তুচ্ছ ভেবো না, যদিও তা তোমার কোন ভায়ের সাথে হাসি মুখে সাক্ষাৎ করার মাধ্যমে হয়।’’ (মুসলিম ২৬২৬নং)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ : ২৬৪ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تُبۡطِلُوۡا صَدَقٰتِكُمۡ بِالۡمَنِّ وَ الۡاَذٰی ۙ كَالَّذِیۡ یُنۡفِقُ مَالَهٗ رِئَآءَ النَّاسِ وَ لَا یُؤۡمِنُ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِؕ فَمَثَلُهٗ كَمَثَلِ صَفۡوَانٍ عَلَیۡهِ تُرَابٌ فَاَصَابَهٗ وَابِلٌ فَتَرَكَهٗ صَلۡدًا ؕ لَا یَقۡدِرُوۡنَ عَلٰی شَیۡءٍ مِّمَّا كَسَبُوۡا ؕ وَ اللّٰهُ لَا یَهۡدِی الۡقَوۡمَ الۡكٰفِرِیۡنَ ﴿۲۶۴﴾
یایها الذین امنوا لا تبطلوا صدقتكم بالمن و الاذی كالذی ینفق مالهٗ رئآء الناس و لا یؤمن بالله و الیوم الاخر فمثلهٗ كمثل صفوان علیه تراب فاصابهٗ وابل فتركهٗ صلدا لا یقدرون علی شیء مما كسبوا و الله لا یهدی القوم الكفرین ﴿۲۶۴﴾
• হে মুমিনগণ, তোমরা খোঁটা ও কষ্ট দেয়ার মাধ্যমে তোমাদের সদাকা বাতিল করো না। সে ব্যক্তির মত, যে তার সম্পদ ব্যয় করে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে এবং বিশ্বাস করে না আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি। অতএব তার উপমা এমন একটি মসৃণ পাথর, যার উপর রয়েছে মাটি। অতঃপর তাতে প্রবল বৃষ্টি পড়ল, ফলে তাকে একেবারে পরিষ্কার করে ফেলল। তারা যা অর্জন করেছে তার মাধ্যমে তারা কোন কিছু করার ক্ষমতা রাখে না। আর আল্লাহ কাফির জাতিকে হিদায়াত দেন না।

-আল-বায়ান

• হে ঈমানদারগণ! দানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে তোমরা নিজেদের দান-খয়রাতকে সে ব্যক্তির ন্যায় ব্যর্থ করে দিও না যে নিজের ধন লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে থাকে, অথচ সে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী নয়। তার তুলনা সেই মসৃণ পাথরের মত, যাতে সামান্য কিছু মাটি আছে, অতঃপর প্রবল বৃষ্টিপাত তাকে পরিষ্কার করে ফেলে। তারা স্বীয় কৃত কার্যের ফল কিছুই পাবে না; আল্লাহ কাফিরদেরকে পথপ্রদর্শন করেন না।

-তাইসিরুল

• হে মু’মিনগণ! কৃপা প্রকাশ ও ক্লেশ দান করে নিজেদের দানগুলি ব্যর্থ করে ফেলনা সেই ব্যক্তির ন্যায় যে নিজের ধন ব্যয় করে লোক দেখানোর জন্য, অথচ আল্লাহ ও আখিরাতে সে বিশ্বাস করেনা। ফলতঃ তার উপমা, যেমন এক বৃহৎ মসৃন প্রস্তর খন্ড যার উপর কিছু মাটি (জমে) আছে, এ অবস্থায় তাতে বর্ষিত হল প্রবল বর্ষা, অতঃপর তা পরিষ্কার হয়ে গেল। তারা যা অর্জন করেছে তন্মধ্য হতে কোন বিষয়েই তারা সুফল পাবেনা এবং আল্লাহ অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেননা।

-মুজিবুর রহমান

• O you who have believed, do not invalidate your charities with reminders or injury as does one who spends his wealth [only] to be seen by the people and does not believe in Allah and the Last Day. His example is like that of a [large] smooth stone upon which is dust and is hit by a downpour that leaves it bare. They are unable [to keep] anything of what they have earned. And Allah does not guide the disbelieving people.

-Sahih International

২৬৪. হে মুমিনগণ! দানের কথা বলে বেড়িয়ে এবং কষ্ট দিয়ে তোমরা তোমাদের দানকে ঐ ব্যক্তির ন্যায় নিস্ফল করো না(১) যে নিজের সম্পদ লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে থাকে এবং আল্লাহ্‌ ও আখেরাতে ঈমান রাখে না। ফলে তার উপমা হলো এমন একটি মসৃণ পাথর, যার উপর কিছু মাটি থাকে, তারপর প্রবল বৃষ্টিপাত সেটাকে পরিস্কার করে রেখে দেয়(২)। যা তারা উপার্জন করেছে তার কিছুই তারা তাদের কাজে লাগানোর ক্ষমতা রাখে না। আর আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।(৩)

(১) এ আয়াতে সদকা কবুল হওয়ার দুটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। (১) দান করে অনুগ্রহ প্রকাশ করতে পারবে না এবং (২) গ্রহীতাকে ঘৃণিত মনে করা যাবে না। অর্থাৎ তার সাথে এমন কোন ব্যবহার করতে পারবে না, যাতে সে নিজেকে ঘৃণিত ও হেয় অনুভব করে কিংবা কষ্ট পায়।

(২) এ উপমায় প্রবল বর্ষণ বলতে দান-সদকাকে এবং পাথরখণ্ড বলতে যে নিয়্যত ও প্রেরণার গলদসহ দান-সদকা করা হয়েছে, তাকে বুঝানো হয়েছে। মাটির আস্তর বলতে সৎকর্মের বাইরের কাঠামোটি বুঝানো হয়েছে, যার নীচে লুকিয়ে আছে নিয়্যতের গলদ। এ বিশ্লেষণের পর দৃষ্টান্তটি সহজেই বোধগম্য হতে পারে। বৃষ্টিপাতের ফলে মাটি স্বাভাবিকভাবেই সরস ও সতেজ হয় এবং তাতে চারা জন্মায়। কিন্তু যে মাটিতে সরসতা সৃষ্টি হয় তার পরিমাণ যদি হয় নামমাত্র এবং তা কেবল উপরিভাগেই লেপ্টে থাকে আর তার তলায় থাকে মসৃণ পাথর, তাহলে বৃষ্টির পানি এক্ষেত্রে তার জন্য লাভবান হওয়ার পরিবর্তে বরং ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়। অনুরূপভাবে দান-সদকা যদিও সৎকর্মকে বিকশিত করার ক্ষমতাসম্পন্ন কিন্তু তা লাভজনক হবার জন্য সদুদ্দেশ্য, সৎসংকল্প ও সৎনিয়্যতের শর্ত আরোপিত হয়েছে। নিয়্যত সৎ না হলে যত অধিক পরিমাণেই দান করা হোক না কেন তা নিছক অর্থ ও সম্পদের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।

(৩) এখানে বলা হয়েছেঃ আল্লাহ্ তা'আলা কৃতঘ্ন-কাফেরদেরকে পথ প্রদর্শন করবেন না। এর তাৎপর্য এই যে, আল্লাহ্ তা'আলার হিদায়াত ও আয়াত সব মানুষের জন্যই প্রেরিত হয়েছে। কিন্তু কাফেররা এসবের প্রতি ক্ৰক্ষেপ না করে বরং ঠাট্টাবিদ্রুপ করে। এর পরিণতিতে আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে তাওফীক তথা সৎকাজের ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করে দেন। ফলে তারা কোন হেদায়াত কবুল করতে পারে না।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৬৪) হে বিশ্বাসিগণ! দানের কথা প্রচার করে এবং কষ্ট দিয়ে তোমরা তোমাদের দানকে নষ্ট করে দিও না; ঐ লোকের মত যে নিজের ধন লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে না। তার উপমা একটি শক্ত পাথরের মত, যার উপর কিছু মাটি থাকে। অতঃপর তার উপর প্রবল বৃষ্টিপাত তাকে মসৃণ করে রেখে দেয়। [1] যা তারা উপার্জন করেছে, তার কিছুই তারা তাদের কাজে লাগাতে পারবে না। বস্তুতঃ আল্লাহ অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।

[1] এখানে প্রথমতঃ বলা হয়েছে যে, সাদাকা-খয়রাত করে অনুগ্রহ প্রকাশ করা বা বলে বেড়ানো) এবং (খোঁটা মেরে) কষ্টদায়ক বাক্যালাপ ঈমানদারদের অভ্যাস নয়, বরং তা হল মুনাফেক ও তাদের অভ্যাস, যারা লোক প্রদর্শনের জন্য ব্যয় করে। দ্বিতীয়তঃ এ রকম ব্যয় করার দৃষ্টান্ত এমন পরিষ্কার পাথরের মত যার উপর থাকে কিছু মাটি, কোন মানুষ ফসলাদি লাভের আশায় তাতে বীজ ফেলে দেয়, কিন্তু বৃষ্টির এক ঝাপটেই সমস্ত মাটি ধুয়ে নেমে যায় এবং পাথর মাটি থেকে একেবারে পরিষ্কার ও মসৃণ হয়ে যায়। অর্থাৎ, যেমন বৃষ্টি এই পাথরের জন্য কোন ফলপ্রসূ হয় না, অনুরূপ লোকপ্রদর্শনকারীর সাদাকাও তার জন্য কোন লাভ বয়ে আনে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ : ২৬৫ وَ مَثَلُ الَّذِیۡنَ یُنۡفِقُوۡنَ اَمۡوَالَهُمُ ابۡتِغَآءَ مَرۡضَاتِ اللّٰهِ وَ تَثۡبِیۡتًا مِّنۡ اَنۡفُسِهِمۡ كَمَثَلِ جَنَّۃٍۭ بِرَبۡوَۃٍ اَصَابَهَا وَابِلٌ فَاٰتَتۡ اُكُلَهَا ضِعۡفَیۡنِ ۚ فَاِنۡ لَّمۡ یُصِبۡهَا وَابِلٌ فَطَلٌّ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ ﴿۲۶۵﴾
و مثل الذین ینفقون اموالهم ابتغآء مرضات الله و تثبیتا من انفسهم كمثل جنۃ بربوۃ اصابها وابل فاتت اكلها ضعفین فان لم یصبها وابل فطل و الله بما تعملون بصیر ﴿۲۶۵﴾
• আর যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ও নিজদেরকে সুদৃঢ় রাখার লক্ষ্যে সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা উঁচু ভূমিতে অবস্থিত বাগানের মত, যাতে পড়েছে প্রবল বৃষ্টি। ফলে তা দ্বিগুণ ফল-ফলাদি উৎপন্ন করেছে। আর যদি তাতে প্রবল বৃষ্টি নাও পড়ে, তবে হালকা বৃষ্টি (যথেষ্ট)। আর আল্লাহ তোমরা যা আমল কর, সে ব্যাপারে সম্যক দ্রষ্টা।

-আল-বায়ান

• যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি সাধন ও নিজেদের মনে (ঈমানের) দৃঢ়তা সৃষ্টির উদ্দেশে নিজেদের ধন ব্যয় করে থাকে তাদের তুলনা সেই বাগানের ন্যায় যা উচ্চভূমিতে অবস্থিত, তাতে মুষলধারে বৃষ্টিপাতের ফলে দ্বিগুণ ফল ধরে, যদি তাতে বৃষ্টিপাত নাও হয়, তবে শিশির বিন্দুই যথেষ্ট, তোমরা যা কিছুই কর, আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।

-তাইসিরুল

• এবং যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি সাধন ও স্বীয় জীবনের প্রতিষ্ঠার জন্য ধন সম্পদ ব্যয় করে তাদের উপমা - যেমন উর্বর ভূভাগে অবস্থিত একটি উদ্যান, তাতে প্রবল বৃষ্টিধারা পতিত হয়, ফলে সেই উদ্যান দ্বিগুণ খাদ্যশস্য দান করে; কিন্তু যদি তাতে বৃষ্টিপাত না হয় তাহলে শিশিরই যথেষ্ট এবং তোমরা যা করছ আল্লাহ তা প্রত্যক্ষকারী।

-মুজিবুর রহমান

• And the example of those who spend their wealth seeking means to the approval of Allah and assuring [reward for] themselves is like a garden on high ground which is hit by a downpour - so it yields its fruits in double. And [even] if it is not hit by a downpour, then a drizzle [is sufficient]. And Allah, of what you do, is Seeing.

-Sahih International

২৬৫. আর যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ও নিজেদের আত্মা বলিষ্ঠ করার করার জন্য ধন-সম্পদ ব্যয় করে তাদের উপমা কোন উচ্চ ভূমিতে অবস্থিত একটি উদ্যান, যেখানে মুষলধারে বৃষ্টি হয়, ফলে সেথায় ফলমূল জন্মে দ্বিগুন। আর যদি মুষলধারে বৃষ্টি নাও হয় তবে লঘু বৃষ্টিই যথেষ্ট। আর তোমরা যা কর আল্লাহ তা যথার্থ প্রত্যক্ষকারী(১)।

(১) এ আয়াতে গ্রহণযোগ্য দান-সদকার একটি উদাহরণ বর্ণিত হয়েছে। যারা স্বীয় ধন-সম্পদকে মনের দৃঢ়তা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়্যতে ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ কোন টিলায় অবস্থিত বাগানের মত। প্রবল বৃষ্টিপাত না হলেও হালকা বারিবর্ষণই যার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তা'আলা তোমাদের কাজকর্ম সম্পর্কে খুবই পরিজ্ঞাত। এ উদাহরণের মাধ্যমে ব্যক্ত করা হয়েছে যে, খাঁটি নিয়্যত ও উপরোক্ত শর্তাবলীর প্রতি লক্ষ্য রেখে আল্লাহর পথে ব্যয় করার ফযীলত অনেক। সৎনিয়্যত ও আন্তরিকতার সাথে অল্প ব্যয় করলেও তা যথেষ্ট এবং আখেরাতের সাফল্যের কারণ।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৬৫) পক্ষান্তরে, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং নিজের হৃদয়কে শক্তিশালী করার জন্য তাদের ধন দান করে, তাদের উপমা কোন উঁচু ভূমিতে অবস্থিত একটি বাগান, [1] যাতে মুষলধারে বৃষ্টি হয়, ফলে তার ফল-মূল দ্বিগুণ জন্মে। যদি মুষলধারে বৃষ্টি নাও হয়, তবে হাল্কা বৃষ্টিই যথেষ্ট। বস্তুতঃ তোমরা যা কর, আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।

[1] এটা সেই ঈমানদারদের দৃষ্টান্ত, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য দান করে থাকে। তাদের দানকৃত সম্পদ সেই বাগানের মত, যা কোন উঁচু জায়গায় অবস্থিত, তাতে প্রবল বৃষ্টি হলে দ্বিগুণ ফসল দেয়। আর প্রবল বৃষ্টি না হলেও হাল্কা বর্ষণ এবং শিশিরও তার জন্য যথেষ্ট হয়। অনুরূপ তাদের সাদাকা-খয়রাত যতই কম হোক না কেন আল্লাহর নিকট তা কয়েক গুণ প্রতিদান ও নেকীর কারণ হবে। ‘জান্নাত’ বা বাগান এমন ভূমিকে বলা হয়, যাতে এত সংখ্যায় বৃক্ষাদি থাকে যে তা পুরো ভূমিকে ঢেকে নেয়। অথবা ‘জান্নাত’ এমন বাগান যার চতুর্দিক এমনভাবে ঘেরা-বেড়া থাকে যে, তার ফলে বাগান দৃষ্টিগোচর হয় না। جَنَّة জান্নাত শব্দটি جنّ ধাতু থেকে গঠিত, (যার অর্থ ঢাকা বা অদৃশ্য হওয়া)। এ জন্যই জ্বিন এমন সৃষ্টির নাম যা দেখা যায় না। পেটের শিশুকেও ‘জানীন’ বলা হয় কারণ তাও দেখা যায় না। পাগলামিকে ‘জুনুন’ বলে আখ্যায়িত করা হয়, কারণ তার বুদ্ধির উপর পর্দা পড়ে যায়। আর জান্নাতকেও এই জন্যই জান্নাত বলা হয় যে তা রয়েছে দৃষ্টির অগোচরে। رَبوَة উঁচু ভূমিকে বলে। আর وَابِل অর্থ প্রবল বৃষ্টি।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ : ২৬৬ اَیَوَدُّ اَحَدُكُمۡ اَنۡ تَكُوۡنَ لَهٗ جَنَّۃٌ مِّنۡ نَّخِیۡلٍ وَّ اَعۡنَابٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ ۙ لَهٗ فِیۡهَا مِنۡ كُلِّ الثَّمَرٰتِ ۙ وَ اَصَابَهُ الۡكِبَرُ وَ لَهٗ ذُرِّیَّۃٌ ضُعَفَآءُ ۪ۖ فَاَصَابَهَاۤ اِعۡصَارٌ فِیۡهِ نَارٌ فَاحۡتَرَقَتۡ ؕ كَذٰلِكَ یُبَیِّنُ اللّٰهُ لَكُمُ الۡاٰیٰتِ لَعَلَّكُمۡ تَتَفَكَّرُوۡنَ ﴿۲۶۶﴾
ایود احدكم ان تكون لهٗ جنۃ من نخیل و اعناب تجری من تحتها الانهر لهٗ فیها من كل الثمرت و اصابه الكبر و لهٗ ذریۃ ضعفآء فاصابها اعصار فیه نار فاحترقت كذلك یبین الله لكم الایت لعلكم تتفكرون ﴿۲۶۶﴾
• তোমাদের কেউ কি কামনা করে, তার জন্য আঙ্গুর ও খেজুরের এমন একটি বাগান থাকবে, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে নদ-নদী, সেখানে তার জন্য থাকবে সব ধরনের ফল-ফলাদি, আর বার্ধক্য তাকে আক্রান্ত করবে এবং তার জন্য থাকবে দুর্বল সন্তান-সন্ততি। অতঃপর বাগানটিতে আঘাত হানল ঘূর্ণিঝড়, যাতে রয়েছে আগুন, ফলে সেটি জ্বলে গেল? এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা কর।

-আল-বায়ান

• তোমাদের কেউ কি পছন্দ করে যে, তার এমন একটা খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান হোক, যার নীচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তার জন্য তাতে সব রকম ফল আছে, আর তার বার্ধক্যও সমুপস্থিত, তার কতকগুলো সন্তান-সন্ততি আছে যারা কাজকর্মের লায়েক নয়, এ অবস্থায় বাগানের উপর অগ্নি হাওয়া বয়ে গেল, যার ফলে সেটি জ্বলে গেল? আল্লাহ তোমাদের জন্য নিদর্শনসমূহ এভাবে বর্ণনা করছেন, যাতে তোমরা চিন্তা করে দেখ।

-তাইসিরুল

• তোমাদের কারও যদি এমন একটি খেজুর ও আঙ্গুর উদ্যান থাকে যার তলদেশ দিয়ে নদী-নালা প্রবাহিত, সেখানে সর্ব প্রকার ফলের সংস্থান তার রয়েছে, আর সে বার্ধক্যে উপনীত হল, অথচ তার কতকগুলি দুর্বল (অপ্রাপ্ত বয়স্ক) সন্তান-সন্ততি রয়েছে, এ অবস্থায় সেই বাগানে উপস্থিত হল অগ্নিসহ এক বাত্যাবর্ত, আর তা পুড়ে (ভস্মীভূত হয়ে) গেল; তোমরা কেহ এটা পছন্দ করবে কি? এ রূপে আল্লাহ তোমাদের জন্য নিদর্শনাবলী ব্যক্ত করেন, যেন তোমরা চিন্তা-ভাবনা কর।

-মুজিবুর রহমান

• Would one of you like to have a garden of palm trees and grapevines underneath which rivers flow in which he has from every fruit? But he is afflicted with old age and has weak offspring, and it is hit by a whirlwind containing fire and is burned. Thus does Allah make clear to you [His] verses that you might give thought.

-Sahih International

২৬৬. তোমাদের কেউ কি চায় যে, তার খেজুর ও আঙ্গুরের একটি বাগান থাকবে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত থাকবে এবং যেটাতে তার জন্য সবরকমের ফলমূল থাকবে। আর সে এবং তার কিছু দুর্বল সন্তান-সন্ততি থাকবে, তারপর তার (এ বাগানের) উপর এক অগ্নিক্ষরা ঘূর্ণিঝড় আপতিত হয়ে তা জ্বলে যাবে? এভাবে আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ তোমাদের জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাতে তোমরা চিন্তা-ভাবনা করতে পার।(১)

(১) এ আয়াতে বলা হয়েছেঃ তোমাদের কেউ পছন্দ করবে কি যে, তার একটি আঙ্গুর ও খেজুরের বাগান হবে, বাগানের নীচ দিয়ে পানির নহরসমূহ প্রবাহিত হবে, বাগানে সব রকম ফল থাকবে, সে নিজে বৃদ্ধ হয়ে যাবে এবং তার দুর্বল ও শক্তিহীন ছেলেসন্তানও বর্তমান থাকবে, এমতাবস্থায় বাগানে দাবানল আঘাত হানবে এবং বাগানটি জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যাবে? আল্লাহ্ তা'আলা এমনিভাবে তোমাদের জন্য নয়ীর বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা কর।

এ উদাহরণে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত যোগ করা হয়েছে; অর্থাৎ সে বৃদ্ধ হয়ে গেল, তার সন্তান-সন্ততিও আছে এবং সন্তানগুলো অল্পবয়স্ক; ফলে দুর্বল ও শক্তিহীন। এসব শর্তের উদ্দেশ্য এই যে, যৌবনে কারো বাগান ও শষ্যক্ষেত্র জ্বলে গেলে সে পুনরায় বাগান করে নেয়ার আশা করতে পারে, কিংবা যার সন্তান-সন্ততি নেই এবং পুনরায় বাগান করে নেয়ার আশাও নেই, বাগান জ্বলে যাওয়ার পরও তার পক্ষে জীবিকার ব্যাপারে তেমন চিন্তিত হওয়ার কথা নয়। একটিমাত্র লোকের ভরণ-পোষণ, কষ্টে-সৃষ্টে হলেও চলে যায়।

পক্ষান্তরে যদি সন্তান-সন্ততিও থাকে এবং পিতার কাছে সহযোগিতা ও সাহায্য করার মত বলিষ্ঠ যুবক ও সৎ সন্তান-সন্ততি থাকে, তবুও বাগান ধ্বংস হওয়ার দরুন তেমন বেশী চিন্তা ও ব্যথার কারণ নেই। কেননা, সে সন্তান-সন্ততির চিন্তা থেকে মুক্ত। বরং সন্তানেরা তার বোঝাও বহন করতে সক্ষম। মোটকথা এ তিনটি শর্তেই মুখাপেক্ষিতার তীব্রতা বর্ণনা করার জন্য যোগ করা হয়েছে। অর্থাৎ সে অর্থ ও শ্রম ব্যয় করে বাগান করল, বাগান তৈরী হয়ে ফলও দিতে লাগল, এমতাবস্থায় সে বৃদ্ধ হয়ে পড়ল। তার সন্তান-সন্ততিও বর্তমান এবং সন্তানগুলো অল্প বয়স্ক ও দুর্বল। এহেন মুহুর্তে যদি তৈরী-বাগান জ্বলে-পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায়, তবে তীব্র আঘাত ও অপরিসীম কষ্টেরই কথা।

একদিন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাগণকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমরা কি জান এই আয়াতটি কি বিষয়ে নাযিল হয়েছে -“তোমাদের কেউ কি পছন্দ কর যে, তার একটি বাগান হবে”। [সূরা আল-বাকারাঃ ২৬৬] এ কথা শুনে তারা বললেনঃ আল্লাহই সবচাইতে ভাল জানেন। এ কথা শুনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু রেগে গিয়ে বললেনঃ বরং (পরিস্কার করে) জানি অথবা জানিনা বলুন। তখন ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বললেনঃ হে আমীরুল মুমিনীন! এ ব্যাপারে আমার মনে একটি কথা জাগতেছে। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ হে আমার ভাতিজা, বল, এবং তুমি তোমাকে ছোট মনে করো না।

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বললেনঃ এখানে আল্লাহ আমলের একটি উদাহরণ পেশ করেছেন। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ কোন উদাহরণ? ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বললেনঃ শুধুমাত্র আমলের উদাহরণ (হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে)। এ কথা শুনে উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেনঃ একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি আল্লাহর বিধি-নিষেধ মেনে আমল করছে; অতঃপর আল্লাহ তার নিকট শয়তানকে প্রেরণ করলেন। তখন শয়তানের নির্দেশে নাফরমানী করতে লাগল। এমনকি তার সমস্ত নেক আমলকে সে বরবাদ করে ফেলল। (বুখারীঃ ৪৫৩৮]

সবগুলো আয়াতের প্রতি লক্ষ্য করলে আল্লাহর পথে ব্যয় ও দান-সদকা গ্রহণীয় হওয়ার জন্য ছয়টি শর্ত জানা যাবে। প্রথমতঃ যে ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করা হয়, তা হালাল হতে হবে। দ্বিতীয়তঃ সুন্নাহ অনুযায়ী ব্যয় করতে হবে। তৃতীয়তঃ বিশুদ্ধ খাতে ব্যয় করতে হবে। চতুর্থতঃ খয়রাত দিয়ে অনুগ্রহ প্রকাশ করা যাবে না। পঞ্চমতঃ যাকে দান করা হবে,তার সাথে এমন ব্যবহার করা যাবে না, যাতে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। ষষ্টতঃ যা কিছু ব্যয় করা হবে, খাটি নিয়্যতের সাথে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির সাথেই করতে হবে - নাম-যশের জন্য নয়। অর্থাৎ ব্যয় করতে হবে ইখলাসের সাথে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৬৬) তোমাদের কেউ কি চায় যে, তার খেজুর ও আঙ্গুরের একটি বাগান থাকুক, যার নিচে নদী প্রবাহিত এবং যাতে সকল প্রকার ফল-মূল আছে, আর সে ব্যক্তি বার্ধক্যে উপনীত হয় এবং তার অসহায় দুর্বল সন্তান-সন্ততি থাকে। (এমন অবস্থায়) ঐ (বাগান)টিকে এক অগ্নিক্ষরা ঘূর্ণিঝড় আক্রমণ করে ও তা জ্বলে (ধ্বংস হয়ে) যায়?[1] এভাবে আল্লাহ তাঁর সকল নিদর্শন তোমাদের জন্য সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা চিন্তা-ভাবনা করতে পার।

[1] লোক প্রদর্শন তথা সুনাম নেওয়ার উদ্দেশ্যে কোন কাজ করার ক্ষতিসমূহের কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়ার জন্য এবং তা থেকে মানুষকে দূরে রাখার জন্য এখানে আরো একটি দৃষ্টান্ত পেশ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, যেমন কোন মানুষের একটি বাগান আছে। সে বাগানে সব রকমের ফল-ফসল হয়। (অর্থাৎ, তাতে সম্পূর্ণ আয় হওয়ার আশা থাকে।) এখন এই লোকটি বার্ধক্যে পৌঁছে গেল। তার আছে ছোট ছোট সন্তান-সন্ততি। (অর্থাৎ, বার্ধক্য এবং বয়সের ভারের কারণে সে মেহনত-পরিশ্রম করা থেকে অক্ষম হয়ে গেছে। এখন এই ছোট ছোট দুর্বল সন্তান দ্বারা তার বার্ধক্যে সহযোগিতা পাওয়া তো দূরের কথা, তারা তো নিজেদের ভারই বহন করার ক্ষমতা রাখে না।) এমতাবস্থায় একটি ঘূর্ণিবায়ু এসে তার বাগানকে ভষ্মীভুত করে দিল। এখন না সে পুনরায় উক্ত বাগানকে আবাদ করার ক্ষমতা রাখে, আর না তার সন্তানরা। কিয়ামতের দিন লোককে দেখানোর জন্য ব্যয়কারীদের অবস্থা ঠিক এই রকমই হবে। মুনাফেক্বী ও কপটতার কারণে তাদের সমস্ত নেক আমল নষ্ট হয়ে যাবে; কোন উপকারে আসবে না। অথচ সেখানে নেকীর বড়ই প্রয়োজন হবে এবং পুনরায় নেকীর কাজ করারও কোন সুযোগ থাকবে না। মহান আল্লাহ বলছেন, তোমরা কি চাও যে, তোমাদের এ রকম অবস্থা হোক? ইবনে আববাস এবং উমার (রাযীআল্লাহু আনহুমা) এমন লোকদেরকেও উক্ত দৃষ্টান্তের আওতাভুক্ত মনে করেন, যারা সারা জীবন নেকী অর্জন করে এবং শেষ জীবনে শয়তানের জালে ফেঁসে গিয়ে আল্লাহর অবাধ্যতা করে সারা জীবনের নেকীকে নষ্ট করে ফেলে। (সহীহ বুখারী, তাফসীর অধ্যায়ঃ ফাতহুল ক্বাদীর ও তাফসীরে ত্বাবারী)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ : ২৬৭ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَنۡفِقُوۡا مِنۡ طَیِّبٰتِ مَا كَسَبۡتُمۡ وَ مِمَّاۤ اَخۡرَجۡنَا لَكُمۡ مِّنَ الۡاَرۡضِ ۪ وَ لَا تَیَمَّمُوا الۡخَبِیۡثَ مِنۡهُ تُنۡفِقُوۡنَ وَ لَسۡتُمۡ بِاٰخِذِیۡهِ اِلَّاۤ اَنۡ تُغۡمِضُوۡا فِیۡهِ ؕ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ غَنِیٌّ حَمِیۡدٌ ﴿۲۶۷﴾
یایها الذین امنوا انفقوا من طیبت ما كسبتم و مما اخرجنا لكم من الارض و لا تیمموا الخبیث منه تنفقون و لستم باخذیه الا ان تغمضوا فیه و اعلموا ان الله غنی حمید ﴿۲۶۷﴾
• হে মুমিনগণ, তোমরা ব্যয় কর উত্তম বস্ত্ত, তোমরা যা অর্জন করেছ এবং আমি যমীন থেকে তোমাদের জন্য যা উৎপন্ন করেছি তা থেকে এবং নিকৃষ্ট বস্ত্তর ইচ্ছা করো না যে, তা থেকে তোমরা ব্যয় করবে। অথচ চোখ বন্ধ করা ছাড়া যা তোমরা গ্রহণ করো না। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত, সপ্রশংসিত।

-আল-বায়ান

• হে মু’মিনগণ! তোমাদের উপার্জিত উত্তম সম্পদ থেকে এবং তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যা উৎপন্ন করেছি তাত্থেকে ব্যয় কর এবং নিকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করার নিয়ত করো না, বস্তুতঃ তোমরা তা গ্রহণ কর না, যদি না তোমাদের চক্ষু বন্ধ করে থাক। আর জেনে রেখ, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, প্রশংসিত।

-তাইসিরুল

• হে মু’মিনগণ! তোমরা যা উপার্জন করেছ এবং আমি যা তোমাদের জন্য ভূমি হতে উৎপন্ন করেছি, তা হতে উৎকৃষ্ট বস্ত্ত খরচ কর এবং তা হতে এরূপ নিকৃষ্ট বস্ত্ত ব্যয় করতে মনস্থ করনা যা তোমরা মুদিত চক্ষু ব্যতীত গ্রহণ করনা; এবং তোমরা জেনে রেখ, আল্লাহ মহা সম্পদশালী, প্রশংসিত।

-মুজিবুর রহমান

• O you who have believed, spend from the good things which you have earned and from that which We have produced for you from the earth. And do not aim toward the defective therefrom, spending [from that] while you would not take it [yourself] except with closed eyes. And know that Allah is Free of need and Praiseworthy.

-Sahih International

২৬৭. হে মুমিনগণ! তোমরা যা উপার্জন কর(১) এবং আমরা যা যমীন থেকে তোমাদের জন্য উৎপাদন করি(২) তা থেকে যা উৎকৃষ্ট তা ব্যয় কর; এবং নিকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করার সংকল্প করো না, অথচ তোমরা তা গ্রহণ করবে না, যদি না তোমরা চোখ বন্ধ করে থাক। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।

(১) এ থেকে কোন কোন আলেম মাসআলা চয়ন করেছেন যে, পিতা পুত্রের উপার্জন ভোগ করতে পারে, এটা জায়েয। কেননা, মহানবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “তোমাদের সন্তান-সন্ততি তোমাদের উপার্জনের একটি অংশ। অতএব, তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে সন্তান-সন্ততির উপার্জন ভক্ষণ কর।” [আবু দাউদঃ ৩৫২৮, ৩৫২৯, ইবনে মাজাহঃ ২১৩৮]

(২) أَخْرَجْنَا শব্দ দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, ওশরী জমিতে (যে জমিনের উৎপন্ন শষ্যের এক-দশমাংশ ইসলামী বিধান অনুযায়ী সরকারী তহবিলে জমা দিতে হয়) যে ফসল উৎপন্ন হয়, তার এক-দশমাংশ দান করা ওয়াজিব। ‘ওশর’ ও ‘খারাজ’ ইসলামী শরীআতের দুটি পারিভাষিক শব্দ। এ দুয়ের মধ্যে একটি বিষয় অভিন্ন। উভয়টিই ইসলামী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভূমির উপর আরোপিত কর। পার্থক্য এই যে, ‘ওশর’ শুধু কর নয়, এতে আর্থিক ইবাদাতের দিকটিই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ; যেমন- যাকাত। এ কারণেই ওশরকে যাকাতুল-আরদ বা ‘ভূমির যাকাত’ও বলা হয়। পক্ষান্তরে খারাজ শুধু করকে বোঝায়। এতে ইবাদাতের কোন দিক নেই। মুসলিমরা ইবাদাতের যোগ্য ও অনুসারী।

তাই তাদের কাছ থেকে ভূমির উৎপন্ন ফসলের যে অংশ নেয়া হয়, তাকে ‘ওশর’ বলা হয়। অমুসলিমরা ইবাদাতের যোগ্য নয়। তাই তাদের ভূমির উপর যে কর ধাৰ্য্য করা হয়, তাকে ‘খারাজ’ বলা হয়। যাকাত ও ওশরের মধ্যে আরও পার্থক্য এই যে, স্বর্ণ, রৌপ্য ও পণ্য সামগ্রীর উপর বছরান্তে যাকাত ওয়াজিব হয়, কিন্তু ওশর জমিতে উৎপাদনের সাথে সাথেই ওশর ওয়াজিব হয়ে যায়। দ্বিতীয় পার্থক্য এই যে, জমিনে ফসল উৎপন্ন না হলে ওশর দিতে হয় না। কিন্তু পণ্য দ্রব্যে ও স্বর্ণ-রৌপ্যে মুনাফা না হলেও বছরান্তে যাকাত ফরয হবে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৬৭) হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং আমি জমি হতে তোমাদের জন্য যা উৎপাদন করে থাকি, তা থেকে যা উৎকৃষ্ট, তা দান কর। [1] এমন মন্দ জিনিস দান করার সংকল্প করো না, যা তোমরা মুদিত চক্ষু ব্যতীত গ্রহণ কর না। [2] আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।

[1] সাদাকা কবুল হওয়ার জন্য যেমন জরুরী হল যে, তা অনুগ্রহ প্রকাশ, কষ্ট দেওয়া এবং কপটতা থেকে পাক হতে হবে, (যেমন পূর্বের আয়াতে বলা হয়েছে) অনুরূপ এটাও জরুরী যে, তা হালাল ও পবিত্র উপার্জন থেকে হতে হবে। তাতে তা ব্যবসা-বাণ্যিজের মাধ্যমে হোক অথবা জমি ও বাগান থেকে উৎপন্ন ফসল ও ফলাদির মাধ্যমে হোক। আর ‘‘মন্দ জিনিস--’’ কথার প্রথম অর্থ হল, এমন জিনিস যা অবৈধ পথে উপার্জন করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তা কবুল করেন না। হাদীসে এসেছে, ‘‘আল্লাহ পবিত্র। তাই তিনি কেবল পবিত্র জিনিসই কবুল করেন।’’ এর দ্বিতীয় অর্থ হল, খারাপ ও অতি নিম্নমানের জিনিস। নষ্ট হয়ে যাওয়া খারাপ জিনিসও যেন আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় না করা হয়। আর {لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ} আয়াতের দাবীও তা-ই। এই আয়াত নাযিল হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, মদীনার কোন কোন আনসার সাহাবী খারাপ হয়ে যাওয়া নিম্নমানের খেজুরগুলো সাদাকা স্বরূপ মসজিদে দিয়ে যেতেন। যার ফলে এই আয়াত নাযিল হয়। (ফাতহুল ক্বাদীরঃ তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ ইত্যাদি)

[2] অর্থাৎ, যেমন তুমি নিজের জন্য নষ্ট হয়ে যাওয়া খারাপ জিনিস নিতে পছন্দ করো না, অনুরূপ আল্লাহর পথেও ভাল ছাড়া খারাপ জিনিস ব্যয় করো না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ : ২৬৮ اَلشَّیۡطٰنُ یَعِدُكُمُ الۡفَقۡرَ وَ یَاۡمُرُكُمۡ بِالۡفَحۡشَآءِ ۚ وَ اللّٰهُ یَعِدُكُمۡ مَّغۡفِرَۃً مِّنۡهُ وَ فَضۡلًا ؕ وَ اللّٰهُ وَاسِعٌ عَلِیۡمٌ ﴿۲۶۸﴾ۖۙ
الشیطن یعدكم الفقر و یامركم بالفحشآء و الله یعدكم مغفرۃ منه و فضلا و الله واسع علیم ﴿۲۶۸﴾
• শয়তান তোমাদেরকে দরিদ্রতার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং অশ্লীল কাজের আদেশ করে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তার পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।

-আল-বায়ান

• শয়ত্বান তোমাদেরকে গরীব হয়ে যাওয়ার ভয় দেখায় এবং লজ্জাকর বিষয়ের নির্দেশ দেয় এবং আল্লাহ নিজ পক্ষ হতে তোমাদের সাথে ক্ষমার ও অনুগ্রহের ওয়াদা করছেন এবং আল্লাহ প্রাচুর্যের অধিকারী, মহাজ্ঞানী।

-তাইসিরুল

• শাইতান তোমাদেরকে অভাবের ভীতি প্রদর্শন করে এবং তোমাদেরকে অশ্লীলতার আদেশ করে এবং আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর নিকট হতে ক্ষমা ও দয়ার অংগীকার করেন। আল্লাহ হচ্ছেন বিপুল দাতা, সর্বজ্ঞ।

-মুজিবুর রহমান

• Satan threatens you with poverty and orders you to immorality, while Allah promises you forgiveness from Him and bounty. And Allah is all-Encompassing and Knowing.

-Sahih International

২৬৮. শয়তান তোমাদেরকে দারিদ্র্যের প্রতিশ্রুতি দেয়(১) এবং অশ্লীলতার নির্দেশ দেয়। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তার পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আর আল্লাহ সর্বব্যাপী-প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।(২)

(১) যখন কারো মনে এ ধারণা জন্মে যে, দান-সদকা করলে ফকীর হয়ে যাবে, বিশেষতঃ আল্লাহ তা'আলার তাকীদ শুনেও স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করার সাহস না হয় এবং আল্লাহর ওয়াদা থেকে মুখ ফিরিয়ে শয়তানী ওয়াদার দিকে ঝুঁকে পড়ে, তখন বুঝে নেয়া উচিত যে, এ প্ররোচনা শয়তানের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে যদি মনে ধারণা জন্মে যে, দান-সদকা করলে গোনাহ মাফ হবে এবং ধন-সম্পত্তিও বৃদ্ধি পাবে ও বরকত হবে, তখন মনে করতে হবে, এ বিষয়টি আল্লাহর পক্ষ থেকে। এমতাবস্থায় আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। আল্লাহর ভাণ্ডারে কোন কিছুর অভাব নেই। তিনি সবার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অবস্থা এবং নিয়্যত ও কর্ম সম্পর্কে সম্যক পরিজ্ঞাত।

(২) প্রথম আয়াতে বলা হয়েছেঃ যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, অর্থাৎ হজ, জিহাদ কিংবা ফকীর, মিসকীন, বিধবা ও ইয়াতীমদের জন্য কিংবা সাহায্যের নিয়্যতে আত্মীয়-স্বজনদের জন্য অর্থ ব্যয় করে, তাদের দৃষ্টান্ত হল যেমন, কেউ গমের একটি দানা সরস জমিতে বপন করল। এ দানা থেকে একটি চারা গাছ উৎপন্ন হল, যাতে গমের সাতটি শীষ এবং প্রত্যেকটি শীষে একশ’ করে দানা থাকে। অতএব, এর ফল দাঁড়ালো এই যে, একটি দানা থেকে সাতশ দানা অর্জিত হয়ে গেল। উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহর পথে ব্যয় করার সওয়াব এক থেকে শুরু করে সাতশ পর্যন্ত পৌছে। এক পয়সা ব্যয় করলে সাতশ’ পয়সার সওয়াব অর্জিত হতে পারে। সহীহ ও নির্ভরযোগ্য হাদীসসমূহে বর্ণিত আছে, একটি সৎকর্মের সওয়াব দশগুণ পাওয়া যায় এবং তা সাতশ গুণে পৌছে। [দেখুন, বুখারী ৪১, মুসলিম: ১২৮]

আল্লাহ্ তা'আলা পবিত্র কুরআনে এ বিষয়বস্তুটি সংক্ষিপ্ত ও পরিস্কার ভাষায় বর্ণনা করার পরিবর্তে গম-বীজের দৃষ্টান্ত আকারে বর্ণনা করেছে। এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, কৃষক গমের এক দানা থেকে সাতশ দানা তখনই পেতে পারে, যখন দানাটি হবে উৎকৃষ্ট। কৃষকও কৃষি বিষয়ে পুরোপুরি ওয়াকেফহাল হবে এবং জমিও হবে সরস। কেননা, এ তিনটি বিষয়ের যেকোন একটি বিষয়ে অভাব হলেও হয় দানা বেকার হয়ে যাবে অর্থাৎ একটি দানাও উৎপন্ন হবে না, কিংবা এক দানা থেকে সাতশ দানার মত ফলনশীল হবে না। এমনিভাবে সাধারণ সৎকর্ম এবং বিশেষ করে আল্লাহর পথে কৃত ব্যয় গ্রহণীয় ও অধিক সওয়াব পাওয়ার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছেঃ

(১) পবিত্র ও হালাল ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করা। হাদীসে আছে, আল্লাহ তা'আলা পবিত্র, তিনি পবিত্র বস্তু ছাড়া কোন কিছুই গ্রহণ করেন না। [মুসলিম: ১০১৫]

(২) যে ব্যয় করবে তাকেও সদুদ্দেশ্য প্রণোদিত ও সৎ হতে হবে। কোন খারাপ নিয়্যতে কিংবা নাম-জশ অর্জনের উদ্দেশ্যে যে ব্যয় করে, সে ঐ অজ্ঞ কৃষকের মত, যে বীজকে অনুর্বর মাটিতে বপন করে, ফলে তা নষ্ট হয়ে যায়।

(৩) যার জন্য ব্যয় করবে, তাকেও সদকার যোগ্য হতে হবে। অযোগ্য ব্যক্তির জন্য ব্যয় করলে সদকা ব্যর্থ হবে। এভাবে বর্ণিত দৃষ্টান্ত দ্বারা আল্লাহর পথে ব্যয় করার ফযীলতও জানা গেল এবং সাথে সাথে তিনটি শর্তও জানা গেল যে, হালাল ধন-সম্পদ ব্যয় করতে হবে, ব্যয় করার রীতিও সুন্নাত অনুযায়ী হতে হবে এবং যোগ্য ব্যক্তির জন্য ব্যয় করতে হবে। শুধু পকেট থেকে বের করে দিয়ে দিলেই এ ফযীলত অর্জিত হবে না।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৬৮) শয়তান তোমাদেরকে দারিদ্রে্র ভয় দেখায় এবং জঘন্য কাজে উৎসাহ দেয়,[1] পক্ষান্তরে আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। আল্লাহ বিপুল দাতা, সর্বজ্ঞ।

[1] অর্থাৎ, সৎ পথে মাল ব্যয় করতে চাইলে শয়তান নিঃসব ও কাঙ্গাল হয়ে যাওয়ার ভয় দেখায়। কিন্তু অন্যায় পথে ব্যয় করার সময় এই ধরনের কোন আশঙ্কা মনে আসতেই দেয় না; বরং মন্দ কাজগুলোকে এত সুন্দর করে সাজিয়ে পেশ করে এবং নিদ্রিত আশা-আকাঙ্ক্ষাকে এমনভাবে জাগিয়ে তোলে যে, মানুষ তার জন্য বিশাল পরিমাণ অর্থ অনায়াসে ব্যয় করে ফেলে। তাইতো দেখা যায় যে, যখন কোন মসজিদ, মাদ্রাসা অথবা কল্যাণকর কাজের জন্য কেউ চাঁদার জন্য যায়, তখন বিত্তশালী টাকা-পয়সার মালিক এক-দু’শ টাকা দেওয়ার জন্য বার বার হিসাবের খাতা যাচাই করে এবং চাঁদা আদায়কারীদেরকে অনেক সময় বহুবার আনাগোনা করতে বাধ্য করা হয়। পক্ষান্তরে এই মানুষটাই সিনেমা, টিভি, মদপান, প্রেম-ব্যভিচার এবং মামলা-মকদ্দমার জালে ফেঁসে গিয়ে বেহিসাব মাল ব্যয় করে। এ সব কাজে অর্থ ব্যয় করার সময় তার মধ্যে কোন প্রকারের উৎকণ্ঠা ও দ্বিধা-দন্ধ প্রকাশ পায় না!

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ : ২৬৯ یُّؤۡتِی الۡحِكۡمَۃَ مَنۡ یَّشَآءُ ۚ وَ مَنۡ یُّؤۡتَ الۡحِكۡمَۃَ فَقَدۡ اُوۡتِیَ خَیۡرًا كَثِیۡرًا ؕ وَ مَا یَذَّكَّرُ اِلَّاۤ اُولُوا الۡاَلۡبَابِ ﴿۲۶۹﴾
یؤتی الحكمۃ من یشآء و من یؤت الحكمۃ فقد اوتی خیرا كثیرا و ما یذكر الا اولوا الالباب ﴿۲۶۹﴾
• তিনি যাকে চান প্রজ্ঞা দান করেন। আর যাকে প্রজ্ঞা দেয়া হয়, তাকে অনেক কল্যাণ দেয়া হয়। আর বিবেক সম্পন্নগণই উপদেশ গ্রহণ করে।

-আল-বায়ান

• যাকে ইচ্ছে তিনি হিকমাত দান করেন এবং যে ব্যক্তি এ জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়, নিঃসন্দেহে সে মহাসম্পদ প্রাপ্ত হয় এবং উপদেশ তারাই গ্রহণ করে, যারা জ্ঞানী।

-তাইসিরুল

• তিনি যাকে ইচ্ছা প্রজ্ঞা দান করেন এবং যাকে প্রজ্ঞা দান করা হয় সে নিশ্চয়ই প্রচুর কল্যাণ লাভ করে; বস্ত্ততঃ জ্ঞানবান ব্যক্তিগণ ব্যতীত কেহই উপলদ্ধি করতে পারেনা।

-মুজিবুর রহমান

• He gives wisdom to whom He wills, and whoever has been given wisdom has certainly been given much good. And none will remember except those of understanding.

-Sahih International

২৬৯. তিনি যাকে ইচ্ছে হেকমত দান করেন। আর যাকে হেকমত(১) প্রদান করা হয় তাকে তো প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়; এবং বিবেকসম্পন্নগণই শুধু উপদেশ গ্রহণ করে।

(১) ‘হেকমত’ শব্দটি কুরআনুল কারীমে বার বার ব্যবহৃত হয়েছে। প্রত্যেক জায়গায় এর ব্যাখ্যায় বিভিন্ন অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এগুলো প্রায় কাছাকাছি উক্তি। হেকমতের আসল অর্থ প্রত্যেক বস্তুকে যথাস্থানে স্থাপন করা। এর পূর্ণত্ব শুধুমাত্র নবুওয়াতের মাধ্যমেই সাধিত হতে পারে। তাই এখানে হেকমত বলতে নবুওয়াতকে বোঝানো হয়েছে। রাগেব ইস্পাহানী বলেনঃ হেকমত শব্দটি আল্লাহর জন্য ব্যবহার করা হলে এর অর্থ হবে সমগ্র বিষয়াদির পূর্ণ জ্ঞান এবং নিখুঁত আবিস্কার। অন্যের জন্য এ শব্দটি ব্যবহার করা হলে এর অর্থ হয় সৃষ্টি সম্পর্কিত জ্ঞান এবং তদানুযায়ী কর্ম। এ অর্থটিই বিভিন্ন শব্দের মাধ্যমে ব্যক্ত করা হয়েছে। কোথাও এর অর্থ নেয়া হয়েছে কুরআন, কোথাও হাদীস, কোথাও বিশুদ্ধ জ্ঞান, কোথাও সৎকর্ম, কোথাও সত্যকথা, কোথাও সুস্থ বুদ্ধি, কোথাও দ্বীনের বোধ, কোথাও মতামতের নির্ভুলতা এবং কোথাও আল্লাহর ভয়। কেননা, আল্লাহর ভয়ই প্রকৃত হেকমত। আয়াতে হেকমতের ব্যাখ্যা সাহাবী ও তাবে-তাবেয়ীগণ কর্তৃক হাদীস ও সুন্নাহ বলে বর্ণিত হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন যে, আলোচ্য আয়াতে উপরোল্লেখিত সবগুলো অর্থই বোঝানো হয়েছে। [বাহরে মুহীত]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৬৯) তিনি যাকে ইচ্ছা প্রজ্ঞা দান করেন, আর যাকে প্রজ্ঞা [1] প্রদান করা হয়, তাকে নিশ্চয় প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়। বস্তুতঃ শুধু জ্ঞানীরাই উপদেশ গ্রহণ করে থাকে।

[1] حِكمَة ‘হিকমত’এর অর্থ কেউ করেছেন, জ্ঞান-বুদ্ধি-প্রজ্ঞা। কেউ করেছেন, সঠিক মত বা সিদ্ধান্ত, কুরআনের ‘নাসেখ-মানসুখ’ এর জ্ঞান এবং বিচার শক্তি। আবার কারো নিকট ‘হিকমত’ হল, কেবল সুন্নাতের জ্ঞান অথবা কিতাব ও সুন্নাতের জ্ঞান। অথবা উপরোক্ত সব অর্থই ‘হিকমত’-এর আওতাভুক্ত। সহীহ বুখারী ও মুসলিম ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, ‘‘দুই ব্যক্তির প্রতি ঈর্ষা করা বৈধ। এক ব্যক্তি হল সেই, যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন এবং সে তা সৎপথে ব্যয় করে। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি হল সে, যাকে আল্লাহ হিকমত দান করেছেন যার দ্বারা সে বিচার-ফয়সালা করে এবং মানুষদেরকেও তা শিক্ষা দেয়।’’ (বুখারী, অধ্যায়ঃ ইলম, মুসলিম, অধ্যায়ঃ সালাতুল মুসাফেরীন)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ : ২৭০ وَ مَاۤ اَنۡفَقۡتُمۡ مِّنۡ نَّفَقَۃٍ اَوۡ نَذَرۡتُمۡ مِّنۡ نَّذۡرٍ فَاِنَّ اللّٰهَ یَعۡلَمُهٗ ؕ وَ مَا لِلظّٰلِمِیۡنَ مِنۡ اَنۡصَارٍ ﴿۲۷۰﴾
و ما انفقتم من نفقۃ او نذرتم من نذر فان الله یعلمهٗ و ما للظلمین من انصار ﴿۲۷۰﴾
• তোমরা যা কিছু ব্যয় কর অথবা যে কোন মান্নত কর তা অবশ্যই আল্লাহ জানেন। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।

-আল-বায়ান

• তোমরা যে ব্যয়ই কর কিংবা যে কোন মানৎ কর, আল্লাহ নিশ্চয়ই তা জানেন কিন্তু যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।

-তাইসিরুল

• এবং যে কোন বস্তু তোমরা ব্যয় করনা কেন, অথবা যে কোন প্রতিজ্ঞা (নযর) তোমরা গ্রহণ করনা কেন, আল্লাহ নিশ্চয়ই তা অবগত হন; আর অত্যাচারীদের কোনই সাহায্যকারী নেই।

-মুজিবুর রহমান

• And whatever you spend of expenditures or make of vows - indeed, Allah knows of it. And for the wrongdoers there are no helpers.

-Sahih International

২৭০. আর যা কিছু তোমরা ব্যয় কর(১) অথবা যা কিছু তোমরা মানত(২) কর নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা জানেন। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।

(১) ‘যা কিছু তোমরা ব্যয় কর’ বলতে সর্বপ্রকার ব্যয়ই অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে; যে ব্যয়ে সব শর্তের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে এবং যে ব্যয়ে সবগুলোর কিংবা কতকগুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়নি। উদাহরণতঃ আল্লাহর পথে ব্যয় করা হয়নি বরং গোনাহর কাজে ব্যয় করা হয়েছে, কিংবা লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করা হয়েছে, অথবা ব্যয় করে অনুগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে কিংবা হালাল ও উৎকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করা হয়নি ইত্যাদি, সর্বপ্রকার ব্যয়ই এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত।

(২) ‘মানত’ শব্দের ব্যাপকতায় সর্বপ্রকার মানতই এসে গেছে। মানত বলতে বুঝায় কোন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কোন কাজ করার শর্ত করা। যেমন, যদি আমার সন্তান হয় তাহলে আমি হজ করব বা যদি আমার ব্যবসায় সাফল্য আসে তবে আমি এত টাকা দান করব ইত্যাদি। মূলতঃ মানত পূরণ করা ইবাদাত। কিন্তু মানত করা ইবাদাত নয়। মানত করার ব্যাপারে শরীআত কাউকে উৎসাহ দেয়নি। বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানত কারো জন্য ভাল কিছু নিয়ে আসে না বরং মানত কৃপণের সম্পদ থেকে কিছু বের করে। [বুখারীঃ ৬৬০৮, ৬৬৯২ ৬৬৯৩]

তাই মানত করার চেয়ে যে ইবাদাতের মানত করার ইচ্ছা করেছে, মানত না করে সে ইবাদাত পালন করে তার অসীলায় দোআ করাই শরীআত নির্দেশিত সঠিক পন্থা। এজন্য শরীআতে মানত করা থেকে নিষেধ এসেছে। কিন্তু যদি কেউ মানত করে, তারপর যদি কাজটা সৎকাজ হয় তবে তা পূরণ করা ওয়াজিব। আর যদি অসৎকাজ হয় তাহলে তা পূরণ করা যাবে না। যেমন, কেউ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য হজ করার মানত করলে তাকে হজ করে মানত পূরণ করতে হবে। কিন্তু যদি কেউ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য মাযারে বা পীরকে কিছু দেয়ার মানত করলে তা পূরণ করা জায়েয হবে না। কেননা, তা শির্ক।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৭০) যা তোমরা দান কর অথবা যা কিছু তোমরা নযর-মানত কর,[1] আল্লাহ তা অবশ্যই জানেন এবং অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই।

[1] نَذر ‘নযর’ তথা মানত করা বলতে এই নিয়ত করা যে, আমার অমুক কাজটা যদি হয়ে যায় অথবা অমুক বিপদ থেকে যদি আমি মুক্তি পাই, তাহলে আল্লাহর রাস্তায় এতটা পরিমাণ আমি সাদাকা করব। এই মানত পূরণ করা জরুরী। তবে কোন অবাধ্যতা অথবা অবৈধ কাজের মানত করে থাকলে তা পূরণ করা বৈধ নয়। মানত করাও নামায-রোযার মত একটি ইবাদত। কাজেই আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে মানত করলে সেটা তারই ইবাদত বলে গণ্য হবে, আর তা হবে শিরক। যেমন বর্তমানে অনেক প্রসিদ্ধ কবরসমূহে গিয়ে মানত করে সেখানে ব্যাপকহারে নযরানা পেশ করা হয়। মহান আল্লাহ এই ধরনের শিরক থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন। আমীন!

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ২৬১ থেকে ২৭০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২৮৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 26 27 28 29 পরের পাতা »